জ্বলদর্চি

জ্বলদর্চি উৎসব ১৪২৯ || অণুগল্প

জ্বলদর্চি উৎসব ১৪২৯ || অণুগল্প 


চাহনি
সঞ্জীব ভট্টাচার্য 


বন্ধুপত্নী  দরজাটা খুললো। প্রথমে চেনা না-চেনার দ্বন্দ্ব। তারপরেই  চিনতে পেরে--আসুন, আসুন, বিশ্বাসই হচ্ছে না!

ভেতর থেকে বন্ধুর গলা--কে এসেছে গো?
--আরে এসে দেখো, বিভাসদা এসেছে, বিভাসদা।

এই যে ব্যাচেলর, স্বেচ্ছাবসর  নিয়ে সেই যে আধযুগ আগে চলে গেলি, যোগাযোগের একটা রাস্তা পর্যন্ত রাখিসনি, বন্ধুর একরাশ অভিমান। 
বিভাস তখন তার এক গভীর  ভালোলাগার অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াচ্ছে।

অবশেষে জানতে চায়,পুচকি কোথায়?

বন্ধুর স্ত্রী বলে--বড় হয়েছে তো লজ্জা পাচ্ছে।

একসময় পুচকি  আসে।
তাকে দেখে তো মনে হয় না, এমন কিছু বড় হয়েছে।

আগেকার মতই নিজের মাথাটা দেখিয়ে বিভাস বলে--চুল টেনে দিয়ে পালাবি না?

পুচকির ঠোঁটে আলতো হাসি। হঠাৎ বিভাসের দৃষ্টি পুচকির চোখে স্থির হয়। বিভাস ভাবে, না সত্যিই পুচকি বড় হয়েছে।



অষ্টম প্রহর
সন্দীপ দত্ত

এক পলক তাকাতে অবিকল মায়ের আঁচলের মতোই লাগল ঘাসভর্তি উঠোনটা। হরিনাম সংকীর্তন দলের লোকগুলো ওখানেই বসল প্রথম। গাঁয়ের সুবোধকাকা এগিয়ে এলেন পিনাকের কাছে। "দুটো রুম খুলে দিবে বাবা? ওদের তাহলে থাকার জায়গাটা হয়। তোমাকে বলার একটাই কারণ, পাশে আটচালা।"

 সন্ধেবেলা সুবোধকাকাদের বাড়ির ছাদে ভিড়ের মধ‍্যে বসে পিনাক নিজেদের পরিত‍্যক্ত অন্ধকারে মোড়া বাড়িটার দিকে তাকাচ্ছিল বার বার। মায়ের কথাগুলো মনে পড়ছিল খুব। মা প্রায়ই বলত, "বাড়িতে একটা অষ্টম প্রহর করতে খুব ইচ্ছে করছে বাবা। টাকা দিবি?"

 টাকা দেয়নি পিনাক। আজ গাঁয়ের অষ্টম প্রহর। হরিনাম সংকীর্তন তাই পিনাকের কানে নয়, বুকে এসে লাগছিল।


শিশির পাল 
রং বদলায়

জাহ্নবী আর চয়ন আজ ডেটিংয়ে এসেছে ওদের মফসসল শহরের একপ্রান্তে থাকা নিরিবিলি প্রায় রেস্তোরাঁয়। আধা শহরে মোটামুটি সবাই সবাইকে চেনে। জাহ্নবীকে তো রেস্তোরাঁর ছেলেরা বেশ ভালোই চেনে। 

খাবারের অর্ডার দিয়ে আধো আলোয় ওরা গল্প করছে। নীচুস্বরে। 

খাবার সার্ভ করতে এসে ওয়েটার থতমত হয়ে যায়। চিকেন সিজলারের ধোঁয়ায়, অল্প আলোয় সে দ্যাখে, জাহ্নবী দিদিভাইয়ের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হয়ে বসে আছে এমন একজন, যাকে সে চেনে না। 

অথচ, গত কাল অব্দি জাহ্নবী হারিয়ে যেত, এই রেস্তোরাঁতেই! জয়ন্তদার কাঁধে মাথা রেখে।


ফুলের অধিকার
বিজয় চক্রবর্তী 

অধিকার এক আজব শব্দ। অধিকারের সীমা সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

একদিন বিকালে অফিসের কাজে বেরিয়ে পড়লাম রঞ্জা, মৃত গাছেদের স্তূপ পরিদর্শনে। সরকারি  কাঠগোলায় মৃত গাছগুলির মধ্যে দুটি মহুল গাছ দাঁড়িয়ে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে হালকা সবুজাভ-হলদেটে ফুল। বিকালের নরম রোদে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে রোদ চুঁইয়ে পড়ছে লাল কাঁকর মাটিতে। ঝরে পড়া ফুলগুলি সোনালি রৌদ্রচ্ছটায় উদ্ভাসিত। মহুল ফুলের মিষ্টি গন্ধে, পড়ন্ত বিকেলের নরম আলোয় মৃত গাছেদের স্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি গ্রাস করলো।


এমন সময় কাঠগোলার পাশের গ্রাম থেকে চার পাঁচজন লোক গেট পেরিয়ে আমার কাছে হাজির। নতুন বিটবাবুর বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ। কয়েক পুরুষ ধরে কৃষ্ণ মাণ্ডির পরিবার এই দুটি  গাছের ফল ফুল সংগ্রহ করে আসছে। বিটবাবু এবার আর ডিপোর মধ্যে ঢুকতে দিচ্ছে না। জিজ্ঞাসা করলাম, ডিপোর বাইরে জঙ্গলে আরও অনেক গাছ আছে সেগুলি থেকে সংগ্রহ করছেন না কেন?
'সেগুলি অন্য কোনো পরিবারের অধিকারে।' তাছাড়া কৃষ্ণের মৃত ঠাকুরদা এই গাছগুলির অধিকার ওদেরকে দিয়ে গেছে।

বুঝলাম অধিকারের সীমানা নির্ধারণ সুকঠিন।


একদল অরণ্যবাসী মানুষ তাদের জীবনচর্চার মধ্যে দিয়ে হাজার বছর ধরে বনজঙ্গল রক্ষা করে চলেছে। আর তথাকথিত সভ্য, অরণ্য ও পরিবেশ বিনষ্টকারী মানুষ তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে চলেছে। বললাম, এটাই তো বিটবাবুর কাজ। কাঠ চুরি গেলে তাকেই জবাব দিতে হবে।

গাড়িতে ওঠার সময় বিটবাবুকে বললাম, ফুলগুলি মাটিতে পড়ে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এগুলি ওদেরকে দিয়েই নিয়মিত পরিষ্কার করাবেন।
 
ক্লিক করে পড়ুন। কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের স্মৃতিগদ্য। 👇

পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

1 Comments

  1. খুবই ভালো লাগল গল্পগুলো।

    ReplyDelete