জ্বলদর্চি

মহিষাসুর মর্দিনী-- দেবী দুর্গা/বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

দীর্ঘ কবিতা

মহিষাসুর মর্দিনী-- দেবী দুর্গা

বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়


দেব ও দানবের মহা সংগ্রামে দানবেরা পরাজিত,
দেবতা গণের জয় উল্লাসে ত্রিভুবন চমকিত,
মহা সমারোহে দেবেরা বাজান বিজয়ের জয় ডঙ্কা,
দানব-জননী দিতির অন্তরে জেগে ওঠে ঘোর শঙ্কা।।

জননীর চোখ অশ্রু সজল আত্মজ শোক জেনে,
অঙ্গজদের অপমান জ্বালা কোন মা নেবেন মেনে?
দৈত্যরা তাঁর কোলের দুলাল তাদের গভীর দুখ,
মাতার অন্তরে মর্ম বেদনা ফেটে যায় মার বুক।।

প্রতিকার তরে নিজ কন্যারে পাঠালেন তিনি ডেকে,
"দেব বিনাশের তপস্যা করো তুমি এই ক্ষণ থেকে,"
দিতি-নন্দিনী তপস্যারতা মহিষী-র রূপ ধরে,
এ তপশ্চারণ বড়োই কঠোর বাঞ্ছা পূরণ তরে।।

সুপার্শ্ব নামে মহা মুনি এক  দিলেন পুত্র বর,
মহাবলশালী মহিষ-মুন্ড মানুষের মতো ধড়,
মহাবীর এই তনয় হবেন দেব-মানবের ত্রাস,
এ তনয় হতে অবশ্য হবে দেবতা গণের নাশ।।

দিতি-নন্দিনী,বড়ো খুশি তিনি কাঙ্খিত বর পেয়ে,
তপস্যা রত মহিষাসুরও ব্রহ্মার স্তুতি গেয়ে,
অযুত বছর তপস্যা শেষে ব্রহ্মা দিলেন বর,
পুরুষের হাতে মরণ হবে না  হয়তো রবে অমর।।

"দেব দানবের সঙ্গে সমরে রবেই অপরাজেয়,
স্বর্গ রাজ্য পদানত হবে" ফলাফল দুর্জ্ঞেয় (?)
ব্রহ্মার বরে অজেয় হলেন প্রবল মহিষাসুর,
প্রবল যুদ্ধে পর্যুদস্ত স্বর্গের যতো সুর ।।

দেবতারা যত, হন সমাগত ত্রিদেব সন্নিকটে,
"ত্রস্ত আমরা বাঁচান আমাদের এই ঘোর সংকটে,
মহিষাসুরের অজেয় সেনার প্রবল আক্রমণে,
পরাজিত আজ সকল দেবতা সুকঠোর এই রণে।।"

বলেন সকলে,"ব্রহ্মারই বরে আজ এই সংকট,
পুরুষ হস্তে অজেয় তাহলে কি ভাবে কাটবে জট?"
সকল দেবের ক্রোধের মিলনে দুর্গা অবির্ভুতা,
অতি সুন্দরী লাবণ্যময়ী সব দেব সম্ভুতা ।

অষ্টাদশহস্তা এই দেবী দেখে দেবতারা বিন্যস্ত
কৃষ্ণনয়না,রক্ত অধরা, তাম্র বর্ণ হস্ত,
নানান দেবের রূপের পরশে সুগঠিত তাঁর অঙ্গ,
নানান ভূষণে ভূষিতা এ দেবী অতি পবিত্র সঙ্গ।।

নানান আয়ুধে সজ্জিত হলো দেবীর হস্ত, অঙ্ক,
বিষ্ণু-চক্র, মহাদেব-শূল, বরুণ দিলেন শঙ্খ,
অগ্নি দিলেন শতঘণী আর পবন ধনুর্বাণ,
সকল দেবেরে জানালেন দেবী সমাদর সম্মান।।

সকল দেবেরে আশ্বাস দিতে খুললেন তিনি আস্য,
তারও পরেতে শুরু হলো তাঁর বিপুল অট্টহাস্য,
মহিষাসুরের সুপ্তি ভঙ্গ সেই হাস্যের শব্দে,
পাঠালেন তাঁর সেনাদের তিনি থামাতে এটাকে জব্দে।।

সন্ধান শেষে ফিরলো সেনারা জ্ঞাপন করলো সর্ব,
সুরাপান করে সুন্দরী এক বড়ো নাকি তার গর্ব,
"খুবই সুন্দরী?বন্ধন করে করো হেথা আনয়ন,"
অপারগ হয়ে ফিরে এলো তারা ব্যর্থ নির্ণয়ন।।

ক্রুদ্ধ মহিষ পাঠালেন তাঁর দুরন্ত সেনাদলে,
"নিয়ে এসো সেই লজ্জাহীনাকে ছলে বলে কৌশলে,"
দেবতার ত্রাস  তাম্রাসুর আর দুর্মুখ,চিক্ষুর,
সকলে হলেন পর্যুদস্ত, গেলেন যমের পুর।।

স্বয়ং তখন হাজির হলেন ভীষণ মহিষাসুর,
নানান রূপেতে করবেন তিনি দেবীর দর্প চুর,
কখনও সিংহ,কখনও মহিষ কখনও শরভ রূপে,
হিংসা অনল জ্বলছিলো তাঁর প্রতিটি লোমের কূপে।।

মহিষাসুরের দর্প ও প্রাণ হরণ করতে সদ্য,
সূরা পুরিত চষক হতে দেবী পান করলেন মদ্য,
ঘোর সংগ্রামে কেটে গেলো পরে বেশ খানিকটা কাল,
দেবীর চক্রে খণ্ডিত, শেষ হলো তার আয়ুষ্কাল।।

আস্য:মুখ ।
সদ্য   : তখনই, তৎক্ষনাৎ
শরভ : পৌরাণিক অষ্টপদ ও সিংহের চেয়ে বলবান
           মৃগ বিশেষ ।
চষক : সূরা পান পাত্র ।

পুরাণ :বৈদিক যুগের পরবর্তী কালের ইতিহাস
           বা জনশ্রুতি অবলম্বনে সংকলিত গ্রন্থাদি।
           পূরাণের সংখ্যা অনেক। পূরাণে বর্ণিত
            ঘটনা গুলিও কখনও কখনও বিভিন্ন
            হয়।এখানে বর্ণিত ঘটনা বিবরণীটি  
            অন্যতম পুরাণ হতে সংকলিত ।                             
            পুরাণ হতেই গৃহীত ।

 
পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments