জ্বলদর্চি

রম্য কবিতা, পর্ব-১১/তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়


রম্য কবিতা, পর্ব-১১
তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায় 

(১)
তবলচির অভিব্যক্তি

ভিনদেশী শিল্পীর বাজনার তোড়-জোড়!
মাথা নেড়ে, চুল ঝেড়ে বোল তোলে জোর জোর।
তেওড়া, রূপক, ঝাঁপতাল, দীপচন্দী,
না জানি কি ভয়ে, লয়ে কতো মনই বন্দী!
আঙুলেরা ঠোকে কানি, ময়দানে, খিরনে;
আলো আর হেন শিল্পের উদ্‌গিরনে –
দেখো যেন অপলক চোখেরা না ঝলসায়,
সময় কাটাতে এসে বেপাড়ার জলসায়।

মঞ্চের সামনেই বসা ‘ভোলা’ যেই চায় -
দেখে তাকে তবলচি মুখ যেন ভেংচায়!
চাটি মেরে তুলে ‘তাং’, নীচের চোয়াল বাঁয়,
‘তেরেকেটে’ ধ্বনি এলে তা আবার ডানে যায়!
‘গদিঘেনে’ ধ্বনি আনে অক্ষিবিকূর্ণন,
‘ধেরেধেরে’, ‘ধুমাকেটে’- মাথায় বিঘূর্ণন।
ঠোঁট বাঁকে, কান নড়ে তা’র নাসারন্ধ্র –
বাড়ে, কমে মনে হয় মিল করে ছন্দ।
দ্রুত লয়ের প্রভাব বুঝবে কি আর সে!
শিল্পীর মুখাভাবে সন্দেহ বাড়ছে।

বায়েনের মুখোমুখি ‘ভোলা’ ধরে আয়না,
ধমকিয়ে বলে - “মুখ স্থির রাখা যায় না?”


(২)
যুদ্ধচর্চা

রাশিয়া, ইউক্রেনেতে লেগে গেছে যুদ্ধ,
তা নিয়েই ভীত লোকে ধরাধাম শুদ্ধ।
এই নিয়ে বৈঠক শুরু হলো দোকানে,
বিভিন্ন মত আসে ক্রমাগত দু-কানে।
আসলে কি যুদ্ধ এ ইউক্রেন-রাশিয়ার!
নাকি বলি ইউক্রেন, রাশিয়া-আমেরিকার!
যুদ্ধের বিপক্ষে দেয় কেউ যুক্তি,
কেউ বলে যুদ্ধেই আসে ঠিক মুক্তি।

ছিলেন উপস্থিত শতোর্ধ্ব বৃদ্ধ,
অভিজ্ঞতায়, জ্ঞানে ঠাসা, সমৃদ্ধ।
যুদ্ধ কিভাবে লাগে, হয় কি কি ধরণের,
বলেন যা হলো দেখা আগে তাঁর মরণের-
"রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয়, আর্থিক লোভেতে,
প্রতিরক্ষা, ঔপনিবেশিক ক্ষোভেতে,
হতে পারে যুদ্ধ বা হামলা, আক্রমণ,
সীমা টেনে যুদ্ধ বা সীমা-অতিক্রমণ।
গৃহযুদ্ধ বুঝেছি বৌ পেয়ে ক্রুদ্ধ,
গোরিলা-, মল্ল-, কূট-, বায়ু-, নৌযুদ্ধ;
আজকাল দেখি বেশি অজা-, বাগ্‌-যুদ্ধ,
দেখে, শুনে, বুঝে তাই ক্রন্দন রুদ্ধ।
অপপ্রচার চলে ঠাণ্ডা লড়াইয়ে,
কোনো কোনো দেশ বাঁচে যুদ্ধে, বড়াইয়ে।
উন্নত প্রযুক্তি, আসে চাকরিও তো,
দু বিশ্বযুদ্ধেরই কতোনা উপজাত -
রক্ত-ভাণ্ডার আর রক্ত-সঞ্চারণ,
ভিন দেশে ভিন দিবালোক সংরক্ষণ;
রাডার, বৈদ্যুতিন-কম্পিউটার, জেট,
ইস্পাতও এসেছিলো ফ্লু-এর টিকা সমেত।
হিরো, হেরো উভয়েরই জীবনযাত্রাতে,
পরিবর্তন আসে অন্য মাত্রাতে।
বৈঠকে ঠকে, ঠকে না এলে প্রশান্তি,
পড়ে থাকে যুদ্ধই, হেসে ওঠে ক্রান্তি।
মৃত্যু ছাড়া কি বলো এ জীবন সার্থক!
তেমনই শান্তি মাঝে সাঝে রণ-প্রার্থক।"

যুদ্ধ-বিরোধী দল শুনে হয় চাঙ্গা,
স্বমত প্রকাশে শুরু হয় বাগ্‌-দাঙ্গা -
"কে যে কার অধিকার, কে যে কার বশ্য,
তা মেটাতে প্রজাদের মৃত্যু অবশ্য!
এমনিতে অতিমারিতেই ছিল জেরবার,
যুদ্ধ লাগলে তায় ক্ষয়-ক্ষতি সব্বার।
অগণিত প্রাণহানি, মানহানি, মামলাও,
আমদানি, রপ্তানি রদে ঠ্যালা সামলাও।
অর্থনীতিই পড়ে যায়- শুধু তাই নয়,
আন্তঃদেশীয় ডোরের ছেঁড়াছিঁড়ি হয়।
দেনা বাড়ে, কর বাড়ে, বাড়ে উদ্বাস্তু,
নেতা, মন্ত্রীরা ভাবে প্রজা জড় বস্তু।
মানসিক অবনতি, প্রাকৃতিক ক্ষতি হয়,
কবিরা সরব হন – 'পৃথিবী বাসের নয়।'
দেশ ভালোবেসে গেছে যুদ্ধে যে সৈন্য,
যে গেছে পেটের দায়ে, দশা ছিল দৈন্য;
গুলিতে কারোর বেশি আয়ু লেখা থাকেনা,
দ্রুততায় আবেগের অবকাশ রাখেনা।
শত্রু দেশেতে ফেলা বোমার তাণ্ডবই-
মারবে তাদেরই কারো পুরোনো বান্ধবী।
বিজ্ঞানে তিল তিল করে এগিয়েছি যা,
যুদ্ধে পিছোয় সেই এগোনো সভ্যতা।"

পাশ থেকে মৃদুভাষী মাধাইদা আগিয়ে,
হাসি মুখে ঝাড়ে জ্ঞান ঝগড়ায় না গিয়ে-
"ক্ষমতার লড়াইয়ে জেতে যদি অসুরে,
প্রজাকে মরতে হয় জুলুমে জ্বলে-পুড়ে।
ধরা যাক- অচিন্ত্য কাজে গেলো রাশিয়ায়,
যুদ্ধ লেগেছে দেখে কাজ ফেলে কাজিয়ায়-
জড়িয়ে সে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাবে কি?
গেলে তার কাজ যাবে, কাজ গেলে খাবে কি!
না হলে যুদ্ধে ক্ষত, স্বদেশ অপরাজিত,
কজন আর থাকে বলো যুদ্ধ থেকে বিরত।
স্বপক্ষে, বিপক্ষে -ভুলে যাবে কে কা'তে,
সত্যি যুদ্ধ শুরু হলে কোলকাতাতে।"


(৩)
প্রতিক্রম

জাগতিক বিন্যাস নিয়ে যতো শঙ্কা,
পৃথিবীকে উল্টিয়ে দেখেছিলো বঙ্কা।
উল্টালে মুরগিরা মানুষকে খায় কি!
নেতা-নেত্রীরা ভোট ছাড়া কিছু চায় কি?
হয় কিনা সুন্দর কালো চামড়ারও কেউ?
কালো দেখে জাগে প্রেম নাকি কালো লাগে ফেউ!
চিতা ছেড়ে বেঁচে ফেরা যায় কি নিজগুণে?
ঝাঁটা মেরে প্রেম ছোঁড়া যায় কিনা ফাগুনে?
এলোমেলো বিশেষণ মানায় কি শব্দে?
ফিরে যাওয়া যায় কিনা মিশরীয় অব্দে!
চোখ থেকে পড়া জল চোখে ফিরে যায় কি!
বাঘেতে, গরুতে এক ঘাটে জল খায় কি?
ভেবে তো ছিলাম সবই বাস্তব ঘটনা!
পরে শুনি বঙ্কার স্বপ্ন ও রটনা।
স্বপ্নে কাজ করেনি নাকি অভিকর্ষ,
জেগে উঠে তাই তো সে হয়েছে বিমর্ষ।

 
পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments