জ্বলদর্চি

চারটি কবিতা/ তাহের আলি

চারটি কবিতা/ তাহের আলি 

হৃদয় ভেঙে গেছে 


কতদিন জ্যোৎস্না দেখিনি,
বিদ্যুৎ এর বিকট আলো খেয়ে নিয়েছে জ্যোৎস্নাকে।
কতদিন প্রকৃতির বাতাস শরীর ছোঁয়নি।
কৃত্রিম বাতাস প্রকৃতির বাতাসের পথ দিয়েছে আটকে।
নিঝুম নিস্তব্ধ অরন্যের রূপ
হারিয়ে গেছে মানুষের লেলিহান ধ্বংস প্রবৃত্তিতে।

হরিন-হরিনীর লাজুক বিচরণ,
পাখির কলতান, জোনাকির ভাসমান গাছে গাছে,
কোথায় যেন লুকিয়ে গেছে,
মানুষের কপট হর্ষে।
তা কি আর ফিরে পাব কোনোদিন?
না কি ঢাকা হয়ে থাকবে বিমর্ষে?

হৃদয় তো ভেঙে গেছে আমার,
গোধূলি লগ্নে বিচূর্ণ সূর্যটার মতো
ভয়াল ভয়ঙ্কর আঘাতে।
যা ছিল আকাশ ভাঙ্গা বজ্র নিনাদের থেকেও তীব্র।
আমার ভঙ্গুর হৃদয়, জীবনের সুর,
একীভূত হবে কী প্রকৃতির শান্ত, স্নিগ্ধ, সৌন্দর্য্যে?
তার সবুজ আবেশে?


জীবন নিয়ে

নদী বয়ে যায় নিজ ছন্দে,
পাখিরাও গেয়ে যায় গান মহানন্দে।
সাগর সুখে আছে নিয়ে তার পরিবার।
কারো সময় তো নাই
একে অপরকে মনে রাখিবার।

পল্লবের মর্মর ধ্বনি,
যেন বাঁশির সুর মিলাইছে ধরনী।
ধ্রুব তারাটির নয়ন শোভন চাহনি।
সময় তো নেই
একে অপরের ভাষা বুঝিবার।

এক গ্ৰাম্য ললনা, বুক ভরা বেদনা,
ভয়াবহ সাইক্লোনে বিধ্বস্ত তার অঙ্গের বসন।
আঁখিজল ভাসাইছে তার বিষন্ন জীবন।
জীবন কে বুঝিবার
সময় হয়েছে তার।
নিজেকেই নিজে বলিছে সে...

কেউ আমার নয়
আমি কারো নয়
জীবন নিয়ে শুধু মিছি মিছি খেলা।
জীবন পাখি উড়ে যাবে একদিন, নীল শূন্যতায়।
কেউ বা ঠাঁই পাবে মাটির তলায়।


 নতুন ধান

সবুজ শাড়ী পরেছিলে তুমি,
আজ পরেছ সোনালী শাড়ী।
কী! অপরূপ লাগছে তোমায়,
যাবে কী আজ নতূন বাড়ি?

সবুজ আঁচলে লুকিয়ে ছিলে,
লুকিয়ে ছিলে এক গুপ্তধন।
বেরিয়েছে আজ সোনালী বেশে,
সে ছিল তোমার আপনজন।

তোমার অঙ্গের যত সৌরভ,
ছড়িয়ে দিয়েছ বাতাসে।
হিমেল বাতাসে ভেসে ভেসে তার,
দোলা দিয়েছে বাঙালি মানসে।

ভরিয়ে দিয়েছে বাঙালির আঙিনা,
তুমি তো নতুন ধান।
কৃষক জীবন পুলকিত মন,
খুশিতে ভরেছে এই অঘ্রান।

এতখানি চাঁদের আলো,
খেলেনি কখনো আঙিনায়।
এতখানি প্রান জুড়ানো হাসি,
কখনো খেলেনি ওষ্ঠের কোনায়।

পিঠে পুলিতে মাতবে সবাই,
পেট ভরাবে মিষ্টি ভাতে।
মাতাল হবে গ্ৰাম্য জীবন,
ভাদু টুসুর এই গানেতে।

যতসব দুঃখ বিষাদ,
লুকিয়ে ছিল ঘরের কোনে।
হঠাৎ এল পাগল বাতাস,
নিয়ে গেল গহীন বনে।


পথে হল দেখা

নীলা তুমি নীল আকাশের দিকে 
তাকিয়ে রয়েছ কেন অনেকক্ষণ ধরে?
তুমি যারে সঁপেছ জীবন,
সেও হয়তো তোমারে করিছে অন্বেষণ।
সে লিখেছে পত্র হয়তো
তোমারে করিবে অর্পণ।
উঠে পড় নীলা
অফিস বেরোতে হবে না এখন?
এদিকে নীল আকাশ ও ঢেকে গেছে মেঘে।
অফিস যাত্রী নীলার সঙ্গে
দেখা হল নীলের, হঠাৎ।
নীল কলেজে পড়া বন্ধু।
ভালো আছো নীল?
অনেক দিন দেখিনি তোমায়।
নীল - ভালো আছি, তোমার অফিস কোথায়?
এই যে গড়িয়া, তোমার?
আমার সেক্টর ফাইভ ,
দুই বিপরীত মেরুতে, নীল বলে -
নীলাভ চাহনি একে অপরকে বিদ্ধ করল।
এক চিলতে হাসি ও
ছুঁয়ে গেল দুটি মন।

 
পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments