জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১০৭


ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১০৭

সম্পাদকীয়,
উৎসব শেষ হলেও রয়ে যায় উৎসবের রেশ। ঠিক তেমনই ছোটোবেলার উৎসব সংখ্যা শেষ হলেও এবারে তার রেশ মেখে শারদ শব্দজব্দের সমাধান নিয়ে হাজির সুব্রত আঙ্কেল। সেখান থেকে জেনে যাবে এই শারদীয়া উৎসবকেই আবার অকালবোধনও বলে। উৎসবের রেশ ধরে রাখা এবারের সংখ্যায় শ্রীছন্দা পিসি তোমাদের দীপাবলির ছড়া শুনিয়েছেন। এত সবের মধ্যেও তোমরা নিশ্চয়ই জয়াবতীকে ভুলে যাওনি। জানতাম ভুলবে না। জয়াবতীর মতো মেয়েরা যুগে যুগে জন্মায় আর ঘরে ঘরে দীপাবলীর মতো আলো জ্বালে, তাদের বুদ্ধির জোরে। এমন মেয়ে বদ্যি কে আমাদের ছোটোবেলার পাতায় প্রতি রবিবার নিয়ে আসার জন্য এসো আমরা সকলে তৃষ্ণা আন্টিকে একবার প্রণাম ঠুকি। নয় নয় করে উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে হুড়মুর করে শীত এসে পড়ল। আর হাড়কাঁপানো শীতের রাতে একটা ডাকাতির গল্প শুনলে কেমন হয়? দারুণ না?  বিপ্লব জেঠু তাই তোমাদের বেশ জমিয়ে বললেন সেই গল্প। সেতো আজকের কথা নয়। তখন হুগলি জেলার দেয়ালপোতা গ্রামে ঘোষালদের জমিদারি। সেই ঘোষাল বাড়িতে এল ডাকাতদের চিঠি। ভাবতে পারছো কি সাহসী ডাকাতদল? আমি তো ভাবতে ভাবতে আর গল্পটা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙল পাখিগুলোর টুই ডাক শুনে। তোমাদের বন্ধু সায়ক সেই টুই ডাকের পাখিগুলোর ছড়া লিখে পাঠিয়েছে। উৎসবের শেষে প্রতিমা নিরঞ্জন দিয়ে ঘরে ফেরার পালা। জানি তাতে তোমাদের সকলের মন ভার, চোখ জলে ছল ছল। কারণ এবার পড়তে বসার পালা। শুধু তোমাদের নয়, অপু দাদার তোলা প্রচ্ছদের ছবির শিশুটিও মায়ের কোলে চেপে ঠাকুর দেখে বাড়ি ফেরার পথে চোখ ছলছল চোখে তাকিয়ে? ও কাঁদো কাঁদো কেন জানো? ওর মা তো বিসর্জনের শোভাযাত্রায় নাচ করতে গেছিল। আর ওকে অন্যদের কোলে দিয়ে গেছিল। তাই প্রতিমা নিরঞ্জনের পর ও যখন মাকে পেয়েছে চেপে ধরে আছে। ওর চোখে কান্নার রেশ যা মিশে গেছে আমাদের মন খারাপের রেশের সঙ্গে। শ্রেয়া, শুভশ্রী ছবি পাঠিয়ে আমাদের ছোটোবেলার পাতা প্রতিবারের মতো রঙিন করে তুলেছে। তোমরাও ছবি আর লেখা পাঠিয়ে ও পার্থ দাদার মতো পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠিয়ে প্রতিটা ছোটোবেলার পাতা আলোকিত করে দাও। - মৌসুমী ঘোষ।



ধারাবাহিক উপন্যাস

জয়াবতীর জয়যাত্রা
পর্ব ৩২

তৃষ্ণা বসাক

নয়তো আলোচাল খাইয়ে তাদের ভেতরের সব শক্তিকে নষ্ট করে দাও। ভারি অদ্ভুত তো।
তার পালকিতে পেরজাপতি চলেছে । অন্যটায় আছে পুণ্যি আর উমাশশী। দুজন ভিতু মানুষকে এক পালকিতে দিয়ে কাজ নেই। উহহ, আসার সময় যা কাণ্ড হল। দূর থেকে ভাসুরদের দেখেই মুচ্ছো গেল পেরজাপতি, আর পুণ্যি তার চিকিচ্ছে করার বদলে হাঁউমাঁউ করে কাঁদতে লাগল। বাব্বা। আর দুজনকে এক সঙ্গে পাঠাবে কোথাও? পেরজাপতি তার পাশ থেকে উঁকি মেরে বলল ‘কী বড় বাড়ি গো জয়াদিদি! আমি এই পেত্থম কোন জমিদারমশাইয়ের বাড়ি যাচ্ছি’
‘আমিও পেত্থম। কিন্তু সে কথা কাউকে বুজতে দিতে নেই। লোকে বোকা ভাববে। বুদ্ধি করে জানিয়ে দিবি বুদ্ধি আমার বেশি। মনে থাকবে তো?’
মাথা নাড়ে পেরজাপতি। কিন্তু তার বুক ঢিপঢিপ করে। কী বলতে কী বলে ফেলবে সে, আর বাড়ি ফিরে বকুনি খাবে। তার পুণ্যিদিদি তাকে একটুও বকে না। তার সঙ্গে কোথাও যেতে ভয় করে না তার। যেন খুব আপন। জয়াদিদিও আপন, কিন্তু একটু পণ্ডিতমশাইয়ের মতো।তার সঙ্গে থাকলে সবসময় খেয়াল রাখতে হয় কখন বেফাস কথা মুখ থেকে বেরিয়ে পড়ে আর অমনি জয়াদিদির বকুনি খেতে হয়। হ্যাঁ এটা তো ঠিকই, সে  মোটেই পড়ালেকা শেকেনি। মানে ওই যে র ব ঠ, আঁক কষা, শোলোক বলা-এসব কিচুই সে শেকেনি । পুণ্যিদিদি তাকে একটু একটু করে শেকাচ্ছে। সেই কোন ছোটবেলায়  ভায়ের জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মরে যায়। তখন তার বয়স মোটে দেড় বছর। বুঝতে হবে। সে পেরজাপতির গলা জড়িয়ে বলে ‘রাগ করলি নাকি? আসল কতা কী জানিস? আমি চাইনা আমার সইদের কেউ বোকা হাবা ব্লুক, বুজলি?’
জয়াবতীর এইটুকু মিস্টি কথায় চোখের জল আর বাঁধ মানে না পেরজাপতির। সে কান্না জড়ানো গলায় বলে ‘ ও জয়াদিদি, তোমরা তো বদ্যি, তা আঁতুড়ঘরগুলো তোমরা একটু ভাল করতে পারো না? একটু পস্কের জায়গায়, বাড়ির মধ্যে, আলো বাতাস খেলে এমন, তাহলে তো আর কাউকে বাচ্চা বিয়োতে গিয়ে মরতে হয় না আমার মায়ের মতো।’ ( ক্রমশ)

শুভশ্রী সরকার || সপ্তম শ্রেণী, শতদল বালিকা বিদ্যালয়, উত্তর ২৪ পরগণা


গরিবের দীপাবলি
শ্রীছন্দা বোস

দূর্গা গেলেন কৈলাসে,
হাল্কা হিমেল বাতাসে
শুকনো পাতা ঝরে পড়ে,
হেমন্তের ঐ সকালে।
কালী পুজোয় বসবে আজ
আতশ বাজির  মেলা
ফুলঝুরি আর তুবড়িতে
হবে আজি খেলা।
           
উস্কো খুস্কো চুল নিয়ে
ছেঁড়া জামাটি পড়ে সে
দাঁড়িয়ে আছে ছোট ছেলে
দোকানের এক পাশেতে,
কচি কাঁচার ভীড় সেখানে
ব্যস্ত সবাই বাজি কেনাতে,
ঐ যে ছেলে দাঁড়িয়ে আছে
পয়সা ছাড়া দোকান মাঝে
ক্ষোভ নেই তার মনেতে।
            
ছেলে মেয়েরা নতুন সাজে
বাজি দিল ছাদের রোদে,
দীপাবলি হবে না আজি
সংগ্রহ করে ছেলেটি
গলে যাওয়া মোম বাতিটি
আর আধপোড়া রং বাজি
পটকা কয়েক খানি সে
তুলে রাখে পলিথিনেতে
আজকে রোদে রাখবে সে
দীপাবলি কালকে হবে।
          
হাজার শিশু এমনি করে
ক্ষয়ে যাওয়া বাজি দিয়ে
দীপাবলির পরের দিনে,
উদযাপন করে থাকে।।


বড়োগল্প

ঘোষাল বাড়ির ডাকাতি
বিপ্লব চক্রবর্তী

মাঘের হাড়কাঁপানো শীত। ঘুটঘুটে অন্ধকারের রাত। অমাবষ্যার পক্ষ চলছে। বড়োজ্যাঠা কোমরে ঝোলানো ট্যাঁক ঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে বলল, "এই ন'টা বাজল।সবাই সাবধান হয়ে যাও। আসার সময় শুরু হয়ে গেল"।
যেমন শীত তেমনি উত্তরে হাওয়া।ঝিঁ ঝিঁ  ডাকছে একটানা। মধ্যে মধ্যে একটা দুটো রাতজাগা পাখি ডেকে চলেছে বিশ্রী সুরে।পুরো গ্রামটা ঘুমে ডুবে আছে। চৌমুহনীর থেকে  চারজন পালোয়ানকে আনা হয়েছে। তারাও কম্বলের ভিতর বল্লম চেপে ধরে হি হি করে কাঁপছে। সেজো জ্যাঠামশাই  মালকোচা মেরেছে। আবার ধুতিটাকে বেল্ট দিয়েও বেঁধে রেখেছে কোমরে। ঘোষাল বাড়ির দো-নালা বন্দুক টাকে একবার কাঁধে রাখছে,আর একবার বৈঠকখানার তক্তপোষের ওপর রাখছে। অস্থির হয়ে  বারান্দার এ মাথা থেকে ও মাথা হেঁটে চলেছে। এমন ভাবে পালোয়ানদের হম্বিতম্বি করছে যেন, একাই পঞ্চাশ জনের মহড়া নিতে পারবে।অতি উৎসাহী হয়ে ঘর থেকে উঠোনে পা রাখতে গেলেই বড়োজ্যাঠা সাবধান করে দিচ্ছেন, "নকুর, একা বাইরে বেরোবে না। পালোয়ানদের সঙ্গে নাও"। সেজো জ্যাঠা আর বাইরে বের হন না। ভয় পাচ্ছেন এটা যাতে বাইরের পালোয়ানরা বুঝতে না পারে তাই হম্বিতম্বি করে চলেছেন।

সন্ধ্যা থেকেই ঘোষাল বাড়িতে একটা সাজো সাজো রব। সবাই কথা বলছে ফিসফিসিয়ে।বড়ো জ্যাঠামশাইয়ের  নির্দেশে  বিকেল থেকেই দোতলার বৈঠকখানা ঘরটার জানালা দরোজা বেঁধে,মেয়েদের আর শিশুদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আমি নেহাত শিশু ছিলাম না, আট বছর বয়স বলে আমাকে কোথাও বদ্ধ রাখেনি। বড়ো জ্যাঠামশাইয়ের একটা নির্দেশ ছিল দোতলা থেকে যেন আমি ভুলেও নিচে না নামি। আমাকে আটকায় কে! দোতলায় একটু সময় ‌ থেকেই, সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসছিলাম।বড়োজ্যাঠাকে  আড়াল করে ওঠানামা করতে করতে আমি  ঘুরে ঘুরে পালোয়ানদের দেখছি। পালোয়ান দের মধ্যে একজনের ছিল ইয়া বড়ো পাকানো গোঁফ।আমি ঘুরে ঘুরে শুধু ওকেই দেখছি।ভেবেছে আমি খুব ভয় পেয়েছি। গোঁফ ওয়ালা বিকট পালোয়ানটা বলছে, " ডরো মৎ বাচ্চু! হামলোগ হায় না!" আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না আমি ভয় পাব কেন! আমি ডাকাতদের মুখোমুখি দেখতে পাব এই আনন্দে মনেমনে শিহরিত হচ্ছি। ডাকাত লোকগুলো দেখতে কেমন হয় সেটাই আমাকে দেখতে হবে। বড়ো জ্যাঠামশাই  গোঁফওয়ালা পালোয়ানটাকে কাছে ডাকল ," ইধার আও!" সামনে এগিয়ে আসতেই,  আচ্ছা কষে  ধমকাতে শুরু করলো ," হামলোগ দশ পালোয়ান মাংতা থা, চার পালোয়ান লে কর চলা আয়া, ডাকু লোগো কো ক্যায়সে রোখে  গি!" পালোয়ান লোকটি উত্তর দিল না। উত্তর দিল সেজো জ্যাঠামশাই নকুর ঘোষাল, " বড়দা, আসতে দাও বৈকুণ্ঠ ডাকাতের দলকে, ঘোষাল বাড়িতে ঢুকলেই একটা একটা করে গুলি মেরে  মাথা উড়িয়ে দেব।" বলেই বন্দুকটা তাক করে দেখালো উঠোনের দিকে।

 এই পর্যন্ত বললেন বড়োমামাদাদু। হঠাৎ  কিছু মনে পড়ে যেতেই ঋদ্ধিকে বলল, "রান্নাঘরে  গিয়ে দেখে আয় তো, ফুলদিদা চিকেন পাকোড়া গুলো ভেজে নামিয়েছে কি না।" টুয়া এতক্ষণ ঝিঁঝিঁ ডাকা রাতে বৈকুণ্ঠ ডাকাতের অপেক্ষায় মশগুল হয়ে ছিল। বড়োমামাদাদু প্রসঙ্গ পাল্টাতেই চেপে ধরলো, " না না মামাদাদু, এসব হবে না, তারপর কি হলো বলো বলো বলো!" টুয়ার দেখাদেখি ,ঋদ্ধি, টুবাই,, গুতু, ছোড়দি সবাই বড়োমামাদাদূকে চেপে ধরল, "  --- না না না বলো বলো।  থামলে কেন ?তারপর  কী হোল?
সবাই চেপে ধরতেই বড়ো মামাদাদু বলল, "দাঁড়া ! আগে ফুলদিদার হাতেভাজা গরম গরম চিকেন পকোড়া খাই । খেতেখেতে বাকিটুকু বলবো"! বলেই‌ বড়োমামাদাদু খাট থেকে জোর করে নেমে পড়লেন। দেখাদেখি সকলেই হবে না হবে না বলে বড়োমামাদাদুর পিছু পিছু রান্না ঘরের দিকে হাঁটা দিল।

হুগলি জেলার দেয়ালপোতা গ্রামে ঘোষালদের আদি বাড়ি।যেই সময়ের কথা, তখন ঘোষাল দের তিনআনার জমিদারি ছিল। জমিদার হলেও ঘোষালরা অত্যাচারি ছিলেন না। গরীব প্রজারা জমিদারের  থেকে অনেক সুযোগ সুবিধা পেতো। দেয়ালপোতা গ্রামের এহেন জমিদার বাড়িতে  রীতিমতো  একপক্ষ কাল আগে ডাকাতের চিঠি এসেছিল।তখন ব্রিটিশ পিরিয়ড। দেয়ালপোতা গ্রামের থেকে প্রায় তিরিশ ক্রোশ দূরে একমাত্র থানাটি । ডাকাতরা চিঠিটা পাঠিয়েছিল ঘোষাল বাড়ির রাঁধুনির হাত দিয়ে। ভোরবেলা ঘোষাল বাড়িতে  রাঁধুনি হেঁটে হেঁটে গ্রামের ভিতর দিয়ে আসছিল। একজন গ্রাম্যচাষা গোছের মানুষ রাঁধুনিকে দাঁড় করিয়ে বলেছিল," তুমিতো ঘোষাল বাড়ির রাঁধুনি?" বলেই একটা  কাগজের খাম হাতে ধরিয়ে বলল, " মুক্তারাম ঘোষালের হাতে এটা দিয়ে বলবে বৈকুণ্ঠ ডাকাতের চিঠি।" বলেই নিমেষে চোখের আড়ালে চলে গিয়েছিল। রাঁধুনি তা শুনে অজ্ঞান হয়ে যেতে যেতে , বলা যায় হাঁফাতে হাঁফাতে বড়োজ্যাঠা মুক্তারাম ঘোষালের হাতে চিঠিটি পৌঁছে দিয়েছিল। মুক্তারাম ঘোষাল খামটা হাতে পেয়েই , সঙ্গে সঙ্গে  ছিঁড়লেন। ভেতরে একটা জবাফুল আর  ছোট্ট একটা চিঠি। চিঠিতে লেখা , " ঘোষাল মশাই , আগামী অমাবষ্যার রাতে আমরা আসছি।সদর দরোজা আর সিন্দুক দুটোই খোলা রাখবেন। আমি জানি আপনাদের বন্দুক আছে। কোনোরকম আপ্যায়নের ব্যবস্থা করবেন না । বাড়ির মেয়েদের সম্মানের কথা মাথায় রাখবেন।ইতি বৈকুন্ঠ ডাকাত। "

বড়ো মামাদাদুর বয়স তখন আট। বৈকুন্ঠ ডাকাতের চিঠি পড়ে মুক্তারাম ঘোষাল যথেষ্ট ভয় পেলেন। তিরিশ ক্রোশ দূরে ঘোড়া ছুটিয়ে থানায় গিয়ে রিপোর্ট লিখিয়ে আসবেন মনস্থির করলেন। পরদিন,সকাল বেলা উঠে ঘোষাল বাড়ির সবাই দেখলো মুক্তারাম বাবুর সখের ঘোড়াটিকে কে বা কারা রাতের বেলা খুন করে ফেলে রেখে গেছে। আড়াআড়ি ভাবে একটা বর্শা মরা ঘোড়াটার গলায় গাঁথা। মুক্তারামবাবুর আর সাহস হয়নি, প্রকাশ্যে থানায় গিয়ে রিপোর্ট লেখাতে। তিনি বৈকুণ্ঠ ডাকাতকে ঠেকাবার জন্য কিছু ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। পুরো প্রস্তুতিটা খুবই গোপনে হয়েছিল।  ঘোড়াটির খুন হবার খবর গ্রামে প্রচারিত হতেই ,  গোপনীয়তাটা শেষমেশ আর রক্ষা করা যায় নি।খবরটা দেয়ালপোতা গ্রামে প্রচার হয়ে গেছিল। ঘোড়াটিকে মুক্তারামবাবু আদর করে ডাকতেন চৈতক বলে। চৈতকের দেখভাল করতো  লক্ষণ সহিস। মুক্তারাম বাবুর খুবই বিশ্বস্ত। ঘোষাল বাড়িতে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। লক্ষণকে কুস্তির আখরায় গোপনে পাঠালেন। সেখান থেকে পালোয়ান ভাড়া করে  আনার জন্য। এনেও ছিলেন বাড়ি পাহারায়। চেষ্টা করেও চারজনের বেশি পালোয়ান পাওয়া যায়নি। জমিদারির আয়ও তখন পড়তির দিকে। এমত অবস্থায় বিকল্প লেঠেলবাহিনী তৈরি করে বৈকুণ্ঠ ডাকাতের মোকাবেলা করাটাও ছিল অসম্ভব। ফলে, মুক্তারাম ঘোষাল বিকল্প পথে বৈকুণ্ঠ ডাকাতকে ঠেকাতে সচেষ্ট হয়ে উঠলেন। 

 ঋদ্ধি, টুয়া, টুবাই, গুতু ছোটোবেলা থেকেই ঘোষাল বাড়িতে ডাকাত পড়ার কথাটা শুনে আসছে। অনেক বছর পর মামাদাদু এসেছেন দিল্লি থেকে , বিয়ে উপলক্ষে ওদের চন্দননগরের বাড়িতে । নোটন দিদির বিয়ে। গল্পের আসরে নোটনদিদিও আছে।আত্মীয় স্বজনে বাড়ি গমগম করছে।দেয়ালপোতা গ্রামে ঘোষালদের আদি বাড়িতে ডাকাত পড়ার একমাত্র  প্রত্যক্ষদর্শী ছিল বড়মামাদাদু। ফুলঠাকুমার তখন জন্মই হয়নি। টুবাই টুয়া আর ঋদ্ধিরা রান্নাঘর থেকে একরকম জোর করেই টেনে নিয়ে আসল মামাদাদুকে। ঘোষাল বাড়িতে ডাকাত পড়ার ঘটনা পুরোটা শোনার জন্য। এখন নভেম্বর মাসের শেষ দিক। চন্দননগরে শীত চলে এসেছে গঙ্গার ঠান্ডা হাওয়া নিয়ে।মামাদাদুরও যথেষ্ট বয়স হয়েছে। তাই কিছুটা প্রোটেকশানও নিয়েছেন শীত ঠেকাবার। টুবাইরা চেপে ধরে খাটের ওপর বসালেন মামাদাদুকে। তিনি আবার শুরু করলেন সেদিনরাত্রে তাঁর চোখের সামনে ঘটে চলা ঘটনা বলতে।বলতে বলতে মামাদাদুর চোখ গুলোও এত বছর পরেও চকচক করে উঠলো।

সেজোজ্যাঠা কিছুতেই  একজায়গায় দাঁড়াতে পাচ্ছিলেন না উত্তেজনায়। শীতের রাত বেড়েই চলেছে। নিঝুম  নিঃশব্দ রাত। হঠাৎই  বাড়ির উত্তর দিকে  ভয়ঙ্কর একটা শব্দ হলো। উত্তর দিকে ছিল পুরনো কাছারি বাড়ি। তখনো সেটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। টিনের ছাউনি ছিল। মনে হল বড়ো কোনো কাঠ বা ঐ জাতীয় কিছু সেই টিনের চালের ওপর ফেলে বৈকুণ্ঠ ডাকাত  পৌঁছানোর খবরটা দিলেন। নির্জন রাতে ভয়ঙ্কর শব্দটা হতেই পালোয়ান চারজন বাইরে বেরিয়ে গেল বল্লম আর ঢাল হাতে নিয়ে। সেজো জ্যাঠামশাই এতক্ষণ বন্দুক হাতে নিয়ে আস্ফালন করছিলেন। শব্দটা হতেই তিনি, ডাকাত ডাকাত বলতে বলতে  কেঁপে উঠে মেঝেতে পড়ে গেলেন।  সবাই জানতো, এত বড় ঘোষাল বাড়িতে দাপুটে পুরুষমানুষ বলতে মাত্র দু'জন। সেজো আর বড়োজ্যাঠামশাই। আমার বাবা  ছিলেন ছোটো। তিনি শহরে থাকতেন ব্যাবসার কারণে।আর ছিল মেজো জ্যেঠা। শুনেছি, আমার বয়স যখন তিন বছর মেজো জ্যাঠামশাই কলেরা রোগে মারা গেছিলেন। এখন মেজো জেঠি আর আমার দুই দাদা ।ওরাও ওই বাড়িতে তখন থাকতেন না।

সেজো জ্যেঠামশাই  মুর্ছা যেতেই, বড়ো জ্যেঠামশাই তক্তোপোষ থেকে নিচে নামলেন। বারান্দায় তখনো আমাদের বাড়ির সর্বক্ষণের ম্যানেজার বলো নায়েব বলো তিনি। আমরা তাঁকে হরিদাদু বলে ডাকতাম।বড়োজ্যেঠা হরিদাদুকে  বললেন, " নকুরকে এই অবস্থায় এখানে রাখা ঠিক হবে না হরিবাবু, ওকে ঘরের ভেতরে এক্ষুণি নিয়ে যেতে হবে।ধরুন।" বড়োজ্যেঠা আর হরিদাদু দুজনে মিলে সেজো জ্যাঠাকে নিচের একটা ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে দিল।  সেজোজ্যাঠা তখনো প্রায় অচৈতন্য। বাইরে তখন বিহারী পালোয়ানদের দৌড়াদৌড়ি আর চাপাস্বরে চলাফেরার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। পালোয়ানরাও ডাকাতের দলটাকে  আতিপাতি করে খুঁজে যাচ্ছেন। সকলের চোখেমুখে একটা চাপা আতঙ্ক। বাইরে থেকে লক্ষণসহিস ছুটে বারান্দায় এসে বড়ো জ্যাঠাকে বলল, " কর্তা বাবু, বৈকুণ্ঠ ডাকাত দলবল নিয়ে দক্ষিণ দিকের তালপুকুর পারের আমবাগানে  ঘাঁটি গেড়েছে।ওদেরই কেউ ঘুরে এসে উত্তরের পুরোনো কাছারি ঘরের টিনের চালে বড়ো একটা গাছের ডাল ফেলে শব্দ করেছে"। বড়ো জ্যাঠা লক্ষণসহিসকে জিজ্ঞাসা করলো, " তুই কি নিজের চোখে দেখেছিস?"
--- হ্যাঁ, কর্তা বাবু, আপনার কথামতো আমি আর ন্যাড়া সন্ধ্যা থেকেই লুকিয়ে বাড়ির চারদিকে নজর রাখছিলাম। তাতেই তো দেখলাম।"
--- পালোয়ানদের দেখাসনি, বৈকুণ্ঠ ডাকাত দের লুকিয়ে থাকার জায়গাটা?
--- পালোয়ানরা তো উত্তরের পুরনো কাছারি ঘরের চারপাশে ঘোরাফেরা করছে। আমার কথা শুনছে না বলেই তো আপনাকে জানাতে এলুম।" লক্ষণ সহিসের কথা শুনে বড়ো জ্যাঠামশাই  সামান্য সময় ভেবে নিয়ে বলল, " লক্ষণ আমি বিকেল থেকে যে কথাটা ভাবছিলাম সেটাই সত্যি হল।এবার যা করার আমাকেই করতে হবে"! বলেই বৈঠকখানা ছেড়ে গভীর অন্ধকারের মধ্যে লক্ষণকে সঙ্গে নিয়ে উঠোনে নেমে গেলেন।

বড়ো মামাদাদু কথাটা শেষ করতেই ঋদ্ধি কৌতূহল চেপে রাখতে পারলো না। সামান্য নীরবতার মধ্যেই জানতে চাইল, " মামাদাদু, তোমার বড়োজ্যাঠা কী ভেবেছিল, আর কী সত্যি হল?" এই প্রশ্ন একা ঋদ্ধির নয় ,সকলের। সমস্বরে একটা কৌতূহল উঠে এলো, " কী ভেবেছিল তোমার বড়োজ্যেঠা?"
--- দূর, আমি তখন তোদের চাইতেও ছোটো, আমি কি করে বুঝবো বড়ো জ্যেঠামশাই কী ভাবছেন। তখন আমার অবস্থাটা বোঝ। যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বসে হেঁটে ডাকাতের মোকাবেলা করার কথা ভাবা হচ্ছিল, সেখানে বড়োজ্যেঠা, সেজোজ্যেঠা, হরিদাদু, আর পালোয়ান চারজন ছিল।বড়োজ্যেঠা বন্দুক নিয়ে লক্ষণ সহিসের সঙ্গে বাইরে বেরোতেই আমি বারান্দায় একদম একা হয়ে গেলাম।তখন একটা ভয়  আমার মনের মধ্যেও চেপে বসল।আমি সিঁড়ি ধরে দোতলায় উঠে গেলাম। যেখানে  জ্যেঠাইমা দের, শিশুদের আর কাজের মহিলাদের রাখা হয়েছে।আমি সেখানে পৌঁছাতেই মা, জ্যেঠাইমা বাড়ির আশ্রিত মহিলারা সবাই মিলে আমাকে ঘরের মধ্যে ধরে রাখল পাছে আমার কোনো ক্ষতি করে ডাকাতেরা।আমি মা জ্যেঠাইমাদের কাছে আটকা পড়ে গেলাম। কিছুতেই ওরা আমাকে ছাড়ছে না। বাইরের কোনো খবরও পাচ্ছি না। আমি ভেতরে ভেতরে ছটপট করতে থাকলাম।

 ঋদ্ধি আর টুবাইয়ের, মামাদাদুর এভাবে আটকে পড়াটা সহ্য হচ্ছিল না। তখন টুবাই ঝিঁঝিঁ ডাকা অমাবষ্যার রাতে মনে মনে ঘোষাল বাড়িতে পৌঁছে গেছে ডাকাতদের ধরার জন্য। মামাদাদু আটকে পড়ায় মনে মনে আহত হয়ে বলল, " দূর মামাদাদু, এ সময় কেউ দোতলায় ওঠে। তুমি তো ঘাপটি মেরে নিচের বারান্দায় বসে থাকবে।ডাকাতরা কী করে দেখবে!"
বাকি সকলে মৌনতা দিয়ে সেটাই সমর্থন করল। মামাদাদু প্লেটে রাখা চিকেন পকোরার একটা টুকরো মুখে ভরে নিয়ে আয়েশ করে চিবোতে থাকলেন। সবাই ভয় বিস্ময় আর একাগ্রতা নিয়ে মামাদাদুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।এরপরের ঘটনাটা শোনার জন্য।

টুবাই, টুয়া, ঋদ্ধিরা জন্মাবার পর থেকেই জেনে এসেছে বড়মামাদাদু বৈকুন্ঠ ডাকাতের দলটাকে এমন প্যাঁচে ফেলেছিল যে ডাকাতরা সব ধরা পড়ে গেছিল। প্রশ্ন হোলো, বড়ো মামাদাদু যদি দোতলার    ঘরে আটকেই থাকে তাহলে কিভাবে ডাকাতদের ধরেছিল।টুবাই  শুনতে শুনতে কিছুটা ভয় পেয়ে গেছে, সেটা ওর গুটিশুটি মেরে ঘেঁষে বসাতেই টের পাওয়া গেল। টুয়া সামান্য বড়ো। ওর কৌতূহলও খুব বেশি। ও এটা বুঝতে পেরেছে মামাদাদু ওখানে বসে থাকতে পারবে না। স্বাভাবিক ভাবেই  মামাদাদুকে জিজ্ঞেস করলো, " দোতলার ঘরে আসার পর তুমি কি করলে"? এবার মামাদাদু যে কথাটা  বলল, সেটা আরও চমকপ্রদ, "এতক্ষণ যেটা শুনলি সেটা একটা ভূমিকা মাত্র।আসল কাজটা শুরু হোলো এরও এক ঘন্টা  পর। সেটা আমি না বুঝেই করে ফেলে ছিলাম।সেই ঘটনা বলার আগে  ঘোষাল দের আদিবাড়ি সম্বন্ধে তোদের একটা ধারণা দিতে হবে।
 
   তখনকার দিনে জমিদারবাড়ি গুলো তৈরি করার সময় একটা গুপ্তপথ তৈরি করা থাকতো। একমাত্র বাড়ির অভিভাবক যিনি তিনি ছাড়া খুব বিশ্বস্ত কর্মচারী থাকলে, তিনি সেটা জানতেন।আমি ভয়ে আর আতঙ্কে না বুঝে না জেনে, বহুদিনের পুরনো সেই গুপ্তপথটা খুঁজে পেয়েছিলাম। এই গুপ্তপথটা আমার ঠাকুর্দার ঠাকুর্দা  তৈরি করিয়েছিল মিস্ত্রিদের দিয়ে।পরে শুনেছি আমার ঠাকুর্দাকে
 সেই গুপ্তপথটা যেকোন কারণেই হোক দেখিয়ে যেতে পারেনি। হরিদাদুও ছিল  আমাদের তিন পুরুষের ম্যানেজার। হরিদাদু এটুকু শুধু জানতেন ঘোষাল বাড়িতে একটা গুপ্তপথ আছে। বাড়ির মেয়েদের বিপদ আছে বুঝলে ব্যবহার করা হবে। পথটি দক্ষিণ দিকের বাগান পুকুরের পাড়ে  যে শিবমন্দির আছে সেখানে গিয়ে উঠেছে।পথটা কোথার থেকে শুরু হয়েছে সেটা হরিদাদুর বাবাকে, হরিদাদুর ঠাকুর্দা ইচ্ছে করেই গোপন রেখে ছিলেন, মনিবের প্রতি বিশ্বস্ততার প্রমাণ স্বরূপ।

শুনতে শুনতে ঋদ্ধি হঠাৎই বলে ফেলল,  "দাঁড়াও দাঁড়াও মামাদাদু, ডাকাত ধরার কথা বলতে গিয়ে গোপন দরজায় চলে গেলে কেন? আমার মাথাটা ঘুলিয়ে যাচ্ছে!"
টুয়ার রসভঙ্গ হতেই বিরক্ত হয়ে ঋদ্ধিকে বলল, " দুর বোকা, তুই এত লেটে বুঝিস কেনো?  ডাকাত ধরার কথাইতো মামাদাদু বলছে।দোতলার যেই ঘরে মামাদাদু ভয়ে ওপরে উঠে গেল, মামাদাদু সেখান থেকে কি করলো সেটাই এবার শুনবো"! টুয়া সহজ করে বলে দেওয়াতে মামাদাদু সেখান থেকেই আবার শুরু করলো।

বড়ো জ্যেঠাইমা আমাকে বলল, " তুই আমার পানের বাটাটা নিয়ে আয়, অনেক্ষণ ধরে পান খাচ্ছিনা বলে, গলাটা শুকিয়ে গেছে। যা বাবা নিয়ে আয়। ওপরেই আছে।" আমাকে আর কে পায়। আমি তো জানি জ্যেঠাইমার পানের বাটা কোথায় থাকে। দোতলার বারান্দা ধরে আমি যেতেই দেখলাম  লক্ষণ সহিস  অন্ধকার বারান্দা দিয়ে রুদ্ধশ্বাসে চিৎকার করতে করতে 
একতলার সিঁড়ি ধরে ওপরে ছুটে আসছে। বলতে বলতে আসছে, "কত্তামাগো  আপুনাদের আর বাঁচাতি পারবেনে। বৈকুণ্ঠ ডাকাত এবার সব কজনরে শেষ করি দেবে।নিচের ঘর থেকে সেজো জ্যেঠার আওয়াজ পেলাম , "বড়দা  বন্দুকটা কোথায়?" সেজোজ্যাঠার কথাগুলো বড় ঘড়ের ভেতরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে অন্ধকারে। বড়োজ্যাঠার কথামতো সারা ঘোষাল বাড়ি অন্ধকার করে রাখা হয়েছে। দূর থেকে যেন বৈকুণ্ঠ ডাকাতের দল  কোনো কিছুই বুঝতে না পারে। বাইরে অমাবষ্যার ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভেতরেও তাই। আমি দোতলার বারান্দায় অন্ধকারে হাতড়াতে হাতড়াতে বড়োজ্যেঠাইমার পানের বাটা আনতে যাচ্ছিলাম। লক্ষণ সহিসের চিৎকার শুনে খুবই ভয় পেয়ে গেলাম। মনে হল বৈকুণ্ঠ ডাকাত যেন দলবল নিয়ে ওপরেই উঠে এসেছে। দোতলার বারান্দার দেয়ালে ঠাকুর্দার ঠাকুর্দা ভবানী চরণের একটা তৈলচিত্র করা ছিল। ভবানী চরণ ঘোষালই এই বংশের  প্রথম জমিদার, যিনি ইংরেজ সরকারের থেকে  জমিদারি স্বত্ত পেয়েছিলেন। তাঁরই বিশাল তৈলচিত্র দেয়ালের সঙ্গে আটকানো ছিল। ছবিটি কোনো  এক বিদেশী শিল্পীর আঁকা ছিল। ছবিটা দেখে আমাদের মনে হোত ভবানীচরণ ঘোষাল যেন জীবন্ত বসে আছেন। এত সুন্দরভাবে ছবিটা এঁকে ছিলেন সেই সাহেব। তৈলচিত্রের সামনে একটু দূরত্ব রেখে দুটো বেদী করা ছিল।বারান্দা দিয়ে যাতায়াতের সময় সময় সময় যেন ছবির সঙ্গে দূরত্ব    রাখা যায়।ঐ বেদীতে নিয়ম করে প্রদীপ জ্বালানো হোত। ঘোষাল বাড়ির যে কোনো উৎসব অনুষ্ঠানে  এই ছবির সামনে ফুল দিয়ে সাজানো হোতো।আজ ঘুটঘুটে অন্ধকার। প্রদীপ জ্বালানো হয়নি।লক্ষণ সহিসের হাহাকার, সেজো জ্যাঠার চিৎকার করে  বন্দুকের খোঁজ করার ভেতর মনে হল  দু তিন জন দ্রুত আসছে দোতলায়। অনেকগুলো পায়ের শব্দে আমি খুবই  ভয় পেয়ে গেলাম। ভবানী চরণের ছবির নিচের বেদিটাকে চোখের আন্দাজে খুঁজে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। মা জ্যেঠাইমা আর মেয়েরা আতঙ্কে চিৎকার করে কেঁদে উঠল। ভগবানকে ডাকা শুরু করল। ডাকাত বলে বিকেল থেকে যে কৌতূহল টা ছিল, এক মুহূর্তে সেটা ভয় আর আতঙ্কে আমাকে ঘিরে ধরলো। আমি চোখ বন্ধকরে ওই বেদির উপর ভবানী চরণের দিকে মুখ করে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
মনে মনে ভাবলাম যা কিছু হয়ে যাক আমি এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবো। লক্ষণ সহিস অন্ধকারে সিঁড়ি ধরে উপরে উঠেই , দোতলার বড়ো বারান্দা দিয়ে  ঘোষাল বাড়ির মেয়েদের আর শিশুদের বাঁচাতে আসছিল। ভবানী চরণের ছবির সামনে এসে, সেভাবে না জানার জন্য বেদির মধ্যে হোঁচট খেয়ে আমার শরীরের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। আমি আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলাম। আমরা দুজনেই  একসঙ্গে ভবানী চরণের ছবিতে ধাক্কা খেলাম। অদ্ভুত একটা চক্কর খেলো পুরো ফ্রেমটা। ফ্রেমসহ ছবিটা একেবারে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেল।  ছবিটা ঘুরে যেতেই আমরা দুজনেই ছবিটার পেছনে চলে গেলাম। ছবির ফ্রেমটা  আড়াআড়ি হয়ে একটা ওয়ালের মতো হয়ে গেলো। কিছুসময় পর নিজে থেকেই ফ্রেমটা ঘুরে পুরনো মতোই দেয়াল হয়ে গেল। আমরা দুজন এখন ছবির পেছনে। দেখতে পেলাম ছবির পেছনে একটা চওড়া সিঁড়ি নিচের দিকে নেমে গেছে। সিঁড়িটা নিচে নামতে নামতে ডানদিকে বামদিকে  দুদিকের সিঁড়িকে একসঙ্গে জুড়ে নিয়েছে। মূল সিঁড়িটা অন্ধকার ভেদ করে নিচের দিকে নেমে গেছে। লক্ষণ সিঁড়ি মুখে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,   "এটাই বোধহয় ঘোষাল বাড়ির গুপ্তরাস্তা।এত দিন গ্রামে অনেকের মুখে শুনেছি। আজ তুমি আর বৈকুণ্ঠ ডাকাতের জন্য রাস্তাটা দেখতে পেলাম।" আমি ভয়ে বিস্ময়ে কোনোমতে জিজ্ঞেস করলাম, " বড়ো জ্যেঠা কোথায়?"
--- বড়ো কত্তাবাবা পুকুর পাড়ে বন্দুক নিয়ে  লুকিয়ে আছে। বৈকুণ্ঠ এখনো বাড়ির ভেতরে ঢোকেনি।বাড়ি অন্ধকার বলে  ভয় পাচ্ছে ভেতরে ঢুকতে। বড়ো কত্তাবাবা আমাকে পাঠালো  এই সুযোগে বাড়ির মেয়েদের বের করে আনতে। পালোয়ানগুলোকেও বৈকুণ্ঠ ডাকাতের লোকেরা আটকে রেখেছে।  আগে কত্তামা দের বাইরে বের করি তারপর দেখাবো মজা।বড়ো কত্তাবাবা বন্দুক চালাতে  পারছে না । তুমি বাবাঠাকুর এখানে চুপটি করে থাকো। বড়ো কত্তাবাবা মশাল সঙ্গে দিয়েছে।বলেছে, দরকার হলে জ্বালাতে। মশাল না জ্বালালে কিচ্ছু করা যাবে না"।  লক্ষণ মশাল জ্বালালো। মশালের আলোতে  দেখা গেলো গুপ্ত রাস্তার পুরোটা।যে ঘরে বাড়ির মেয়েদের রাখা হয়েছে একটা সিঁড়ি সেই ঘরের সঙ্গেও যুক্ত। আমি নতুন আবিষ্কারের উৎসাহে বললাম ," লক্ষণকাকা, ঐ ঐ দিকে মা জ্যেঠাইমা আর ছোটদের রাখা হয়েছে, চলো ওদের নিয়ে আসি।" বলেই আমি আর লক্ষণ সহিস নির্দিষ্ট ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম।একটা কাঠের দরোজা পেলাম। আমার হাতে মশালটা দিয়ে দরোজাটা খুলে ফেলল লক্ষণ।দরোজা খুলতেই বড়ো একটা দেরাজে ঘরে ঢোকার রাস্তাটা আটকানো।লক্ষণ সহিস আমার মুখের দিকে চাইলো। আমি বুঝতে পারলাম, এই জায়গাটায় দোতলার বৈঠকখানা ঘরের ফার্নিচার বসানো আছে। বললাম, " লক্ষণকাকা, জোরে ধাক্কা মারো।সরে যাবে!" আন্দাজে ধাক্কা মারার কথাটা আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসতেই লক্ষণকাকা সেটাই করলো।  ফার্নিচারটা ধাক্কা খেতেই দেখলাম, একটা লোহার পিষ্টন রডের ওপর পুরো দেরাজটা ঘুরে গেল। মশালের আলো  ঘরে পড়তেই মা জেঠিমা, আর বাচ্চা গুলো চিৎকার করে উঠল। আমি লাফ দিয়ে ঘরে ঢুকে বললাম, " তোমাদের নিয়ে যেতে বড়োজ্যাঠা পাঠিয়েছে।" আমাকে আর লক্ষণকে দেখে আস্বস্থ হোল সবাই।মা জ্যোঠাইমাদের দশজনের দলটাকে ঐ পথে বের করে, ছবির পেছনে নিয়ে এলাম।ঐ টুকু সময়ের মধ্যেই বৈকুণ্ঠ ডাকাতের পুরোদলটা ঘোষাল বাড়ির ভেতরটায় ঢুকে পড়েছে। কয়েকটা মশাল জ্বালিয়েছে। ভেতরটাকে  আলোকিত করে ফেলেছে।সেজোজ্যাঠা আর হরিদাদুকে ওরা নিচের ঘর থেকে দোতলায় নিয়ে এসেছে।আমরা সেজোজ্যেঠা আর হরিদাদুর কান্না শুনতে পেলাম আড়াল থেকে। হরিদাদু বলছে , " সত্যি বলছি এ বাড়ির সিন্দুকের খবর আমি জানি না।কাছাড়িতে যা খাজনা জমা হয় বড়োকত্তা  নিজের হাতে সেটা নিয়ে আসতেন। আমি কোনদিন সিন্দুক দেখিনি! সিন্দুক কোন ঘরে তাও জানি না" এবার সেজোজ্যাঠার গলা, " বৈকুণ্ঠ ,তুই আমার হাত পা গুলো একবার খুলে দে, দ্যাখ তোকে যদি আছাড় না মারতে পারিতো আমার নাম নকুর ঘোষাল না!" বলতে বলতে সেজোজ্যেঠা আর্তনাদ করে  চিৎকার করে উঠল। মনে হল সেজোজ্যাঠাকে কেউ বল্লম দিয়ে রক্তাক্ত করে দিচ্ছে। বৈকুণ্ঠ ডাকাতের গম্ভীর হুকুম ভেসে এল, " সেজো কত্তা, আমি বলেছিলাম সদর দরোজা আর সিন্দুক খোলা রাখতে। যদি রাখতেন এই রক্তারক্তিটা করতে হোত না!" তারপর সাগরেদ দের উদ্দেশ্য করে বললেন," খুঁজে দ্যাখ, বড়কত্তা কোথায় ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে। টেনে বের করে  নিয়ে আয়! "বুঝতে পারলাম বৈকুণ্ঠ ডাকাতের দলবল সারাবাড়ি টাকে এবার  তছনছ করে দেবে। আমি তাকালাম লক্ষন সহিসের দিকে। মা জ্যেঠাইমাদের মুখ গুলো আতঙ্কে চিৎকার করতে যেতেই, লক্ষণের ইসাড়ায় সবাই চুপ করে গেল। সিঁড়ি ধরে ধরে সকলকে নিয়ে  নিচে নামতে থাকলাম। আগে লক্ষণ মশাল হাতে, আমি সবার পেছনে। খুব অল্পসময়ের মধ্যেই আমরা বাড়ির দক্ষিণ দিকের পুকুর বাগান বরাবর বোধহয় হাঁটছি। সিঁড়িপথটা খুবই প্রশস্ত ছিল। সকলেই অনায়াসে আগেপিছে হেঁটে চলতে লাগলাম। এবার সিঁড়িটা শেষ হয়ে  উপরের দিকে উঠে যেতেই একটা পাথরের চাতালে আমাদের মাথা আটকে গেল।ঐ চাতাল থেকে কোনো রাস্তা পাওয়া যায় কি না, খুঁজতে লাগলাম। মশালের আলোতে আমরা দুজনেই লক্ষ্য করলাম চাতালের মাঝবরাবর একটি দাগ।দুটো পাথরকে মুখোমুখি আটকে রাখলে যে রকম দাগ হয় , ঠিক সে রকম। লক্ষণ আমার হাতে মশালটা দিয়ে বলল, " বাবা ঠাকুর তুমি এটা ধর। পাথরটা যে করেই হোক সরাতে হবে"! লক্ষণ পাথরের দুদিকে হাত রেখে সরাতে চেষ্টা করতেই পাথরটা ফাঁক হয়ে গেল।আমরা সকলে সহজেই ওপরে উঠে এলাম। দেখলাম বাড়ির দক্ষিণ দিকে যে পুকুর বাগান আর শিবমন্দির আছে, সেই মন্দিরের চাতালেই উঠে এসেছি। লক্ষণ , চাতালের ফাঁকটাকে আবার টেনে আটকে দিল। মা জ্যেঠাইমাদের বলল, " মা ঠাকরুণ আপনারা এখেনে  লুকোয় থাকেন! ভুলেও মুখে আওয়াজ করবেন নি"!

 বড়োজ্যাঠা বন্দুক হাতে নিয়ে এতক্ষণ লক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছিল।কাছে যেতেই  জিজ্ঞাসা করলো, " এত দেরি করলি কেন?" আমি বললাম, "জ্যাঠা আমারা একটা গোপনসিঁড়ি খুঁজে পেয়েছি দোতলা থেকে সোজা শিবমন্দিরে এসে ওঠা যায়! আমরা সবাই ঐ সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসেছি"!বড়োজ্যাঠা কপাল কুঁচকে বলল, " বাবার মুখে শুনেছিলাম এবাড়িতে গুপ্তপথ আছে।বাবাকে ঠাকুরদা, চেনাবে চেনাবে বলে চেনাতে পারেনি। গৃহদেবতা বিপদের দিনে তোদের হাত দিয়ে সেই পথটা খুলে দিলেন"!আমরা তিনজন মিলে পালোয়ান চারজনকে খুঁজে বের করলাম। চারজনকে দড়ি দিয়ে হাত পা বেঁধে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছিল বৈকুণ্ঠ।মুখে কাপড় গুঁজে দিয়েছিল যাতে চিৎকার করতে না পারে। পালোয়ান দের ছাড়িয়ে নিয়ে দড়িগুলো গুছিয়ে নিল বড়োজ্যাঠা। আমিও অল্পসময়ের মধ্যেই কেমন বড়ো হয়ে গেলাম।নিচের থেকে সেজোজ্যাঠা আর হরিদাদুর চিৎকার শোনা যাচ্ছে। বড়োজ্যাঠা আগেই, ন্যাড়াকে জেলেপাড়ায় পাঠিয়েছিল। জেলেপাড়ার চল্লিশ পঞ্চাশ জনের  দল সড়কি বল্লম আর লাঠি নিয়ে পৌঁছে গেল। মশাল জ্বালালো হোল । পালোয়ান চারজন সবাইকে নিয়ে বাড়িটা ঘিড়ে ফেলতেই, বড়োজ্যাঠা  বন্দুক তাক করে একটা ফায়ার করলো উপরে।  গুলির আওয়াজ হতেই বৈকুণ্ঠ ডাকাতের পূরো দলটা দোতলার বারান্দা থেকে দেখতে পেল, মশাল আর  ঢাল সড়কি  হাতে অনেক মানুষ নিচে দাঁড়িয়ে আছে।বড়োজ্যাঠা  আবার গুলি ছুঁড়তেই একটা ডাকাতের মাথায় লাগল।ছিটকে পড়ে গেল। বড়ো জ্যাঠা এবার চিৎকার করে বলল,," বৈকুণ্ঠ বাঁচতে চাসতো হাত তুলে একএক করে নিচে নেমে আয়।রামদা, বল্লম সব নামিয়ে রাখ! তোর কথামতো সদর দরোজা খোলা রেখেছি! সিন্দুকের নাগাল তুই জীবনেও পাবিনা"!  বলেই আর একটা গুলি ছুড়লেন বন্দুক থেকে। সঙ্গে সঙ্গে দোতলার সব মশাল নিবিয়ে দিল বৈকুণ্ঠ।

শ্রেয়া ব্রজবাসী || ষষ্ঠ শ্রেণী, কালনা হিন্দু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব বর্ধমান


টুই
সায়ক সরকার
প্রথম শ্রেণী, কাজল পাবলিক একাদেমি, পূর্ব বর্ধমান


সাতসকালে পাখিগুলো
ডাকছে গাছে টুই
আরেকটুখন শুই না মাগো
আরেকটুখন শুই ৷
কখন থেকে বলছি, পাখি
চুপ করে থাক তুই
তবু কথা নেয় না কানে
ডাকবে কেবল টুই ৷
ভাল্লাগে না ভাল্লাগে না
ডাকখানা তোর টুই
বালিশ চাপা কানে আমি
ওপাশ ফিরে শুই ৷



শারদ শব্দছক – নির্মাতা সুব্রত দেব

অর্ধচন্দ্রাকৃতি : অন্য নামে দেবী, প্রথম চারে নগাধিরাজ,শেষ তিনে কন্যা

পাশাপাশি: ১) তিথি বিশেষ, এর পরেই দেবীপক্ষ শুরু ৫) অমল —- পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া
৭) দশহরা বা দশেরা উৎসব পালিত হয় শ্রীরামচন্দ্র কর্তৃক —--- বধ স্মরণ করে
৯) 'মহিষ', দেবীর পদতলে যা ছিন্নস্কন্ধ
১১) দেবমূর্তি,বিগ্রহ
১২) হস্ত পরিচয়ে দেবী দুর্গা
১৩) দেবীকে 'রত্নহার' প্রদানকারী কুবের, লম্বা বাঁকানো ঠোঁটের পাখি
১৪) শিব যখন কার্তিক বাহন ময়ূর
উপরনিচ : ২) ভুঁড়ো গণেশ
 ৩) দেবীর জাগরণ ক্রিয়া,উদ্বোধন 
৪) সমুদ্রজাত লক্ষমী    ৬) শ্রী রামচন্দ্র কর্তৃক শরৎকালীন পূজা ৮)  —-- পত্রিকা/ রাত্রি
১০) শরতের প্রতীক
১১) দেবীকে 'কমন্ডলু' প্রদানকারী ব্রহ্মা
১২) পূজার শেষ দিন

সমাধান: অর্ধচন্দ্রাকৃতি : হিমালয় নন্দিনী
পাশাপাশি: ১) মহালয়া ৫) ধবল ৭) দ্শানন ৯) কাসর
১১) প্রতিমা ১২) দশভুজা ১৩) ধনেশ ১৪) সিতিকণ্ঠ
উপরনিচ: ২)   লম্বোদর ৩) বোধন ৪) জলধি কুমারী 
৬) অকাল বোধন ৮) নব ১০) কাশ ১১) প্রজাপতি 
১২) দশমী 


পাঠপ্রতিক্রিয়া
(ছোটোবেলা ১০৬ তম সংখ্যার পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখে পাঠিয়েছে পার্থ দে)  


আমি জ্বলদর্চির daily পাঠক নই কিন্তু তাই বলে আগ্রহী নই তা নয়। বিভিন্ন কারণে সংযোগ না থাকলেও জ্বলদর্চির প্রতিয়াতি সংখ্যাই খুব পছন্দের।  
সম্পাদক মহাশয়া মৌসুমী ঘোষ mam এর কাছে আমার কৃতজ্ঞতা। প্রতিবারের মতো এবারও হয়ত আমি ভুল না হলে জ্বলদর্চি বহু বিষয়ে যেভাবে বহু তথ্যের সম্মিলন ঘটায় তা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলা সাজে না। 

একদিকে UNESCO র কলকাতা তথা বাংলার দুর্গাপুজোর স্বীকৃতি তারপর মায়ের সন্তান দের প্রতি মর্ত্যে অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংঘটিত তেভাগা আন্দোলনের ৭৫ বছর নিয়ে গল্পকারে সমগ্র সূচীপত্র টাকে তুলে ধরা ,  ব্যাপার টা এই পত্রিকার সর্বসময়ের প্রশংসনীয় একটি বৈশিষ্ট্য আমি যদি ভুল না হই।

আমি অশোক নগর নিবাসী। সুশীল সেন আমার কাছে অপরিচিত আর আমি অশোকনগর এ বাস করি সেটা আমি তথা এই ভঙ্গির অন্য কেউ থেকে থাকলে তাদের পক্ষেও লজ্জার ও অপমানের। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম সুশীল সেন সম্পর্কে, ওনার অবাদান সম্পর্কে কিছু জানার সৌভাগ্য আমার বা আমাদের হয়েছে। এক্ষেত্রে অশোকনগর আনন্দ ধারা এবং শুভাশীষ চক্রবর্তী র মতো মানুষেরা বিশেষ ভূমিকা নিচ্ছেন, সে বিষয়ে বা তাদের কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে একটি সংখ্যা হয়ে যাবে। এমন একজন নেতা, মহান ব্যক্তিত্বর কথা সত্যি বলতে ম্যাম জলদর্চীর শোভা ত বারালোই আমাদেরও কোননা কোনো ভাবে অনুপ্রাণিত, প্রশংসিত করছে। দারুণ!! তথ্য সমাহার নিয়ে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আমরা নেই। এত নিখুঁত পর্যবেক্ষণ। ধন্যবাদ আপনাকে ব্যক্তিগত ভাবে।

তারপর 'শয়তানের উঁকি' নিয়মিত না হলে যা হয়। কিন্তু বোঝা গেলো সমাজের কোনো এক উৎসবেরই বর্ণনা ফুটে উঠেছে।

   'বাতাস জুড়ে নিকট দূরে পুজোর ছবি আঁকা , অভাব অসুর ছিঁড়েছে সুর পথঘাট সব ফাঁকা' বেশ!!

'মাটির ঘোড়া' সাহিত্যিক মানুষের এটি একটি গুণ বা positive point বলা যায়, তারা একটি শব্দ দিয়ে একটি কবিতা, একটি গল্প বা ঘণ্টা দেড়েক এর একটি বক্তৃতা উপস্হাপন করতে অসুবিধা বোধ করেন না, হয়ও না। মুলে একটি **শব্দ! তারাপ্রসাদ স্যার ' মাটির ঘোড়া' র আড়ালে যেভাবে বাঁকুড়ার লাল মাটির ঐতিহ্য সংস্কৃতি গুলি কে তুলে ধরলেন পড়ে বলাই যায় উপরোক্ত উক্তিটি ভুল নয়।

'মধ্যরাতের নেকড়ে' শ্রীকান্ত স্যার সাসপেন্সটা কিন্তু দারুণ ছিল। আদৌও কি ভুত ছিল নাকি ওটা?  হলেও হয়ত পাঁঠার মাংসরই জন্য! সত্যিই তো অত রাতে ওরম মাঠ দিয়ে কেউ নিয়ে যায় নাকি মাংস! তাও আবার পাঁঠার, হ্যাঁ?! 

আমাদের পরিবারের কথা বলতে গেলে, হয়ত পারিবারিক কারণের পাশাপাশি , সমাজের mordernism এর প্রভাবেই হাঁড়িটা আলাদা হয়েছে কিন্তু ভগবানের আশীর্বাদে বাড়িটা এক। গৌতম স্যার ওই জায়গাটা 
' পুরো শহরটাই তো ছেলেধরার গল্প ভাসছে ..... তখন একটা বাড়িতে কত জায়গা, বাবা - জেঠু - কাকা- মাসী - পিসি সব নিয়ে বাড়ি ভরে আছে।' 
বাড়িটা আলাদা হওয়ার সাথে সাথে সহানুভূতি, ভালোবাসা, ঠাম্মার জোর করে ভাত পাতে মাছ তুলে দেওয়া সেগুলোও ভাগ হয়ে গেছে।

বাসবদত্তা ম্যাম, সত্যিই দক্ষিণের জানালাটার সাবেকি পাল্লা দুটো খুলে গেলো।

    সর্বোপরি আবারও সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক ভাবধারার, অসমুদ্র তথ্যের মিলনটা প্রশংসনীয় ম্যাম।
 
পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

1 Comments

  1. তৃষ্ণা বসাকের ধারাবাহিকটি পড়ার আগ্রহ তৈরি করলো। শুভেচ্ছা সম্পাদককে।

    ReplyDelete