অনুভব
সঞ্জীব ভট্টাচার্য
আর পারছে না শাশ্বত। সেই ভোরের ট্রেন ধরে কলকাতা।রাতে আবার মেদিনীপুর। প্রায় আড়াই শো কিলোমিটার। মাঝে কাটা জার্নি। ছেলে ভালো কলেজে সুযোগ পেয়েছে,হোস্টেল পায় নি।সব দিক দিয়ে নিরুপায় হয়েই আপৎকালিন এই ব্যবস্থা। তাও এক সপ্তাহ শেষ হতে চলল।এখনো কোনো আশার আলো দেখছে না সে।
তার ডান দিকের কাঁধটা অনেকক্ষন ধরে বেশ ব্যথা করছে।পাশেই ছেলেটা ঝিমুচ্ছে। মুখটা কেমন শুকিয়ে ছোটো হয়ে গেছে।কখন যে বড় হল?কেন যে বড় হয়ে গেল!
হঠাৎ ছেলেটা তাকে জড়িয়ে ধরে তার ব্যথা-কাঁধটাতে মাথা রাখলো।প্রথমে শাশ্বতর মনে হল তার কাঁধটা যেন যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাবে।সে হাতটা বাড়াচ্ছিলো মাথাটা সরিয়ে দেওয়ার জন্য।কিন্তু মাঝপথে থেমে গেল। মনে হল একমুহূর্তে ব্যথাটা যেন কোথাও উধাও হয়ে গেছে।
ঘুরে দাঁড়ানো
সন্দীপ দত্ত
গরামথানে কপাল ঠুকে এসে পোকাধরা আমগাছটার তলায় বসেছিল মাধব। হেঁশেল থেকে গলা তুলে টগরী বলল,"ও বেলা তোমায় একবার শিবদালান যেতে হবে গো। ষোলোআনার মিটিং বসবে।যতীনখুড়ো এসে বলে গেল।"
এ গাঁয়ে ষোলোআনার মিটিং বছরে গুনে গুনে মাত্র দুবার বসে। চোতের গোড়ায় ধূলিঝড়ের পর নিমগাছগুলোতে যখন কচিপাতারা লকলক করে,পলাশ তার আগুন ছড়িয়ে রাঙিয়ে দেয় গাঁ,তখন একবার। ওটা হয় শীতলাপুজোর জন্য। আর একবার মুরুব্বিদের সভা বসে বাঁধনার ঠিক আগেটায়। তালপুকুরের মাঠে মহিষ খুটোনোর জন্য।
কিন্তু এবারের মিটিংটা বসল গাঁয়ের সহজসরল মানুষগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। তিনদিন ধরে বইপত্তরের সমস্ত পাঠ চুকিয়ে,গাঁয়ের বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোকে ঘরবন্দি রেখে ইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রসিকলাল পার্টির নেতাদের তেলতোয়াজ করে নিজের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য পুরো বিল্ডিংটাকেই যেন লজ বানাবেন।
তাই প্রতিবাদস্বরূপ গাঁয়ের সব লোককে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হবে। ইস্কুল বিল্ডিংটা তো কারও বাপের সম্পত্তি নয়! এটা ঘুরে দাঁড়ানোর যুগ। বুকে বারুদ পুরে নেওয়ার কাল।
জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে 👇
3 Comments
দুটি অনুগল্পই অসাধারণ!
ReplyDeleteদুটো গল্পই খুব ভালো লাগলো
ReplyDeleteদুটি অণুগল্পই খুব ভালো লাগল
ReplyDelete