জ্বলদর্চি

সারবন্দী গলি ও একজন মৃত মানুষের গদ্যরচনা/ ইলিয়াস খাঁ

 সারবন্দী গলি ও একজন মৃত মানুষের গদ্যরচনা  
                                                                                   ইলিয়াস খাঁ 
                                                           

দুপুর গড়িয়ে চললেও আমার শান্ত ও পরম্পরাশূন্য কার্যাবলী থেমে আছে। এ ফোর সাইজ পেপার কিছুটা বিমনায় আক্রান্ত। মাত্র ক্ষণস্থায়ী কথোপকথনের থেমে যাওয়া। ক্রিয়াপদের ভার সংযত রেখে আগামী কাজের জন্য থমকে আছে কার্যাবলী। তারপর তো সিলিং ছুঁয়ে ফেলবে তার আত্মহত্যাপ্রবণ হৃদয়ের সংবেদনা। বোধ সম্পর্কে লিখিত ইস্তেহার একজন লেখকের মস্তিষ্কপ্রসূত। অথচ সরগরম পরকীয়া পাড়াচলতি  প্রভাতফেরী। 
দুজন মানুষ একে অপরকে জানলো আর দিঘির পাড় ধ্বস গ্রহণ করে অনেক অভ্যন্তরে মিথ্যা কথার কারসাজি সাজিয়ে বসে আছে। অথচ স্কুল পড়ার জন্যই থমকে আছে লেখা নামক মিথস্ক্রিয়া প্রক্রিয়াটি। যেন ফেসবুক পোষ্ট কপিপেস্ট করে অখ্যাতনামা দৈনিকে এবং বিবেচনার দোহাই দিয়ে প্রেরণ করে কয়েক মাস স্কুল পড়ার অজুহাত। তুমি লিখবে আর অন্য কেউ  তার অনন্য ভাবনায় বদলে ফেলবে কায়িক শ্রমের ক্লান্তি। অবসাদ, সাংসারিক কর্তব্য ও নিষ্ঠা—বিশ্বস্থ সরাইখানায় মজুরির মহামারী (অমুকের চেয়ে তমুক মজুরি বেশি পায়) । 
বিশেষ্য ও বিশেষণের আগে পিছে অযাচিত বাঁশপাতা নড়ে। এদিকে অব্যয় বাক্যের ঠিক কোন স্থানে স্থাপন করলে বিদ্বেষ সংযত করা যেত?অর্থাৎ মধ্যবয়স্ক মহিলার চুম্বনের লালারস কণ্ঠনালী অবধি পৌঁছে যাচ্ছে। সবটাই যেহেতু শর্তসাপেক্ষ তুলনায় নিয়ম ছাড়া বাক্যের ব্যবহার রচনায় ঔচিত্যবোধ শিথিল করবে কি! 
শিরিষ গাছে  সকালের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। উনুনের ধোঁয়ায় নিরিবিলি পাড়াটাতে কার যেন চোখে জল। তার জলপ্রবণতা বিষয়ে উদ্ভিদজগতের চপলতা নেই। যেমন- ‘মিনুদের কালো বিড়ালটি বাড়ি থেকে পালিয়েছে। ‘—বিষয়ে মিনু ঘরবন্দী ছিল সপ্তাহকাল। তথ্য টুকু কেন্দ্র করে পাড়ায় চোখের জলের উপমা গদ্য লেখার চক্রব্যূহ। রচনার গতিপথ যত প্রসারিত হবে অশ্রু  পতনের ঘনত্ব গাঢ় হবে ক্রমশ। এবার পাত্র জোগাড় আর মনোবিকলনের ফরমান। 
আমি তাকে পুতুল কিনে দিয়েছিলাম। এবং সপ্তাহকাল ঘরবন্দী থেকে যখন বেরিয়ে এসেছিল তার চোখে দেখেছিলাম আসমুদ্রহিমাচল  জলপ্রবণতার বিষাদ। 
সে কি একজন অপ্রত্যাশিত মনখারাপ? যাবতীয় আকাঙ্খায় জল ঢেলে দিল এবং হতে হতে যে আটকে গেল সম্মেলনের ধারাবাহিকতা। শহরজুড়ে প্রত্যাঘাতের কার্ফু জারি হয়েছে। ফুটপাতের রেলিং-এ মিছিলের ধাবমান স্রোত। মধ্যরাত এবং শক্তি চট্টোপাধ্যায়--- 
           “ পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলটল করে, দেয়ালে দেয়ালে, কার্নিশে কার্ণিশ, 
                                                               ফুটপাত বদল হয় মধ্যরাতে 
            বাড়ি ফেরার সময়, বাড়ির ভিতর বাড়ি, পায়ের ভিতর পা, 
                                                       বুকের ভিতর বুক 
          আর কিছু নয় ---( আরো অনেক কিছু?) তারও আগে 
          পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলটল করে দেয়ালে দেয়াল, কার্নিশে কার্ণিশ 
                                             ফুটপাত বদল হয় মধ্যরাতে “ 

এতদূর এসে মেয়েটির সৌখিন বাগানের কথা মনে পড়লো। তার বাড়ি এবং বাগানের সঙ্গে আমার চাক্ষুষ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। আলাপের চল এপাড়ায় তেমন নেই। চলতে ফিরতে যেটুকু অপাঙ্গপাত! যেহেতু উঁকিঝুঁকি দেওয়ার বয়স এ নয়। ঘাড় ফিরিয়ে তাকানো, মিস্টির প্যাকেট ও ব্যাকডেটেড। পাড়ার সিনেমাহল বিকেলে আসর বসাবে। গল্প বলার দাদুদিদিরা ব্যাকস্টেজে অবসর ও আড্ডার তদারকি করছে। জীবন্ত ফানুস ও আসমানী তারাদের দিনের আলোয় দেখা যাচ্ছে না। অদৃশ্যপ্রায় দৃশ্যের প্রকাশ্যমআনতায় সৌখিন বাগানের মেয়েটি টালমাটাল পায়ে সম্মেলন ফেরত বিমর্ষতায় --- 
                         “স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে 
                                                 কে বাঁচিতে চায়। “ 

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 
যে কোনো লেখায় একধরনের সরীসৃপ বাতুলতা। সামান্য একটা খাল বা  তিন কাঠির একটা বেড়া, ফাঁদে পড়া সালতির ভাসমানতা ---  কিছুতেই দুর্দমনীয়তাকে বিরতি দেওয়া যাচ্ছে না। মারপ্যাঁচে আটকে পড়ার ব্যথাতু্র আর্তি। হোল্ড অন। থামো।পিছে মুড়ো। আলবিদা। আলবিদা। বাপুজি কেকের বহিরাংশ। গতকাল আজ এবং আগামীকাল ভবিষ্যতের দিশারী। 

বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনীর বিশেষ কায়দায় টোকা দিলে খালের জল আরো তরঙ্গায়িত হয়ে ওঠে। 

অন্ততঃ এই মুহূর্তে রোদের ঝালর যখন পূর্ব কোণে ঈষৎ বে-আব্রু নেমে আসছে। ঝালরের প্রান্তদেশে নির্মীয়মান  অট্টালিকার ভাঙাচোরা কাঠামো। কাঠামোয় বিবাহ-সম্ভাবনাহীন ইট-বালি-পাথরের স্তূপ। চুন সুরকির বিশ্বে বেওয়ারিশ। গঠন-সম্ভাবনা জাগলে অনতিমেঘভারের কষ্ট লাঘব করবে চোরাস্রোত …  

কারো অস্পৃশ্য জনিত তাড়নায় মনখারাপের মিথ্যা বসে থাকা নেই। স্রোতের অনুবর্তী প্রেমিকার তাই রুদ্ধশ্বাস কলসেন্টারগামী উচাটন। শ্রমিক। চুন সুরকি। হাতের বলয়ে দেশি-বিদেশি কঙ্কন আর বিস্মৃতির কারুকার্য সমন্বিত অলংকার-সম্ভার। নামমাত্র আভরণ। হস্ত ধৃত বৃষ্টির ফোঁটা চুঁইয়ে চুঁইয়ে নামছে পাঁচ আঙুলের নিন্ম ভাগের যে নগ্ন বাহু…  

অভাবনীয় কোনো দিকনির্দেশ নেই। কিছু ফ্যান্টাসির ফেনিল আবর্ত। রুচি বিকারের শিক্ষিত পর্দা। বয়ে যাচ্ছে সো-কলড নঞর্থক প্রত্যাখ্যান। অথচ চটজলদি মীমাংসায় সদর দফতর কুক্ষিগত। ঘেরাটোপ। এবং খোপের পর খোপ। পায়রার নাকি মানুষের সাজুয্য নির্ভর গতি তৎপরতা!

Post a Comment

0 Comments