জ্বলদর্চি

দিনুদার সাথে এক-দুই ঘন্টা /গৌতম বাড়ই

দিনুদার সাথে এক-দুই ঘন্টা
গৌতম বাড়ই 


রবিবারের ডায়েরি

ভগবান জাঁদরেল আর পিন্টুলাল রাস্কেলের কথা।

রবিবার কাজের ছুটিবার। আমরা যারা নিত্য- নৈমিত্তিক
অফিসের বাবুয়ানা-বিবিয়ানি করি। তবে ক্যালেন্ডারে এই রবিবারে দিকে তাকিয়ে মেজাজ হালুম হয়ে গেল। একটা গোটা বড়দিনের ছুটি গিলে তিনি বিদায় নিচ্ছেন। তবে বড়দিন বলে কথা, একটা ঝাক্কাস সারাদিনের ট্যুর না মারলে হয়! তো নাও শনিবারেই সপ্তাহের বাজার সেরে ফ্যালো। বাজারে ঢুকতেই দিনুদার সাথে খানিকটা চোখাচুখি হলো। দিনুদা বুঝে গেল বাজার ঝড়ের গতিতে সেরেই আড্ডা হবে। আড্ডা হল দেশ- কাল- ভূগোল- জেল- থানা- পরদেশ- আদেশ সব নিয়ে। দিনুদার কাছ থেকেই জানতে পারলাম আজ প্রথম ভগবান জাঁদরেল আর পিন্টুলাল রাস্কেলের কথা। এই যে এলাকাগুলো, শহর হলে মিউনিসিপ্যালিটি বা কর্পোরেশনের ওয়ার্ড, গ্রাম হলে এলাকা নির্দিষ্ট করা আছে, রাজ- মহারাজ- জমিদার- ব্রিটিশরাজ বিদেয় হলেও এখনও প্রজাদের নয় , রাজনৈতিক ক্ষমতাবানদের হাতে সবকিছু। 

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 

এই যে আমার নতুন ব্যাবসা আর অফিস করেছি কত দিতে হয় জানা আছে পিন্টুলাল রাস্কেল কে হপ্তায়- হপ্তায়? --- আমার দিকে চেয়ে শুধোল দিনুদা। আমি বললাম- দিতে হয় জানি। কত করে দিতে হয় তা তো জানি না। আমাকেই পিন্টুলাল ভেবে নিয়ে গর্জে উঠলেন দিনুদা--- আড়াইশো হপ্তা-হপ্তা। কেন রে বাবা আমরা সাথেও নেই পাঁচেও নেই, সিধেসাদা আয় করে সরকারকে রাজস্ব দেওয়া আম আদমি, তবে বেআইনি একটা সমান্তরাল সরকার চলছে? ঐ আসল সরকারটি কোথায়? আমি বললাম দিনুদাকে-- তা আইন প্রশাসন তো আছে, স্থানীয় থানায় জানাননি? দিনুদা আবারও গর্জে উঠলেন--- আলবাৎ জানিয়েছি, আর ওটাই কেলো হলো। পিন্টুলালের উপরে আছে ভগবান জাঁদরেল, তা কী জানতাম! এসে হাজির, পুরো আধঘন্টা ননস্টপ মাস্তানি শাসানি চেঁচানি তিনদিন আগে দিয়ে গিয়েছে আমাকে ভরা বাজারে। বলেছে আমাকে- আমি পোশাসন -থানা - পুলিশ সব। আমায় টেক্স না দিয়ে  এখান থেকে একটা মুরগির আন্ডাও নিকলাবে না। তুমি শালা থানায় থোক্কা দিয়েছো পিন্টু রাস্কেলের নামে, ছিল দু'শো, এবার থেকে হপ্তা আড়াই'শো হল। 
এদের আবার বাপের উপরে বাপ, তার উপরে বাপ। কত যে বাপ! এই রঙ্গে বুকের ভেতর বেদনা বাজে কত। দিনুদার সাথে আরও একটু গেঁজিয়ে চলে এলুম বাড়ি। 


আর এক রবিবারের ডায়েরি

যেখানে যাই, পয়সা তোলার খাঁচাকল ভাই!

রবিবার, পরিবার নিয়ে নতুন বছর মানাব , তো একটু- আধটু বেড়িয়ে পরা। বকখালি, যে হাতানিয়া আর দোয়ানিয়ার নতুন সেতু পেরিয়েছি দশ দুগুণে কুড়ি টাকা টোল দিয়ে , এই জানুয়ারি এক তারিখে তা হয়ে গিয়েছে চল্লিশ দুগুণে আশি চারচাকার গাড়িতে। তারপর তো কার পার্কিংয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা সব খানেই আছে, কোথাও পঞ্চাশ, কোথাও ষাট, কোথাও একশ দেড়শ - যার যা খুশি। সমিতি - কমিটি করে ছাপিয়ে নিলেই হল। মনে ডর লাগে রাজ্যটা কি সত্যি ভিখারি হয়ে গেল? এত যে ট্যাক্স এডভ্যান্স নিয়েও একশ কিলোমিটার দূরত্বে গেলেও আরও কত- শত আদায়ির বন্দোবস্ত কেন? সয়ে গেছে, আমাদের সয়ে গেছে সব। লোকের ঢল, বকখালিতে মানুষখালি। ফিরতি পথে , সে মসৃণ পথ হলে কী হবে? শুধুমাত্র সুসংহত ট্রাফিক ব্যাবস্থার ঘাটতিতে আর প্রশাসনের উদাসীনতায় দু- আড়াইঘন্টার পথ পাঁচঘন্টায় এলাম। 
এত- এত সরকারি আর বে- সরকারি রাজস্ব দেওয়ার পর এটুকু তো সাধারণ জনগণ চাইতেই পারে। পথ তুমি কার? যে পথকর দেয় তার-- এই তো একমাত্র উত্তর হওয়া উচিত। 

দিনুদাকে বললাম বেড়িয়ে এসে। দিনুদা বললেন-- ভাইয়া আসলে আমরা কেউ ভালো নেই, আর ভালো নেই বলে কারো মনে আলো নেই। তবে যত আলো আছে ঐ পথে- পথে--- । বলে মুচকি হাসলেন আমার দিকে তাকিয়ে। আর আমিও দিনুদাকে ধরিয়ে দিলাম আরো একটি ধুন।
--- আর আছে ভগবান জাঁদরেল আর পিন্টুলাল রাসকেলদের বারফাট্টানি সব জায়গায়। আসল ভগবানরা ঘুমিয়ে আছেন বলেই। 

শেষ

Post a Comment

0 Comments