চারটি কবিতা
নন্দিতা দাস চৌধুরী
আমি কেন বেঁধে নেই
নিদৃষ্ট এক ছন্দে পাখী ডেকে যায় আমার জানালার পাশে বসে , কে শেখালো তাকে?
অদ্ভুত এক ছন্দে সাগরের ঢেউএর মন্ত্রপাঠ ব্রম্মন্ডে ধ্বনীত, কে শেখালো তাকে?
নদীতো একই ছন্দে বয়ে চলে মোহনায় কে এনে দিলো তার গতি?
শিশির ভেজা পদ্ম ফোটা ভোরে প্রতিনিয়ত সূর্যের আছড়ে পড়া আলোর সুরে জেগে ওঠে বসুন্ধরা, এতো যত্ন করে সেই সুর কে সেধে গেলো?
অচ্ছেদ্য ছন্দে মৌমাছির গুঞ্জনে ফুল জেগে ওঠে বাগানে, এই গুনগুনানীই বা কোন পাঠশালার পাঠ?
রাত্রির খোঁপায় চন্দ্রমল্লিকা সেজে ওঠে নক্ষত্রের প্রেমে সেই ছড়িয়ে পড়া আঁধারের গায়ে প্রেমের বিশ্ব মোহন রূপ কে দিল?
আমি আজীবন কলে পাম্প করে গেলাম আমার কলসীতো আজও শূন্য পড়ে রইল কৈ জলতো ভরলোনা?
সেই অচ্ছেদ্য ছন্দের বন্ধনে আমি কেন বেঁধে নেই ?
অবগুন্ঠনে ডুবে যাই
মাঝ রাতের যে ভাবনা তোমায় রাত ভর জাগিয়ে রাখে আমি হন হন করে ছুটে যাই সেই আচ্ছন্ন করা ভাবনার কাছে,
নক্ষত্র মাখা রাতের গন্ধে যেখানে তোমার সাগর চোখের ক্যানভাসে মেঘ ভাঙা শব্দ ভাঙার উল্লাসী নৃত্যের জলছবি আঁকা, আমি ছুটে যাই,
ঝুমুরের সাথে মাদলের সুরে উপসুরে নিরবধি ছুঁয়ে থাকার কৌশল নিই, ভালোবাসলে নিজের তো আর কিছুই থাকেনা পায়ে পায়ে হোঁচট খেয়ে মরতে হয়,
অপরাজিতার নীল রঙ বারবার আমায় কাঙাল করে যেমন করে গজলের সরগম,
পাশানের মাঝে শিল্পের সৃষ্টি তাই বলে পাশানই শিল্প নয়,
একটা শব্দহীন কাতরতা আমার দোরগোড়ায় পাথর ভাঙে পাহাড় ভাঙে আকাশ ভাঙে,ক্রমান্বয়ে আমি কালের চিতার অবগুন্ঠনে ডুবে যাই।
জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇
নির্মাল্য পথে
সীমানা পেরিয়ে সীমানার খোঁজে হাত বাড়িয়েছিলাম দূর পারাপার প্রান্তরে যেখানে অবসন্ন হয় ভোরের আঁধার,
শেষ বেলার বাউল ভাবনার সীমারেখায় সায়ন্তিকা আকাশ তলে নেমে এলে একাকীত্বের সুরপতি অনন্ত রহস্যের অতন্দ্র জাগ্রত পূর্ণশক্তি বিরাট,
আনন্দ সৌগন্ধে উচ্ছ্বলিত শেষ বেলার বসন্ত,
রাতের পাখায় পাখী ঝরিয়ে ছিলো পালক শীতল অতলে আলোকধৌত চিরস্নিগ্ধ নিঃশব্দ অনুভূতির অস্তরাগের নির্মাল্য পথে।
যে বসন্ত সৃষ্টিচক্রের আবর্তে ঘুরছিল তার অন্তিম ছুঁয়ে আসে মহাসাগরের ডাক।
হেমন্তিকা
ঋতুচক্রকে হাতের মুঠোয় রাখতে চাইলেই কি রাখা যায়?
শরতের বিদায় বিদুর বাঁশীর সুরে কাশফুল ঝরে ,
ফসলের সোহাগী আঁচল ধীরে ধীরে উড়তে থাকে সোনালী ধানের শীষে,
শুভ্র মেঘেরা দল বেঁধে যায় যেখানে বলাকা উড়ে সন্ন্যাসী বিকেলের শেষে ভুবনডাঙা মাঠের ওপ্রান্তে,
নবান্নের আহ্বানে আলপনা আর রঙ্গোলীর মহোৎসবের গন্ধ ছড়ায় গেরস্থের নিকোনো উঠোনে ,
জ্বলে ওঠে আকাশ প্রদীপ সেজে ওঠে হেমন্তিকা,
ঘরে ঘরে দীপান্বীতা আর দীপ জ্বলে অমরাবতীর পবিত্র ভাসানে।
জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে 👇
0 Comments