জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১১৭

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১১৭


সম্পাদকীয়,
আজ পৌষ সংক্রান্তি। পৌষ সংক্রান্তি বা মকরের ভোরবেলায় পুরুলিয়ার মেয়েরা দলবদ্ধভাবে গান গাইতে গাইতে টুসু দেবীকে বাঁশ বা কাঠের তৈরী রঙিন কাগজে সজ্জিত চৌডল বা চতুর্দোলায় বসিয়ে নদী বা পুকুরে নিয়ে যান। সুদীপ আঙ্কেলের তোলা সেই ছবি আজ মকরের দিনে ছোটোবেলার প্রচ্ছদ হিসেবে দিতে পেরে আমি খুব খুশি। আর তোমরা? তোমরা নিশ্চয়ই এতক্ষণে মা-ঠাম্মার তৈরি পিঠে পায়েস খেতে বসে গেছো? আমি অবশ্য সরুচাকলি খেজুর গুড় দিয়ে খাচ্ছি। ওটাই আমার পৌষ সংক্রান্তির ফেভারিট ডিশ, আসরফী আন্টির মতো, থুড়ি, আসরফি আন্টির গল্পের চরিত্রের মতো। গল্পটার নাম কি? গল্পটার চরিত্রের নাম কি?  জানতে হলে পড়ে নাও গল্পটি। শীতের দিনে রোদে পিঠ দিয়ে যেমন পিঠে খেতে ভালো লাগে ঠিক তেমনই ভালো লাগে রাতে ভূতের গল্প পড়তে। তাই প্রবাহনীলের ডায়রির পাতা থেকে তোমাদের জন্য তুলে দিলাম লেখাটি। এবারের সংখ্যায় সঞ্চিতা একটা মেয়ের ছবি এঁকেছে তার মাথায় সুন্দর দুটো হলুদ সূর্যমুখী ফুল। এদিকে বিনোদ আঙ্কেল তাঁর ছড়ায় লিখেছেন, হল্লা করে হলুদ ফুল। সে কি আগে জানতাম না তো! তোমরা জানতে নাকি? ফুলের কথায় মনে পড়ে গেল শিবের প্রিয় ফুল আকন্দ আর কলকে। আর শিউলি। হ্যাঁগো ঠিকই বলছি। বিশ্বাস নাহলে তৃষ্ণা আন্টির জয়াবতীর জয়যাত্রা পড়ে জেনে নাও। আর দোলনচাঁপা আন্টির লেখা থেকে নেতাজীর জন্মদিনের কথা জেনে নাও। রূপা আন্টির পাঠ প্রতিক্রিয়া প্রতিবারের মতোই সুন্দর। আরো সুন্দর দুটি আঁকা এবারের সংখ্যায় আছে। সেই আঁকাদুটি এঁকেছে জয়দীপ আর সুনেত্রা। সবশেষে বলে রাখি পিঠে কিন্তু রেখে খেও। না না আমার জন্য নয়। নিজেদের জন্য । কারণ বাসী পিঠের স্বাদ আরো বেশি। -- মৌসুমী ঘোষ।




ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর জয়যাত্রা
তৃষ্ণা বসাক


৪২ পর্ব

৪৬
আমি তখন খুব ছোট, আমার বাপ আবার বে করে আনল।
-তোর মা কোতায় ছিল? মানে তোর মা বেঁচে থাকতেই?
-হ্যাঁ, আমার কেন ভাই হয় না, মায়ের মাথার গণ্ডগোল আছে, এইসব বলে মাকে তাড়িয়ে দিল বাড়ি থেকে।
-তাড়িয়ে দিল!
একটা চাপা হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে ওদের মধ্যে।
কথা হচ্ছিল বুড়োশিবতলার মন্দিরের চাতালে বসে। ডাকাত চারটেকে লেঠেলরা পিছমুড়ো করে বেঁধে নিয়ে গেছে। ওরা জমিদারমশাইকে বলে আর একটু বসতে চেয়েছে এইখানটাতে। এত শান্তি এই জায়গাটায়। বিশেষ করে শরতের রোদে চারদিক ঝলমল করছে। কী আশ্চর্য, একটা শিউলি ফুল ফুটে আছে মন্দিরের পাশেই। পিতাঠাকুর একবার বলেছিলেন শিউলি ফুলের আর এক নাম হর কি শৃঙ্গার। এর মানে হচ্ছে শিবের সাজে লাগে এই ফুল। নাহ, মা দুগগার দেখছি সব দিকে নজর আছে। সোয়ামীর সাজের জন্য আবার ফুল পাটিয়ে দিয়েছেন মনে করে। পেছন দিকটায় আকন্দ ফুল আর কলকে ফুলও ফুটেছে একরাশ। আর একটা বেলগাছ। মানে একসময় শিবের পুজো খুব পরিপাটি করেই হত। তারপর কী কারণে কে জানে, এই মন্দির পোড়ো হয়ে গেল, কেউ আর আসে না পুজো দিতে। সবাই বলে এখানে ভূত আছে। তার মানে হয়তো ডাকাতরা গ্রামে চর ছড়িয়ে রেখেছিল। তারাই এইসব রটিয়েছে। আসলে এই জঙ্গলে ওদের একটা ডেরা আছে, সেখানে ওদের লুঠের গয়নাগাটি, বাসনকোসন সব লুকোনো থাকে।
কেউ যাতে জানতে না পারে, তার জন্যে ওরা ভূতের গল্প রটিয়েছিল। মন্দিরটি পুরোনো বটে, কিন্তু তেমন ভাঙ্গাচোরা নয়। অল্প একটু সারিয়ে কলি ফেরালেই বেশ হবে। জয়াবতী ঠিক করল জমিদারমশাইকে বলতে হবে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একটু  পায়ে চলার পথ করে দিতে, যাতে অন্তত শিবরাত্রি আর অন্য অন্য তিথিতে এখানে সবাই পুজো দিতে আসতে পারে।
শিউলি গাছের তলায় রাশি রাশি ফুল পড়ে আছে। হর কি শৃঙ্গার। কেমন সুন্দর নাম। দেখে কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেল জয়াবতী। মনে পড়ল পানু বড্ড আসতে চেয়েছিল তাদের সঙ্গে। কী হাত পা ছুঁড়ে বায়না করছিল। এখন ওদের ছাড়া একা একা কী করছে কে জানে। সামনে থাকলে যার সঙ্গে সবসময় ঝগড়া হয়, সেই ছেলেটার জন্যে ওর হঠাৎ এত মন কেমন করছে কেন কে জানে। বাকিদেরও কি তাই করছে?
ও অন্যদের দিকে তাকিয়ে দেখল সবাই একমনে উমাশশীর কথা শুনতে ব্যস্ত। এই নিরালা জঙ্গলে ডাকাত ধরা পড়ার পর, ওর মনের কথা ও নিজেই খুলে বলছে। বেশ তো।
উমাশশী বলছিল
‘নতুন মা এসেই আমাকে শুতে নিচে পাঠিয়ে দিল। এমনিতে আমাদের পেল্লায় তিনতলা বাড়ি। দোতলায় আমরা সবাই থাকতাম, তিনতলায় ঠাকুর ঘর আর বাবা একটা পুতুলের ঘর বানিয়ে দিয়েছিলেন আমার জন্যে। সেখানে বেনে বৌ পুতুল, মা পুতুল, ছেলে পুতুল, মেয়ে পুতুল নিয়ে আমি পাড়ার সইদের সঙ্গে খেলতাম। নিচে একপাশে আমাদের রান্নাঘর ভাঁড়ার ঘর, দাসী দারোয়ানদের ঘর, অন্য পাশে কয়েকটা ঘর বারমহলের দিকে। বাইরের লোক এলে বসত, একটায় আমি পণ্ডিতমশায়ের কাছে পড়তাম, কটা ঘর পড়েই থাকত, অতিথি এলে শুত। তার মধ্যে একটা ঘরে নতুন মা আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিল। বাবা বলেছিল ‘আহা ওর মা নেই, কচি মেয়ে, ওপরে আমাদের পাশের ঘরে শুক’
নতুন মা বলল ‘কচি মেয়ে আবার কি, আজ বাদে কাল বে দিতে হবে না? আর ভয় পাবে কেন? মুক্তো ঝিকে দিচ্চি তো সঙ্গে’
আসলে নতুন মা ভয় পেত বাবার কাছাকাছি রাকতে আমাকে, আমি যদি তার নামে লাগাই। যদি বলে দি, বাড়িতে চাকরবাকরের থেকেও আমাকে অযত্ন অবহেলা করে মা।
নিচে এসে আমার ভালই লাগছিল। মুক্তো ঝি মেঝেতে শুত, আমি খাটে। সে কম কথার মানুষ, তাছাড়া সারাদিন খাটাখাটনির পর সন্ধের পরেই ঘুমিয়ে পড়ত। আমার ঘুম আসত না, মার কথা ভেবে কাঁদতাম খানিক, তারপর জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রাত্তিরের রূপ দেকতাম। কখনো প্রদীপ জ্বেলে লিকতাম বসে বসে। বুঝতেই পারিনি, এই সময় আমার ওপর নজর রাখা হচ্ছিল। বুঝতেই পারিনি, নতুন মা মুক্তোর আপিমের নেশা বলেই তাকে আমার ঘরে শুতে পাটিয়েচিল।
ভাবতেই পারিনি, যতই সৎ মা হক, সে ডাকাতদের সঙ্গে ষড় করে এইভাবে সতীনের মেয়েকে ডাকাতের হাতে তুলে দিতে পারে।
পেরজাপতিও মাকে হারিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে মানুষ হয়েছে। তার বাড়ির লোক ডাকাতের হাতে না হোক, বুড়ো বরের হাতে তাকে তুলে দিয়েছে, কিন্তু পুণ্যি, সব্বো আর জয়াবতী তারা বাবার আদর আর মায়ের স্নেহে মানুষ। তারা ভাবতেই পারল না মা, যতই সৎ মা হক, একজন মেয়েমানুষ তো বটে,  কী করে একটা কচি মেয়েকে ডাকাতের হাতে তুলে দিতে পারে!ওদের চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়ছিল। শুধু জয়াবতীর মুখে ফুটে উঠল প্রচণ্ড রাগ। মেয়েজন্ম এতই হেলাফেলার!
‘বুঝতে পারছিস নিশ্চয় নতুন মা আমাকে পথের কাঁটা মনে করে সরিয়েছে। যাতে বাবার সম্পত্তির ওপর তার পেটের ছেলেপিলের একমাত্র দাবী থাকে। আর এই কথা বেশ জাঁক করেই রটিয়ে দিয়েচে   যে ডাকাতে ছোঁয়া মেয়েকে ঘরে তুললে কুল নাশ হয়, জাত যায়। ফলে বাবা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল আমাকে আর ঘরে তুলবে না। শুধু তাই নয়, মা বাবাকে দিয়ে আমার শ্রাদ্ধ করিয়েছে, ওই বাড়িতে আমি মৃত’
এতক্ষণ উমাশশী বেশ শান্ত হয়ে কথা বলছিল, আর সে পারল না। জোরে কেঁদে উঠল, তাকে জড়িয়ে ধরে বাকিরাও কাঁদতে লাগল। শুধু জয়াবতী মুখ শক্ত করে নিজেকে সামলাচ্ছিল। তার কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠল কেন হাজার বলা সত্ত্বেও বাড়ির ঠিকানা দেয়নি উমাশশী, পত্তর পাঠাতেও রাজি হয়নি। সে তো ও বাড়ির কাছে মৃত। তার শ্রাদ্ধ শান্তি অব্দি হয়ে গেছে!
এই ছোট্ট জীবনে অনেক রকম মানুষ দেখেছে সে। সোনাটিকরিতে গিয়ে ঠাকুরমশাইকে গোপাল চুরি করতে দেখেছে, বিষ দিয়ে অন্যের ঘোড়া মেরে ফেলা যায় জেনেছে, সোয়ামীর সঙ্গে মেয়েদের এক চিতেয় তোলা যায় দেখেছে, কিন্তু জলজ্যান্ত মানুষকে নেই করে দেওয়া! মা যে বলে মরার বাড়া গাল নেই। এই ফুটফুটে সুন্দর মেয়েটা! হঠাৎ তার মনে হল এ তো একটা ঘরের ঘটনা। বাংলার ঘরে ঘরে এমন কত মেয়ে অন্ধকারে মাথা কুটে মরছে, নিত্য নিত্য জীবন্ত দগ্ধ হচ্ছে, বেঁচে আছে মরার মতই। এই কি একটা জীবন? না, কাঁদবে না সে। কতজনের জন্যে কাঁদবে? তার চে যদি এক আদজনের মুখেও হাসি ফোটানো যায়, সেই কাজে জীবন পাত করতে হলেও তাই করবে।
সে উমাশশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল আদর করে। তারপর বলল ‘আয়, সবাই আমার হাতে তোদের হাত রাখ। এই পোড়ো মন্দিরের শিব সাক্ষী, এই বন সাক্ষী, আকাশ বাতাস রোদ সাক্ষী, শিউলিগাছ সাক্ষী, আয় আমরা পিতিজ্ঞে করি, আমরা কোনদিন নিজেদের দুঃখে কাঁদব না, বরং  সবার মুখে, বিশেষ করে মেয়েদের মুখে হাসি ফোটাবার জন্যে জীবন পাত করব। দুঃখ করিস নে ভাই সাগরজল,  যারা তোর জীয়ন্তে শ্রাদ্ধ করল, সেই সমাজই মরে গেছে।  ওদের শ্রাদ্ধ করব আমরা। তার জন্যে সবাই তৈরি হ’
ওদের সেই কচি কচি পাঁচটি হাতের ওপর শরতের রোদ এসে পড়ে কি অপূর্বই না দেখাচ্ছিল। উমাশশীর মনে হল বেঁচে থাকা কী আশ্চর্য মধুর, এদের কাছে না এলে জানাই হত না তার।
আচমকা কী যেন মনে পড়ে গেল জয়াবতীর। সে উমাশশীকে জিজ্ঞেস করল ‘তুই ব্ললি না তোর নিজের মা বেঁচে আছে?
মামাবাড়িতে থাকে তো? তাহলে সেই ঠিকানা দিস নি কেন?’
উমাশশী এক মুহূর্তের জন্যে কোন কথা বলতে পারল  না, তারপর কান্নায় বুজে আসা গলা ঝেড়ে পরিষ্কার করে উত্তর দিল ‘মা কি আর সেখানে আছে? শুনেছি মাকে নিয়ে দাদামশাই ছিখেত্তর চলে গেছে অভিরাম স্বামীর আশ্রমে’
ছিখেত্তর! চমকে ওঠে সবাই।
ঠিক সেই সময়েই দুটো পেয়াদা এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল ‘ মাঠানরা, জমিদারমশাই এখুনি যেতে বললেন। কি নাকি এক পত্তর এসেছে তর্করত্ন মশাইয়ের কাছে, সেনমশাই পাটিয়েচেন!’ ( ক্রমশ)


জীবন 
বিনোদ মন্ডল 

খাঁচার মধ্যে কাঠবিড়ালি 
চালকুমড়া মাচায়। 
হল্লা করে হলুদফুল
বানরকাঠি নাচায়। 

এইতো জীবন সাধ্য- সাধের
ব্যাকুল বৈতালিক 
রোদঝলমল বৃষ্টি তুমুল
কাজকাজিয়ার শালিক। 

খাঁচার জন্য কালোয়াতি 
বাঁচার জন্য আশা
সুমুখপানে তাকিয়ে দেখো
তৃষিত ভালোবাসা।।


সেই ছোট্ট খেলনা হাঁড়িটা
ড. আসরফী খাতুন

আমি তখন ক্লাস ইলেভেনে পড়ি। বেশ বড়ো বড়ো ভাব। মাধ‍্যমিক পাশ করা মানেই বড়ো হয়ে যাওয়া। টিন এজার অবশ‍্য বেশ কয়েক বছর আগেই হয়েছি। যখন ক্লাস এইট তখনই  তো টিনে ঢুকে গেছি। আমি কিন্তু মুড়ির টিন বা গুড়ের টিনের কথা বলছি না। আমি বলছি বয়সের কথা।
থারটিন বছর বয়সে আমি এইটে পড়ি।এখন সেভেনটিন অর্থাৎ সতের বছর বয়স।বর্ধমান সি.এম. এস স্কুলে পড়ি।বাড়ি থেকে খুব একটা দূর  নয়। মিনিট দশেকের পথ। তবু সেই পথকে অর্ধেক করার জন‍্য পিছনের একটি বস্তির ভিতর দিয়ে আমি স্কুল যাতায়াত করি। মা বেশ কয়েকবার বলেছে  - বস্তির ভিতর দিয়ে  স্কুল যাস কেন রে? বি. সি. রোড ধরে যাবি। একেবারে সোজা রাস্তা ধরে যাবি। বস্তির ভিতর সব সময় ঝগড়া হয়। কোনদিন কোন ঝামেলায় পড়বি কে জানে! আমার খুব ভয় লাগে বাবা।
  মনে মনে বেশ কদিন ধরে ভাবছিলাম  - এবার রাস্তা বদল করতে হবে। মা সেই কবে থেকে বলছে আমি শুনছি না কিন্তু। মায়ের নিষেধ শুনতে হয়। পারতপক্ষে  আমি মায়ের কথা অমান্য করিনা। আসলে মা তো শুধু  আমার অভিভাবক নয়। মা আমার বন্ধু। সেই ছোট্টবেলার কথা মনে পড়ে বাপি যখন দোকান চলে যেত। সকালে আমি উঠতাম মায়ের ডাকে। মা আমাকে কত  আদর করে ঘুম থেকে ওঠাত - কচি সোনা,বাবু সোনা দেখ কত বেলা  হয়ে গেছে। এবার ওঠো বাবু দুধ বিস্কুট খাবে।  আজ রবিবার  তো  তাই দেখো তোমার জন‍্য সরুচিকলি করেছি। তুমি খেতে  খুব ভালোবাস তো তাই বাপি বলে গেছে - বাবুসোনা উঠলে ওকে খাইয়ে দেবে। সরুচিকলি খেজুর গুড় দিয়ে খেতে সত‍্যিই আমি খুব ভালোবাসি। মা বলে - আজ চিকেন বিরিয়ানি করব কেমন। সেই ছোট থেকে সকালবেলায় মায়ের সুর করে ডাকটা যেন আমার ভোরের পাখির গানের মতোই শোনায়। আমি ঘুমজড়ানো চোখে উঠেই মা'র গলা জড়িয়ে ধরতাম। মা আদর করে কোলে নিয়ে ব্রাশ করিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিত। তারপর পাশের চেয়ারে বসে একটু একটু করে সরুচিকলি ছিঁড়ে খেজুর গুড়ের বাটিতে ডুবিয়ে আমার মুখে  খাইয়ে দিত আর আমি মজা করে আম আম শব্দ করে অনেকক্ষণ ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে নরম তুলোর মতো পিঠে খেতাম।খুব মজা হত আমার। শীতকালে ছুটির দিনে মা আরো নানারকম পিঠে করত। অবশ‍্য তখনো আমি কোনো স্কুলে ভর্তি হইনি। তখন  আমি মায়ের কাছেই অ আ ক খ,এ বি সি ডি পড়তাম।আর সারাদিন খেলাপাতি খেলতাম। মা ছিল আমার  একমাএ খেলার সঙ্গী। যোথপরিবারে আমার চাচতো ভাই বোনরা থাকলেও তারা কেউ আমার সঙ্গে খেলত না। মেজচাচিমা বলত - ও ছোট ছেলে ওর সঙ্গে তোরা কেউ সাথ দিবি না। চাচাতো ভাই সুজা বলত  - কিন্তু ওর মা- চাচিমা তো ছোট নয় তবে ওর সঙ্গে খেলা করে কেন? 
  মেজচাচিমা ঝাঁঝিয়ে উঠে বলত - ওর কাজ ধাণ্ডা নেই তাই শিং ভেঙ্গে বাছুরের দলে ঢোকে। তোদের কি? তোরাও কি তাই করবি নাকি?
  অথচ সুজা ও দারাভাই তখন আট ও দশ বছরের ছেলে। অবশ‍্য চামেলীদি পড়ে ক্লাস নাইনে। তবে দিদি মাঝে মাঝে লুকিয়ে আমার সঙ্গে খেলতে আসত। আবার মেজচাচিমা উপরে এলেই ছুটে পালাত। আসলে আমরা দোতলায় এক কামরা ঘরে থাকতাম। বারান্দায় ছিল আমাদের রান্নাঘর এবং খাবার টেবিল চেয়ার সেখানেই থাকত। কিন্তু নিচের বৈঠকখানা ও আর একটা বাড়তি ঘর মেজচাচিমারা একপ্রকার জার করেই বাস করত অন‍্য আর কাউকে ব‍্যবহার করতে দিত না। আমার বাপি এই নিয়ে কোনোদিন কিছুই বলত না। বাপী ছিল খুব নিরীহ ও সাদাসিধা ধরনের মানুষ। কারো সঙ্গে ঝগড়াঝাটি একেবারেই পছন্দ করত না। তাই মা আমাকে ঐ বারান্দায় চেয়ারে বসেই খাইয়ে দিত।
   প্রায় মাঝে মাঝেই শুনতে পেতাম মেজচাচিমা ও সেজচাচিমা রান্না করতে করতে কত কি কথা বলছে। ওরা বলত - ব‍্যাটাছেলেটাকে কেমন মেয়েছেলে তৈরি করছে দ‍্যাখ। খেলাপাতি তো মেয়েছেলেরা খেলে। ছোটছেলে ও কি বোঝে। মায়ের যতসব আদিখেতা! প্রথম মেয়ে  হয় নি বলে কি ছেলেকে মেয়ে সাজাতে হবে?  আমাদের প্রথম সন্তান মেয়ের জন‍্য শাশুড়ির কাছে পাড়া প্রতিবেশির কথা কিনা কথা শুনতে হয়েছিল মা গো লুকিয়ে লুকিয়ে কত কেঁদেছি আমরা। অথচ ওর বেলায়  হলো ঠিক উল্টো।
   তুতুলকে তো এখন থেকেই বোঝাতে হবে। বলতে হবে- বাবা তুমি ব‍্যাটাছেলে। তুমি খেলবে ফুটবল, ব‍্যাটবল, ক‍্যারাম। মেয়েদের মতো হাঁড়িকুড়ি নিয়ে খেলাসাতি খেলবে কেন? উত্তরে সেজচাচিমা বলত - যতসব আদিখেতা! মেয়ে হয়নি বলে কি সোনারচাঁদ ব‍্যাটাছেলেকে মেয়েদের মতো তৈরি করবি এ‍্যাঁ?
  আমাদের ঘরে তো সব বউদেরই প্রথম মেয়ে। আমরা তো ধরেই রেখেছিলাম  ওর ও মেয়েই হবে। সৃষ্টিছাড়া বংশছাড়া হবে নাকি! কিন্তু হলো ঠিক উল্টো। প্রথম শুনে তো বিশ্বাসই হয় নি। তাইতো ওর বাপ মিষ্টি খাওয়ালেও নার্সিং হোমে দেখতে গিয়েছিলাম। কথাটার সত‍্যতা যাচাই করতে গিয়েছিলাম।
   আমার মা ওদের সমস্ত কথা শুনেও দ্বিগুন উৎসাহে আমাকে বলত - বাবু আজকে খেলাপাতি খেলবি না? পুতুল খেলবি না? একটু দাঁড়াও বাবু আমার রান্না হয়ে গেলেই তোমার সঙ্গে খেলব কেমন। খুশিতে আমি নেচে  উঠতাম বলতাম - মা আমি তাহলে পুতুল ও খেলনাপাতিগুলো বারান্দায় সাজিয়ে রাখি? মাকে আমি মামণি বলতাম আর বাবাকে বলতাম  বাপি। দুজনায় আমার খুব আদরের ছিল। মামণি রান্না করতে করতে মাঝে মাঝে ছুটে এসে আমার পুতুলকে শাড়ি পরিয়ে দিত বরকে সাজিয়ে দিত। আমার  খুব মজা হত। 
   মা বলত - জানিস কচি আমিও ছোটবেলায় খুব পুতুল খেলতাম, খেলাপাতি খেলতাম। আমার মাও আমার সঙ্গে খেলত। আমাকে পুতুল বানিয়ে দিত। একটা সাদা কাপড় দিয়ে এত সুন্দর চোখ,হাত, আঙুলওয়ালা এমন পুতুল তৈরি করে দিয়েছিল না সে ছিল অপূর্ব সুন্দরী। যার মাথায় ছিল ঘন একরাশ কালো মেঘের মতো চুল। ঠোঁট দুটো ছিল লাল টুকটুকে  আর কানে দুল ও নাকে একটা নথ পরানো ছিল। ওই সুন্দরী পুতুলের সঙ্গে 
বুলু,মিনু,মিলি, ডলি সবাই ওদের ছেলে পুতুলের বিয়ে দিতে চাইত। আমি কিছুতেই রাজি হতাম না কারণ ওকে আমি হাতছাড়া করতে চাইতাম না। কারণ ও ছিল আমার খুব প্রিয়। একবার ভআমার পুতুলকে না পেয়ে কেঁদে কেঁদে আমার জ্বর এসে গিয়েছিল পরে ভাই লুকিয়ে রাখা আমার প্রিয় পুতুলকে দিতে বাধ‍্য হয়েছিল। বিয়ে হওয়ার আগে পর্যন্ত  আমি ওকে খুব যত্নে ছোট বাক্সে তুলে রেখেছিলাম। আসলে জানিস কি খোকা সব মায়েরই মনের ভিতরে  একটা শিশু  বাস করে। আমি তখন এতো ছোট যে, মামণির কথাটার ভিতরকার তাৎপর্য না বুঝেই জোরে হাততালি দিয়ে বলেছিলাম  - কি মজা! কি মজা! মায়ের ভিতরে শিশু থাকে। পরক্ষণেই হাততালি থামিয়ে বলেছিলাম - শিশু কি মামণি? মামণি আমার হাত দুটো ধরে চুমু খেয়ে বলেছিল - শিশু মানে কচি ছেলে তোদের মতো ছোট ছেলে। বাচ্চা ছেলে বুঝলি! সে সব বহু বছর আগের কথা। তবু মনে হয়  এই তো সেদিনকার কথা।
     এক একবার  আমি ভাবি কত তাড়াতাড়ি  আমি বড়ো হয়ে গেলাম। বদলে গেলাম। অথচ এইরকম বদলাতে  আমি চাই নি আমি ঠিক আগের মতোই থাকতে চেয়েছিলাম। এখন আর খেলাপাতি খেলা,পুতুল খেলার কথা ভাবতেই পারি না। কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগে। ছোটবেলায় হাঁড়িকুড়ি সাজিয়ে খেলনাপাতি নিয়ে মিছিমিছি রান্না করা কি যে আনন্দদায়ক ছিল!  আজও মনে পড়ে সেইসব কথা।
     একদিন  বস্তির ভিতর দিয়ে ইস্কুল যাচ্ছি। আমার চোখ আটকে গেল একটা ছোট্ট খেলনা হাঁড়ির দিকে।  কই এতদিন এই রাস্তা দিয়ে  ইস্কুল যাই কোনোদিন  এই খেলনা হাঁড়িটা চোখে পড়ে নি তো! প্রতিদিন তো যাওয়া আসার পথে  এইসব ছেলেমেয়েদের দেখতে পাই। রাস্তার দুপাশে ওরা ওদের খেলনাপাতির পসরা সাজিয়ে বসে।  ইঁট গুঁড়ো করে। বালি দিয়ে ভাত রাঁধে। লতাপাতা ছিঁড়ে এনে তরকারি করে। আরো কত কি! 
 আশ্চর্য!  এই ছোট্ট এ‍্যালমিনিয়ামের হাঁড়িটা তো কোনোদিন চোখে পড়ে নি! ভাবি ছোট্ট মেয়েটাকে জিঞ্জাসা করি - এই মেয়েটা এই ছোট্ট হাঁড়িটা কোথায় পেলি রে? তারপর অনেককিছু ভেবে আর কিছু বলি না।
         সেইদিনই ঘরে ফিরে আাঁতিপাতি করে আমার খেলনাপাতির জায়গায় সেই ছোট্ট খেলনা হাঁড়িটা খুঁজি। পাই না। আবার খুঁজি। তবু পাই না। এইভাবে যখন আমি আকুল হয়ে খুঁজে চলেছি তখন মামণির নজরে আসে ব‍্যাপারটা। মামণি বলে - হ‍্যাঁ রে বাবু তুই খেলাপাতির মধ‍‍্যে কি খুঁজছিস? বেশ কদিন ধরে দেখছি তুই খেলাপাতির ঝুড়ির মধ্যে কি যেন তন্ন তন্ন করে খুঁজছিস? সেই ছোট্ট খেলনা হাঁড়িটা? 
 আমি হতবাক হয়ে মামণির মুখের দিকে চেয়ে থাকি! বলি - মামণি তুমি কি করে জানলে?
  মামণি বলে - আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি। ছোটবেলায় আমার নানির কাছ থেকে পাওয়ার পর বেশ কয়েকবার তোকে ওই ছোট্ট হাঁড়িতে ভাত রেঁধে দিতে হয়েছে। সেই হাঁড়িটা যে তোর খুব প্রিয় ছিল। তুই যে ছোটবেলায় ওই হাঁড়িটাকে চোখে হারাতিস। প্রতিদিন একবার না দেখলে তোর শান্তি হত না।
 আমি বলি - হাঁড়িটা তুমি দেখেছ মামণি?
মামণি বলে  - আমি হাঁড়িটা আলমারিতে তুলে রেখেছি। আমি জানি এই হাঁড়িটার সঙ্গে  আমার মায়ের  একটা বিশাল স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
   আমার মায়ের ফুপুর বাড়ি ছিল পীরবাহারাম  এলাকায়। মা প্রায়ই প্রতি দিনই ফুপুর বাড়ি যেত। মাকে মায়ের ফুপু নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসত। পরবের দিনগুলোতে মা ঘরের কাজ কোনোরকমে সেরে ফুপুর বাড়ি গিয়ে শান্তি পেত।  আমাকেও নিয়ে যেত। আমার ছেলেবেলাও ওদের ঘরেই কেটেছে। তারপর বড়ো হওয়ার পর আমি 

আর নানির বাড়ি যেতে চাইতাম না। আসলে ঈদ, বকরিদের দিনে অন‍্যের বাড়ি যেতে আমার ভালো লাগত না। আমার মা বলত - আমার ফুপু আমার মায়ের মতো। তোরা না যাস না যাবি আমি যাবই। 
  তারপর বহুবছর কেটে গেছে  একদিন নানির সঙ্গে  আমার মামণিও আমাকে নিয়ে নানির সঙ্গে নানির ফুপুর বাড়ি গিয়েছিল। ওনার রান্নাঘরে ঢুকেই আমি দেখি এ‍্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ির সারি বড়ো থেকে একেবারে পুচকে পর্যন্ত সাজানো রয়েছে। সবথেকে ছোট্ট হাঁড়িটা দেখে  আমি বলেছিলাম  - মামণি দেখ কি সুন্দর হাঁড়িটা! 
  মামণি নানিকে জিঞ্জাসা করেছিল - এতটুকু হাঁড়িটা কেন কিনেছ? নানি বলেছিল  - ভালো লাগবে বলে কিনেছিলাম।
 আমার খুব মনে পড়ে আমার মুখে শুনেই মামণির নানি সেই ছোট্ট হাঁড়িটা আমার হাতে দিয়ে বলছিল  - নাও ভাই তুমি এই হাঁড়িটা নিয়ে খেলবে ।  এই মুহূর্তে এর ঢাকনাটা খুঁজে পাচ্ছিনা খুঁজে পেলে তোমার নানির হাতে তোমাকে দিয়ে পাঠাব কেমন।  তখন আমি বছর দুই আড়াই বছরের  ছোট্ট শিশু। হাঁড়িটা পেয়ে আমি ওকে কাছছাড়া করতাম না। সেই ঢাকনাটার আর কোনোদিন  খোঁজ নেওয়া হয় নি। আমার নানি ও নানির ফুপু বহুদিন হলো আমাদের ছেড়ে পরলোকে চলে গেছে। রয়ে গেছে শুধু সেই ছোট্ট খেলনা হাঁড়িটা।

ডায়েরির পাতা থেকে

প্রবাহনীল দাস 
বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতন
অষ্টম শ্রেণী
পশ্চিম মেদিনীপুর

অল্প শীত পড়েছে। সন্ধ্যেবেলা পড়া শেষ করে বালাপোশ মুড়ি দিয়ে ‘ছায়াময়’ পড়ছিলাম এমন সময় হঠাৎ করেই কারেন্টটা চলে গেল। আচমকা এই অবস্থায় পড়ে ঘাবড়ে গিয়ে বালাপোশটা টেনে নিলাম মাথার উপর অবধি। হঠাৎ টের পেলাম, পায়ের তলায় অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা একটা ছোঁয়া, কেউ যেন বরফ ঘষছে পায়ের চেটোয়।
উঠে বসে পড়লাম অন্ধকার ঘরে। না, ঠিক অন্ধকার নয়, হালকা নীলাভ একটা আলোয় আলোকিত হয়েছিল ঘরটা। এরপর চোখে পড়ল একটা ছায়ামূর্তি বগলে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। গমগমে গলায় বলে উঠল সে, “তোমাদের উপদ্রবে শীতকাল তো যেতে বসেছে। লম্বা গ্রীষ্মকাল, বিশ্ব উষ্ণায়ন আর বিভিন্ন হাওয়া গরম করা বর্জ্য টুঁটি চেপে ধরেছে শীতকালের।”
বলে উঠলাম, “আমরা আর কতটুকুই বা করতে পারি?”
“কেন পারো না? আলবাত পারো। তোমরাই তো পারো সচেতনতা ছড়িয়ে, ভালো ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে। কনকনে হাড়কাঁপানো শীতকাল ছাড়া আমরা ভূতেরা আত্মপ্রকাশ করব কী করে? আর নাই বা যদি বেরলাম, তবে তোমাদের সাহিত্যিকরা আমাদের নিয়ে নতুন নতুন গল্প ফাঁদবে কী করে?”
হঠাৎই হুঁশ ফিরল মায়ের ডাকে, “না খেয়ে গল্পের বই নিয়ে শুয়ে পড়েছিস? ওঠ! ওঠ বলছি!”

স্মরণীয় দিবস
(নেতাজীর জন্মদিন)
২৩ শে জানুয়ারি।
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৮৯৭ সালের ২৩শে জানুয়ারি ওড়িশার কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জানকীনাথ বসু ও প্রভাবতী দেবীর চৌদ্দসন্তানের মধ্যে নবমতম ছিলেন। ১৯১১ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। এমনকি তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে পাস করে নিয়োগপত্র পেয়ে যান কিন্তু ভারতমাতার পরাধীনতার শৃংখল মোচন করার জন্য তিনি বিপ্লবের আদর্শকে বেছে নেন।তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক কিংবদন্তী নেতা ছিলেন। সুভাষচন্দ্র বসু নেতাজি নামে বেশি বিখ্যাত। স্বামী বিবেকানন্দের ভাবাদর্শন তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হন। তাঁকে কুড়ি বছরের মধ্যে প্রায় এগারো বার গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং ভারত ও রেঙ্গুনের বিভিন্ন জায়গায় তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি কংগ্রেস পরিত্যাগ করেন এবং নিজের দল "ফরওয়ার্ড ব্লক তৈরি করেন"।
তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উক্তি হলো, "তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব"। তাঁর আরেকটি বিখ্যাত উক্তি হল, "জয় হিন্দ"যা বর্তমানে আমরা সকল ভারতবাসীই বলে থাকি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে তিনি ভারতকে স্বাধীন করার জন্য গোপনে ভারত ত্যাগ করেন। ভারতকে ব্রিটিশ আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তিনি জার্মানি ও জাপানিদের সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে সে দেশে যান। জাপানে তিনি "আজাদ হিন্দ" সরকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব দান করেন। ব্রিটিশ মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে ইম্ফল ও ব্রহ্মদেশের যুদ্ধ পরিচালনা করেন। সুভাষচন্দ্র বসুই প্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা কথা উল্লেখ করেন।
বর্তমানে "২৩ শে জানুয়ারি" দিন রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
আমাদের নমস্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হলেন  সুভাষচন্দ্র বসু।

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 

পাঠ প্রতিক্রিয়া
( ছোটোবেলা ১১৬ পড়ে রূপা চক্রবর্তী যা লিখলেন)

প্রথমেই বলি জ্বলদর্চি পত্রিকার ১১৬ সংখ্যাটির প্রচ্ছদ নিয়ে | সর্ষে ফুল জড়িয়ে ছোট্ট মিষ্টি বন্ধু গ্রামে বেড়াতে গিয়েই ছবিটি তুলে তার সব ছোট বন্ধুদের এমন আনন্দ নেবার কথা বলতে চেয়েছে | 
 
 "জয়াবতীর জয়যাত্রা" বইটির প্রচ্ছদটিও বইটি পড়ার আগেই ছোটদের আনন্দ দেবে বলেই মনে হয় | তৃষা বসাক একদম ছোটদের মনের মতো করেই প্রচ্ছদ এবং অবশ্যই গল্পটি সহজ সরল ভাষায় ছোটদের রূপকথার দেশে নিয়ে গেছেন |

 চতুর্থ শ্রেণীর কিরণ গড়াই -এর সুন্দর কল্পনায় আঁকা ছবিটিতে ঘুরে বেশ আনন্দ পাওয়া গেলো |

ফাল্গুনী পান্ডা র লেখা "বর" গল্পটি পড়ার সময় ভূত , ড্রাকুলা , শাকচুন্নি , ব্রহ্মদত্যি আর ছাগল মুরগির ঘাড় মটকে রক্ত খাওয়া এসব পড়ে তো রীতিমতো ভয় ভয় লাগছিলো কিন্তু ভূতেদের রাজার কাছে বর চাওয়ার কথা যখন পড়লাম তখন খুব মজা লাগছিলো - কারণ ছোট থেকেই এই ভূতের রাজার বরের কথা শুনে বড় হয়েছি আর তার কাছে যা চাওয়া যায় সে তো তাই দিয়ে দেয় , বড্ড ভালো কিন্তু এই রাজা আর পোগো যেই পেয়েও গেলো সেই বর ব্যাস আনন্দ আর 
আনন্দ |
 
২০২২ কে বিদায় দিয়ে দৌড়ে এক লাফে ২০২৩ এ আসা শুভঙ্করের আঁকা ছবিটি সুন্দর অর্থ বহন করেছে | বিগত বছরে যা কিছু হলো না তার জন্য মন খারাপ না করে সেগুলোকে নদীতে ফেলে নতুন সূর্যের আলোতে চলো নতুন করে ভাবি |

"পরিজন" কবিতায় প্রিয়াঞ্জলি দেবনাথ শব্দের শেষে শব্দের মিল রেখে মজার উপহার দিয়েছেন | ছোট্ট বন্ধুরা নিশ্চই মজা করে পড়েছো --- তাইতো ?

 অর্চিষ্মানের ছোট্ট হাতে আঁকা দেখে খুব ভালো লাগলো , আমি তো কখনোই পারি না এতো ভালো আঁকতে আর মাত্র চতুর্থ শ্রেণীতেই এতো ভালো ?

 শাশ্বতী কর লিখেছেন সাহিত্যের একজন বিশেষ শ্রদ্ধেয়া লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর কথা --- জানা যায় কত বাধা পেরিয়ে তিনি সাধারণ মানুষের কথা নিয়ে লিখেছেন বিভিন্ন আঙ্গিকে তাঁর সেরা গল্পের বইগুলি | 

 স্মরণীয় দিবস ১২ ই জানুয়ারী --- কেন ? দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে সুন্দরভাবে বুঝিয়েছেন , বলেছেন জাতীয় যুব দিবসের  বিশেষ অর্থ |

 পরিশেষে বলতেই হয় সম্পাদক মৌসুমী ঘোষের কথা ---একটি পত্রিকা তাও আবার শিশুদের মনোগ্রাহী করার নানা উপাদেয় সামগ্রী সাজিয়ে, সেটি খুব সহজ কাজ নয় | সম্পাদকীয় কলমে তিনি যেভাবে পত্রিকাটির সারসংক্ষেপ লেখার মাধ্যমে এঁকে দিয়ে থাকেন তা সত্যি প্রশংসনীয় এবং তা ছোটদের সাথে আমাদেরকেও নিয়ে যায় পত্রিকার লেখাগুলির স্বাদ গ্রহণ করতে | "জ্বলদর্চি " নামক এমন কাঙ্খিত পত্রিকার উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি। 




Post a Comment

0 Comments