জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১১৮

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১১৮
সম্পাদকীয়,
অরিন্দম, তুহিন, সৌনকশৌর্য তিনটি ছবি পাঠিয়েছে। ওদের অনেক ভালোবাসা জানিয়ে আজকের পর্ব শুরু করলাম। আর সেরা পাঠকের ব্যাচটা অসীম আঙ্কেলকে দিতেই হল। কারণ অসীম আঙ্কেলের ছোটোবেলা আর আমাদের ছোটোবেলা একাকার হয়ে গেছে এই পাঠ প্রতিক্রিয়ায়। একরাশ আনন্দ নিয়ে এবার এসো শীতলগ্রামের ছোট্ট বন্ধুটিকে দেখে নিই। জিজ্ঞেস করলাম, তুমি হাসছো কেন? ওমা হাসতে হাসতে কি বলল জানো? - পাচ্ছে হাসি, হাসছি তাই। সেই শুনে আমিও তো হেসেই মরি। হবে না কেন! হাসি তো করোনার মতোই ছোঁয়াচে। ঋপণ আঙ্কেল ততক্ষণে খুদে বন্ধুর হাসির ছবিটা তুলে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেটা দেখে আমি আবার হাসতে শুরু করলাম। হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাচ্ছিল শতদ্রু জেঠুর নাটুকে মামার গল্প পড়েও। হাসি যখন আর থামেই না তখন পীযূষ আঙ্কেলের ঘুম পাড়ানি ছড়া পড়ে ঘুমাতে গেলাম।  ঘুমাতে ঘুমাতে স্বপ্ন দেখলাম, আমাদের স্বাধীনতা দিবসের শতবর্ষ পালন হচ্ছে। কেন এমন স্বপ্ন? কারণ ঘুমানোর আগেই যে ছোটোবন্ধু অমরের লেখা পড়েছিলাম। রাইলী দিদির লেখাটা পড়ে কত কিছু জানলাম। জানার কি আর শেষ আছে? কিন্তু এটা জেনে রাখো বেশি হাসা ভালো নয়, শেষে গিয়ে কাঁদতে হয়। আজও শেষে একটা মনখারাপের কথা বলে তোমাদের কাঁদাবোই কাঁদাবো। কী? আজ জয়াবতীর অন্তিম পর্ব। জানি এ ক'মাসে জয়াবতী তোমাদের কতটা বন্ধু আর সহায়, হয়ে উঠেছিল।  তবু বলি, দুঃখ কোর না। শীঘ্রই নতুন ধারাবাহিক আসছেএএএএএ -- মৌসুমী ঘোষ।

ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর জয়যাত্রা
শেষ পর্ব

তৃষ্ণা বসাক

৪৭
 
ছিখেত্তর যাত্রার প্রস্তুতি
পত্তর! কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা খুঁজে পেল না। পুণ্যিই প্রথম কথা কয়ে উঠল ‘সেনমশাই পত্তর পাটিয়েছেন! আমাদের তো যাবার ঢের দেরি। সেই ভাইদ্বিতীয়ার পরের পরের দিন। তাহলে আচমকা পত্তর কেন? কারুর অসুকবিসুক করল নাকি?ঠাকমা তো দিব্যি সুস্থ ছিল। নির্ঘাত পানুর অসুক করেচে। যা ভোগে ছেলেটা’
পানুর অসুখ! এক মুহূর্তের জন্যে শরতের রোদ যেন নিভে গেল। জয়াবতীর মনে পড়ল আসার দিন খুব ভোরে কোত্থেকে ছুটে এসে তার মুঠোয় একমুঠো শিউলি ফুল গুঁজে পালিয়ে গেছিল পানু, যেতে যেতে বলেছিল ‘হুঁ খুব বদ্যি ঠাকরুন হয়েছে, বদ্যিরা  কি এতদিনের পুজোর ছুটি কাটাতে যায়? এখানে কারো অসুক করলে কে দেখবে শুনি?’
তাইতো।
জয়াবতীর মুখে চিন্তার মেঘ জমছিল, তা এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিল সব্বো।
‘তোমরাই তো বলো সেনমশাই খুব বিচক্ষণ লোক, তিনি কি তাঁর বাড়ির অসুখের খবর পাঠিয়ে তোমাদের পুজোর আমোদ নষ্ট করতে পারেন? কক্ষনো না।
অসুক করলে তিনিই তো আছেন। তাঁর তুলনায় তোমরা কী? দেকো অন্য কোন খবর এসেছে। ভাল খবর। আর সেটা সত্যি হলে আমাকে আমাকে একটা উপহার দিতে হবে কিন্তু’
উপহার!  শব্দটা নতুন ঠেকল বেশ। পাব্বুনিই তো বলে থাকে ওরা। যাই হোক, সব্বোর কথায় একটু মন ভাল হল সবার। ততক্ষণে ওরা জঙ্গল পেরিয়ে মাঠে এসে পড়েছে। এখন  কটা গরু চরছে। একটা রাখাল বাঁশিও বাজাচ্ছে। তার মন কেমনিয়া সুরে কষ্ট হল ফেলে আসা জঙ্গলের জন্যে। আবার কবে যাওয়া হবে কে জানে। পত্তর এসেছে যখন। হয়তো ফিরে যেতে হবে সোনাটিকরিতে।
এইসব সাতপাঁচ ভাবনা ভাবতে ওরা খিড়কিতে এসে পড়ল। পেয়াদারা বলল, এখানে নয়, সোজা বারমহলে জমিদারমশাইয়ের বৈঠকখানায় যেতে। শুনেই বুক ঢিপঢিপ করছিল পুণ্যির। কী যে খবর এসেছে। জয়াবতীর অবিশ্যি আর কিছু মনে হচ্ছিল না। সব্বোর কথা শোনার পর ওর সব ভয় কেটে গেছিল। মনে হচ্ছিল ভাল খবরই এসেছে। বারমহলে জমিদারমশাইয়ের ঘরে মাটিতে জাজিম পাতা। সেখানে জমিদারমশাই আর পিতাঠাকুর বসে। ওরা ঢুকতে ঢুকতে শুনতে পেল ‘যেতে গেলে ছত্রভোগ দিয়েই যেতে হবে। পনেরো দিনের পথ’
জয়াবতীর বুকটা লাফিয়ে উঠল।
জমিদারমশাই হাসি হাসি মুখে ওর দিকে তাকিয়ে বললেন ‘মা জননী সাক্ষাত সরস্বতী। জিভে বাক অধিষ্ঠান করছে। যা বলেন, তাই হয়। এই নাও সেনমশাই শিগির সব গোছগাছ করতে বলেছেন। ছিখেত্তর যেতে হবে যে’
ছিখেত্তর! জয়াবতীর স্বপ্নের দেশ! যেখানে সমুদ্দুর আছে! আর আছে সমুদ্দুরের থেকেও বিশাল এক শব্দ- মা, উমাশশীর মা!
-হ্যাঁ, পুরীর রাজবাড়িতে এক রাজকন্যা মনোকামনার  অসুখ। চিকিচ্ছের জন্যে মেয়ে বদ্যির খোঁজ পড়েছে। বুঝলে মা, খোদ রাজবাড়ির ভেতর থেকে ডাক এসেছে। তা মা যাবে আর ছেলেরা কি পড়ে থাকবে? দেখো না মা দুগগা ছেলেমেয়ে নিয়ে আসেন সবসময়। তাই আমরাও যাব’
জয়াবতী শুনে প্রথমেই বলে উঠল ‘সব্বো যাবে তো?’
‘নইলে তুমি যাবে না তাই তো? তুমি কি আমার সোজা মেয়ে? সব্বো যাবে, আমরা যাব, তোমার বাবা মা পুণ্যির মা খুড়িমা, আর সেনমশাইরা।বিশাল দল। আজ থেকেই জোগাড়জাগাড় শুরু করতে হবে’।
জয়াবতীর মন হাঁকুপাঁকু করছিল সেনমশাই পত্তরে কী লিকেছেন পড়ার জন্যে। সবাই যদি যান, পানু কি আর একা বাড়িতে থাকবে? যা ছিঁচকাঁদুনে, কেঁদে কেটে একশা করবে একেবারে। পানুর হাত পা ছুঁড়ে কান্নার কথা মনে করে ভারি হাসি পেল তার।
তার মুখের হাসি দেখে পিতাঠাকুর বললেন ‘শ্রীক্ষেত্র যাওয়া তো আহ্লাদেরই কথা মা। তবে কিনা অনেক প্রস্তুতি লাগে। যাওয়ার পথ অনেক আছে, তবে পথের বিপদও আছে। স্বয়ং মহাপ্রভুও নিমকির খাল   পরিহার করেছিলেন জলদস্যুর উৎপাতের জন্যে, বর্ধমানের দিকেও যাননি, সদ্য যুদ্ধ হয়ে গেছে তখন, ও পথ যাবার উপযুক্ত ছিল না। শুধু মন করলেই তো হল না, চাই সাহস, শক্তি আর ধন। সেই কবে থেকেই তো বঙ্গের মানুষ শ্রীক্ষেত্র চলেছে। কথায় বলে হাতে কড়ি পায়ে বল/তবে যাবি নী্লাচল।’
‘আমি যতদুর জানি কিছুটা ঘোড়া বা পালকিতে, বাকি পথ জলপথে যাওয়া যাবে। কোন পথে যাওয়া সম্ভব যদি একটু বলেন তর্করত্ন মশাই। এই গ্রামে শুধু নয়, পুরো দক্ষিণ বঙ্গে আপনার মতো সর্বজ্ঞ কে আছে?’
জমিদারমশাই আর পিতাঠাকুরের মাঝখানে পত্তরটি পড়ে ছিল।পড়ার জন্য ছটফট করছিল মন, কিন্তু সে দেখল একটি কাঠকয়লা দিয়ে পিতা ঠাকুর মেঝেতে কী সব চিত্র করছেন। শুধু সে বা সইরা নয়, জমিদারমশাইও হুমড়ি খেয়ে পড়লেন তার ওপর।
‘এটা কী পিতাঠাকুর?’
‘একে বলে মানচিত্র। যদিও তা অংকনের জন্য দূরত্ব আর যা যা জ্ঞান লাগে তা আমার নেই।তবু এ থেকে একটা ধারণা পাওয়া যাবে।’
একটি মন্দির এঁকে তিনি বললেন ‘এই হচ্ছে শ্রীক্ষত্রে জগ্ননাথ মন্দির, আর এইখানে আমরা আছি। বোলসিদ্ধি গ্রাম। যা কিনা দক্ষিণ বঙ্গে। সমুদ্রের খুব কাছে,  আমরা যাব এই পথে ছত্রভোগ দিয়ে। যেমন মহাপ্রভু গেছিলেন। তিনি অবশ্য এসেছিলেন উল্টোদিক থেকে, আমরা যাব এদিক থেকে।তিনি এসেছিলেন শান্তিপুর থেকে কালীক্ষেত্র, তারপর দ্বারির জাঙ্গাল ধরে আটিসারা, সেখান থেকে ছত্রভোগ আর আমরা যাব এখান থেকে সরাসরি ছত্রভোগ। আমরা অনেক কাছে আছি।
তিনটি মূল পথ আছে বঙ্গদেশ থেকে পুরী যাবার –১) দক্ষিণবঙ্গের তীর্থযাত্রীদের জন্যে আটিসারা (বারুইপুর) – ছত্রভোগ (জয়নগর-মজিলপুর) – তমলুক – নারায়ণ গড় – দাঁতন – জলেশ্বর – ভদ্রক হয়ে পুরী।  ২) পানিহাটি – আন্দুল (হাওড়া জেলা) – সাঁকরাইল – নিমকির খাল ধরে বাগনান – কোলাঘাট –পাশকুঁড়া – রঘুনাথ বাড়ি – পিছলদা —  নারায়ণগড় – বেলদা–  দাঁতন– সুবর্ণরেখা ধরে –জলেশ্বর — রেমুনা – কটক হয়ে পুরী।
মধ্যবঙ্গের লোকেরা এই পথ ব্যবহার করত। এই পথ অধিকতর সুগম ছিল। কিন্তু বেশির ভাগ নৌকাযোগে ছিল বলে ব্যয়বহুল ছিল। ( হরিদাস দাস, শ্রী শ্রী গৌড়ীয় বৈষ্ণব তীর্থ, পৃ – ৩৭)  ৩) বর্ধমান –হাজিপুর – মেদিনীপুর – হরিহরপুর –কেশপুর– নারায়ণ গড় – বালেশ্বর — নীলগড় – বৈতরণী – সাক্ষীগোপাল হয়ে পুরী।
পুণ্যি জিজ্ঞেস করে ‘আমাদের কত সময় লাগবে?
‘ভাল প্রশ্ন করেছ মা, আমিও এটা শুধোতে যাচ্ছিলাম’
‘মহাপ্রভুর শান্তিপুর থেকে লেগেছিল পনেরো দিনের মতো যতদূর জানি। ১৫ ফাল্গুন যাত্রা শুরু করে ২৬ বা ২৭ ফাল্গুন পৌঁছেছিলেন। ওখানে দোলযাত্রা দেখেছিলেন। আমাদের হয়তো একটু কম সময় লাগবে। তবে পথের বিপদ তো কত রকম আসতে পারে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে’
জয়াবতী ঝকমকে মুখে বলল ‘সেসব ভাববেন না পিতাঠাকুর। ভুলে যাবেন না দলে একজন বড় বদ্যি আর দুজন ছোট বদ্যি যাচ্ছে। আর এই পেরজাপতি, উমাশশী এমনকি সব্বো অব্দি রুগীর সেবা করতে বেশ শিখে গেছে। ওসব আমাদের ওপর ছেড়ে দিন। পায়ে বলও আমাদের যথেষ্ট আছে। এখন কড়ি আর বাদবাকি ব্যবস্থা আপনারা করুন’
এমন সময় কত্তামার ডাক এল । খাবার দেরি হয়ে যাচ্ছে। ওরা পাঁচজন এসে দাঁড়াল চণ্ডীমণ্ডপে। মা দুগগা কী ঝলমল করছেন আজ। শরতের রোদ একটা রাস্তার মতো হয়ে গেছে। সেই রাস্তার ওপারেই শ্রীক্ষেত্র।
সেখানে সমুদ্র দেখবে ওরা। পাঁচ জন সই মিলে সমুদ্রের জল তুলে সারাজীবন পাশে থাকার পিতিজ্ঞে করবে। আর রাজার মেয়ে, মনোকামনা, যার অসুক সারাতে তারা চলেছে, সেও কি সই পাতাবে না তাদের সঙ্গে? কত নতুন নতুন পথ, নতুন নতুন বন্ধু – সব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল জয়াবতী। এই তো তার পথচলার সবে শুরু।
 (শেষ)

সৌনকশৌর্য দাস || সপ্তম শ্রেণী, বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতন, পশ্চিম মেদিনীপুর


ঘুম পাড়ানি গান
পীযূষ প্রতিহার

ঘুম আয়রে ঘুম আয়রে সোনার চোখ জুড়ে
ঘুম আয়রে ঘুম আয়রে লেপ চাদর মুড়ে,
ঘুম আয়রে ঘুম আয়রে হালকা বাতাসে
ঘুম আয়রে ঘুম আয়রে সন্ধ্যা অবকাশে।
বারো মাসে তেরো পার্বণ কে জেগেছে রাত,
সোনার চোখে ঘুম আয়রে বুলিয়ে আদর হাত।
ঘুম আয়রে জুড়িয়ে দে তুই সকল ক্লান্তি তার
মায়ের কোলে চোখ জড়িয়ে দূর করে দে ভার।
ঘুম আয়রে রং বাহারি স্বপ্ন নানান নিয়ে
সোনার মুখে হাসি আনিস মন জুড়িয়ে দিয়ে।
সোনা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো মন জুড়ালো না
আজ তো হলো কাল কি হবে ভেবে কুলোয় না।
ঘুমের জন্য কত সাধন ঘুম আর আসে কই,
সোনার মাথায় হাত বুলিয়ে একলা জেগে রই।

তুহিন সরকার || সপ্তম শ্রেণী, সুখচর কর্মদক্ষ চন্দ্রচূড় বিদ্যায়তন, উত্তর ২৪ পরগণা


মামা 

শতদ্রু মজুমদার 

রথতলা বাজারে রাম যাত্রা হচ্ছে l আজই শেষ l আজ হবে ওহি রাবন বধ l পনেরো দিন ধরে হচ্ছিল l মা রোজই যাব যাব করছিল l যাওয়া আর হয় নি l রিকশায় বলতে বলতে চলে গেল : অদ্য শেষ রজনী l সেটা শুনে মা আজই যাবো ঠিক করল !
প্রথমে মালা ডাক l তার পর বিবেকের গান l তারপর পালাগান l এই ধরনের যাত্রা আমি কোনও দিন দেখি নি। ভালোই লাগল l তবে ওহি রাবন কে ঠিক মামার মত দেখতে !
মা 'কে বললাম, মামা নয় তো ?
----তোর মুন্ডু l 
তবু মামকে ফোন করলাম l ফোন ধরল না l মাসির নম্বরে ফোন করতে বলল, কোথায় গেছে ----দু সপ্তাহ পর ফিরবে !
তারমানে আমার ধারণা ঠিক l 
#
সরস্বতী পুজোর দিন হঠাৎ মামা হাজির ! মনের কথাটা বললাম l
এক গাল হেসে মামা বলল, আমার মত কি রে ---ওটা তো আমি !
---সত্যি ?
---অবশ্যই সত্যি !
----পার্ট বলতে পারবে ?
---কোন পার্ট ?
----মানে ?তুমি ক 'টা পার্ট করেছো ?
---এক এক দিন এক একটা !লাস্ট করেছি, রাবন !
---দশটা মাথা ছিল ?
---ছিল বইকি !
---পার্ট মনে আছে ?
---চেষ্টা করে দেখতে পারি l তবে এখন নয়, তোর বাবা চলে যাক তারপর l 
আজ বাবার ছুটি l সারাক্ষণ বাড়িতেই ছিল l বিকালের দিকে একটু বের হতেই মামা শুরু করল, আমি লঙ্কেশ্বর ! স্বর্ণ লঙ্কা মোর রাজ্য !হায় এ কী দুর্দশা আজ রাঘবের আক্রমণে ! সর্ব শক্তি সহ কাল যুদ্ধে ----
আর মনে পড়ছে না l 
বললাম, কী করে বুঝবো যে তুমি ঠিক পার্ট বলেছো !
---তুই পড়াশোনা করিস নি, সেটা কি আমার দোষ ? একটু চা দিতে বল না !
---এই তো খেলে ?
---এই তো খেলে l 
---তা হলে তোর বাবার পকেট থেকে একটা সিগারেট আন !
---ওটা পারবো না l আমি মা 'কে বলে চা ম্যানেজ করছিl 
#
পরের দিন বারোয়ারি তলায় নাটক ছিল : সূর্যগ্রহণ  l আমি মামার সঙ্গে দেখতে যাবো l 
কিন্তু মামা বলল, যাবো কিন্তু বাজে একটিং হলে চলে আসবো !
---বাজে হবে কেন ?এর আগে উদয়ন সংঘের নাটক দেখেছি তো !
---তুই ভালো মন্দের কী বুঝিস ?
এমন সময় ক্লাবের দুটো ছেলে !
মামার দিকে তাকিয়ে বলল. 
দাদা আপনার কাছেই আমরা এসেছি !
---কী ব্যাপার ?
---আমাদের একজন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে --আপনি যদি ওই পার্টটা করে দেন !
---আমি ?অসম্ভব l
আমি বলে উঠলাম, না না সম্ভব ! মামা রাম যাত্রায় পার্ট করেছে !
---ফাইন !তাহলে তো খুব ভালোই হল !
বইটা মামার হাতে দিয়ে, পার্ট বুঝিয়ে দিল একজন !
মামা বলল, তোর জন্যেই যত ঝামেলা হল !
---ঝামেলার কী আছে ?তুমি রামযাত্রা করেছো আর ওই টুকু পার্ট করতে পারবে না !
---আরে পারবো না কেন ?
---তবে আর কী !
#
মামা যে চরিত্রটা করছে, তার নাম ভবেশ l একটা বকাটে ছেলের বাবা !ধুতি পাঞ্জাবি পরে বেশ মানিয়ে ছিল !
নাটকের শেষ দিকে মামার পার্ট ! ডায়লক ছিল, দুধের বাটিতে চুমুক দিয়েছে হয়ে গেছে জল l মামা বলল, জলের বাটিতে চুমুক দিয়েছে হয়ে গেছে দুধ l 
আরও অনেক উল্টো পাল্টা ডায়লক !
প্রম্পটার বলল, ডায়লক ফলো করুন l 
অমনি কিছুটা বলেই, মামা বলল ডায়লক ফলো করুন !
হো হো হেসে উঠল সবাই l 
#
বাড়িতে আসতে মা বলল, সত্যি করে বল তো তুই যাত্রা করেছিস ?
মামা বলল. অবশ্যই করেছি --
তবে সামাজিক নাটকে একটু অসুবিধা হয় !
মা বলল, কেন ?
বাবা বলল. ও নিজেই তো অসামাজিক !


জাতীয় কন্যা শিশু দিবস
রাইলী সেনগুপ্ত 

"..যদি পার্শ্বে রাখ মোরে/সংকটে সম্পদে,/সম্মতি দাও যদি কঠিন ব্রতে/সহায় হতে,/পাবে তবে তুমি চিনিতে মোরে.." একথা উচ্চারণের সঙ্গে যে অস্তিত্ব বারবার নিজেকে পুনরায় মেলে ধরে তার নাম বোধহয় নারী‌।  এই নারী প্রজাতির একটা দশার নাম কন্যা। ২৪ শে জানুয়ারি জাতীয় কন্যা দিবস। 'দিবস'বলে এর আলাদা কোনো ব্যাখ্যা হয় কিনা জানিনা, তবুও সৃষ্টির উৎস থেকে শেষ পর্যন্ত যে বৈষম্য গুলো বারবার পিছুটানে তার বিপরীতে কিছু টা স্বস্তির প্রতীক হল এই দিন উদযাপন।
যদি একটু পিছেনে ফিরে তাকানো যায় দেখাযাবে এক নির্মম ইতিহাস! সদ্য কিশোরী মেয়ে গুলো বর্ণমালার আলোক স্পর্শের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে খেলাঘর বাঁধতে বসেছে নয়তো বা কখনো দাউ দাউ আগুনে গা ভাসিয়েছে 'সতী' হতে গিয়ে, আবার হয়তো 'কন্যা' হওয়ার অপরাধে পৃথিবীর আলোটাই দেখতে পায়নি নয়তো বা পেলেও ভেসে গেছে অথৈ জলে। এসব ঘটনার উত্তরণ ঘটেছে বহু কিন্তু সুসজ্জিত সমাজের মনের গভীরে কোথাও না কোথাও লালিত হচ্ছে এখনো। এসব কিছুর প্রেক্ষাপট থাকলেও এটা অনস্বীকার্য নারী বা পুরুষ কোনো প্রতিযোগিতার নাম নয়;এরা পরিপূরক। 
       মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের দ্বারা ২০০৯ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রথম কন্যা দিবস উদযাপন শুরু হয়।১৯৬৬ সালে দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শপথ গ্রহণ করেন।তাই নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসাবে এই দিনটিকে মর্যাদা দেওয়া হয়।প্রতি বছর নতুন থিমের মাধ্যমে এই দিবস উদযাপন করা হয়। যেমন ২০২০ সালের থিম ছিল 'আমার কণ্ঠ, আমাদের অভিন্ন ভবিষ্যত',২০২১-এর থিম ছিল 'ডিজিটাল জেনারেশন, আওয়ার জেনারেশন'। এই দিবস উদযাপনের একটাই লক্ষ্য এই সকল বৈষম্য দূর করা এবং মন ও মস্তিষ্ক কে আলো তে উদ্ভাসিত করা। বর্তমানে এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার থেকে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। 
  ইতিহাসের পাতায় অপালা, গার্গী, মৈত্রেয়ী, সাহিত্যে বনলতা, নীরা, বেগম রোকেয়া তাছাড়াও পিভি সিন্ধু, সুনীতা উইলিয়ামস প্রমুখ নারীরা যেন নিজেরাই এক বিদ্রোহের ভাষা। প্রকৃতপক্ষে এটা কোনো বিদ্রোহ নয়; এটা সামাজিক বৈষম্যতার বিরুদ্ধে একটু সোচ্চার হওয়া। কোনো ক্ষমতার আস্ফালন বা অপব্যবহার নয়; নারী ও পুরুষ একে অপরের পরিপূরক হয়ে যেন এগিয়ে নিয়ে যায় এই সমাজকে,এই যেন হয় ব্রত..
"সেদিন সুদূর নয়, যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীর ও জয়.."


জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 

২০৪৭-এ ভারত
অমর সাউ
সপ্তম শ্রেণী
জওহর নবোদয় বিদ্যালয়
পশ্চিম মেদিনীপুর

ভাষণের শেষে এলিক্স বলল, আমি সবাইকে পুনরায় স্বাধীনতার একশতম উদযাপনে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং আমার ক্ষুদ্র বক্তব্য শেষ করছি।
আপনারা হয়তো ভাবছেন এই এলিক্স কে। এবং এই গল্পের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক। এলিক্স একজন জাপানিজ পর্যটক। ওনার দেশ-বিদেশ সম্পর্কে খুব জ্ঞান। 
সালটা ২০৪৭। তিনি খবরের কাগজ পড়তে পড়তে দেখলেন, একটি পাতাতে ভারতের একশতম স্বাধীনতা দিবস পালিত হবে। তিনি বহুদিন ধরে ভাবছিলেন, ভারত যাবেন। কারণ ভারত বাদে বাকি সমস্ত দেশ মোটামুটি ঘুরে নিয়েছেন। তাই তিনি ভারতের শততম স্বাধীনতা দিবসের সময় ভারত ঘুরতে যাবেন ঠিক করলেন। সেইমতো ১৪ আগস্ট তিনি পৌঁছে গেলেন ভারতের রাজধানী দিল্লীতে
এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেখলেন, সেখানে সমস্ত যন্ত্রমানব কাজ করছে। ম্যানেজার থেকে সিকিউরিটি গার্ড সবাই যন্ত্রমানব। যাত্রীরাও সুশৃঙখল ভাবে যে যার নিজের প্লেনের জন্য অপেক্ষা করছে বা প্লেন থেকে নেমে চলে যাচ্ছে। সে এই দৃশ্য দেখে একটা ছবি তোলার সিদ্ধান্ত নিল। এরপর যখন সে ক্যামেরার মেমোরি কার্ড বার করার জন্য পকেটে হাত ঢোকালো, তখন তার মনে পড়ল, সে তার মেমোরি কার্ড বাড়িতে ভুলে ফেলে এসেছে। সে ভাবল, ভারতের দোকান থেকে মেড ইন টোকিও -এর কোনো মেমোরি কার্ড কিনে নেবে। সে তখন এয়ারপোর্টে স্মার্টবাই নামে একটা দোকানে ঢুকল। ঢোকামাত্র তার সামনে একটা সার্চ স্ক্রিন আর একটা টুল উঠে এল। সে সেখানে মেমোরি কার্ড সার্চ করতে লাগল। কিন্তু সেখানে মেড ইন টোকিও লেখা কোনো কার্ড ছিল না, সবই মেড ইন ইন্ডিয়ার কার্ড। বাধ্য হয়ে সে তার থেকে একটা বেছে কিনে নিল। তারপর সে দিল্লী শহরকে দেখতে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ল।

কিন্তু যেহেতু তার ID নং এরর দেখাচ্ছিল তাই কোনো ব্যাটারি গাড়ি, সৌর শক্তি চালিত গাড়ি, ঝুলন্ত অটো তাকে লিফট দিতে চাইছিল না। সে তাই হাঁটতে হাঁটতেই ইন্ডিয়া গেটের কাছে পৌঁছে গেল। ইন্ডিয়া গেটের স্থাপত্য দেখে সে মুগ্ধ হয়ে গেল। সে তার মোবাইলের অবজেকাত ডিটেক্টর মেশিন দিয়ে দেখল এটি প্রায় একশ বছরের বেশি পুরোনো। আগে জাপানেও নাকি এমন অনেক নিদর্শন ছিল কিন্তু এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে সেগুলি সবই ধ্বংস হয়ে গেছে। এরপরই তার মোবাইলে একটি মেসেজ ঢোকে। তাতে লেখা হয়, Welcome in India. You are our guest. You can visit India, free of cost, by helping this app, below.

এরপর সে মোবাইলে আঙুল ছোঁয়াতেই, টুরিস্ট লোকেশান হেল্পলাইন, টুরিস্ট হোটেল হেল্পলাইন, টুরিস্ট ট্রান্সপোর্টেশান হেল্পলাইন, ইত্যাদি এপগুলো লোড করে নিল পর পর। টুরিস্ট ট্রান্সপোর্টেশান হেল্পলাইন থেকে একটা উবের ট্যাক্সি বুক করে নিল। এরপর টুরিস্ট লোকেশান দেখে দেখে লালকেল্লা, কুতুবমিনার, জামে মসজিদ ইত্যাদি পর পর দেখে চলল। আর মনে মনে ভারতের এই উন্নত পরিষেবা দেখে অবাকই হচ্ছিল। এরপর সে টুরিস্ট হোটেল বুকিং এপ দেখে একটা জাপানিজ হোটেল বুক করে নিল। হোটেল বিশ্রাম করতে করতে সে ভূমিকম্পের পর  জাপানের দুরাবস্থার দিনগুলোর কথা ভাবছিল আর স্মার্ট টিভিতে জাপানের খবর দেখছিল।

এই সময় উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ চলছিল। তাই খাদ্য সংকট হচ্ছিল। টিভিতে দেখাচ্ছিল ভারত সরকার খাদ্য পাঠিয়ে কোরিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছিল। একসময় ক্লান্ত হয়ে এলিক্স ঘুমিয়ে পড়ে। ভোরে ঘুম ভাঙলে হোটেলে জানলা দিয়ে এক আশ্চর্য দৃশ্য দেখে। আকাশে কমলা সাদা ও সবুজ আবির উড়িয়ে এরোপ্লেন উড়ে যাচ্ছে। ওদিকে টিভিতে দেখাচ্ছে যুদ্ধ বিমান করে কোরিয়ার দিকে খাদ্য নিয়ে চলেছে ভারতীয় সেনা। এরপর সে সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে লালকেল্লায় পৌঁছায়। নিজের কার্ড দেখাতেই সেনাবাহিনী তাকে অতিথিদের বসার ব্যবস্থা যেখানে করা ছিল সেখানে নিয়ে গিয়ে বসায়। তখন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ হচ্ছিল জাতির উদ্দেশ্যে। সবশেষে রাষ্ট্রপিতির অনুমতি নিয়ে একটি স্যাটেলাইট পাঠানো হল মঙ্গলে। সমস্ত দেশবাসী টিভিতে সেই মঙ্গলযানের টেক অফ দৃশ্য দেখল। এলিক্স এরপর সকল ভারতবাসীর সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে 'জন গন মন অধিনায়ক জয় হে' গাইল।

অরিন্দম হালদার || পঞ্চম শ্রেণি,পাটিকাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় পাটিকাবাড়ি, নদিয়া 

পাঠ প্রতিক্রিয়া
( ছোটোবেলা ১১৭ পড়ে অসীম হালদার মহাশয় যা লিখলেন)

একটার পর একটা সংখ্যা চোখের সামনে থেকে ফুস্ করে কখন যে পালিয়ে যায়, সময়ের চাটুকারিতে টের পাই না। নাহ্, এবার ব্যাটাকে পাকড়াও করে মনে মনে জেদ ধরেছিলাম, এবারের ১১৭ নং সংখ্যাটি পড়েই ছাড়বো। আরে না ... না... আমি কাজের দোহাই দিচ্ছি না; 'ফেলুদা'র মত ব্যস্ত মানুষ, তোমাদের ঘোষ স্যার (মানে রাজীব কুমার ঘোষ স্যার), তারপর ধরো না, কত সাহিত্যিক, কবি, গল্পকার, অনেক সাধারণ মানুষরাও তো আমারই মতো কাজের ফাঁকে ফাঁকে এক আধটু অন্যান্য কাজেও সময় দেন। তাহলে ওসব কোন এক্সকিউজই খাটবে না। বরং বলতে পারো এবার আর তোমাদের লেখা থেকে ফাঁকি দিতে পারলাম না। তার কারণ কি জানো ছোট্ট বন্ধুরা! অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, এই সংখ্যায় তোমাদের মৌসুমী আন্টি পৌষ সংক্রান্তির খবর দিয়েছেন। আর তোমাদের কাণ্ডকারখানা তো আছেই। 

প্রচ্ছদ সম্বন্ধে তোমাদের কাছে না বললেই নয়, এমন কিছু কথা বলি। আমি তখন খুবই ছোট, এই ধরো তোমাদের মতো ক্লাস ফাইভ সিক্সের ছাত্র। আমাদের গ্রামের বাড়িতে শীতকালে গেছি। সেখানে তখন কী ঠাণ্ডা রে বাবা! একটা সময়ে ঘড়্ ঘড়্ করে কি একটা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখ মেলে তাকাতে কিছুই নজরে এলো না। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আবার সেই শব্দ, ঘস্ ঘস্, ঘড়্ ঘড়্...কান পেতে শোনার চেষ্টা করতে টের পেলাম, মিটমিটে হাল্কা আলো বেড়ার ঘরের দেয়াল স্পর্শ করে আমাদের ঘরে ঢুকছে। উঠে দেখি, আমার বড়মা মানে জ্যেঠিমা শীল নোড়ায় নতুন চাল গুঁড়ো করছে পিঠে বানাবে বলে। ঘরের দেয়ালঘড়িতে দেখি, তখন ভোর সাড়ে চারটে! সে তখন উঠে একটা সুতির চাদর গায়ে দিয়ে ঐ ঠাণ্ডায় চাল গুঁড়ো করছে! মা-ও রয়েছে তাঁর সাথে। দুজনে মিলে পিঠের উপকরণ গোছাতে ব্যস্ত। আমার একমাত্র পছন্দ ছিল 'সাজের পিঠে' বা 'ছাঁচের পিঠে'। একটা মাটির সরায় পাঁচটা একই সাইজের গোল গোল ছাঁচে চালের তরল গুঁড়ো ঢেলে দেওয়া হোতো আর গরম হয়ে শক্ত হয়ে এলে উঠে আসতো গামলায়। এসব অবশ্য মাটিতে পাতা উনুনেই করা হোতো। পাতে পড়তো বাড়িতে তৈরী ঝোলা গুড়। ব্যস্! আর কি চাই! গরম গরম খান দশ পনেরোটা খেয়ে নিতে নিতে পেট যেত ভরে। এছাড়া নবান্নের চালের গুঁড়ো, নারকেল ইত্যাদি দিয়ে মুড়ি মেখে খাওয়ার স্বাদ এখনও ভুলতে পারি নি! এসব শুনলে তোমাদের কাছে নতুন জিনিস মনে হবে, জানি। কিন্তু আমরা এসব দেখেছি, তোমাদের বাবা মায়েদের কাছ থেকেও এসব শুনতে পারো। বাংলার সংস্কৃতির সাথে পৌষ সংক্রান্তি পিঠে পুলি উৎসব আনন্দে ভরপুর। 

তোমাদের বন্ধু, প্রবাহনীলকে নিশ্চয়ই এতদিনে অনেকেই জেনে গেছো। এবারে যে গল্পটা লিখেছে, তাতে ও কিন্তু অনেক বড়ো কথা বলে ফেলেছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কথা লিখেছে, যেটা নিয়ে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী হুলস্থুল পড়ে গেছে। সেখানে শীতকালের মেয়াদ দিনে দিনে যেন মনে হচ্ছে কমে যাচ্ছে। তাহলে সত্যিই তো, ভূত-বাবাজীরা বেরোবে কি করে, আর গল্পই বা কে লিখবে গরমে পুড়তে পুড়তে! 'ডায়েরির পাতা থেকে' তার এমন সুন্দর গল্পটি পড়ে হাততালি দিচ্ছি৷

"যারা তোর জীয়ন্তে শ্রাদ্ধ করল, সেই সমাজই মরে গেছে"। আবার দেখলাম,
"উমাশশীর মনে হল বেঁচে থাকা কী আশ্চর্য মধুর, এদের কাছে না এলে জানাই হত না"।
দুটো পরিবেশ, দুরকম অনুভূতি এবং সংস্কারের বাহুল্যে ন্যুব্জ হয়ে পড়া সমাজকে টেনে সোজা করার মহতী প্রচেষ্টা আকাশ, বাতাস, বনবাদাড়, মন্দিরের দেবতাকে সাক্ষী রেখে। এ এক কঠিন লড়াই অসমযুদ্ধে। যে সমাজে নারীজন্ম মানেই অভিশাপের মতো, সে অভিশাপের ভার লাঘবে সমাজের কদর্য দৃষ্টি এড়ানো অসম্ভব। নারীসমাজের অন্দরের না-বলা কথার আভাস পেলাম "জয়াবতীর জয়যাত্রা"র পথে। এখানে উত্তোরণের পথ তৈরী হচ্ছে কঠিন প্রত্যয়ের হাত ধরে। সাধুবাদ জানাই তৃষ্ণা বসাকের শক্তিশালী লেখনীকে। তোমরাও নিশ্চয়ই লেখার এক একটি লাইন পড়তে গিয়ে শিউরে উঠছো আর অবাক হচ্ছো যে এরকমই ছিল আমাদের সমাজে নারীদের দুরবস্থা!

ক্লান্তিহীন দিনযাপনে আমরা হিসাবের খাতা নিয়ে বসি; সেখানে চাহিদা আর চাহিদা পূরণের জটিল অঙ্কগুলো কষতে থাকি। সমাধানের পথ খুঁজে পেলে নতুন অঙ্কের সূত্র খোঁজা শুরু। জীবনের অর্থ লিখতে গিয়ে কবি শেষে এসে ধাক্কা খেলেন। বরং বলা ভাল, ধাক্কা দিলেন পাঠকদের, যেখানে ভালবাসা অধরাই থেকে গেল। সে কিন্তু তৃষ্ণার্ত রয়ে গেল খাঁচার জালে আবদ্ধ হয়ে! এমনটাই কি তাহলে আমরা চাইছিলাম জীবনে, ভাবতে বাধ্য করলেন কবি। খাঁচার পাখিরা কালাতিপাত করে চলেছে সেই কবে থেকে। আর ভালবাসার মতো নির্মল পবিত্র বস্তু থেকে গেলো উপলব্ধির বাইরে। একটি চমৎকার জীবনবোধের উদাহরণ দিলেন কবি বিনোদ মণ্ডল, তাঁর সুন্দর লেখনীগুণে।

যখন একটা সুন্দর ছন্দের তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছিল মস্তিষ্কে, ঠিক তখনই ফিরে গেলাম ফেলে আসা দিনের কথায়; যেখানে তুতুলের মতো ভেসে উঠতে লাগলো আমারও কিছু কথা। পুতুল খেলনার কথায় তুতুলের মামণি ফিরে গেল তাঁর শৈশবে। সেখান থেকে খেলনা হাঁড়িতে, যা তার নানীর কাছ থেকে পাওয়া এবং তাকে উপহারস্বরূপ দেওয়া। ঠিক এইভাবে শৈশব জীবনের কথায় ভেসে গেল তার মামণি এবং নানীর কথার মাধ্যমে। ডঃ আসরফি খাতুন আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন শৈশবের পর্বে, যেখানে তিনি সব মায়েদের অন্তরের কথাকে টেনে বের করে বলছেন, "সব মায়েরই মনের ভিতরে একটা শিশু বাস করে।" এখানেও পেয়ে গেলাম সেই নারীদের যাপনকথা, যা বৈবাহিক বন্ধনে ফিকে হয়ে আসে শৈশবের কথা। তাঁদের সন্তানের সাথে সখ্যতায় তারা আবার যেন সজীব হয়ে আসে এমন স্মৃতিকথা রচনায়।

জানুয়ারী মাস পড়লে আমার জীবনে বহু ঘটনা ভেসে আসে প্রতি বছরই। আর এইসব ঘটনার সাথে অবশ্যই ২৩শে জানুয়ারী এবং ২৬শে জানুয়ারীর প্রসঙ্গ। আমাদের সবার কাছে যিনি 'নেতাজী', তিনি আজও সবার হৃদয়ে সমান শ্রদ্ধা এবং সম্মানের সাথে পূজনীয়। দোলনচাপা তেওয়ারী দে-র লেখায় হঠাৎ ডুবে গেলাম বোকাবাক্সের একটি সিরিয়ালে, যেখানে বহু ঘটনা দেখানো হলো সুভাষচন্দ্রের জীবন নিয়ে, তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে। চেষ্টা করেছি প্রায় সব এপিসোডগুলো দেখতে। এমন অসাধারণ মানুষটির কথায় এবং ভূমিকায় আমরা আজও আবেগে ভাসি। আজকে এমন নেতার জন্য গোটা ভারতবাসী গর্বিত। তাঁর মূর্তি স্থাপিত হয়েছে রাজধানী দিল্লীর ইন্ডিয়া গেটের পাশে। বিলম্বিত হলেও তা অবশেষে সম্ভব হয়েছে। আগামীতে তাঁকে নিয়ে চর্চা, পড়াশুনো চলুক, এটা মনে হয়।

প্রতি সংখ্যার মতো এ পর্বেও রয়েছে সঞ্চিতা, জয়দীপ এবং সুনেত্রার আঁকা ছবি। একটা সময় ছিল, যখন বাড়ির খবরের কাগজের পাতাগুলো রঙিন আকারে পেতাম না। পরে একটা বা দুটো পাতা রঙিন পেতে শুরু করলাম। তখন কি আনন্দ! উল্টে পাল্টে দেখতে কি ভাল লাগতো। তারপর যখন সব পাতাগুলোই রঙিন আকারে আসতে শুরু করলো, তখন হৃদয় উল্লসিত। তোমাদের আঁকা ছবিগুলোও এক কথায় তাই। গল্প কবিতার পাশাপাশি তোমাদের এই ছবিগুলো মনের ভাল লাগাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। জীবন্ত হয়ে ওঠা সেই ছবিগুলো সুখবৃষ্টির ধারায় আমাদের মতো মানুষদেরকে তৃপ্তি দেয়। চেয়ে থাকা তার জন্য আরও এক সপ্তাহ। তোমাদের মৌসুমী আন্টির ব্যবস্থাপনার প্রশংসা এসবের বাইরে অবশ্যই নয়। শুরু হোক পথ চলা, শুরু হোক কথা বলা, মাভৈঃ।



Post a Comment

1 Comments

  1. ছোটোবেলা ১১৭ ও ১১৮ সংখ‍্যা দুটি পুরোটাই খুব মনোযোগ সহকারে পড়লাম। ভালো লাগলো তৃষ্ণা বসাকের 'জয়াবতীর জয়যাত্রা' খুব খুব ভালো লাগলো এমনকি পাঠ প্রতিক্রিয়াও প্রশংসার দাবি রাখে। ধন্যবাদ জানাই সম্পাদক মৌসুমী ঘোষকে।সম্পাদকীয়কেও কতটা আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা যায় সেটা ওর কাছে শিক্ষণীয় বিষয়। বেঁচে থাকুক শিশুবেলা। ছোটোবেলার দীর্ঘায়ু কামনা করি 💖💖
    ড. আসরফী খাতুন
    পূর্ব বর্ধমান,
    মো: 9474041653

    ReplyDelete