জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /হিল্লোল রায়

গুচ্ছ কবিতা

হিল্লোল রায়

হে পিয়ানোবাদক

আঁধারের মুখ দেখে, চোখ দুটো বুজে রেখে,
কে গো তুমি পিয়ানো বাজাও?
সুরাপায়ী শ্রোতা যতো, কোলাহল করে কতো,
যবে তুমি নিজেকে সাজাও!

মেঘ ঢাকা আকাশে, দেখি আজ ফ্যাকাশে,
জ্বলে শুধু একটি তারা !
তাইতো তোমার কাছে , ভয়ে ভয়ে বলি পাছে,
অচেনা জগৎটাতে রই দিশাহারা !!

তুমি কি আমায় নেবে, ঘুম চোখে এঁকে দেবে,
হাতের ছোঁয়া ও পিয়ানো পরশ ?
নিরালায় আমার মন, খুঁজে পাবে অনুক্ষণ,
'হতে গিয়ে আপনি সরশ !!


ব্যুমেরাং

ব্রেণস্ট্ররমিং এর সূত্রে হয়েছিল যেতে রিও ডিজেনেরিও, গ্লোবাল ওয়ার্মিং কনফারেন্স -এ। পরিবেশ দূষণ সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের আকুলি-বিকুলি শোনাবার ও জানাবার মস্ত সুযোগ ।

বক্তার তালিকায়ঃ

এলিহ্যান্ডা এ্যগিলার, সোয়েৎলানা তেবেস্কোভা, ভ্যালেন্তিনা মাগুসিও, এ্যাঙ ফুং লিং ইয়েন ।
নর্থ আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রাবস্থায় এরাই ছিল আমার হার্টথ্রব ।
উত্তেজনার আগুন পোহাচ্ছি
বিগত ছ'মাস ধরে;
ভ্যালেন্টাইন ডে র ঠিক ছদিন আগে
শহর থেকে কনফারেন্স -
সংগী হলো বাক্স সমেত চকোলেট ও রেড রোজ তোড়া;

রিমি-র আয়না মুখে -
দেখতে হলো ভরা শ্রাবণ
তবুও আমি মনের মাঝে শুনছি তখন শিসের নাচন
সংগ দেবে বুলডগ চ্যান্সী
নামটা তার বড়ই ফ্যান্সী।

স্যুটকেস গুছিয়েছিলাম আমি একাই'
রিমির ফুরসৎ পায় নি লাগেজ চেকিং এর !
ডেলটা এয়ারলাইন্স পৌঁছে দিলো
যথাসময়ে মালপত্রসহ।

স্বল্প বিশ্রামের পর বেরুলাম রেড রোজ তোড়া ও
গিফটবক্স নিয়ে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে ।
সে এক নতুন অভিজ্ঞতা
দেখি এলিহ্যান্ড্রা ইন্টিমেট আলোচনায় মগ্ন
রাউল কালোজ হার্নান্দেজ এর সাথে ।
সাহস পেলাম না হাই(Hi) বলতে ।

দৃষ্টি কাড়লো ব্যালেরিনার ড্রেসে
সোয়েৎলানা ব্যস্ত আইগর চেরিপোভা-কে নিয়ে;
সানগ্লাস ও হাই হিল পরা ভ্যালেন্তিনা

মিনি স্কার্টে শরীর দুলিয়ে চলেছে
লুসিয়ানো লম্বারগিনি-কে নিয়ে;
নিঃশ্চুপ এ্যাঙ ফুং তালুর বন্ধনে
আবিষ্ট করেছে সাং দাও পিং-কে ।

কনফারেন্স শেষ। রিটার্ন ফ্লাইট ডালাস
পৌঁছায় সূর্য ডোবার আগে
ভ্যালেন্টাইন ডে-তে ।

সূর্য্যাস্তে কুলায় ফিরেঋমি-কেই হাই বলে বাক্স খুলে বন্দী
যত চকোলেট ও রেড রোজগুলো ধরিয়ে দিলাম ভালবেসে-
তাই না দেখে হ্যাংলা চ্যান্সী ছুট্টে এলো চাকতে চকলেট
মুখটা করে ভিষণ করুণ তাকিয়ে ছিল আমার দরুণ
দেখতে পেলাম সেই সাথে রিমি ও......।।

পেজে লাইক দিন👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 

তেঁতুলদাদার দশ প্রেমিকা

তেঁতুল দাদার দশ প্রেমিকার একটা বর এ ভয়,
কনিষ্ঠাটা পালায় দীঘা, রইলো বাকি নয় !
তেঁতুলদাদার নয় প্রেমিকার প্রিয় খাবার চাট্,
প্রাণ নিলো এক চাটের তেঁতুল, রইল বাকি আট !

তেঁতুল দাদার আট প্রেমিকার আড্ডা দ্যাখে ছাত,
দাঁত ভাঙতেই একটা মলো, রইলো বাকি সাত !
তেঁতুলদাদার সাত প্রেমিকার শ্বশুর বাড়ীর ভয়,
একটা গেলো বিশুর হাতে , রইলো বাকি ছয়-
তেঁতুলদাদার ছয় প্রেমিকার ছেলে মাতানো নাচ,
দেখাতে গিয়েই একটা উধাও, রইলো বাকি পাঁচ !

তেঁতুলদাদার পাঁচ প্রেমি্কার পছন্দসই 'কার',
কেড়ে নিলো সেলসম্যান এক, রইলো বাকি চার !

তেঁতুলদাদার চার প্রেমিকা খুঁজতে বসে দিন,
একটা মলো পাঁজির চাপে, রইলো বাকি তিন!

তেঁতুল দাদার তিন প্রেমিকা, তিরিশ ছুঁই ছুঁই,
'ফেসবুক' এতে একটা বেহাত , রইলো বাকি দুই !

তেঁতুল দাদার দুই প্রেমিকার লিখতো 'বাউন্স' চেক-
একটা গেল হাজতবাসে, রইলো বাকি এক।

তেঁতুল দাদার এক প্রেমিকার লাগলো পিছে ফেউ,
ইজ্জত হানির খবরে তার রইলো না আর কেউ !

মনের দুঃখে তেঁতুল দাদা 'ইউ টিউব” এ যান,
দিনের আড্ডা গ্র্যান্ড হোটেলে রাতে শোনেন গান ।
সুযোগ বুঝে লিন্ডা -জিনি করতে থাকে রিং,
তেঁতুল দাদা বলেন হেসে “কাম অন ওভার, ডান্স এ্যন্ড সিং”।


ভাষা মাহাত্ম্য

হাসাহাসি ভালো,
তবে ভাষা নিয়ে নয়-
জনতার রোষানলে
হবে নয়-ছয় !!

সন্দেশটা হজম হয়
মাতৃভাষায় হলে-
নইলে পরে মনের মাঝে -
মোরগ লড়াই চলে!!

ভাষা জ্ঞান ভাসাভাসা,
তাই লিখি ছন্দে-
মন-টা যে ডুবে রয়
সুর ও লয় দ্বন্দ্বে !!

ভুবনে ও ভবনে
ভাষাদের নীড়-
শ্রোতা হয় কোন্দল,
দলাদলি, ভীড় !!

ভগ্ন হৃদয়ে ভাষা-ই তরণী,
কুলে কুলে ভাসে একা-
দর্শক-শ্রোতা বিশাল ধরণী,
গায়ক কুহু - কেকা!!

মনের গাঁথার গায়ক ভাষা,
মন পাখি-দের সঙ্গে-
ঢুলায় চামর দিনে-রাতে,
ধনী গরীব-এর অঙ্গে !!

বুকনী ভাষায় ফেসবুক এতে
লিখলে পরে কেউ-
বন্ধু ভাগ্যে টানা-পোড়েন,
লাগবে পিছে ফেউ !!

শিশু-এর মুখে ভাষা ফুটলেই
মা এর মনে হাসি -
বাবা তখন ভাবেন শুধু,
কখন যাবেন কাশী !!

ধনী লোকের ভাষায় থাকে
গাঙ্গুরাম এর মিষ্টতা-
উল্টো-টা তার গরীব লোকের,
নেই যে কোনো শিষ্টতা!!

ভাষা চাতুরী শিখতে চলুন
গন্ধমাদন পর্বতে-
হানিমুন-টা জমবে ভালো,
ওয়াইন-লিকার-সরবতে !!

ভাষা নিয়ে “ঋতবাক” -এ
আইডিয়া ভরপুর-
মিস তাই কোরো নাকো,
হয়ে যাবে কর্পূর !!

ভোটের আগে প্রার্থী ভাষা
পড়তে পায়ে বাকী-
জেতার পরেই ভোট গণনায়
প্রতিশ্রুতি ফাঁকি!!

লোনের টাকা শোধ না দিলে
বদলে যাবেই ভাষা-
বন্ধ করেন “লোন শার্ক” তার
মুখের দেঁতো হাসা।!!

ভাষা বদলায় বড়বাবু-র
করলে বেশি কামাই-
সমাধান করতে হলে
থাকুন ঘর জামাই!!

দর্পণ এ তর্পণ, দর্শন এ ধর্ষণ,
বদলায় ভাষা-
শোষণের যন্ত্রে, তোষণ এর মন্ত্রে
লাগে খুব খাসা !!

প্রেমের ভাষা যায় যে উবে
ডিভোর্স হলে পরেই-
হাসি-কান্না, চুনি-পান্না,
ঘাপটি মারে ঘরেই !!

কোকিলেরা ডিম পাড়ে
কাক এর বাসায়-
গালি দ্যায় কাক বাবা,
কিভাবে? কোন ভাষায়??

মাসির কাছে মা-এর গল্প,
মিষ্টি মধুর ভাষায়-
খেপলে মাসি বলবে আসি,
গ্রামবাসীরা হাসায়!!

বিনা টিকিটের যাত্রী যখন
পড়েন নিজে ধরা-
অজুহাতের ভাষা তখন
মিথ্যা কথায় ভরা !!

চোখের ভাষার গভীরতা
বোঝায় মনের প্রেম-
স্বামী-স্ত্রীর কাজটা এখন,
খোঁজা ফটোর ফ্রেম!!

আঁধারের ভ্রুকুটিতে
লুকায়িত ভাষা-
মনে আসে মাদকতা,
প্রেম ভাসা ভাসা !!
ডলফিন চায় যবে

প্রেমিকাকে কাছে-
মুখে তার ভাষা এসে
ভিড় করে পাছে!!

বোবা-কালা'র ভাষা ধায়
সংকেত মাঝে-
প্রহরের নেই বাধা,
সকালে বা সাঁঝে !!

যাযাবর পাখিদের
GPS ভাষা-
বিজ্ঞানী ঘিলুগুলো
করে কোণঠাসা!!

ভাষা নিয়ে ঋতবাক
খুবই পয়মন্ত
জড়ো করে দেশী, ও বিদেশী
কবি, সাধু, সন্ত !


স্যান্টা ক্লারায় বাঙালীর হাট

স্যান্টা ক্লারায় বসেছে আজ বংগ প্রীতির মেলা
সুরে আর স্বরে, বাংলার তরে, শিল্পী-কবির খেলা
কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছে বিশ্ব বাঙালী হাট
নেমে গেছে ঢল, শুনি চল চল, জমায়েতে ভরে ঘাট!
এসেছেন সব শিল্পাভিনেতা দেখাতে শোনাতে সৃষ্টি-
অডিটোরিয়াম ও কর্ম মুখর, আছে বাঙালীর কৃষ্টি
স্বপ্নের স্তরে, শোভে থরে থরে, বাঙালি শিল্প ঝাঁপি-
মিলিত হয়েছি ভাষা রসপানে, আনন্দে অশ্রু ছাপি!
বলিউড আজ হলিউড দেশে তুলেছে নতুন ঝংকার-
টলিউড ও তাই, পড়ে নেই পিছে শোনাতে পিনাকে টংকার
খ্যাতনামা কবি, বাদ্য বাদক সাজিয়ে বরণ ডালা-
হয়েছে হাজির শোলার শিল্পী, ভোজনে বাঙালী থালা!
তিন দিন ধরে, হৈ হুল্লোড়ে, মনটা হবেই সরস-
বাংলা ভাষার সৎকার মাঝে, লাগে মনেতে পরশ!


Post a Comment

0 Comments