জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়


গুচ্ছ কবিতা
বিশ্বরূপ  বন্দ্যোপাধ্যায়

(এক)  মেলা

এডিটর' দাদা দিলেন লিখতে মেলা'এ বিষয় টিকে,
বিষয়টা খুবই জটিল তো তাই হাতড়াই চারিদিকে ।
কাগজ কলম নিলাম তো হাতে,
জানিনা এখন কি আছে বরাতে,
'বই মেলা' লিখি নাকি আন মেলা ধোপে তা যাবে কি টিকে?

বিষ্ণুপুরের/ কালী বাড়ি ঘিরে/ মেলা বসে /পৌষ মাসে,
দূর দূর হতে/ কত লোকজন/ সে মেলা/ দেখতে আসে,
বাজিকর- ঘর, দোকান পসার,
কত লোকজন, কত চিৎকার,
সে মেলা দেখতে/ এলাম দুজনে/ মন ঘোরানোর/ আশে ,
চারি দিকে ঘোরে দু চোখ আমার, গিন্নি আমার পাশে ।

চুঁয়াপুর হতে বহরমপুরে  সেখানে ধরেছি ট্রেন,
দুটি বড়ো ব্যাগ এখন তো ফাঁকা জানি পরে দেবে 'পেইন',
'জেলা সংবাদ' আমি রিপোর্টার,
টাটকা খবর লেখা দরকার,
গিন্নি আমার সঙ্গে চলেছে গলাতে সোনার চেন,
মানেনি বারণ,ঝুঁকি অকারণ,চারিদিকে চোর শ্যেন।

মেলায় খেলাম ঢাকাই পরোটা সঙ্গে আলুর দম,
হালুইকরের দোকানে খেলাম বেনারসি চমচম,
পরে উঠলাম নাগর- দোলাতে,
গিন্নি কিন্তু উঠলো না তাতে,
খুবই ভয় পায়, নাগর-দোলায় গা'টা করে ছমছম ,
রিকশা, বাইক কতো লোকজন চলাচল হরদম ।

চালুনি,সাঁড়াশি,বেড়ি ও চাকতি হয়ে গেলো এক রাশ,
আরও বহু কিছু বাঁধার জন্য খুললো শালের ফাঁস,
কাশিমবাজারে জন অরণ্য,
ট্রেনের জন্য সকলে বন্য,
গিন্নিকে ভেবে কার হাত ধরে সে এক সর্বনাশ ,
চারি দিক হতে নানা গালাগাল সবই তো  আছোলা বাঁশ।

বহরমপুর এসে বহু ঘুরে তবু পেলাম না তার দেখা,
দরকার বুঝি রেল পুলিশেতে  ডায়েরি একটা লেখা,
পুলিশ বললো করে হাসাহাসি,
"পালিয়েছে নিয়ে আশিক পিয়াসি,"
অফিসার কন,"ফটো প্রয়োজন,তবে তো ডায়েরি লেখা ,
আর কোনো দিন পাবো কি গো ভাই  সেই রূপসীর দেখা?

মন ভার করে স্টাফ কোয়ার্টারে এলাম আমি তো ফিরে,
কত না ভাবনা মাথায় আসছে সোনার চেনকে ঘিরে,
চেন যায় যাক ,গলাটা তো থাক,
বৌ'টা ফিরুক,শাস্তি টা পাক,
বারণ না শুনে সোনা পরবার দন্ড নামুক ধীরে ,
হয়ে নার্ভাস ঘন ঘন শ্বাস বইছে যে বুক চিড়ে ।

***   ***   ***   ***   ***   ***   ***   ***   ***

বাসনের তাকে বাসন পত্র ঝক ঝকে সব মাজা,
স্টোভের ওপরে কড়াই খুন্তি কি যেন হচ্ছে ভাজা,
আমাকে দেখেই ছুটে এলো চলে,
"কোথা গিয়েছিলে আমাকে না বলে?
তোমার জন্য মেলায় কিনেছি মন্ডা, জিলিপি,খাজা,
হারানো লোকটা ঘরে তো ফিরেছে,ফিরেছে আমার রাজা"।।

চোখে এলো জল তার কথা শুনে আমি নাকি তার রাজা,
সেই তো রানি আমার জীবনে- 'কানাই-এর বাঁশি বাজা',
"এসো সুন্দরী আমার মানসী ,
তোমার চেয়ে গো কে আছে রূপসী,
তোমাকে নিয়েই আমার স্বপ্ন আমার এই রাজা সাজা,
আমার জীবনে তুমি আছো তাই আমি আজ মহারাজা"।।


জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 

(দুই) পতি পত্নী সংবাদ

পত্নী :
তুমি বলো তুমি দেবতা আমার ,
আমার ধর্ম তোমার সেবা,
তাই তো তোমাকে সেবা করে চলি,
 আখেরে কি পাবো বলে তা কেবা ?

ন'টা না বাজতে টেবিলেতে বসো,
তখন ই  তোমাকে দিতে হবে ভাত
একটু দেরিতে চিৎকার করে সারা
পাড়া তুমি করে চলো মাত ।।

কোন ফুল দিলে খুশি হবে তুমি -
সেটাই এখনও বুঝি নি আমি ,
তবু প্রাণ পণে খেটে চলি প্রিয়,
যাতে খুশি হন আমার স্বামী ।

দিন আর রাত এক করে ফেলি-
আমার কঠোর পরিশ্রমে ,
বাজার টা আনো অনেক দেরিতে,
রান্না করতে হারাই দমে ।

তবুও তো আমি হালটা ছাড়ি না,
দুই উনুন জ্বেলে রান্না সারি ,
 ঠিক মতো তুমি খেতে পাও যাতে
সর্বদা রাখি সে প্রয়াস জারি।

ধোঁয়ার জ্বালাতে প্রাণ যায় যায় ,
তবু মুখ বুজে রান্না করি ,
সেটাই হয়তো পতিদেব চান,
ভাবেনই না আমি বাঁচি কি মরি ।

পতি :
লেকচার দেওয়া ভালোই শিখেছো ,
এ ব্যাপারে নাই তোমার জুড়ি ,
কি বলে লোককে  বশ করা যায় -
বলছো সে কথা  কয়েক ঝুডি ।

অফিসের 'বস' খুবই বদরাগী -
দেরি দেখলেই  বকেন কষে ,
গোটা অফিসটা চিৎকার করে -
রেখেছেন তিনি নিজের বশে ।

এ কারণে আমি করি তাড়া তাড়ি ,
অফিসেতে যাতে ঠিক যেতে পারি,
নাহলে চাকরি খুইয়ে ফেলবো -
তুমি ভাবো এটা খুবই বাড়া বাড়ি ।

তোমার কষ্ট বুঝতে তো পারি ,
পরিশ্রম টা হয় খুবই বেশি ,
কি করবো বলো অফিস বসের-
খুবই যে শক্ত চোয়াল-পেশি ।

পত্নী :
বুঝেছি বুঝেছি বলতে হবে না,
অফিসের রাগ বাড়িতে ঢালো ,
তোমার মেজাজ ঠিক করে দেবো -
 বকশিশ দিও বেশ জমকালো ।

বকশিশ হলো সেই ভালবাসা -
যা পেলে সবাই হয়ে যায় খুশি ,
সেই ভালবাসা দিও গো আমাকে,
রেখো গো আমার মনটাকে তুষি ।।

পতি :
শুকনো  প্রণয়েতে কাজ কি গো হয়?
দেবো ভারী ভারী গয়না গাটি ,
দেবো বেনারসী , দেবো বালুচরি -
দেবো নেকলেস সোনার খাঁটি ।

তোমার মানের দাম ঠিকই দেবো,
একটুকু শুধু সবুর করো ,
অফিস বসের মন জয় করে -
খুশিতে রাখবো আমার ঘরও ।।

(তিন) পলাতকা

ঠিক দুপুরে ডাক দিলো কে,
পালিয়ে গেলে তার সাথে,
তীব্র গতি ঝর্ণা যেমন --
নামে নদীর ঢাল খাতে ।।

তারই সাথে পালিয়ে গেলে,
তোমার আপন জন বিনে,
এখন কি আর পারবো যেতে,
তোমার কাছে পথ চিনে ?

তোমার বাড়ি তোমারই ঘর,
সাজাতে তো তুমিই সব,
তোমার হাসির আওয়াজ শুনে -
বলতো সবে "মহোৎসব"।।

ছেলে মেয়ের কথা ভেবে,
দেখতে কতো স্বপ্ন তো,
আসবে ওরা ঘর সাজাবে,
করতে কত যত্ন তো ।।

বালি ধুলোয় ঘর ভরেছে,
ঘুণ ধরেছে দেওয়ালটায়,
কে আর এখন দেখে এ সব,
পালিয়ে গেছে মালিকটাই ।।

মালিক বিনা ঘর কি থাকে?
সে ঘর তখন ঘর কি হয় ?
মরুভূমির শুকনো বালি -
ছড়িয়ে পড়ে সে ঘর ময়।।

তালা দেওয়া শূন্য বাড়ি,
ছেলেরা আর আসবে না,
আসবে কেন? এখন তাদের,
ঘরেতে আর নেই তো মা ।।

Post a Comment

0 Comments