জ্বলদর্চি

অ্যাডভেঞ্চার -২/সুব্রত মাইতি

অ্যাডভেঞ্চার -২
সুব্রত মাইতি

আষাঢ় শ্রাবণকে হার মানিয়ে,আশ্বিনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বর্ষার ঘনঘটা  আর মেঘের গর্জন রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।শরতের পেজা তুলোর গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ হারিয়ে গুরু গম্ভীর মেঘের গর্জন আর ডানা দুদিনের মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি।পাশে বয়ে চলা কুলুকুলু নদী ফোঁস গর্জনে নদীবাঁধ উপচে গাঁ গঞ্জে।নদীর পাশে থাকা মানুষজন ঘরবাড়ি চাষাবাদ বাঁচানোর তাগিদ নিয়ে হাঁকডাক করে সবাই চলল নদী বাঁধ।সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাতভর ছোট বস্তায় মাটি ভর্তি করে জল আটকানো। নদীর বিপরীত বাঁধে ও তাই। পাশাপাশি কয়েকটা ব্লগ ও জলের তলায়,তারা এই প্লাবন আটকাতে পারেনি।

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 

        ঝিরঝির বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আমিও সবার সাথে। পাশাপাশি কয়েকটি গ্রামের মানুষ মাটি ভর্তি করে জলের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছি।রাতের অন্ধকারে বেনা ঘাস কাঁটা ঝোপঝাড়ের  সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছি সবাই।কয়েকটা হারিকেন লাইট অবস্থা বর্ণনা করা বড্ড কঠিন।চারিদিকে শুধু জল আর জল সবার বাঁচার আশ্রয়স্থল শুধুই নদী বাঁধ।বিষধর সাপ ইঁদুর পিঁপড়ে উইপোকা জোঁক কাঁকড়া বিছা আরো কত কিছু কী নেই সেখানে।ঘুমহীন চোখে কোদাল মাটি বস্তা মাথায় মাথায় বাঁধের উপর।বড় বড় কয়েকটা বিষধর সাপ চোখে পড়লো, ছোট সাপগুলোর তো হিসেব নেই। 
রাত তখন প্রায় দুটো বিপরীত দিকে যেন নদী ভাঙ্গার শব্দ।কেউ কেউ কান পেতে শুনছে। আসলে নদী বাঁধ ভাঙ্গেনি জল উপড়িয়ে পড়ছে। আমরা সবাই আমাদের কাজে অবিচল।আমাদের দলের প্রধান জানালনদীর জল আর বাড়ছে না। তৎক্ষণাৎ আমরা ভেজা মাটির উপর বসলাম।কয়েকজন স্থির চোখ জলের দিকে,সত্যি আর জল ফেঁপে উঠছে না।ছটি দল নিজের নিজের জায়গায় বসল।জল কমছে কিনা বোঝার জন্য কাঠি পোতা অবিরাম চলছে। কয়েক ঘন্টা পর বুঝলাম সত্যিই জল আর বাড়ছে না।

      সবার চোখে মুখে ভীষণ ক্লান্তি,মাঝে মাঝে বৃষ্টি আর মাথার উপর হিম। বসে থাকা কয়েকজন বস্তার উপরই শুয়ে পড়ল। সারা গায়ে মশা আর জোঁকের কামড়।একজনের পা থেকে গলগল রক্ত পড়ছে,আসলে ওকে যোঁক কেটেছে। এভাবেই সারারাত কাটলো।কয়েকজন কালো ত্রিপল এর নীচে,কালো ত্রিপল গায়ে।ভোরের আযান পড়তেই কয়েকজনকে দায়িত্ব দিয়ে বেশিরভাগ বাড়ি গেলাম।সেদিনের মতো নদী বাঁধ আটকানো গিয়েছিল।তবে রাস্তাঘাট সব জলের তলায়।বাড়ি ফিরে সবাই জিনিসপত্র গোছানো শুরু করেছিল। যাদের নিচুতে বাড়ি তারা নদী বাঁধে অস্থায়ী ঘর বানিয়েছিল।  বিপরীত দিকের জমিদারি বাঁধের জলেই তবে বন্যা হল।সবাই আমরা জলবন্দী হয়ে গেলাম।বেরোনোর মাধ্যম বলতে  কলার মান্দাস বা কলা গাছের ভেলা। ছোটদের কাছে খুব মজার বিষয় কলার ভেলা। বড়দের চোখমুখ একেবারে শুকনো,সব ফসল জলের তলায়।

Post a Comment

1 Comments

  1. আমাদের গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনে বয়ে যাওয়া প্রতিচ্ছবি গুলি আমরা চোখের সামনে দেখি বা জানি কিন্তু তাকে সুন্দরভাবে বইয়ের পাতায় রূপদান করতে সবাই পারে না । তাই আপনি তাদের থেকে আলাদা মনের মানুষ আপনার এই অবদানকে অভিনন্দন জানালাম এগিয়ে চলুন।

    ReplyDelete