জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/ অনিন্দ্য পাল

গুচ্ছ কবিতা 
অনিন্দ্য পাল 

শীতকালীন 

ভোরের আলো তখন সদ্য যুবতী 
আদরমাখা বেসবাস খুলে নেমে এসেছে খালি পায়ে 
যেখানে শীতল শিশির বুদবুদ মাথায় নিয়ে 
দাঁড়িয়ে আছে শীতের সবুজ ঘাস 
কুয়াশা কৃষ্ণ হয়ে জড়িয়ে নিল আলোর লজ্জা দেহ...  


প্রার্থনা 

হায়নারা আমাকে খেতে খেতে মেরো না 
যদি পারো, আগে বন্ধ করো ভালোবাসার দরজাগুলো 
তারপর, ছিঁড়ে ফেলো বুদ্ধির অবাধ্য সুতোগুলো 
এর পরও যদি না মরি, ভেঙে ফেলো সহজ মেরুদণ্ড 
হতে পারে, তবুও শ্বাসবায়ু লুকিয়েচুরিয়ে যথাযথ 
ঘেন্না আর যন্ত্রণার কাজল মেখে সজাগ চোখদুটো 
হতে পারে ...
আর অপেক্ষা নয় তবে, 
এবার একটানে ছিঁড়ে দাও বাতাসের নল 
তারপর সবটুকু আমি হয়ে যাবো তোমার আহার, 
হায়নারা, আমাকে আগে মেরে ফেল, দয়া করে 
খেতে খেতে মেরো না, মানুষের মত। 


জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 
গেরুয়া রঙের মেঘ 

পশ্চিমের সমুদ্রতল থেকে উঠে ছুঁয়েছ আকাশ 
আয়তন নিয়েছ সৃষ্টি বুদবুদের মত 
তারপর ভেসে চলে এলে যেখানে জিভের মাটি 
বৃদ্ধার ত্বকের মত ফাটা 
তোমার দিকে চোখ 
তোমার দিকে ঠোঁট ফাঁক হয়ে আছে 
তোমার সামনে দাউ দাউ মেরুদণ্ড জঞ্জাল 
ওই সব জীবনের দাম তোমার একতোলা 
রেচনরসের সমান, কিন্তু 
তুমি সন্ন্যাসী এবং 
বিষয়ী, 
গেরুয়া ফিকে হয়ে যেতে পারে এমন কাজ 
তুমি করনি আজও 
যদিও তোমার চালচিত্রে মহাজাগতিক দ্যুতি 
যদিও তোমার শ্বেত-শুভ্র শ্মশ্রুতে দেবতার আদল 
যদিও তোমার উচ্চারিত মন্ত্রে জমাট বেঁধে ওঠে 
হিরন্ময় নাগরিক রক্ত, 
তবু ঠিক তোমার বরাভয় যেখানে ভূমি ছোঁয় 
আমি ঠিক সেইখানে দাঁড়িয়ে আছি একমুঠো 
হীরে হাতে নিয়ে 
বিনিময়ে চেয়ে নেব মৃত মানুষগুলোর 
অপৌরাণিক বিশ্বাস...


পোষাক 

পুড়ে যাওয়া বস্তির ছাই ঝেড়ে ফেলার চেয়েও সহজ 
পোষাক খুলে ফেলা 
খুনের পর শান্ত নিথর শবদেহের পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ার চেয়েও সহজ নিজেকে নগ্ন করা 
অথবা এক কথায়, সত্যি যতটুকু আমি, তার গায়ে কোন স্টিকার চাই না এতটুকু... 

পোষাক থেকে তুলে নিই যদি আড়ালের আত্মাকে 
তবে পড়ে থাকে খানিকটা সুন্দর সত্য আর প্রকৃতি 
প্রকৃতির গন্ধে মাতাল হতে পারি যাপনবেলায় তাই 
পোষাক খুলে ফেলি লজ্জাহীন সরীসৃপের মত 
গভীর গ্রন্থিতে লুকিয়ে আছে দশ লক্ষ বছর পুরানো অপমানের ক্ষত,
পোষাক খুলে ফেলা রাত সাঁতরে দিনে ফেরার মত...

Post a Comment

0 Comments