জ্বলদর্চি

তারুণ্যের আলো : ফারুক আহমেদ /কুতুব আহমেদ


তারুণ্যের আলো : ফারুক আহমেদ 

কুতুব আহমেদ 


শুরু হয়েছে ধারাবাহিক তারুণ্যের আলো। বাঙালি মুসলিম জাতিসত্তার উত্তরণ ঘটিয়ে চলেছেন মুষ্টিমেয় যেসব তরুণ-তরুণী, তাঁদের নিয়েই এই ধারাবাহিক। তাঁরা সাধারণের মধ্যেও অসাধারণ, তারাদের ভিড়েও উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁদের খুঁজে নেওয়া যায় হাজার মানুষের ভিড়েও। ইংরেজিতে ‘মাল্টি ট্যালেন্টেড’ বলে একটি কথা আছে, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘বহুমুখী প্রতিভা’। হয়তো এর আরও অনেক ভালো বাংলা প্রতিশব্দ থাকতে পারে। তবে এই মুহূর্তে এর থেকে ভালো কিছু মনে পড়ছে না। যাকগে সে কথা। এইসব কাটখোট্টা ব্যাকরণ নিয়ে না হয় পরে কোনওসময় ভাবা যাবে। আপাতত যাঁকে কেন্দ্র করে এই গৌরচন্দ্রিকার অবতারণা তাঁর সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক। তিনি হলেন ফারুক আহমেদ। ‘উদার আকাশ’ নামে বহুল প্রচারিত একটি লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক। এখন সমস্যা হচ্ছে, ব্যক্তি ফারুক আহমেদকে নিয়ে আলোচনা করার ধৃষ্টতা আমার নেই। একজন অতি সাধারণমানের কলমচি হয়েও তবু কেন এই প্রয়াস? এর উত্তরে বলা যায়, আমার সম্পাদক এমদাদুল হক নূর এবং স্বয়ং ফারুক আহমেদের বরাভয় না থাকলে হয়তো এই চেষ্টা আমি কখনওই করতাম না।

আগেই বলেছি ফারুক আহমেদ হলেন বহুমুখী প্রতিভা। কবি, সম্পাদক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, গল্পকার, সংগঠক এবং সর্বোপরি একজন ভালো মনের পরোপকারী মানুষ। তাঁকে নিয়ে মূল্যায়ন করতে গেলে এই স্বল্প পরিসরে প্রায় কিছুই বলা হবে না। কারণ তাঁর এক-একটা সত্তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আলোচনার প্রচুর রসদ। প্রতিভার আকর এই মানুষটির জীবন ছেনে বের করে আনা যায় অনেক কিছু, যা আমাদের বৌদ্ধিক চর্চার ক্ষেত্রে সহায়কের ভূমিকা গ্রহণ করবে নিঃসন্দেহে।
বাঙালি মুসলিম তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সাহিত্যচর্চার হার বরাবরই কম। স্বাধীনতার পর এত বছর পেরিয়ে এসেও তাতে বিশেষ হেরফের হয়নি। তবে মন্দের ভালো, বাঙালি মুসলিম ছেলেমেয়েদের মধ্যে ইদানীং সাহিত্যচর্চার হার বাড়ছে। মুষ্টিমেয় এই নবীন প্রজন্মের একদম প্রথম সারিতে রয়েছেন ‘উদার আকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ।
ফারুকের আকাশ সত্যিই এতটা উদার যে, তিনি ইচ্ছেমতো যখন খুশি সেই আকাশে উড়াল দিতে পারেন। যে আকাশে ছড়িয়ে রয়েছে সাহিত্যের অসংখ্য মণিমুক্তো। সেখান থেকে সেসব সংগ্রহ করে ফারুক আহমেদ আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন তাঁর নিজস্ব শৈলীতে।

তবে ‘উদার আকাশ’-এর সম্পাদক ফারুক আহমেদ-এর পথচলা খুব সহজ ছিল না। নানা ঘাত-প্রতিঘাত, বাধা-বিপত্তি আর আর্থিক সংকটকে পেরিয়ে এসে আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হলেও সবাই স্থিতধী হতে পারেন না। ফারুক আহমেদও হননি। সদাচঞ্চল মানুষটি ঘটিয়ে চলেছেন একের পর এক বিস্ময়। কী সেই বিস্ময়! ‘উদার আকাশ’ পত্রিকা হয়ে প্রকাশনার জগতেও পা রেখেছেন তিনি। এই মুহূর্তে তাঁর প্রকাশনা থেকে বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে ১২১টির বেশি বই বেরিয়েছে। কোনও বাঙালি মুসলমান প্রকাশকের কাছে এ এক অত্যন্ত গর্বের ব্যাপার। কিন্তু ফারুক আহমেদ-এর গর্ব এখানেই সীমাবদ্ধ নেই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সাধারণত সুবিধাজনক কোনও চাকরি খুঁজে নিয়ে থিতু হওয়াই যেখানে দস্তুর, তখন সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিশ্বজয়ের পিছনে ছুটে চলেছেন তিনি। হ্যাঁ, তিনি চাকরিও করছেন, সংসারও করছেন। তার সঙ্গে চুটিয়ে করছেন মননের চর্চা।
তাঁর প্রকাশনা থেকে ইতিমধ্যেই বের করেছেন ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ অনুন্নত সমাজ : উত্তরণের উপায়’, ‘বাঙালি ও মুসলমান’, ‘মোদীর ভারত : গান্ধীর ভারত’, ‘পশ্চিমবাংলার বাঙালি মুসলমান : অন্তবিহীন সমস্যা’,  ‘বাঙালি মুসলমান : আপন ভুবনের সন্ধানে’, ‘সাম্যবাদ : ভারতীয় বীক্ষণ’, ‘বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম’-এর মতো সাড়া জাগানো গ্রন্থগুলি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশেষ সংখ্যাও প্রকাশ করেছেন ফারুক আহমেদ। আরও আছে। পশ্চিমবঙ্গ ছোট পত্রিকা সমন্বয় সমিতি আয়োজিত ২০১৮ সালে শারদ ও উৎসব সংখ্যার প্রতিযোগিতায় তাঁর সম্পাদিত ‘উদার আকাশ’ ২০১টি ম্যাগাজিনের মধ্যে থেকে প্রথম পুরস্কারটি ছিনিয়ে নেয়। এ কম গর্বের কথা নয়। চিকিৎসক ডাঃ মোহাম্মদ আবেদ আলি ও ফজিলা বেগমের কনিষ্ঠ সন্তান ফারুক আহমেদ-এর শৈশবের দিনগুলো মোটামুটি নির্বিঘ্নে কাটলেও দিন যত এগিয়ে যেতে থাকে ততই চঞ্চলমতি হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু তার মধ্যে থেকেও অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ফারুক আহমেদ পার করেন জীবনের এক-একটা বড় পরীক্ষার হার্ডল। অধুনা ভাঙড় থানার পোলেরহাটের নাটাপুকুর গ্রামে জন্ম নেওয়া ছেলেটি যে একদিন আপন কর্মগুণে গ্রামের নাম উজ্জ্বল করবে তা বোধহয় ভাবেননি কেউ। কলেজ জীবনে নিজের এবং বন্ধু-বান্ধবীদের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে পত্রিকা প্রকাশের যে নেশা তাঁর মাথায় চেপেছিল, সে নেশা আজও সযত্নে লালন করে চলেছেন তিনি। এই পথ ধরেই তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা দুই দশক পার করে ফেলল অবলীলায়। একটা সময় আব্বার সঙ্গে কলেজ স্ট্রিট মার্কেট থেকে শিয়ালদহ স্টেশন পর্যন্ত পত্রিকা বয়ে এনেছেন মাথায় করে। এমনকি এমনও সময় গেছে যখন মায়ের গয়না বন্ধক রেখে জোগাড় করতে হয়েছে পত্রিকা ছাপানোর টাকা। বাকিটা তো ইতিহাস। ‘উদার আকাশ’ আজ প্রথম সারির পাঁচটা লিটল ম্যাগাজিনের মধ্যে অন্যতম। আফসার আমেদের মতো সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বনামধন্য লেখক ‘বঙ্কিম পুরস্কার’ পেয়েছেন ‘উদার আকাশ’ পত্রিকায় উপন্যাস লিখে। এই পত্রিকাতেই প্রবন্ধ লিখে আমিনুল ইসলাম, খাজিম আহমেদের মতো প্রাবন্ধিকরা পেয়েছেন ‘বর্ণপরিচয়’ পুরস্কার। ফারুক আহমেদ আর ‘উদার আকাশ’ তাই সমার্থক। কোনওভাবেই বিচ্ছিন্ন করা যায় না তাঁকে এর থেকে।

২০০৪–২০১৫, প্রায় এক যুগ। হ্যাঁ, এই এক যুগ ধরে ডোমকলের ‘বসন্তপুর এডুকেশন সোসাইটি’তে অফিস সেক্রেটারির গুরুত্বাদায়িত্ব পালন করেছেন ফারুক আহমেদ। এই সোসাইটির সঙ্গে ফারুকের সম্পর্ক ছিল আত্মিক।

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 
কিন্তু কখনও কখনও সেই আত্মার বন্ধনকেও ছিন্ন করে বেরিয়ে আসতে হয় বৃহত্তর লক্ষ্যের কথা ভেবে। ফারুক আহমেদও এসেছিলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা বিভাগের সহ-নির্দেশক হয়ে। গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে স্নাতক এবং ইংরেজি ও ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর এই প্রতিভাবান তরুণটি কর্মগুণেই আজ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি বিভাগের কো-অর্ডিনেটর এবং নিউজ লেটার প্রকাশনা বিভাগের ইন চার্জ পদে আছেন। বড় গর্বের কথা। আরও একটি বিস্ময় উদ্রেককারী ঘটনা হল—এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি গবেষণা করছেন স্বাধীনতা-উত্তর পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম পরিচালিত মিশনস্কুলগুলির ভূমিকা নিয়ে। সম্ভবত মুসলিম পরিচালিত মিশনগুলিকে নিয়ে এই প্রথম অ্যাকাডেমিক গবেষণার কাজ এটা। সহধর্মিণী মৌসুমী বিশ্বাসও একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করছেন শিশুশিক্ষার ওপর। একমাত্র কন্যা রাইসা নূর কল্যাণী লরিয়েট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। ফলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে ২০১৫-র পর থেকেই বর্তমানে নদিয়ার বাসিন্দা সস্ত্রীক ফারুক আহমেদ।
লিটল ম্যাগাজিন সমাজ গঠনের সোপান। লিটল ম্যাগাজিন লেখক তৈরির কারখানা। লিটল ম্যাগাজিনে মিশে থাকে সম্পাদকের ঘাম-রক্ত-বেদনা। কথিত আছে, লিটল ম্যাগাজিন যাঁরা করেন তাঁরা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান। ফারুক আহমেদের ক্ষেত্রেও কথাটির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় বহুলাংশে। কারণ তাঁর উত্থান তো ‘উদার আকাশ’ নামক ছোট্ট চারাগাছরূপী লিটল ম্যাগাজিন থেকেই। যে চারাগাছ আজ অসংখ্য ডালপালা মেলে মহীরুহে পরিণত হয়েছে। যেখানে লিখেছেন দুই বাংলার বিখ্যাত ও দিকপাল সাহিত্যিকরা। তাঁদের স্নেহে যেমন ‘উদার আকাশ’ লালিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে তেমনই এ বাংলার স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বদের সান্নিধ্য-ধন্য হয়ে এই পত্রিকা উড়াল দিয়েছে অনন্তের দিকে। কে নেই সেখানে ? অমর্ত্য সেন, শঙ্খ ঘোষ, মহাশ্বেতা দেবী, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, মীরাতুন নাহার, পবিত্র সরকার, সুরজিৎ দাশগুপ্ত, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, গুলজার, কল্যাণী কাজী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, ড. গৌতম পাল, রূপম ইসলাম, কবীর সুমন, আবুল বাশার, ব্রাত্য বসু, সুবোধ সরকার, জয় গোস্বামী এবং সর্বোপরি মোস্তাক হোসেন— চাঁদের হাটে পথ-পসারী ‘উদার আকাশ’ সম্পাদক ফারুক আহমেদ। এ বছর ২২-এ পা দিল এই পত্রিকা। বয়সের ভারে ন্যুব্জ নয়, বরং টগবগে ও সতেজ ‘উদার আকাশ’ বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী। আর এর সম্পাদক ফারুক আহমেদ নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। বিকিকিনির বই বাজারে যাঁকে আলাদা করে চিনে নেওয়া যায়।

‘উদার আকাশ’ পত্রিকা এবং ফারুক আহমেদ— যদিও একই সুতোয় গাঁথা, তবু কোথাও যেন মনে হয় কখনও কখনও তাঁকে ছাপিয়ে যাচ্ছে তাঁরই সৃষ্টি। তাতে অবশ্য আক্ষেপ নেই ফারুক আহমেদ-এর। কেননা, সৃষ্টি যখন স্রষ্টাকে অতিক্রম করে, সেই আনন্দ স্রষ্টাকে আরও উদার, আরও মহৎ করে তোলে। কারণ সৃষ্টির মধ্যেই যে লুকিয়ে থাকে স্রষ্টার ঘাম-রক্ত-কষ্ট। তার প্রকাশ যত ঘটবে ততই চওড়া হবে স্রষ্টার মুখের হাসি। ফলে এসব ছোটখাটো ব্যাপার দিয়ে ফারুক আহমেদের মূল্যায়ন করতে গেলে তাঁকে খাটো করা হবে। কবি ফারুক আহমেদ, গল্পকার ফারুক আহমেদ, সাংবাদিক ফারুক আহমেদের সঙ্গে সম্পাদক ও সংগঠক ফারুক আহমেদের পার্থক্যটাও তাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রতিটি ক্ষেত্রে। এই দুই সত্তাকে মেলাতে গেলে ব্যক্তি ফারুক আহমেদকে কিছুতেই বোঝা যাবে না। যে মর্ম দিয়ে, আবেগ দিয়ে তিনি লেখেন, ঠিক ততটা আবেগ দিয়েই সম্পাদনা করেন এক-একটা মূল্যবান সংখ্যা। ফারুক আহমেদ-এর লেখার গভীরতা বুঝতে গেলে ঢুকতে হবে তাঁর লেখার আরও গভীরে। চিনে নিতে হবে তাঁর কবিসত্তাকে। জেনে নিতে হবে তাঁর প্রাবন্ধিক-দৃষ্টির অন্তর্নিহিত ভাবকে। বুঝে নিতে হবে তাঁর মৌলিক গল্পগুলির মৌল আবেদনকে। আর সম্পাদনার ক্ষেত্রে যে উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় তিনি দিয়ে চলেছেন, তাকেও বুঝতে হবে তাঁরই অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে।
একদলা কাদামাটিকে ছেনে ছেনে তাকে নিজের মতো গড়েপিঠে যেমন মূর্তি বানান একজন শিল্পী, ঠিক সেইভাবেই নিজের সমাজকে ছেনে ছেনে সমস্যার সুলুক সন্ধান করেন জীবনশিল্পী ফারুক আহমেদ। চেষ্টা করেন নিজের এবং খ্যাতিমান লেখকদের নিয়ে সেইসব সমস্যার সমাধানের পথ বাতলে দিতে। ‘একা খাব, একা পরব’ মতবাদে বিশ্বাসী নন তিনি। তাই চেষ্টা করেন নিজের সমাজের প্রতিভাবান ছেলেমেয়েদের খুঁজে বের করে সংস্কৃতিচর্চার আঙিনায় নিয়ে আসতে। সেখান থেকে তাঁরা পাবেন উত্তরণের পথ। নিজের সাথে সাথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন সমাজকেও। সমাজ-ভাবনার অন্যতম প্রতিভূ ফারুক আহমেদ তাই তরুণ প্রজন্মের কাছে দায়বদ্ধ। দায়বদ্ধ তাঁদেরকে সমাজের মূল স্রোতে মিশিয়ে দেওয়ার জন্য। তাঁর নিজের কথায়, “স্বপ্ন দেখতে হবে আকাশে ওড়ার। হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। যখন আমি প্রথম ‘উদার আকাশ’ বের করি তখন থেকেই ভেবে নিয়েছিলাম, প্রখ্যাত লেখকদের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের উঠতি লেখকদেরও আমার পত্রিকায় লেখার সুযোগ দেব, যাতে তাঁরা আগামী দিনে প্রতিষ্ঠিত লেখক-সাহিত্যিক হতে পারেন।”
সুযোগ তিনি দিয়েছেন। প্রান্তিক অঞ্চল থেকে প্রতিভাদের খুঁজে এনে লেখার জায়গা করে দিয়েছেন নিজের পত্রিকায়। তাঁদের অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত। অন্যদিকে সৃষ্টিশীল রচনার ক্ষেত্রে ফারুক আহমেদ সবসময় উৎসাহিত করে চলেছেন নবীন প্রজন্মকে। একতা দৃঢ়তা-একাগ্রতা আর কঠোর পরিশ্রমই পারে কাউকে লক্ষ্যের শেষে সিঁড়িতে পৌঁছে দিতে, মনে করেন ‘উদার আকাশ’-এর উদার সম্পাদক ফারুক আহমেদ। তাই হয়তো এখনও লক্ষ্যে অবিচল তিনি। স্বপ্ন দেখেন একদিন তাঁর সমাজ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে সৃষ্টিশীল মানুষ উঠে এসে সমাজটাকে একদম পাল্টে দেবে। সেই স্বপ্নে ভর করে তিনিও যে অসাধ্যসাধন করে চলেছেন অবিরত। ১৯৮৩ সালে ভাঙড়ের এক অখ্যাত গ্রামে জন্ম নেওয়া ফারুক আহমেদ ভাগ্যের ফেরে আর নিজের কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে যে জায়গায় পৌঁছেছেন, অধিকাংশ বাঙালি মুসলমানের কাছে তা শুধুই স্বপ্ন। কিন্তু ফারুক আহমেদ পেরেছেন। পড়াশোনা, সংসার, ঝড়-ঝাপ্টা, লেখালেখি, কাজকর্ম সবকিছু নিপুণ হাতে সামলে আজ তিনি একজন সফল সম্পাদক। ‘উদার আকাশ’-এর মধ্যে দিয়ে যে ইতিহাস রচনা করে চলেছেন তিনি, আগামী সহস্র সহস্র বছর বাঙালি তা মনে রাখবে।

বেলা পড়ে আসছে। আকাশে শুরু হয়েছে রঙের মেলা। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে এক মৌনমুখর পরিবেশ। বাসন্তী হাওয়ার দোলায় যেন দুলতে শুরু করেছে গাছের পাতাগুলো। সেই আবেশকে পিছনে ফেলে উঠে বসলাম ফারুক আহমেদ দাদার স্কুটিতে। ঘোষপাড়া স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন তিনি। প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখে তাকালাম একবার পিছন ফিরে। সেই চিরাচরিত হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি, ফারুক আহমেদ— আমাদের অন্ধ সমাজের আশার আলো। আমাদের ধ্বস্ত সময়ের অগ্নিশিখা। যার মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছে শান্ত-স্নিগ্ধ তারুণ্যের আলো।

Post a Comment

0 Comments