জ্বলদর্চি

মেদিনীপুরের কৃষিবিজ্ঞানী ড. রামচন্দ্র মণ্ডল স্যারের বর্ণময় জীবনের উত্থান-পতনের রোমহর্ষক কাহিনী/উপপর্ব — ০৩/পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

বিজ্ঞানের অন্তরালে বিজ্ঞানী — ৬৮
এগ্রিকালচারাল রেটুনিং

(মেদিনীপুরের কৃষিবিজ্ঞানী ড. রামচন্দ্র মণ্ডল স্যারের বর্ণময় জীবনের উত্থান-পতনের রোমহর্ষক কাহিনী)
উপপর্ব — ০৩

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

(১) 
গণ-আন্দোলন :

চক্রবূহ! এ এক অসাধারণ চক্রবূহ। মহাভারতে অর্জুন পুত্র অভিমূণ্যর তৈরি অলঙ্ঘনীয় এক চক্রবূহের মতো! এ হেন চক্রবূহের মূল কারিগর খেজুরীর অকুতোভয় বিপ্লবীগণ। তাদের অকল্পনীয় সমর কৌশলে শাসক ইংরেজের নাভিশ্বাস দশা। গোরা সেনা রীতিমত দিকভ্রান্ত। কিংকর্তব্যবিমূঢ়! চক্রবূহ রচনার মূল উদ্দেশ্য খেজুরী থানা আক্রমণ। গোরা সেনার কবল থেকে খেজুরী থানার দখল নেওয়া। খেজুরীকে অত্যাচারী ব্রিটিশের দখল মুক্ত করা। খেজুরীর মাটিতে স্বাধীন তেরঙ্গা পতাকার প্রথম উত্তোলন। অবশিষ্ট ভারতের কাছে দৃষ্টান্ত তুলে ধরা। ভারতবাসীর অধরা স্বাধীনতার স্বপ্ন সাকার করা। কিন্তু বিপ্লবের কোন মন্ত্রবলে রাতারাতি সংগ্রামের মতো পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল? মেদিনীপুরের এক প্রান্তিক অঞ্চলে কবে, কেন একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেল ইংরেজের অত্যাচারে দেওয়ালে পিঠ ঠেকা আপাত নিরীহ লোকগুলোর মানসিকতা, চিন্তাভাবনা? কীভাবে সম্ভব হল এমন অসাধ্য সাধন?

অহিংস পথে নয়, সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সম্ভব সিদ্ধিলাভ—এই ছিল ভাবনা। এক সুদীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন ভারতের যে স্বপ্ন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু দেখিয়েছিলেন, তার সফল বাস্তবায়ন ঘটানো আসলে ইংরেজের বিরুদ্ধে এক স্পর্ধিত হুঙ্কার। সেই স্পর্ধিত হুঙ্কারে হলদী নদীর মোহনায় ভাঙন ধরায়। রসুলপুর নদীবক্ষে জোয়ারের জলে প্লাবন আনে। 'ইংরেজ, ভারত ছাড়ো'র স্বপ্ন সফল করতে, প্রবাস থেকে নেতাজীর রূপকথার আদর্শ-মন্ত্র-বার্তা সফলভাবে রূপায়ণ করতে, ব্রিটিশের চোখে চোখ রেখে, চোয়ালে চোয়াল চেপে নিজের সীমিত স্পর্ধার এক উজ্জ্বল আস্ফালনের দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিল 'করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে' (Do or Die) মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ খেজুরীর বিপ্লবীগণ। সেদিন ছিল মঙ্গলবার। ২৯ শে সেপ্টেম্বর ১৯৪২ সাল। ওইদিন পূর্ব সূচী অনুযায়ী নির্দিষ্ট জায়গায় একসঙ্গে হামলা সংঘটিত করা হবে মেদিনীপুরের (অধুনা পূর্ব মেদিনীপুর) বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। বিশেষত তমলুক পটাশপুর ভগবানপুর কাঁথি এগরা প্রভৃতি থানা এলাকায় একযোগে আক্রমণ শানাবে বিপ্লবীগণ। ২৯ তারিখের এমনই এক অভিযানে (তমলুক থানা অভিযান) অংশ গ্রহণ করে শহীদ হয়েছিলেন গান্ধীবুড়ি মাতঙ্গিনী হাজরা। 

ওদিকে, মহকুমা নেতা শ্রী ভীমাচরণ মহাপাত্রের উপস্থিতিতে সমর পরিষদের গোপন বৈঠকে আলোচনা হয় খেজুরী থানা আক্রমণের কৌশল আস্ত পাল্টে ফেলা হল। ২৯ তারিখ না, খেজুরী থানা অফিস দখল অভিযান আগের দিন ২৮ তারিখ সোমবার সংগঠিত করা হবে। শুধু থানা নয়, সমস্ত সরকারী অফিসের দখল নিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ স্বদেশীগণ। সেই মত ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্থানীয় নেতৃত্ব। সাঁড়াশি আক্রমণের রূপরেখা বানানো হল। স্থানীয় বিপ্লবীগণকে এলাকা ভিত্তিক দায়িত্বভার শঁপে দেওয়া হল। অজানবাড়ির হিজলী তরুণ সংঘ প্রবলভাবে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিল এ হেন থানা অভিযানে।
       
খেজুরী থানার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে সেদিন সকাল থেকেই সাজো সাজো রব। গোপনে। যেন কাকপক্ষীও টের না পায়। কিশোর রামের বয়স তখন বারো কি তেরো! পাশাপাশি এলাকায় যে একখানা গণবিদ্রোহ সংগঠিত হচ্ছে, তার প্রত্যক্ষ দর্শী সে। তার বয়েস অল্প, তায় মেধাবী। সর্বোপরি, বাবার অসম্মতি। সবমিলিয়ে, সেদিনের সংগ্রামে হয়তো সরাসরি অংশ নেওয়া হয়নি, কিন্তু বিদ্রোহীদের রণকৌশলের পরোক্ষ স্বাক্ষী। কচি দুটো চোখে পারিপার্শ্বিক অস্থির পরিবেশ পরিস্থিতি চাক্ষুষ করে সে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি তার বাবারও চোখ এড়ায় না। যদিও প্রহ্লাদবাবু এসব একদম পছন্দ করেন না। তিনি গান্ধীজীর অহিংস আন্দোলন নীতিতে বিশ্বাসী। সহিংস আন্দোলন তাঁর তীব্র না-পসন্দ। যদিও ব্রিটিশ অত্যাচারের প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী তিনি। গ্রামে ঘরে একসময় ইংরেজের অত্যাচার লাগামছাড়া আকার ধারণ করে। তখন কারণে-অকারণে দণ্ড ভোগ ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। একবার ব্রিটিশ পুলিশ হানা দেয় প্রহ্লাদবাবুর ঘরে। জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায় ইংরেজদের তৎকালীন বোগা বাংলোয়। চলে অকথ্য অত্যাচার, লাগামছাড়া নির্যাতন। জাতীয় কংগ্রেস করার অপরাধে বোগা বাংলোয় নাক ঘষটা পর্যন্ত দিতে হয়েছে তাঁকে। তবুও তাঁর ঐকান্তিক বিশ্বাস অহিংস পথে মিলবে স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত সোনার ডিম।


প্রত্যক্ষ দর্শণ :

ব-ন্দে-মা-ত-র-ম! আকাশ বাতাস উত্তাল করা এক ধ্বনি। শেকড়ের সন্ধানে শর্তহীন মুক্তির ডাক। সে-ডাক অন্তরাত্মা জাগায়। ২৮ শে সেপ্টেম্বর ১৯৪২ সাল। সোমবার। ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় বিকেল তিনটা বাজে। অজানবাড়ি বাজারে তখন লোকে লোকারণ্য। দুই-তিন হাজার কর্মী জড়ো হয়েছে। তাদের দুচোখে স্বাধীনতার স্বপ্ন। বিশাল এক জনসভার আয়োজন প্রায় সম্পূর্ণ। বিপ্লবীদের সঙ্গে আছে চার পাঁচ মণ চিড়া-গুড়, কয়েক টিন কেরোসিন, মশাল তৈরির জন্য বাঁশ-পাট-দড়ি আরও কত কী! এমন সময় সভায় পা রাখলেন শ্রীমতী গীতা মুখার্জি। তৎকালীন জনতা পার্টির খ্যাতনামা নেতা– পরবর্তী কালের শ্রদ্ধেয় মন্ত্রী অজয় মুখার্জির ভাই শ্রী বিশ্বনাথ মুখার্জির স্ত্রী শ্রীমতী গীতা দেবী। তেজস্বী মহিলা। তেজোদীপ্ত ব্যক্তিত্ব। তাঁর বক্তৃতা মোহময়ী বিদ্যা জানে। তাঁর কথায় এমনই জাদু যে আবালবৃদ্ধবনিতা মোহিত হয়ে শোনে তাঁর বক্তব্য। উদ্বুদ্ধ হয়। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে একফোঁটা দ্বিধা বোধ করে না। সভায় হাজির সকল মেয়েদের উদ্দেশ্যে তাঁর সদম্ভ ঘোষণা – 'তোমরা মায়েরা, মাছ কুটোর বঁটি নিয়ে বের হও।'
এ হেন বক্তব্যের ভাষায় আগুনে ঘি পড়ল। শত শত মহিলা বঁটি হাতে নিয়ে রাস্তার উপর হেঁটে চলেছে। প্রত্যেকের অভিলক্ষ্য খেজুরী থানা অভিমুখে।

অপরপক্ষে, সেদিনই কশাড়িয়ার পাশের গ্রাম বাড় কশাড়িয়ায় তখন হুলস্থুল কাণ্ড! কয়েক শত গ্রামবাসী উপস্থিত গ্রামের এক কোণে, সভাস্থলে। পুরোদস্তুর যুদ্ধের মহড়া চলছে সেখানে। যুদ্ধের নেপথ্যে রয়েছেন খেজুরীর একজন বিপ্লবী। তিনি স্বনামধন্য স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রফুল্ল বর্মন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে সাড়া পড়ে গেল সারা গ্রামে। দল বেঁধে গুটি গুটি পায়ে সবাই হাজির সভাস্থলে। তাঁর জ্বালাময়ী বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ আট থেকে আশি। তিনি বিশেষ করে জোর দিলেন গ্রামের মহিলাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করতে। মেয়েদের হাতে তুলে নিতে বললেন অস্ত্র– বঁটি দা কাস্তে কুঁড়োল ইত্যাদি। 

এসব দৃশ্য কিশোর মনে দারুণ প্রভাব ফেলে। স্বদেশী ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে রামের অশান্ত মন। দূর থেকে স্বদেশী আন্দোলনের সভা, সভায় বিপ্লবীদের কার্যকলাপ, তুমুল হর্ষধ্বনী তার কিশোর কোমল হৃদয়কে বিচলিত করে তোলে। সেজন্য বিশাল মিছিলের পিছু নেয় সে। দূর থেকে স্বদেশীদের ক্রিয়াকলাপ দেখে তার গায়ের লোম খাড়া হয়। কিন্তু সরাসরি অংশ নেয় না, বাবার ভয়ে। বাবার বদ্ধমূল ভ্রান্ত নীতির ভয়ে। যদিও ২৮ শে সেপ্টেম্বর বিকেল গড়িয়ে রাত্রি নামছে। অথচ, রাত্রির ঘটনা প্রত্যক্ষ চাক্ষুষ করা হয়নি তার। রাতের অন্ধকারের পুরো ঘটনা পরেরদিন লোক মুখে শুনে গর্বে তার বুক ফুলে ওঠে। শ্রদ্ধায় বিপ্লবীদের চরণে তার মস্তক নত হয়। মনে মনে খুশি হয় সে। সবার অলক্ষ্যে এক সংগ্রামী স্যালুট জানায় বিপ্লবীদের। দীর্ঘ রাত্রির অবসানে নতুন ভোরের দিশা দেখা যায়। আনন্দে চকচক করে ওঠে তার চোখ।


অভিমন্যুর চক্রব্যূহ :

দীর্ঘ রাত্রির নিকষ তমসা ছেয়ে আছে চরাচর। দূর আকাশে মিটমিট চেয়ে থাকে লক্ষ নিযুত কোটি নিহারিকা। নিঃশব্দে। থমথমে মুখ। কলরব নেই। কোলাহল বর্জিত। খেজুরী থানার সামনে বড় রাস্তার ওপর প্রায় ছয়-সাত হাজার লোকের সমাগম। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর লোক। সুশৃঙ্খল ভাবে নিরবে অপেক্ষারত। অপেক্ষা আক্রমণের নির্দেশ আসার। অপেক্ষা অন্ধকারে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার। অপেক্ষা অত্যাচারের বদলা নেওয়ার। ঘড়িতে তখন রাত এগারোটা। ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকে। এছাড়া দ্বিতীয় শব্দ নেই।
             
থানার দক্ষিণে তখন সরোজ কুমার পাইকের নেতৃত্বে ভোলানাথ কামিল্যা, রাখাল চন্দ্র ধর, হৃদয় মণ্ডল, রঘুনাথ প্রামাণিক সহ জনা পঞ্চাশেক বিপ্লবীদের একটি অগ্রণী দল শিকারী বাঘের মতো অন্ধকারে ঘাপটি মেরে বসে আছে। 

ঘড়িতে ঠিক রাত এগারোটা বাজে। থানায় সবাই বেশ নিশ্চিন্ত। নিরাপত্তাও সামান্য ঢিলেঢালা। থানার সেপাই নির্দিষ্ট ঘণ্টা পিঠে মাথার পাগড়ি খুলে বেঞ্চের উপর রাখে। এখন বিশ্রামের সময়। পাগড়ির ওপর মাথা রেখে শুতে গেল সে। সারাদিনের ধকল, পরিশ্রম থেকে মুক্তির সামান্য প্রয়াসে বেঞ্চের উপর ঘুমাতে যাওয়া। কিন্তু কোথায় কী? সহসা আগত বিপদের ঠ্যালায় ত্রাহি ত্রাহি রব। কারণ কী? ঠিক সেই সময় থানার পশ্চিম দিক থেকে সরোজ বাবুর নির্দেশে ছুটে গিয়ে শ্রী ভোলানাথ কামিল্যা আর রাখাল চন্দ্র বর দুজন সেপাইকে জাপটে জড়িয়ে ধরে তাদের বন্দুক ছিনিয়ে নেয়। পূর্ণচন্দ্র মিশ্র সহ বাকি বিপ্লবীগণ থানা চত্বরে ঢুকে বাকি বন্দুক কেড়ে নিয়ে সিপাইদের পিছমোড়া করে বেঁধে রাখে। থানায় পাঁচটি একনলা বন্দুক, একটি রাইফেল আর একটা রিভলবার মেলে। ঠিক সেসময় সংকেত পাওয়া মাত্র থানার উত্তর দিকে বড় রাস্তার ওপর অপেক্ষারত প্রায় হাজার খানেক লোক দৌড়ে থানার ভেতরে ছুটে আসে। কেরোসিন আর মশালের সাহায্যে থানাগৃহে আগুন লাগিয়ে দেয়। কোনো কর্মচারী কিংবা স্ত্রী ও শিশু থানার বাসগৃহে ছিল না। থানার বড়বাবু সেদিন থানার বাইরে ছিল। সুনামী সমান স্বদেশীদের ঢেউ আছড়ে পড়তেই অকস্মাৎ আক্রমণের ঠ্যালায় খেই হারিয়ে ফেলে খেজুরী থানার গোরা সেনা। তাদের প্রত্যাঘাত করার উপায় জানা ছিল না। অসহায়। কোনঠাসা। আকস্মিক মৃত্যু ভয়ে ভীত, সন্ত্রস্ত। আত্মসমর্পণ করা ছাড়া অন্য গত্যন্তর নেই। এমনই নিরুপায় অবস্থা!  ছোট দারোগা ও সেপাইদের বেঁধে বসিয়ে ‌রাখা হল। অস্ত্রভাণ্ডার পাহারার দায়িত্বে নিযুক্ত করা হল লোক। অন্ধকারের মধ্যে একজন সেপাই পাশের পুকুরে ঝাঁপিয়ে আত্মরক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা করতে চাইল। পুকুরের জলে ডুবে যাচ্ছিল। কিন্তু সফল হল‌ না।  সে অনায়াসে ধরা পড়ল। তাকে বন্দী বানানো সহজ হল। থানার কোয়ার্টারে বন্দী দারোগা আর সেপাইরা বারবার প্রাণে না -মারার জন্য কাকুতি মিনতি করতে লাগল। পরেরদিন ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪২ সাল। মঙ্গলবার। বন্দী পুলিশকর্মীদের আটক করে রাখা হয়। অপেক্ষা সমর পরিষদের পরবর্তী নির্দেশের। পরিষদের পরামর্শ আসে তিন -চার দিন বাদে। নির্দেশ মোতাবেক পুলিশ কর্মীদের পথ খরচা দিয়ে নৌকা পথে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গের বন্দুক রাইফেল জ্বলন্ত আগুনে পুড়িয়ে ফেলার বন্দোবস্ত হয়।

এ হেন চক্রব্যূহ আক্রমণে পরাধীনতার গ্লানি ঘুচে গেল। বিনা রক্ত ব্যয়ে স্বাধীনতার অমলকান্তি রোদ্দুর ছড়িয়ে পড়ল খেজুরীর আকাশে বাতাসে। পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীন তেরঙ্গা পতাকার হাওয়া সেই প্রথম। পরাধীনতার মধ্যেও স্বাধীনতার হাওয়া, মুক্তির বাতাস বইছিল! খেজুরীর বুকে গড়ে উঠেছিল প্রথম 'মহাভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র' সরকার। খেজুরীবাসীর সেই সুখ অবশ্য খুব বেশি দিন স্থায়ী হল না। মাত্র তিন মাসাধিক কাল স্থায়ী হয়েছিল স্বাধীনতার সেই ছোঁয়া, চির অমলিন স্বাদ। তারপর শুরু হল গোপন আঁতাত। শক্ত প্রতিঘাত। বিপ্লবীদের ধরপাকড়। কঠিন অত্যাচার। অসহনীয় নির্যাতন। ফলশ্রুতি? অল্প দিনের মধ্যে নিভে গেল পরাধীন ভারতে স্বাধীনতার প্রথম সূর্য। ঘুচে গেল মুক্তির সফল আশ। সকল নিস্ফল প্রতিরোধ আছড়ে পড়ল হলদী নদীর মোহনায়, বঙ্গোপসাগরের গভীর জলে। ইংরেজের অত্যাচারে পুনরায় হাহাকার নেমে এল খেজুরীর কোণে কোণে।

(২)
দৌড় :

ভরা পুজোর মরসুম। অথচ আনন্দের নামগন্ধ নেই। শুধু হাহাকার। দমবন্ধ করা পরিবেশ! উত্তুরে হাওয়া তখনও আসেনি। সপ্তমীর দিন সকাল থেকেই মুখ ভার ছিল আকাশের। শঙ্কা ছিল যে কোন সময় ভাঙবে ধৈর্য্যের বাঁধ, ঝমঝমিয়ে নেমে আসবে বাঁধন-হারা মেঘের চিরায়ত অশ্রু। সেদিনই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই উঠেছিল সর্বনাশা ঝড়। সেই সঙ্গে অঝোর ঝরে মারণ বৃষ্টি। ভোর রাতে থেমেছিল ঝড়ের প্রলয়ঙ্করী নৃত্য। তারপর আস্ত দণ্ডায়মান নেই কোন মাটির বাড়ি, গাছপালা, সোনার ফসল। সপাটে ভূপাতিত সব, ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়েছে এলাকাগুলো। মাঠের ফসল মাঠেই নষ্ট হল। গবাদিপশু মৃত্যুর হিসাব নেই। ঝড়বৃষ্টি শেষ হলেও শেষ হয়নি সেই ভয়ংকর রাতের তাণ্ডব পরবর্তী দুঃস্বপ্ন। শুরু হল মহামারী। অনাহার! অর্ধাহার! লোকে বলছে মানুষের তৈরি দুর্ভিক্ষ। 
       ‌
মহা-দুর্যোগের পর আটচল্লিশ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই বে-বাক। হতভম্ব। প্রকৃতির অভিশাপ! অভিশপ্ত খেজুরী ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্থ। কান পাতলেই চারপাশে হাহাকার শোনা যায়। অথচ ক'দিন আগেই স্বাধীনতার বাতাস বইছিল। ব্রিটিশের আগল থেকে মুক্তির আনন্দে বিভোর ছিল সকলে। আনন্দে চকচক করছিল চোখ। অল্প ক'দিনের ব্যবধানে ঝড়ের তীব্রতার চিহ্ন খেজুরীর আনাচে কানাচে। সকলের মাথায় হাত। ছেঁড়া র‍্যাপার মুড়ি দিয়ে মাঠের কোনাকুনি হেঁটে চলেছে বছর বারোর এক কিশোর। বিবর্ণ মুখ। উষ্কোখুস্কো চুল। খালি পা। জীর্ণ জামা। শীর্ণকায় শরীর। একহারা চেহারা। হনহন হেঁটে আসছে চারদিক জলমগ্ন খোলা মাঠের বুক চিরে। একের পর এক আলপথ ডিঙিয়ে। তার সঙ্গে হাঁটছে বিধবা এক পিসিমা। দুর্যোগের দুদিন পর এ হেন পিসিমা রওনা হয়েছেন প্রিয় রামের খোঁজে। খালবিল পেরিয়ে, নদীনালা ডিঙিয়ে অনেক কষ্ট সহ্য করে তিনি পৌঁছে গেছিলেন পানখাই গ্রাম। সাত রাজার ধন এক মানিক রামকে আস্ত দেখে অশ্রুর বাঁধ ভেঙেছিল পিসিমার। কাছে টেনে নিয়ে অশ্রু নিবারণ হয় তাঁর। এবার বাড়ি ফেরার পালা। পানখাই থেকে কশাড়িয়া গাঁ। মাসির বাড়ি ছেড়ে নিজের ঘর। ঝড়ের রাতের প্রলয়ঙ্কারী অভিজ্ঞতা বড় দু্ঃসহ, বড় করুণ। তার বয়েস যেন খানিকটা বাড়িয়ে দিয়ে গেছে। গ্রামগঞ্জের ক্ষয়ক্ষতি চাক্ষুষ করে ঘরে ফেরা রামের আরেক প্রস্থ অবাক হওয়ার পালা! তার চক্ষু চড়কগাছ! এ কি ভয়ঙ্কর দশা! খাঁ খাঁ করছে দিগ্বিদিক। ভয়ে শিউরে ওঠে গা। খুব ছোট বয়স থেকে রামের জহুরীর চোখ ভালোকে ভালো আর মন্দকে মন্দ হিসাবেই চেনে। কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ এর পার্থক্য করা তার সহজাত দক্ষতা। দুদিন আগের ঝড়ের ভয়ঙ্কর দগদগে অভিজ্ঞতার কথা তার স্মরণে। দুর্যোগের ক্ষতিকর প্রভাব চাক্ষুষ করে সে উপলব্ধি করে যে খেজুরীর অনাগত ভবিষ্যৎ আরও ভয়ঙ্কর হতে যাচ্ছে। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে গ্রাম অভিমুখে হেঁটে চলেছে সে।

কিশোর রামের বিস্ময়ের ঘোর তখনও কাটেনি। তার আগেই চোখে পড়ল একখানি বীভৎস দৃশ্য। একটি পশুর দলা পঁচা মৃতদেহ পড়ে রয়েছে পাশের ডোবায়। কুকুর বা শেয়ালে খুবলে খেয়েছে অর্ধেকটা। বাকিটা পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। গন্ধে টেকা দায়। সারা গা গুলিয়ে ওঠে। হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল রাম। আরও খানিকটা এগিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় সে। একটি কিশোর দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট টিলার ওপর। মুখ-চোখ যেন গর্তে ঢুকে গেছে ছেলেটির। অনেকক্ষণ যাবৎ সে অভুক্ত মনে হয়। খিদের জ্বালায় রামের পেটও চোঁ চোঁ করছে। বাড়ি পৌঁছেই বা কী করবে সে! কী দেখবে কে জানে! তবুও তার ঘরে ফেরা একান্ত প্রয়োজন।

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 
অজন্মার কারণে দীর্ঘ সময় মেদিনীপুরের ঘরে ঘরে একমুঠো চাল নেই, ডাল নেই। ঘরে ঘরে উপোস নিত্যসঙ্গী। দ্রব্য মূল্য আকাশ ছোঁয়া। দলে দলে ফ্যান ভিক্ষে করে বেড়াচ্ছে মানুষ। গৃহস্থের ফ্যানও আজ বাড়ন্ত! একমুঠো খাবারের জন্য হাহাকার চারিদিকে। এত যন্ত্রণা সহ্য করে কোন মানুষ বাঁচে? রাস্তার ধারে ডোবাগুলো থেকে কেমন যেন আঁশটে গন্ধ বেরচ্ছে। একটি ছেলের মৃতদেহ পড়ে রয়েছে ডোবায়। কুকুরে খেয়েছে অর্ধেকটা। বাকিটা পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ রকম বীভৎস দৃশ্য দেখে রাম দৌড় দিল বাড়ির অভিমুখে। 

কশাড়িয়া গ্রামে সে এক বিভৎস দৃশ্য! বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! গ্রামের যত দূর দৃষ্টি যায়, কেবল চাপা আর্তনাদ! অস্তিত্ব রক্ষার অপ্রতিরোধ্য লড়াই! বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা! লেখাপড়া সেখানে বিলাসিতা ছাড়া আর কী? প্রত্যেকের বছর ভর সঞ্চিত যা কিছু, সবই বন্যার জলে ভেসে গেছে। ঘরে ঘরে ভাঁড়ে মা ভবানী। এমতাবস্থায় কীভাবে চলবে রোজকার ক্ষুন্নিবৃত্তি? ন্যূনতম একবেলার জন্য! কিন্তু প্রহ্লাদবাবুর অবস্থা অত সঙ্গীন নয়। বছর বছর ধরে অনেক ধান মজুত আছে তাঁর খামারে। সঞ্চিত ধানের পরিমাণ তা প্রায় ৬০-৭০ মণের বেশি বই কম নয়! বেশ নিশ্চিন্ত লাগে প্রহ্লাদবাবুকে। এ যাত্রায় হয়তো বা দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস থেকে রক্ষে পাওয়া গেল। কিন্তু কোথায় কী? প্রহ্লাদবাবুর সমস্ত প্ল্যান চৌপাঠ হওয়ার জোগাড়! আশেপাশে তাঁর যত জ্ঞাতি ভাই রয়েছে, তাদের অবস্থা বেশ সঙ্গীন। বন্যা আর মহামারী পরবর্তী দিন গুজরান অসম্ভব হয়ে পড়ছে। টান পড়েছে ভাঁড়ারে। দিন আনি, দিন খাই অবস্থা। বাড়িতে চাল বাড়ন্ত। তীব্র অর্থকষ্টে ধরাশায়ী অধিকাংশ জন। একবেলার অন্ন জোগাড় কঠিন হচ্ছে। দিনকে দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করল। চরম অন্নাভাব। গ্রামের জ্ঞাতি ভাই-এর পরিবার পরিজনদের নজর পড়ল প্রহ্লাদবাবুর খামারের ওই ৭০ মণ ধানের ওপর। এসময় ত্রাতা হয়ে এগিয়ে এলেন প্রহ্লাদবাবু। তিনি ভাবলেন চরম অর্থকষ্টে কাটানো জ্ঞাতিবর্গের ক্ষুধা নিবৃত্ত করা তাঁর আশু কর্তব্য। তারপর অন্য কথা। যেমন ভাবনা, তেমনি কাজ। তাঁর মজুত ধান একটু একটু বন্টন করা হল সকল জ্ঞাতিদের মধ্যে। সঞ্চিত ধান বন্টন করতে গিয়ে চোখের নিমেষে ক'মাসের মধ্যে নিঃশেষ হল খামার। প্রহ্লাদবাবু নেমে এলেন রাস্তায়। দু-তিন মাসের মধ্যে তাঁর নিজের অন্নাভাব চরমে উঠল। তখন পাশে কেউ থাকল না। বরং পিছিয়ে গেল সবাই। প্রহ্লাদবাবুর পরোপকার বেমালুম ভুলে গেল। স্বভাবতই কষ্টে কাটতে লাগল তাঁর সংসার। বাবার অসহায়তার এ হেন করুণ চিত্র কিশোর রামের চোখ এড়ায় না। মনে মনে কষ্ট হয় বাবার জন্য। সচ্ছল অবস্থা থেকে কীভাবে অন্ন কষ্ট গ্রাস করছে পুরো পরিবারে, তার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী রাম। সেদিন জ্ঞাতি বর্গের কপটতা তার দৃষ্টি এড়ায়নি। যে জ্ঞাতি ভাইদের জন্য তাদের আজ নিঃস্ব অবস্থা, যাদের কাছে সমস্ত ধান অকাতরে বিলিয়ে দিল তার বাবা, সেকথা কেউ স্মরণে রাখেনি। প্রয়োজনটি ফুরোল, নটে গাছটি মুড়োল। স্বার্থপর জ্ঞাতিরা আর ফিরেও তাকায়নি। এতটুকু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। তারা বিস্মৃত হয়েছে প্রহ্লাদবাবুর মহানুভবতার কথা। বরং তারা সরকারি টেস্ট রিলিফ (Test Relief)-এ মাটির কাজে ঢুকে সচ্ছল জীবন যাপন করে। আগামী দিনে তাদের সংসারে সচ্ছলতার জোয়ার আসে। অন্যদিকে দুর্দশা যেন ছেয়ে আসে প্রহ্লাদবাবুকে। তাঁর দশা দিনকে দিন আরও তলানিতে ঠেকছে। এতটাই মর্মান্তিক ছিল মন্বন্তরের সেই শোচনীয় পরিবেশ যে আগামী দু-তিন বছরেও তা কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। এ দুঃখ জীবনে ভোলার নয়। যেমন ভুলবার নয় নিজের দুর্দশার কথা, তেমনি চিরদিন স্মৃতিতে উজ্জ্বল থাকবে স্বজনদের স্বার্থপরতার পরিচয়ও। যে স্বজন ভাইদের জন্য তাঁর এই দশা, তাদের কৃতঘ্নতার কথা ভুলবার নয়। একথা স্মরণ করে বার্ধক্যের বারানসিতে পৌঁছানো রামবাবু আজও তাঁর স্বর্গবাসী পিতার জন্য অশ্রু মোচন করে চলেছেন নীরবে, গোপনে।

ইচ্ছে আছে, উপায় নেই!

পাল্টে গেছে জীবন। অভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। হাতে এখন বই খাতা নেই; তার বদলে জুটল চাষের কাজ। হাঁটু অব্দি এঁটেল মাটির কাদা মেখে জমি চাষবাসের কাজে বাবার সঙ্গী হওয়ার দুর্লভ সুযোগ। বাবার সংগ্রামের ছবি আজও তার চোখে ভাসে। চোখে ভাসে বাবার ঘর্মাক্ত শরীর। ক্লান্ত অবসন্ন মন। হাল না ছাড়া জেদ। চোয়াল শক্ত চেপে রেখে অনন্ত লড়াই। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর অসম্ভব মনের জোর। সকাল থেকে দুপুর অব্দি চাষের কাজ। ধান জমিতে লাঙল করা। চারাগাছ রোপণ। সার দেওয়া। আল গোছানো। ধান কেটে খামারে তোলা। বীজ ধান সংগ্রহ। হাজারো কাজে বাবার সর্বক্ষণের সঙ্গী রাম। দুপুরে বাড়ি ফিরে এসে দুদণ্ড জিরোবার ফুরসৎ নেই। দুপুরের আহার সেরে উঠে রওনা দিতে হবে হাটে বাজারে। কখনও অজানবাড়ির হাট, তো পরদিন তেখালি'র হাট। সারা সপ্তাহে কোথাও না কোথাও একটা হাট লেগেই থাকে। ফাঁক যাওয়ার জো নেই। তার বাবার ছিল ছোট্ট একখান মুদির দোকান। হাটে বাজারে বিক্রি-বাটার আশায়। বাবার পিছু পিছু ভূষিমাল দোকানের জিনিসপত্র পুঁটলিতে বেঁধে মাথায় বয়ে নিয়ে যাওয়াই রীতি। এখনকার মতো তখন এত এত গাড়ি ঘোড়া যানবাহন ছিল না। অগত্যা হাঁটা পথই ভরসা। হাঁটতে হাঁটতে পায়ে ব্যথা ধরে। রাতে শোবার আগে হাতে পায়ে সরিষার তেল মালিশ করলে আহা কী আরাম! নিমেষে ঘুমে জড়িয়ে ধরে চোখ।
              
তবে বিকেলের সময়টা রামের বেশ কাটে। হাটে কত রকমের লোক আসে। সবাই সবার সঙ্গে সুখ দুঃখের গল্প করে। ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে। বেচাকেনা হয়। প্রিয়জনের খোঁজ খবর নেয়। লোকে অদ্ভুত রকমের শব্দ করে দোকানদারী করে। জিনিসপত্র বেচে। রামের ভালো লাগে। লোকের কথা শোনে। মুচকি মুচকি হাসে। সারা বিকেলের সময়টা বেশ কাটে। মাঝেসাঝে ভূষিমাল দ্রব্য বিক্রির কাজে ব্যস্ত হয়ে ওঠে সে। 
তাঁর নিজের কথায় — 'রোজ বিকেলে হাটে গিয়ে মুদি দোকানের কষা সুপারির থলিটা সামনে রেখে বসতাম। সেটি বাজারে বেশি বিকোয় না; কিন্তু ওই সুপারির টুকরো মুখে রেখে চিবোতে ভাল লাগতো; কিন্তু ওই কষা (ফাঁক কেটে শুকনো) সুপারি মুখরোচক হলেও অধিক পরিমাণ কার্সিওজেনিক পদার্থ এর মধ্যে নিহিত থাকার ফলে মুখে ক্যানসার রোগের সূচনা করে, তা জ্ঞাত ছিল। তবে চিবোতে চিবোতে মুখের লালা সংযোগে নেশার রূপ ধারণ করে বসলো। কিছুক্ষণ না খেলে মন খুস খুস করতো। তখন মনে হল এটি একটি বদ অভ্যাস। এটিকে দূর করতেই হবে। সৎ উপায় খুঁজতে গিয়ে মন থেকে নির্দেশ এলো— ওই থলিটা সামনে থেকে দূরে সরিয়ে রাখ। এটাও ঠিক করলাম, এ ধরনের কু-অভ্যাস আমাকে যেন প্রভাবিত না করে। তাই, ছোটবেলা থেকেই আমি পান সুপারি খাওয়ার নেশা পরিত্যাগ করতে পেরেছি। শারীরিক কষ্ট মনকে জাগায়। প্রচণ্ড রোদ বা ঝড় বৃষ্টির দিনে দীর্ঘ পথ এ হাট, ও হাট হেঁটে যাওয়ার শারীরিক কষ্ট পড়াশোনা করার দিকে মনকে ধীরে ধীরে তৈরি করতে লাগলো। কিন্তু গাঁয়ের আশেপাশে কোনও হাইস্কুল না থাকায়, ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই।' (ক্রমশ...)

তথ্য সূত্র :
• প্রণম্য বৈজ্ঞানিক ড. রামচন্দ্র মণ্ডল মহাশয়
• শ্রী সুদর্শন সেন বিশিষ্ট শিক্ষক ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক
• 'মনীষী ড. রামচন্দ্র মণ্ডল' – সম্পাদনা শ্রী জয়দেব মাইতি ও শ্রী সুব্রতকুমার মাঝি



Post a Comment

0 Comments