জ্বলদর্চি

নাটক লেখা : রোমাঞ্চিত যৌবনে আর বার্ধক্যের বসন্তে /চন্দন সেন

নাটক লেখা : রোমাঞ্চিত যৌবনে আর বার্ধক্যের বসন্তে

চন্দন সেন


সত্যি বলতে কি কৈশোর পার হওয়া প্রথম যৌবনে গত শতকের ষাটের দশকের শুরুর দিকে আমার উপর নারী প্রেম ও নাট্যপ্রেমের যৌথ আক্রমণ। ইংরাজি সাহিত্যে অনার্স তখন সারা জেলায় ৫/১০ জন। আমায় অনার্স ক্লাসে ভর্তি করা হয়েছিল বাংলা, ইংরাজি, সংস্কৃতে অসাধারণ নম্বর পাওয়া এবং অংকে কোরামিন দেওয়া নম্বরের সূত্রে। প্রবাদপ্রতীম ইংরাজি সাহিত্যের অধ্যাপক তখন রাজনৈতিক কারণে কোচবিহার থেকে বিতাড়িত হয়ে আমার কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং অধ্যক্ষ। আমার সরকারি হাসপাতালের পুরুষসিংহ বাবাকে বলে কয়ে আমায় ডাক্তারি পড়া থেকে নিবৃত্ত করে অনার্স ক্লাসে ভর্তি করেছিলেন সেই অধ্যক্ষ এবং তার প্রত্যাশা ব্যর্থ হয়নি। কিন্তু শেষবেলায় আমাদের কলেজে পড়তে আসা পুলিশ সুপারের অপরূপা সুন্দরী মেয়েকে দেখে আমার হৃদয়ে হঠাৎ ‘গুরুগর্জনে নীল অরণ্য শিহরে’। কারোর সঙ্গে উদ্ধত সুন্দরী মেশে না, কথা বলে না! কলেজ ইউনিয়নের সবপন্থী তখন গ্যাস খাইয়ে আমায় অহংকারিনীর সংগে কথা বলতে পাঠালো। প্রিয়তম ছাত্র হিসেবে অধ্যক্ষ সেই সময় আমাদের ৭-৮ জন ছাত্রছাত্রীকে হ্যামলেট হয়ে ওথেলো-ডেসডিমোনা পার করে, দ্য টেম্পেস্ট বোঝাতে শুরু করেছেন। ঠিক করলাম নাটকীয় প্রেম নিবেদন করবো পুলিশ কন্যাকে। যেদিন ক্লাসের বাইরে কথা বলতে গিয়ে মেয়েটির মুখ থেকে চরম অপমানজনক বাক্য শুনেছি, আমার প্রতি সহানুভূতিশীল ছেলেমেয়েরা দূরে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে – ‘চন্দন তুইও পারলি না?’ সেই দিন গভীর রাতেই আমায় লিবিডো আদর করে বলল, কবিতা লিখে তাকে জমা দে। রাত জেগে কবিতা লিখে অনার্সের জনপ্রিয় ছাত্র বায়োলজি প্রাক্টিক্যাল ক্লাসের বাকি সবার অনুমোদনে আই. এসসি. পড়া মেয়েটির বায়োলজি বাক্সে স্বরচিত সংলাপ বা প্রেমজ কবিতাটি রেখে এলো। পরদিন আশা-নিরাশার দ্বন্দ্বে দুলতে দুলতে ক্লাসে ঢুকতেই প্রিন্সিপাল ডেকে পাঠালেন। বাঘের শমন। অনেক আতঙ্ক নিয়ে তাঁর ঘরে ঢোকার পর চমকিত আমি, ঘরের বাইরে অসংখ্য সহানুভূতিশীল ছেলেমেয়ে। ঘরের মধ্যে তিনজন – অধ্যক্ষ মশাই, আমি এবং সেই বায়োলজি ক্লাসের সুন্দরী। অধ্যক্ষের হাতে আমার প্রণয়-লিপি। মুখে বাঘ নয় সিংহের গর্জন! “তুমি লিখেছ?” – 

সিংহের সামনে বিড়ালছানা মানে আমি বললাম, “ম্যাঁও”। 

ততোধিক গর্জনে অধ্যক্ষ মশাই কবিতাটা মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, - “তোমার বাবাকে দেখিও না, পুলিশ ওকে যে কোন অজুহাতে গ্রেফতার করবে। আমি ওকে তোমার সামনেই জীবনে প্রথম ও শেষবার ভর্ৎসনা করে দিচ্ছি।”

মেয়েটি স্মিত হাস্যে আমার প্রণয়-লিপিটি তার দামী ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখল! – অধ্যক্ষ এবার রক্তচক্ষু! 

  • এরপর এমন কোন চেষ্টা দেখলেই প্রকাশ্যে থাবড়ে তোমার দাঁত ফেলে দেবো। 

আমি কাঁপছি, অস্পষ্ট আওয়াজ ভেতরে উঠছে, “ম্যাঁও”।

এবার অধ্যক্ষ মশাই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললেন, “খুশি?” –

সুন্দরী ভুবনজয়ী স্মিত হাসিতে মৌন সম্মতি জানায়। আমার উপর শেষ গর্জন, - “যাও এই প্রথম আর শেষ ওয়ার্নিং”।

চোখ ছাপানো জলে আমি বুঝতে পারছি না, মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিনা! অধ্যক্ষ বলে চললেন, “ক্লাসে তো সেক্সপিয়র, শ’, বায়রন নিয়ে দারুণ বলো, লেখও চমৎকার। কবিতা লিখতে যাচ্ছ কেন? তোমার আগে দেড় লাখ কবি, পরে দেড় কোটি কবির লাইন। নাটক লেখক কম, নাটক লেখ। তার ভেতর দেখো তোমার সংলাপে কবিতাও কথা বলবে। ভালো করে যত পারো নাটক পড়ে দেখো। তোমার প্রথম ও শেষ কবিতা লেখা হয়ে গেল। যাও” – বাদী ও বিবাদী ঘর থেকে বার হয়ে যাচ্ছে। অধ্যক্ষ মশাই একটু গলা নামিয়ে বললেন – “কবিতাটা খুব খারাপ লেখনি। আমি পড়ে দেখেছি তবে ‘বিবস’ বানানটা ভুল হয়েছে হবে, ‘বিবশ’।” যাও – 

বার হয়ে এলাম। আর মেয়েটির সঙ্গে দেখা হয়নি। ওর বাবা শুনেছি, অজ্ঞাত কারণে দু-মাসের মধ্যেই অন্য জেলায় চলে গেছে। - মাঝেমাঝে শেষ রাতে ঘুমভাঙানো বালিশের পাশে, মেয়েটির চুলের গন্ধের অলৌকিক নির্ঘুম আবির্ভাব ঘটতো। প্রায় ২৬ বছর পর আমি দুই সন্তানের জনক, সামান্য খ্যাতিমান বা জনপ্রিয় নাটককার, এক সন্ধ্যায় নাটক শেষে তাড়াহুড়ো করে বাস ধরে শিয়ালদা থেকে ট্রেনে বাড়ি ফিরতে পা বাড়িয়েছি। বাস ধরবো বলে আমি বাস স্টপেজের কাছে। নিজের গাড়ি থেকে নেমে এলেন এক সুদর্শনা। চিনতে বাধ্য হলাম। প্রথম যৌবনের স্বপ্ন সুন্দরী, তখন প্রবাসিনী। এক এক্স নকশাল ডাক্তারকে বিয়ে করেছে, USA-র নিউ জার্সিতে তাদের অসুখী সংসার। - আমার লেখা নাটক তিনি বিদেশে বসেও দেখেছেন। আমায় অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে জানালেন – “ভুল হয়েছিল। জানো তোমার কবিতাটা বারবার পড়তাম।” – 

আমি ফ্যাসফেসে গলায় বললাম – “হ্যাঁ, একটা বানান ভুল ছিল!” 

  • “কিন্তু লক্ষ্য ভুল ছিল না। এই নাও তোমার কবিতার একটা ওদেশ থেকে ফটো করে আনা কপি। নাও। আর পারলে-”  

  • “যারা নকশালবাড়ির আন্দোলন ছেড়ে পালিয়ে বিদেশ গিয়ে কেরিয়ার বানায় তারা আধুনিক হিসেবে ভুল করেন না, তবে আমার হিসেব মত তারা opportunist –”

  • “কিন্তু আমি ভুল করেছি। এসো না আর একবার –”

আমি আর ভুল করিনি। কলেজ জীবনের লজ্জা-লিপি হাতে নিয়ে অভদ্রভাবেই চলন্ত বাসে উঠে পড়লাম। সেই রাতে বউ ঘুমিয়ে পড়েছে, প্রথম যৌবনের লজ্জা লিপি আমার ব্যাগে। বায়রন এলেন, হাত ধরলেন, বললেন – “আমার মনে আছে, তোমার মনে নেই?”

হ্যাঁ মনে পড়ল।

“পাঞ্চালী সেন বলছি শোনো –।

পারফিউমের বিবশ গন্ধে মদির তোমার অঙ্গ, 

ক্যাফেটেরিয়ায় একটি ঘন্টা তুমি কি দেবে না সঙ্গ? 

সব কথামালা উজাড় করব, - কফি হাতে এক ঘন্টা 

দোদুল স্বপ্নে স্মৃতির গন্ধ ব্যাকুল করুক মনটা 

সব হিসেব ছাই, এসো না পোড়াই – 

যত লজ্জা রাঙানো কথা। 

তুমি বায়োলজি ক্লাস 

আমি বায়রনের ফ্ল্যাশ -

কাঁপে অদূরের নীরবতা।”

সম্প্রতি মৌলিক কবিতাটিও ভাঙ্গা হাত-পা নিয়ে আমার একটি নাটকে এসেছে। যেমন আমার অজস্র মাচার নাটকের রুটিন মানা সংলাপের ক্লান্তির পর প্রথম মনে পড়ল, অধ্যক্ষ মশাই ক্লাসে বলতেন - নাটক দেখতে হলে, লিখতে হলে, ভাবতে হলে বৃত্ত ভাঙতে হয়, ভূগোল চূর্ণ করতে হয়, ইতিহাসকে চাবকাতে হয় রাজা-সুলতানদের গপ্পো থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। - 

আমার প্রথম নাগরিক বা অধমর্ণ অহংকারের নাটক ‘দুই হুজুরের গপ্পো’ (ছোট্ট দু’পাতার গল্প - মিখাইল শালতিকভ শ্চেদ্রিন থেকে প্রাণিত পূর্ণাঙ্গ নাটক)। সব মিলিয়ে চারশোর ওপর অভিনয়। তারপর অমৃতা প্রিতমের মহৎ কাহিনী নিয়ে ‘আগুনের ফুল’ কে পাঞ্জাবের হাত ছাড়িয়ে রাজস্থানে নিয়ে নাটক ‘কর্ণাবতী’। মাঝে ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দি সি’ পড়তে পড়তে মৌলিক ভাবনায় বৃদ্ধদের নিয়ে ৫০০ অভিনয় পার করা নাটক ‘অনিকেত সন্ধ্যা’। তারপর অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদেশ মেনে ১৯৮৫ তে তলস্তয় অনুপ্রাণিত ‘জ্ঞান বৃক্ষের ফল’ (অজস্র অভিনয় ও পুরস্কারধন্য)। এই নাটকের শেষ অভিনয় ৬ জুলাই ২০১৩, নিউ জার্সির জর্জ প্লে হাউসে এপিক অ্যাক্টরস্‌ ওয়ার্কশপের প্রযোজনায়। মাঝে ৬০ থেকে ৭০ -এর দশকে উর্দু প্রহসনের ইংরেজি অনুবাদ করে, লিখে ফেলেছি খুবই জনপ্রিয় ‘উন্মনা মন’। আর আজকে যাকে প্রতিবাদী নাটক বলা হয় তার সর্বোৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আমি পেয়েছিলাম প্রাক্তন চেক প্রেসিডেন্ট ‘দলহীন গণতন্ত্রের প্রবক্তা’ নাট্যকার ভাচলভ হ্যাভেল -এর অসাধারন ছোটো নাটক ‘Protest’ থেকে অনুপ্রাণিত ‘স্পর্ধাবর্ণ’ নাটক লিখে। যেই নাটকটির প্রাণ-প্রতিষ্ঠার, পাশাপাশি প্রতিবাদী নাটকের গভীরতা আর অভিনয়ে নৈঃশব্দ্যের ব্যবহারে সেরা দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন - অকাল প্রয়াত দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়।... মাঝে অনেক খুচরো নাটক। পড়াশুনার অতৃপ্ত ক্ষুধায় ছোটবড় নাটকের সৃজন যন্ত্রণা। বার্টোল্ট ব্রেখটের মজায় মাতানো ছোট নাটকগুলো নিয়ে ছয়-সাতটি ছোটনাটক। যা গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময় আচার্য কুমার রায় একটি অসাধারণ ভূমিকা লিখে গেছেন। যেমন, নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ইউজিন ও’নীল অনুপ্রাণিত আমার তিনটি জনপ্রিয় নাটককে নিয়ে একটি বই বার হল, যার ভূমিকা লিখেছিলেন অশোক মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে সুব্রত ঘোষ ও সিদ্ধার্থ দাশগুপ্তের মূল্যবান আলোচনা। এই আত্মবিজ্ঞাপনী কথার শেষে বলা দরকার সত্তর পার করা মেঘনাদ ভট্টাচার্য এখনও আমার সামারসেট মম অনুপ্রাণিত ‘ভালো লোক’ করছে। আমাদের সখ্যের শুরুও করেছিল প্রায় ৪০ বছর আগে মেঘনাদ ‘দুই হুজুর’ দিয়ে। আমার অধ্যক্ষ মশাই বহুদিন আগে প্রয়াত, বলেছিলেন, - ভূগোলের বৃত্ত ভাঙ্গো, ইতিহাসের সীমাবদ্ধতাকে চড় মারো, কল্পনার বিস্তারকে অনুবাদ বা অনুপ্রেরণার অচলায়তনে বাঁধতে যেও না। ‘রামায়ণ’-‘মহাভারত’ -এর কাহিনী থেকে আজ পর্যন্ত একটি বিতর্কনীয় হিসেবে যে ৪৩৮ টি নাট্য নির্মাণ হয়েছে তার প্রত্যেকটিই মৌলিক নাট্যসৃজন। আমিও ৮০ পার করে নতুন মৌলিক কিছু লেখার চেষ্টা করছি। বয়সের দৈর্ঘের কারনে আমার প্রায় ২০০ নাটক লেখার পরিশ্রম শেষে দেখছি মহাকাল সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা বিরাত জিরো (০) নিয়ে। তাই মাঝে মাঝেই এখন অনুতপ্ত আমি স্মৃতিকে ব্যাকগিয়ারে পাঠাই। 

গত শতকের সত্তরের দশকের প্রথম পর্ব, আমি দামী চাকরি ছেড়ে নামী মাস্টার! তখনও অসংখ্য প্রতিক্ষারতার তালিকা দেখে বিরক্ত বাবা শেষ পর্যন্ত হুগলী থেকে এক নিষ্পাপ অচেনা কিশোরীর সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিলেন। কলেজে সেই সিংহসদৃশ অধ্যক্ষের মতই আমার ঘরে তখন ব্যাঘ্রসদৃশ বাবা। বাধ্য হয়েই অনেককে কাঁদিয়ে বিয়ে করতে হল। কয়েকদিন পর যখন সুবাধ্য কিশোরীকে রাতে কাছে টেনে এনে আদরের চেষ্টা করছি, দুজনের মুখ আটকে দিল এক দোনলা দেশি বন্দুকের বাট। রাতে নকশালপন্থীরা আমার পাশের ঘরে খাটের তলায় আশ্রয় নিত। তারা জানত আমি ভোটপন্থী সংখ্যালঘু কমিউনিস্ট নেতা, এবং জনপ্রিয় শিক্ষক। তাঁরা তখন শিক্ষালয় আগুন দিয়ে পোড়াচ্ছে, আমার স্কুলও তাদের আক্রমণের তালিকায়। তবুও রাতে আশ্রয়ের জন্য আমার বাড়ির একটা ঘরের খাটের তলা ওদের প্রথম পছন্দ। আমি আমার ঘরে ঢোকবার আগে আমার বিছানায় জানলার দিকে মুখ করে একটা দোনলা বন্দুক, যা হয়তো ওদেরই তৈরি, দেখতাম রাখা আছে। তার আগে আমার পাড়ার এক চেনা কিশোরী পরপর দুই সন্ধ্যায় তাদের বাড়ির মধ্যে একটা প্রায় অন্ধকার ঘরে নিয়ে গিয়ে আমায় শিখিয়ে দিয়েছিল। কিভাবে এ ধরনের দেশী বন্দুকের নল টিপতে হয়। আমি ওদের প্রবল চেষ্টায় অভিভূত হয়ে বলেছিলাম যে যে রাতে তোমরা আমার ঘরে রাতে আশ্রয় নেবে সেই রাতে বন্দুকটা আমার ঘরের বিছানার সামনে জানালার সঙ্গে সেট করে রেখো। বন্দুকের নলের উপর বই পত্র ঠাসা। মনে মনে ভাবছিলাম পুলিশ বা কেউ নকশালদের ধরতে এলে গুলি চালিয়ে দেবো। 

আমার কিশোরী বউ তার স্বামীর বীরত্ব জানত। হেসে বলেছিল আমি কাউকে বলছিনা, রেখে দাও তবে মনে হয় আত্মহত্যার কাজে লাগবে। সেদিন রাতে আমাদের দু’জনের মাঝখানে বাঁধা দিয়েছিল যে বন্দুকের বাট, সে বন্দুক হয়তো বাইরের খোলা হাওয়ার আকস্মিক আক্রমণে বাইরে থেকে আমাদের মাঝখানে এসে পরেছিল। জীবনে প্রথম ও শেষবার নিজের বিছানায় বন্দুক রাখবো কী রাখবোনা এই দ্বন্দ্বে আমায় সাহস যুগিয়েছিল আমার দুই পলাতক নকশাল বন্ধু। উৎপল দত্তের নাটক করা সুগায়ক শান্তনু আর আজিজুল হক। সিরিয়াস কথা বলার আগেও একটু হেসে নেওয়া যার বদভ্যাস। ওরা দুজনেই কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেছিল, দেখছেন তো মাস্টার মশাই আপনাদের ভোটপন্থী বড় কমিউনিস্ট পার্টি আমাদের শেষ করতে চাইছে পুলিশের মতই, কারন আমরা নাকি আমেরিকার দালাল। আমরা জানি আপনি তাদের মত নন। আমার পার্টির নেতা সোমনাথ লাহিড়ী আমায় সুভদ্র সংগ্রাম করতে শিখিয়েছিলেন। যার সিলেবাসে বন্দুক চালানো ছিল না। কিন্তু, আমার আরেক নেতা মেদিনীপুরের পূর্ণেন্দু বাবু অক্লেশে বলতেন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের সময় বুঝেছিলাম, বন্দুক চালানো না জানলে কিস্যু হয়না। 

সত্তর দশকের স্থানীয় নকশালরা আমার বাড়িটাকে অন্তত সাত-আট বার গভীর রাতের বিশ্বস্ত আশ্রয় বলে মেনে নিয়েছিল। তাই প্রায় ২০০ নাটক লেখা জনপ্রিয় কিন্তু মহাকালের বিচারে শূন্য পাওয়া ৮১ বছরের নাটককার শেষ পর্যন্ত, এখন কালের যাত্রার ধ্বনি শুনছে। যে মেয়েটি আর তার সঙ্গীরা আমার বন্দুক চালাতে শেখার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল তারা সবাই নিহত। একজন শুধু বেঁচে ছিল কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা আর নামী-দামী প্রাসাদের মধ্যে। আজ আমি ভাবছি তবে শূন্য থেকেই শুরু হক, - বার্ধক্যহীন বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ! যদি আর একবার সুযোগ পাই, যদি আর একবার... আর একবার... 

🍂

Post a Comment

0 Comments