জ্বলদর্চি

রম্য কবিতা, পর্ব - ১৫ /তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

রম্য কবিতা, পর্ব - ১৫
তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

(১)
মাতালের ভারকেন্দ্র

পদার্থবিদ্যার শিক্ষক মহাশয়, যেতে যেতে প্রাক্তন ছাত্রের দেখা পান,
ছাত্র কি দুর্বল? দেহ তার টলমল! ঠাহর করতে তাকে আরও তার কাছে যান।
মদের বোতল হাতে, মুখে দুর্গন্ধও, দৃষ্টিও মদিরেক্ষণ, কুণ্ঠিত সে,
দিতে সে কৈফিয়ত - লজ্জিত, আড়ষ্ট শব্দয় যেতে চায় ঘটনার উৎসে।
সবিনয়ে হাতজোড় করে বলে, “দুঃখিত! দেখা হবে এভাবে যে কোনোদিনই ভাবিনি,
আগে জানলে তো মদ খেতামই না মহাশয়, শিবের দিব্যি আমি অতোখানি নাবিনি।”
কি বিষাদসিন্ধুর সুরাহা খুঁজতে সুরাসক্তি হয়েছে তার জানালো সে বেসুরো,
সদা সুরারঞ্জিত, শুঁড়িরা বন্ধু হতো কেনো - তা বোঝালো সাথে নিজেকে বেকসুরও।

শিক্ষক মহাশয় বললেন, “মনে কিছু করবোনা, উত্তর দাও যদি আমারে,
মনে আছে কিনা দেখি, যা যা আগে পড়িয়েছি, নাকি হারিয়েছো সবই জলে, খেতে-খামারে!
দেখি কি রয়েছে ঘটে - তোমার সন্নিকটে এসে কেউ তোমায় কি শুনবে না শুঁকবে?
নাভির কাছেই থাকা ‘ভারকেন্দ্র’ তোমারই, মদ্যপ হয়ে বলো আদৌ কি ঝুঁকবে?
তিরিশ ডিগ্রি বাঁয়ে, ঝুঁকলে নেশার ঘা’য়ে, ‘ভারকেন্দ্র’ কতোটা, কোনদিকে সরবে?
কতোটা পড়লে পেটে, দারুণ নেশার চোটে, দোলকের মতো সেটা ক্রমাগত নড়বে?
কতো তা ঢললে পাশে, হেলে হেলেও আয়াসে যাবেনাকো চলা -বেসামাল হয়ে ধুপ-ধাপ,
যকৃতে বিষ জমে, কম মদে হেলা কমে, নিজের খেয়াল রেখো হয় যদি অনুতাপ।”
এমন যত্ন গুণে, এমন প্রশ্ন শুনে, ছাত্রের নেশাঘোর কেটে গেলো নিমেষে,
‘ভারকেন্দ্র’ কি  বলে, কতো মদে কতো ঢলে- সে হিসেব রাখে কিনা কেউ -ভাবে থেমে সে!

উত্তর দিতে পেড়েছিলো কিনা ছাত্র তা সে কথা তো জানাননি শিক্ষক মহাশয়,
সেইথেকে যেভাবে সে সিধে হয়ে চলে-ফেরে, কেঁচে-গণ্ডূষ ভাবি করেইছে নিশ্চয়।
নইলে বোঝাবে কেনো পথচারী ধরে ধরে, দেখলেই হেলে পড়া শিরদাঁড়া রাস্তায় -
“মানবদেহের প্রতি বিন্দুতে ক্রিয়াশীল অভিকর্ষ বলেরই লব্ধি যা দিয়ে যায় –
কল্পিত সে বিন্দু ‘ভারকেন্দ্র’ যেটাতে দেহের সামগ্রিক ওজন প্রয়োগ হয়”
খুলেওছে ‘ঋজুকায়-কেন্দ্র’ সে তালপুরে, অন্যের টাল সারাতে সে দৃঢ়প্রত্যয়।
তাছাড়া দারুণ দড়াবাজিও সে আজকাল করছে - এসেছি দেখে মেলাতে স্বচক্ষে,
থাকবে কিভাবে ভারসাম্য জীবনে তারও পাঠ দিতে থাকে যেচে নেশাখোর লোককে।

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 
(২)
দীর্ঘচঞ্চু

‘দীর্ঘ চঞ্চু কার?’- সেই প্রতিযোগিতা-
জিতবেই ভেবেছিলো হাড়গিলে পাখিটা।
আশা ছিলো ‘ফাঁকা মাঠে গোল’ দেবে একা সে,
প্রতিযোগিতায় গিয়ে হলো মুখ ফ্যাকাসে।
‘কিউই’, ‘টুকান’, আর ‘ক্রৌঞ্চ’ পাখিদের -
দেখে সে এসেছে ‘চকা’, ‘সারস’, ‘গগনবেড়’।
‘গুলিন্দা’, ‘খোয়াজ’ও আগেই লিখিয়েছে নাম,
‘কোঁচবক’ ও ‘ধনেশে’তে বকবক অবিরাম।
ঠোঁট দিয়ে ‘কাঠঠোকরা’র চাটুবৃত্তি,
‘মাছরাঙা’ মাছে সুখী, জয়ে অপ্রবৃত্তি।
‘কোদালি বক’ এবং ‘অসিঠুঁটো গুঞ্জন’,
বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে ঠোঁট করে মনোরঞ্জন।
‘গাঙচষা’, ‘কাদাখোঁচা’ আসে চেপে ডোঙ্গায়,
হুজ্জতি ‘বালুবাতানে’ ও ‘নলঘোঙ্গা’য়।
‘কাস্তেচরা’ এসেছে অবকাশে চরতে,
এমনিই বাকিদের সাথে দেখা করতে।
এ খেলায় কি বা হবে, জিতলেই কার কি? 
মোহ-মায়া নেই, বুঝেছে সে সংসার কি! 
হাজির ‘মানিকজোড়’ও, একা নয় দোকলা,
দেখে খুশি বাকি পাখিদেরও হাসি ফোকলা।
বিচারক কে হয়েছে? ‘অ্যালবাট্রস’ তো!
ঠোঁট মাপা শেষ হয়েছে যেই -সব ত্রস্ত।
বৃথা তোষামোদ, অতি ভক্তি, নমস্কার,
আখেরে ‘গগনবেড়’ই পেলো সে পুরস্কার।


Post a Comment

0 Comments