আমি আমার মতো
পর্ব -১৩
সুকন্যা সাহা
জুতা উপাখ্যান
শ্রীচরণকমলেষু
ইদানীং পায়ের ব্যথায় এত কষ্ট পাচ্ছি যে , যে যা বলছে করে ফেলেছি; এই আশায় যে পায়ের ব্যথা যদি তাতে একটু কমে ... আগে পেশীতে ক্রাম্প হত এখন শুয়ে বসে দাঁড়াতে হাঁটতে কোনো অবস্থাতেই স্বস্তি নেই। কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সবসময় একটা ব্যথা। মাঝে মাঝে ভাবি পদযুগল যখন এতই মহার্ঘ্য হয়ে ঊঠেছে তখন পা মাথায় করে হাঁটলে কেমন হয় ! এতদিন মানুষ রাগলে বাড়ি মাথায় করত এখন ব্যথায় পা মাথায় করতে হবে ! পায়ের ব্যথা কমাতে ফিজিওথেরাপি, ব্যথার মালিশ, রেডিওথেরাপি , ব্যায়াম সব যখন ফেল পড়ল তখন ডাক্তার নিরুপায় হয়ে নিদান দিলেন জুতো পরিবর্তন করার ইংরেজীতে যাকে বলে মডিফিকেশান অফ শুজ । ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশান মোতেবেক গেলাম শু মডিফিকেশান স্পেশালিস্টের কাছে (এরকম যে কোনো প্রেফেশান হতে পারে সে সম্বন্ধেই আগে কোনো ধারনা ছিল না ) অবশ্য ডাক্তারের ব্যাপার দেবায় ন জানতি আমি তো তুচ্ছ মানুষ ! যাক গে শু মডিফিকেশান স্পেশালিস্ট আমার জুতোর ওপর রীতিমত গবেষণা চালিয়ে মতামত দিলেন এরকম ছ্যাবলা মার্কা জুতো চলবে না । জুতো হবে পাওয়ারের তাতে অ্যংকেলের কাছে ডাবল ফোল্ডেড প্যাডিং থাকবে যাতে পায়ের পাতার ওপর চাপ না পড়ে । অতঃপর জুতোর দোকান খুঁজতে খুঁজতে সেই আদি এবং অকৃত্রিম বাটার দোকানের শরণাপন্ন হওয়া গেল ... উল্টোডাঙ্গার বাটার দোকানে যেতেই সেলস গার্ল মহিলা একগাল হেসে বললেন আপনি নিশ্চয়ই সুস্মিতা অধিকারী ? তার আশায় জল ঢেলে আমি ব্যজার মুখে জানালাম না আমার নাম কস্মিনকালেও সুস্মিতা নয় আর অধিকারী হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না কারণ আমার অধিকার বোধ তত প্রবল নয় ...
জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇
যাই হোক তার বিগলিত হওয়ার কারণ জানা গেল অচিরেই । কোনো সুস্মিতা অধিকারী নামে জনৈক ম্যাডাম অনলাইনে বিজিস জুতোর অর্ডার দিয়েছিলেন এবং বাটার দোকান যথাসময়ে তা সংগ্রহ করে রেখেছেন । আমার তো আকাশ থেকে পড়ার উপক্রম ! বিজিস সে আবার কি জিনিস ? খায় না মাথায় মাখে ! আমি সেলস গার্লটির জ্ঞান থেকে জানতে পারলাম ভিয়েনামের জুতো বিজিস । যার দাম প্রায় ছয় হাজার ... বাটা তার এদেশীয় ডিলার... ইদানীং নাকি লাইন দিয়ে লোকে বিজিস বুক করছে ... অনলাইনে বুক করার দু সপ্তাহের মধ্যেই বাড়িতে পৌঁছে যাবে জুতো ... এই রকম প্রভূত জ্ঞানে জ্ঞানান্বিত হয়ে আমি যখন জানলাম যে নাহ আমার বিজিসের দরকার নেই ... আমার পাওয়ারের জুতো হলেই চলবে সেলস গার্ল মেয়েটি তখন বেশ আশাহত হল ... আমাকে নতুন করে উজ্জীবিত করতে বেশ কয়েকরকমের পাওয়ারের জুতো নিয়ে এল সে । লক্ষ্য করলাম প্রতিটা জুতোই মারকাটারি রকমের ভারিক্কি আর সোলগুলো ইয়া মোটা ... তার মধ্যেই অপেক্ষাকৃত কম ওজনদার একটা জুতো পছন্দ করতেই মেয়েটি তার দাম বলল তিনহাজার ... সবে মাইনে পেয়েছি ; সাত দিনও হয় নি ... এরই মধ্যে এতগুলো টাকা দন্ডী দিতে সত্যিই গা করকর করছিল...
তবে ওই যে বলে না পা বড় বালাই ... যন্ত্রনা ব্যথায় অতিষ্ঠ হয়ে কপাল ঠুকে একখানা কিনেই ফেললাম পাওয়ার (আমার জীবনে প্রথম !) কিন্তু তাতে কি রক্ষে আছে ? সেলস গার্ল মেয়েটি জোর করে একজোড়া অ্যাংকলেট গছাল ...উপদেশ বাক্য ঝরে পড়ল এই জুতো সদা সর্বদা মোজা দিয়ে ইউজ করবেন... গরমকাল আর বর্ষাকালেও ? হেঁচকি তুলে প্রশ্ন করি ... নির্বিকার মুখে মেয়েটি জবাব দেন ব্যাগে স্পেয়ার মোজা রাখবেন ... আমরাও রাখি ... অগত্যা আর কি করা ? আমতা আমতা করে ঢোঁক গিলে জুতোর প্যাকেট বগলদাবা করে করকরে নোট খসিয়ে যখন বাড়ির পথে পা বাড়াচ্ছি হঠাৎই সতর্ক বাণী এ জুতো কেউ একটা কেনে না ম্যাডাম একজোড়া কিনতে হয়; অল্টারনেট করে পড়বেন ; জুতো ক্ষয় হবে !যাচ্চলে ! মুখ দিয়ে বাংলা খিস্তি বেরিয়ে আসছিল কোনোরকমে সংবরণ করে কাঁচের সুইং ডোর খুলে বেরোতে বেরোতে নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম সাধে কি লোকে লেখে শ্রীচরণকমলেষু!
(ক্রমশঃ)
1 Comments
খুব সুন্দর হচ্ছে....
ReplyDelete