জ্বলদর্চি

কয়েকটি রম্য কবিতা- ১০/ শুভশ্রী রায়

কয়েকটি রম্য কবিতা- ১০/ শুভশ্রী রায়

কিচিরমিচির লেখা

আরে, আমি আবার কবে বললাম, আমি লিখি?
আমি তো পাখীর কাছ থেকে কিচিরমিচির শিখি!
কবে ঘোষণা করলাম- আমি মস্ত বড় লিখিয়ে?
সুখী আলো, চাঁদমায়া, বৃষ্টি চলছে আমায় শিখিয়ে
কী আবার? কবিতাকে হাজারটা দিক থেকে দেখা
হরেক তার মাত্রা আগে নিই বুঝে, পরে হবে লেখা
জানি একটা জীবনও যথেষ্ট নয় কাব্যি শিখে নিতে
পরজন্মে হয়তো পারব কলমখাতায় ছড়িয়ে দিতে;
তার আগে লেখা- কিচিরমিচির ও খেয়ালের আর্জি
কেউ পড়েন, কেউ ছু্ঁয়েও দেখেন না, তাঁদের মর্জি!


ধন্ধমূলক

জীবন ধন্ধমূলক ভীষণ অবিন্যস্ত!
গোছগাছ করার জন্য
ভোর থেকে রাত অবধি
দুনিয়াশুদ্ধু প্রত্যেকে স্ব স্ব ব্যস্ত।

অংশত ঠিক হয় দৌড়ঝাঁপ করে
বাকিটা যে কে সেই!
পুরোটা ঠিক হয়ে গেলে
মাথা ও হাত পা থাকত অলস পড়ে।

তাই বোধহয় সমস্যার পর সমস্যা!
যেই একটা বাধা যায় কেটে,
চলে আসে নতুন দুয়েকটা
মোট কথা - অসুবিধার বারোমাস্যা। 

একেক দিন একেক রকম উপায়ে
বাধার সঙ্গে লড়াই চলে!
মগজ খাটানো হয় এবং
ওঠবোস করে দিন যায় মিলিয়ে।


জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


অদ্ভুত গোল গল্প

বিয়ে বাড়ীতে সেই ছেলেটার সাথে গল্পটল্প করা হয়নি
আগ্রহ আর চুড়ির টুংটাং ভর্তি বাতাস তার আমার মাঝে বয়নি,
তখন আমার সবে কুড়ি, সে ছেলেটি বড় জোর চব্বিশ
বাড়ী কোথায় তার, কার কে? হঠাৎ চলে গেল ইসসস!
পরে জেনে নিয়েছিলাম কনের মাসতুতো দাদা, থাকত জোকা
হায়, ছেলেটি নয়, আমার ভাগ্যই আমায় দিয়েছিল ধোঁকা।

তার ওপরে সেই বিচ্ছিরি স্বভাব আমার, হাসতাম খুব কম
কার অত দায় পড়েছে যে গম্ভীর মেয়ের দিকে বাড়াবে কদম?
দুটি যুগ ছাড়িয়ে সে দিন সোশাল মিডিয়ায় একটা  ছবি দেখে চমকে গেলাম
নামটা মনে ছিল, মনে হল সেই "ছেলেটার" ছেলে- মিলিয়ে নিলাম!
অদ্ভুত পৃথিবীটা গোল, হারিয়ে, হাত ছাড়িয়েও ফিরে আসে কত কিছু
তবে আলাদা মাত্রায়, অন্য ভাবে, বেদনা ও সুখের স্মৃতি আসে পিছুপিছু।


করুণ মিয়াও মিয়াও

বেড়ালসোনা বেড়ালসোনা, ব্যাপারখানা কী?
গভীর রাতে কেন এত করুণ মিয়াও মিয়াও?
ওগো মানুষ, কান পেতে কষ্ট-মিয়াও নাও শুনে 
খুব ক্ষিদে পেয়েছে আমার, তাই কান্না জুড়েছি।

সোনা পুষি, শিগগিরি নেমে এসো পাঁচিল থেকে
দুধ আর নরম রুটি দিয়ে এখন পেট ভরিয়ে নাও,
আপাতত এটাই অনেক আমার খালি পেটের জন্য
আরো ভালো, খাওয়ার পরে যদি শুতেও দাও!



সাঁঝেলি মায়া

সবুজাভ মেঠো পথ, সেইখান দিয়ে বিকেলে
ঘরে ফিরছে রাখালবালক, সঙ্গে গরুর পাল,
ধুলো উড়ছে, বিষণ্ণ তার আঁচল বিছিয়ে সাঁঝ
সূর্য ডোবার গাঢ় বেদনায় আকাশ বিধুর লাল।
জল জমে আছে রাস্তা লাগোয়া মাঠের ভেতর
আকাশ সে জলে মুখ দেখে নেয় দিনের মতো;
একটু একটু করে মায়া বাঁধন শক্ত হচ্ছে কারো
ক্লান্তি রেখে চৌকাঠের বাইরে, গৃহমুখী প্রাণ যত।



Post a Comment

0 Comments