জ্বলদর্চি

দাদু প্রেমেন্দ্র মিত্র // ঈশিতা ভাদুড়ী


স্মৃতি ডট কম ১৬

দাদু প্রেমেন্দ্র মিত্র 

ঈশিতা ভাদুড়ী 

মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে / মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে। / তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে / দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে, / আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার পরে / টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে। / রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে / রাজা ধুলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে – অল্প বয়সে এই কবিতা এমন মায়াজাল বুনতো! তখন কবি নয়, কবিতাটি স্থান করে নিয়েছিল হৃদয়ের অন্তস্তলে। তখন প্রেমেন্দ্র মিত্র নাম্নী ব্যক্তিত্বের আলাদা কোনও মাহাত্ম ছিল না সেই শিশুর কাছে। 

পরবর্তীকালে যখন স্কুলপাঠ্যের বাইরের কবিতা পড়তে শুরু করি, তখন ধীরে ধীরে কল্লোল যুগের একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বাঙালি কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক প্রেমেন্দ্র মিত্রকে আবিষ্কার করি। যদিও ইতিমধ্যেই তাঁর গল্পের ঘনাদা, পরাশর বর্মা, মেজকর্তা এবং মামাবাবু পরিচিত হয়ে গেছেন। একথা ঠিক, প্রেমেন্দ্র মিত্র যদি কবিতা না লিখতেন, তাহলে শুধুমাত্র ঘনাদা ওরফে ড ঘনশ্যাম দাসের জন্যেই সাহিত্যের ইতিহাসে চিরস্থায়ী আসন নিয়ে থাকতেন। বাংলার সায়েন্স ফিকসন রচনার সূত্রপাতও তিনিই করেন। পরবর্তীতে তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যের এই দিক সমৃদ্ধ হয়েছে অনেক লেখকের বলিষ্ঠ লেখনীতে। তিনি সম্পাদক হিসেবেও তাঁর পরিচয় দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে কবিতা পত্রিকাও সম্পাদনা করেছিলেন, যদিও বেশিদিন নয়।
স্বপ্ন দেখি সে-পথের, / অস্তাচল উত্তীর্ণ হয়ে আগামী কালের পানে- / স্বপ্ন যেখানে নির্ভীক, / বৃদ্ধের চোখে শিশুর বিস্ময়, / পৃথিবীতে উদ্দাম দুরন্ত শান্তি – লিখেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। সেই সব হারানো পথ তাঁকে টানে…

এইসব কবিতা পড়তে পড়তে নাকি দিদিমার কাছে প্রেমেন্দ্র মিত্রর নানা রকম গল্প শুনতে শুনতে জানিনা কেন তরুণী মন তাঁকে দেখতে চাইল ! প্রেমেন্দ্র মিত্র ছিলেন আমার মাতামহ মণীন্দ্রমোহন বাগচীর (যতীন্দ্রমোহন বাগচীর জ্যেষ্ঠ পুত্র) বন্ধু। আশির দশক তখন, আমিও একটু একটু লিখতে আরম্ভ করেছি। ঘুরতে ঘুরতে চলেই গিয়েছিলাম হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রীটে, পরিচয় শুনে খুবই আগ্রহী হলেন, অনেক গল্প করলেন। প্রথম দিনেই আমারও কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র, ঘনাদার রচয়িতা প্রেমেন্দ্র মিত্র, দাদু প্রেমেন্দ্র মিত্রকে বেশ ভাল লেগে গেল। এরপর একাধিকবার গিয়েছি তাঁর বাড়িতে। তখন সেই রাস্তায় ঢুকতে গেলে বাধা পেতে হতো না। 
শেষদিকে চোখে দেখতে পেতেন না একদম। কিন্তু আবদারে নতুন একটি ছড়া লিখে দিয়েছিলেন আমায়। কী অনায়াস ছন্দ এবং বিষয় – রোদ আষ্টে আকাশে মেঘ, / মেঘ সাত্তে ঝড়। / ঝড় দুকুনে বিজলী চমক / বাজের কড়াক্কড়…



জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇



Post a Comment

2 Comments

  1. ছোট্ট প্রভৃতি, সঙ্গে ছড়া, ভালো লাগল।

    ReplyDelete
  2. বাহ্ , খুব ভালো বিষয়।

    ReplyDelete