জ্বলদর্চি

হালখাতা /ভাস্করব্রত পতি

পশ্চিমবঙ্গের লৌকিক উৎসব, পর্ব -- ৬৯

হালখাতা

ভাস্করব্রত পতি


"পয়লা বোশেখ টেক প্লিজ টেক, 
এসেছে নতুন দিনের নতুন খাবার জলভরা তালশাঁস, শক্তিগড়ের ল্যাংচা খাও, বাদাম তক্তি দেখে যাও, মেদনিপুরের খানদানি-এর নাইকো পরিহাস।
মোল্লাচকের দধি পিত্তনাশ নিরবধি। 
খাও মঘাই পানের, রূপোর খিলি। 
দিয়ে আতর গোলাপপাশ।" ---- পয়লা বৈশাখের হালখাতায় ব্যবসায়ীরা খদ্দেরদের কিভাবে আপ্যায়ন করে কি কি খাওয়াতো, তা এই বিবরণে মেলে। বাঙালির লৌকিক উৎসবের তালিকায় নিঃসন্দেহে আসবে এই হালখাতা। 

'হাল' অর্থে বর্তমান, চলতি বা আধুনিক বোঝায়। যেমন হাল সন, হাল আমল, হাল ফ্যাশন ইত্যাদি। তবে ফারসি শব্দ 'হাল' অর্থে হিসেব। সংস্কৃত 'হল' অর্থে লাঙ্গল। 'হল' থেকে এসেছে 'হাল'। লাঙলের ব্যবহার শেখার পর কৃষিজাত নানা হিসাব নিকাশ যে খাতায় লিখে রাখা হত, সেটাই হালখাতা। 

একসময় তালপাতায় লিখে রাখা হত চাষাবাদের যাবতীয় হিসেব নিকেশ। তখন লাঙ্গল বা হালের দ্রব্যের বিনিময়ের তথ্য লিখে রাখা হত তালপাতায়। বাংলা নববর্ষে এই হালখাতা ব্যবহারের প্রচলন চালু হলেও ইদানিং তা অক্ষয় তৃতীয়া সহ বিভিন্ন বিশেষ দাগা দিনেও প্রচলিত হচ্ছে। আসলে মূল লক্ষ্য বকেয়া টাকা খদ্দেরদের থেকে আদায় করা হালখাতা উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে। 

অনেক আগে থেকেই বাংলায় বৈশাখের প্রথম দিনেই জমিদারদের খাজনা দেওয়ার প্রথা ছিল৷ সেখানে হিসাব রাখা হত লাল কাপড়ে মোড়া নতুন হাল খাতায়। যে কোনও বড় দোকান তথা মুদি দোকান, বড় বড় আড়ৎদারদের থাকতো খরিদ্দারকে ধারবাকি দেওয়ার বিশেষ খাতা। সেই ধারবাকি বছরের প্রথম দিন সকলে মিটিয়ে দিত। ফলে সারা বছরের বকেয়া অর্থ পেয়ে যেতেন দোকানদার। বন্ধ হয়ে যেতো ঐ পুরাতন বকেয়া খাতা। তারপরে নতুন বছরে দোকানদার তাঁর ক্রেতাদের জলযোগের ব্যবস্থা করতেন। একটি করে ক্যালেন্ডার দেওয়া হয়। ফের শুরু করা হয় নতুন খাতার ব্যবহার। সেখানে লেখা হয় সামনের বছরের ধারবাকির হিসেব নিকেশ। 
হিন্দুদের হালখাতাতে সিদ্ধিদাতা গণেশের পূজা করা হয়। সেইসাথে লক্ষ্মীও পূজিতা হন। দোকানের সদর দরজায় নারকেল দড়িতে আমপাতা বেঁধে ঝোলানো হয়। ঐ আমপাতাতে সিঁদুর লাগানো থাকে। অনেকে শোলার তৈরি কদমফুল টাঙিয়ে দেন এর সাথে। পাঁচটি সাদা কড়ি গঙ্গা জল দিয়ে শোধন করে লক্ষ্মীর কাছে রাখা হয়। আর পুরোহিত ডেকে গনেশ পূজা করা হয়। পয়লা বৈশাখের দিন খাতার প্রথম পাতায় তেল সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা হয়। নতুন কিছু শুরু করার প্রতীক হিসেবে এই স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে শুরু হয় নতুন বছরের হিসেব নিকেশ। কেউ কেউ কয়েন বা মুদ্রাকে তেল সিঁদুর দিয়ে মাখিয়ে ঐ খাতায় ছাপ দিয়ে মুদ্রাটিকে তুলে রাখেন টাকা রাখার বাক্সে। হালখাতা উৎসব কেবল আড়ৎদার, মজুতদার বা দোকানদাররাই করেননা। গ্রামের কোয়াক ডাক্তাররাও করেন। বকেয়া রাখা ব্যক্তিদের বাড়িতে বাড়িতে চিঠি পাঠানো হয়। তার উপরে থাকে গণেশের ছবি আঁকা। তবে মুসলিম দোকানদাররাও হালখাতা করেন। চিঠিতে এক্ষেত্রে লেখা হয় 'এলাহী ভরসা'। গণেশের বদলে চাঁদ তারা এবং কলাগাছের পরিবর্তে ছাপা হয় মসজিদের গম্বুজ। আর খামের মধ্যে থাকা আমন্ত্রণ পত্রের পেছনে ছোট করে বকেয়া টাকার অঙ্ক লিখে দেওয়া থাকেথাকে খরিদ্দারের বোঝার সুবিধার্থে। সকালে যখন বকেয়া টাকা দিতে যায়, তখন তা রাখা হয় একটি পোড়ামাটির হাঁড়িতে। ঐ হাঁড়ির মুখটায় লাল রঙ কাগজ দিয়ে ঢাকা থাকে। মাঝে একটু ফাকাঁকা থাকে টাকা ঢোকানোর জন্য। আর লাল খেরো খাতায় টাকার অঙ্ক ও টাকার মালিকের নাম লেখা থাকে। 

রামকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর সময়কালে হালখাতার নির্যাস তুলে ধরতে বর্ণনা করেছেন, "বাড়িতে বাড়িতে নিমন্ত্রণ নয়, দোকানে দোকানে হালখাতার আমন্ত্রণ। নতুন খাতা খুলবেন দোকানের মালিক। পুরনো খাতার দেনাপাওনা চুকিয়ে দাও। গেলাসে গেলাসে লাল রঙের ঘোল, কচকচে বরফের কুচি, আর মিষ্টির প্যাকেট। বড় দোকানে আয়োজন একটু অমায়িক। শাঁখ সন্দেশ, কী জলভরা তালশাঁসের দেখা মিলত। ছোট ছোট দোকানে কচি কচি আপ্যায়নে দেঁদো সন্দেশ আর রসমুণ্ডি। বাঙালির কাছে তাই বা কম কী! অভিনেতা হরিধন মুখোপাধ্যায় আমার বন্ধু। সে আমাকে এক পয়লা বৈশাখের সকালে বলেছিল দেখ রাম, আমাদের কালটা কোথায় চলে গেল। আমার বাবা বলতেন, একটা খাতা বা একটা লজেন্স বা একটা পেন্সিল খাতায় লিখে নিয়ে আসতে। এই ধার শোধ করার জন্য একটা চিঠি আসবে বাড়িতে পাওয়া যাবে একবাক্স মেঠাই।"

আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে পৃথিবীর প্রথম বর্ষ পঞ্জিকার উদ্ভব করেছিল আর্যরা। সংস্কৃত সাহিত্যে পঞ্জিকাকে বলা হত 'পঞ্চাঙ্গ'। ঋকবেদ, মহাভারত ও মৎস্যপুরাণ অনুসারে মাতা সমতা ও পিতা উতখর পুত্র দীর্ঘতমার ঔরসে ও সুদেষ্ণার গর্ভের পাঁচ সন্তানের এক সন্তান ‘বঙ্গ’ এর নামেই নাকি বঙ্গের নামকরণ। ‘ঐতরেয় আরণ্যক’তেও বঙ্গ শব্দটি মেলে। ড. সুকুমার সেন বলেছেন, এই বঙ্গদেশের একটি বিশেষ উদ্ভিদ 'কাপাস'। 'বঙ্গ' শব্দের প্রাচীন অর্থ হল কাপাস। সেখান থেকেই বঙ্গ কথাটির উৎপত্তি। তা থেকেই এসেছে 'বঙ্গাব্দ' কথাটি। আর বঙ্গাব্দের সূচনাতেই হয় হালখাতা। 
একসময় যখন মোঘল সম্রাট আকবরের রাজত্ব চলছিল তখন মোঘল বাদশাহকে প্রজারা খাজনা দেওয়ার সময় লাল রঙের শালু কাপড়ে বেঁধে দিত৷ সেই পদ্ধতি অনুসৃত হয়ে আসছে বলে অনেকের অনুমান। লাল শালু মোড়া খাজনা দেওয়ার পদ্ধতি থেকেই হিসাবের খাতাতেও লাল রঙ লাগু হয়ে আছে। শোনা যায়, মহামতি আকবরই নাকি নতুন বছরের প্রথম দিন ফসল কর আদায় কিংবা রাজস্ব আদায় করতেন। এই নির্দিষ্ট দিনটি নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন মোঘল আমলের এক জ্যোতির্বিদ। পরবর্তীতে তখনকার সমাজে এটি প্রচলিত ছিল 'পুণ্যাহ' নামে। যা অনেকটাই হালখাতার মতো। তবে সেই নতুন বছরের প্রথম দিন কিন্তু বাংলা নববর্ষ ছিল না। 

সম্রাট আকবর ১৫৫৬ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি (৯৬৩ হিজরী সন) সিংহাসনে বসেন। সেই সময় বর্ষপঞ্জির হিসাব হতো সূর্যের অবস্থান দেখে চান্দ্রমাস অনুযায়ী। যাকে হিজরী সন বলা হতো। যা 'তারিখ ই ইলাহি' নামে পরিচিত ছিল। এই হিজরী সন একটি ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল। ৬২২ সালে হজরত মুহাম্মদ এবং আবু বকর মক্কা থেকে মদিনা যাত্রা করেছিলেন। সেই ঘটনার স্মরণে হিজরী সন শুরু হয়। কিন্তু তা মোট ৩৫৪ দিনে বছর অনুষ্ঠিত হত। হিজরী বর্ষপঞ্জি (আরবি: ٱلتَّقْوِيم ٱلْهِجْرِيّ‎‎ আত তাকউইম আল হিজরি) পরিচিত চান্দ্র হিজরী বর্ষপঞ্জি ও ইসলামি, মুসলিম বা আরবীয় বর্ষপঞ্জি নামেও। এটি একটি চন্দ্র নির্ভর বর্ষপঞ্জি। এখানে এক বছর ৩৫৪ দিন বা ৩৫৫ দিন ধরে ১২ টি আরবি মাস নিয়ে গঠিত। এই ১২ টি মাস হল -- ১. মুহররম ২. সফর ৩. রবিউল আউয়াল ৪. রবিউস সানি ৫. জমাদিউল আউয়াল ৬. জমাদিউস সানি, ৭. রজব ৮. শা'বান ৯. রমজান ১০. শাওয়াল ১১. জ্বিলকদ এবং ১২. জ্বিলহজ্জ। আসলে চান্দ্রমাস হয় ২৯ বা ৩০ দিনে। ফলে হিজরী সন প্রতি বছর কয়েকদিন করে এগিয়ে যেত। কিন্তু মাসের অবস্থানের সঙ্গে কৃষির অনেক কিছু জড়িয়ে থাকত। বিশেষ করে হিজরী সন চান্দ্ৰমাস কেন্দ্রিক হওয়াতে কৃষিবর্ষের সম্পর্কের একটা বড় দূরত্ব তৈরি হত। বিশাল একটা সমস্যা তৈরি হত প্রজাদের মধ্যে। আসলে প্রজারা প্রধানত চাষের ফসল উঠলে তা বিক্রি করে রাজাকে খাজনা বা কর দিত। কিন্তু কৃষিবর্ষ শেষ না হলেও হিজরী সন মোতাবেক খাজনা জমা করতে হত সংক্রান্তিতে। যা থেকেই এসেছে "শিরে সংক্রান্তি" প্রবাদটি। ফলে চাষিদের বা প্রজাদের থেকে খাজনা আদায়ে অনেক অসুবিধার জন্ম নিল। তখন সম্রাট আকবর প্রজাদের এই অসুবিধার কথা ভেবে তাঁর রাজদরবারের জ্যোতির্বিদ আমির ফতেউল্লাহ সিরাজীকে বললেন যে, চান্দ্রকেন্দ্রিক ‘হিজরী' বর্ষ ও সূর্যকেন্দ্রিক বর্ষপঞ্জি মিলিয়ে একটি নতুন বর্ষপঞ্জি তৈরি করতে। এখানে উল্লেখ্য যে, গুপ্ত সাম্রাজ্যের আমলে চলছিল গুপ্ত সংবৎ। সেন রাজবংশের আমলে চলছিল শকাব্দ। । আকবরের সময় ভারতে প্রচলিত ছিল এগুলো ছাড়াও কলাব্দ, বিক্রমাব্দ, শালিবাহন অব্দ, লক্ষ্মণ সংবৎ, হর্ষাব্দ, সিকান্দার সন, জালালি সন, পালাব্দ ইত্যাদিইত্যাদি সাল। এগুলি সবই আঞ্চলিকভাবে প্রচলিত ছিল। সারা ভারত জুড়ে ছিলনা। 

আকবরের নির্দেশ মতো জ্যোতির্বিদ আমীর ফতেউল্লাহ সিরাজী সম্ভবত ১৫৮৪ সালের ১১ ই মার্চ কৃষিভিত্তিক বর্ষপঞ্জি তৈরি করলেন। নাম দিলেন 'ফসলি সন'। এটিই বর্তমান সময়কার বঙ্গাব্দের হিসাব। ১৫৮৪ সালে আমীর ফতেউল্লাহ সিরাজী এই বঙ্গাব্দ তৈরি করলেও, যেহেতু সম্রাট আকবর ১৫৫৬ সালে মসনদে বসেন, তাই ১৫৮৪ সালে জন্ম নেওয়া 'ফসলি সনের' হিসাব রাজকার্যের সুবিধার্থে ১৫৫৬ সাল থেকেই গণনা শুরু হয়েছিল (২০২৩ - ১৫৫৬ = ৪৬৭ + ৯৬৩ হিজরী সন = ১৪৩০ বঙ্গাব্দ)। আর বঙ্গাব্দের প্রথম মাসের প্রথম দিনটিই হল পয়লা বৈশাখ। তাই মনে করা হয় যে, সম্রাট আকবরের আমল থেকেই পয়লা বৈশাখ বা নববর্ষ উৎসব চলছে। তবে বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁয়ের সময় থেকেই এ রাজ্যে হালখাতার সূচনা বলে অভিমত অনেকের। এটিকে লাল খাতা বা খেরোর খাতাও বলে থাকেন অনেকে। 
এখন আর আগের মতো পুরনো ধরনের খেরো খাতার প্রচলন নেই। লাল কাপড়ে মোড়া মোটা সুতোর সেলাই করে জড়ানো লম্বা খাতার পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে লম্বা লম্বা অফিস রুল টানা খাতা৷ এতে আছে পিচবোর্ডের মলাট। সেগুলো অবশ্য লাল রঙের হয়। অনেক যায়গায় ছোট খাতা ব্যবহৃত হচ্ছে ইদানিং। রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, "পয়লা বৈশাখের দিন সকালে যে বিশেষ ধরনের খাতাটিতে হালখাতার হিসেব লেখা শুরু করা হতো, তাকেই বিদ্যানিধি মশায় ‘নূতন খাতা' বলে উল্লেখ করেছেন। আর এই খাতাটিরই চালু নাম ছিল খেরোর খাতা। খেরোর খাতা নামটি কিন্তু খুবই অনন্য। খেরো কথাটি এসেছিল ক্ষার শব্দটি থেকে। গামছার মতো এক ধরনের জ্যালজেলে কাপড়কে, ক্ষার জাতীয় লাল রং মেশানো মাড়ের মধ্যে চুবিয়ে টুকটুকে লাল করে, তারপর শুকিয়ে নিয়ে লেইয়ের আঠা দিয়ে একটি মোটা খাতার মলাটের নরম কাগজের উপর ভালোভাবে আটকে দেওয়া হতো। লাল রং শুভ জিনিসের প্রতীক বলেই খেরোর খাতার মলাটে এই রং ব্যবহার করা হতো। আর উপর থেকে একটি সাদা মোটা টনসুতো আড়াআড়ি জড়ানো থাকত খাতাটিকে ঘিরে।খেরোর খাতার প্রথম পাতায় সিঁদুর দিয়ে আঁকা হতো একটি ছোট্ট মাঙ্গলিক চিহ্ন। সিঁদুরে ডুবিয়ে দেওয়া হতো মুদ্রা বা পয়সার ছাপ। এই খাতাটিতে ওইদিন, মানে সাল পয়লায় প্রথম দিনের জমা খরচের হিসেব লেখা শুরু করার আগে ফুল ধান দূর্বা দিয়ে পুজো করা হতো।"

যাইহোক, হালখাতা উৎসবটি হয়তো কুলীন উৎসব নয়। কিন্তু কিছু লৌকিক উপচার আর নিয়মনীতি এখানে পরিলক্ষিত হয়। কবির কবিতায় --
"বদলে যাওয়ার ডাক শুনে চল
নতুন নেশায় মাতি,
দুঃখ যত মিটে দিয়ে আয়
সুখ সাগরে ডুবি।

ছুটে আয় যত পুরনো আর
মরচে ধরার দল,
নোংরা ডোবার পঁচা জলে আজ
ফুটাবো শতদল।

জীর্ণ খাতার ছিন্ন মলাট
দে ফেলে দে ছুঁড়ে,
নানান রঙের ফুল আকা এক
দেব রে আজ জুড়ে।

শান্ত হব দুর করে আজ
আছে যত ব্যথা,
নতুন ধাঁচে গড়ব রে আজ
জীবনের হালখাতা।"
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇




Post a Comment

0 Comments