জ্বলদর্চি

পিঠফোঁড় /ভাস্করব্রত পতি

পশ্চিমবঙ্গের লৌকিক উৎসব, পর্ব -- ৬৮

পিঠফোঁড়

ভাস্করব্রত পতি

একনাগাড়ে ঢাকের বাদ্যি। ভক্তদের উন্মত্ত নৃত্য। তাঁদের মাঝে দুই নায়ক। কালো চামড়ার ওপর জবা আর কল্কে ফুলের মালায় ঢাকা। ওঁদের পিঠ ফোঁড়া হবে। ভোঁতা মরচে পড়া লোহার বাঁকানো ছুঁচ (কালবুথ) দিয়ে গেঁথে ৪৩ ফুট উঁচু চড়ক গাছে ঘুরতে হবে বন বন করে। রক্ত পড়ুক। যন্ত্রণা হোক। ব্যথায় মোচড় দিয়ে উঠুক বুকটা। তবুও তো দর্শকদের হাততালি মিলবে। কড়কড়ে নোট মিলবে। সংসারের ভুখা পেটগুলায় অন্ন জুটবে।

এঁদের গ্রামবাংলার মানুষ ‘পিঠ ফোঁড়ে’ বলেই জানে । চৈত্র সংক্রান্তিতে গাজন মেলায় এঁদের এধরণের কীর্তি দেখতে ভিড় জমে মেলায়। নিজের শরীরে অমানুষিক কষ্টের বোঝা চাপিয়ে মানুষদের আনন্দ দিয়েই এঁরা পয়সা পায়। ফি বছর এভাবেই এঁরা নির্দিষ্ট সময়ে কিছু পয়সা কামিয়ে নেয় মৃত্যুকে শিয়রে আটকে রেখে। এটাই এঁদের বাপ ঠাকুরদার পেশা। বহু বছর আগে যা শুরু হয়েছিল, সেই জান্তব পেশা আজকের মোবাইল, ল্যাপটপ, পামটপের যুগেও কোথাও কোথাও টিকে রয়েছে তা। হয়তো টিম টিম করে। কিন্তু জীবন যন্ত্রণার পরিমাণ একতিলও কমেনি। বাংলার এক অন্যতম যন্ত্রনাদায়ক লৌকিক উৎসব এটি। চড়ক উৎসবের সাথে সম্পৃক্ত এই পিঠফোঁড়। তবে সব চড়ক গাজনে পিঠফোঁড় চড়ক হয়না। 
চড়কগাছে আড়াআড়ি রাখা বাঁশের সঙ্গে পিঠফোঁড়েকে বাঁধা হয়েছে ঘোরানোর জন্য

দেশ' পত্রিকায় (প্রথম বর্ষ, ১ লা বৈশাখ, শনিবার, ১৩৪১, পৃষ্ঠা : ১৯-২১) অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ লিখেছেন, "চড়কপূজার প্রথম প্রবৃত্তি কেমন করিয়া হইল, তাহা ঠিক বলা যায় না। তবে হরিবংশে বিষ্ণুপর্বে চড়কের কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়। শোণিতপুরে রাজা বাণও যখন অনিরুদ্ধকে আটকান, সেই সময় শ্রীকৃষ্ণের সহিত বাণের যুদ্ধ বাধে। বাণের ছিল হাজার হাত — কৃষ্ণ সেগুলি বাণে বিদ্ধ করিয়া বাণের মাথা কাটিতে গেলেন, এমন সময় শিবভক্ত বাণের এই দুর্দশা দেখিয়া মহাদেব স্বয়ং উভয়ের মধ্যে দণ্ডায়মান হইয়া বাণকে রক্ষা করেন। বাণ তখন অনবরত নৃত্য করিতে লাগিলেন। আশুতোষ খুসী হইয়া বাণকে বর দিলেন, — আমার যে ভক্ত উপবাসী থাকিয়া বাণবিদ্ধ হইয়া নৃত্য করিবে, সে আমার পুত্রত্ব প্রাপ্ত হইবে।" 

পিঠফোঁড়, বাণফোঁড়, রজ্জুফোঁড়, আগুনঝাঁপ ইত্যাদি আসলে নিজেদের দেহকে কষ্ট দিয়ে দেবতার সামনে নিজেকে উৎসর্গ করার অভিপ্রায়। এই প্রথা অত্যন্ত কষ্টদায়ক এবং যন্ত্রণাদায়ক। তবুও প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে কিছু মানুষ এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। 

বৃহদ্ধর্মপুরাণের উত্তরখণ্ডের নবম অধ্যায়ে রয়েছে যে দেহ সম্পীড়ন করে শিবপূজা করলে অশ্বমেধ যজ্ঞের মতো পুণ্য হয় এবং ফললাভ অর্জিত হয়। এখানে আছে --
“চৈত্রে শিবোৎসবং কুর্যান্ নৃত্যগীতমহোৎসবৈঃ। 
স্নায়াৎ ত্রিসন্ধ্যাং রাত্রৌ চ হবিষ্যাশী জিতেন্দ্রিয়ঃ। শিবস্বরূপতাং' যাতি শিবপ্রতিকরঃ পরঃ। 
ক্ষত্রিয়াদিষু যো মতো দেহং সংপীড়া ভক্তিতঃ॥
অশ্বমেধফলং তস্য জায়তে চ পদে পদে। সর্বকর্মপরিত্যাগী শিবোৎসবপরায়ণঃ ॥ 
ভক্তৈর্জগিরণং কুর্যাৎ রাত্রৌ নৃত্যকুতূহলৈঃ। নানাবিধৈৰ্মহাবাদ্যৈর্ন ত্যৈশ্চ বিবিধৈরপি।।
নানাবেশধরৈর্ন ত্যৈ প্রীয়তে শঙ্করঃ প্রভুঃ। 
কিমলব্ধং ভগবতি প্রসন্নে নীললোহিতে॥ 
তস্মাৎ গর্বপ্রযত্নেন তোষণীয় মহেশ্বরঃ। 
শঙ্খবাদ্যং শঙ্খতোয়ং বর্জয়েৎ শিবসন্নিধৌ।।গ্রামাদ্বহিরিমং শম্ভোরুৎসবং কারয়েমুদা। 
উপোষ্য হুত্বা সংক্রান্ত্যাং এতমেতৎ সমৰ্পয়েৎ।”

এঁদের পিঠ ফোঁড়ার নেশা মদিরার নেশাকেও হার মানিয়ে দেয়। ফলে বাংলা বছরের শেষ দিনটিতে এঁদের আর ধরে রাখা যায় না চার দেওয়ালের আঙ্গিনায়। উৎসবের আঙিনায় মৃত্যুকে নিয়ে খেলা করে এঁরা। বেরিয়ে পড়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে। ভোলেবাবার চরণে সঁপে দেয় নিজেদের। আর মন থেকে উথলে ওঠে 'স্ল্যামডগ মিলিওনিয়ার'-এর গান—“জয় হো” !!

কেউ কেউ খুব ছোট থেকেই পিঠ ফোঁড়ায় জড়িয়েছেন। ১৩ - ১৪ বছর বয়স থেকেই হাতেখড়ি (পিঠে ছুঁচ)। প্রৌঢ় না হওয়া পর্যন্ত টানা বছর ধরে তা করে চলেন অনায়াসে। সারা পিঠে অসংখ্য দাগ। সেগুলোই এঁদের পাথুরে জীবনের পরিচয়বাহী। কেউ কেউ কোনও কোনও বছরে তিনবার করেও পিঠ ফোঁড়েন। চৈত্র মাসে একই দিনে দু'বার এবং ফের বৈশাখ মাসে বৈশাখী গাজনের সময় একবার।

বহু বছর আগে থেকেই অবশ্য এই লৌকিক উৎসবের প্রথাটিকে বন্ধ তথা রদ করার ফরমান জারি করা হয়েছিল। যদিও সেসব কিছুই মানা হয়না। ১৯৩৪ সালে অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ লিখেছিলেন, "১৮১৪ খ্রীস্টাব্দের কিঞ্চিৎ পূর্বে চড়কের বীভৎস কাণ্ড দেখিয়া পুলিশ ইহা বন্ধ করিবার চেষ্টা করে। কিন্তু ভারতের বড় বড় সহর ব্যতীত অন্য কোনও স্থানে এই উৎসবের বীভৎস ব্যাপার বন্ধ হয় নাই৷ অবশেষে ১৮৬৩ সালের নূতন আইনে এই উৎসব একরকম উঠিয়া গিয়াছে। যেখানে পূজা হয় সেখানে বাণ, বঁড়শী প্রভৃতি বিদ্ধ করিবার প্রথা উঠিয়া গিয়াছে৷"
চড়কগাছে ঘুরছে পিঠফোঁড় ব্যক্তি

পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু গ্রামে এধরনের বিচিত্র পেশার ‘পিঠ ফোঁড়ে’-রা বাস করেন। বর্ধমান জেলার অজয় নদীর ধারে কিছু গ্রামেও এঁদের দেখা যায়। এছাড়া পশ্চিমবাংলার অন্যান্য বেশ কিছু এলাকাতেও প্রাচীন এই লৌকিক প্রথা টিকিয়ে রাখা লোক অল্প বিস্তর রয়েছে। পিংলার নকুল দাস, বিজয় দাস, রাগপুরের হারু দাস, গুরুপদ দাস এবং সনাতন সাঁতরা, তপন দাস, দুলাল সাঁতরা, বেনু দাসরা একই পথের পথিক। একই কাজে হাত পাকিয়েছেন। সাধারণত প্রতি মেলায় দু'জন করে পিঠ ফোঁড় দেখান। দুজনে পান মৌটামুটি ভালো অঙ্কের টাকা। সেইসঙ্গে নতুন গামছা, নতুন কাপড় আর পেট ভরা খাবার। এর জন্যই দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে বছরের শেষ দিনটায় মৃত্যুর সাথে এক ভয়ঙ্কর লৌকিক উৎসবে মেতে ওঠেন এঁরা। পিঠফোঁড় করার দিন কিছু উপচার মেনে চলে এঁরা। সারাদিন নিরামিষ খাবার খায়। ভাত এড়িয়ে চলে। তবে আকন্ঠ মদ খেতেই হয়। পিঠের চামড়া টেনে কালবুথ গেঁথে দেন ফোঁড়নদার। তখন মুখের মধ্যে দুগালে দুটো গোটা সুপুরি রাখে। যাতে না দাঁতকপাটি লাগে। আর চড়কগাছে ঝুলে আসার পর চামড়ার মধ্য থেকে লোহার আঁকসি সহ দড়ি বের করে নেওয়ার পর চামড়ার ফুটো অংশে ঠেসে লাল সিঁদুর ভরে দেওয়া হয়। কোনো মলম বা গাছের রস ব্যবহার করা হয় না। তারপর একটা নতুন গামছা দিয়ে টাইট করে ঐ অংশটি বেঁধে দেওয়া হয়। ব্যাস, এতেই ধীরে ধীরে চামড়ার গর্ত পূরণ হয়ে যায়। সবই নাকি ভোলেবাবার মহিমা। 

অমৃতলাল শীল 'প্রবাসী' পত্রিকায় (১৩১৯) এই বাণফোঁড় তথা শারীরিক কষ্টদানের বিষয়ে উল্লেখ করতে গিয়ে একটা জীবন্ত বিবরণ তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, "বাণ ফোঁড়া ব্যাপার বীরত্বপ্রকাশক। বর্তমান গম্ভীরা ও গাজনে তরবারি, বল্লম ইত্যাদি লইয়া ভক্তগণ নৃত্য করে। কুটীচক নামক শৈব পন্থিগণ আজিও খনিত্র ও কৃপাণ ধারণ করিয়া থাকে। শৈব নাগা সন্ন্যাসিগণ প্রকৃত প্রস্তাবে যৌধেয় জাতি; তাহারাও কৃপাণ খনিত্র ব্যবহার করে। বীরকর্ম্মে সমাজকে প্রবুদ্ধ রাখিবার জন্য জলাচরণীয় সমাজেও এই প্রশংসাসূচক বীরকর্ম্ম বাণফোঁড়ার প্রচলন ছিল। এই সকল জাতিরাই তখন হিন্দু জমিদারগণের পদাতিক দলভুক্ত ছিল। সময়ে সময়ে এই দলই দেশে ডাকাতি করিত।"

আগের চেয়ে ‘পিঠ ফোঁড়ে'-র সংখ্যা কমে গেলেও মজুরি বেড়েছে বহুগুণ। একসময় মিলত ১৫ টাকা মাত্র। এখন এক একজন পায় ৫০০০ টাকার কাছাকাছি। লোহার তৈরি ছুঁচ দিয়ে পিঠে গাঁথা হয়। একে 'কালবুথ' বলে। আংটার মতো আটকে থাকে পিঠের চামড়ায়। শনের দড়ি দিয়ে তা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয় বাঁশের প্রান্তে। এখন অবশ্য নাইলনের দড়ি ব্যবহার করা হয় শনের দড়ির আকাল হওয়ায়। মঙ্গলপুর গ্রামের নিখিল রানা ঐ বিশেষ ধরণের ছুঁচ তৈরি করে দেন পিঠ ফোঁড়েদের জন্য। 
পিঠের ছাঁদা অংশে চামড়ার মধ্যে সিঁদুর ঢোকানো চলছে

পিঠ ফোঁড়ার সময় যন্ত্রণা হয় না? তবে সে সময় পিঠ ফোঁড়েরা যন্ত্রণা ভুলতে আকন্ঠ মদ খেয়ে থাকেন। মদের নেশা কেটে গেলেই পিঠের যন্ত্রণার তীব্রতা চাগিয়ে ওঠে। অন্তত ৩ - ৪ দিন সেই যন্ত্রণার রেশ থাকে সারা গায়ে। এজন্য দরকার মানসিক শক্তি। ভাত খাওয়া চলে না। শুকনো জাতীয় খাদ্য আর নানা ফল খেতে হয়। গরিব মানুষ। দামী ফল কেনার পয়সা কোথায়? স্রেফ শসা খেয়ে কাটান বেনু দাসেরা। 

ফ্যানি পার্কস নামে এক বিদেশীর বিবরণে পাই এই যন্ত্রনার উপাখ্যান। সেখানে ধনীদের অর্থের কাছে গরিবের শিরদাঁড়া বিক্রির মাধ্যমে পুণ্যার্জনের অকপট স্বীকারোক্তি পাই। তাঁর ধারাবিবরণীতে রয়েছে -- "কয়েকজন সাধু মাথার উপরে একহাত তুলে চক্ষু উলটে বসেছিল। একদল নীচজাতের হিন্দু বাহুর মাংসপেশি এফোঁড় ওফোঁড় ছিদ্র করে তার ভিতর দিয়ে বাঁশের লাঠি ও লৌহশলাকা পুরে ঢোলের বাজনার তালে তালে বীভৎস ভঙ্গিতে তাণ্ডবনৃত্য করছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ লৌহশলাকা দিয়ে জিভ ফুঁড়ে বাহাদুরি দেখাচ্ছিল জনতার কাছে। কয়েক গজ দূরে তিনটি বড়ো বড়ো কাঠের খুঁটি মাটিতে পোঁতা ছিল। প্রায় তিরিশ ফুট লম্বা এক একটা খুঁটি, তার মাথায় আড়ে একটি বা দুটি করে বাঁশ বাঁধা। যে খুঁটির মাথায় একটি বাঁশ বাঁধা আর একদিকে একটি লোক ঝুলে রয়েছে, আর একদিকের লম্বা দড়ি ধরে নীচের লোকজন উন্মত্তের মতন তাদের পাক দিচ্ছে তো দিচ্ছেই। ঘোরার শেষ নেই, পাকেরও শেষ নেই। উপরে ঘুরছে যারা তারা বোধ হয় বেশি পুণ্যবান, কারণ একটি থালা ভর্তি করে ফুল-বাতাসা নিয়ে উপর থেকে তারা ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং নীচের লোকজন মহা উল্লাসে সেগুলি কুড়িয়ে নিচ্ছে দেবতার প্রসাদের মতন। কেউ কেউ বুকে পিঠে কাপড় না জড়িয়েই হুকবিদ্ধ হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছিল। প্রচুর পরিমানে নেশা করে, গাঁজা-আফিম খেয়ে তাদের চোখমুখের চেহারা পিশাচের মতন ভয়ংকর দেখাচ্ছিল। নীচজাতের হিন্দুরা শুনেছি চড়কপূজার অত্যন্ত ভক্ত। পূজা উৎসবে যোগদানকারীদের মধ্যে তাদের সংখ্যাই বেশি। এরকম একটা পৈশাচিক ভয়াবহ উৎসব আর কোথাও দেখিনি। এই ধরনের উৎসবে দুর্ঘটনা ঘটাও স্বাভাবিক। চড়কপূজায় শতকরা তিন চারজন লোক মারাও যায়। ধনীলোকেরা টাকা পয়সা দিয়ে গাজনের সন্ন্যাসীদের চড়ককাঠে চরকিপাক খাওয়ান পুণ্যার্জনের জন্য। এইভাবে প্রকৃসি দিয়েও নাকি পুণ্যলাভ করা যায়।" 
সবশেষে পিঠে এভাবেই গামছা বেঁধে রাখা হয় পিঠফোঁড়েদের

অনেক সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে পিঠফোঁড়েদের। তবুও তাঁরা ভয়ে পিছিয়ে যায়না। 'বেঙ্গল হেরল্ড' পত্রিকায় ১৮৩৭ এর ২২ শে এপ্রিল এক পিঠফোঁড় সন্ন্যাসীর চড়ক গাছের দড়ি ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ছাপা হয়েছিল। যা পড়লে আজও শিহরিত হতে হয়। সেখানে বিবরণ ছিল -- "চরকপূজার অতিঘৃণ্য ব্যবহার ১২ তারিখে দৃষ্ট হইল। ঐ দিবসীয় অপরাহ্ন সাড়ে পাঁচ ঘণ্টাসময়ে দক্ষিণ ইটালির রাস্তার পশ্চিম দিগবৰ্ত্তি প্রথম গলির মধ্যে রাধাকান্ত মুন্সীনামক এক ব্যক্তির ভূমিতে চরকগাছ প্রোথিত হইয়াছিল তৎসময়ে ঐ স্থানসমূহ সৰ্ব্বজাতীয় দিদুক্ষু লোকেতে পরিপূর্ণ হইয়া অতিযুব এক ব্যক্তিকে পাক খাইতে দেখিতেছিল এবং তৎকালে ঐ মুন্সীর চাকরবাকর ও অন্যান্য অত্যন্ত কলরব করিতেছিল কিন্তু যে রজ্জুতে সন্ন্যাসী ঘুরিতেছিল তাহা দৈবাৎ ছিঁড়ে যাওয়াতে ঐ ব্যক্তি বেগে গিয়া ৬০ হাত দূরে পড়িল পরে উঠাইয়া দেখা গেল যে শরীরটা একেবারে চূর্ণ হইয়া গিয়াছে মুখখান পিণ্ডাকার প্রায় কোন অঙ্গ অবিকল ছিল না। উত্তর ইটালির রাস্তার দক্ষিণ পশ্চিম পার্শ্বস্থ গারদের নিকটে অপর একজন সন্ন্যাসী পিঠ ফুঁড়ে ঘুরিয়াছিল অন্য এক সন্ন্যাসী মদ্যপানে মত্ত হইয়া জঙ্ঘাতে বাণ বিদ্ধ করত প্রায় তিন পোয়া ঘণ্টাপৰ্য্যন্ত ঘূর্ণায়মান ছিল পরে তাহার অবরোহণসময়ে হুঁস হইয়া কহিল যে অত্যল্পকালমাত্র আমি পাক খাইলাম বোধ হয়।" এরকম দুর্ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে। তবুও মানুষ এক অমোঘ আকর্ষণে ছুটে যায় নিজেকে কষ্ট দিতে। অনেকে ভক্তিতে, তবে বেশিরভাগই পেটের তাগিদে। এইসব পেটপূজার কুশিলবদের টাকার বিনিময়ে ভাড়া করেন চড়ক কমিটির লোকজন। প্রাচীন এই লৌকিক উৎসবকে ঘিরে থাকে যন্ত্রণার আতিশয্য। 

পেশায় কিন্তু এঁরা দুলে। মজুর খাটার পাশাপাশি মাছ ধরা, কুলো ধামা তৈরি করা, পাল্কি বহন করা ইত্যাদি কাজ করেন। জমি জমা খুবই কম। পরের জমিতে মুনিষ খেটেই সংসার চলে। পিঠ ফোঁড়ার কাজ ছাড়তে মন চায় না? বাড়ির লোক বারণ করে না? ছোট ছোট নাতি নাতনীদের জড়িয়ে ধরে এঁদের উক্তি, “এঁদের ছেড়ে কে আর সাধ করে মরতে যেতে চায়? কিন্তু পাবলিক চায় না। তাঁরা চায় খেলা। মৃত্যুর সাথে খেলা। যন্ত্রণার সাথে সখীগিরি। আর তাই পাবলিক ডিমাণ্ড মেটাতে আমরা আজও পিঠ ফোঁড়ার কাজ করি। যন্ত্রণার সাথে ভাব করি!!"

জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇


Post a Comment

0 Comments