জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১২৯

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১২৯

সম্পাদকীয়,
ছোটোবেলায় পয়লা বৈশাখের দিন  চৈত্র সেলে কেনা নতুন জামা পরার আনন্দ আর পুজোর সময় পূজাবার্ষিকী কিনে পড়ার আনন্দ, কোন আনন্দটা বেশি এখন আর বলতে পারব না। তবে এখন যদি তোমরা কেউ পয়লা বৈশাখে বাবা মায়ের সঙ্গে কলেজস্ট্রীটে গিয়ে বই কেনো সেটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আনন্দের হবে তা জেনে রেখো। আমার সেই আনন্দ বাড়াতে মৃণাল আঙ্কেল সেই ছবিটা  তুলে আমাকে পাঠালো। আর আমিও সঙ্গে সঙ্গে সেটা প্রচ্ছদ করে নিলাম। কি আমার আনন্দ তোমাদের আনন্দ হয়ে গেল কিনা? জানতাম যাবে। অনুষ্কা কেক কাটার ছবি দিয়েছে। অনুষ্কা শুভ  জন্মদিন। রাণি আর সৌনকশৌর্যের আঁকা দেখেও খুব আনন্দ পেলাম। তোমাদের বন্ধু অস্মিতার লেখা একটা কল্পবিজ্ঞানের গল্প পড়ে এ বছরটা ফুল হয়ে ফুটে উঠল। আনন্দের কি আর শেষ আছে? দিদি - ভাইএর দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া শুনে আমার তো বেশ আনন্দ হচ্ছিল। কোন দিদি - ভাই? মানসী আন্টির গল্প পড়লেই জানতে পারবে। সবুজ কিশোরের কবিতা লিখে পাঠিয়ে আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছেন গৌতম আঙ্কেল। সবশেষে বলি নববর্ষের প্রথমেই গরমে হাসফাঁস করতে করতে আইস্ক্রিম বা কোল্ড্রিঙ্কস না খেয়ে এসো লাচুঙের নেকড়ে পড়ে নিই। ঠান্ডা দেশের গল্প শুনে আমার তো বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা ফিল হচ্ছে। তোমারাও পড়ে দেখো। আপার হিল এরিয়ায় গিয়ে কেমন লাগছে জানিও কিন্তু। সম্প্রতি গেল স্পেস ফ্লাইট ডে তা নিয়ে লিখেছেন দোলনচাঁপা আন্টি। এবারে কান্তিরঞ্জন জেঠু দারুণ পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠিয়ে আমাদের আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছেন। নতুন বছরে তোমরাও রাশি রাশি চিঠি পাঠিয়ে আমাদের আনন্দ বাড়িয়ে দাও। শুভ নববর্ষ, ১৪৩০।  - মৌসুমী ঘোষ।
ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
পর্ব ৮

শ্রীকান্ত অধিকারী


চুংথাং থেকে দুদিকে দুটো রাস্তা দুমুখো হয়ে নর্থ সিকিমকে ছুঁয়ে ফেলেছে। উত্তর পশ্চিম দিকে চলে গেলে লাচেন হয়ে গুরুদংমার। আর উত্তরপূর্ব দিকে গেলে লাচুং ছুঁয়ে ইয়ুম্থাং হয়ে জিরো পয়েন্ট। বরফ ঢাকা পাহাড় ক’টা পেরোলেই ওপারে চিন। অর্থাৎ চিন-তীব্বতের বর্ডার। 
তারপর লাসা,লামা,আইস বীয়ার আর তিব্বতি নেকড়ে। কথাগুলো ব’লে ছোটমামা রামসির দিকে তাকায়। 
-মানে ফরবিডেন সিটি। তিব্বতের রাজধানী! রামসি সোৎসাহে বলে।  
- হ্যাঁ ১৯৫১ সালে তিব্বত চীনা কমিউনিস্টদের নিয়ন্ত্রণে আসে। 
- তখন থেকেই নিষিদ্ধ শহর তাইতো? 
-ব্যাপারটা তা নয়, রাজনৈতিক যে কারণই থাক না মূল কারণ কিন্তু এর উচ্চতা। প্রায় ১৬  হাজার ফুট!বছরে আট মাস বরফে ঢাকা থাকে। তবে হ্যাঁ প্রাকৃতিক বাধাকে অতিক্রম করে বিশ্বের নজরে পড়ে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। 
-মানে বড় বড় গাছ, ঘন বন, পাহাড়ি নদী আর বরফ? 
-না রে এ সব জায়গা পড়া মুখস্থর মত বলে গেলে হয় না, উপলব্ধি করতে হয়। বহি দৃশ্যের গভীর ফিলিংসটা তোর ভিতরে যখন প্রবেশ করবে তখন আর তুই কথা বলতে পারবি না। শুধু দেখতেই থাকবি। 
-ছোট মামা আমাদের তো ওখানে যাওয়া যাবে না! শিঙির কথা শুনে সকলেই হেসে ওঠে। 
ছোট মামা বলে, এই কি কম কীসের! তোর চারপাশে যা রয়েছে প্রকৃতির নিস্তব্ধতায় বেড়ে ওঠা সরল গাছ গাছালি, নানা পাখি আর বুনো জন্তু জানোয়ার –তুই আগে চল তো লাচুং। 
-এখানে জন্তু জানোয়ার আসে নাকি? রাস্তায়? অনেকক্ষণ পর বড়মামির কথা শোনা গেল। ঘুম চটকে গেছে হয়তো।  
গাড়ির কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে গ্যাটসো উত্তর দিল, -ইধার নেহি হ্যায় মাইজি। ও তো আপার হিল এরিয়ায় থাকে। তবে কাভি কাভি নিচে নেমে আসে দেখা হ্যায়। ইধার কোই দেখা নেহি। কই ডর নেহি। 
--আপার হিল এরিয়া মানে? 
এবার রামসির মা বিষয়টা রামসিকে জানায়।– এই হিমালয় এরিয়ায় তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এপার মিডল আর লোয়ার পার্ট। এখানে ন’খানা রিজার্ভ ফরেস্ট আছে। মূলত আপার হিল এরিয়ায়। আর সেখানেই যত রাজ্যের বুনো জন্তু। না বৌদি নো চিন্তা নো ভয়। 
বড়মামির মুখটা প্রশস্ত হয়ে এলো। 
 -তবে কাছেই কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশানাল পার্ক। সেখান থেকে বেরিয়ে পড়তেই পারে 
হিমালয়ের কালো ভালুক কিংবা লেপার্ড। কি বল গ্যাটসো?-বড়মামার কথাতে গ্যাটসো কিন্তু হাসে না। বরঞ্চ সে উদাহরণ টানে, থ্রি মান্থ প্যাহেলে রেইনি সিজিনে এখানে লেপার্ড নেমেছিল। 
-আর নেকড়ে? শিঙি ভয়ে ভয়ে বলে। এখনো ও বড়মামির কোল ঘেঁষে বসে আছে।  
-নারে শিঙি নেকড়েরা এমনিতে খুব বাধ্য হয়। নিজের মা বাবার কথা শোনে। বুড়ো বয়সে মা বাবার সেবাও করে। শিঙির মা বলে,-নেকড়েকে আরবিতে কী বলে জানিস?–ইবনে আল বার । মানে ভালো ছেলে।এদের বিশেষ গুণ হলো এরা বছরের পর বছর অনেক দূর দূর যেতে পারে। তাই ওরা একা একা কোথা যেতে পারে কেউ বলতে পারে না। এই তো দু হাজার আঠারো সাল নাগাদ একটা নেকড়ে পরীক্ষা করার জন্য গলায় রেডিও ট্রান্সমিটার লাগিয়ে ছেড়ে দিয়ে ছিল। সেই কলারের মাধ্যমে জানা গেল প্রায় নয় হাজার মাইল ঘুরে বেড়িয়েছে পাহাড়ে আর বুনো ঘাঁসের জঙ্গলে শুধুমাত্র খাবারের খোঁজে।গড়ে এরা এক দিনে বারো থেকে পনেরো কিমি হেঁটে যেতে পারে। কাজেই কেউ বলতে পারে না যে নেকড়ে আসবে না।
 -না না সিকিমে সেভাবে নেকড়ে থাকার কোন রেকর্ড নেই।বড়মামা বেশ জোর দিয়ে বলে।যেগুলো আসে সে গুলো সব বুনো কুকুর কিংবা ভাম খটাসের মত কিছু ছোট ছোট বন্য প্রাণী। যদিও বা থাকে তবে লোকালয় থেকে অনেক দূরে। তাছাড়া আমি যতদূর জানি ভারতে নেকড়ের অবস্থা খুব সঙ্কটজনক। হিসাব বলছে ভারতে এখন মোট নেকড়ে আছে প্রায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজারের মত।
-বড়মামা বাঘ হাতি পাখিদের স্যাংচুয়ারি আছে নেকড়েদের নেই? রামসি বলে।  
-মহুয়াদোনার উলফ স্যাঞ্চুয়ারি। ঝাড়খণ্ডের লাতেহার জেলায়-বেতলা ন্যাশানাল পার্ক। ভারতবর্ষের একমাত্র নেকড়েদের অভয়ারণ্য। 
 -এক্কেবারে ঠিক বলেছেন দাদা।-রামসির মা বলে। দিনদিন মেরে ফেলার জন্য বা শিকার করার জন্য সেই বৃটিশ আমল থেকেই এই ইন্ডিয়ান নেকড়েদের জীবন সঙ্কটে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে তো দুশো বছর আগেই এদের শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা হয়।   
-তাই ওরাও এখন ঘন অরণ্যে লুকিয়ে থাকে। লোকালয়ে আসতে চায় না।-বড়মামা বলে। 
এই তো বছর দুয়েক আগে বাঁকুড়ার পাত্রসায়েরে নেকড়ে ঢুকে পড়ে একটা ঘরে। এতক্ষণ রামসির বাবা এই নেকড়ের গল্পে যোগ দেয় নি।-তবে শোনা কথা। সঠিক জানি না। 
-আসতেই পারে।কাছেই তো পাত্রসায়ের জঙ্গল রয়েছে।-রামসির মা বলে।তাছাড়া 
দুবরাজপুর কুন্ডহিতের জঙ্গলে নেকড়ে দেখা যাচ্ছে। তবে এগুলো সব ছাগল ভেড়ার খোঁজে গৃহস্থের গোয়ালঘরে ঢুকে পড়ে। 
  -তা না হলে এত মানুষ এখানে বেড়াতে আসে। রামসির বাবা অভয় জোগায়। 
-তবে ওরা ঘন জঙ্গলে থাকলেও বেশির ভাগ যে গোচারণ ভূমি বা অনুর্বর মানে যেখানে কোনো চাষ হয় না, বড় বড় ঘাঁস গজিয়েছে সেখান থেকেও বেরিয়ে আসে। রামসির মা বলে।  
-গ্যাটসো আশপাশ মে কোই অ্যাইসা গোচারণ ভূমি হ্যায়? ছোটমামাকে দেখা গেল বেশ সিরিয়াস ভাবে প্রশ্নটা করতে । 
-কেন যে তুই এমন দাঁতভাঙা হিন্দি বলিস? বলেছিলাম হিন্দিটা ভালো করে শিখে নে। তখন শুনলি না।– ছোট মামার কোনো উ ত্ত রের অপেক্ষা না করেই বড়মামা বলে,--আবার!
 কিছু বুঝতে বা বুঝতেই গাড়ি থামিয়ে গ্যাটশো খুব দ্রুত কিছু কাগজপত্র নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিস ভ্যানের কাছে গিয়ে কিছু বলে, মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে আবার গাড়িতে উঠে ভোঁ করে গাড়ি ছেড়ে দেয়। পিছনে পড়ে থাকে ঘন বনে হারিয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা পথ, আর পুলিশের ভ্যান। 
পাশ দিয়ে উঠে যাওয়া খাড়াই জমাট গ্রানাইট পাথরের অনুচ্চ পাহাড়। আর লাচুং থেকে বয়ে আসা লাচুং চু। একদিকে লাচুং চু আর লাচেন থেকে বেরিয়ে আসা লাচেন চু দুটো নদী মিশে হয়েছে তিস্তা। এটা সেই চুংথাঙেই মিশে গেছে। 
বড়মামা নামতে যাচ্ছিল, হয়তো কিছু বলত কিন্তু গ্যাটসো দ্রুত কাজ সেরে চলে আসার জন্য আর নামতে হল না। শুধু গজগজ করলো,--চেকিঙেরও একটা প্রসেস থাকা উচিৎ।
পেছনের গাড়িটা সমানে একসঙ্গে আসছে। 
  চলতে চলতে লাচুঙের দোরগোঁড়াই যখন পৌঁছোলো তখন সুর্য অনেকটা হেলে গেছে। মাঝে অবশ্য ভাত আর ওদের তৈরি মিক্সড ডাল আচার খেয়ে নিয়েছিলো। শিঙি ওর মামির কোলে ঘুমিয়েছে। এখন ছোট ছোট টিলার মত উঁচু উঁচু পাথুরে জায়গায় ছোট ছোট পাথুরে ঘর বা কাঠের পাটা দিয়ে বানানো চারচালা দেখা যাচ্ছে। রাস্তার পাশে ঘরগুলো থেকে দু এক জন করে লোক দেখা গেলেও কেউ যেন কিছুই দেখে নি এমন ভাব দেখিয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয়। রামসি আর শিঙি হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। 
গাড়ির গতি কি বেড়েছে! গ্যাটসোকে দেখা গেল একটু রিল্যাক্সড মুডে আছে। মুখে কিছু একটা চিবোচ্ছে। কাছ থেকে খুব জোরে জল পড়ার শব্দ কানে আসে,-একটানা। ওরা সবাই ছটফট করে ওঠে। সার দিয়ে লম্বা লম্বা গাছগুলো কখনো রাস্তাটাকে আড়াল করে দিচ্ছে। এমনি এক রাস্তায় বাঁক নিতেই ওদের গাড়িটা হঠ করে থেমে যায়। বড় মামা আর গ্যাটসো চুপ। গ্যাটসো ফিস ফিস করে-ইন্ডিয়ান ঢোল!  
( ক্রমশ)
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
অদ্ভুত ফুল
অস্মিতা ঘোষ
চতুর্থ শ্রেণী,সেন্ট জেভিয়ার্স ইন্সটিটিউসন,পানিহাটি

আমরা সবাই জানি ফুল একটা সুন্দর জিনিস। ফুল অনেক রংবাহিরি হয়। কিন্তু এই ফুলও অনেক সময় বিপদের কারণ হয়ে ওঠে। এসো আজ তোমাদের সেই গল্পই শোনাবো।
আমেরিকার এজিনো গ্রামে এক বিজ্ঞানী বাস করতেন। তার বাড়ির চারপাশে খুব বনজঙ্গল ছিল। কিন্তু তিনি একা থাকতেই পছন্দ করতেন। তিনি তাঁ্র গবেষণাগারে নানা ফুল ও লতাপাতা নিয়ে গবেষণা করতেন। তিনি একদিন লতাপাতা আনতে গভীর জঙ্গলে গেলেন৷ এবং লতাপাতা খুঁজতে খুঁজতে আরো গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করলেন। শেষে পথ হারিয়ে ফেললেন। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে একটা গুহা দেখতে পেলেন। গুহার মধ্যে ঢুকে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লেন। 
হঠাৎ একটা ফুলের গন্ধে ধড়মর করে উঠে বসলেন। খুঁজতে লাগলেন কোথা থেকে গন্ধটা আসছিল। কিছু দূরে একটা ফুল দেখতে পেলেন, যার থেকে এই গন্ধটা আসছিল।
তিনি ফুলটা দেখে খুব অবাক হলেন। কারণ এই ফুলটা তিনি আগে কখনো দেখেননি।  তিনি আনন্দে ছুটে গেলেন ফুলটার দিকে। তখন একটা অদ্ভুত জিনিস দেখতে পেলেন ফুলটার মধ্যে। যখন দূর থেকে দেখছিলেন তখন ফুলটার রঙ হয়ে গেল লাল। আবার যখন একটু একটু ঘোরালেন রঙ হয়ে গেল গোলাপী। এই দেখে বিজ্ঞানী প্রচন্ড অবাক হয়ে গেলেন।
তিনি বুঝতে পারছিলেন না এটা কি করে সম্ভব! তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে পরীক্ষা নীরিক্ষার জন্য বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতি বার করলেন। তারপর ফুলটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। 
পর্যবেক্ষণ করতে করতে কিছু একটা দেখে ভয় পেয়ে গেলেন। যেটা আর কিছুই না কয়েক লক্ষ জোড়া লাল চোখ। তিনি তাতেও পর্যবেক্ষণ থামালেন না। তখন ফুলটা বলে উঠল, তুমি আমাদের গুহায় কেন এসেছো? 
বিজ্ঞানী বললেন, আমি আমার গবেষণার জন্য ফুল নিতে এসেছি। 
এ কথা শুনে ফুলের মধ্যে থাকা চোখগুলো খুব রেগে গেল। তারা বিজ্ঞানীকে শত্রু ভাবতে লাগল। বলল, আজ থেকে হাজার কোটি বছর আগে আমরা আমাদের গ্রহ থেকে পৃথিবী দেখতে এসেছিলাম। আমরা এই পৃথিবীর রূপে মুগ্ধ হয়ে এই পৃথিবীতেই থেকে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোমাদের কাজকর্ম আমাদের অতি বিরক্ত করে তুলেছে। আমরা এই পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে চাই।
তখন বিজ্ঞানী বলল,তোমরা এমন কোর না।  আমি আমার বৈজ্ঞানিক শক্তি দিয়ে তোমাদের একটি সুন্দর পৃথিবী বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। যেখানে কোনো মারামারি ঝগড়াঝাটি নেই। মানুষের মিথ্যে অহংকার নেই।  তোমরা সেখানে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। কিন্তু তার জন্যে আমার শক্তিরও প্রয়োজন। 
কিন্তু ফুলগুলো বিজ্ঞানীকে বিশ্বাস করতে পারলো না৷ বিজ্ঞানী ফুলেদের কাছে একটা সুযোগের জন্য অনুনয় করতে লাগল। শেষ অব্ধি তারা রাজি হল। তখন গুহার পিছন দিয়ে তারা বিজ্ঞানীকে একটা পৃথিবীর মতো স্থানে নিয়ে গেল। সেখানে বিজ্ঞানী সারা জীবন ধরে গবেষণা করে চলল, পৃথিবীর মঙ্গল সাধনের জন্য।

অনুষ্কা মিত্র 
নবম  শ্রেণি, কালনা হোলি চাইল্ড স্কুল, কালনা, বর্ধমান

সবুজ কিশোর 
গৌতম বাড়ই 


সবুজ কিশোর জলে ভাসায় ডিঙা,
সবুজ কিশোর আজ উজান জলে।
জলের ওপর গাঙচিলেদের খেলা, 
ডাঙার গাঁয়ের সবুজ গাছের তলে।

মেঘপরীদের এক্কা-দোক্কার ধুম।।

কে খেলেছিস বল? দাড়িয়াবান্ধা,
ডাংগুলি আর পুতুল খেলার ঘর। 
রানুর ছেলে যেটা তুতুরাণীর বর,
সবুজ কিশোর জলেই দেশান্তর।

জল তো নয় জলের ভরা সাগর।।

সাগরজলে আঁধার করেই আসে,
সবুজ কিশোর ডিঙা করে ভাসে।
সিন্ধুফেনায় টুকরো আলো জ্বলে,
কিশোর দেখো ভাসে জল বাতাসে।

পেরিয়ে যাবে সাত সমুদ্দর দেশ।।

জিরিয়ে নেবে পাখির মতন সে,
খিদে পেলে খাবার খাবে শেষে।
মা তাকে খাবার পুঁটলি দিয়েছে, 
বিদেশ ঘুরেই ফিরবে অবশেষে।

সবুজ কিশোর ডিঙা জোরসে চলে।।

রাণি মণ্ডল 
চতুর্থ শ্রেণি, নাওভাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, তৈবেচারা, নদিয়া

এর নামও ভালোবাসা
মানসী গাঙ্গুলী

ফুটফুটে ছেলে দীপেন। টুকটুকে গায়ের রঙ। ঠোঁট দুটো দেখে মনে হয় লিপস্টিক মাখা, চোখ দুটো ঝকঝকে বুদ্ধিদীপ্ত কিন্তু তার মধ্যেও দুষ্টুমি মাখানো। বাড়িতে কেউ এলেই দীপেনকে আদর করেন। বলেন, "কী মিষ্টি ছেলে গো।" মা সঙ্গে সঙ্গে বলেন, "একদিন নিয়ে গিয়ে রাখো না, দেখবে কেমন। একদিন কেন একঘন্টা পরেই ফেরত দিয়ে যাবে।" তাঁরা বলেন, "এমন মিষ্টি ছেলের নামে এমন কেন বলছ গো? অবশ্য সব মায়েরাই নিজের ছেলের ব্যাপারে অমন বলে থাকেন।" তারপরই দীপেনকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করে বলেন, "মা-টা দুষ্টু, তাই না? মা-কে বকে দিই?" দীপেন একবার মায়ের দিকে তাকায়, একবার অতিথির দিকে আর মিটমিট করে হাসতে থাকে। চোখ দুটো থেকে তখন ওর দুষ্টুমি ঝরে পড়ে। দূর থেকে দিদি পাপিয়া বলে, "জানো না তো, ভাই খুব দুষ্টু। এখন তোমাদের সামনে ভালোমানুষ সেজে আছে।" দীপেন তাদের কোলের মধ্যে থেকে দিদিকে জিভ ভেঙায়। দিদি তা দেখে বলে, "দেখলে তো, বলে দিলাম বলে আমায় জিভ ভেঙালো।" তারা হেসে ওঠেন। দীপেনের মুখটা তুলে ধরে বলেন, "এ্যাঁ, তাই নাকি? দিদিকে ভেঙচি কাটলে তুমি?" দীপেন তাদের কোল থেকে ছুটে বেরিয়ে যায়। যাবার সময় দিদিকে আবার একটা ভেঙচি কেটে পালায় সেখান থেকে। মা এসে বলেন, "দেখলে তো, দুষ্টুটা সারাদিন দিদির পিছনে লেগে আছে। আর মেয়েটা আমার নিরীহ। 'ওমা ওমা' করে অস্থির করে তোলে।" ঘরের সবাই হেসে ওঠে।
     খুব ছোট থেকেই দীপেন বড় দুষ্টু। উত্তরবঙ্গের এক চা-বাগানে ওরা থাকে বাবার কর্মসূত্রে। চা-বাগানের প্রতিটি বাড়িই অনেকটা জায়গা জুড়ে। সামনে ফুলের বাগান তারপর শোবার ঘরগুলি একটা বিল্ডিংয়ে। কয়েকটা সিঁড়ি নেমে বিশাল উঠোন পেরিয়ে রান্নাঘর, খাবার ঘর, ঠাকুর ঘর আরেকটা বিল্ডিংয়ে। সেখানেই সারাদিনটা মা-ঠাকুমাদের কেটে যেত। খানিক তফাতে বিশাল বড় বাথরুম। সেখানে বিশাল বড় চৌবাচ্চা। এসব সাহেবদের প্ল্যানিং। তার পিছনে বিশাল বড় সবজিবাগান। সারাদিন সেখানে মালিরা কাজ করে চলেছে। এদিকে পিছনের বাগানে কলাগাছের ঝোপে বোলতা বাসা করেছে। কাজের লোক সেকথা এসে মাকে বললে দীপেন তা শুনে নেয়। কেউ কিছু বোঝার আগেই সে পিছনের বাগানে গিয়ে বোলতার চাকে একটা মাটির ঢেলা ছুঁড়ে মারে। আর যাবে কোথায়? ঝাঁক থেকে বোলতা উড়ে এসে তিনবছরের দীপেনকে ছেঁকে ধরে। তার 'ওরে বাবা গো' চিৎকারে মা ও কাজের লোক ছুটে বাগানে গিয়ে ওই অবস্থা দেখে। মালি দু'জনও দৌড়ে যায় তাকে বাঁচাতে। আকস্মিক এই ঘটনায় তারাও হতভম্ব। মাথার ওপর দিয়েও ভনভন করে উড়ে বেড়াচ্ছে অনেকগুলো। তাকে কোনোরকমে সেখান থেকে আনতে গিয়ে তারাও সকলে বোলতার কামড় খায়। দীপেনকে ৫-৬টা বোলতা কামড়ে দেয়। ছোট্ট বাচ্চা, তার ধুম জ্বর এসে যায়। বাবাকে অফিসে খবর দিলে তিনি ডাক্তার সঙ্গে নিয়ে বাড়ি আসেন। বোলতার হুল বার করা হয় চাবির গর্ত দিয়ে। ক'দিন জ্বরে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকে সে দুষ্টু, দুরন্ত ছেলেটা। এছাড়া দীপেনের আরও কত যে দুষ্টুমী ছিল তার সবটুকু বলে ওঠা দুষ্কর। কোনো কোনোদিন বাথরুমে ঢুকে চৌবাচ্চায় ডুব দিয়ে চান করে আসত। তখন ঐ বিশাল চোবাচ্চার জল বার করে তাকে ধুয়ে আবার ভরতে হতো। এছাড়া যখনতখন দিদিকে চিমটি কেটে পালাত। দিদি দৌড়ে পেরে উঠত না ভাইয়ের সঙ্গে, হাঁপিয়ে পড়ত। দূর থেকে ভাইকে বলত, "তোকে মারতে পারলাম না তো কী হয়েছে। তোর যখন বিয়ে হবে তোর বউকে ধরে মারব।" ভাই বুড়োআঙুলে কাঁচকলা দেখিয়ে, জিভ ভেঙিয়ে পালাত সেখান থেকে। ভাইবোনের এই নিত্যকারের ঝগড়ায় মা মাথা গলাতেন না একদম।
    একটু বড় হলে দীপেন গাছে উঠতে শিখে যায়। বাড়িতে পিয়ারা গাছে প্রচুর পিয়ারা ধরেছে। দীপেন গাছে উঠলে পাপিয়া নিচে গিয়ে দাঁড়ায়। "ভাই আমায় ক'টা পিয়ারা পেড়ে দে না রে, স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের দেব।" সেই দুষ্টুটা কী করল জানো? সুন্দর ডাঁসা ডাঁসা পিয়ারায় একটা করে কামড় দিয়ে দিদির দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলে, "এই নে, তোর বন্ধুদের জন্য নিয়ে যা।" পাপিয়া গাছে উঠতে পারে না, সে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে গিয়ে নালিশ করে। ততক্ষণে দীপেন গাছ থেকে নেমে চানে চলে গেছে। মা তখন ব্যস্ত ছেলেমেয়েদের স্কুলের ভাত, টিফিনের ব্যবস্থা করতে। নালিশ শোনার বা তার মীমাংসা করার সময় তখন তাঁর নেই। বলেন, "যা যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।" এছাড়া বাড়ির উঠোনের বড় জামগাছে কবে যেন তরতরিয়ে উঠে পড়তে শিখে গেল দীপেন। ঠাকুমা আদর করে 'বুবু' বলে ডাকতেন ওকে। "ওরে বুবু নাম, নাম, অত উঁচুতে উঠিস না।" "তুমি চুপ কর তো বুড়ি, আমার কিচ্ছু হবে না।" "দাঁড়া আজ তোর বাবা আসুক, সব বলব।" বাবা বুবুকে খুব ভালবাসতেন, বুবুও বাবাকে খুব ভালোবাসত, কিন্তু ভয়ও পেত বাবাকে। তাই ঠাকুমা বললে সে বলত, "চুপ কর না, নামছি তো।" ঠাকুমা বলেন, "হুুঁ হুঁ বাবা, পথে এসো।"
      অনেক দূরে স্কুল, বাসে করে যেতে হয়। প্রতিটি চা-বাগানে একটা করে প্রাইমারি স্কুল থাকে, কিন্তু হাইস্কুল দূরে। বিভিন্ন চা-বাগান বা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসে সেখানে। ওদের চা-বাগানেরই ছেলে নির্মল দীপেনের খুব বন্ধু। সে-ও তেমন দুষ্টু। দুই দুষ্টুতে তাই মিলেছে ভাল। স্কুল ছুটির পর দুই বন্ধু একসঙ্গে বেরিয়ে পড়ত হাঁটতে হাঁটতে। কিছুদূরেই জঙ্গল। কখনও সেখানে গিয়ে ওরা জঙ্গলের গাছ থেকে কুল পেড়ে আনত। জঙ্গলে অনেক বাঁশ গাছ, মাথায় ওদের দুর্বুদ্ধি চাপল। বাড়ি থেকে বড় ছুরি স্কুলের ব্যাগে নিয়ে চলল দীপেন। ছুটির পর জঙ্গলে গিয়ে ছুরি দিয়ে বাঁশের কঞ্চি কেটে তাই দিয়ে এক ধরনের অস্ত্র বানাত ওরা। একটা কঞ্চি কাটত একটু মোটা যার মাঝখানটা ফাঁকা থাকে। আরেকটা সরু, ঐ ফাঁক দিয়ে যেটা যাতায়াত করতে পারে। এবার তাতে দুটো নিমফল ঢুকিয়ে, সরু কঞ্চিটা ঢুকিয়ে নিমফলে চাপ দিলে তা অনেকদূর পর্যন্ত ছুটে যেত। অনেকটা পিচকারির মতো সিস্টেম। মাথায় বুদ্ধিও ছিল ওইটুকু বয়সেই। এইভাবে নিমফল ঢুকিয়ে কাউকে ছুঁড়ে মারলে তার খুব লাগতো। দূর থেকে ছুঁড়ত বলে ধরাও পড়ত না। যন্ত্র তৈরি করার সময় বাসের আওয়াজ পেয়ে ওরা দৌড়ে বাসে উঠে পড়ে। ঐ পথ দিয়েই বাস চলাচল করত। বাস ছেড়ে দেবার কিছু পরে ওদের খেয়াল হয় স্কুলব্যাগ বাঁশগাছের গোড়ায় পড়ে আছে। পরের স্টপেজে নেমে পড়ে ওরা। আবার অন্য বাস ধরে সেখানে হাজির হয়। বাসও ওদিকে অত ঘন ঘন পাওয়া যায় না। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে পরের বাসের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অন্ধকার নেমে আসে। তখন কতই বা বয়স হবে ওদের, দশ কী এগারো। অবশেষে পরের বাসে চেপে বাড়ি ফিরতে ঘন অন্ধকার। মা খানিক চেঁচামেচি করলেন। এ ছেলে নিয়ে তিনি আর পেরে ওঠেন না। এরকম আরও যে কত দুষ্টুমি আছে। একবার দুই বন্ধুতে মিলে জঙ্গলে ঢুকেছে। জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে গেলে পথ চিনে বেরিয়ে আসা কিন্তু খুব সহজ নয়। তাই ওরা যে পথে গিয়েছিল যাবার সময় গাছের কান্ডে ছুরি দিয়ে কেটে কেটে নিজেদের নামের আদ্যক্ষর এন ও ডি খোদাই করতে করতে ঢুকেছিল। এরপরও আরও খানিক ভেতরে ঢুকেছিল যেখানে কোনও বড় গাছের কান্ড পায়নি, তাই নাম খোদাই করা হয়নি। ওরা ভাবতে পারেনি ওইটুকু জায়গা পেরিয়েই ওরা হারিয়ে যাবে। আর চিনতে পারবে না। এদিকে বেলা পড়ে আসছে। আঁধার নামছে। ওদের মুখ শুকিয়ে গেছে। এইসময় একটি লোক কাঠ কুড়িয়ে মাথায় নিয়ে আসছিল। তাকে দেখে ওদের যেন ধড়ে প্রাণ এল। তার পিছন পিছন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসতে পারল। না হলে যে কী হতে পারত সেদিন, তা ভেবে দুই দুষ্টুরই মুখ শুকিয়ে আমসি হয়ে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরলে দু'জনের বাড়িতেই কপালে বকুনি জোটে কিন্তু তা ওদের গা- সওয়া হয়ে গেছে। এইভাবে দুষ্টুমি করতে করতে ওরা বড় হয়ে উঠল। দুষ্টুমি করলেও পড়াশোনায় কিন্তু তুখোড় ছিল দীপেন। ক্লাসে প্রতিবছর ফার্স্ট হতো, প্রায় প্রতিটি বিষয়ে হায়েস্ট মার্কস পেত। ইংরেজিতে ছিল তুখোড় আর অঙ্কে ফুল মার্কস তার বাঁধা। তাই ওর দুষ্টুমির কথা জানতে পারলেও শিক্ষকেরা ওকে ভালোই বাসতেন। বোর্ডের পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্ট করে স্কুলের নাম উজ্জ্বল করে দীপেন। শিক্ষকেরা খুব খুশি। এবার কলেজে যাবার পালা। বাবা কলকাতায় বাড়ি কিনেছেন কিছুদিন আগে। স্থির করেন সেখানে রেখেই ছেলেকে পড়াশোনা করাবেন। ইতিমধ্যে দিদি পাপিয়া দু'বছর আগে জলপাইগুড়ি কলেজে ভর্তি হয়েছে। সেখানে হোস্টেলে থাকে সে। মাঝে মাঝে বাড়ি আসতে পায়। কিন্তু দীপেনের যেন হল নির্বাসন। বাগানের সব বন্ধুদের ছেড়ে কলকাতা পড়তে যাবার সময় খুব মনখারাপ হল। তার যত দুষ্টুমির সঙ্গী, সাক্ষী তার এই বন্ধুরা। তখন ছোট, অত বুঝত না, বন্ধুদের সঙ্গে কালীপুজোর দিনে রাস্তার কুকুরদের লেজের সঙ্গে দড়ি দিয়ে লঙ্কা পটকা বেঁধে দিত। তারপর ধরিয়ে দিলে পটপট করে ফাটতে থাকলে ওরা ভয়ে ছোটোছুটি করত। তা দেখে দীপেনরা খুব মজা পেত। দিদি গিয়ে বাবাকে বলে দিলে সেদিন বাবা কিন্তু বকেননি। কাছে ডেকে বুঝিয়ে বলেছিলেন, "যেটা তোমার আনন্দের কারণ সেটাই কুকুরগুলোর ভয়ের কারণ। এমন কোনও কিছুতে আনন্দ করবে না কখনও, যাতে অন্য কেউ কষ্ট পায় বা ব্যথা পায়।" দীপেন বুঝেছিল তার অন্যায় হয়েছে। 
      দু'বছর আগে দিদির সঙ্গে বিচ্ছেদ তা-ও সয়ে গিয়েছিল। দিদি মাঝে মাঝে বাড়ি আসত, দেখা হতো, পিছনে লাগাও চলত। কিন্তু প্রথম প্রথম কলকাতা এসে খুব নিঃসঙ্গ লাগত দীপেনের তার বন্ধুদের সঙ্গে, তার দুষ্টুমীর সঙ্গীদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ না থাকায়। আস্তে আস্তে কলকাতায় বন্ধুবান্ধব হল, পড়াশোনার চাপ বাড়ল। পড়াশোনায় মনোনিবেশ করে ক্রমে বন্ধুদের সঙ্গে বিচ্ছেদ সয়ে গেল। এরপর দিদি জলপাইগুড়ি থেকেই এমএ পাস করে কলকাতায় বাড়িতে এসে বি.এড করতে শুরু করল। ভাইবোনে ছোট থেকে যতই যুদ্ধ হোক, ভালবাসাও ছিল খুব। মা এরমধ্যে  অসুস্থ হলে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য চলে এলেন। দুই ভাইবোন ও মা একসঙ্গে থাকতে লাগল। মা দিদির বিয়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। বিয়ে স্থির হলে সবাই মিলে চা-বাগানে গিয়ে বিয়ে দেওয়া হল জলপাইগুড়ির ছেলের সঙ্গে। বাসরে দীপেন দিদি-জামাইবাবুর সঙ্গে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করে পিছনে লেগে বাসর মাতিয়ে রেখেছিল। কিন্তু পরদিন দিদি শ্বশুরবাড়ি যাবার সময় বিছানায় উপুড় হয়ে দীপেন এত কেঁদেছিল সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল। এরপর দীপেন আবার কলকাতা ফিরে যায় কিন্তু দিদির একটু কিছু হয়েছে জানতে পারলেই চলে যায় জলপাইগুড়ি, তার শ্বশুরবাড়ি। এরপর জামাইবাবু কর্মসূত্রে শিলিগুড়ি চলে আসেন দিদিকে নিয়ে। ছুটি পেলেই দীপেনের একমাত্র গন্তব্যস্থান দিদিরবাড়ি। সেখানে গিয়ে দিদির সঙ্গে ঝগড়া বাধানোও তার চাই। দিদিও কোমর বেঁধে লেগে পড়ে। জামাইবাবু হাসেন ভাইবোনের কান্ড দেখে। সকলকে বলেন, "ঝগড়াটাই ওদের ভালবাসা।"
        বুড়োবয়সের চিত্রটাও সেই একইরকম রয়ে গেল ভাইবোনের। জামাইবাবু কলকাতায় চলে এসেছেন ছেলে হবার পরপরই। সে-ও বড় হয়ে গেছে। লেখাপড়া শিখে চাকরি করছে। দীপেন যথারীতি দিদিরবাড়ি গিয়েই দিদির পিছনে লাগা, দিদির বিরুদ্ধে জামাইবাবুকে ক্ষেপিয়ে দেবার চেষ্টা করতে থাকে। ভাগনা বলে, "দিদির কিছু হলে ছুটেও আসা চাই, আবার পিছনেও লাগা চাই।" জামাইবাবু বলেন, "ও তোরা বুঝবি না, ওটাই ওদের ভালোবাসা। জ্ঞান পৌঁছে দুই ভাইবোন একসঙ্গে বড় হয়েছে ঠিক এমনি দুষ্টুমি করতে করতে, আজও তার কোনও খামতি নেই। তবে দু'জনের প্রতি দু'জনের ওদের রয়েছে অগাধ ভালবাসা। তার বহিঃপ্রকাশটা তোর মামার অমনই। সেটা আমি বুঝি, অনেকদিন দেখছি তো। এমন নির্ভেজাল ভালবাসা আজকাল দেখা যায় না।"


স্মরণীয় দিবস
আন্তর্জাতিক স্পেস ফ্লাইট ডে (১২ই এপ্রিল)
কলমে - দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


জাতি সংঘের সাধারণ পরিষদ ৭ এপ্রিল ২০১১এ  ১২ই এপ্রিল দিনটিকে "আন্তর্জাতিক মানব মহাকাশ ফ্লাইট দিবস" হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
প্রতিবছর আন্তর্জাতিক স্তরে ১২ই এপ্রিল দিনটিতে মানবজাতির মহাকাশ যুগের সূচনা উদযাপন করার জন্য নিশ্চিত করা হয়। প্রতিটি দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবং রাষ্ট্র ও জনগণের মঙ্গল বৃদ্ধির পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে মহাকাশ যাত্রা বজায় রাখার জন্য এবং তাদের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে।
১২ ই এপ্রিল ১৯৬১ সাল ছিল প্রথম মানব মহাকাশ ফ্লাইট এর তারিখ। ইউরি গেগারিং (একজন সোভিয়েত নাগরিক) দ্বারা পরিচালিত হয় এই মিশন। এই ঐতিহাসিক ঘটনা সমগ্র মানবতার স্বার্থে মহাকাশ অনুসন্ধানের পথ খুলে দিয়েছে।
জাতিসংঘের 'সাধারণ পরিষদ' শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে সমস্ত মানবজাতির কল্যাণের জন্য বহিরাগত মহাকাশের অন্বেষণ এবং ব্যবহারের প্রচার ও সম্প্রসারণে মানবজাতির সাধারণ স্বার্থের গভীর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এছাড়াও সেখান থেকে পাওয়া সুবিধেগুলি সমস্ত দেশে প্রচারিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সৌনকশৌর্য দাস
অষ্টম শ্রেণী, বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতন,পশ্চিম মেদিনীপুর

পাঠপ্রতিক্রিয়া
( ছোটোবেলা ১২৮ পড়ে আলোচক কান্তিরঞ্জন দে যা লিখলেন) 

জ্বলদর্চি-র ছোটোবেলা ১২৮তম সংখ্যা, অর্থাৎ পত্রিকার একশো আঠাশ তম পর্বটি পড়ছিলাম। পড়্যে পড়তে ছোটোবেলার দিনগুলোতে বার বার ফিরে যাচ্ছিলাম।
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছ' বছরের ছাত্র জীবনে প্রতিবছর আমাদের, অর্থাৎ ছাত্রদের থাকবার হোস্টেলগুলো ( আমরা বলতাম - ভবন।  য্রমন অভেদানন্দ ভবন)  বদলে বদলে যেত। প্রতিটি ভবনে প্রতি মাসে হাতে লেখা দেওয়াল পত্রিকা নিয়মিত বের হত।
জ্বলদর্চি,  আমায় স্কুলজীবনের দেওয়াল পত্রিকার সেই দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। সম্পাদক এবং  পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে যা ছিল হাতে লেখা দেওয়াল পত্রিকা। আধুনিক যুগে তা-ই ওয়েব ম্যাগাজিন। ছোটদের জন্য সাহিত্যের স্রোতধারা বন্ধ হয়নি। সেই ট্র‍্যাডিশন সমানে চলছে - এটা ভেবেই খুব ভাল লাগছে। 
সম্পাদকীয় স্তম্ভটির ছত্রে ছত্রে স্নেহের যে সুর অন্তঃসলিলা নদীর মতো বয়ে চলেছে - বোঝাই যায় এটাই হচ্ছে পত্রিকাটির মূল প্রাণরস। শ্রীকান্ত অধিকারীর 'লাচুঙের নেকড়ে ' এবার থেকে আমায় নিয়মিত পড়তেই হবে দেখছি। বাপ রে বাপ। বর্ণনা আর ঘটনার উপস্থাপনায় কী মারাত্মক টান! একবার পড়তে শুরু করলে ছাড়া মুশকিল। 
ছোটোদের লেখা এবং ছোটোদের জন্য লেখা ছড়া এবং কবিতাগুলো খুব ভাল লেগেছে। আগের কয়েকটি সংখ্যাতেও ছোটোদের লেখা পড়েছি। এগুলি পড়লেই বোঝা যায় এরা আগামীদিনের সম্ভাবনাময় লেখক -কবি।  পাঠকের প্রতিক্রিয়া বিভাগের বানীয়া সাহার লেখাটি ভারি চমৎকার।
জ্বলদর্চি দিনে দিনে আরো উজ্জ্বল হোক - প্রাণ ভরে এই প্রার্থণা জানাচ্ছি।


Post a Comment

0 Comments