জ্বলদর্চি

শ্রীরামকৃষ্ণের সন্ন্যাসী সন্তানেরা-৭১/প্রীতম সেনগুপ্ত

পর্ব ৭১

শ্রীরামকৃষ্ণের সন্ন্যাসী সন্তানেরা

প্রীতম সেনগুপ্ত

 কলম্বোতে এসে পৌঁছনোর পর, ১৮ জুন স্থানীয় বিবেকানন্দ সোসাইটির পক্ষ থেকে অভেদানন্দজীকে বিশেষ সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করে সম্মানিত করা হয়। এই অনুষ্ঠানে আনন্দ কুমারস্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তাঁর। ভীষণ আনন্দিত হন কুমারস্বামীর সঙ্গে দেখা হওয়ায়। পরবর্তী সময়ে এই কুমারস্বামী ভারতীয় কলার একজন বিশিষ্ট ব্যাখ্যাতা হিসাবে প্রসিদ্ধ হন। এরপর ক্যাণ্ডির দন্ত মন্দির ও অনুরাধাপুরমে বোধিবৃক্ষ দর্শনান্তে তিন গুরুভ্রাতা ( অভেদানন্দ, রামকৃষ্ণানন্দ ও প্রেমানন্দ ) দক্ষিণ ভারতীয় বন্দর তুতিকোরিনে এসে পৌঁছন। এই পরিভ্রমণকালে অভেদানন্দজী বহু স্থলে ভাষণ দেন ও সব স্থানেই উষ্ণ অভ্যর্থনা পান। অভেদানন্দ ও তাঁর পূর্বোল্লিখিত গুরুভাইদ্বয় তুতিকোরিন থেকে এসে পৌঁছলেন মাদ্রাজে, ১৫ জুলাইয়ে। মাদ্রাজে তাঁকে চমৎকার অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করা হয়। সেখানে কয়েকদিন বিশ্রাম গ্রহণান্তে তাঁরা ব্যাঙ্গালোর, মহীশূর এবং আচার্য শঙ্কর প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্গেরী মঠ পরিদর্শন করেন। দক্ষিণ ভারত পরিভ্রমণান্তে মাদ্রাজ থেকে ট্রেনে এসে ২৩ অগাস্ট পৌঁছান পুরীতে। ব্রহ্মানন্দ, শিবানন্দ ও প্রেমানন্দ তাঁকে পুরী স্টেশনে নিতে আসেন। সেখান থেকে জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথদেব দর্শনের পর তাঁরা শশী নিকেতনে এসে ওঠেন।
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
 ৯ সেপ্টেম্বর অভেদানন্দ ও তাঁর গুরুভাইয়েরা হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছান এবং সেখানে কলকাতার বেশ কিছু বিশিষ্টজনসহ বিশাল জনতা বিপুল অভ্যর্থনা জানায় তাঁকে। কলকাতায় এক সপ্তাহ ছিলেন তিনি। ১২ সেপ্টেম্বর টাউন হলে এক স্মরণীয় সম্বর্ধনা জানানো হয় তাঁকে। সম্বর্ধনার প্রত্যুত্তরে অভেদানন্দজী স্বামীজীর প্রতি অপার শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন -- Swami Vivekananda was not an ordinary man. He was the patriot-saint of modern India; he may be called an incarnation of divine wisdom in this age of commercialism. It was he who turned the table of commercialism in a foreign land like America... He was the pioneer, the first preacher, the first Hindu Sannyasin who went to the United States, carrying his Master's message and the gospel of truth as taught by our ancient rishis. Vivekananda represented the Vedic religion, the Sanatana Dharma, which may call a universal religion. He achieved great success because he preached nothing but the Eternal Truth. ( God lived with them, by Swami Chetanananda, Advaita Ashrama )
 শ্রীমসহ ঠাকুরের অন্যান্য ভক্তদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় খুব খুশি হলেন অভেদানন্দজী। একদিন নিজ গর্ভধারিণীর সঙ্গে দেখা করলেন এবং তাঁকে সঙ্গে নিয়ে কালীঘাট মন্দিরে গিয়ে মায়ের পুজো দেন। এরপর চলে যান বেলুড় মঠে, গুরুভ্রাতাদের সঙ্গে সেখানে অবস্থান করলেন ৪ অক্টোবর পর্যন্ত। বহু বছর পর দুর্গাপূজায় অংশ নিতে পেরে স্বভাবতই আনন্দিত হলেন। পাশ্চাত্যে বেদান্ত প্রচারের স্বার্থে আরও সন্ন্যাসীর প্রয়োজন হওয়ায় মঠ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন অভেদানন্দজীর সহায়করূপে স্বামী পরমানন্দজীকে আমেরিকায় প্রেরণ করবার। ৫ অক্টোবর অভেদানন্দ ও পরমানন্দ ট্রেনে চেপে বম্বের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। পথে তাঁরা পাটনা, বারাণসী, এলাহাবাদ, আগ্রা, আলোয়ার, আমেদাবাদ হয়ে শেষমেশ পৌঁছলেন বম্বে।
 ১৯০৬ সালের ১০ নভেম্বর অভেদানন্দ ও পরমানন্দ বম্বে পরিত্যাগ করলেন এবং ১৯০৭ সালের শুরুর দিকে পৌঁছলেন নিউ ইয়র্ক। আমেরিকায় পৌঁছে সোসাইটির কার্যধারা পুনর্সঙ্ঘটিত করতে প্রয়াসী হলেন অভেদানন্দজী। তিনি বোধানন্দকে পিটসবার্গ ( পেনসিলভানিয়া ) বেদান্ত কেন্দ্রের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করলেন এবং পরমানন্দকে নিযুক্ত করলেন নিউ ইয়র্ক কেন্দ্রের জন্য। নিজে বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা প্রদানের কাজে ব্যস্ত থাকলেন, পাশাপাশি লণ্ডনে বেদান্ত আন্দোলন পুনর্জাগরণের কাজে মনোনিবেশ করলেন। শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মতিথি উৎসবে তিনি বললেন -- The keynote of the life teachings of Buddha was active self-sacrifice, while the mission of Krishna to the world was to teach divine love. The great work of Ramakrishna was to bring the message of harmony. He came not to reform but to unite. He pointed out the wondrous fact that the religions of the world are not antagonistic in themselves, but that they are essentially one. Behind all religious doctrines and dogmas the Master discovered the eternal truth. History has no record of such a saint.
 দীর্ঘকাল আমেরিকা তথা পাশ্চাত্যে বেদান্ত প্রচারকার্যে নিযুক্ত থাকার পর ব্রহ্মানন্দজীর অনুমোদন প্রাপ্তির পর ১৯১৯ সালে সিদ্ধান্ত নিলেন পাকাপাকিভাবে ভারতে ফিরবার। আমেরিকায় নিজের কাজের পরিধি ক্রমশ গুটিয়ে নিতে শুরু করলেন। ১৯১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কে পৌঁছলে সেখানে তাঁকে বোধানন্দজী ও অন্যান্য ভক্তগণ উষ্ণ বিদায় সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করেন। ২১ ডিসেম্বর অভেদানন্দজী পৌঁছলেন সান ফ্রান্সিস্কো। সেখানে তিনি এক বছর অবস্থান করেন এবং ত্রিগুণাতীতানন্দজীর দেহাবসানের পর বেদান্ত সোসাইটির পুনরুজ্জীবনের স্বার্থে স্বামী প্রকাশানন্দকে সহায়তা দান করেন ও  বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা প্রদান করেন। ১৯২০ সালের ২১ ডিসেম্বর তিনি লস এঞ্জেলস অভিমুখে রওনা দিলেন। সেখানে ১৯২১ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত বক্তৃতা প্রদান করেন। এরপর প্রত্যাবর্তন করেন সান ফ্রান্সিস্কোয়। চূড়ান্তভাবে তিনি আমেরিকা পরিত্যাগ করেন ১৯২১ সালের ২৭ জুলাই। সান ফ্রান্সিস্কো পরিত্যাগের সন্ধ্যায় অভেদানন্দজী বলেন -- “The East and the West will unite -- such is God's will. The signs of the times greatly encourage me, and my visit and prolonged stay in this country have clearly convinced me that it is possible to make the world our home, and to love all as brothers and sisters. God's spirit is working everywhere. Blessed is he who sees the work, and realizes the divine spirit.”( God lived with them, by Swami Chetanananda, Advaita Ashrama )
 ভারতে প্রত্যাবর্তনের সময়টা নিয়ে অভেদানন্দজী লিখছেন -- “I sailed from San Francisco and crossed pacific ocean, breaking my voyage at Honolulu, where I was a delegate from India at the ‘Pan-Pacific Educational Conference’. Then I came to Japan and studied Japanese culture, philosophy and religion; I stopped at Sanghai, Hong Kong, Canton, Manila and Singapore, where I delivered the message of Vedanta philiosophy in popular lectures. From Singapore I was invited to Kualalmpur in the Malyay states, where I gave a series of lectures on Confucianism, Buddhism and Taoism before Chinese and Hindu audiences. From there I was invited to Rangoon, where after delevering several public lectures on the ‘Message of Buddha’ and ‘Religion of the Hindus’, I returned to Calcutta..” ( God lived with them, by Swami Chetanananda, Advaita Ashrama )

Post a Comment

0 Comments