জ্বলদর্চি

কালের অতল তলে কলোরাডো-১/ চিত্রা ভট্টাচার্য্য

কালের অতল তলে কলোরাডো 
প্রথম পর্ব

চিত্রা ভট্টাচার্য্য

রেডউডের ঘন ছায়া ঘেরা পাহাড়ের গায়ে লসগাটসের  নির্জন  বাড়িটির ডেকের  ওপর থেকে রেলিঙে ভর দিয়ে প্রায় ছয় শ' ফুট নীচের গভীরে বয়ে যাওয়া পাথুরে জমিতে গাছপালায় ঢাকা উচ্ছল নদী টি কে ঝুঁকে পড়ে দেখছিলো ব্রতীন। হাতের জ্বলন্ত সিগারেট টা শেষ হতে এখনো দেরী আছে। ধুঁয়ো টানার জন্য ঘন বার্চ,ওক,রেড উডের ছায়ার আড়ালের এ দিক টা ওদের প্রত্যেকের বেশ পছন্দের। আপাততঃ চারবন্ধুরা সেখানেই  গোলটেবিল বৈঠকে জড়ো হয়ে তুমুল আড্ডায় মেতেছে। এ সময়ে হঠাৎ কর্কশ স্বরে অফিসের ফোন বাজলে --,ইয়াম উত্তেজিত হয়ে জানায় কলোরাডোর এস্প্যান শহরে অফিসিয়াল ট্যুর দুই দিন বাদে-- খুব গুরুত্বপূর্ণ  কনফারেন্স। ওপরওয়ালার নির্দেশ এই প্রজেক্টে গ্রূপের সব সদস্য দের উপস্থিতি একান্ত কাম্য ,এমপ্লয়ী রা অবশ্যই ফ্যামিলি সহ যাবে -- প্রত্যেকের  জন্য আলাদা এপার্টমেন্টের ব্যবস্থা করা আছে। ফ্লাইটে অথবা ড্রাইভ করে পৌঁছনো ,সবটাই এমপ্লয়ীদের নিজেদের ইচ্ছে। রোড ট্রিপ এবং লং ড্রাইভের নেশা ব্রতীনের বরাবরের পছন্দের এবং ভারী আনন্দের ও।  উইক এন্ডের ছুটি ধরে সপ্তাহ খানেকের প্রোগ্রাম সাজাতে গুগুল ও রোড ম্যাপ খুলে খুব যত্নে ট্যুর প্ল্যান হোটেল বুকিংয়ের পরিকল্পনায় তখনি ওরা জোরদার আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে উঠলো।         আমেরিকার অহঙ্কার কলোরাডো --রাজ্য ,শহর নগর ,নদী ঘুরে দেখা ,ও  বেশ কয়েকটি বিখ্যাত ন্যাশানাল পার্ক স্বচক্ষে দেখার এমন সুবর্ণ এডভেঞ্চারের সুযোগ অযাচিত ভাবে আসায় সবাই খুশিতে মত্ত।                
       লোকালয় থেকে দূরে পাহাড়ের ওপর  বিশাল গাছ গাছালিতে পরিবেষ্টিত এই বাড়িটি কে একটা ভাসমান জাহাজের মত লাগে যদিও তেমন জলের চিহ্ন মাত্র আশেপাশে কোথাও নেই।  বিকেলের কফি স্নাক্সের ব্যবস্থা করে রেলিঙের ধার ঘেঁষে এসে  নীচের দিকে তাকাই পাহাড়ের খাদের গা ঘেঁষে তিত্তিরে সুপ্ত নদী টি যার গত খরায়,জল শুকিয়ে গিয়ে কাঠপোড়া হয়ে অস্তিত্বই বিলীন প্রায় হয়েছিল, সেই অদৃশ্য ক্ষীণ কায়া শুকিয়ে যাওয়া শীর্ণা সুপ্তশ্রী। যার নাম আমি প্রথম এখানে এসেই রেখেছিলাম "sleeping beauty " এখন সে স্রোতস্বীনি ,চঞ্চলা প্রগলভা হয়ে রুদ্রানী রূপে জেগে চলার আনন্দে রুক্ষ ধরিত্রী কে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে। 
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
   গত গ্রীষ্মের মত রুদ্রতপ্ত তপস্বিনীর গৈরিক বেশে বৈশাখ জৈষ্ঠ্যের এমন আবির্ভাব আগে কখোনো ক্যালিফোর্নিয়ায় দেখিনি। যদিও যতই দাবানল জ্বলুক ভ্যাপসা গরমে প্যাচ পেচে অসহ্য ঘামের জ্বালার বিরক্তিকর পরিবেশ এখানে না থাকলে ও রৌদ্রের তাপ ছিল অসহনীয়। রেলিঙে ঝুঁকে এই মরা  নদীটির এমন উন্মত্ত রূপ দেখে ভাবছিলাম কলোরাডোর  কি অন্তহীন বিশালত্বের  সৌন্দর্য  তার  অসীম গতি পথ শাখা প্রশাখা নিয়ে কত কত দেশে বিরাজিত হয়ে আছে । সেই কবে কোন ছোটবেলায় ভূগোলের বইতে কলোরাডো নদী,মালভুমি উপত্যকার অববাহিকার কথা পড়েছিলাম। এখন তাকে স্বচক্ষে দেখতে পাবো -- ভাবলেই  অদ্ভুত রোমাঞ্চ বোধ করছি। প্রকৃতির সৌন্দর্যের সাথে অচেনা কে চেনা অজানা কে জানার আনন্দে মন মশগুল হয়ে রয়েছে ।     
                                                                                       দুদিন ঘোর উত্তেজনায় কাটলো। গত রাতে আমার  চোখের পাতায় ঘুম ছিলো না। আগামী সকাল 1st March --রাত পোহালেই পাড়ি দিতে হবে কলোরাডোর উদ্দেশ্যে। ব্রতীনের সদ্য কেনা চকচকে কালো Tacoma গাড়ি দূরের পাহাড়ি পথে নির্ভাবনায় চলার জন্য বেশ ওজনদার। রোড ট্রিপে প্রয়োজনীয় কত রকম জিনিস পত্রে বোঝাই হয়ে সেজে উঠছে  ট্রাকের কেরিয়ার। রাতের আকাশ সবে মাত্র ফিকে হতেই গরম ব্ল্যাক কফির মগে চুমুক দিয়ে তরতাজা হয়ে  সবাই বেরিয়ে পড়েছি। গাড়ির স্টিয়ারিঙে ব্রতীন, বন জঙ্গলে ঘেরা চড়াই উৎরাইয়ে ভরা ঢালাই রাস্তা পার হয়ে হাইরোডে এসে পড়েছে। কুয়াশাভরা আলো আধারিতে ফগ লাইটের আলোয় ধীর গতিতে গাড়ি চলেছে। প্রতিবারের মত এবারে ও  দলে রয়েছে অতনু ইয়াম এবং পারভীন। ওরা যেখানেই যায় সব সময় ওদের এডভেঞ্চার দলের এই ছোট্ট গ্রূপ টি নিজেদের যেন মনে করে প্রাচীন কালের ভূপর্যটকের দল। তবে এই আধুনিক কালের পর্যটন বিলাসী দল টির সর্বদা সঙ্গী " Tacoma truck " টি। নিজের অজান্তেই  ঝোলা টি আমার পূর্ণ হয়ে  উঠেছে নানা রকম মুখরোচক টাইম পাসের খাদ্য সম্ভারের সাথে টিস্যু পেপার ও  ফ্লাস্কে ব্ল্যাক কফি নিয়ে। চকলেট ও নিয়েছি বিভিন্ন ধরণের।  একনাগাড়ে ড্রাইভের সময় বড্ডো গলা শুকিয়ে যায়। আর  নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধ  ক্যামেরা ,স্মার্ট ফোন ,ছোট্ট একটা নোটবুক ও পেন তো আমার  নিত্য বেড়ানোর সঙ্গী।                                                                              ,                    সমুদ্রের ধার ঘেঁষে চলতে গিয়ে এই ইয়ং গ্রূপের মনের ভাব টা এমন যেন রাজ্য জয়ে নিরুদ্দেশে  চলেছে। একের পর এক শহর ছেড়ে দুই পাহাড়ের বুকের ভিতর দিয়ে মজবুত পীচ ঢালা কালো সড়ক সুদূরে মিলিয়ে গিয়েছে।  
 
       ক্যালিফোর্নিয়া ছেড়ে নেভাদা মোয়াবে ,ইউটা পেজ ,এজেড আরিজোনা আরো কত  অজানা রাজ্য রাজধানী শহর রাজপথ জনপথ পার হয়ে কত রকম অভিজ্ঞতায় ঝুলি ভরে নিয়ে   কলোরাডোর এস্প্যান নগরী তে পৌঁছতে হবে। কুয়াশা ধীরে ধীরে কেটে গিয়ে আকাশ এখন পরিষ্কার হলো।  হাইওয়ে 850 ধরে  তীব্র গতিতে  pick up Truck  ছুটে চলেছে। গাড়িতে গান বাজে ,নানারকম হাসি ঠাট্টার সাথে গল্প চলে। আর চলে অফিসিয়াল কাজ কর্মের ভালো মন্দ নিয়ে গুরু গম্ভীর আলোচনা। বার্চ ,পাইন ,সিডার ওকে ঘেরা বুনো পথে ঘোর কুয়াশার কম্বল জড়ানো তামাটে পাহাড়ের শীর্ষে  ধবধবে সাদা তুষারের স্তূপ রাজ মুকুটের মত শোভিত। কালচে নীল মেঘের সাথে গাছের পাতার হলুদ সবুজ রঙ  মিশে একাকার।  আমি শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে ক্যামেরায় ফ্রেম বন্দি করার চেষ্টা করি। ফ্রন্ট সীটে ব্রতীনের পাশে বসে অতনু মনের সুখে গান গাইছে  ' কত যে সাগর নদী পেরিয়ে এলাম কত পথ হলাম যে পার ----প্রিয়তমা মনে রেখো '' ইয়ম মন দিয়ে গান শুনছিল  আচমকাই ওর মাউথর্গানে  বেজে ওঠে "তোমারই মত এতো অনুপম সুন্দর '' বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করি নির্ভুল সুন্দর সুর বাজিয়ে চলেছে। সমুদ্রের ধার ঘেঁষে একের পর এক শহর ছেড়ে লোকালয় ছাড়িয়ে যত এগিয়ে চলেছি গাড়ির কাঁচে সিনেমার মত বহির্দৃশ্যের ছবি ভেসে উঠছে। সাগরের ফিরোজা রঙের জল রাশির মাথায় সাদা ফেনার কলোরোল। কোথাও খরস্রোতা নদীর উন্মত্ত ঝর্ণার বয়ে যাওয়া জল জমিয়ে সৃষ্টি হয়েছে কৃত্রিম হ্রদের।.কোথা ও সার দিয়ে দাঁড়ানো কালচে লাল পাহাড়। একে একে -Rsnho , Soda spring ,Donner lake ইত্যাদি। গুগুলের ম্যাপে দেখা  জায়গা গুলো নিমেষে পেরিয়ে তামাটে পাথুরে মরুভূমির ধূসরিমা পার হয়ে ,গিরিখাত মালভুমির মাঠ প্রান্তরের ছায়ায় ঘুরে ক্যালিফোর্নিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে নেভাদায় পৌঁছে গিয়েছি খেয়ালই  ছিল না। সামনেই  Denny's  এর রেঁস্তোরা দেখে সেখানের পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করে সবাই নামলাম। একটানা সাড়ে তিনঘন্টা বসে থেকে হাত পা অবশ। নীলাকাশ জুড়ে রোদের চমক তবুও তীব্র ঠান্ডা হাওয়া বইছে। হৈ হৈ করে যে যার পছন্দ মত ব্রেক ফাস্ট সারা হলো স্যান্ডউইচ, বার্গার ,ব্রেড ওমলেটের সাথে  সিম্পল লম্বা করে কাটা মুচমুচে আলুভাজা বিদেশে ফ্রেঞ্চফ্রাই বলে।  তার সাথে চিকেন স্যুপ ও দারুণ লাগে। ঘড়িতে বেলা দশটা বেজে গেছে। ,এতো বেলায় এতো বেশী ব্রেকফাস্ট  হ'য়ে গেলো যে মনে হয় সহজে আর লাঞ্চের  দরকার হবে না। অতনু ইয়াম পারভীনরা তো আনন্দে শোরগোল তুলেছে --আরে ব্বাস ! এখানে যে পায়ে পায়ে ক্যাসিনো।চারিদিকে ছোট বড়ো মাপের জুয়া খেলার ফোরষ্টার ,ফাইভষ্টার হোটেল রেঁস্তোরা। বিশাল বিল্ডিং গুলো জুড়ে শুধুই ক্যাসিনো হাব। পুলিশের চোখ রাঙানি নেই এতো খোলা মেলা জুয়ার আড্ডার আয়োজন ও জুয়াড়িদের ফিসফিস আবেদনে চমকে উঠে অতনু বলে এদের অর্থনৈতিক সামাজিক জীবন এই ক্যাসিনোর ব্যাবসার ওপর নির্ভরশীল। ইয়ম আর পারভীন চুপিচুপি যুক্তি করছে ওখানে কিছুটা সময় কাটানোর ,পর অন্ততপক্ষে একদান ও যদি খেলা যায়।আমি চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে থাকি। অতনু হুমকি দেয়,'' তোরা তাহলে ওখানেই পড়ে থাক আমরা এগিয়ে চললাম।;'দেখি দুজনেই হো হো করে হেসে  তড়িঘড়ি পা চালিয়ে আসছে।                                                                                                                            
 সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ব্রতীন গাড়িতে স্টার্ট দিয়েছে। আবার অন্তহীন পথ পরিক্রমা  শুরু হলো।  বিখ্যাত Tesla car company র ঝক ঝকে বিজ্ঞাপন দূর থেকেই ল্যান্ডমার্কের মত চোখে পড়ছিল। সামনেই মাইনিং টাউনের ওল্ড আমেরিকান দের পুরোনো ধাঁচের ঘর বাড়ি গুলো পিছনে ফেলে রিনো এয়ারপোর্ট পার হয়ে গ্রেটবেসিন ন্যাশানাল পার্কের দিকে চলেছি। পারভীন বলে গ্রেটবেসিন এখান থেকে এখনো প্রায় ২০০ মাইল যেতে হবে। ফাঁকা রাস্তায় আর কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌঁছে যাবো।  ১০০ থেকে ১২০মাইল বেগে গাড়ি চলেছে। ধুধু মরুভুমি প্রান্তরে ঝুরঝুরে সাদা বালির মাঝে বেঁটে বেঁটে বুনো ফণিমনসার ঝোপ ঝাড়ের সাথে নানা জাতের ছোট বড়ো ঝাউ গাছের আড্ডা।দুই ধারেই পরিত্যাক্ত জমি কোনো বাড়ি ঘর দেখা যায় না। দূরে দূরে পুরোনো আমলের ঢালু ছাদ আলা কটেজের মত। চলার পথে দেখছি  অগণিত পাহাড়ের টিলার মত কচি সবুজ ঘাসে মোড়া যেন সদ্য কেউ বিশ্রামের জন্য কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে। কোথাও চোখে পরে টলটলে স্বচ্ছ নীল জলের লেক। শুষ্ক বালুময় মরু তে জলের প্রয়োজনে কৃত্রিম লেক গুলোর সৃষ্টি দেখে পারভীন বলে বৃষ্টির জল ধরে রাখার আয়োজনে কী সুন্দর ব্যবস্থা! অতনু গুগুলের রোড ম্যাপ দেখছিল অভিজ্ঞ হেডস্যারের মত মাথা নেড়ে হেসে বলে ,-কারেক্ট পারভীন !একদম ঠিক বলেছো। ওদের কথাবার্তা আলোচনায় বেশীর ভাগ শব্দই ইংলিশে উচ্চারিত বলে নির্বাক শ্রোতা আমি বেশ উপভোগ করছিলাম । পার্শি মেয়ে ইয়াম কিন্তু গাড়ির রেকর্ড প্লেয়ারে যে গান বাজছে --বাংলা ,হিন্দি ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল যে কোনো গানের সুর শুনে মাউথ অর্গান বাজিয়ে জার্নি টাকে বেশ উপভোগ্য করে তুলেছে। গল্পে গানে বাজনায় তর্কে যাত্রা পথ মোটেই বোরিং নয়। এই বিদেশে ইয়ং জেনারেশনের জাতপাত নির্বিশেষে একের সাথে অপরের এমন নিবিড় বন্ধুত্ব দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যাই।                                                                                                                              
 গল্পের ধূমে কখন চলে এসেছি  Fallon town ,state road Old American city পেরিয়ে Grass land এ।   লাইন দিয়ে রয়েছে ঘোড়ার আস্তাবল ,গবাদি পশুর খামার ঘর। এমনকি ঘোড় দৌড়ের Horse Ranch ও  আছে। অসংখ্য তাগড়াই চেহারার গরু ঘোড়া ছাগল ভেড়া শুখনো ঘাসে মুখ ডুবিয়ে চড়ে বেড়াচ্ছে। আমরা চলেছি স্টেট রোড নেভাদা 50 ধরে উঁচুনীচু চড়াই উৎরাই পার হয়ে সমুদ্র পৃষ্ট থেকে 4644 ফুট উঁচুতে। আরো মাইল খানেক এগোতেই  চোখের সামনে  ছায়া ছবির মত একের পর এক দৃশ্য পট পরিবর্তন হয়ে চলেছে। ইয়ামের মুড অফ। মাঝে মাঝেই, হাসি খুশি লম্বা ফর্সা সুন্দরী মেয়েটি হঠাৎ ভারী গম্ভীর হয়ে যায়। এতক্ষন নিঃশব্দে বসে থেকে ইয়াম মাথা ঝাঁকিয়ে  বলে  --Dixie valey পার হলেই সামনেই  Fair vew peak  আছে.। যেখানে Earth quake এর ফাটল দেখা যায় ,মনেহয় পৃথিবী টা বুঝি এখানে ফেঁটে দুই ভাগ হয়ে গিয়েছে। পারভীন ও ইয়াম সমস্বরে চেঁচিয়ে বলে  --হ্যালো ক্যাপ্টেন ! সেখানে কি আমরা যেতে পারি ? অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি , আমাদের ক্যাপ্টেনের মূল্যবান মতামতের জন্য। ব্রতীনের উৎসাহে ঘাটতি নেই নিমেষে গাড়ি ঘুরিয়ে বলে--' yes why not ,no problem at all;' ,...প্রায় দুই কি,মি,র মত এগিয়ে গিয়ে দেখি কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সেখানে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সুতরাং আর এগিয়ে লাভ নেই। Earth quake এ পৃথিবীর ফাটল এবারের মত দেখা হলো না। বেশ নিরাশ হ'লাম  এতো কাছে এসে ও এমন দর্শনীয়  স্থান টি অদেখা রয়ে গেলো।                                                                                                                        
এখানে রাস্তাটি ও বেশ নীচু মত জল কাদায় ভরে আছে খানিক আগে সম্ভবতঃ এ অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছিল। যতদূর দেখা যায় এটা গ্রাম্য পরিশ্রমী ওল্ড আমেরিকান তথা আদিবাসী দের বাস ভূমি।   ব্রতীন বলে ঐ বাড়ি গুলো দেড়শো দুশো বছর কি তারো আগের মডেলে তৈরী। কত যে পুরোনো আমলের মানুষ পরম্পরায় এখানে বসবাস করছে তার ঠিক নেই।  বেশীর ভাগ  আদি বাসীর জীবিকা গম ,ভুট্টার ক্ষেতে চাষবাস এবং পশুপালন। ঘন্টা খানেক পরে অনামী পুরোনো শহর গুলো পার হয়ে Tuiba National  ফরেস্টের গাছ পালার ঘনত্বর মাঝখান দিয়ে এগিয়ে পথের ধারে বিরাট বড়ো এক বোর্ডের গায়ে ইউরেকা লেখাটি দেখে আপনমনে বাংলায় ইউরেকা !'এসে গেছে ইউরেকা।বলে চেঁচিয়ে উঠি। আমার সহ যাত্রীরা দেখি খুব মজা করে হাসছে। পাহাড়ের বুকে জমজমাট টাউন ইউরেকাতে চেকিং ইত্যাদির ফর্মালিটির জন্য গাড়ি পার্ক করতে হলো। সূর্য্য অনেক আগেই পশ্চিম হেলে পড়েছে কিন্তু আমাদের চা বিলাসী মন নাছোড় ,এখানে কোথাও রাস্তায় চা পাওয়া যায় না। কাছেই একটা কফি শপ দেখতে পেয়ে সেখানেই চেয়ার দখল করে ভীড় জমালাম। এবং কফি ব্রেক শেষ হলে আবার গাড়ির চাকায় ঝড় উঠলো , ইলাহী শহরের মোটেলে পৌঁছতে আধ ঘন্টা ও লাগলো না। এখানে রাত কাটানোর প্ল্যান।   সারাদিন চলার পরিশ্রমে ডিনারের পর কারো মুখে কথাটি নেই। পড়ন্ত  বিকেলেই দেখেছিলাম  আকাশ জুড়ে কালো মেঘের দলের জটলা চলছিলো। মেঘ ভারে নত ধূসর আকাশটা সবুজ ঘাসের প্রান্তরে লুটিয়ে পড়তে চায়। এখন সাড়ম্বরে গুরু গুরু রবের সাথে বৃষ্টি ঝরছে। ঘরে রুম হিটার চলছে তবু ও শীতকে জব্দ করা সহজ ছিল না। সোজা কম্বলের তলায় আপাদ মস্তক ঢেকে নিদ্রাদেবীর গভীর আশ্রয়ে নিজেদের সমর্পন করলাম।           (চলবে)

Post a Comment

0 Comments