জ্বলদর্চি

মেদিনীপুর: স্বাধীনতা পূর্বের রক্তাক্ত তিন বছরের ইতিহাস /সূর্যকান্ত মাহাতো

জঙ্গলমহলের জীবন ও প্রকৃতি
পর্ব - ৭০
মেদিনীপুর: স্বাধীনতা পূর্বের রক্তাক্ত তিন বছরের ইতিহাস

সূর্যকান্ত মাহাতো


১৯৩১ সালে জেমস পেডি, ১৯৩২ সালে আর. কে. ডগলাস এবং ১৯৩৩ সালে জে.ই. বার্জ মেদিনীপুরের এই তিনজন জেলাশাসক পর পর তিন বছরে বিপ্লবীদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। এমন ঘটনা বাংলার কেন ভারতের ইতিহাসেও নেই। পরপর তিন বছরে তিনজন জেলা শাসকের হত্যার ঘটনা, ইংরেজদের ঔদ্ধ্যত্বপূর্ণ রক্তকেও যে শীতল করে দিয়েছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এমন একটা ইতিহাস আজও সেরকম ভাবে ইতিহাস হয়ে উঠতে পারল না।

ইতিহাসের এক অধ্যাপকের এই কথা শুনে বললাম, "সত্যিই তো। কী এমন হয়েছিল যে ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে বিপ্লবী 'প্রদ্যোৎ কুমার ভট্টাচার্যকে'ও বলতে শোনা গিয়েছিল, "কোন ইউরোপিয়ানকে আমরা মেদিনীপুরে থাকতে দেব না। এই আমাদের সংকল্প।" (স্বাধীনতার রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম /গোকুলেস্বর ভট্টাচার্য)। কেন ওই তরুণ বিপ্লবীদের এমন দৃঢ় সংকল্প নিতে হয়েছিল? আমাদের বলতে কাদের কথা তিনি বলেছেন?"

"আসলে জেলাশাসকদের নির্দয় নিপীড়ন আর অমানুষিক অত্যাচার এর জন্য অনেকটাই দায়ী। পেডি সাহেবের অত্যাচার ঠিক কেমন ছিল শোন। আইন অমান্য আন্দোলনে যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন, সেই পুরুষদের বেতের আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করতেন, নারীদের উলঙ্গ করে থুথু ছুঁড়তেন। যেকোন মুহূর্তে জেলে ঢুকে বন্দীদের অত্যাচার করতেন।(আমি সুভাষ বলছি/ শৈলেশ দে, পৃষ্ঠা- ১৯২) তবে মেদিনীপুরের ওই তিন বছরের রক্তাক্ত ইতিহাসের একটা প্রেক্ষাপট ছিল। হঠাৎ করেই ঘটনাগুলো ঘটেনি। মেদিনীপুরের মানুষ এমনিতে সরল। অন্যান্য জেলার মতো ঝগড়ুটে নয়।" 

বললাম, "এটা একটু অহংকার মূলক কথা হয়ে গেল না? অন্য জেলা যে ঝগড়ুটে এমনটা মনে হল কেন?"

"আমি তা বলতে চাইছি না। অন্য জেলার মানুষ অবশ্যই ভালো। কিন্তু একথা বলেছিলেন মেদিনীপুর জেলার একজন জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ স্ট্রেচি। ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে জুডিসিয়াল ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি 'জর্জ ডডসওয়েলকে একটি চিঠিতে তিনি এই কথা লিখে জানিয়েছিলেন।"

"তিনি কী লিখেছিলেন?"

"উনি লিখেছিলেন, 'The bulk of the inhabitants of Midnapore appear to me to have very well preserved their original milk simplicity and innocence. They are less quarrelsome and give less trouble than the natives of neighbouring districts.'(জিলা মেদিনীপুর, স্বাধীনতার আন্দোলন/কমল কুমার কুন্ডু, পৃষ্ঠা- ৫৪) সুতরাং মেদিনীপুরের মানুষ এমনি এমনি এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেনি। তারও একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল।"

"কী ছিল সেই প্রেক্ষাপট?"

"বিপ্লবী প্রদ্যোৎ কুমার যে 'আমাদের' শব্দটা বলেছিলেন, সেই 'আমাদের' বলতে বি.ভি. অর্থাৎ 'বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স' এর মেদিনীপুর শাখার কথা বলা হয়েছে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এই সংগঠনটি তৈরি করেছিলেন ১৯২৮ সালে। ১৯২৯ সালের নভেম্বর মাসে তিনি নিজে এসে মেদিনীপুরে এক শোভাযাত্রা করেছিলেন। সেই শোভাযাত্রার শপথ মন্ত্রটি ছিল---
'সৈনিকের জীবন হোক আমার জীবন
সৈনিকের মৃত্যু হোক আমার মরণ।' (মেদিনীপুর, তরুণদেব ভট্টাচার্য, পৃষ্ঠা ৩৭)"

"সুভাষ চন্দ্রের জেলা সফরের সেই রেশ তো ছিলই, তার উপর ১৯৩০ এ আইন অমান্য আন্দোলন ও গান্ধীজীর ডান্ডি অভিযানের বিরাট উদ্দীপনার ঢেউ আছড়ে পড়েছিল মেদিনীপুরের উপর। কয়েকটি ঘটনা একটি সুতোয় যেন বাঁধা হয়ে ক্ষোভ ও রোষে পরিণত হয়েছিল মেদিনীপুরের ইউরোপিয়ান জেলা শাসকদের উপর।"

"মেদিনীপুরে 'আইন অমান্য' আন্দোলন দুটি মহকুমায় তীব্র আকার ধারণ করেছিল। একটি হলো তমলুক মহকুমা আর অন্যটি হল কাঁথি মহকুমা। তমলুক মহাকুমার 'নরঘাট'' তীরবর্তী স্থানকে বেছে নেওয়া হয়েছিল আইন অমান্য আন্দোলনের জন্য। ৬ই মার্চ সেখানে নারী পুরুষের এক বিরাট শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়, ক্ষিতিশ চন্দ্র সামন্ত, ভবদাস, রজনীকান্ত প্রামাণিক, সুশীল ধাড়া প্রমূখ। বিরাট ওই মিছিলের কথা তরুণ দেব ভট্টাচার্যও জানিয়েছেন তার 'মেদিনীপুর' গ্রন্থে। সেখানে একটি আন্দোলন পরিচালনা সমিতিও গঠন করা হয়েছিল।(মেদিনীপুর/তরুণদেব ভট্টাচার্য, পৃষ্ঠা ৩৮)" 
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
মেদিনীপুরের জেলাশাসক মিস্টার জেমস পেডি ১৫ই এপ্রিল 'নরঘাট' এ পৌঁছে অজয় মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেন। প্রতিবাদে সেদিন ও তারপর দিন হরতাল পালিত হয়েছিল। এই অজয় মুখোপাধ্যায় ছিলেন আবার তমলুক কোর্টের বার এসোসিয়েশনের সম্পাদক শান্তিকুমার মুখোপাধ্যায়ের পুত্র। তাই তরুণ আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ মালাকার সঙ্গীদের নিয়ে হরতালের ওই দুদিন কোর্ট বয়কট করেছিলেন বলে কোর্টের মুনশি পি. এন. লাহিড়ী তার বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার জন্য চার্জ সিট গঠনের আদেশ দিয়েছিলেন।" (পৃষ্ঠা ৩৫, জিলা মেদিনীপুর, স্বাধীনতার আন্দোলন)

"মেদিনীপুরে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রকৃত জোয়ার এসেছিল এই আইন অমান্য আন্দোলনকে ঘিরেই। কাঁথিতে 'পিছাবনী' বলে একটি জায়গাকে আইন অমান্য আন্দোলনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। কর্মসূচি হিসাবে ৩৫ জন স্বেচ্ছাসেবক ও হাজার হাজার মানুষের শোভাযাত্রা পিছাবনীতে পৌঁছানোর পর সেখানে জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করা হয়েছিল। (পৃষ্ঠা ৩৭, মেদিনীপুর/ তরুণদেব ভট্টাচার্য) ৬ই থেকে ১০ই এপ্রিল সেই আইন অমান্যের কাজ চলেছিল। তারপর ১১ এপ্রিল সেখানকার নেতৃবর্গকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।" (পৃষ্ঠা ৪১, জিলা মেদিনীপুর, স্বাধীনতার আন্দোলন/কমল কুমার কুন্ডু)

"তুমি কী জানো, সমগ্র বাংলায়  যে 'আইন অমান্য' আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল তার শীর্ষস্থানে ছিল কাঁথি ও তমলুক।"

"কীভাবে এটা বুঝলেন?"

" আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনেই সেকথা স্পষ্টরূপে লেখা হয়েছিল, 'বাংলার আইন অমান্য আন্দোলনের ইতিহাসে কাঁথি ও তমলুকের স্থান শীর্ষদেশে।'"(জিলা মেদিনীপুর, স্বাধীনতার আন্দোলন/ কমল কুমার কুন্ডু,পৃষ্ঠা ৪১)

"একই সঙ্গে দু'রকমের আন্দোলন শুরু হয়েছিল একটি হল 'লবণ আইন ভঙ্গ' আর দ্বিতীয়টি হল 'ট্যাক্স বন্ধের আন্দোলন'। এই ট্যাক্স বন্ধের আন্দোলনকে ঘিরে পিংলা থানার ক্ষীরাই গ্রামে আন্দোলনকারীদের উপর অকস্মাৎ গুলি চালিয়ে ভীম জানার মতো নেতা সহ আন্দোলনকারীদের বারো জনকে হত্যা করেছিল পিংলা থানার বড় দারোগা। (পৃষ্ঠা ৪২, জিলা মেদিনীপুর, স্বাধীনতার আন্দোলন/ কমল কুমার কুন্ডু) আন্দোলনের তীব্রতায় এবং চৌকিদারের ট্যাক্সগুলো বন্ধ করার প্রচারে নাস্তানাবুদ হয়ে উঠেছিল প্রশাসন। তৎকালীন বাংলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন 'প্রেনটিস'। তিনি অবস্থা বুঝে বললেন, 'মেদিনীপুরে বিশৃঙ্খলা চূড়ান্ত।'" মেদিনীপুর/ তরুণদেব ভট্টাচার্যপৃষ্ঠা, পৃষ্ঠা- ৩৮)

"পুলিশ এই আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠলে পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হয়ে উঠেছিল। তারই জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হল চেচুয়াহাট। গোকুলেশ্বর ভট্টাচার্য 'চেতুয়া হাট' বলে উল্লেখ করেছেন।(স্বাধীনতার রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, পৃষ্ঠা- ১৪৭) ঘাটাল মহকুমার অন্তর্গত দাসপুর থানার একটি গ্রাম। সেখানে আন্দোলন তীব্রতর হয়ে উঠলে দাসপুর থানার দারোগা ভোলানাথ ঘোষ ও তার সহকারি অনিরুদ্ধ সামন্ত কয়েকজন পুলিশ নিয়ে এলাকাকে শান্ত করতে এসেছিলেন ১৯৩০ সালের জুন মাসের ৩ তারিখে। মৃগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য(গোকুলেশ্বর ভট্টাচার্য   বলেছেন, শীতল ভট্টাচার্য) সহ কয়েকজন নেতৃস্থানীয়কে গ্রেপ্তার করলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল। মারমুখো জনতার রোষের মুখে পড়ে দারোগা সাহেব দ্রুত আত্মরক্ষার জন্য পালিয়ে একটি দোকানে আত্মগোপন করেছিলেন। কিন্তু উন্মত্ত জনতা তাকে ঠিক ধরে ফেলে এবং সেখানেই হত্যা করে।"(মেদিনীপুর/ তরুণদেব ভট্টাচার্য, পৃষ্ঠা- ৩৮)

"আর তার সহযোগীর কী হল?"

"'জিলা মেদিনীপুর: স্বাধীনতার আন্দোলন' গ্রন্থে  বলা উল্লিখিত, পুলিশের রিপোর্ট এ নাকি বলা হয়েছে দারোগার মতো তাকেও মেরে ফেলা হয়েছিল।"(পৃষ্ঠা-৪৪) "স্বাধীনতার রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম" গ্রন্থে বলা আছে অনিরুদ্ধ সামন্তর মাথাটা শরীর থেকে আলাদা করে শরীরটা জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।(পৃষ্ঠা- ১৪৭)

"এই ঘটনার পর পুলিশের অত্যাচার নাকি এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছিল যা শুনলে শিহরিত হয়ে উঠতে হয়। এ প্রসঙ্গে জহরলাল নেহরুকে পর্যন্ত মুখ খুলতে হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, "Among the many places which have provided martyers for the cause of Indian freedom, Kidnapper district occupies an honourable position.""(মেদিনীপুর/ তরুণদেব ভট্টাচার্য, পৃষ্ঠা- ৩৮)

"এই ঘটনার দুদিন পর অর্থাৎ ৫ই জুন তারিখ অতিরিক্ত জেলাশাসক করিম সাহেব পুলিশ খুনের তদন্ত করতে এলে তিনিও জনতার ক্ষোভের মুখে পড়ে গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই গুলিতে আটজনের মতো মারাও গিয়েছিল। কিন্তু কেন তাকে গুলি চালাতে হয়েছিল, তার একটি রিপোর্টও তিনি তৈরি করেছিলেন। সেই রিপোর্টে তিনি লিখেছিলেন, "All the government work is paralised in this area and I am concerned that if this area is not effectively brought under control soon, the conflagration will spread to other parts, It would be too much to ask officers to go to this parts in the present condition before some effective measures are taken to calm down the locality and unless they are supported with sufficient armed men. The bander volunters must be uprooted without delay and the organisation at Sonakhaly, Nandapur etc destroyed."
করিম সাহেব এই রিপোর্টটি ৭ তারিখে পাঠিয়েছিলেন জেলাশাসক পেডি সাহেবের কাছে।"(জিলা মেদিনীপুর-স্বাধীনতার আন্দোলন/ড: কমল কুমার কুন্ডু, পৃষ্ঠা - ৪৫)

"এরপর পেডি সাহেব সাঁড়াশি তল্লাসি চালিয়ে মৃগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য সহ ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছিলেন। এবং এই বিচারটি "দাসপুর হত্যা কেস" নামে পরিচিত ছিল। লেখক তরুণদেব ভট্টাচার্য একটা দারুন সত্যি কথাই উল্লেখ করেছেন তার বইয়ে, 'জেলাব্যাপী অত্যাচার ও উৎপীড়নের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নায়ক ছিলেন জেমস পেডি।'"(মেদিনীপুর, পৃষ্ঠা- ৩৯)

"তমলুক, কাঁথি ও চেচুয়াহাটের ঘটনা ছাড়াও আরও একটি ঘটনা ঘটেছিল।" 

"সেটা কী?"

"মেদিনীপুরকে দ্বিধা বিভক্ত করার ঘোষণা।"

সেকি! তখনো মেদিনীপুরকে ভেঙে ফেলার একটা প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল?

"নিশ্চয়ই। না হলে, বীরেন্দ্রনাথ শাসমলকে কেন প্রতিবাদ করতে হয়েছিল?"

"উনি কী করেছিলেন?"

"১৯৩১ এ মেদিনীপুরকে দু ভাগে বিভক্ত করার কথা সরকার ঘোষণা করলে 'বীরেন্দ্রনাথ শাসমল' এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠছিলেন। প্রতিটি সভায় গিয়ে গিয়ে তিনি বলতে লাগলেন, I won't allow any Government to cut off any limb of mother Bengal. lf it occurs, it will occurs over my dead body" (জিলা মেদিনীপুর, স্বাধীনতার আন্দোলন, পৃষ্ঠা ১৯)। তার সাংগঠনিক নেতৃত্ব তমলুক ও কাঁথির সাধারণ মানুষকে আরও বেশি করে প্রভাবিত করেছিল। সেই প্রভাব কতটা ছিল তা সেই সময় আনন্দবাজারে প্রকাশিত প্রতিবেদনের এই অংশটুকু দেখলেই বোঝা যায়---"শ্রীযুক্ত শাসমল মহাশয়ের অপূর্ব সংগঠনের কৌশলে, মন্ত্রসিদ্ধির জন্য একাগ্র সাধনা ও অনাড়ম্বর অদ্ভুত কর্ম্মশক্তিতে কাঁথি ও তমলুকবাসীরা প্রভাবান্বিত হইয়াছিল।""( জিলা মেদনিপুর: স্বাধীনতার আন্দোলন/কমল কুমার কুন্ডু পৃষ্ঠা- ৪১)

(চলবে)
---------------
শ্রদ্ধা ও স্মরণ 

Post a Comment

0 Comments