জ্বলদর্চি

কালিম্পং ডায়েরি/পর্ব-১/সুমিত্রা মাহাত

কালিম্পং ডায়েরি
পর্ব-১

সুমিত্রা মাহাত

তথাকথিত চেনা পরিবেশের গন্ডী   ছাড়িয়ে অচেনা প্রকৃতির রূপ, রস ,গন্ধ অনুভব করার সামান্যতম সুযোগ ঘটলেও মন তা হাতছাড়া করতে চায় না।পলিমাটির পাহাড় আজও দেখা হয়নি আমার, তা তোমরা সৌভাগ্যই বল আর দুর্ভাগ্যই বল। লালমাটিতে গড়াগড়ি খেয়েছি এতকাল, যাতে কোদাল পিটে পিটে আমার পূর্বপুরুষের হাতে আকল পড়ে গেলো।এবার আমি চাক্ষুষ করতে চাই কীভাবে বিনা পরিশ্রমে ঝুর ঝুরে পলিমাটি ঝরে পড়ে।সে আরেক জ্বালা ! দেখতে চাই কীভাবে হিমালয় তার ছানাপোনাদের নিয়ে উত্তর দিক আগলে রেখেছে।ছোট বেলা থেকে হিমালয়ের উপকারিতা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে,তার সৌম্যকান্ত রূপ কল্পনা করতে করতে হৃদয়ে জ্বালা ধরে গেছে তাও তার দেখা দর্শন পেলাম না। অবশেষে ছেলে মেয়ে কিকবক্সিং এর রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় কালিম্পং যাচ্ছে এই ছুতোয় টুকুস করে গলে পড়লাম। যাব কি যাব না এই দোলাচলতার মধ্য দিয়ে,অদৃষ্টের পরিহাসে শেষ পর্যন্ত যেতেই হল।
বেশ কিছুদিন আগে থেকেই প্যাকিং করার চেষ্টা করি। বাচ্চাদের নিয়ে গেলে যথেষ্ট চিন্তা হয় ,পাছে ফাঁক ফোঁকর গলে কোন প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে যায়। প্রত্যেকের ই দুটো করে লাগেজ হলো।আমার একটি সাইড ব্যাগ ও একটি লাল রং এর,চেন দেওয়া হাতে ধরা ব্যাগ। সাইড ব্যাগে রয়েছে পার্স , মোবাইল, চার্জার , প্রয়োজনীয় ওষুধ পত্র, ক্রীম, ফেসওয়াস,লিপস্টিক, লিক্যুইড সিঁদুর, একটি প্লাস্টিকের আয়না ,বড় দাঁড়ের চিরুনী,কিছু ড্রাই ফ্রুটস ,বিস্কুটের প্যাকেট, রুমাল, ব্রাশ, সুতির ওড়না চকোলেট, মেয়ের টুপি,কলম,ভিক্স, লবঙ্গ ,আধার কার্ড, মোদ্দা কথা হল সমস্ত সংসার টাকে ঢাকাই মসলিনের মতো ভাঁজ করে আমার সাধের দেশলাই বাক্সে ভরে নিয়েছি।লাল রং এর ব্যাগ টি তো প্যান্ডোরার বাক্সে পরিণত হয়েছে ।রয়েছে পনিরের তরকারি, রুটি,দুটি এক লিটার এর জলের বোতল, কৌটতে আলাদা ভাবে নিয়েছি নুন, চিনি ,ছোলার ছাতু,প্রোটিন পাউডার, কিছু পুরনো খবরের কাগজ, স্টীলের গ্লাস, চামচ ,মুড়ি,বালিতে ভাজা চিঁড়ে, কিছু বিধিসম্মত পলিব্যাগ,টুথপেষ্ট , ব্রাশ ও চশমা। বোঝাই যাচ্ছে ব্যাগের ওজন প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই !


 জহারগ্রাম: মেয়ের কাঁধে ছ-পাউন্ড রুটি আকারের ছোট সাইডব্যাগ।তাতে মোবাইল, রুমাল, জলের বোতল, জিরে,জোয়ান, শান্তিনিকেতন থেকে আনা খেজুর পাতার বিনুনী  করা ছোট চপের আকারের একটি আয়না,লিপবাম, ভেসলিন...একেবারে টীনএজের খোরাক ও রুচি অনুযায়ী গচ্ছিত। হাতে ঢোলকের আকারের একটি কীটব্যাগ, তাতে রয়েছে কিকবক্সিং এর সমস্ত গার্ড। রয়েছে ড্রাইফ্রুটস ,বিস্কুট, জলের বোতল, ভলিনি স্প্রে, চকোলেট, টি ট্রি অয়েল ,বাম,ব্রাশ ইত্যাদি।
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
ছেলের পিঠে একটি ছোট স্পোর্টস ব্যাগ ,যা দীপক মামার কাছে গিফট পেয়েছিল।ব্যাগটি খুব ই সুন্দর, টেকসই ও মজবুত। যবে থেকে ব্যাগ টি পেয়েছে ও যেমন খুশি ব্যবহার করে।আবার ধুয়ে দিলে আগের মতো।ঠিক যেন দাঁতনের বঁটি,যত খুশি ব্যবহার করো আবার শান দিয়ে দিলেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।ব্যাগে রয়েছে একটি ফুল হাতা গেঞ্জি, উলের টুপি,টিশার্ট, বারমুন্ডা ,ড্রাইফ্রুটস, বিস্কুট, কলম ও একটি ডায়েরি, তাতে আমাদের বাড়ির ঠিকানা ও ৮১ গুষ্টি র ফোন নম্বর লেখা! ও সবচেয়ে ছোট ও ওর কাছে মোবাইল নেই বলে এই ব্যবস্থা নেওয়া। হাতে রয়েছে কীটব্যাগ তাতে কিকবক্সিং এর সমস্ত গার্ড, জলের বোতল, ব্রাশ, ভলিনি স্প্রে, চকোলেট ইত্যাদি।

হাজব্যন্ড এর কাঁধে তুলনামূলক বড় একটি পিঠ ব্যাগ, তাতে তার বাড়িতে পরার একসেট ও বাইরে পরার দুসেট জামাকাপড়,লুঙ্গি, গামছা, ব্রাশ, চার্জার, ওষুধ, হাফ লিটার এর জলের বোতল,বিস্কুট, ড্রাইফ্রুটস, সুতির বিছানার চাদর, মাফলার ইত্যাদি। হাতে এক ক্যুইন্টালের একটি ট্রলি ব্যাগ। আমি কান মুলে নাক খত দিয়ে নিয়েছি, জীবনে এটিকে আর সঙ্গে নেব না তা সে যতই অসুবিধে হোক। ট্রলির সমস্ত জিনিস ব্যবহার হয়েছে ঠিকই কিন্তু লাগেজ ওঠা নামার ক্ষেত্রে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাতেই এই সিদ্ধান্ত। ট্রলি বৃত্তান্তে রয়েছে দুটি পাতলা কম্বল, দুটি উলের চাদর, মেয়ের দুসেট বাড়িতে পরার ও একসেট বাইরে পরার পোশাক, ছেলের দুসেট বাড়িতে পরার ও একসেট বাইরে পরার পোশাক, সবার ওষুধ, সাবান, তেল,টুথপেষ্ট, লেবু,আদা,গোটা ছোলা, মুগ, চিনি, বাড়তি ছোলার ছাতু,আমার দু সেট জামা কাপড়।সবার একটি করে জ্যাকেট, দুটি স্টীলের থালা।ট্রলি ব্যাগের মাঝের চেন ও ছেলে মেয়ের দুটি কীটব্যাগ এ ছোট তালা দেওয়া ।

 ভ্রমণের কথা বলতে গিয়ে এমন সবিস্তার প্যাকিং এর বর্ণনা অনেকের কাছেই বিরক্তিকর মনে হতে পারে কিন্তু প্যাকিং এর ক্ষেত্রে চিরকাল শিক্ষানবীশ আমি সুপরামর্শ লাভের আশাতেই তা তুলে ধরেছি।



Post a Comment

0 Comments