বিখ্যাত মহিলা সাঁতারু বুলা চৌধুরী
সুমিত্রা ঘোষ
সাঁতারু বুলা চৌধুরীর নাম এক সময়ে লোকের মুখে মুখে ফিরত। বুলা চৌধুরীর পূর্বসূরী সাঁতারু আরতি সাহা প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি ইংলিশ- চ্যানেল পাড় হয়েছিলেন ১৯৫৯ সালের শেষের দিকে। বর্তমান সময়ে সামাজিক পরিবর্তনের জোয়ারে এই দুজন বিখ্যাত সাঁতারুর নাম আর শোনা যায় না। আরতি সাহার জীবনীতে জানা যায় স্কুল জীবনে প্রতিটি সাঁতার প্রতিযোগিতায় আরতি সাহা প্রথম স্থান লাভ করেছেন। কোলকাতা শোভাবাজারে হাটখোলা গঙ্গার ধারে আরতি সাহার বাপের বাড়ি । তাঁহার কাকা বিশ্বনাথ সাহার সহযোগিতায় চার-পাঁচ বছর বসে কলকাতার গঙ্গার বুকে আরতি সাহার প্রথম সাঁতার শিক্ষা শুরু হয়। সাঁতারে মেয়ের উৎসাহ দেখে বাবা পাঁচুগোপাল সাহা হাটখোলা সুইমিং ক্লাবে মেয়ে-আরতিকে সভ্য করে দেন।
আরতি সাহার উত্তরসূরী বুলা চৌধুরীর বাড়ি কলকাতার হিন্দমোটর এলাকায়। বুলা চৌধুরীকে জলপরী আখ্যা দেওয়া হলেও খেলাধূলাতেও তিনি সমান পারদর্শী ছিলেন, ক্রিকেট ও ফুটবলের প্রতি বুলার কোন আগ্রহ না থাকলেও অ্যাথলেটিকস্ ও জিমন্যাসটিকস-এ তাঁর খুব আগ্রহ ছিল, এবং এই দুই খেলার জন্য চর্চাও করেছেন। তিনি ছেলেবেলায় টেবিল-টেনিস খেলতেন। বলা যায় বুলা চৌধুরী জলে ও স্থলে সমান কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। খেলাতেও তিনি চাম্পিয়ান হয়ে পুরষ্কার জিতেছেন।
অনুমান বুলা চৌধুরীর যখন বারো বছর বয়স, ১৯৮২ সালে সেই সময় দিল্লিতে যে জাতীয় তথা এশিয়াড ও কমনওয়েলথ গেমস-এর ট্রায়াল শুরু হয়েছিল সেই সময় বুলা চৌধুরী ১০০ মিটার, ২০০ মিটার দুটো ইভেন্টেই রেকর্ড গড়ে সোনা জিতেছিলেন। জানা যায় ৮২সালে বুলা চৌধুরীর ডেঙ্গি হয়। বুলাকে ছেড়েই চলে গেল দল। একা অসুস্থ বুলা পড়ে ছিলেন পাটিয়ালায়। সেই সময় খুব কষ্ট পেয়েছিলেন তিনি। ১০০ মিটার, ২০০ মিটার দুটো ইভেন্টে সোনা জিতে ব্যক্তিগত চাম্পিয়ন হওয়া তখনকার দিনে সহজসাধ্য ছিল না। তখনকার দিনে বুলা চৌধুরীর সমসাময়িক দুই নামী সাঁতারু অনিতা সুদ ও পার্সিস ম্যাডানকে হারিয়ে সোনা জিতেছিলেন। ওঁদের দুজনকে হারানোর খবরে তাঁকে ধন্য ধন্য করেছিল আপামর দেশবাসী। বুলা চৌধুরী বিখ্যাত সাঁতারুর তকমা পেলেন। আর জলপরী আখ্যাও পেলেন। জলপরী হয়ে ওঠার পেছনে বুলা চৌধুরীর প্রধান সহায় ছিল তাঁর মনোবল ও জেদ। তিনি প্রথম জানলোন সাঁতারে এমন কৃতিত্ব আর কেউ অর্জন করতে পারেননি। খেলোয়ার জীবনের সর্বোচ্চ সম্মান অর্জুন পুরস্কার পেয়ে তিনি দারুণ খুশি হয়েছিলেন।তিনি মনে করেন অর্জুন পুরস্কার তাঁহার জীবনে সার্থকতা এনে দিয়েছে। ১৯৮২ সালে যখন অনিতা সুদ ও পার্সিস ম্যাডানকে হারিয়ে সোনা জিতে নিলেন তখন তিনি কথার ছলে বলেছিলেন, ১২ বছর বয়সে তিনি সোনা জিতেছেন। সেই সূত্র ধরে বলা যায় অতি অল্প বয়সে তিনি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে সার্থকতা লাভ করেন। বুলা চৌধুরী অর্জুন পুরস্কার পান ১৯৯০ সালে।
একটা কথা অনেকে জানেন দেশের সাঁতার জগতের উপর মহলের একান্ত ইচ্ছা থাকে সাঁতারুরা উপর মহলে বা দেশের সাঁতার জগতের লোকদের যদি খোশামোদ করে চলে তবে তাদের মঙ্গল হবে। বুলা চৌধুরী কারুকে অর্থাৎ উপর মহলের লোকদের তোষামোদ করা একদম পছন্দ করতেন না। তিনি অন্য ধাতুতে গড়া ছিলেন। এক সময় তাবড় - তারড় সাঁতারুরা বুলা চৌধুরীর বাড়ি যাওয়া-আসা করতেন, নানাপ্রকার পরামর্শও দিয়েছেন। উপর মহলের লোকেরা এমনও বলেছেন সাঁতার জগতে উপর মহলের লোকদের খোসামোদ করে চললে মঙ্গল হবে এবং পুরষ্কার পাওয়া সহজ হবে। বুলা চৌধুরী উপর মহলে খোসামোদ না করে নিজের উপর বিশ্বাস রেখে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। পরিশ্রম ও সততায় জাতীয় সম্মান লাভ করে ভারতমাতাকে ধন্য করেছেন। পরিশ্রমের বিকল্প নেই একথা তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন।
দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে নিয়মিত : জ্বলদর্চি।
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
পাটিয়ালায় প্রথম বুলাকে দেখেন সঞ্জীব চক্রবর্তী। তিনি জানতে পারলেন অলিম্পিকের জন্য যে শিবির হচ্ছে সেখানে একটা প্রতিভাবান বাঙালি মেয়ে এসেছে, নাম বুলা চৌধুরী। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত একসঙ্গে অনুশীলন, ক্যাম্প, প্রশিক্ষণ করতে করতেই দুজনের প্রতি দুজন নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, বুলা চৌধুরী এবং সঞ্জীব চক্রবর্তী একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠলেन। ১৯৯৩ সালে উভয়ের বিয়ে হয়। ৯৪ সালে তাঁদের পুত্র সর্বজিতের জন্ম হয়। বুলা চৌধুরী যখন দূরপাল্লার সাঁতারে মনোনিবেশ করেছেন তখন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সঞ্জীব চক্রবর্তীর সহযোগিতা পেয়েছেন।
0 Comments