জ্বলদর্চি

পালোয়ানের ছেলে /ভাস্করব্রত পতি

বাংলা প্যারোডি কবিতা, পর্ব -- ২৭
পালোয়ানের ছেলে

ভাস্করব্রত পতি

সবাই চেনো সেই পালোয়ান, নামটি যে তাঁর ষষ্ঠিচরণ। 
কেউ জানোনা তাঁর যে ছেলে, বেনিয়াটোলার কষ্ঠিবরণ।। 
বাপের চেয়েও শক্তিশালী, বলবে শুনে গ্যাঁজানো কথা। 
মারলে টোকা আলতো করে, মরবে তুমি ভেঙেই মাথা।। 
কষ্ঠি যাবে মামার বাড়ি, যেইনা পথে গাড়িতে ওঠা। 
মড়মড়িয়ে ভেঙেই কুচো, লেটেস্ট মডেল মারুতিটা।। 
এইতো সেদিন ইষ্টিশানে, আসছিল মেল প্রবল বেগে। 
থামলো সে ট্রেন নিথর হয়ে, ঝট করে তাঁর কনুই লেগে।। 
পুলিশ সুপার তাঁকেই ডাকে, বাড়ি ভাঙার ড্রেজার ছাড়ি। 
এক ঘুঁসিতে গুঁড়িয়ে ধুলো, চৌদ্দ তলা প্রাসাদ বাড়ি।। 
মিডিয়াতে খুব খবর হলো, কষ্ঠি বলে ফুলিয়ে ছাতি, 
"এইটুকু এক কাণ্ড দেখে, মিছেই করছে মাতামাতি"।। 
রোজ ভোরেতে একনাগাড়ে, 'ডন' দ্যায় প্রায় হাজার কুড়ি। 
তারপরে খায় দশটি জালা, মশলা দেওয়া লঙ্কা মুড়ি।। 
সঙ্গেতে তাঁর একটি লরি, পাকা ফলের পাহাড় আসে। 
পাঁচ কিউসেক লেবুর স্কোয়াশ, সাজানো থাকে তারই পাশে।। 
তারপরে সে নাকটি ডেকে, লম্বা হয়ে ঘুমোয় দোরে। 
চারশো মজুর মজুত থেকে, ঐ সময়টা বাতাস করে।। 
দুপুর বেলা খায়না কিছুই, এক্কেবারে বিকেল বেলা। 
তখন আসে লুচির ঝুড়ি, ব্যস্ত থাকে দেড়শো চ্যালা।। 
সঙ্গে থাকে তিরিশ কাহন, বরফি কাটা ক্ষীরের সুজি। 
তবেই বোঝো কষ্ঠিবরণ, নয়কো মোটেই হেঁজিপেঁজি।।

🍂


পালোয়ান

সুকুমার রায়

খেলার ছলে ষষ্ঠিচরণ হাতী লোফেন যখন তখন,
দেহের ওজন উনিশটি মণ, শক্ত যেন লোহার গঠন।। 
একদিন এক গুণ্ডা তাকে বাঁশ বাগিয়ে মার্‌ল বেগে—
ভাঙল সে বাঁশ শোলার মত মট্‌ করে তার কনুই লেগে।। 
এইত সেদিন রাস্তা দিয়ে চল্‌তে গিয়ে দৈব বশে,
উপর থেকে প্রকাণ্ড ইট পড়্‌ল তাহার মাথায় খ’সে।। 
মুণ্ডুতে তার যেম্‌নি ঠেকা অম্‌নি সে ইঁট এক নিমেষে
গুঁড়িয়ে হ’ল ধুলোর মত, ষষ্ঠি চলেন মুচকি হেসে।। 
ষষ্ঠি যখন ধমক হাঁকে কাঁপতে থাকে দালান বাড়ী,
ফুঁয়ের জোরে পথের মোড়ে উল্টে পড়ে গরুর গাড়ী।। 
ধুম্‌সো কাঠের তক্তা ছেঁড়ে মোচড় মেরে মুহূর্তেকে,
একশ জালা জল ঢালে রোজ স্নানের সময় পুকুর থেকে।। 
সকাল বেলার জলপানি তার তিনটি ধামা পেস্তা মেওয়া,
সঙ্গেতে তার চৌদ্দ হাঁড়ি দৈ কি মালাই মুড়কি দেওয়া।। 
দুপুর হ’লে খাবার আসে কাতার দিয়ে ডেক্‌চি ভ’রে,
বরফ দেওয়া উনিশ কুঁজো সরবতে তার তৃষ্ণা হরে।। 
বিকাল বেলা খায়না কিছু গণ্ডা দশেক মণ্ডা ছাড়া,
সন্ধা হ’লে লাগায় তেড়ে দিস্তা দিস্তা লুচির তাড়া।। 
রাত্রে সে তার হাত পা টেপায় দশটি চেলা মজুত থাকে,
দুম্‌দুমাদুম্‌ সবাই মিলে মুগুর দিয়ে পেটায় তাকে।। 
বল্‌লে বেশি ভাব্‌বে শেষে এসব কথা ফেনিয়ে বলা—
দেখবে যদি আপন চোখে যাওনা কেন বেনিয়াটোলা।।

Post a Comment

0 Comments