যুক্তি-তর্ক না যুক্তি-তক্ক
সুব্রত মাইতি
পরিবেশগত অবস্থা বদল না পরিস্থিতির অবস্থা বদল এ দ্বন্দ্বে আমি অন্তত দিশেহারা। গতকাল বা পরশু যে মানুষ কোন একটা কথা বলার আগে পাঁচ বা সাতবার পরামর্শ নিত,হঠাৎ কোন জাদু বলে দিন বদলের কথা বলে।সে এখন তিনি হয়ে বক্তৃতায় ব্যস্ত। এখন তো অনায়াসে যা কিছু সহজে বলা যায়। আর সেই কথা নিয়ে যুক্তি তর্ক না যুক্তি তক্ক কত চর্চা তার শেষ নেই।
অভিজ্ঞতা বলে যুক্তির সামনে তর্ক খাড়া করতে হলে তথ্য এবং তত্ত্বের প্রয়োজন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেউ যুক্তির ধার ধারে না কেবল তক্ক করে থাকে(তক্ক হল হাটুয়া গ্রামীণ শব্দ যা গ্রামাঞ্চলে প্রচলন আছে)। তাহলে বিষয়টা এমন দাঁড়ালো যুক্তি তর্কের এই শব্দবন্ধটা ক্রমশ হারাতে বসেছে। আমরা তো প্রতিদিনের জীবনযাপনে দেখি অপ্রয়োজনীয় কথার ঝড়ে যুক্তিপূর্ণ কথাগুলো মরে কাঠ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।
🍂আপনি যে কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকুন না কেন,আপনার সাদা কথা এবং সাদা কাপড়ের মূল্য কেউ দেবে না। একদল অতি সক্রিয় সমাজসেবক যেভাবে নিজেদেরকে প্রতিস্থাপিত করে চলেছে, সেখানে ইতিহাস ও ঐতিহ্য অসহায় ভাবে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে।
"অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশী আজ চোখে দেখে তারা।"
জীবনানন্দ দাশ।
সত্যি অদ্ভুত সময়ের মধ্যে হাঁটছি আমরা।অকাঠ্য অযৌক্তিক কথাগুলো যেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক করে তোলা হচ্ছে তা ভাবনাতীত।আসলে প্রচলিত একটি বাক্য আছে (হুড়্যার বিচার নাই)অক্ষরে অক্ষরে প্রতিষ্ঠিত।
আমাদের অতীত ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় আছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের উজ্জ্বল ইতিহাস আমাদের নত হতে শেখায়।এক একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী এক একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান।ইদানীং না জানা না পড়া মানুষজন অযৌক্তিক কথাগুলোকে জোর গলায় বলে সেগুলোকে মর্যাদা দিতে চাইছে। আর সাধারণ মানুষ হাততালি দিয়ে দিব্যি হজম করে চলেছে।
তবে কিছু আলোকিত সুশিক্ষিত মানুষ প্রকৃত বোধবুদ্ধি নিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা মাথায় নিয়ে তাঁরা এই অসংলগ্ন কথাবার্তার বিরুদ্ধে নিয়মিত প্রতিবেদন রেখে চলেছেন।এসবের মূল্যায়ন সেভাবে চোখে পড়ে না, তবে আশাবাদী মূল্যায়ন একদিন হবেই। সামাজিক মাধ্যমে গলা ফাটিয়ে তক্ক করা কথাগুলোই হয়তো বেশি বেশি সমাদৃত মনে হচ্ছে। জানিনা কবে বোধের বিকাশ ঘটবে?
এই অদ্ভুত সমীকরণ ভেঙ্গে মানুষ কবে বেরিয়ে আসবে?
সত্যি সত্যিই যুক্তি তর্ক নিয়ে কথা হবে, যুক্তি তক্ক নয় তারই অপেক্ষা।
0 Comments