দূরদেশের লোকগল্প—শ্লোভাকিয়া
ব্যাঙ কুমারির বর
চিন্ময় দাশ
এক গ্রামে থাকে এক বুড়ো আর এক বুড়ি। ভারি গরীব তারা দুটিতে। দু’বেলা খাটাখাটনি করে। তাতেই পেট চলে তাদের।
ঘরে অভাব। তা নিয়ে কোন দুঃখ নাই দুজনের। দুঃখ একটাই, ছেলেপুলে নাই তাদের।
বুড়ি প্রায়ই হা-হুতাশ করে—একটা বাচ্চা যদি থাকতো আমাদের ঘরে! কিচ্ছুটি চাইতাম না আর।
বুড়োটা মাঝে মাঝে বলে ফেলে—আহা, একটা মেয়ে হলেই, বেশি ভালো হোত। তাই না, বলো?
একদিন দু’জনে চার্চে গিয়ে হাজির হোল। যীশু তো ভগবান। ভারি দয়ালুও তিনি। দীন-দুঃখীদের তিনিই রেহাই দেন। নিশ্চয় আমাদের আবেদনে সাড়া দেবেন।
চার্চে গিয়ে হামলে পড়ল দুটিতে। -- ঠাকুর, তুমি তো বিধাতা পুরুষ। দয়ালুও তুমি। যে কোনও একটা বাচ্চা আমাদের দাও, প্রভু। এমনকি তুমি চাইলে, ব্যাঙের বাচ্চাও দিতে পারো। তাতেই আমরা খুশি।
যীশু শুনলেন তাদের কাতর প্রার্থনা। হাসলেন খানিকটা মনে মনে। সদয়ও হলেন দুটি দুঃখী মানুষের ওপর।
বুড়ো বুড়ো ঘরে ফিরে এসে অবাক। আরে, কুঁড়ে ঘরের দাওয়ায় এটা কী? আনন্দে বুক ফেটে যাওয়ার জোগাড় দুজনের। কী সুন্দর ঝকঝকে ছোট্ট একটা ব্যাঙের বাচ্চা। আদর করে তাকে ঘরে তুলল দুটিতে।
জীবন বদলে গেল বুড়োবুড়ির। পরিবেশ বদলে গেল কুঁড়েঘরটার। সারাদিন হাসি আর আনন্দ। বাচ্চাটাকে নিয়ে এই খেলা করছে। এই আদর করছে। বাচ্চাটা লাফিয়ে লাফিয়ে চলে। তাই দেখে তাদের কী আনন্দ! এই হাত তালি দিচ্ছে। এই নিজেরাই নেচে নিচ্ছে এক পাক। আসলে, কী করবে বাচ্চাটাকে নিয়ে, ভেবেই পাচ্ছে না তারা।
কিন্তু সব দিন কি আর সমান যায়? ঝামেলা শুরু হোল পড়শিদের নিয়ে। তারা হাসাহাসি করতে লাগল। ফিসফিস করতে লাগল—আদিখ্যেতা দেখে বাঁচি না। তাও আবার একটা ব্যাঙের বাচ্চাকে নিয়ে! কী ঘেন্না, কী ঘেন্না।
মহা ফাঁপরে পড়ে গেল দুটি বুড়ো মানুষ। কী করা যায়, কী করা যায়? অনেক ভেবে চিন্তে, ঘরের ভিতর আটকে রেখে দিল তারা বাচ্চাটাকে। কারও চোখে পড়তে দিল না আর। হাসাহাসি কানাকানি সব থেমে গেল ধীরে ধীরে।
ঘরেই আটকে থাকে বাচ্চাটা। খেলার সাথী কেউ নাই।বাবা মা ছাড়া, কারও মুখটিও দেখতে পায় না। একটা আঙুর খেতে কাজ করে তার বাবা। বাবার সাথে সেখানেই যায় বাচ্চাটা। থপথপিয়ে লাফিয়ে বেড়ায় এদিক ওদিক।
আদ্যিকালের ছোট্ট একটা টুকরি আছে বাড়িতে। দুপুর হলে, বুড়োর জন্য টুকরিতে খাবার ভরে, বাগানে যায় বুড়ি। তখন বুড়ির সাথে খেলা করে বচ্চাটা।
এ ভাবেই দিন যায়। দিন যায়, মাস যায়। মাস যায়, বছর যায়। বছরের পর বছর যায়।
এভাবে বুড়ির বয়স হোল। এখন আর টুকরি নিয়ে আঙুরবাগানে যাওয়া আসা গতরে কুলোয় না। বাচ্চাটাও আর বাচ্চা নাই। সেও বড় হয়েছে। সে বলল—তুমি ঘরে থাকো, মা। বাবার খাবার আমি নিয়ে যাবো এবার থেকে।
ব্যাঙকুমারী খাবার নিয়ে আসে। কাজ থামিয়ে বুড়ো খেতে বসে। ব্যাঙকুমারী তখন আঙুরলতায় চড়ে বসে। আর গান গাইতে থাকে। আহা, কী মিষ্টি গলা। কী মধুর সেই সঙ্গীত! বুড়োটার হাত থেমে যায়। খাবার ওঠে না মুখে। বাতাস থমকে যায়। ফুল আটকে থাকে কুঁড়িতে। স্রোত থেমে যায় নদীর। পাখিরা থামিয়ে দেয় তাদের কলকাকলি।
একদিন তেমনই দুপুরবেলা। বাবা খাওয়া শুরু করেছে। মেয়ে গান গাইছে আঙুরের ঝোপে বসে। সে দেশের ছোট রাজকুমার চলেছে সেই পথে। (সে দেশে সম্রাট বা রাজাকে বলা হয়—জার। রাজকুমাররা হোল—জারেভিচ, আর জারিনা হোল রাজকুমারি। এসব কঠিন কথা থাক। গল্পের খাতিরে, আমরা এখানে বরং রাজা আর রাজকুমার-ই বলি এদের।)
গানের মিষ্টি সুর ভাসছে বাতাসে। বাগানের কাছাকাছি এসে, থমকে গেল রাজকুমার। দেখতে দেখতে বছর কুড়ি বয়স হয়ে গেছে রাজার ছেলের। এমন সুর শোনেনি কখনও।
কে গাইছে এ গান! কার এমন মিষ্টি গলা! লাগামে টান মেরে, ঘোড়া থেকে নেমে পড়ল ছেলেটা।
এদিক ওদিক তাকিয়ে অবাকই হোল একটু। সামনে এই বুড়ো মানুষটা ছাড়া, কেউ নাই আর! বুড়োকে জিজ্ঞেস করল—কে গান গাইছে এখানে?
তাদের আদরের মেয়ে যে আসলে একটা ব্যাঙ, এটা কাউকে বলতে মন চায় না বুড়ো মানুষটার। একেবারে প্রথম দিন থেকেই, এটা তার অভ্যাস। তাই বুড়োটা বলল—কেউ না তো! এখানে এই ফাঁকা আঙুর বাগানে আবার কে গান গাইবে?
পরদিন একই সময়ে আবার ঘোড়া হাঁকিয়ে এল রাজার ছেলে। আবারো সেই গান। আবারো সেই মন মাতাল করা সুর!
আজ আর কোন কথা শুনতে রাজি নয় রাজকুমার—নিশ্চয় কেউ গান গাইছে। নিশ্চয় খুব সুন্দরী কোন মেয়ে। আমি এদেশের রাজার ছোট ছেলে। যদি একে খুঁজে পাই, রাজার কাছে নিয়ে যাবো ঘোড়ায় চাপিয়ে। একে বিয়ে করবো আমি।
--এমন ভুল কোর না, রাজকুমার। বুড়ো বলে উঠলো।
--আমি কী বলছি, ভালোই জানি আমি। রাজকুমার জবাবে বলল—এই মূহুর্তে তাকে বিয়ে করতে রাজি আছি আমি।
--সত্যি বলছো, তুমি বিয়ে করবে? নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছে না বুড়োর।
--কথা দিচ্ছি, করবো।
--তাহলে, চলো গাইয়ে মেয়েকে দেখি দুজনে। বাগানে ঢুকলো বুড়ো। পিছনে রাজার ছেলে। মাচার দিকে চোখ তুলে, বুড়ো বলল—নেমে এসো গো, গাইয়ে মেয়ে। এ দেশের রাজার ছেলে তোমাকে বিয়ে করতে চায়।
অমনি ঝুপ করে লাফিয়ে নেমে এলো ব্যাঙ্কুমারি। দাঁড়ালো একেবারে রাজকুমারের সামনেটিতে।
বুড়ো বলল—আমার নিজের মেয়ে। এটি একমাত্র মেয়ে আমাদের। যদিও দেখতে একেবারে ব্যাঙের চেহারা।
--দেখতে কেমন, চেহারা কার মতো—কিচ্ছুটি যায় আসে না আমার। রাজকুমার জবাব দিল— এর গান আমার ভালো লেগেছে। ভালো লেগেছে গাইয়েকেও। আসলে আমি বলতে চাইছি। একে বিয়ে করব আমি। রাজবাড়িতে নিয়ে যাব। অবশ্য এই মেয়ে যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়, তবেই।
এমন কথা মনেও আসবার কথা নয়। স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে। মুখে কথা সরছে না ব্যাঙ্কুমারির। কেবল মাথাটুকু নেড়ে দিতে পারল কেবল।
তা দেখে ভারি আনন্দ রাজকুমারের। বলল—তাহলে বলি, শোন তোমরা দুজনে। আমরা তিন ভাই। আগামীকাল আমাদের বিয়ের আয়োজন হয়েছে। বাবা তিন দিন সময় দিয়েছে আমাদের তিন ভাইকে। নিজের নিজের বিয়ের কনে আমাদের জোগাড় করে নিয়ে যেতে হবে। সেজন্যই কাল এসেছিলাম এই পথে। আজ কনে খুঁজবার শেষ দিন। আগামীকাল দরবারে হাজির হবো আমরা তিন ভাই।
তবে হ্যাঁ, একটা শর্ত আছে এর সাথে। আমরা তিন ভাই। একজনকে যুবরাজ ঘোষণা করা হবে কালকের সভায়। মানে, বাবার পরে, দেশের রাজা কে হবে, সেটাও ঠিক করে দেওয়া হবে কাল সভায়। সেজন্যই বাবার শর্ত, তিন মেয়েকেই তাদের নিজের নিজের পছন্দমতো একটা ফুল বা ফল নিয়ে যেতে হবে রাজার জন্য। যার উপহার রাজার মনে ধরবে, তার স্বামীই হবে যুবরাজ। তুমি কি রাজি আমার সাথে দরবারে যেতে?
ব্যাঙকুমারি বলল—আমি রাজি। তবে একটি কথা আছে আমার।
--বলো, তোমার কী কথা?
--ধুলো-ময়লা রাস্তায় থপথপিয়ে রাজবাড়িতে হাজির হবো আমি, সেটা তোমার জন্য মর্যাদার হবে না। রাজবাড়ির খামারে তো অনেক মোরগ-মুরগি। ধবধবে সাদা রঙের একটা মোরগ পাঠিয়ে দিতে হবে আমার জন্য। সেটাতে চড়েই দরবারে হাজির হয়ে যাবো।
রাজকুমার ভারি খুশি। বলল—তবে হ্যাঁ, উপহার নিয়ে যেতে ভুলো না যেন।
মনে কোন ভয় বা কিন্তু নাই ব্যাঙকুমারির। হোলই বা রাজার ছেলে। কিন্তু এমন সাদা সরল মন ক’জনের আছে? রাজার ছেলেকে ভারি ভালো লেগে গেছে তার।
রাজার ছেলে ফিরে গেল ঘোড়ায় চড়ে। মেয়েকে নিয়ে ঘরে ফিরে এলো বুড়োও।
সূর্য ডোবেনি তখনও। তাগড়াই একটা মোরগ এসে হাজির বুড়োবুড়ির উঠোনে। কথা রেখেছে রাজার ছেলে।
পরদিন সকাল হয়েছে সবে। বুড়োর ভারি মন খারাপ। বিয়ে বলে কথা! তাও আবার রাজার ছেলের সাথে। কিন্তু মেয়েকে বিয়ের পোষাক দেবে, সে সাধ্যি কোথায় গরীব চাষীর?
মেয়ে হেসে বলল—মন খারাপ কোর না, বাবা। সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
পূব দিকে মুখ করে দাঁড়াল ব্যাঙকন্যা। সূর্যদেবকে প্রণাম করে বলল—তোমার আলোয় তো অনেক রঙ, ঠাকুর। তা থেকে একটা ঝলমলে পোষাক বানিয়ে দাও আমাকে। দরবারে ঢুকলে, আমার জন্য যেন লজ্জায় পড়তে না হয় আমার রাজপুত্তুরকে। দয়া করো এই গরীবের মেয়েকে।
ভারি কৌতুক হোল সূজ্জিঠাকুরের। এমন মাগন তো কেউ মাগেনি কোন দিন। ভোরের আলো ফুটেছে সবে। তা থেকে সবচেয়ে উজ্বল রঙটি তুলে নিলেন তিনি। বিয়ের পোষাক বুনে, পাঠিয়ে দিলেন বুড়োর উঠোনে। পুরো একপ্রস্থ সোনার বরণ গাউন পেয়ে গেল মেয়েটা।
মোরগের পিঠে চড়ে, বেরিয়ে গেল মেয়ে। বুড়ো বুড়ির বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল। রাজার বাড়ি বলে কথা। সেখানে পুঁচকে একটা ব্যাঙ! মেয়েটাকেই না হারাতে হয় জন্মের মতো।
🍂
ব্যাঙকন্যা কাকুতি মিনতি করে বলল—দয়া করে যেতে দাও আমাকে।
--তোমাকে দয়া করে যেতে দিলে, চাকরি যাবে আমাদের, সেটা জানো তুমি?
--আর যেতে না দিলে, তোমাদের যে শূলে চড়তে হতে পারে, সেটা জানো তোমরা?
সেপাইদের ভারি কৌতুক হোল শুনে। বলল—কেন, কেন? শূলে চড়তে হবে কেন?
--চড়তে হবে এ জন্য যে, আমি হলাম ছোট রাজকুমারের বিয়ের কনে। আমাকে ফিরিয়ে দিলে, বিয়েটাই তো হবে না তার। তখন বুঝবে কেমন মজাটা হয়।
লোকগুলো গেল বেদম চমকে। তাড়াতাড়ি দেউড়ি ছেড়ে দিল ব্যাঙকে। নিজেরা বলাবলি করতে লাগল—অবাক কাণ্ড। বিতিকিচ্ছিরি একটা ব্যাঙের সাথে বিয়ে হবে আমাদের ছোট রাজকুমারের!
চৌকাঠ পেরিয়েই, নিজের গাউন খুলে ফেলল ব্যাঙকন্যা। তখন কোথায় গাউন, কোথায় ব্যাঙ! ঝলমলে বিয়ের পোষাকে অপরূপ সুন্দরী এক মেয়ে দাঁড়িয়ে সেখানে! মোরগ কোথায় উধাও। তেজিয়ান একটা ঘোড়ার পিঠে বসে আছে সেই মেয়ে। বরফের মত দুধ-সাদা রঙ ঘোড়াটার!
একে একে তিন কন্যা ঢুকল দরবারে। তিন রাজকুমার বেছে এনেছে তিনজনকে। ছোট রাজকুমারের এই মেয়েটির কাছে, নেহাতই সাধারণ লাগল, বাকি দুজনকে। দরবার শুদ্ধ সবাই চেয়ে আছে তৃতীয় জনের দিকেই।
এবারে বড় রাজকুমারের মেয়ে এগিয়ে গেল রাজার কাছে । রাজার হাতে ভারি সুন্দর আর সুগন্ধি একটা গোলাপ ফুল তুলে দিল মেয়েটি। রাজা একটু নাক কুঁচকালেন। মাথাও একটু নড়ল যেন। বিড়বিড় করে বললেন—হোল না।
এবার এলো মেজো রাজকুমারের কন্যে। তার হাতে একটা কার্নেশন ফুল। এবার চোখ আর মুখ দুটোই কুঁচকালেন রাজা। মাথা নড়ে উঠল এদিক ওদিক। বললেন—এটিও হোল না।
এবার এলো তৃতীয়জনের পালা। রাজার চোখেমুখে ঝলমলে আলো ফুটে উঠল মেয়েটিকে দেখে। ভারি খুশি হলেন মনে মনে।
মেয়েটি এগিয়ে একেবারে রাজার সিংহাসনের কাছে চলে এলো। রাজার গাউনের কোণা তুলে, ঠোঁট ছোঁয়ালো সামান্য। মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মান জানালো রাজাকে। ধন্য ধন্য করে উঠল সারা দরবার। রাজামশাই ভারি পুলকিত।
এবার এক কাণ্ড করলেন রাজা। নিজেই হাত বাড়িয়ে দিলেন মেয়েটির দিকে—দাও আমার হাতে। দেখি,তুমি কী এনেছ?
রাজার হাতে মেয়েটা যা তুলে দিল, সেটা ফুল নয়। খেত থেকে তুলে আনা এক ছড়া পাকা গম। কী ঝকমকে উজ্বল বাদামি রঙ ছড়াটার! আর, দানাগুলোও কী পুরুষ্টু!
কথা সরে না রাজামশাইর মুখে। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলেন মেয়েটার মুখের দিকে। ডান হাতে গমের ছড়া ধরা ছিল। বাম হাত বাড়িয়ে দিলেন মেয়েটার দিকে। সিংহাসনের পাশে দাঁড় করালেন মেয়েকে। ঘোষণা করলেন—ছোট রাজকুমারের এই মেয়েই আমার পছন্দ। ফুল নিয়ে সময় কাটানো রাজার কাজ নয়। গোটা রাজ্যের দায় থাকে রাজার ঘাড়ে। রাজাকে প্রথমে ভাবতে হয় ফসলের কথা। সেটাই বলে দিয়েছে মেয়েটি। এ মেয়ে দেখতে সুন্দর কেবল তাই নয়, বিচারবুদ্ধিও আছে এ মেয়ের মাথায়। দরবার আপত্তি না করলে, ছোট রাজকুমারকেই যুবরাজ ঘোষণা করতে চাই আমি।
উল্লাসে ফেটে পড়ল গোটা দরবার। রাজামশাই বললেন—আমার পর ছোট রাজকুমারই হবে দেশের রাজা।
দরবারের উল্লাস থামলে, মেয়েটি বলল—আমার একটা আবেদন আছে আপনার কাছে। রাজা বললেন—বলো, মা। কী বলবে।
ভারি গরীব আমরা। বাড়িতে বুড়ো বাবা মা আছে। তাদের দু’বেলা দুটো রুটির জোগাড় করে দিলে ভালো হয়।
হা-হা করে হেসে উঠলেন রাজামশাই-- সেটি তো কোনমতেই হতে পারে না, বাছা।
পাশে বসেছিল বুড়ো মন্ত্রী। সে বলে উঠল--এইটুকু তো কাজ। হবে না কেন?
রাজা বললেন—তোমার বয়স হয়েছে। কাজকম্ম ছেড়ে দাও এবার। গরীব বুড়ো মানুষটি এখন আমার বেয়াই, বুঝলে? সে থাকবে ঐ কুঁড়েঘরে? তাতে মান থাকবে আমার রাজবাড়ির? আমার প্রাসাদের পুরো একটা মহল ব্যবস্থা করে দাও। বাকি দিনগুলো একটু আরামে কাটুক মানুষটার।
বুড়ো বুড়িকে আর পায় কে? অভাবী মানুষ দুটো ছিল আঙুর খেতের চাষী। এখন হয়েছে রাজার বেয়াইমশাই আর বেয়ান ঠাকরুণ। যাকে বলে-- তাদের একেবারে পোয়া বারো।
0 Comments