জ্বলদর্চি

বাগদি চরিত ( দ্বাবিংশ পর্ব ) /শ্রীজিৎ জানা

বাগদি চরিত (দ্বাবিংশ পর্ব) 

শ্রীজিৎ জানা

সব্বেশ্বর অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিল নদী ঘাটে। চোখের জ্যোতি এখনো তার অতটা ঝাপসা হয়ে যায়নি। আধভরা শিলাইয়ের বহুদূর অব্দি সে তার দৃষ্টিকে মেলে দিতে পারে। স্রোতের ভাবগতিক, ঢেউয়ের স্বভাবচরিত্র বেশ ঠাওর করতে পারে দূর থেকেই। পানসিটা দিতে প্রথমে তার মন সায় দিচ্ছিল না। পরে খগেনের মুখ চোখের দিকে তাকিয়ে তার মনের ভিতরে ক্যামন যেন হয়। ঢোলে তাকে সবাই জানে একজন রসিক মানুষ হিসেবে। কথায় কথায় শোলক কাটে। পান-খয়েরের কষে কালো হয়ে যাওয়া দাঁত বের করে যখন হাসে, মানুষটার অন্তর অব্দি যেন দেখা যায়। কালসাবার মতো উদার মন তার। সবাই বড্ড আপন তার কাছে। সব্বেশ্বরের গিন্নি গত হয়েছে তা অনেকদিন হল। সারাদিনমান ডুবে থাকে কোন না কোন কাজে। কাজ বলতে নৌকার যত্নআত্তি। জষ্ঠির শেষ কিম্বা আষাঢ়ের মাঝে তার জলযান গুলিকে আলকাতরা মাখিয়ে পাঠ করে ফেলবে। শিলাইয়ের বালির চরে নৌকাদের চিত- উপুড় করে, কাত করে, পরম আদরে কালো তরল মাখাবে একাই। মাঝেসাঝে পানশিউলি থেকে মিস্ত্রি আনে। টুকরোটাকরা সারই করাতে হয়। বর্ষা নামা মানেই সব্বেশ্বরের দিনরাত কাটবে নৌকায়। নাওয়া খাওয়া সব তার ওই পানসিতেই। রাতটুকু শুধু শুতে আসে ঘরে।বছরের বাকি দিনে চলে মাছ ধরার সাজসরঞ্জাম বানানো। সব্বেশ্বর বলে, মাছ ধরার যন্ত্র। তলতা বাঁশের কাঠি দিয়ে ঝেপা, মুগরি, ঘুনি,হালুক,পাং তৈরি করে। জাল বুনে একসা। গুলামাথির চাঁচি বানায়। খেজুরপাতা শুকিয়ে তালই বুনে। ঘরের, পাড়ার বৌমারা একবার আবদার করলেই হল-
—-ও বাবা একটা মাছ ধুয়ার খালই বুনে ত দিতে পার। কদ্দিন মাছ ধুতেই পাইনি!
—-থাইলে জেঠা, মোকে একটা ঠেকা বুনে দিতে হবে কিন্তু।
—-বুড়া মানুষটাকে অত খাটালে মজুরি দিতে হবে। ঘর কি পর মোর কাছে কেউ ছাড় পাবেনি,বলে দিলম।
— আমরা কুথা থিকে পাব! লিলে তমার বেটাদের কাছ থিকেই লিবে।
—- ব্যাটারা আর বাপের নাই গো। বিয়ার পরে, বাপ-মা হবে চোখের ঠুলি/ বৌ গলার মাদোলি
কথা শুনে হেসে লুটিয়ে পড়ে সকলে। সবাবেশ্বরের মুখে তখন সেই পরিচিত হাসি ফুটে ওঠে। বৌমারা জানে সব্বেশ্বর মজুরি বলতে আসলে কি চায়। পাঁচ দশটাকা হলেই হল। সন্ধ্যা নামলেই সব্বেশ্বরের একটু দেশি না খেলে চলে না। আর যেই দেশি পেটে পড়ে সব্বেশ্বরের কথায় রসের মাত্রা বেড়ে যায়। নৌকার পাটাতনের নীচে বোতলে রাখা থাকে মদ। ঘাটপারে নৌকাটাকে নোঙর করে দিয়ে ঘটঘট করে দু'গ্লাস ঢেলে নেয় গলায়। সব্বেশ্বরের মদ আনে খোলসাখালির দুলা পাড়া থেকে। সবদিন নিজে যেতে পারে না। সব্বেশ্বরের স্যাঙাৎ আছে,গজাই। গজাইকে পাড়ার লোক বলে ললিপুড়া। সবাবেশ্বর হেসে হেসে তার ব্যাখ্যা দেয়,
— উ শালা উদুখখুলা ছেনা, অর কথা বাদ দাও দিখি। আজকালের ছেনা অরা। পুঁঠি মাছের জান। আমার ফাস কাটের মাল নাইলে নেশা লাগেনি। আর উ তাকেই খাবে। খেয়ে খেয়ে শালা ললি চুঁয়ি ফেলিচে। লউটে পড়ে যাবে শাল, কুনদিন শিলায়ে।
🍂

হঠাৎ বৃষ্টি ঝমঝমিয়ে নামতেই সব্বেশ্বরের মনটা কু ডাকে। তাছাড়া জেলা ঘাটে জাল তুলতে যাওয়ারও সময় হয়ে আসছিল। যদি কিছু পড়ে তবে চেতলাবাজার নিয়ে যাবে সে। সন্ধ্যার চ্যাতলাবাজারে চুনাচাপসা শোল, গোড়ই যা পড়ে চোখের নিমিষে বিক্রি হয়ে যায। আধভরা শিলাইয়ে টান আছে যথেষ্ট। খগেন ঠিকমত হাল বেয়ে নৌকা চালাতে পারবে কিনা সেই নিয়ে সবাবেশ্বরের মনে চিন্তা ছিলই। তার উপরে একটা মেয়েকে উঠতে দেখেছিল সে। কিছু বিপদ হলে সবার কাছে সে কি জবাবা দেবে। অনেক আগেভাগেই তাই নৌকাঘাটে এসে আড়ালে বসেছিল সে। যদিও মনে তার ভরসা ছিল। খগেনকে সে অনেকবার নৌকা বাইতে দেখেছে। দেরি হচ্ছে দেখে ঘাটের করঞ্জ গাছের তলায় বসে ছটপট করে সব্বেশ্বর। নিজেই নিজেকে প্রবোধ দেয়,
— শিলাই পাড়ের ছেনা,তাবাদে ঢোলের বাগদি! উ ছেনা যেদি না পারে ত কে পারবে! মোদের জাতের ছেনা মানে জলের পোকা। ষোল পণ লদী সাঁতরে পার করে দিবে নি! বাগদির ছেনাকে জব্দ করা অত সজা লয়। তবে উ রাক্কসীকে বিশ্বাস নাই। কখন কাকে পেটে পুরে লিবে কেউ জানবেনি। এখন ভালই ভালই পার করি দে রে শিলাই বুড়ি।
উবু হয়ে বসে বিড়বিড় করে বকতে থাকে সব্বেশ্বর। মাথায পেখা দেওয়া আছে তার। গেঁড়িবুড়ির জাত থেকে গত বছর কিনে এনেছিল সে। বৃষ্টি তখনো পড়ে চলেছে। হঠাৎ পানসিটাকে দেখতে পেয়ে ঝেড়েপেড়ে উঠে দাঁড়ায়। তবে তখনো সে খানিকটা আড়ালে থাকে। আর দেখে পানসিটা ঘাটে ঠেকা মাত্রই এক লাফে আড়ায় নেমে হাঁটা দেয় মেইছেনাটা। সব্বেশ্বর একঝলক দেখেই চিনতে পারে মাধুকে। কিন্তু কোন সাড়া দেয় না। খগেন আনমনা হয়ে পানসির দড়ি ঘাটের মাচার খুঁটিতে বাঁধতে থাকে। বৃষ্টির বেগ ততক্ষণে কিছুটা কমেছে। এবার সব্বেশ্বর আড়াল থেকে বেরিয়ে গলা খাকারি দেয়। খগেন মাথা তুলে দেখে  সব্বেশ্বর দাদু তার সামনে দাঁড়িয়ে। মুখে তার সেই চিরপরিচিত হাসি।
— বড্ড দেরি কোরদিলি দাদু। 
—-অই বিষ্টিটার জন্নে দেরি হয়ে গেল আর কি।
— তা কেমন ঘুল্লি দাদা? কদ্দুর গেইলি লৌকা বেয়ে? তালহিঁড় পেরি গেইলি নাকি?
—-না - না-অতটা যেতে পারিনি। বিষ্টি এসতেই লৌকা ঘুরি লিছি
কথা বলতে বলতে ততক্ষণে  সব্বেশ্বর উঠে এসেছে নৌকায়। খগেন নামেনি তখনো ঘাটে। আলো আঁধারি ছায়া ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। শিলাবতীর স্রোতের উপর সেই আবছায়া রঙ যেন গাঢ় হয়ে উঠেছে। এই প্রায়ান্ধকারের আবরণ ভেদ করে সব্বেশ্বর পানসি বেয়ে যাবে জেলাঘাট। সেখানে তার জাল আড় আছে। পাং আর হালুকও রেখে এসেছে। মাধায় পেখা,কোমরে খালই হাতে তার লগি বাঁশ।  নৌকার কিনারে বাঁশ হাতে এমন ভঙ্গিমায় সে দাঁড়িয়ে আছে যেন এক বীর জলদস্যু। স্রোতের উজান বেয়ে ছিনিয়ে আনবে শিলাবতীর গর্ভে লুকিয়ে থাকা মীনশস্য।
— দাদু! আর নামবে কেনে চল আজগে মোর সঙে জেলাঘাট। জাল তুলা,হালুক আড়া দেখবি। বিষ্টি পড়া ত থেমেই গেছে।
—-রাত হয়ে গেলে যে ঘরে বোকবে মোকে।
—- থাইলে ত পিয়নও বোকবে তার ঝিকে। ঠিক বোল্লম ত দাদু
সব্বেশ্বরের মুখে মাধুর কথা শুনে চমকে ওঠে খগেন। বুঝতে পারে মাধুকে দেখেছে সে। আর চেনাটা তো কঠিন ব্যাপার নয় মোটেই। কিন্তু খগেন বেশ জানে সবাবেশ্বর দাদু কাউকে কিছু বলবে না। তবে নেশার ঘোরে যদি কিছু আউড়ে ফেলে ত সর্বনাশ। হাঁদাগোবার মতো মুখ করে সব্বেশ্বরের দিকে তাকায় খগেন।
—কি হল রে শালা? ওরকম করে দেখুঠু কেনে। চল দিখি। লে দড়ি খুল। আমি লগি ঠিলিঠি,তুই হাল ধর।তার আগে থাম দিখি। জলে লামব ত এট্টু গা গরম করে লিই, দাঁড়া।
বলেই নৌকার গোলই থেকে জল সেঁচা টিনটা তুলে আনে। আর তার ভেতর থেকে বোতল বের করে স্টিলের গেলাসে করে নিয়ে গলায় ঢেলে নেয়। পর পর দু,বার। তারপর গলার আওয়াজটাকে বেশ জোরালো করে হাঁকে,
— চল রে শালা দেখি কেমন মাঝি হইচু।
নৌকা তরতরিয়ে ছুটতে থাকে উজানে। খগেনের মুখে কোন কথা সরে না। চুপচাপ হাল ধরে বসে  থাকে। তার মনের ভিতর এখন উজান ভাটার খেলা চলছে। মন তার একবার ছুটে যাচ্ছে মাধুর পিছু পিছু। আর একবার মন দাঁড়িয়ে পড়ছে এই পানসির পাটাতনের উপর সব্বেশ্বরের সামনে।
— তা দাদু পিয়নের ঝিকে কি মনে ধরেছে?
কথাটা শুনে আরো কুঁকড়ে যায় খগেন। বাঁ হাতটা শক্ত করে জাপ্টে ধরে হালের ডগা। পালিয়ে যাওয়ার এখন কোন রাস্তা নেই তার।  মুখ বুজে শুধু শুনতে হবে তাকে।
— পেম ভালবাসা দোষের লয় দাদু। কিন্তু আমে জামে ত মিলবেনি কুনুদিন। উ হল পিয়নের ঝি।  চাগরিবালার বেটি। পিয়ন এখন গেরামের মুরুব্বি। যেদি কানে উঠে পঞ্চগেরামী করে ছাড়বে উ। জরিপানা কত্তে পারে।  সব দিক ভেবে এগাবে, দাদা। বুড়া হইচি বুজতে পারিনি সব। গেরামের আইনকানন বদলি গেছে আখন। মোদের কথা কেউ গেরাজ্জ করবেনি, দাদু। ছেনামানুষ তুই!  এমন কিছু করিসিনি যাতে পরে পসতাতে হয়। বইলু?

ঘরে ফেরা অব্দি ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে থাকে খগেন। তবে বাইরে সে কাউকে বুঝতে দিতে চায় না। ভাবে মাধু যদি বলে দেয় তাহলে আর রক্ষা থাকবে না। পাড়া -ঘরে ছিছিক্কার পড়ে যাবে। মা বাপ তার মুখ দেখাতে পারবে না বাখুলে। বাপ তাকে আস্ত রাখবে না। স্কুলে, কালিতলায় সে আর বেরোতে পারবে না। কিন্তু এতদিন কি তাহলে সে মাধুকে ভুল বুঝল! মাধুর অমন টান, অমন করে মায়া বসানো কথা, সবই কি তাহলে নিছক পাড়াতুতো সখ্যতা ছাড়া কিছু নয়! খগেন আকাশপাতাল ভাবে।তাদের মতো বয়সে কি তবে প্রেম হতে নেই! কাউকে ভাল লাগতে নেই!খগেন মনে করে নাইনে পড়া ছেলেমেয়ে মানে অনেকই বড় হয়েছে তারা। শুধু গ্রামের চিন্তা চেতনার বয়সের গতি থমকে আছে কাঁসাইয়ের বাঁধঘেরা বোরো জলের মতো। মাঝে কোথা দিয়ে গলে যায় কটা দিন। নাহ্,কোন অঘটন তখনো ঘটেনি। খগেন বুঝতে পারে এর মানে।মানে একটাই, মাধু কাউকে কিছু বলেনি।খহেন ভেতরে ভেতরে আরো আকুল হয়ে ওঠে। বোঝে,মাধুর মনে তার প্রতি টান আছে। তবে কেন সে এড়িয়ে চলে গেল সেদিন? কেন এমন করে আঘাত দিল তাকে? খগেন এসব কথার উত্তর পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু মাধু কোন ধরা ছোঁয়া দেয় না। তার নাগালদূরে দূরে থাকে। কালিতলায় আর বিকেলবেলায় আসে না। দিন গড়িয়ে মাস, মাস গড়িয়ে বছর চলে যায়। এক দুবার মওকা পেলেও কথা বলে উঠতে পারেনি খগেন। তবে বেশ কয়েকবার মাধুর আড় চোখের চাউনি তাকে অনেক কথা বলে দিয়েছে। নিজেকে স্থির রাখতে পারে না খগেন। কথায় ব্যথা লাঘব হয়। খগেনের মনে গহীনে যে ব্যাথার দগদগে ঘা তা কারো হাতের স্পর্শে উপশম হবে না।
মাধ্যমিক সবে শেষ। আর কদিন বাদেই ঢোলের কালিপূজা। গ্রাম জুড়ে হইহই পড়ে গেছে প্রতি বছরের মতো। এখন সবদিন বিকেলে কালিতলায় ভিড় বাড়ছে। জমজমাটি আসর বসছে। কত পরিকল্পনা চলছে। খগেনের কোন কিছুতেই মন টানছে না। তার মনের ভিতরে চলছে অন্য এক হিসেব নিকেশ। সে যেন এবারখাতের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে! যখন আশেপাশে কেউ থাকে না,কালিতলার দক্ষিনের আসুদ গাছের তলায় বসে থাকে আনমনে,তখন অজান্তে নিজেই বলে ওঠে,
— মাধু,তুই একবার কথা বল। আমি কুনু দোষ করিনি। তোখে ভালবাসি। তুই না বাসু, না বাসবি।একবার শুদু কথা বলে যা।
আসুদ গাছের পাতাদের কলরব ছাড়া আর কেউ প্রত্যুত্তর দেয় না। খগেন বিমর্ষ হয়ে ঘরে ফেরে। ক্রমে তার ভিতর রাগ জন্মায়। বাগদির রক্তের ভিতরে এক আদিমতা আছে। বেপরোয়া সেই আদিম একগুঁয়েমি কখনো সখনো তাকে ঠেলে দেয় আত্মহননের লেলিহান অগ্নিকুন্ডে। খগেনও মনে মনে প্রস্তুত হয়। শিলাইয়ের ঘূর্নিস্রোত, নির্জন কলাইকুড় ঢিবির বাবলা গাছ, কেঁদালের পাড়নে লুকিয়ে রাখা বিষের শিশি তাকে হাতছানি দেয়। কিন্তু পরক্ষনেই তাকে কে যেন ঝাঁকুনি দিয়ে ঘোর কাটায়।
— তুই এগবার কথা বল খগেন। জানতে চাইবিনি শেষবারের মতো কেনে তোকে এড়িয়ে যাচ্ছে মাধু?
খগেন চোয়াল শক্ত করে। পূজার আগের সন্ধ্যায় মা কালির মন্দিরে লোক গমগম করছে। হঠাৎ খগেন দেখে মন্দিরের দুয়ারে থামের আড়ে দাঁড়িয়ে আছে মাধু। চোখের পলকে ছুটে যায় মাধুর কাছে। ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে পাগলের মতো মাধুর হাত দুটাকে জাপ্টে ধরে বলে ওঠে,
— তোর কি দোষ করেছি বল মোকে? কেনে তুই মোর সঙে কথা বোলুনু? কেনে এড়ি এড়ি থাকু মোকে? বল? বল?
—-ছাড় মোকে বলে দিউঠি। লোকে দেখে ফেল্লে সব্বনাশ হইযাবে খগেন। আসি বাঁচতে পারবোনি
—- আমিও তো বাঁচতে পারবো নি তুই না কথা বল্লে।
বলেই ঝরঝরিয়ে কেঁদে ওঠে খগেন। কান্না তখন মাধুর চোখেও। তবু কিছুটা সামলে মাধু খগেনের হাতের মুঠো থেকে নিজেকে মুক্ত করে দ্রুত সরে যায়। কিন্তু তখন যা হবার হয়ে গেছে। অনেক চোখের ক্যামেরায় বন্দী হয়ে গেছে সেই দৃশ্য। মন্দিরতলা নিমিষে সরগরম হয়ে ওঠে। যেন পাহাড়ি মৌচাকে কে ঢিল ছুঁড়ে মেরেছে। এবার হুল ফোটাতে ঝাঁকে ঝাঁকে রাগী মৌমাছির দল উদভ্রান্তের মতো দৌড়াবে। একে কালিপূজার মরসুম।  ঢোলের কালিপূজা বলে কথা! সন্ধে নামার আগেই এইকটা দিন গলা ভর্তি মদে ডুবে থাকে সব্বাই। মন্দির চত্বরে তক্ষুনি সালিশ বসে। সালিশিসভা উত্তাল হয়ে ওঠে,
— পিয়নের ঝিকে ধরে টানাটানি!
—-ধরে আন বানচোতকে। অকে ইখিনেই বলি দুব
—- জরিপানা কর আগে দেখি। তারপর কথা।
—- শালা হারামির পেট টিপলে দুদ বেরাবে মেইছেনা লিয়ে টানাটানি
লোকে লোকারন্য মন্দির চত্বরে ঘাড় নীচু করে বসে থাকে খগেন। আড় চোখে দেখে বাপ তার হাতজোড় করে মাধুর বাপের কাছে ক্ষমা চাইছে। তারপরের দৃশ্য আর খগেনের মনে ছিল না। যখন জ্ঞান ফেরে তখন দেখে মা তার মাথা সিতানে বসে আছে। হাতে ফোটানো আছে স্যালাইনের সূঁচ। খগেন শুয়ে আছে হাসপাতালের বেডে।

Post a Comment

0 Comments