ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৪৫
সম্পাদকীয়,
বছরের ৩৬৫ দিনই কোনো না কোনো কারণে স্মরণীয়। আজ স্বাধীনতা দিবস, কাল রাখী, পরশু প্রজাতন্ত্র দিবস, তরশু যুব দিবস.... বাকি দিনগুলির কোনোটিতে তোমার জন্মদিন, কোনোদিন তোমার বন্ধুর জন্মদিন, কোনোদিন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন... হাসছো? ভাবছো মৌসুমী আন্টি বানিয়ে বানিয়ে গল্প লিখছে? তাহলে শোনো ১৫ অগস্ট ছিল স্বাধীনতা দিবস সেই দিনের যে ছবিটা কল্যাণ আঙ্কেল পাঠিয়েছে তা প্রচ্ছদে রইল। শাড়িতে কি মিষ্টি লাগছে পতাকা হাতে ছোট্ট বন্ধুটিকে। তোমাদের বিদ্যালয়ে কেমন করে এই দিন পালিত হয় তা লিখেছে অনন্যা। স্বাধীনতা দিবসের ছবি এঁকে পাঠিয়েছে আয়ুস্মিতা আর মারিয়াম। ২০ অগস্ট প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর জন্মদিন, তা নিয়ে লিখেছে দোলনচাঁপা আন্টি। দিনটি সদভাবনা দিবস হিসেবে পালিত হয় সারা দেশে। কেন হয় তার জবাব গুগুল দেবে দেখে নিও। আপাতত জগদীশ আঙ্কেলের জবাই চাই ছড়াটা পড়ে নাও। মুক্তো কেমন করে তৈরি হয় তার জবাবে অরুণ জেঠুর মুক্তোপাহাড়ের গল্পটা পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবে। জানার কি শেষ আছে? পাহাড়ের পাদদেশে তরাই অঞ্চলে চা চাষ হয়। তার ছবি এঁকে পাঠিয়েছে রাণি। পাহাড়ের কথায় লাচুঙের কথা মনে পড়বে না তা কি হয়? পড়ে নাও এবারের পর্ব। সিকিম আর ভূটানের ম্যাপটা খুলে এবারের পর্ব পড়বে কিন্তু। আমাদের ছোটোবেলা ছোটো ছোটো পর্বে অনেকের মন জয় করছে তার প্রমাণ পাঠ প্রতিক্রিয়া। বন্দনা আন্টি প্রতিবারের মতো এবারেও অপূর্ব একটি প্রতিক্রিয়া লিখে পাঠিয়েছে। তার জন্য বন্দনা আন্টিকে প্রিয় পাঠকের ভার্চুয়াল ব্যাচ উপহার হিসেবে দিলাম। এসো ছোটোবেলা পড়ি আর প্রতিটা রবিবার স্মরণীয় করে রাখি। -- মৌসুমী ঘোষ।
ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
শ্রীকান্ত অধিকারী
পর্ব ২৪
সব ক’টা ছবি সরিয়ে দিয়েছে। আবার নতুন করে শেষ ম্যাপটা এনলার্জ করতেই ডিসপ্লে
থেকে ওরা চোখ সরাতে পারে না। অদ্ভুত এক মায়াভরা দৃষ্টিতে সকলেই চেয়ে রইল। যেন গিলে ফেলতে চাইল। ততক্ষণে ডিসপ্লে জুড়ে এক নিউ ল্যান্ডের সার্বিক মানচিত্র জ্বল জ্বল করে ওঠে। উত্তর পশ্চিম ভুটানের গাসা থিম্পু হয়ে ছুখা পর্যন্ত। পূর্ব নেপালের কাঠমান্ডু থেকে ওখাল ডুঙ্গা ধরণ
ধাঙ্কুটা, দার্জিলিঙ এবং ঘুম থেকে লেপচা জগতের তিনচুলে লামাহাটা তাকদা মাঙ্গোয়া আর সিক্কিমের পুরোটা। বিশেষ করে জংগুর আপার এবং লোয়ার রিজিওনের তিরিশটা পুরনো গ্রাম–পাসিংডং,কুসুং,টিংডঙ ,শাক্যং পেন্টংগ নিয়ে এক বিশাল স্টেট। যদি প্রতিষ্ঠিত হয় স্বপ্ন হবে সার্থক।
আহা স্বপ্নের দেশ! যুবকদের শরীরের ভেতর রক্তের ঢেউ খেলে গেল। এইটায় তো চায়। এই দেশ এই মাতৃভূমি তাদের নিজস্ব। তাদের পূর্ব পুরুষের। তারা প্রত্যেকেই ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সেই বন্ধনীর মত যে চিহ্নটি রয়েছে সেখানে আরো একবার মাথা নোয়ালো। তারপর আবার ঘরের ভেতরে একটা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে প্রার্থনা করে হিন্দু দেবদেবীর চরণামৃত নেওয়ার মত করে ছবির নীচে রাখা অনেকগুলো পাত্রের মধ্যে একটা পাত্র থেকে কাঠের চামচে করে এক গণ্ডূষ লাল রঙের তরল পান করল। আগে থেকেই রাখা পাথরের পাত্রে কয়েকটা পাকা কলা, কয়েকটা ম্যান্ডারিন(লেবু), চেরি, একটা প্লেটে ডিম-নুডুলস আর গোটা কতক কাঁচা ডিম। পাশে রকমারি পানীয়। পাহাড়ি ফুল,বিশেষ ধরনের ম্যারি গোল্ড দিয়ে সাজানো বেদীমূলে নিজেদেরকে একবার নত করে বেরিয়ে যাবে, ঠিক তখনই পাহাড় কাঁপিয়ে একদল বুনো কুকুরের ভয়ঙ্কর চিৎকার ভেসে এলো। হয়তো বা অন্য কিছু।
ধারে কাছেই সেই ডাক। হয়তো ঝোরার ধারে দুই আড়াল করা বেড়া দেওয়া ঘর থেকেই ভেসে এলো। সঙ্গে ওরা সবাই ছুটে গেল ঐদিকেই। তারপর যা দেখল তাতে ওরা চারজন যুবক পাথরের মত ঠায় দাঁড়িয়ে পড়ল। একমাত্র ঐ মহিলা আর সেই হাতির দাঁতের মালা পরা ছেলে জুং কেবল এগিয়ে গেল। এগিয়ে গেল নয় একপ্রকার ছুটেই গেল। পাশাপাশি দুই ঘরের একটা থেকে ,যেটা পাহাড়ের খুব কাছেই সেই ঘরের দরজা খোলা। বাইরে বিকট বুনো চিৎকারে তখন ওই ছোট গ্রাম তটস্থ। একটা নেকড়ে ব্রিড পাশের ঘরটার দরজার কাছে গলা উঁচু করে ছটফট করছে। কখনো মাথা নীচু করে মাটিতে কিছু শুঁকছে। কিছুক্ষণ এ রকম চলল বটে, কিন্তু তারপরেই অল্প সময়ের ব্যবধানে জঙ্গলের দিকে ছুটে নিমেষে হারিয়ে গেল।
কী করবে বুঝতে যেটুকু সময় নিয়েছিল ওরা তার মাঝেই ঘটনাটা ঘটে যায়। জুং ওই মহিলার দিকে একবার জোড়ালে রোষে তাকাল। মুখে কিছু বলল না। সঙ্গে সঙ্গে আবার আগের ঘরটায় ফিরে আসে এবং খোলা ডিভাইসে ডান হাতের স্মার্ট ওয়াচ কানেক্ট করতেই ট্রেস কোড জানান দিচ্ছে নেকড়েটা এখন আপার হিমালয়ের দিকে ছুটে যাচ্ছে। এই মুহুর্তে ওর অবস্থান পাহাড়ের কিছুটা ওপরে। এখনো ওটা ছুটছে।
জুং মাথা হেলিয়ে জানান দেয়, যেটা ঘটল একেবারেই সেটা অভিপ্রেত ছিল না। এর জন্য মহিলাটার দিকে বার বার ক্রুদ্ধ চোখে দেখে। এক সময় বলেই বসে,-কেন এমন হল? এর জন্য শাস্তি পেতে হবেই। জুং যেন ক্ষেপেই গেল। ছটফটিয়ে ওঠে সে। ডগকলারে যে ইলেক্ট্রো ডিভাইস আছে সেটার সঙ্গে বার বার কানেক্ট করে। ডিভাইস দেখাচ্ছে কিছুক্ষণ পরই সে পাহাড় টপকে ফেলবে। ওপারে চলে যাবে।আর তাহলে একটা ভীষণ ভয়ংকর রকমের ঝামেলায় জড়িয়ে যেতে পারে। কারণ ওপারে ভারতীয় সেনা ছাউনি। তারা এটাকে খুঁজে পেতে সময় নেবে না। এখন একটা লোককেই চায়। - মাণ্ডেস।
জুংয়ের দলে যে ক’জন কাম্বোডিয়ার লোক রয়েছে তাদের মধ্যে এক জনই ইন্টারন্যাশানাল স্কলার অ্যান্ড ওয়েব ডেভোলপার। এই ম্যান্ডেসই ইন্টারনেট অ্যপ্লিকেশন এবং ওয়েবসাইটগুলোর মেইনফ্রেম প্রোগ্রামার। মাঝে ইসরাইলে গিয়ে মডার্ন সফটওয়ের ও তার ব্যবহারের পাঠ নিয়ে এসেছ, তা খুব বেশিদিন হয়নি।
জুং ম্যান্ডেসকে ইমারজেন্সি কল করে,-কাম সুন।
এই সময় একটা খবর আসে। এক মহিলা বাইরে অপেক্ষা করছিল। জুং ঘর থেকে বেরোতেই খবরটা দেয়,- দশ নম্বর ঘরের লোকটা উন্ডেড। জ্ঞান নেই।
জুং মহিলাটির পেছন পেছন গিয়ে দ্যাখে বেড়া দেওয়া প্রথম ঘরটার পেছনের দিকে একটা লোক উপুড় হয়ে পড়ে আছে। তারপরই খানিকটা উঁচু জায়াগা, যেখানে একটা বিশাল পাথর পড়ে আছে। তারপর একেবারে খাড়াই। আর তেমন কিছু দেখা যায় না।
জুং ডাকে,-আমু!
একটু নীচু হয়ে আহত লোকটাকে দেখছিল এক লেপচা মহিলা। মহিলাটি জুঙের মা কিপু লেপচা। ডাক শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে লোকটাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে বলে।
জুং এদিক ওদিক কাউকে না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য মহিলাকে ক্ষত-বিক্ষত দেহটা ধরে নিয়ে যেতে ইশারা করে। আদেশ শোনামাত্র মহিলাটা কেমন অনায়াসে পা দুটো ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় পাশের ঘরের দিকে। কিছু দূর নিয়ে যেতেই ঘরের ভেতর থেকে এক সঙ্গে একদল নেকড়ের হাড় কাঁপানো হাউলিং ঘরগুলোর সকালটাকে কাঁপিয়ে দিয়ে গেল। ওরা কি ক্ষুধার্ত!
আজ হয়তো এমন ঘটনা আশা করেনি গ্রামের কেউই। বেশ কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে সবাই। এতক্ষণ কয়েকটা হিমালয়ান থ্রাস ডেকেই যাচ্ছিল। এক লহমাতে চুপ করে যায়।
ঠিক এই মুহুর্তেই সবাই অবাক দেখল, পুব আকাশে নীচে সুং চা পাহাড়ের কোলে কোলে এক দল লোক বাঁশে বেঁধে দুটো লোককে নিয়ে আসছে।
( ক্রমশ)
জবাব চাই
জগদীশ শর্মা
পাকা আম
না
আম পাকা
বনবন ঘোরে চাকা
ছেলে মানুষ
না
মানুষ ছেলে
ভেবে ভেবে চক্ররেলে
খাঁটি মানুষ
না
মানুষ খাঁটি
এখন আমি বৈদ্যবাটি
পাকা বেল
না
বেল পাকা
প্রশ্ন হাজির
জবাব ঢাকা।
মুক্তোপাহাড়ের রহস্য
অরুণ চট্টোপাধ্যায়
রাতে খাওয়ার পর ছোট্ট সোহিনি মায়ের কাছে খুব বায়না ধরল এবার টিভিতে পোগো চ্যানেল খুলে দিতে হবে। মা বললেন, না মা, এখন রাত হয়ে গেছে। এখন ঘুমোবার সময়।
-তবে আমাকে মুক্তোর মালা দেবে বল কাল?
সে শুনেছে মুক্তোর মালা এক সুন্দর ঝকঝকে মালা। বার বার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গলায় যেন মুক্তোর মালা পরে আছে এমন কল্পনা করেছে আর খুব খুশি হয়েছে।
মা পড়লেন বিপদে। মুক্তোর মালা নিজেই চোখে দেখলেন না কখনও তো মেয়েকে কিনে দেবেন কোথা থেকে? আর মুক্তোর মালা তো খুব দামী। সেটা কি করে দেওয়া সম্ভব?
কিন্তু মেয়ে কিছুতেই শুনবে না। মা তখন বললেন, তবে একটা রূপকথার গল্প বলি শোন।
রূপকথার গল্প শুনতে খুব উৎসাহ সোহিনির।
- শোন বলি তোকে এক মুক্তোরাজ্যের কথা। সেখানে শুধু মুক্তো আর মুক্তো। জমে জমে পাহাড় হয়ে গেছে একেবারে। সে যেন এক স্বপ্নপুরী। আলোয় একেবারে ঝলসে উঠছে চারিদিক।
দামাল দস্যি মেয়ে সোহিনি। সারাদিন ছটফট করে বেড়ায়। সে কি আর জেগে থাকতে পারে? আস্তে আস্তে ঘুমের পরি এসে চেপে বসল তার দুই চোখের পাতায়। খুব জড়ান গলায় সে একবার বলল, মা তারপর?
মা দেখলেন তারপর তার আর কোনও সাড় নেই। তিনি চলে গেলেন তাঁর নিজের কাজে।
সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে ঢেউ দেখতে দেখতে হঠাৎ সোহিনির মনে হল অনেক্ষণ তো হয়ে গেল কিন্তু মা বাবা এরা কোথায় গেল? তাকে একা ফেলে রেখে চলে গেল? ভয়ে ভাবনায় চোখে জল এসে গেল। জোরে চেঁচিয়ে কেঁদে মা বাবাকে ডাকবে কিনা ভাবতে ভাবতেই একটা আজব এমন কান্ড ঘটল যা সে কোনোদিন দেখেনি।
ঢেউয়ের ধাক্কায় বিরাট একটা ঝিনুক এসে তার পায়ের কাছে ছটফট করতে লাগল। বালির মধ্যে তো অনেক ঝিনুক থাকে। সবাই তো আর ঢেউয়ের সঙ্গে ফিরে যায় না সাগরের জলে। বেশ কিছু বালির মধ্যে গাঁথা হয়ে যায়।
ঝিনুক সে এর আগেও দেখেছে। তবে এতবড় ঝিনুক সে কখনও দেখে নি। অবাক লাগতেই সামান্য এগিয়ে যেতেই দেখল ঝিনুকটা তার ঠিক পায়ের সামনেই ছটফট করছে। যেন কিছু বলতে চাইছে।
নিচু হয়ে হাত দিয়ে তুলে নিল ঝিনুকটাকে। প্রচন্ড চমকে গেল সোহিনি। ঝিনুকটা মানুষের গলায় বলল, মুক্তোর মালার খুব শখ তোমার?
-হ্যাঁ হ্যাঁ আমার খুব ইচ্ছে গলায় মুক্তোর মালা পরার।
-তবে চল আমার সঙ্গে।
-তোমার সঙ্গে? কোথায়?
-আমাদের ঝিনুক রাজ্যে। সেখানে শুধু মুক্তোর মালাই নয় পাবে আরও অনেক অবাক করা জিনিস। সব ঝকঝকে মুক্তো দিয়ে তৈরি।
-যাব কী করে?
-কেন আমার পিঠে চেপে?
সোহিনি তো কিছুতেই বুঝতে পারে না সে কী করবে। ঝিনুক আবার বলল, আমাকে একটু জলের ধারে নিয়ে যাবে?
সোহিনি তাকে বালি থেকে তুলে জলের কাছে নিয়ে চলল। ঝিনুক বলল, এবার আমাকে জলে আস্তে করে ভাসিয়ে দাও।
তাই করল সোহিনি। ঝিনুক তার দুটো পাতা মেলে দিল জলের ওপর। যেন একটা ভেলা হয়ে গেল। ঝিনুক তাকে উঠে বসতে বলতে সে ভয়ে ভয়ে উঠে বসল। আসলে সে নিজেই কখন খুব ছোট হয়ে গেছে তা বুঝতেই পারে নি। খুবই ছোট – ঝিনুকের থেকেও। অবাক হয়ে দেখল জলের ঢেউয়ে দিব্বি নাচছে ঝিনুকের ভেলাটা। বেশ মজা হতে লাগল তার। বলল, কোথায় যাচ্ছ?
-তুমি তো মুক্তোর মালার বায়না ধরেছিলে মায়ের কাছে?
হ্যাঁ সেটা তো সে ধরেছিল। মা তো মুক্তো রাজ্যের গল্প বলছিলেন। কিন্তু তারপর কী হল তার আর মনে নেই।
-এখন চল তোমার নিমন্ত্রণ।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, কোথায়? কে করেছে?
-আমি তোমার কাছে ঝিনুকরাজার নিমন্ত্রণ পত্র নিয়ে এসেছি। রাজা স্বয়ং তোমাকে দেবেন একটা সুন্দর মুক্তোর মালা।
-আমায় দেবেন? কেন?
হাসির আওয়াজ এল ঝিনুকের মধ্যে থেকে, তুমি যে মায়ের কাছে চেয়েছ। এ জিনিস তো থাকে সাগরে। মা কোথায় পাবেন বল?
ভয়ে ভয়ে সোহিনি বলল, যদি ডুবে যাই?
-তা তো ডুবতেই হবে। মুক্তোপাহাড় তো জলের অনেক ভেতরে থাকে। শুধু তাই নয় আরও কত কিছু আছে দেখবে। কত মজার মজার কত কী। তোমার খুব ভাল লাগবে।
কথাটা ঠিক। সোহিনি শুনেছে সাগরের জলে অনেক কিছু থাকে। শুধু মাছই নয়। কত জীবজন্তু, গাছপালা, রঙ-বেরং-এর পাথর, কত বিচিত্র প্রাণী আরও কত কী। মন যাই যাই করছে কিন্তু মা বাবা?
তার মনের কথা বুঝে ঝিনুক উত্তর দিল, তোমার মা বাবা তোমার জন্যে কিছু কিনতে গেছেন মনে হয়। তারা ফিরে আসার আগেই তুমি ফিরে আসবে।
একটু গিয়েই জলের ভেতর ডুব গালল ঝিনুক। আর বাইরের সব জিনিস অদৃশ্য হয়ে গেল। সাদা মেঘ, নীল আকাশ, সবুজ গাছপালা সব কিছু। তার বদলে শুধু জল আর জল। যেন সে জলের মধ্যে ডুব সাঁতার কাটছে।
সে তো ঝিনুকের পিঠে বসে আছে। জলের মধ্যেও সে দেখতে পাচ্ছে দিব্বি। জলের ভেতরে অত ঢেউ নেই। কিন্তু আশেপাশে কত বুদবুদ ঘুরে বেড়াচ্ছে। কত গাছপালা যেমন থাকে জলের ওপরে। কিছু কিছু পাতা আর গাছের কিছু টুকরো ভেসে বেড়াচ্ছে। আর বেড়াচ্ছে মাছের ঝাঁক। কত রকমের আর রঙের। মাছেরা তার পাশ দিয়ে ঘুরে ঘুরে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে আবার তার পায়ের পাতায় আর আঙুলের মাঝে মাঝে ঠোকরাচ্ছে। বেশ ভাল লাগছে সোহিনির। ঝিনুক বলল, ওরা তোমাকে বন্ধু মনে করেছে।
-আমিও। সোহিনি বলল, এই জলের মধ্যে যা কিছু আছে সব আমার বন্ধু। আমার খুব মজা লাগছে। আমার এত বন্ধু!
নিচে নানা রঙের পাহাড়। ঝিনুক বলল, এগুলো প্রবালের পাহাড়। কোরাল বলেই সবাই বেশি করে চেনে এদের।
-কোরাল কী গো?
-কোরালই হল প্রবাল। এগুলো সমুদ্রের গভীর জলের ছোট্ট ছোট্ট এক প্রাণী। সবাই মিলে তারা একসঙ্গে থাকে। মারা যাবার পরে এরা সব পাথরের মত শক্ত হয়ে যায়। আর জমে জমে এমনি পাহাড় হয়ে যায়। তখন তাকেই তোমরা বল প্রবালের পাহাড়।
এরপর সেই আশ্চর্য জিনিসটা চলে এল। বিশাল ধবধবে সাদা একটা পাহাড়। ধবধবে আর ঝকঝকে। চোখ একেবারে ধাঁধিয়ে গেল সোহিনির। আবার নানা রঙের ছোট ছোট পাথর বসান যেন একটা মুকুট। সেই মুকুটের মধ্যিখানে আবার একটা বিরাট গেট। এক প্রাসাদের ফটক যেমন হয়।
-এটা হল ঝিনুক রাজ্য। আর এই হল মুকুটরাজের বাড়ি। এর নাম মুক্তোমহল।
সেই গেট দিয়ে ঢুকতে যাবে এমন সময় এক ঝিনুক প্রহরী তাকে বাধা দিল। যার সঙ্গে এসেছিল সেই ঝিনুক বলল, রাজার অতিথি।
প্রহরী ছেড়ে দিতে তারা ভেতরে ঢুকল। এটা একেবারে সাগরের তলদেশ। ঝিনুক বলল, আমার পিঠ তেকে এবার নামো।
🍂
সে নেমে মাটিতে পা রাখল। একটু দূরে সিংহাসনে বসে আছেন ঝিনুক রাজা। কী সুন্দর
সাজ তাঁর। কিন্তু আশ্চর্যের কথা এই হল যে তাঁর পরণে কোনও মুক্তোর মালা নেই। বদলে রঙ্গীন প্রবাল দিয়ে তৈরি গয়না।
রাজার সামনে তাকে দাঁড় করিয়ে ঝিনুক সেলাম করে বলল, মহারাজা মাননীয় অতিথিকে এনেছি।
-বেশ বেশ। রাজা হেসে বললেন, সোহিনি, তুমি নাকি মুক্তোর মালা চাও?
সোহিনি উৎসাহের সঙ্গে বলল, হ্যাঁ রাজামশাই। মুক্তো আমার খুব ভাল লাগে। কী সুন্দর ঝকঝকে আর ধবধবে। আর কেমন ঝলমল করে।
অবাক কান্ড। হঠাৎ মন্ত্রী এগিয়ে এসে বললেন, মহারাজ, আমি এই মানুষের শাস্তি চাই।
শাস্তি! সোহিনির বুক গুড়গুড় করতে লাগল। সে আবার কী দোষ করে ফেলল রে বাবা।
অমনি সেই সভার আর এক রাজপুরুষ বললেন, এই বালিকাকে শাস্তি দেওয়ার আগে বিষয়টা বুঝিয়ে বলা দরকার বলে মনে করি মহারাজ।
-বেশ বেশ। রাজা বললেন, তাছাড়া এ আমাদের অতিথি। আমার আমন্ত্রণেই এসেছে। আমন্ত্রিত অতিথিকে তো শাস্তি দেওয়া যায় না।
একটু যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল সোহিনি।
-তুমি জানো মুক্তো কী করে হয়?
রাজার প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেল। তা তো জানে না। মাথা নাড়ল সোহিনি।
অতিকষ্টে সাহস সঞ্চয় করে বলল, এখনও তো এটা বইতে পড়ি নি রাজামশায়।
রাজামশায় মন্ত্রীর দিকে ইঙ্গিত করতেই তিনি এগিয়ে এলেন বোঝাতে।
-তুমি দেখছ আমাদের দুটো খুব শক্ত খোলার ভেতরে আমরা খুব ছোট্ট জায়গায় আমাদের এক একজন থাকে। আমরা পাতা খুলি জলের ভেতর। কিন্তু বাইরে থেকে কিছু আমাদের আক্রমণ করতে এলেই আমরা পাতা বুজিয়ে দিই।
চোখ বড় বড় করে শুনল সোহিনি।
-কিন্তু ধর যদি বালি বা কিছু শক্ত জিনিস ঢুকে যায় তবে আমাদের গা থেকে সাদা এক রকমের আঠা বেরোতে থাকে আর সেটাই বার করে দেয় এই বালি বা অন্য কিছুকে। কিন্তু আমাদের গা থেকে বেরোন এই আঠা ততক্ষণে জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে যায় আর আমরা সেটা বার করে দিই।
সোহিনী চুপ করে রইল।
-এই চকচকে ধবধবে জিনিসগুলোকেই তোমরা মুক্তো বল আর হার, মালা, কানের দুল এসব করে গলায় বা কানে পর। সাগর ছেঁচে তুলতে হয় তাই এগুলো খুব বেশি দামে কিনতে হয় তোমাদের। সবাই কিনতে পারেও না। কিন্তু-
কিন্তু কী? সোহিনি কৌতূহলী চোখ তুলে তাকাল মন্ত্রীর চোখের দিকে।
-কিন্তু কিছু দুষ্টু লোক আমাদের জলের ওপরে তুলে পাতা খুলে কাঁচের গুঁড়ো, শক্ত পাথরের টুকরো এসব গুঁজে আবার জলে ফেলে দেয়। আর আমরা কি কষ্টে মরি তা বুঝতে পারছ? কত যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে আমাদের দেহের রস বার করতে থাকি। অনেক রস বার করতে হয় আর তাই আমরা কাহিল হয়ে পড়ি। অনেক লালা দিয়ে তবে বার করতে হয় ওই কাঁচের গুঁড়ো আর শক্ত পাথরের টুকরোটাকে। যতদিন না বেরোচ্ছে ততদিন কী অসহ্য যন্ত্রণা আমাদের সইতে হয় জান? তারপর এই দুষ্টু লোকেরা আমাদের জল থেকে তুলে সেই মুক্তো বার করে নিজেদের কাছে রেখে দেয়। আর বেশি দামে বিক্রি করে। আবার তেমন কাঁচের গুঁড়োc আমাদের শরীরে গুঁজে জলে ছেড়ে দেয়। শুধু মুক্তো তৈরি করার জন্যে তোমরা আমাদের ব্যবহার কর। আমাদের যন্ত্রণা দিয়ে তোমরা তোমাদের শখের জিনিস তৈরি কর।
বলা শেষ হলে মন্ত্রী চলে গেলেন নিজের জায়গায়। রাজা বললেন, সব তো শুনলে। এখনও কি তুমি মুক্তোর মালা চাও?
মন্ত্রীর গল্প শুনতে শুনতেই সোহিনির চোখে জল এসে গিয়েছিল। এখন রাজার কথায় টপ টপ করে চোখ থেকে জল পড়তে লাগল। ঝরঝর করে কেঁদে বলতে লাগল, না না আমি আর মুক্তোর মালা চাই না। আমি আর কখনও বায়না করব না।
-ওমা কেন চেঁচাচ্ছিস মা? আমি ঠিক তোর বাবাকে বলে একটা মালা আনিয়ে দেব।
কোথায় সাগর আর মুক্তো পাহাড়। কোথায় সেই ঝিনুক রাজ্য আর তার রাজা মন্ত্রী? সে তো রূপকথার গল্প শুনতে শুনতে কাল রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু হঠাৎ তার নিজের চোখে বালি পড়ার কথা মনে পড়ে গেল। ছোট্ট একটা বালি তাকে যদি এত কষ্ট দিতে পারে তবে ঐ ছোট্ট ঝিনুকগুলোকে মানুষ কত কষ্ট দেয়।
চিৎকার করে বলে উঠল, না না আমি মুক্তোর মালা নেব না। কিছুতেই না।
আমার স্বাধীনতা দিবস
অনন্যা দাস
সপ্তম শ্রেণি
কেশপুর গার্লস হাই স্কুল, পশ্চিম মেদিনীপুর
স্বাধীনতা দিবস সমস্ত ভারতবাসীদের কাছে একটি বিশেষ দিন। এই দিনটিতে সমস্ত জাতীয় প্রতিষ্ঠানে, সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, নানা সংস্হা, ক্লাব ইত্যাদি জায়গায় পতাকা উত্তোলন করা হয়। নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়।
সেই রকমই আমাদের কেশপুর গার্লস হাই স্কুলে ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়েছিল। ১৫ই আগস্ট এর তিন দিন আগে থেকে আমরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ প্রত্যেকটি শ্রেণীর কিছু কিছু ছাত্রী প্যারেডে অংশগ্রহণ করেছিল ও একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীর দিদিরা ড্রাম বাজানোর দায়িত্ব পালন করেছিল।
অবশেষে এলো সেই দিন। আমরা পতাকা ফুল হাতে আঁকা ছবিতে স্কুল সাজালাম।
আমরা তারপর সারিবদ্ধ ভাবে পথযাত্রায় গিয়েছিলাম। দ্বাদশ শ্রেণীর একজন দিদি ভারত মাতা সেজেছিল। এছাড়া বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রীরা নেতাজি মাতঙ্গিনী হাজরা সরোজিনী নাইডু, ঝাঁসির রাণী , বিবেকানন্দ ইত্যাদি সেজেছিল। পথযাত্রার সময় কিছুজন দেশাত্মবোধক স্লোগান দিয়েছিল। সকলে গলা মিলিয়ে ছিলাম। আমাদের স্কুলের শিক্ষিকারা এবং গানে পটু ছাত্রীরা দেশাত্মবোধক গান গেয়েছিল। অনেকটা পথ অতিক্রম করার পর আমরা সবাই স্কুলে ফিরে এসেছিলাম।
তারপর আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। আমরা সকলে জাতীয় সংগীত গেয়েছিলাম। আমাদের স্কুলের শিক্ষিকারা দেশের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামীরা কত কষ্ট করেছিলেন আমাদের সামনে বক্তৃতার মাধ্যমে তুলে ধরেন। কি ভালো লাগছিল সকালটা!
অনুষ্ঠান শেষে স্কুল থেকে প্রত্যেক ছাত্রীকে টিফিন দিয়েছিল। আমরা সকলে খুব আনন্দ করেছিলাম। আবার শহীদ বীরদের কথা ভেবে কষ্ট পেলাম।
প্রতি বছর এই দিনটিতে আমরা অনেক মহাপুরুষদের কথা স্মরণ করি যারা আমাদের দেশের জন্য কষ্ট করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন। আবার পরের বছর এই দিনটির অপেক্ষায় থাকলাম।
স্মরণীয় দিবস
সদভাবনা দিবস
(২০শে অগাস্ট)
কলমে -দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
ভারতীয়রা এবছর রাজীব গান্ধীর ৭৮ তম জন্মবার্ষিকী স্মরণে সদভাবনা দিবস ২০২৩ উদযাপন করবে। প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধায় ভারতে প্রতিবছর ২০শে আগস্ট সদভাবনা দিবস পালিত হয়।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কমিটি এই পুরস্কারটি প্রচলন করে, যার স্বীকৃতি স্বরূপ একটি মানপত্র ও নগদ ১০ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। এই পুরস্কারটি ২০শে আগস্ট অর্থাৎ রাজীব গান্ধীর জন্মবার্ষিকী যা ( সদভাবনা দিবস) সংহতি দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ২০শে অগাস্ট দিল্লিতে তাঁর সমাধিস্থল বীরভূমিতে গিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয় এই দিনে।
রাজীব গান্ধী ১৯৪৪ সালের ২০শে অগাস্ট মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর এক বছর পরে অর্থাৎ ১৯৯২ সালের ২০শে অগাস্ট সদভাবনা পুরস্কারটির প্রচলন হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৯৯১ সালের ২১শে মে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুমপুদূরে এলটিটিই জঙ্গির মানব বোমার হানায় নিহত হন তিনি।
এই দিনটি আয়োজন করার উদ্দেশ্য হলো, রাজীব গান্ধীর অবিস্মরণীয় প্রচেষ্টা, জাতীর অগ্ৰগতির কাজ এবং তাঁর দ্বারা অন্যান্য অভূতপূর্ব অবদান কে স্মরণ করা। এছাড়াও বলতে পারি, সদভাবনা দিবস পালিত হয় দেশের মানুষের আবেগ এবং অবদানকে স্মরণ করে। ভারত যেন একটি মহান উন্নত দেশ হয়ে ওঠে এবং ভারতের উন্নয়নই আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, রাজীব গান্ধী এটাই চেয়েছিলেন এবং বিশ্বাসও করতেন।
রাজীব গান্ধী ছিলেন সেই সময়ের এক যুব নেতা। দেশের উন্নয়নে তিনি যুব শক্তিকে প্রথম সারিতে রেখেছিলেন। তিনি যখনই বক্তৃতা দিতেন তখনই দেশের উন্নয়নের কথা বলতেন। তাই প্রত্যেক বছর সদভাবনা দিবসে ( তাঁর জন্ম বার্ষিকীতে) তাঁকে স্মরণ করা হয় এবং তাঁর দেশপ্রেম মূলক বক্তৃতা শুনে যুবশক্তি আজও অনুপ্রাণিত হয়।
ভারত একটি প্রাচীন দেশ, এখানে যুবরা যেমন নতুন কিছু করতে চাই, সেরকম ভারত দেশটিও নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখে। তিনি বলতেন যে ভারতকে স্বনির্ভর হতে হবে। তিনি ভারতকে একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের সামনে আনতে চেয়েছিলেন। মানবতার অগ্রভাগে ভারতের থাকা উচিত বলে তিনি মনে করতেন। রাজীব গান্ধীর এই চিন্তা ভাবনা আজও ভারতের যুবা শক্তি কে অনুপ্রাণিত করে।
বিশেষ করে সদভাবনা দিবস উপলক্ষে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস পার্টির সদস্যরা এবং দেশবাসীরা এই শপথ গ্রহণ করেন যে, দেশের প্রতিটি নাগরিক ভারতের সংবিধান রক্ষার জন্য জাতি- ধর্ম -বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকের থেকে প্রত্যেকের মনের দূরত্ব কমাতে হবে এবং সব থেকে আগে রাখতে হবে মানবতা বোধকে।
এই দিনে দেশের ঐক্য এবং অখন্ডতা রক্ষার লক্ষ্যে সকল সরকারি দপ্তরে সম্প্রীতি বজায় রাখার সংকল্প নেওয়া হয় এবং দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সকলকে সম্মানজনক জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করা হয়।
এই দিনে দেশের সমস্ত রাজ্যে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সবুজ পরিবেশ প্রকৃতিকে বাঁচানোর শপথ নেওয়ার মাধ্যমে আমরা সদভাবনা দিবস পালন করি।
রাষ্ট্রীয় সদভাবনা দিবস উদযাপনের মূল ভাবনা হলো, দ্বেষ, হিংসা বিসর্জন দিয়ে সংহতি ও ঐক্যের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতাকে অক্ষুন্ন রাখা। তাই মনে করা হয়, পরিবর্তিত সময়েও এই বিষয়টিকে আরো প্রাধান্য দিয়ে সংকল্পের সাথে উদযাপন করতে হবে।
পাঠপ্রতিক্রিয়া
(ছোটবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৪২-১৪৩ পড়ে প্রিয় পাঠক বন্দনা সেনগুপ্র যা লিখলেন)
কি গো? তোমরা সবাই নিশ্চয় বিশেষ সংখ্যা ১৫০ এর পথ চেয়ে আছো! আমি তো দিন গুনছি। সবাই নিজের নিজের লেখা আঁকা সব পাঠিয়ে দিয়েছো নিশ্চয়ই। সে কি ! এখনো পাঠাও নি? শিগগির শিগগির পাঠিয়ে দাও। নাহলে তোমাদের মৌসুমী মাসি কি করে সাজিয়ে তুলবে সেই বিশেষ সংখ্যা।
কিন্তু, ছোট্ট বন্ধুরা জানো আমার খুব মন খারাপ। এত্ত এত্ত খারাপ। কেন বল তো?
অপু পাল কি অসাধারণ একটি ছবি পাঠিয়েছেন। এতো রং! আকাশে মাটিতে সর্বত্র রঙের ছড়াছড়ি। অনুভব আর সাথী কি সুন্দর সুন্দর দুটি ছবি এঁকে পাঠিয়েছে। অনিন্দিতার প্রকৃতির ছবিটিও নানা রঙিন দৃশ্যের বর্ণনা করছে। লাচুঙের নেকড়ে গল্পে শ্রীকান্ত জেঠু কেমন সুন্দর করে ওখানের প্রকৃতির বর্ণনা করছেন। কিন্তু, আমরা এখন কি করছি? আমরা বেশির ভাগই যত্র তত্র গাছ কেটে ফেলছি, জল নষ্ট করছি, ফসিল ফুয়েল ব্যবহার করে ওজোন স্তর ফুটো করে ফেলছি। এ ছাড়াও নানান অস্ত্র শস্ত্র ও রাসায়নিকের ব্যবহার করে পৃথিবীর জল, বায়ু, আকাশ সবই দূষিত করে ফেলছি। দোলনচাঁপা আন্টি তো হিরোশিমা নাগাসাকির কথা লিখেছেন, সে তো ধ্বংস করার জন্যই করা। তাছাড়া, কার্গিল যুদ্ধের কথাও লিখেছেন উনি। কিন্তু, আমরা অনেক কিছুই আমাদের উন্নয়নের জন্য করছি, আর তার ফলে ক্ষতি হচ্ছে পৃথিবীর।
শুধু কি তাই! আমাদের মনেও যেন ঘুন ধরে যাচ্ছে। আমরা যখন ছোট ছিলাম, আমাদের বড়রা বলতেন সুমতি কুমতির কথা। সুমতি খুব ভাল। তার প্রাণে দয়া মায়া আছে। সে সবার সাহায্য করতে চায়, সবাইকে ভালোবাসতে চায়। মাঝে মাঝে সেট ব্যাক থাকে বৈকি। কিন্তু, সে সব কিছুকে, সবাইকে ক্ষমা করে এগিয়ে চলে। অপর পক্ষে, কুমতির বুক ভরা স্বার্থপরতা। সে শুধুই নিজেকে নিয়ে থাকতে চায়। তার কাছে ক্ষমা বা দয়ার বেশি স্থান নেই। আমাদের বলা হত যে এই সুমতি কুমতি দু বোনই আমাদের মধ্যে আছে, সব সময় ভাল মন্দ বুদ্ধি দিয়ে চলেছে। আমাদের স্থির ভাবে বিচার করে, যথা সম্ভব সুমতির কথা শুনে চলতে হবে। আরও বলা হত যে, সব মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর আছেন জেনে সবার সঙ্গেই যথা সম্ভব সদ্ভাব রেখে চলা উচিৎ। আজকালের সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থা দেখে মনে হয় অনেকেরই সুমতি বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়েছে। বন্ধুরা, তোমরা মনে রাখবে তো সুমতির কথা? 'ওপেনহাইমার' সিনেমাতে শুনেছি (আমি এখনও দেখিনি) তিনি নিজের সাফল্যে আনন্দিত হলেও, এতো নিরীহ নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুতে অনুশোচনা বোধ করেছিলেন। আমরা যদি সুমতির কথা শুনে চলি, যদি অকারণে অন্যের ক্ষতির কারণ না হই, তাহলে আমাদের বেশি রিগ্রেট করতে হবে না। অভিষিক্তার মা সরস্বতীর কাছেই আমাদের প্রার্থনা করতে হবে "মা আমাদের শুভ বুদ্ধি দাও" যাতে ঋতব্রতের মতো আমরাও বলতে পারি
"মানুষ ছাড়াও পশু পাখি
থাকুক সবাই যত্নে"।
তবেই তো রিপন বাবুর ছবির বাচ্চাটার মত সব বাচ্চাই হাসবে, সবার ছোটবেলাই সুন্দর করে সেজে উঠবে।
আমাদের চ্যাম্পিয়ন শৌনকশৌর্য তার উইজার্ড ক্লাবের গল্প শুনিয়েছে। জয়দেব বাবু লিখেছেন “ছেলের প্রশ্ন”। এই লেখাটি কিন্তু অনেক মা বাবাকেই ভাবিয়ে তুলতে পারে। সবাইকেই কি প্রথম দ্বিতীয় হতে হবে? বিলেত আমেরিকা যেতে হবে? লাখ লাখ টাকা রোজগার করতে হবে? পারলে ভালো, কিন্তু যারা পারবে না বা যারা এরূপ কিছু করতেই চায় না, তাদেরও তো একটা মন আছে, নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা আছে, সেটাকেও তো সম্মান দিতে হবে। না কি?
শর্মিষ্ঠা বসু দুই পর্বে লিখেছেন "অন্য মানুষ"। খুব সুন্দর গল্প। সত্যিকারের দুর্বলতা আমাদের মনের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে। তাকে চিনে ফেলে, যেমন অবনী বাবু চিনেছেন, রুখে দাঁড়ালেই সে মুখ লুকিয়ে পালায়। তখন কি আনন্দ!
আহা, মানসী পরীর দেশে বেড়াতে গিয়ে পড়ে গেলে! বড় হয়ে গ্লাইডিং বা প্যারাগ্লাইডিং চেষ্টা করতে পারো। পরীর দেশে যেতে পারবে না (সেটা আছে কিনা তাও জানি না) কিন্তু, উড়ে বেড়াতে পারবে।
শ্রীকান্ত বাবু আমাদের একটা নতুন জায়গা চিনিয়ে দিচ্ছেন। সেখানের গাছ পালা, পশু পাখি, মানুষ, সবের একটা সুন্দর শব্দ চিত্র আঁকছেন উনি। কিন্তু, এ কি হল! দ্বিপদ জন্তুর পাল্লায় পড়ল আমাদের শার্দূল মামা আর রামসিং! বেড়াতে গিয়ে বিপদ এসে পড়ল। তবে কথায় বলে "মামা ভাগনা যেখানে, বিপদ নাই সেখানে"। কাজেই ওরাও নির্বিঘ্নে ফিরে আসবে। তবে এপোক্যালিপ্ট তো বড়দের সিনেমা, একটু না বুঝিয়ে বললে রামসি বেচারা তো মায়া সভ্যতার জঙ্গলেও হারিয়ে যাবে। যাই হোক, ছোটবেলা পত্রিকার জন্য যে অপেক্ষা করে থাকি, তার একটা কারণ আপনার গল্প। সুদীপ্তার আঁকা প্রচ্ছদও চমৎকার।
দোলনচাঁপা আমাদের প্রতি সংখ্যায় ঋদ্ধ করছে। কত কিছু জানতে পারছি। প্রত্যেক সংখ্যায় নতুন নতুন বিষয়, নতুন নতুন তথ্য। অনেক ধন্যবাদ ভাই তোমাকে।
সব্যসাচী বাবুর পাঠ প্রতিক্রিয়া অসাধারণ। সবিতা বিশ্বাস তাঁর মনের কথা খুব সুন্দর করে প্রকাশ করেছেন। পাঠ প্রতিক্রিয়া এই পত্রিকার একটা বিশেষ আকর্ষণ ও বৈশিষ্ট্য। যেমন মৌসুমীর সম্পাদকীয় এই পত্রিকার বৈশিষ্ট্য। কি সুন্দর করে আমাদের আগ্রহ জাগিয়ে তোলে।
এবার আসি। তোমরা আর দেরী কোর না, কেমন! চটপট নিজের নিজের লেখা ছড়া, গল্প, কবিতা, পাঠ প্রতিক্রিয়া বা প্রবন্ধ এবং আঁকা পাঠিয়ে দাও।
1 Comments
খুব সুন্দর হয়েছে।
ReplyDelete