জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৪৬

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৪৬
সম্পাদকীয়,
আমার ছোটো ছোটো চাঁদের কণারা আর মাত্র কয়েকটি সংখ্যা পরেই দেড়শো তম ছোটোবেলা। আমি জানি এটা জেনে তোমরা একটুও অবাক হচ্ছোনা। কারণ সদ্য সদ্য জেনে গেছো বিক্রম ও প্রজ্ঞান এখন চাঁদের দেশে। এটা যখন সম্ভব হয়েছে তখন দেড়শো তম ছোটোবেলা প্রকাশ আর এমনকি। তবে চাঁদ সোনারা একটা কথা কি জানো?  বিক্রম যেমন  চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে ইসরোর বৈজ্ঞানিকদের নিরলস প্রচেষ্টাতে তেমন ছোটোবেলা ১৫০ তম সংখ্যা প্রকাশ করতে সক্ষম হবে তোমাদের মতো লেখক ও পাঠকদের ভালোবাসার হাত আমাদের হাত ধরে আছে বলে। তাই ফাল্গুনী পিসিকে বলেছি তোমার গল্পের নাম বদলে দাও। কী সেই নাম? শান্তা মনে হচ্ছে ফাল্গুনী পিসির গল্প পড়ে ছবিটা এঁকেছে। মন খারাপ করলে তোমরা ছাদে যাও তো? রাহুলও যায়। আমিও যাই আর গিয়ে চাঁদ দেখি। আর সন্দীপন আঙ্কেল চাঁদ দেখতে দেখতে চাঁদের বুড়িকে নিয়ে ছড়া লেখে। চাঁদ মামা নয় শ্রীকান্ত আঙ্কেল বড় মামা আর ছোটোমামার কথা বলেছে। লাচুঙে এখন বেশ সমস্যা। কিডন্যাপিং হয়েছে। কে? বলা যাবে না। তার আগে একটা খুশির খবর স্বাধীনতা দিবসের ছবি এঁকেছে চিরন্তন। আর ২৯ শে আগস্ট জাতীয় ক্রীড়া দিবস, সে নিয়ে লিখেছে দোলন চাঁপা আন্টি। আনন্দের খবর স্মরণীয় দিবসের তালিকায় যুক্ত হল জাতীয় মহাকাশ দিবস। কবে? ত্তোমরাই বলো। না পারলে ঋপণ আঙ্কেলের পাঠানো ছবির বন্ধু দুটোর মতো জল ছিটিয়ে ভিজিয়ে দেব। কেমন মজা! -- মৌসুমী ঘোষ।

ধারাবাহিক উপন্যাস
 নেকড়ে
পর্ব ২৫

শ্রীকান্ত অধিকারী

ইতনা জলদি নন্দী স্যার! আপনার চেহেরা বলছে কুছ তো গড়বড় আছে। সেরগিল সাহেব হাসি হাসি মুখে বলেন,- বৈঠিয়ে। ক্যায়া লেঙ্গে কফি অউর চায়। না অউর কুছ! 
বড় মামা চেয়ারে বসতে বসতে বেশ হতাশের সুরে বলে, তোমার কথা না শুনে ভুলই করেছি। 
সাত সকালে এমন আফসোসের কথা শুনে সেরগিল সাহেবের চোখগুলো ভীষণ রকমের গোল গোল মার্বেলের মত হয়ে যায়।-হোয়াট মিস্টার নন্দী? 
বড় মামা রামসিঙের বাবাকে দেখিয়ে বলে, ইনি আমার ভগ্নিপতি। আই মিন ব্রাদার ইন ল। -সোমেশ্বর। ওর ফ্যামিলি আর আমরা একসঙ্গেই বেড়াতে এসেছি। 
সের গিল সাহেব মাথা নারেন। অস্ফুট স্বরে বলেন -হাই। তারপর আবার বড়মামার দিকে চোখ ফেরান। 
বড় মামা দ্রুত প্রসঙ্গে ফিরে যান। কাল এখান থেকে যাওয়ার পরই হোমে গিয়ে দেখি সোমেশ্বরের ছেলে রামসিং আর ওর ছোট মামা মানে আমার ছোট ভাই শার্দুলকেশর নন্দী, আমরা ডাকি শাদুল বলে, বেড়াতে বেরিয়েছে। না তখন সন্ধে হয় নি। কিন্তু তারপর থেকে আর ফেরেনি।
  সোমেশ্বর উৎকণ্ঠার সঙ্গে জানায়, কাল রাতেই এখানে এই স্টেশনে ফোন করা হয়েছিল। হোমস্টের ছেলেটাই নম্বর দিয়েছিল। কিন্তু কানেক্ট করতে পারিনি। আর বড়দা বললেন একটু দেখে নিতে।–যা আনমনা ভবাপাগলা ছেলে ইদিক ওদিক ঘুরে ফিরে ঠিক ফিরে আসবে।কিন্তু রাত যত বাড়ল, লাচুঙ নদীর শব্দ তীব্র ভাবে বুকে বাজতে লাগল, বাড়ির লোকে ছটফট করছে কিছু একটা করার জন্য, এমন কি বাইরে বেরিয়ে রাস্তা ধরে যে এগোব, রাস্তায় কোনো লাইট নেই। কাছে পিঠে দু একটা হোমে টিম টিম করে লাইট জ্বলছে। ঘন অন্ধকারকে ভয় করার মত পরিস্থিতি তখন নেই, তাই এসব প্রতিবন্ধকতাকে গ্রাহ্য না করে এগোতে যাব পেছন থেকে জোরালো ডাক,-রাত কো বাহার জানা মানা হ্যায় দাদা। অভি পাহাড় অউর জঙ্গল সে জানোয়ার  নিকাল আয়েগি। কালো ভাল্লু অউর লেপার্ড, পাইথন কো ছোড়ো, খতরনাক কুত্তা ইয়া ক্যাটস ভি আ সকতী হ্যায়। তাতেও কান না দিয়ে বেরিয়ে পড়েছি ,দেখি গ্যাটসো বলে –আভি গাড়ি চলবে না দাদা। কাল সুবা হোনে সে পহেলেই যায়েঙ্গে। 
সেরগিল সাহেব গ্যাটসোর দিকে তাকাতেই গ্যাটসো দ্রুত জানায়, ইস লিয়ে হাম সুবা সে পহেলে ইধার চলা আয়া। 
-মোবাইল বগেরা কুছ? 
-আছে বাট কানেক্ট করা যাচ্ছে না। সুচইড অফ! 
-রাস্তা হারিয়েছে। সেরগিল সাহেব স্থির হয়ে মন্তব্য ছুঁড়ে দেন ওদের দিকে। -কুছ দের বাদ ও লোগ আ যায়েঙ্গে। চিন্তা মত করিয়ে নন্দী সাব! লিজিয়ে সুবা সুবা স্পেশাল লাচুংওলা চায়।
একজন কনস্টেবল দুটো কাঠের পাত্রে চা ঢেলে দেয়। ভুর ভুর করে ধোঁয়া উঠছে। 
এখন আমেজ করে বসে বসে ধোঁয়া ওঠা চা পান করার সময় নয়। ছেলেটার জন্য মন খারাপ করছে। বড় মামা আর রামসিঙের বাবা দুজনেই অস্থির। তবু সেই ভোর রাত থেকে এখানে বড় সাহেবের জন্য অপেক্ষা করতে করতে গলা শুকিয়ে কাঠ। তার ওপর আজ ভীষণ ঠাণ্ডা জাঁকিয়ে বসেছে। বড় মামা ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ ধরে চুমুক দেয়। 
-গায়েব হওয়ার কেস নয় তো স্যার ! কিডন্যাপিং! রামসিঙের বাবা চোখে সন্দেহ ফুটে ওঠে। সঙ্গে আতঙ্ক। 
- এ সব নিয়ে ভাবছেন কেন দাদা? কিডন্যাপিং কিঁউ ক্যারেঙ্গে। লাচুং নেহি সারা সিক্কিমিজ নট অনলি সিম্পল বাট অলসো মোর সিম্পল অ্যান্ড হস্পিট্যাবল। 
- তবে কি উলফ কিংবা লেপার্ড?  
-না দাদা ইটস ট্রু,ইধার মিডল রেঞ্জে তেণ্ডুয়া অউর ভেড়িয়ে নেহি মিলতা। বহোত পহলে ভী রহতে থে।  
-লেকিন ঐ সব কিডন্যাপিং আর খাবলানো বডিগুলো? বড়মামার চোখে মুখে ভয় ছিটকে বেরিয়ে আসে। নিউজ পেপারগুলো! 
-লেট সি অ্যান্ড ওয়াচ। সবকুছ পহলে অউর বাদ মে অবশ্য ইনভেস্টিগেট করনা চাহিয়ে। সেরগিল সাহেব পাশেই রাখা টেবিলের সামনে চেয়ার ঘুরিয়ে বসেন। ল্যাপটপ অন করায় ছিল। আজ সকালের আপডেট খবর নেন। প্রথমে লাচুং, পরে লাচেন, মঙ্গন,নামচি, গ্যালসিং প্যাকং সোরেং নয়াবাজার, কুলুক জোরথ্যাং চুংথাং, সদর গ্যাংটক।এক এক করে ছাব্বিশটি পুলিশ স্টেশনের আপডেট নিলেন। 
 একজন অফিসার এসে জানালেন,-না সে রকম কিছু নেই। দু একটা মামুলি দুর্ঘটনা ঘটেছে। নামচির কাছে একটা ট্যুরিস্ট ভ্যান খাদে পড়েছে। তাতে একজন মহিলা সহ চারজন নিখোঁজ। গাড়ি পাওয়া গেলেও বডিগুলো এখনও ট্রেস করা যায়নি। রাবাংলা, নয়াবাজার রংপো রানিপোল অ্যজ ইট ইজ। এখনো পর্যন্ত নতুন করে কোনো ট্যুরিস্ট কিডন্যাপিঙের খবর নেই। বুনো জন্তুর খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারিয়েছে সে খবরও নেই। 
সেরগিল সাহেব একটা বড় শ্বাস নিয়ে বলে, অভি তক ওরিড হওয়ার কারণ দেখছি না সোমেশ্বর বাবু।  
এমনি সময়ে গাড়ি দাঁড়ানোর শব্দ রামসির বাবার মাথা এ ফোঁড় ও ফোঁড় করে দেয়। মনে পড়ে নিজের বাড়ি থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচশ কিমি দূরে আছে। আর এখন রামসির মা নিবেদিতা শিঙিকে নিয়ে বড় মামিমার সঙ্গে আছে। কি দুশ্চিন্তায় যে আছে! ভেতর থেকে দলা পাকানো কিছু একটা বেরিয়ে আস্তে চাইছে। কাঁদতে মন হচ্ছে।  
সেরগিল সাহেব সঙ্গে সঙ্গে উঠে যান।–জোরালো গলায় বলেন, নন্দী সাব আপকো জানা পরেগা, আপনে কাঁহা ছোড় দিয়া উন লোগো কো? গ্যাটসোর দিকে চেয়ে বলেন, তু ভী চল।
গ্যাটসো একবার আস্ফুটে বলে, স্যার মেরা কার?  
      -পুলিশ স্টেশন মে ডর লাগতা হ্যায় ক্যায়া? ও বাই দ্য বাই নন্দী স্যার, আপ লোগ কৌন সা হোম লিয়া হ্যায়? মালিক কা নাম বলিয়ে তো। 
সোমেশ্বরবাবু কিছু বলার আগেই বড় মামা একটা কার্ড এগিয়ে দিলেন। সের গিল সাহেব ক্ষণিকের জন্য চোখ বুলিয়ে নিলেন।-নয়া হ্যায়। পাঁচ সাল সে জাদা নেহি। সব ঠিক হ্যায়, লেকিন একবার সাইড মে যা কে হোম-ওনার সে মিলনা হোগা। কী বলেন নন্দী স্যার? সুবা সে নাস্তা নেহি কিয়া। সেরগিল সাহেব হাসলেও রামসির বাবা বা মামা কেউই সেই মজাতে যোগ দিল না। গাড়ির ভেতর কাঠ হয়ে অদূরে মেঘে ঢাকা হিমালয়ের চূড়োর দিকে চেয়ে রইল। 
দুই বন্দুকধারী কনস্টেবল নিয়ে সেরগিল নিজে ড্রাইভ করার জন্য ড্রাইভারের সিটে বসলেন। এবার গাড়ি ছাড়বেন। দেখেন, স্টেশন থেকে আরেক অফিসার প্রায় ছুটতে ছুটতে এসে খবর দেন, দুপুর দুটো নাগাদ গ্যাংটকে হেড অফিসে জরুরী বৈঠক আছে স্যার। ইট ইজ আর্জেন্ট। হেড অফিস থেকে মেইল করেছে এইমাত্র। ফ্যাক্সেও ডিটেইলস জানিয়েছে।  
( ক্রমশ)
চিরন্তন মিত্র 
শ্রেণী নার্সারি টু, হোলি চাইল্ড স্কুল,কালনা, বর্ধমান

চাঁদ মামা 
সন্দীপন রায়

একলা ছিল চাঁদের বুড়ি চরকা নিয়ে হাতে।
চন্দ্রযানের সঙ্গে দেখা সেদিন সন্ধ্যা রাতে।
উল্লাসে প্রাণ আত্মহারা আমরা ভারতবাসী।
বিজ্ঞানীরা, কমনম্যানও, সঙ্গে শ্রমিক, চাষী।
হাসিখুশির এসব খবর গেল বুড়ির কানে।
চরকা কাটবে এবার বুড়ি রবিবাবুর গানে।
কাটবে সে আজ সুতো, গেরুয়া, সবুজ,সাদা।
চন্দ্রযানে চন্দ্র বিজয় মিটিয়ে নানান বাধা।
শুধু কী আর চাঁদের বুড়ি, চাঁদ আমাদের মামা।
কপালে সে টিপ দিয়েছে যখন দিতাম হামা।
ইচ্ছেও তো আকাশ ছোঁয়া, যাবো মামার বাড়ি।
রূপকথার ওই সিঁড়ি,ইসরো,বানাও তাড়াতাড়ি।
আমরা ভালো নেই 
 ফাল্গুনী পান্ডা 

রিম্পি ছাদে উঠে দেখল একটা ঘুড়ি কেটে পড়ে আছে | হাতে করে  ঘুড়িটা তুলতেই সে দেখল ঘুড়ির সাথে সাঁটা একটা কাগজ, তাতে লেখা আছে -
আমি ভালো নেই | 
তুমি কেমন আছো ?

রিম্পি ভাবে কে রে বাবা! আমাকে হঠাৎ বলছে সে ভালো নেই | কোথায় থাকে সে আর কেন ভালো নেই ? 
অনেক প্রশ্ন ভিড় করছিল মনে তারপর বেশ কয়েকটা দিন কেটে গিয়েছে | রিম্পি একদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় দেখে, রায়দের পরিত্যাক্ত বাড়ি থেকে একটা প্রাণী খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে আসছে তার দিকে | ভয় পায় রিম্পি, দৌড় লাগানোর আগের মুহূর্তে সেই হাঁসজারুর মতো দেখতে প্রাণীটি তার হাতটা এসে চেপে ধরলো | আর বলল আমি দুমিনিট সময় নেব তারপরে তোমায় ছেড়ে দেব | 
আমি ভালো নেই জেনেও তোমার মনে কোনও প্রতিক্রিয়া হলো না ! এই তোমার বন্ধুত্ব ! রিম্পি বলে তুমি কে ? কি চাও ? আর কবে থেকে আমরা বন্ধু হলাম? 
হাঁসজারু বলে যেদিন থেকে তুমি আবোলতাবোল পড়েছ সেদিন থেকে আমরা অলিখিত বন্ধু ! 
আচ্ছা তোমার সমস্যাটা কি বলতো রিম্পি জানতে চায়| 
সে বলে আচ্ছা রিম্পি মনে পড়ে কতদিন আগে তুমি খোলা আকাশ দেখেছ ? আর রামধনু দেখেছ কবে শেষবার ? 
মনে করতে পারো ! জানো একমাত্র আবার রামধনু উঠলে আমি বাড়ি ফিরতে পারবো | রামধনুর ওপারে আমার বাড়ি | যদি এই ধূসর, ধুলো ধোঁয়ায় ভরা আকাশ আবার আগের মতো সুনীল হয় আর রামধনু ওঠে সেদিন আমি বাড়ি যেতে পারবো | তাই আমার খুব দুঃখ | রিম্পি ভাবতে থাকে কি করা যায় ?রিম্পির যত রকম রং পেন্সিল, জল রং, তেল রং, আছে সব জড়ো করে হাঁসজারুকে দিয়ে বলে তুমি এই দিয়ে কৃত্তিম রামধনু বানানোর চেষ্টা করো ! আর যদি কোনও রং কম পড়ে তখন আকাশে তো বেমানান লাগবে আর আকাশ ভাই রাগ করবে |  আর রিম্পি এই ধূসর আকাশে কি রামধনু আঁকা সম্ভব ? রিম্পি বলে কথা দিচ্ছি আকাশ ধূসর হতে দেব না | এর মধ্যে একটা প্ল্যান করে ফেলেছে সে | রাঘব কাকার ইটভাটা  আর কারখানা থেকে অনেক ধুলো ধোঁয়া ওঠে এগুলো বন্ধ করতে হবে | রিম্পি আর তার বন্ধুরা প্ল্যান মাফিক রাঘবকাকার ছেলে ভুতুকে আটকে রেখে দাবি করে, এইসব ইটভাটা আর কারখানা বন্ধ না রাখলে ভুতুকে তারা ছাড়বে না | সবই ঠিক ছিল এমন সময় লাল রং কম পড়ে যায় হাঁসজারুর মুখ ভার সে কাঁদতে শুরু করে | 
এমন সময় ঝড় ওঠে সারা দুপুর বৃষ্টি হয়ে বিকেলে ঝড় থামল| এবার সত্যি সত্যি রামধনু উঠল অনেকবছর পরে | হাঁসজারু তখন আনন্দে ডানা মেলে চলে গেল তার নিজের বাড়িতে | রিম্পিরা ভুতুকে ছেড়ে দিয়ে আসে রাঘব কাকার কাছে | রিম্পি জানেনা কিভাবে কতদিন এই পৃথিবীকে  ধুলো ধোঁয়া থেকে দূরে সরানো যাবে | তবে সে চায় হাঁসজারুরা ভালো থাকুক যেখানেই থাকুক | আর মাঝে মাঝে রামধনুর কে সঙ্গে নিয়ে এই  পৃথিবীর বুকে তাদের সাথে বন্ধুত্ব পাতাতে এলে বেশ ভালোই হয় |

শান্তা বিশ্বাস 
একাদশ শ্রেণি,পাটিকাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, মুর্শিদাবাদ


একলা ছাদে
রাহুল পাত্র
অষ্টম শ্রেণীমেদিনীপুর টাউন স্কুল ( হেরিটেজ)

স্কুল শেষে যখন আমি
একলা ছাদে ব'সে
ভাবনা-চিন্তা পাড়ি দেয়
নেই রাজ্যের দেশে।
হিমেল বাতাস সুযোগ মতো
মোরে আঘাত করে
শত কাজের চাপ থাকলেও
যাই না ছুটে ঘরে।
সারাদিনের জমানো কথা
বিনিময় করি সাথে
যখন জ্যোৎস্না বাঁধা পেরিয়ে 
আসে মধ্য রাতে।
বাক্যহীন হয়ে মেঘেরা
আমার কথা শোনে
রাত জাগা সব পাখিরা
তারার ঝলক গোনে।
ইতিমধ্যে মায়ের ডাক
যদি শুনতে পাই
সব কাজ ফেলে রেখে
পালাই আর পালাই।
স্মরণীয় দিবস
জাতীয় ক্রীড়া দিবস 
( ২৯শে অগাস্ট)
কলমে - দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

২০১২ সালে ভারতে প্রথম জাতীয় ক্রীড়া দিবস পালিত হয়। 
সারা ভারতে ২৯ আগস্ট দিনটিতে জাতীয় ক্রীড়া দিবস পালিত হয়। ১৯০৫ সালের ২৯ অগাস্ট এলাহাবাদে বিখ্যাত হকি খেলোয়াড় ধ্যান চাঁদের জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে এই দিনটি পালিত হয়।
১৯৩৬ সালে বার্লিন অলিম্পিকে জার্মানির বিরুদ্ধে ৮-১ জয়ে বিখ্যাত হকি খেলোয়ার ধ্যান চাঁদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই সময় তিনি তিনটি গোল করে সর্বোচ্চ স্কোরার হিসেবে আবির্ভূত হন।
 প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে খেলাধুলা এবং খেলাধুলার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিবছর 29 আগস্ট দিনটিতে জাতীয় ক্রীড়া দিবস পালন করা হয়।
এই দিনটিতেই রাষ্ট্রপতি অর্জুন ও খেলরত্ন পুরস্কার তুলে দেন ক্রীড়া জগতের দেশের সর্বোচ্চ কৃতি দের হাতে।
ক্রীড়া দিবসকে প্রত্যেকের গুরুত্ব দেওয়া উচিত, কারণ- ছোটবেলা থেকেই স্কুল পড়ুয়া দের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অবশ্যই খেলাধুলার প্রয়োজন, খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। সুস্থ জীবন যাপনের একমাত্র মাধ্যম হলো ক্রীড়া বা খেলাধুলা। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে। ছাত্র-ছাত্রীরা শারীরিকভাবে ঠিক থাকলেই একাডেমিক ক্ষেত্রে সফল হতে পারবে। খেলাধুলার মাধ্যমে খেলার পাশাপাশি শিশু মনের মধ্যে একটা টিম স্পিরিট গড়ে ওঠে, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা এখান থেকেই আসে এবং প্রত্যেকের মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি হয়। যা সামাজিকভাবে অত্যন্ত প্রয়োজন। এছাড়াও খেলাধুলার মাধ্যমে থাকলে শরীরের রক্ত সঞ্চালনও ঠিক থাকবে।
জাতীয় ক্রীড়া দিবস যার জন্মবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে হয়, সেই কিংবদন্তি হকি খেলোয়াড় ধ্যানচাঁদ দেশের হয়ে অলিম্পিকে(১৯২৮,১৯৩৪,১৯৩৬) তিনবার সোনার মেডেল জেতেন। ১৯২৬-১৯৪৮ সাল পর্যন্ত খেলে প্রায় ৪০০ টি গোল করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক আঙিনায় শুধু দেশের নামই বিশ্বের মানচিত্রে নিয়ে যাননি তিনি,বিশ্ব হকিতেও তাঁর অবদান অনেক। এমনকি জার্মানির নাৎসি বাহিনীর প্রধান এডলফ হিটলার তাঁকে জার্মানির হয়ে খেলার জন্য অনেক টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পুরস্কার তাঁর নামাঙ্কিত। আজীবন কৃতি হিসেবে দেওয়া হয় মেজর ধ্যানচাঁদ পুরস্কার।
প্রত্যেকটি দিবসের যেমন একটি থিম থাকে সেরকম ২০২৩ সালের উন্নয়ন ও শান্তির জন্য ক্রীড়া দিবসের থিম হল, 'মানুষ ও গ্রহের জন্য স্কোরিং' আইডিএসডিপি কার্যক্রম কে বৃহত্তর পরিসরে শান্তি ও উন্নয়নে খেলাধুলার ভূমিকার উপর মনোনিবেশ করতে সক্ষম করে।
🍂

পাঠ প্রতিক্রিয়া
(ছোটোবেলা ১৪৫ পড়ে শিক্ষিকা অনামিকা তেওয়ারী যা লিখলেন)

জলদর্চি ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৪৫ পড়তে বসেই চোখ টানলো প্রচ্ছদে লাল পাড় সাদা শাড়ি পরিহিতা জাতীয় পতাকা হাতে ছোট্ট মেয়েটির ছবি। কি মিষ্টি দেখতে লাগছে তাকে। কল্যাণ সাহার ফটোগ্রাফি সত্যিই নজরকাড়া। সম্পাদকের প্রচ্ছদ নির্বাচনের প্রশংসা না করে পারছি না। একই সাথে একটি সংখ্যাকে ছোটোদের মতো করে এবং স্বাধীনতা দিবসের উপযুক্ত করে তুলেছেন তিনি এই ছবিটির মাধ্যমে।  সম্পাদকীয় পর্বটি পড়তে পড়তে মনে হলে ছোটোদের জন্যই তৈরি একটি সংখ্যাকে সুখপাঠ্য বানাতে মৌসুমী ঘোষের জুড়ি মেলা ভার। সমগ্র সংখ্যাটির একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তাঁর কলমেই ফুটে উঠেছে । শ্রীকান্ত অধিকারীর ধারাবাহিক উপন্যাসের নেকড়ে থুড়ি গল্প দুর্দমনীয় গতিতে ছুটে চলেছে। প্রতি বাঁকেই দুর্দান্ত তাঁর সমতা বজায় রাখার ক্ষমতা। পাহাড়ি সংলাপ, বা পাহাড়ি নাম চয়নে তাঁর নিঁখুত পর্যবেক্ষণ ধরা পড়েছে ছত্রে ছত্রে। মারিয়াম পারভীনের জাতীয় পতাকার ওপর সাদা পায়রার ছবিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে। দেশে স্বাধীনতা এসেছে কিন্তু সর্বত্র শান্তি কোথায়! সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মনে হয় এই মুহূর্তে সেটাই প্রয়োজন বেশি। জগদীশ শর্মার জবাব চাই ছড়াটি বেশ মজাদার। নার্সারীর ছাত্রী আয়ুষ্মিতা সামন্তর কচি হাতে আঁকা ভারত মাতার ছবিটিও খুব সুন্দর। বড় হয়ে নিশ্চয়ই ও আরও ভালো ভালো ছবি আমাদের উপহার দেবে।  ভাল লাগলো অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের গল্পটি। মুক্তো পাহাড়ের রহস্য ভেদ করতে তিনি যেভাবে সমুদ্রের গভীরে নেমে জল জীবনের কল্পচিত্র তুলে ধরেছেন তা এককথায় অসাধারণ! তাঁর কলমকে কুর্নিশ। কল্পনার সূক্ষ্ম তারে গল্প গেঁথে একটি মানবিক আবেদনে তিনি শেষ করেছেন কাহিনী, যা পাঠকের মন ছুঁয়ে যাবেই। সমুদ্রে জল জীবন দেখতে দেখতে হঠাৎ করেই মনটা এক লাফে পাহাড়ের কোলে তরাই অঞ্চলে উঠে পড়লো রাণি মন্ডলের আঁকা ছবি দেখে। চা বাগানে চা পাতা তোলার ছবি দেখেই তো সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়লো সারা মন জুড়ে। নিজের স্কুলের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছে অনন্যা দাস। যা মোটামুটি সব স্কুলেই প্রায় একইরকম। এখানেই তো স্বাধীনতা দিবস পালনের যৌক্তিকতা। অনন্যার লেখায় ফুটে উঠেছে ওর জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেম, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসকে জানার ইচ্ছে আর শ্রদ্ধাবোধ। আগামী দিনে ওরাই তো এই অমৃত ধারার ধারক ও বাহক। স্মরণীয় দিবসে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর ৭৮ তম জন্ম দিবসকে সামনে রেখে বরাবরের মতোই একটি তথ্যসমৃদ্ধ লেখা উপহার দিয়েছেন দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে। তাঁর পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় রইলাম। বন্দনা সেনগুপ্তের পাঠ প্রতিক্রিয়া খুবই প্রাঞ্জল এবং সাবলীল। পরিশেষে ধন্যবাদ জানাই  সম্পাদক মৌসুমী ঘোষ মহাশয়াকে সমগ্র সংখ্যাটিকে এতো সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার জন্য।

Post a Comment

2 Comments

  1. ছোটদের পত্রিকায় বড়দের উপযোগী বিজ্ঞাপন কেন?

    ReplyDelete