পশ্চিমবঙ্গের লৌকিক উৎসব, পর্ব -- ৮৭
সেঁজুতি ব্রত
ভাস্করব্রত পতি
"সকল ব্রত করলেন ধনী
বাকি রইল সাঁজ পূজনী"-
কার্তিক মাসের সংক্রান্তি থেকে শুরু করে অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তির দিন পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেলে বা সন্ধ্যায় সেঁজুতির পুজো করতে হয়। কুমারী মেয়েরাই এই উপচার করে। পিটুলি দিয়ে নানা ধরনের ছবি আঁকতে হয় আলপনায়। সংখ্যার বিচারে তা প্রায় ৫২ রকমের। কিন্তু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবশ্য ৪০ রকমের জিনিসের আলপনার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন "এই ব্রতটিতে প্রায় চল্লিশ রকমের জিনিস আলপনা দিয়ে লিখতে হয় এবং তার প্রত্যেকটিতে ফুল ধরে এক একটি ছড়া বলতে হয়"। পূজোর সময় প্রদীপ জ্বালানো আবশ্যিক। এইজন্য এর নাম সেঁজুতি (সাঁজ + দীপ)। মৈথিলীতে বলে সাঁঝোত। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনায় মেলে 'সেঁজুতির শিব' কথাটি। হেমচন্দ্রের গ্রন্থাবলীতেও সেঁজুতি পালনের অনুষঙ্গ মেলে।
সেঁজুতি ব্রত উদযাপনে লাগবে প্রচুর দুর্বা। আর মধুপর্কের বাটিতে থাকবে — মধু, চিনি, দই, জল, ঘি এবং চন্দন। চার বছর ধরে এটি পালন করতে হয়। উদ্যাপনের শেষে তিনজন মনপসন্দ ব্রাহ্মণকে ডেকে তাঁদের ভালোমন্দ করে খাইয়ে দাইয়ে তাঁদের প্রত্যেককে একটি করে কাপড়, একটি সুন্দর চাদর এবং একটি পেতলের বাটি দান করতে হয়। সেইসাথে তাঁদের সাধ্যমত দক্ষিণা দিতে হবে।
নানা উদ্দেশ্যে নারীমনের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটে আলপনার নানাবিধ চরিত্রের মাধ্যমে। সেঁজুতি ব্রতে নারীর মনের জাগতিক চাওয়া পাওয়া এবং কামনার ছোঁয়ায় থাকে --
"আমি আঁকি পিটুলির গোলা
আমার হোক ধানের গোলা"
এই ব্রতের আলপনায় থাকে শিবের মূর্তি, চন্দ্র, সূর্য, আকাশ, শিবমন্দির, নাটমন্দির, ঘরবাড়ি, রান্নাঘর, পান, বট, বঁটি, ঢেঁকি, গোয়ালঘর, দোলা, পালকি, সুপুরিগাছ ইত্যাদি। বাড়ির উঠোন, ছাত বা দালান ইত্যাদি এলাকাগুলি পিটুলি দিয়ে আলপনা আঁকার স্থান। এই চিত্রিত ছবিগুলি এক একটি বিশেষ প্রতীক। আর এই প্রতীকগুলিতে নারী জীবনের নানা ধরনের সুখ দুঃখ হাসি কান্নার চূড়ান্ত অভিব্যক্তি ছড়ার মাধ্যমে ফুটে ওঠে। কুমারী মেয়েরা এই ব্রত পালন করলে তাঁদের মনের মনস্কামনাগুলো পূরণ হয় বলে বিশ্বাস। এই উপচার পালনে অবশ্যই আঁকতে হয় শিব লিঙ্গ, কোঁড়া, দোলা, দুটি পুতুল এবং দোলা।
সেঁজুতির মোট ৫২ টি ঘর। সেগুলি হল -- (১) জলভরা ঘট আর ঘটের পাশে তিনকোণা প্রদীপ (২) ষোলো ঘর ও শিব (৩) দোলা (৪) কোড়া (৫) বেগুন পাতা (৬) শরগাছ (৭) বেনাগাছ (৮) বাশের কোঁড়া (৯) গঙ্গা যমুনা (১০) সুপুরি গাছ (১১) চন্দ্র সূর্য (১২) হাট ঘাট (১৩) গোয়াল (১৪) অশ্বত্থ গাছ (১৫) বঁটি (১৬) খ্যাংরা (১৭) শিবমন্দির (১৮) লতাপাতা (১৯) নাটমন্দির (২০) পাকা পান (২১) ত্রিকোণা প্রদীপ (২২) হাতে ছেলে, কাছে ছেলে (২৩) ঢেঁকি (২৪) খাট পালঙ্ক (২৫) ধাতা কাতা (২৬) আম কাঠালের পিঁড়ি (২৭) ঘি ও চন্দনের বাটি (২৮) গহনা, (২৯) রান্নাঘর (৩০) ঢেঁকি কর্কটি (৩১) আয়না (৩২) উদ্বিড়ালী (৩৩) বেড়ি (৩৪) হাতা (৩৫) পাখি (৩৬) কুলগাছ (৩৭) কাজললতা (৩৮) নক্ষত্র (৩৯) সিঁদুর চুপড়ি (৪০) পানের বাটা (৪১) শাঁখ (৪২) ময়না (৪৩) দশপুতুল (৪৪) পাখী (৪৫) ইন্দ্র (৪৬) তেরাজ (৪৭) খট্টা ডুমুর (৪৮) ধানের মড়াই (৪৯) তালগাছ (৫০) থুতু ফেলা (৫১) থৌ এবং (৫২) কুঁচ কুঁচতি।
সেঁজুতি লৌকিক উৎসব পালনে প্রচুর পরিমাণে দূর্বা দরকার। কেননা এই ৫২ টি ঘরের প্রতিটিতে দূর্বা দিয়ে পৃথক পৃথক লৌকিক মন্ত্র উচ্চারিত হয়। এই মন্ত্রই আসলে পুজোর উপচার। মেঝের মাঝখানে গোল করে এঁকে, তার ওপর ঘট বসাতে হয়। লক্ষ্য রাখতে হয় যে ঘট স্থাপনের ওপরে শিব আর নীচে পুতুল যেন থাকে। মাঝখানে চৌকো জায়গাটিতে তথা সেঁজুতির কোঁড়ার উপরে থাকবে ঘট। আর ঘটের সামনে জ্বেলে দিতে হয় তিনকোণা প্রদীপ।
৫২ টি ঘরগুলিতে মহিলারা দূর্বা দিয়ে বিশেষ মন্ত্র বলে নিজেদের কামনা বাসনা পূরণের প্রার্থনা করে। মন্ত্রগুলি এরকম ---
(১) আলপনার মধ্যে একটি জলভরা ঘট রেখে জ্বালানো প্রদীপেতে তিন গোছা বা ছয় গোছা দূর্বা সহ হাত রেখে মহিলাদের বলতে শোনা যায় --
দোলায় আসি দোলায় যাই।।
সোনার দর্পণে মুখ চাই।।
বাপের বাড়ির দোলাখানি,
শ্বশুর বাড়ি যায়।
আসতে যেতে দোলাখানি,
ঘৃত মধু খায়।।
সাঁজ পূজন সেঁজুতি
ষোল ঘরে ষোল ব্ৰতী।
তার একঘরে আমি ব্রতী।
ব্রতী হয়ে মাগি বর,
ধনে পুত্রে বাড়ুক বাপমার ঘর।।
(২) ষোলো ঘর ও শিবের আলপনায় হাত দিয়ে বলে --
হে হর শঙ্কর দিনকর নাথ।
কখনো না পড়ি মূর্খের হাতহাত।।
(৩) দোলাতে হাত দিয়ে বলে --
দোলায় আসি দোলায় যাই খায।
সোনার দর্পণে মুখ চাই।।
বাপের বাড়ির দোলাখানি
শ্বশুরবাড়ি যায়।
আসতে যেতে দোলাখানি
ঘৃত মধু খায়॥
(৪) কোঁড়াতে হাত দিয়ে বলে --
কোঁড়ার মাথায় ঢালি মৌ।
আমি যেন হই রাজার বউ।।
কোঁড়ার মাথায় ঢালি ঘি।
আমি যেন হই রাজার ঝি।।
কো্ড়ার মাথায় ঢালি চিনি।
আমি হেন হই রাজ ঘরণী।।
(৫) বেগুন পাতায় হাত দিয়ে বলে --
বেগুন পাতা ঢোলা ঢোলা।
মায়ের কোলে সোনার ডেলা।।
হেন মা পুত বিওলি।
শুভক্ষণে রাত পোহালি।।
(৬) শরগাছে হাত দিয়ে বলে --
শর শর শর
আমার ভাই গাঁয়ের বর॥
বর বর ডাক পড়ে।
গুয়াগাছে গুয়া ফলে
আমার ভাই চিবিয়ে ফ্যালে।
অন্যের ভাই কুড়িয়ে গেলে।।
(৭) বেনাগাছে হাত দিয়ে বলে --
বেনা বেনা বেনা
আমার ভাই গায়ের সোনা॥
সোনা সোনা ডাক পাড়ে।
গা গুচি গুয়া পড়ে।৷
আমার ভাই চিবিয়ে ফ্যালে।
অন্যের ভাই কুড়িয়ে খেলে॥
(৮) বাঁশের কোঁড়ায় হাত রেখে বলে --
বাঁশের কোঁড়া; রূপের ঝোড়া।
বাপ রাজা, ভাই চড়ে ঘোড়া॥
(৯) গঙ্গা যমুনায় হাত রেখে বলে --
গঙ্গা যমুনা পূজন।
সোনার থালে ভোজন।।
সোনার থালে ক্ষীরের লাড়ু।
শাঁখার আগে সুবর্ণের খাড়ু॥
(১০) সুপুরি গাছে (গুয়াগাছে) হাত দিয়ে বলে --
গুয়াগাছ গুয়াগাছ
মূলটি ধরে মজা।
বাপ হয়েছেন দিল্লীশ্বর,
ভাই হয়েছেন রাজারাজা।।
(১১) চন্দ্র সূর্যে হাত দিয়ে বলে --
চন্দ্ৰ সূর্য পূজন
সোনার থালে ভোজন৷
সোনার থালে ক্ষীরের লাড়ু।
শাঁখার আগে সুবর্ণের খাড়ুখাড়ু।।
(১২) হাট ঘাটে হাত রেখে বলে --
হাটে ঘাটে পূজন
সোনার থালে ভোজন৷।
সোনার থালে ক্ষীরের লাড়ু।
শাখার আগে সুবর্ণের খাড়ু।।
(১৩) গোয়ালঘরে হাত দিয়ে বলে --
গোয়ালঘর পূজন
সোনার থালে ভোজন।।
সোনার থালে ক্ষীরের লাড়ু
শাঁখার আগে সুবর্ণের খাড়ু।।
(১৪) অশ্বত্থ গাছে হাত রেখে বলে --
অশ্বত্থ তলায় বাস করি।
সতীনের ঝাড় বিনাশ করি।।
সাত সতীনের সাত কৌটা।
তার মাঝে আমার সোনার কৌটা।।
সোনার কৌটা নাড়ি চাড়ি।
সাত সতীনকে পুড়িয়ে মারি।।
(১৫) বঁটিতে হাত রেখে বলে --
বঁটি বঁটি বঁটি,
সতীনের শ্রাদ্ধে কুটনো কুটি।
(১৬) খ্যাংরায় হাত রেখে বলে --
খ্যাংরা খ্যাংরা খ্যাংরা,
সতীনকে খ্যাংরে করবো দেশ ছাড়া।।
(১৭) শিবমন্দিরে হাত দিয়ে বলে --
হে হর মাগি বর
স্বামী হোক রাজ্যেশ্বর।।
সতীন হোক দাসী।
বছর বছর একবার করে
বাপের বাড়ি আসি।।
(১৮) লতাপাতায় হাত দিয়ে বলে --
লতাপাতা কুলদেবতা।
সিঁথের সিঁদূর পায়ে আলতা।।
(১৯) নাটমন্দিরে হাত দিয়ে বলে --
নাটমন্দির বাড়ি জোড়া।
দোরে হাতি বাইরে ঘোড়া।।
দাস দাসী, গো-মহিষী।
রূপ যৌবন রাশি রাশি।।
সরুধানে সাত পুতে।
জন্ম কাটুক মোর এয়োস্ত্রীতে।।
(২০) পাকা পানে হাত রেখে বলে --
পাকা পান মর্তমান।
আমার স্বামী নারায়ণ।।
যদি পান পাসুরে।
তবে দিব মুসুরে।।
(২১) ত্রিকোণা প্রদীপে হাত রেখে বলে --
ত্রিকোণা প্ৰদীপ চৌকোণা আলো।
অমুক দেবী ব্রত করে জগতের আলো।।
(২২) হাতে ছেলে কাঁখে ছেলে হাত রেখে বলে --
হাতে পো কাখে পো।
পৃথিবীতে আমার যেন না পড়ে লো।।
(২৩) ঢেঁকিতে হাত দিয়ে বলে --
ঢেঁকি পড়ন্ত, গাই বিয়ন্ত,
উনুন জ্বলন্ত।।
কালো ধানে রাঙ্গা পুতে।
জন্ম যেন যায় এয়োস্ত্রীতে।।
(২৪) খাট-পালঙ্কে হাত রেখে বলে --
খাট পালঙ্ক, লেপ, দোলঙ্গ।
গিদে আশে পাশে।
রূপ যৌবন সদাই সুখী।
সোয়ামী ভালবাসে।।
পাড়াপড়শী প্রতিবেশী
মধু বর্ষে মুখে।
জন্ম এয়োস্ত্রী পুত্রবতী
জন্ম যায় সুখে।।
(২৫) ধাতা কাতায় হাত দিয়ে বলে --
ধাতা কাতা বিধাতা
তুমি দাও এই বর।
আমার স্বামী হন যেন
রাজ্যেশ্বর।।
(২৬) আম কাঠালের পিঁড়িতে হাত দিয়ে বলে --
আম কাঁঠালের পিঁড়িখানি
ঘি চপ্ চপ্ করে।
আমার ভাই রাজ্যেশ্বর
সেই বসতে পারে।।
(২৭) ঘি ও চন্দনের বাটিতে হাত দিয়ে বলে --
ঘি চন্দন দিয়ে পূজি গো হরিষে।
বেনারসী শাড়ী পরি যেন রাত্রিবাসে।।
(২৮) গহনাতে হাত রেখে বলে --
আমি দিই পিটুলির বালা।
আমার হোক সোনার বালা।।
আমি দিই পিটুলির নথ
আমার হোক সোনার নথ।।
(২৯) রান্নাঘরে হাত দিয়ে বলে --
রান্নাঘর পূজন।
সোনার থালে ভোজন।।
সোনার থালে ক্ষীরের লাড়ু।
শাখার আগে সুবর্ণের খাড়ু।।
(৩০) ঢেঁকি কর্কটিতে হাত রেখে বলে --
ঢেঁকিলো লো কর্কটি
তোর সো হাটে ঘাটে।
আমার সো সুবর্ণের খাটে।।
(৩১) আয়নায় হাত দিয়ে বলে --
আয়না আয়না,
সতীন যেন হয় না।
যদি সতীন হয়,
মরে যেন যায়।।
(৩২) উদ্বিড়ালীতে হাত দিয়ে বলে --
উদ্বেড়ালী খুদ খা।
স্বামী রেখে সতীন খা।।
(৩৩) বেড়িতে হাত দিয়ে বলে --
বেড়ি, বেড়ি, বেড়ি।
সতীন বেটী চেড়ী।।
(৩৪) হাতায় হাত দিয়ে বলে --
হাতা হাতা হাতা।
খা সতীনের মাথা।।
(৩৫) পাখীতে হাত দিয়ে বলে --
পাখী পাখী পাখী।
সতীনকে ঘাটে নিয়ে যায়
তেতালায় বসে দেখি।।
(৩৬) কুলগাছে হাত দিয়ে বলে --
কুলগাছটি ঝেকড়ী।
সতীন বেটী খেঁকড়ী।।
(৩৭) কাজললতায় হাত দিয়ে বলে --
কাজললতা কাজললতা বাসরঘর।
আমার যেন হয় একটি সুন্দর বর।।
(৩৮) নক্ষত্রতে হাত দিয়ে বলে --
যতগুলি নক্ষত্র ততগুলি ভাই।
বাসোয়া পুজো করে ঘরে চলে যাই।।
(৩৯) সিঁদুর চুপড়িতে হাত দিয়ে বলে --
সিঁদুর চুপড়ি পূজন।
সোনার থালে ভোজন।।
সোনার থালে ক্ষীরের লাড়ু।
শাঁখার আগে সুবর্ণের খাড়ু।।
(৪০) পানের বাটায় হাত দিয়ে বলে --
পানের বাটা পূজন।
সোনার থালে ভোজন।।
সোনার থালে ক্ষীরের লাড়ু।
শাঁখার আগে সোনার খাড়ু।।
(৪১) শাঁখে হাত দিয়ে বলে --
শাঁখ সেওল গাঙ্ নেওল।
বাপ রাজা ভাই বাদশা।।
(৪২) ময়নায় হাত দিয়ে বলে --
ময়না ময়না ময়না।
সতীন যেন হয় না।।
(৪৩) দশপুতুলে হাত দিয়ে বলে --
এক একটি পুতুলে একটি করে দূর্বা দিয়ে বলতে হবে—
এবার মরে মানুষ হব। রামের মত পতি পাব।।
এবার মরে মানুষ হব। লক্ষ্মণের মত দেওর পাব।।
এবার মরে মানুষ হব। দশরথের মত শ্বশুর পাব।।
এবার মরে মানুষ হব। কৌশল্যার মত শাশুড়ী পাব।।
এবার মরে মানুষ হব। সীতার মত সতী হব।।
এবার মরে মানুষ হব। কুম্ভীর মত পুত্রবতী হব।।
এবার মরে মানুষ হব। দ্রৌপদীর মত রাঁধুনি হব।।
এবার মরে মানুষ হব। পৃথিবীর মত ধীর হব।।
এবার মরে মানুষ হব। দুর্গার মত সোহাগী হব।।
এবার মরে মানুষ হব। ষষ্ঠির মত জেঁওজ হব।।
(৪৪) পাখীতে হাত রেখে বলে --
সো পাখী সো পাখী।
আমি যেন হই জন্মসুখী।।
(৪৫) ইন্দ্রেতে হাত রেখে বলে --
ইন্দ্র পূজি জোড় করে।
সাত ভাইয়ের বোন হয়ে।।
আলো ধানে রাঙা পূতে।
জন্ম যায় যেন এয়োস্ত্ৰীতে।।
(৪৬) তেরাজে হাত দিয়ে বলে --
তেরাজ ভেজন তিন কুলে
শ্বশুর স্বামী, পিতার কুলে।
এক তেরাজ বাপ মার
এক তেরাজ শ্বশুর শাশুড়ীর
অন্য তেরাজ আমার স্বামীর।।
(৪৭) খট্টা ডুমুরে হাত দিয়ে বলে --
খট্টা ডুমুর মত মাজাখানি।
হই যেন স্বামী-সোহাগিনী।।
হিংসেয় মরে সতীন কাণি।
দিন রাত পড়ুক চোখে পানি।।
(৪৮) ধানের মড়াইতে হাত দিয়ে বলে --
আমি দিই পিটুলির গোলা।
আমার যেন হয় সাত গোলা।।
(৪৯) তালগাছে হাত দিয়ে বলে --
তালগাছেতে বাবুই বাসা।
সতীন মরুক দেখতে খাসা।৷
(৫০) থুতু ফেলাতে হাত দিয়ে বলে --
থুতকুড়ি থুতকুড়ি।
সতীন বেটি আঁটকুড়ি।।
(৫১) থৌতে হাত দিয়ে বলে --
থৌ থৌ থৌ থৌয়ে দিলাম মৌ।
আমি যেন হই রাজার বউ।।
থৌ থৌ থৌ থৌয়ে দিলাম ঘি।
আমি যেন হই রাজার ঝি।।
থৌ থৌ থৌ থৌয়ে দিলাম চিনি।
এইভাবে এখানে দূর্বাগুলো দিয়ে নিচের মন্ত্ৰ বলতে হবে --
অরুণ ঠাকুর বরণে
ফুল ফুটেছে চরণে।।
যখন ঠাকুরের আজ্ঞা পাই।
ফুল কুড়িয়ে ঘরে যাই।।
(৫২) কুঁচ কুঁচতিতে হাত দিয়ে বলে --
কুঁচ কুঁচুতি কুঁচুই বোন,
কেনরে কুঁচুই এতক্ষণ।।
মোহর এলো ছালা ছালা,
তাই তুলতে এত বেলা।।
কুঁচ কুঁচুতি কুঁচুই বোন,
কেনরে কুঁচুই এতক্ষণ।।
টাকা এলো ছালা ছালা,
তাই তুলতে এত বেলাবেলা।।
কুঁচ কুঁচুতি কুঁচুই বোন,
কেনরে কুঁচুই এতক্ষণ।
ধান এলো ছালা ছালা,
তাই তুলে এত বেলা।।
কুঁচ কুঁচুতি কুঁচুই বোন,
কেনরে কুঁচুই এতক্ষণ।।
চাল এলো ছালা ছালা,
তাই তুলতে এত বেলা।।
সবশেষে পৌষ মাসের জন্য দূর্বাগুলো ভাল করে রেখে দিয়ে সেঁজুতির প্রণাম মন্ত্র --
সাঁজ সেঁজুতি করি নতি।
আমার হোক ধর্মে মতি।।
এই বলে জলভরা ঘটিতে প্রণাম করতে হবে।
সবশেষে সূর্যকে প্রনাম করে সেঁজুতি লৌকিক উৎসব তথা ব্রতের সমাপ্তী হয়। এইদিন ব্রতীনী ক্ষীরের নাড়ু দুধ দিয়ে ফুটিয়ে খাবে। মোট চার বছর ধরে এটি উদযাপন করতে হবেই। কেউ কেউ একে 'সাঁজপূজনী' নামেও অভিহিত করে থাকে। আসলে সন্ধ্যায় উদযাপিত হয় বলেই এহেন নামকরণ।
0 Comments