জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৫০

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৫০
সম্পাদকীয়,
সাজগোজ করতে কে না ভালোবাসে? আমি তো সাজতে খুব ভালোবাসি। আমি জানি তোমরাও উৎসবের সাজ শুরু করে দিয়েছো। মা দুগগাও শাড়ি বাছছেন। আলাদা আলাদা মন্ডপে আলাদা আলাদা শাড়ি পরতে হবে তো। তারপর আবার ছেলেমেয়েদের জামা কাপড় ঠিক করা। গয়নাগাটি জুতো সব ম্যাচিং করতে হবে। মৃণাল আঙ্কেল এক ছোট্ট বন্ধুর ছবি দিয়েছে সে দুগগার সাজ সেজেছে। ওকে দেখেই আমি ঠিক করে ফেললাম পরের সপ্তাহ থেকেই শুরু হবে ছোটোবেলার শারদ উৎসবের সাজ। কি খুশি তো? এ বছরের সেরা খুশির খবর ভারতের চন্দ্রযানের চাঁদে পাড়ি। সেই খুশিতে রতনতনু জেঠু ছড়া লিখেছেন।  চন্দ্র অভিযান নিয়ে ছোট্ট শৌর্যও ছড়া লিখেছে, ছড়া লিখেছেন তৃষ্ণা আন্টি। আর সেই ছড়ার সঙ্গে মহাকাশচারীর ছবি এঁকেছে সৌতি দিদি। ছন্দা পিসি থ্রিলার লিখেছে আর শ্রীপর্ণা গোয়েন্দা গল্প। ইন্দিরা আন্টি দারুণ একটা লোকগল্প শুনিয়েছে আর প্রবাহনীল মজার গল্প। ভানুপ্রিয়া কুড়মালি ভাষায় কবিতা লিখেছে আর মলয় জেঠু বেড়ানোর গল্প। গৌতম আঙ্কেল মজার ছড়া। কি হল তো দেড়শো তম সংখ্যার সাজগোজ কমপ্লিট? না হয়নি। সাজ শেষ হবে যদি বলি স্নেহা আর মানালী রাধা কৃষ্ণ আর রাম সীতার ছবি এঁকেছে। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল সুব্রত আঙ্কেলের নির্মিত এবারের শব্দজব্দটা। ঠাকুর দেখতে যাবার আগে অব্ধি যেমন সাজ শেষ হয়না তেমনই পাঠ প্রতিক্রিয়া ছাড়া ছোটোবেলার সাজ শেষ হতেই পারে না। সুদীপ্তা দিদির পাঠ প্রতিক্রিয়া দিয়েই হল সেই সম্পূর্ণ সাজ। এতো হল দেড়শো পর্বের সাজ,পরের সপ্তাহ থেকে শুরু হবে শারদ উৎসবের সাজ। এবারের ছোটোবেলার সাজ কেমন হল জানাতে ভুলো না কিন্তু......  মৌসুমী ঘোষ।

বিকি যাবে চন্দ্রযান চারে
রতনতনু ঘাটী

এইবার বইমেলা ঘুরেটুরে বায়না করল বিকি  
বাবা, শুনে রাখো মেলা থেকে কতগুলো বই চাই কী কী?  
সাতখানা বিজ্ঞান আর পাঁচখানা গণিতের বই—
জ্যামিতির বইগুলো এক ফাঁকে আমি একা কিনবই। 
গণিতের মেডইজি চাই গুনতিতে দশ-বারোখানা 
অঙ্কস্যারের কোনও কথা এইবার যাবে না মানা! 

সেজোমামা ফিরলেন সবে বাড়ি বেচে ইয়োকোহামার 
 ‘অলিম্পিয়াডে এইবার বোস বিকি ইচ্ছে আমার!’ 
ভয়ে কাঁপতে থাকি, মেসেজ দিলাম ছেড়ে চন্দ্রযানে—
‘আমাকে এসব কেন বলছেন মামা? কী যে এর মানে?’
চুপিচুপি বলি, ‘মামা সব কথা তুমি কোরো না তো ঢাস!
পৃথিবীর মায়া কাটাতে লেগেছে জানো টানা তিন মাস। 
মা আজই পায়েস দিয়েছে রেঁধে রোভার কন্টেনারে
ইসরো আমাকে পাঠাবে এইবার চন্দ্রযান চারে!’

ইচ্ছে
শৌর্য পাল
সপ্তম শ্রেণিনর্থ পয়েন্ট ইংলিশ একাডেমি, মালদা

ইচ্ছে তো আমার করে     পৌঁছাব চাঁদের ঘাঁটি  
যত প্ল্যান বানাই যাওয়ার   সবই হয়ে যাচ্ছে মাটি
এইবারে শপথ নিলাম      বাধা ঠেলে পৌঁছে যাব 
তবে চাই নতুন রকেট     খুঁজলে তা ঠিকই পাব  
চাঁদে গিয়ে সবার আগে    ফ্রেন্ডশিপ ফ্ল্যাগটা পুঁতে
ডেকে নেব চাঁদবাসীদের    মিটিং হবে চাঁদের জু-তে 
চাঁদে কারা পড়ছে ছড়া    সেই খোঁজ আমার আছে
শোনাব এই ছড়াটাও      মিটিং-এ ওদের কাছে 
জ্যোৎস্না দুধের পায়েস    খাওয়া হবে মিটিং শেষে
একটু তো সবুর করো     বাকি কথা বলব এসে


সোনপাহাড়ি ও ধানের শীষের কান্না  
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়


দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বোর্ণীও দ্বীপের অনেকটা জুড়ে ব্রুনেই দেশ। সেখানকার প্রকৃতি পরিবেশ জুড়ে নাকি অনেক লোকগল্প হাওয়ায় উড়ে বেড়ায়। ব্রুনেই দেশের স্থলভাগের উৎপত্তির মূলেও নাকি এমন সব লোকগাথা। ব্রুনেই নদীর মধ্যিখানে একটুকরো দ্বীপ Lumut Lunting এর জেগে ওঠার কারণ স্বরূপ এক ভয়ানক মোরগ-লড়াই কে দায়ী করা হয়। আবার নদীর গা দিয়ে এলিয়ে পড়া বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে এক চলমান সোনালি পাহাড় যুগযুগ ধরে সাক্ষী থাকে এক অভাবনীয় ঘটনার। সেই নিয়েই এই গল্প। বুদ্ধিতে হয়ত সবকিছুর ব্যাখ্যা মেলে না। যুক্তি দিয়েও সব ঘটনা বিচার করা যায়না কিন্তু ব্রুনেইয়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে বিশ্বাস করে আসছে এমন লোকগল্প। ছোটো শিশুদের ঘুমপাড়ানি  গানেও ধানের শীষ আর সোনাপাহাড় জেগে ওঠে বৈকি।

ব্রুনেই দেশের সেই চলন্ত পাহাড়ের নাম ছিল সোনাপাহাড় বা সোনপাহাড়ী। তার ছিল অনেক ঐশ্বর্য যা রাজারাজড়ার থেকে কোনও অংশেই কম নয়। দুষ্প্রাপ্য সব উদ্ভিদ, রংবেরঙয়ের ফুল, সুমিষ্ট, রসালো ফল আর নানারকমের পাখিরা ছিল সেই সোনাপাহাড়ের পরিবারের সদস্য। মহাস্থবির জাতকের মত সেই সোনাপাহাড় আগলে রাখত ব্রুনেই নদী কে। যেন সে হল রক্ষক। পরিবারের কর্তা। বহুযুগ ধরে সোনাপাহাড় নদীর পাশ দিয়ে চলতে চলতে একটুও ক্লান্ত হয়নি। বরং সমুদ্রের দিকে যেতে যেতে কোনও অঘটন দেখলে, বোর্ণীও দ্বীপে বা তাদের দেশে কোনও অরাজকতা বা দুর্ঘটনার আভাস পেলে থমকে যেত। দুঃখ পেত। কষ্ট পেত ঠিক মানুষের মতনই। মানুষের ভীড়, জটলা, কোলাহল শুনে দাঁড়িয়ে পড়ত। আবারও চলত।
সোনাপাহাড় সমুদ্রের ওপারে ঘুরে বেড়িয়ে এমন সব লোকদের খুঁজত যারা বিদ্যায়, শিক্ষায়, জ্ঞানে বিশ্বের সবার সেরা। ব্রুনেই দেশটাকে যেন আগলে রেখেছিল এই সোনপাহাড়ী। ব্রুনেই দেশের মানুষের এখনও বিশ্বাস সোনপাহাড়ি এই নদীর ওপর দিয়ে চলতে চলতে যেখানে থেমেছে সেখানেই নাকি জেগে উঠেছে একখণ্ড দ্বীপ।
একদিন নদীর ওপর দিয়ে সমুদ্রের দিকে ধাবমান এই সোনপাহাড়ি সাঁতার কাটতে গিয়ে হঠাৎ করেই বোর্নিও দ্বীপে অবস্থিত একটি ছোট্ট গ্রাম দেখতে পেল। এই দ্বীপ সংলগ্ন গ্রামের নাম জলগাঁও।
জলগাঁও এর মানুষের জীবনযাত্রা দেখে বড় আনন্দ হল সোনপাহাড়ির। যেন থইথই আনন্দ আর গতিময়তা সেই জীবনে। সেখানে হইহই করছে মানুষ। পুরুষরা ব্যবসায়িক বন্দর তৈরি করছে, মায়েরা তাদের বাচ্চাদের দেখভাল করছে। বাচ্ছাদের দাদু ঠাকুমারা নদীতে সাম্পান বা ছোটো ছোটো নৌকায় ভেসে ভেসে মনের সুখে কৃষিজাত পণ্য বিক্রি করছে। এসব দেখে শুনে সোনপাহাড়ির মনে বড় আনন্দ হল। মুগ্ধ দৃষ্টিতে সে চেয়ে রইল সেই গ্রামের দিকে। আর ভাবল সোনপাহাড়ির ঐশ্বর্য সেই জলগাঁওয়ের মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নেবে।
কিন্তু জলগাঁওয়ের বসতির কাছে যেতেই সোনপাহাড়ি হঠাত করুণ এক কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল। নিচে জলের দিকে তাকিয়ে দেখল একটা ধানের শীষ জলে ভাসতে ভাসতে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। অনবরত কেঁদেই চলেছে। কিছুতেই তার কান্না আর থামছেই না।ওমা! একটা না। দুটো না, তিনটে না... " এ যে দেখি বেশ কয়েকটা তো। সবকটা ধানের শীষই কুঁইকুঁই করে অঝোরে কেঁদেই চলেছে।"  
"ছোট্ট বন্ধু,
কী হয়েছে তোমার? কাঁদছ কেন? সোনপাহাড়ি তাদের দিকে চেয়ে বলল।
একটা ধানের শীষ বলল, এই দেখো না, কত কষ্ট করে মানুষ ধান বোনে। সেই ধান থেকে চাল হয়। মানুষ তা খেয়ে বেঁচে থাকে আর আমায় কিনা ফেলে দিল সেই লোকটা।
অন্য আরেকটা বলল, আমি হয়ত অন্য কারোর পেট ভরাতে পারতাম।
সোনপাহাড়ি বলল, কে সেই লোক যে এমন জঘন্য কাজ করেছে?
তৃতীয় ধানের শীষ বলল,
একটা জেলের কাজ এটা। সেদিন সে সাম্পানে চড়ে মাছ ধরছিল নদীতে। সে ঘর থেকে তার বউয়ের রেঁধে দেওয়া খানিকটা ভাত দিব্যি খেল নৌকোয় বসেই আর কিছুটা ভাত খেতে পারল না তাই নদীর জলে ছুঁড়ে ফেলে দিল। সেই থেকেই তো আমরা কেঁদে চলেছি। এই দুর্মূল্যের বাজারে কত মানুষ না খেয়ে মরছে আর জেলে কিনা ছুঁড়ে ফেলে দিল আমায়।

  একথা শুনে সোনাপাহাড় নিজমূর্তি ধারণ করল। গর্জন করে বলল, “সে কী! আমার তো সবদিকে চোখ ঘুরছে।এই দ্বীপের সবখান আমার নখদর্পণে কিন্তু এটা অবশ্যই খুব খারাপ কাজ করেছে সেই জেলে! যারা ছোটোখাটো জিনিষ এভাবে ফেলে দেয় তারা ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই বড় কোনও সম্পদের যোগ্য নয়!ভাগ্যিস জানালে তোমরা। নাহ! এবার থেকে কিছুতেই দেব না আমি সেই জেলে কে আমার সোনার পাহাড়ের ধনসম্পদের ভাগ”
ব্রুনেইয়ের প্রকৃতিও যেন শুনতে পেল সোনা পাহাড়ের সেই গর্জন।
সেই মুহুর্তে, আচমকা নদীর ধারে, পাহাড়ের গায়ে ঝোড়ো বাতাস বইতে শুরু করল। আকাশে মেঘ জমে গেল হঠাত করেই। বজ্রবিদ্যুতের সঙ্গে তুমুল ঝড়বৃষ্টি শুরু হল। সব মিলিয়ে যেন তাণ্ডব চলল। জলগাঁওয়ের সমস্ত গ্রামবাসীরা বিক্রিবাটা ছেড়ে, তাদের নৌকার পসরা নিয়ে ভয়ে লুকিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। আর নাকানিচোবানি খেল সেই জেলের পরিবার।
সোনাপাহাড় মোটেই সইতে পারেনা এসব। বড় কষ্ট পেল মনে মনে। জেলের সামান্য ভুলের মাশুল গুনছে জলগাঁওয়ের নিরীহ মানুষ।
সেই মারণ ঝড় যখন একে একে সব লণ্ডভণ্ড করে গ্রামের সর্বনাশ করতে ব্যস্ত, সোনাপাহাড় নদীর মধ্যে সাঁতরে চলে যাওয়া সেই ধানের শীষগুলোকে আদর করে বুকে টেনে নিতেই শান্ত হল প্রকৃতি। নিমেষেই সব দুর্যোগ কেটে গেল আর সেইসঙ্গে জন্মের মত থেমে গেল ধানের শীষেদের কান্নাও। আর তারপর থেকে সেই কান্না আর জন্মেও শুনতে পায়নি ব্রুনেই এর মানুষজন। তাই না ছোট্ট এই দেশটা এত উন্নতি করে চলেছে।

( Abdul Malik Omar এর লেখা ব্রুনেই এর লোকগাথা অবলম্বনে )

ধন্যি আশা
তৃষ্ণা বসাক
 
চাঁদ আর সুয্যির
রাগ আজ ভারি,
খোকা খুকু সব দিল
মহাকাশে পাড়ি!
টি দিতে কোথায় পাবে
তেমন কপাল?
এমনকি স্পেসসুটে
সেজেছে গোপাল!
তবুও পাথুরে বুকে
আশা জেগে থাকে,
প্রজ্ঞান যদি কভু
মামা বলে ডাকে!
 

ঝিমিলের ‘সুপার হিরো’

শ্রীপর্ণা ঘোষ

আজ আকাশ জুড়ে রিমিল ছেয়ে আছে তাই অন্ধকার হয়ে এসেছে। আর গাড়ির জানলা দিয়ে এক রিমিল আর এক রিমিলের দিকে চেয়ে আছে। দুজনেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাড়ি দিচ্ছে। তাদের কারোরই মন ভালো নেই, তাই দুজনের মধ্যে কে যে আগে বর্ষণ ঘটাবে কেউ জানে না। এই পৃথিবীর রিমিল আজ তার নতুন স্কুলে যাচ্ছে। তার স্কুলটা রেসিডেন্সিয়াল তাই রিমিলের এত দুঃখ। তাছাড়া ঝিমিলকেও ছেড়ে যেতে হচ্ছে তাকে। সেই যবে থেকে ঝিমিল শুনেছে রিমিল চলে যাবে, সে রাগে দুঃখে কারো সঙ্গে কথা বলছে না। রিমিলেরও খুব কষ্ট হচ্ছে। তারা একসঙ্গে কত আনন্দ করতো আর তাদের গোয়েন্দাগিরিও তো আর করা হবে না। এইসব ভাবতে ভাবতে তারা চলে এল নতুন স্কুলে। স্কুলটা মেদিনীপুরের গোপগড় জঙ্গলে। স্কুলের চারপাশে কয়েকটা আদিবাসী গ্রাম আছে। তাই খুব একটা গভীর জঙ্গলও নয়। 

রিমিলের হোস্টেল ঠিক করে, ও অনেক আদর করে ঝিমিল আর মা-বাবা বাড়ি ফিরে গেল। প্রথম কদিন রিমিলের খালি কান্না পাচ্ছিল, তার ওপর নতুন স্কুলে এসে অব্ধি খালি পড়া আর পড়া। পড়া না পাড়লেই বকুনি। রিমিল কাঁদছে শুনে বেণু মাসি তার কাছে হোস্টেলে এল। বেণু মাসি হোস্টেল পরিস্কার করে, রিমিলদের দেখাশোনা করে। বেণু মাসি ছেলে মেয়েদের খুব ভালোবাসে আর নিজের গ্রামের গল্প শোনায়। বেণু মাসি রিমিলকে আদর করে বলল, আয় তোকে একটা গল্প শোনাই। রিমিল চোখ মুছে আগ্রহের সঙ্গে বেণু মাসির পাশে বসে গল্প শুনতে লাগল।

বেণু মাসি তাদের গ্রামে হাতি আসার গল্প বলতে শুরু করল। শীত কালে খেতের সবজি খেতে হাতি আসে। তখন গ্রামের লোকেরা ক্যানেস্তারা পিটিয়ে আগুন জ্বালিয়ে হাতিকে আবার জঙ্গলে পাঠায়। হাতি তাড়ানোর গল্প শুনে রিমিল সব দুঃখ ভুলে গেল। বেণু মাসি রোজ এরকম গল্প শোনাতো রিমিলদের। 

আস্তে আস্তে রিমিল অভ্যস্ত হয়ে গেল বোর্ডিং স্কুলে। এখানে তার অনেক বন্ধু হয়ে গেল। তাকে শিক্ষক শিক্ষিকারাও খুব ভালোবাসে। ঝিমিলের সঙ্গেও তার ফোনে কথা হয়। আর সবচেয়ে ভালো ব্যাপার এই স্কুলে একটা খুব সুন্দর লাইব্রেরী আছে। যেখানে রিমিল অনেক গোয়েন্দা ও রহস্য গল্পের বই পড়তে পারে। 

সবই ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু একদিন বেণু মাসি এল না তাদের হোস্টেলে। রিমিলের একটু চিন্তা হচ্ছিল বইকি, বেণুমাসি তো কোনো দিনও কামাই করে না! তাই তার পরেরদিন বেণুমাসি এলে রিমিল জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছিল তার? কেন স্কুলে আসেনি আগেরদিন?

বেণুমাসি বলল, আর বোল না, আমাদের ওখানে কী বিপদ! পাশের গ্রামের দুটো ছেলেকে স্কুল থেকে ফেরার সময় ছেলেধরারা তুলে নিয়ে চলে গেছে। 

রিমিল ভয়ে চেঁচিয়ে বলল, কী বলছো বেণু মাসি? 

বেণুমাসি বলল, হ্যাঁ রে, তাই কাল আমরা সবাই মিলে বাচ্চাগুলোকে খুঁজতে বেরিয়েছিলাম। পঞ্চায়েত অফিসে, থানায়ও গেছিলাম… কোনো লাভ হল না রে।

দুদিন বাদে রিমিল আবার বেণু মাসিকে জিজ্ঞেস করল ছেলেদুটোকে পাওয়া গেল কিনা। কিন্তু বেণুমাসির কথা শুনে রিমিল আরো অবাক হল। ওদের তো পাওয়া যায়ইনি। উপরন্তু অন্য একটা গ্রাম থেকে আরো দুটো বাচ্চাকে ছেলেধরারা তুলে নিয়ে গেছে। তাই বেণুমাসির খুব ভয় নিজের বাচ্চাদের নিয়ে। এখন এই ছেলেধরার খবরটা শুধু রিমিল নয় গোটা স্কুলের সবাই জেনে গেছে। সবাই বলাবলি করছিল এই নিয়ে। 

এর দুদিন বাদে থেকেই বেণুমাসি আবার কামাই করল। দুতিন দিন হয়ে গেল বেণুমাসি আসেনা। শুধু রিমিলই না হোস্টেলে সবার দুঃখ হচ্ছিল বেণুমাসি না আসায়। রিমিল ফোনে ঝিমিলকেও তার দুঃখের কথা জানালো। ঝিমিল সব শুনে বলল, খবরের কাগজে প্রায়ই লেখে বাচ্চাদের কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়ে কিডনি, চোখ নিয়ে নেয়। তারপর সেগুলো লাখ লাখ টাকায় ডিল হয়। 

রিমিল বলল, ধ্যাৎ তুই তো থ্রিলার সিনেমার মতো ক্রাইম সীন বানাচ্ছিস। ও অতোকিছু নয় রে। বেণুমাসি বলছিল, গ্রামের লোকেদের ভয় দেখিয়ে জমি নিয়ে নেওয়ার জন্য করছে এসব। 

ঝিমিল বলল, আচ্ছা সে যাই হোক, তুই ভয় পাস না। সবসময় মনে রাখবি তোর মতো স্ট্রং আর কেউ নেই। বিপদে পড়লেই জাস্ট ৫ সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে থাকবি। দেখবি সব সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবি।

রিমিল বলল, হ্যাঁ চোখ বন্ধ করলেই তো তোর সুপার হিরো আমাকে বাঁচাতে আসবে?

ঝিমিল বলল, আসতেই পারে।

পরেরদিন স্কুলে সবাই বলাবলি করছিল, বেণুমাসির ছোটোছেলেকেও ছেলেধরা তুলে নিয়ে গেছে। তাই বেণুমাসিও আর আসছে না কাজে। কথাটা শুনে রিমিলের গায়ে কাঁপুনি দিয়ে উঠল রাগে। ব্যাপারটা খুবই বড়ো হয়ে দাঁড়িয়েছে অথচ রিমিল কিছুই করতে পারছে না। মনে মনে বলল, নিজেকে আমি গোয়েন্দা রিমিল পরিচয় দিই অথচ কিছুই করতে পাচ্ছি না।

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ হয়ে গেল। বেণুমাসি আর আসেনা। বেণু মাসির জায়গায় এক নতুন কাজের মাসি এল। কিন্তু সে বেণুমাসির মতো একদমই না। বাচ্চাদের বকে আর সারাদিন ফোনে কথা বলে যায়। তার নাম রীতা।

একদিন রীতামাসি ফোনে কথা বলার সময় রিমিল পাশ দিয়ে যেতে যেতে কিছু কথা শুনে ফেলল। রীতা মাসি কারো সঙ্গে লাখ লাখ টাকার কথা বলছিল। রিমিলের কেমন যেন সন্দেহ হল। ঝিমিলের কথা মনে পড়ল। সেদিন সারারাত রিমিলের ঘুম এল না। পরদিন সকালে ক্লাসে গিয়ে শুনলো, জুনিয়ার বয়েজ হোস্টেলের ছাদে নাকি রাতে কারা যেন উঠেছিল। একবার দরজায় টোকাও দিয়েছিল কে যেন। জুনিয়াররা ভূত ভেবে অনেকে খুব কেঁদেছে সারারাত। কথাটা শুনে রিমিলের মনে অজানা এক ভয় হতে শুরু করল। হোস্টেল ইনচার্জ বলল, সিনিয়াররা ভয় দেখানোর জন্য নাকি এসব করেছে। তাই কেউ এ ব্যাপারটায় অতটা পাত্তা দিল না। কিন্তু রিমিল বুঝে গেল, এ কাজ অন্য কারো।

সেদিন রাতে কোনো এক অজানা আশঙ্কার ভয়ে রিমিল সজাগ রইল। আসলে সেদিন রিমিলদের হাউস মিস্ট্রেস ছুটি নিয়েছিল। তাছাড়া সেদিন সন্ধে থেকেই রীতামাসি ক্ষণে ক্ষণে ফোনে কথা বলছিল কারোর সঙ্গে। এই রীতামাসিকে রিমিলের প্রথম থেকেই ভালো লাগেনি। রাতে সবাই ঘুমিয়ে যেতেই একটা দরজা খোলার আওয়াজ হল। কান খাঁড়া করে বোঝার চেষ্টা করল, তাদের হাউস না পাশের হাউস থেকে দরজা খোলার আওয়াজ এল। সে উঠে বসল খাটে। হঠাৎ পাশের হাউস থেকে চেল্লামেল্লির আওয়াজ ভেসে এল। সেই আওয়াজে সবে ঘুমানো অনেকেই জেগে উঠল। রিমিলরা দরজা খুলে পাশের হাউসের দিকে যাবে বলে এগোতেই দেখল কয়েকজন লোক মুখে গামছা চাপা দিয়ে পাশের হাউসের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। ভয়ে রিমিলের বুকটা ধক করে উঠল। এই আশঙ্কাতেই তার ঘুম আসছিল না বোধহয়। 

রিমিলরা সিনিয়ার দিদিদের হোস্টেলের দিকে গিয়ে দেখল, ওরা যাতে না বেরোতে পারে তারজন্য ওদের দরজাগুলোয় তালা দেওয়া। এক বন্ধু বলল, চ রীতা মাসিকে ডাকি। কিন্তু অনেক খুঁজেও ওরা রীতা মাসিকে পেল না। রিমিল বুঝল এখন তাদের উদ্ধার করতে কেউ আসবে না। তাকেই একটা উপায় বার করতে হবে। রিমিল টেবিল থেকে বড় কাঁচিটা হাতে নিয়ে নিল। বন্ধুদের বলল, আমাদের বাঁচাতে এখানে কেউ আসবে না। ওরা আমাদের কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়ার আগেই আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।  

রিমিল সোজা লোকগুলোকে গিয়ে বলল, তোমরা এখনি এখান থেকে চলে যাও। 

রিমিলের চেঁচানি শুনে লোকগুলো হো হো করে হেসে উঠল। দুজন লোক হোস্টেল থেকে অলরেডি দুজন বাচ্চাকে হাত ধরে টেনে বাইরে বার করছিল তাদের দিকে তেড়ে গেল রিমিল, বলল, তোমরা ওদের ছেড়ে দাও বলছি। 

দু’এক জনকে ঠেলে সরিয়ে লোকদুটো রিমিলের দিকে তেড়ে এসে বলল, বড্ড সাহস তো তোর? ওদের ছেড়ে লোক দুটো রিমিলের হাত ধরতে গেলে রিমিল কাঁচির ব্লেডের কোপ বসিয়ে দিল লোক দুটোর হাতে। লোকগুলোর হাত কেটে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছিল। 

একটা লোক পিছন থেকে তেড়ে এসে বলল, তুই চুনোপুঁটি কী করবি ? আমরা একটাকে নিয়ে যাবই… বলে একজনের হাত ধরতে গেলে রিমিল একা নয় প্রত্যেকেই তখন কিছু না কিছু হাতে নিয়ে কেউ ঝাঁটা কেউ স্কেল কেউ জল ভর্তি বোতল কেউ বালতি নিয়ে লোকগুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। এমনকি একটা বন্ধু বিশাল মোটা বামন দেবের বাংলা গ্রামার বইটা দিয়ে একটা লোকের মাথায় এক বারি মারলো। কিন্তু একটা লোক তাতেও হার মানলো না। সে একটা মেয়েকে চুলের বিনুনী ধরে টানতে লাগলো, তখন হোস্টেলের ভিতরের মেয়েরাও সাহস পেয়ে গেছিল, তারা ভিতর থেকে তাদের বন্ধুকে সবাই মিলে টেনে রাখলো। লোকটা মেয়েটার বিনুনী ছেড়ে রিমিলের চুলের গোছা ধরে হ্যাঁচকা টান দিল। রিমিল ব্যথায় কাতরাতে লাগল। তখন তার ঝিমিলের কথা মনে পড়ল, চোখ বুজে পাঁচ গুনলো। তারপর এক গভীর নিশ্বাস নিয়ে চোখ খুলতেই সামনে দেখল ফায়ার আলার্মটা। হাতে শক্ত করে ধরা কাঁচিটা দিয়ে জোর আঘাত করল আলার্মটার কাঁচের বক্সে। তারপর আলার্ম বাজিয়ে দিতেই লোকগুলো পালাবার পথ খুঁজতে লাগল। 

ধরা পড়ার ভয়ে তারা হোস্টেল থেকে বেরোনোর দরজার দিকে গেল। পড়ি কি মরি করে বেরিয়ে বাউন্ডারি ওয়ালের দিকে ছুটল। ততক্ষণে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা সহ দারোয়ান সিকিউরিটি গার্ড সবাই ছুটে এসেছে। পাঁচিল টপকে পালাতে গিয়েও একটাকে দারয়ান পা টেনে নামিয়ে বেঁধে ফেলল। পুলিশ এসে ওটাকে পিটিয়ে বাকিগুলোর হদিশ পেয়ে গেল। 

রিমিল যখন হাতে ব্যান্ডেজ করে মেডিকেল রুমে শুয়ে আছে, তখন ধীরে ধীরে সকাল হল। ফায়ার এলার্মের কাঁচে রিমিলের হাত ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছিল। ইঞ্জেকশানও নিতে হল তাই। পুলিশ সকালবেলায় স্কুলে এসে জানালো লোকগুলোর কাছ থেকে কিডন্যাপ হওয়া বাচ্চাগুলোরও সন্ধান মিলেছে।

সকাল হতেই মা-বাবার সঙ্গে ঝিমিল এসে জড়িয়ে ধরল রিমিলকে। বলল, বেশি পাকামো করতে গিয়ে জখম হলি তো? 

রিমিল বলল, ও কিছু না। গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়ে অমন ছোটোখাটো জখম হতেই পারে। তুই তো বলেছিলি আমি সুপার স্ট্রং। আর হ্যাঁ চোখ বুজে পাঁচ গোনার পরও তোর সুপার হিরো আমাকে বাঁচাতে আসেনি। 

ঝিমিল বলল, ঠিক আছে, এখন বাড়ি চ। 

রিমিল বলল, দাঁড়া যাবার আগে আরো একটা কাজ বাকি আছে। বলেই প্রিন্সিপাল রুমের দিকে এগিয়ে গেল দুজনে। রুমে মিটিং চলছিল পুলিশের সঙ্গে। রিমিলকে দেখে পুলিশ সুপার তারিফ করে বলল, রিমিল শুধু তোমার জন্যই আজ বিরাট একটা র‍্যাকেট ধরা পড়লো 

রিমিল বলল, কিন্তু এখনো আসল অপরাধী তো ধরাই পড়েনি। 

সবাই অবাক হয়ে রিমিলের দিকে চেয়ে রইল। রিমিল বলেই চলল, রীতামাসি হল আসল অপরাধী। আমি স্পষ্ট শুনেছি সে ফোনে কারো সঙ্গে লাখ লাখ টাকা নিয়ে কথা বলছে। আর কাল রাতেও হোস্টেলের কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। আমার ধারণা রীতা মাসিই সিনিয়ার দিদিদের হোস্টেল তালা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিল। যাতে দিদিরা বেরোতে না পারে। 

সময় নষ্ট না করে পুলিশ সুপার ফোন করতেই রীতা মাসিও গ্রাম থেকে ধরা পড়লো। তাকে স্কুলে আনা হলে সে কাঁদতে কাঁদতে সব অপরাধ স্বীকার করল। এর মধ্যেই কাগজের রিপোর্টাররা চলে এল। এক রিপোর্টার কাকু সব শুনে রিমিলকে হ্যান্ডসেক করে বলল, কালকের আমাদের কাগজের হেডিং হবে ‘রিমিল গোয়েন্দার…’ 

সবাই চলে গেলে ঝিমিল রিমিলকে বলল, জানিস দিদি আমার সুপার হিরো কে? তারপর রিমিলের কানের কাছে এসে বলল, দিদি তুইইইই…। 

সেদিন রাতে কোনো এক অজানা আশঙ্কার ভয়ে রিমিল সজাগ রইল। আসলে সেদিন রিমিলদের হাউস মিস্ট্রেস ছুটি নিয়েছিল। তাছাড়া সেদিন সন্ধে থেকেই রীতামাসি ক্ষণে ক্ষণে ফোনে কথা বলছিল কারোর সঙ্গে। এই রীতামাসিকে রিমিলের প্রথম থেকেই ভালো লাগেনি। রাতে সবাই ঘুমিয়ে যেতেই একটা দরজা খোলার আওয়াজ হল। কান খাঁড়া করে বোঝার চেষ্টা করল, তাদের হাউস না পাশের হাউস থেকে দরজা খোলার আওয়াজ এল। সে উঠে বসল খাটে। হঠাৎ পাশের হাউস থেকে চেল্লামেল্লির আওয়াজ ভেসে এল। সেই আওয়াজ সবে ঘুমানো অনেকেই জেগে উঠল। রিমিলরা দরজা খুলে পাশের হাউসের দিকে যাবে বলে এগোতেই দেখল কয়েকজন লোক মুখে গামছা চাপা দিয়ে পাশের হাউসের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। ভয়ে রিমিলের বুকটা ধক করে উঠল। এই আশঙ্কাতেই তার ঘুম আসছিল না বোধহয়। 

রিমিলরা সিনিয়ার দিদিদের হোস্টেলের দিকে গিয়ে দেখল, ওরা যাতে না বেরোতে পারে তারজন্য ওদের দরজাগুলোয় তালা দেওয়া। এক বন্ধু বলল, চ রীতা মাসিকে ডাকি। কিন্তু অনেক খুঁজেও ওরা রীতা মাসিকে পেল না। রিমিল বুঝল এখন তাদের উদ্ধার করতে কেউ আসবে না। তাকেই একটা উপায় বার করতে হবে। রিমিল টেবিল থেকে একটা বড় কাঁচি হাতে নিয়ে নিল। বন্ধুদের বলল, আমাদের বাঁচাতে এখানে কেউ আসবে না। ওরা আমাদের কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়ার আগেই আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। 

রিমিল সোজা লোকগুলোর কাছে গিয়ে বলল, তোমরা এখান থেকে চলে যাও। 

রিমিলের চেঁচানি শুনে লোকগুলো হো হো করে হেসে উঠল। দুজন লোক হোস্টেল থেকে অলরেডি দুজন বাচ্চাকে হাত ধরে টেনে বাইরে বার করছিল তাদের দিকে তেড়ে গেল রিমিল, বলল, তোমরা ওদের ছেড়ে দাও বলছি। দু’এক জনকে ঠেলে সরিয়ে লোকদুটো রিমিলের দিকে তেড়ে এসে বলল, বড্ড সাহস তো তোর? ওদের ছেড়ে লোক দুটো রিমিলের হাত ধরতে গেলে রিমিল কাঁচির ব্লেডের কোপ বসিয়ে দিল লোক দুটোর হাতে। লোকগুলোর হাত কেটে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছিল। 

একটা লোক পিছন থেকে তেড়ে এসে বলল, তুই চুনোপুঁটি কি করবি ? আমরা একটাকে নিয়ে যাবই… বলে একজনের হাত ধরতে গেলে রিমিল একা নয় প্রত্যেকেই তার বন্ধুরা তখন কিছু না কিছু হাতে নিয়ে কেউ ঝাঁটা কেউ স্কেল কেউ বালতি কেউ জল ভর্তি বোতল নিয়ে লোকগুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। এমনকি একটা বন্ধু বিশাল মোটা বামন দেবের বাংলা গ্রামার বইটা দিয়ে একটা লোকের মাথায় এক বারি মারলো। অন্য বন্ধুরাও চেঁচাতে লাগলো, ছেড়ে দাও ওদের। কিন্তু একটা লোক তাতেও হার মানলো না। সে একটা মেয়েকে চুলের বিনুনী ধরে টানতে লাগলো, তখন হোস্টেলের ভিতরের মেয়েরাও সাহস পেয়ে গেছিল, তারা ভিতর থেকে তাদের বন্ধুকে সবাই মিলে টেনে রাখলো। লোকটা মেয়েটার বিনুনী ছেড়ে রিমিলের চুলের গোছা ধরে হ্যাঁচকা টান দিল। রিমিল ব্যথায় কাতরাতে লাগল। তখন তার ঝিমিলের কথা মনে পড়ল, চোখ বুজে পাঁচ গুনলো তারপর এক গভির নিশ্বাস নিয়ে। চোখ খুলতেই সামনে দেখল ফায়ার আলার্মটা। হাতে শক্ত করে ধরা কাঁচিটা দিয়ে জোর আঘাত করল আলার্মটার কাঁচের বক্সে। তারপর আলার্ম বাজিয়ে দিতেই লোকগুলো পালাবার পথ খুঁজতে লাগল। 

ধরা পড়ার ভয়ে তারা হোস্টেল থেকে বেরোনোর দরজার দিকে গেল। পড়ি কি মরি করে বেরিয়ে বাউন্ডারি ওয়ালের দিকে ছুটল। ততক্ষণে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা সহ দারোয়ান সিকিউরিটি গার্ড সবাই ছুটে এসেছে। পাঁচিল টপকে পালাতে গিয়েও একটাকে দারয়ান পা টেনে নামিয়ে বেঁধে ফেলল। পুলিশ এসে ওটাকে পিটিয়ে বাকিগুলোর হদিশ পেয়ে গেল। 

স্নেহা দাস, নবম শ্রেণি, জওহর নবোদয় বিদ্যালয়, পশ্চিম মেদিনীপুর

শ্মশান 

ছন্দা বিশ্বাস 

সেবার রোমানরা উদাত্তের সঙ্গে বেট ফেলল। 

উদাত্ত শুনেছে ভয়ংকর এই শ্মশানের কথা। বহুকাল আগে ওই শ্মশানে নাকি একজন তান্ত্রিক সাধু থাকতেন। তিনি নীচেয় ধুনি জ্বালিয়ে হেট মুন্ডে তপস্যা করতেন। তন্ত্র সাধনার জন্যে তাঁর একশ আটটি নরবলি প্রয়োজন ছিল। আর তাই তিনি নাকি এ গ্রাম সে গ্রাম থেকে শিশুদের ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে গিয়ে তাদের অমাবস্যার রাতে বলি দিতেন। একটা সময়ে ওই শ্মশানের নাম শুনলে আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলে ভয়ে কাঁপত। আসে পাশে গাঁয়ে কোনো শিশু একবার হারিয়ে গেলে তাকে আর কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যেত না। সকলেই ধরে নিত শিশুহারা শ্মশানে তাদের বলি দেওয়া হয়েছে। 


রোমানদের বাড়ি থেকে প্রায় সাত আট কিলোমিটার দূরে এই শ্মশান। ঘন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে বয়ে চলেছে এক নদী, নাম সন্ন্যাসী নদী। সেই নদীর পাড়ে এই শ্মশান। 

উদাত্ত সৌপ্তিক আরব আর রোমানদের সঙ্গে কথা বলে জানলো একদিন ওকে বারবিকিউনেশানে খাওয়াবে। 

উদাত্তর মা বাবা সেদিন থাকছেন না। সকালেই বেরিয়ে পড়বেন , কামরূপ কামাখ্যাতে যাচ্ছেন পূজো দিতে। এটাই আদর্শ দিন। 

শিশুহারা শ্মশানে যাওয়াটা বেশ ঘটোমটো। শহর থেকে অটো যায় ডুডুয়া বস্তি পর্যন্ত। তারপরে ঘন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে আরো দুই কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। 

উদাত্ত ডিনার সেরে নটার আগেই বেরিয়ে পড়ল । 

সেগুন, চিকরাশি, গামার আর সীতাহারের ঘন জঙ্গল। লতা ঝোপ ঝাঁড় এবং গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের ঘন বুনোট জঙ্গলকে আরো গাঢ়তা প্রদান করেছে। কৃষ্ণা চতুর্দশীর রাত যেন অরণ্যকে অন্য এক মাত্রা দিয়েছে। এক ফুট দূরের কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। একটানা ঝিল্লী রব ছাড়াও শিয়ালের ডাক কানে এলো। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ছুটে চলে গেল কোনো জন্তু । নিকষ কালো অন্ধকারে পথ প্রায় দেখাই যাচ্ছে না।  মাঝে মাঝে ডালপালা পথ আটকে দিচ্ছে। কয়েকটা রাতচড়া পাখি হুট! হুট! শব্দ করে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে উড়ে গেল। সম্ভবতঃ পেঁচা, ভাবল উদাত্ত।

এই বনে অনেক রকমের জন্তু জানোয়ার থাকলেও থাকতে পারে। কথাটা ভাবতেই এক পাল হরিণ খুব দ্রুত ওকে পাশ কাটিয়ে উল্টোদিকের বনের ভিতরে অদৃশ্য হল।

ঘন অন্ধকার। কৃষ্ণা চতুর্দশীর রাত যে এতোটা গাঢ় অন্ধকার হতে পারে এর আগে কখনো অনুভব করেনি। 

রাত প্রায় এগারোটা বাজতে চলেছে। চড়াই উতরাই পার হয়ে অবশেষে শ্মশানের সামনে এসে উপস্থিত হল উদাত্ত।

নদীর পাড় ধরে এগিয়ে গেল। রাত্রির অন্ধকারে নদীটাকে কালো পীচ ঢালা রাস্তা বলে মনে হচ্ছে। 

নদীর তীরে শ্মশান। খানিক আগেই একটা শবদাহ করা হয়েছে বলে মনে হল। বাতাসে মাংস পোড়া গন্ধ। নদীর পাড়ে মৃতের কাপড় চোপড় কাঁথা বালিশ মাদুর সব ছড়িয়ে ছিটয়ে আছে। পাশে পড়ে আছে  মাটির ভাঙ্গা কলসি। এখন চোখটা অনেকটা সেট হয়ে গেছে অন্ধকারে। 

কয়েকটা শিয়াল নদীর পারে ঘোরাঘুরি করছে। রাত বাড়ার সাথে সাথে শীতের প্রকোপও বাড়ছে । দুদ্দাড় করে একরাশ ঠান্ডা বাতাস ছুটে যেতে যেতে কেমন যেন হাড় হিম করা পরশ বুলিয়ে দিয়ে গেল। উদাত্ত নদীর তীর বরাবর হাঁটছে কিন্তু ওর কেন জানি মনে হচ্ছে কে যেন ওর আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের চোখে দেখা না গেলেও তাদের উপস্থিতি অনুভব করতে পারছে।

এমন অন্ধকার এ জীবনে কখনো দেখেনি উদাত্ত। সঙ্গে কুয়াশার চাদর যেন মুড়ে ফেলছে চতুর্দিক। এক হাত দূরের জিনিসও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। নিবিড় তমসায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে চতুর্দিক। শ্মশানে ও ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মানুষ দেখতে পেল না। এখানে  কী কেউ থাকে না? ডোম কিম্বা কোনো সাধু সন্ন্যাসী!

মনে মনে ভাবছে উদাত্ত। 

শুনেছে  তন্ত্র সাধকদের পক্ষে আদর্শ একটি জায়গা। অনেক সাধুপুরুষ এখানে সাধনা করতে আসেন। 

হঠাৎ ওর মনে হল অদূরে নদীর ভিতরে একটি উঁচু পাথর খন্ডের উপরে কে যেন বসে আছে । বসার ভঙ্গীমা দেখে  মনে হচ্ছে কোনো নারী। যেন চুল এলিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। তার বিশাল লম্বা কেশরাশি নদীর জল স্পর্শ করছে। অন্ধকার রাত্রির সঙ্গে যেন নিজেকে মিশিয়ে ফেলেছে সেই নারী। 

এতো রাতে এখানে এই অবস্থায় কে হতে পারে? কোনো পাগল টাগল নয় তো? 

উদাত্ত সতর্ক হল। 

উদাত্ত আরো অবাক হল যখন দেখল সেই নারী পাথর খন্ড থেকে নেমে ক্রমশঃ তার দিকেই এগিয়ে আসছে । খানিকটা কাছে আসতেই বুঝতে পারল সম্পূর্ণ নগ্ন সেই নারী। আলুলায়িত ঘন কৃষ্ণবর্ণের কেশরাজি তার নগ্নতাকে কিছুটা আড়াল করে রেখেছে। উদাত্ত মুখ তুলে দেখার চেষ্টা করতেই প্রকান্ড এক অট্টহাস্য করে উঠল সেই নারী। হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ ! হি হি হি হি...!!

হাড় হিম করা সেই হাসি। 

রাত্রির নৈঃশব্দ্য ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে । নদীর পাড়ে এক প্রাচীন বট গাছের থেকে হুট হুট শব্দ করে ডেকে উঠল হুতোম প্যাঁচা। এক পাল বাদুর ডানা ঝাপ্টে উড়ে গেল দূর পাহাড়ের দিকে। নদীর ওপারে ঘন জঙ্গল থেকে শোনা গেল হায়নার খিক খিক হাসি। 

সেই ভয়ংকর শব্দে বেশ কয়েকটা পাখি নদী তীরবর্তী পাকুর গাছের ডালে ডানা ঝাপটাতে লাগল। একরাশ ঠান্ডা বাতাস দুদ্দাড় গতিতে ছুটে এসে গাছের শাখা প্রশাখাগুলিকে দুলিয়ে দিয়ে গেল। 

সামনের দিকে তাকাতেই উদাত্তর সর্বাংগ ভয়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। আর এক পাও এগোনো সম্ভব নয়। সেই উলঙ্গ নারী তার পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছে। অমানিশার মতোই তার মুখমন্ডল ঘোর কৃষ্ণবর্ণের। চোখ নাক মুখ কোনো কিছুই স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না। 

উদাত্তর মনে হল ও পাথর হয়ে গেছে।  শরীরের সমস্ত রক্তবিন্দু এক নিমেষে কর্পূরের মতো উবে গেছে । 

এই অনুভূতির ভিতরে হঠাৎ মনে হল কে যেন পাশে এসে দাঁড়াল। 

 উদাত্ত ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পেল বিশাল দেহী একজন সাধু পুরুষ। তাঁর গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। মাথার বিশাল জটা মাটি স্পর্শ করেছে। তাঁর এক হাতে কমন্ডুল, এবং অন্য হাতে ত্রিশূল ধরা আছে। 

" কে তুই? "

উদাত্ত সাধুবাবার জলদ গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে আঁৎকে ওঠে। 

"এতো রাতে এখানে কী করছিস?”

সাধুবাবা দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করলেন। 

"এ-এ-এমনি এলাম, ঘুরতে।"

"ঘুরতে মানে? এতো রাতে এই ঘোর কৃষ্ণা  চতুর্দশী রাতে শ্মশানক্ষেত্রটাকে কি ঘোরার জায়গা বলে মনে হল? শোন, আমার কাছে কিছু লুকাস নে। আমি জানি কেন তুই এখানে এসেছিস। বন্ধুদের কাছে বীরত্বের পরিচয় দিতে? অতি সাহস কিন্তু ভালো লক্ষণ নয়। 

আজ রাতে আমি সাধনায় বসবো। ঘোর সাধনা। দ্বাদশ বর্ষ ব্যাপী আমি এই তন্ত্র সাধনা করে আসছি। আজ তার শেষ দিন। তুই এসেছিস ভালোই হয়েছে। এবারে মনে হচ্ছে মাতা বজ্রযোগিনী তোকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন।"

কথার বলার ফাঁকে উদাত্ত লক্ষ্য দেখল সেই দিগম্বর নারী উধাও হয়ে গেছে। 

"বজ্রযোগিনী? তিনি আবার কে?”

উদাত্ত ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করে। 

"তিনি হলেন দেবী ছিন্ন মস্তার এক রূপ। এক লক্ষবার তার মন্ত্র জপ করলে দেবী সিদ্ধ হন। সেই রাতে তিনি সাধকের সামনে উপস্থিত হন এবং তাকে দেখা দেন। আমার এক লক্ষ বার মন্ত্র জপ সম্পন্ন হয়েছে। আজ সাধনা সম্পূর্ণ হবে। আমি সাক্ষাৎ করবো দেবীকে। কিন্তু তোকে তো এখানে থাকা চলবে না।"

"আ-আ-আমি তবে চলে যাব এখান থেকে?”

তোতলাতে তোতলাতে কথাটা বলে উদাত্ত। 

নাহ, দেখি কী করা যায়। তুই আয় আমার সঙ্গে।

কেমন সম্মোহিতের মতো উদাত্ত সাধুবাবার সঙ্গে পথ চলতে লাগল। নদীর তীর ধরে কিছুটা গিয়ে একটা কাঠের জীর্ণ সাঁকো নজরে পড়ল। সাঁকো পেরিয়ে ঘন জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করল। ইট- পাথরের একটা ভগ্ন মন্দিরের সামনে উপস্থিত হল উদাত্ত ।

অন্ধকারের ভিতরে সে লক্ষ্য করল এটি বহু প্রাচীন একটা মন্দির। কোথাও ইট ক্ষয়ে গেছে। জায়গায় জায়গায় মন্দির গাত্রের পলেস্তারা খসে গিয়ে সেখান থেকে বট, অশ্বথেরা মাথা তুলেছে। লতা গুল্মে আচ্ছাদিত মন্দিরের ছাদ। 

সেই মন্দিরের ভিতরে একটি উঁচু বেদিকা। কিন্তু কোনো মূর্তি দেখতে পেল না সে। তাঁর সামনে একটা পিতলের প্রদীপ জ্বলছে। সেই প্রজ্জ্বলিত আলোকে উদাত্ত দেখতে পেল  আসনের সামনে কলাপাতার উপরে একধারে একশ আটটি রক্ত জবা ফুল এবং অন্য পাশে একটি নর করোটীর মালা। তার পাশেই একটি করোটী পূর্ণ আছে লাল রঙ্গের তরলে। মানুষের রক্ত কী? 

উদাত্ত শিহরিত হল। 

সাধুবাবা হাত থেকে ত্রিশূল এবং কমন্ডূল নামিয়ে রেখে একটি অজীন নির্মিত আসনে উপবেশন করলেন। কমন্ডুল থেকে জল ঢেলে আশপাশে ছিটিয়ে দিলেন। সেই জলের কিছুটা এসে পড়ল উদাত্তের মাথায়। সাধুবাবা জলদ গম্ভীর স্বরে মন্ত্রোচ্চারণ শুরু করলেন,”ওঁ সর্ববুদ্ধ ডাকিনীয়ে ওঁ বজ্রবর্ণণীয়ে ওঁ বজ্রবৈরোচনীয়ে হূঁ হূঁ হূঁ ফট ফট ফট স্বাহা..”. 

তিনবার মন্ত্রোচ্চারণ সম্পূর্ণ হলে মুহূর্ত্য মধ্যে মহা প্রলয় উপস্থিত হল। শোঁ শোঁ করে ঝোড়ো বাতাস বইতে লাগল। জমাট বাঁধা মহা অন্ধকারময় কুয়াশায় চতুর্দিক পরিব্যপ্ত হল। সেই সাথে নদীর ভিতর থেকে একটা ধোঁয়ার মতো কুন্ডলী ধেয়ে আসল এদিকে। উদাত্তর চোখ জ্বালা করছে সেই ধোঁয়ায়। চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। চোখ মুছে তাকাতেই দেখল, ভয়ংকরী এক নারীমূর্তি।

 নগ্না কিন্তু পীতবর্ণা। সমস্ত শরীর থেকে অপূর্ব এক তেজ বিকীর্ণ হচ্ছে । সেই নারী ধীর পায়ে এসে সামনের বেদিকার উপরে দন্ডায়মান হলেন। সাধুবাবা কর জোড়ে দেবীর পদতলে মস্তক নত করলেন। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে সেই জবা ফুলের মালাটি দেবীর গলায় পরিয়ে দিলেন। করোটির ভিতরের লাল তরল দেবীর মুখের কাছে ধরলেন। 

দেবী এক চুমুকে পান করলেন সেই রক্ত বর্ণের তরল। 

সাধুবাবা এরপর দেবীর গলায় পরিয়ে দিলেন করোটির মালা। মন্দিরের ভিতরে মনে হল সহস্র দীপবর্তিকা জ্বলে উঠল। ধূপ, ধুনো অগুরু চন্দনের গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে এলো। 

এরপর যে দৃশ্য উদাত্ত দেখল তাতে তার বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত হওয়ার কথা। 

দেখল, হঠাৎ দেবী নিজের হাতের একটা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার নিজের মাথা নিজেই কেটে ফেলল। তারপর মাথাটা নিজের বুকের কাছে এনে ধরল। উদাত্ত বিস্ফারিত চোখে দেখল সেই খন্ডিত গলা থেকে একটা রক্তের ফোয়ারা বের হয়ে নিজেরই কাটা মুন্ডের মুখের উপরে পড়ছে। আর অপর দুটি ধারা এসে পড়ছে তার দুইদিকে দাঁড়ানো ভীষণ দর্শনা দুই নারীর মুখে। 

এরা আবার কোত্থেকে এলেন? কারা এরা? 

ভয়ংকর সেই দৃশ্য দেখে উদাত্ত চেতনাহীন হয়ে পড়ল। 

উদাত্তর যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখল ও শিশুহারা শ্মশানের মন্দিরের গর্ভগৃহের সামনের চাতালে শুয়ে আছে । 

আর ওর মাথার কাছে বসে আছে মা এবং বাবা। 

উদাত্ত বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে। এ কী দেখছে এটাও কি স্বপ্ন নাকি সত্যি? নিজের গায়ে নিজেই খুব জোরে একটা চিমটি কাটল। 

নাহ, সত্যি তো মাকেই দেখছে ও। মার মুখে অপূর্ব দীপ্তি। 

উদাত্তর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসছেন মা। 

"তোমরা কামরূপ কামাখ্যাতে যাও নি?”

ঘোর লাগা চোখে জানতে চায় উদাত্ত। 

যাওয়ার কথা ছিল। টিকিট কাটা হয়ে গেছে। ট্রেনেও উঠে পড়েছিলাম। ট্রেন ছাড়তে বেশ কিছুটা দেরী ছিল। হঠাৎ আমাদের পাশে বসা একজন বয়স্ক সহযাত্রী কথাপ্রসঙ্গে  জানালেন, সাধুবাবা নাকি কামাখ্যা থেকে চলে এসেছেন এই শিশুহারা শ্মশানে। আজ এখানেই তিনি থাকবেন। পূজা অর্চনা যাগযজ্ঞ আছে। তাই তো চলে এলাম। 

উদাত্ত মন্দিরের দিকে তাকিয়ে দেখে মন্দিরের ভিতরে কোনো দেবী মূর্তি নেই। শূন্য বেদিকার সামনে জবা ফুল বেলপাতা যজ্ঞের ছাই ইত্যাদি পড়ে আছে। 

মন্দিরের বাইরের তখন অপেক্ষা করছেন অগণিত ভক্তের দল। 

মা বলল,”কত জনম তপস্যা করলে তবে এমন একজন সিদ্ধ পুরুষের সান্নিধ্য লাভ করা যায়। কিন্তু তুই এখানে কেন?"  

উদাত্ত কোনো উত্তর দিতে পারল না। 

সেই মুহুর্ত্যে গতরাতের সেই ভয়ংকর দৃশ্য কল্পনা করে আরো একবার শিউরে উঠল।

🍂

পত্রপাঠ

প্রবাহনীল দাস

নবম শ্রেণি, বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতন, পশ্চিম মেদিনীপুর

জন্মেজয়ের ফোনে পর পর মেসেজ ঢুকতে লাগলো, ‘টিং টিং, টিং টিং।’ প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে ফোনটা সুইচড অফ করে রেখে দিল সে। দুদিনের জন্য মামার বাড়ি এসেও এতটুকু শান্তি নেই।

আগের সপ্তাহেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে মামাবাড়ি বেড়াতে এসেছে সে। এখন হাতে একটানা এক মাসের ছুটি জন্মেজয়ের। প্রায় চার বছর পরে মামাবাড়ি এসেছে জন্মেজয়। এর মাঝে যদিও মামা মামী আর ভাই বোনেরা ঘুরে এসেছে তাদের বাড়ি থেকে, দাদু দিদার সঙ্গে এত দিন পর দেখা হয়ে জন্মেজয়ের আনন্দ আর ধরে না। সারাদিন পুকুরে স্নান, মাছ ধরা, ধানের ক্ষেতে ধান কাটা দেখতে দেখতে হারমোনিকা বাজানো আর দুবেলা চর্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয় খাওয়ার যে এক অতুলনীয় খুশি আছে, তা এর আগে কখনই অনুভব করেনি সে।

কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও তার গুণধর বন্ধুদের জ্বালায় এক দণ্ড শান্তি পাচ্ছে না জন্মেজয়। এই যেমন সেদিন জন্মেজয় তার দিদার সাথে অনেক দিন পর ছাদে বড়ি দিচ্ছিল। আচমকা তার ফোনটা বাজতে শুরু করল। চমকে গিয়ে তড়িঘড়ি পকেট থেকে ফোনটা বার করতে গিয়ে হাত থেকে স্লিপ খেয়ে ফোনটা সোজা বড়ির উপর। সব মাটি করল! ফোনটা ধরে সৌম্যকে যাচ্ছেতাই করে কথা শোনাল জন্মেজয়। উলটো দিক থেকে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসির শব্দ এসেই কেটে গেল ফোনটা। গজগজ করতে করতে নেমে চলে এলো জন্মেজয়।

এখনই বা শান্তি আছে নাকি? দাদুর সঙ্গে বসে টিভিতে শ্রীমান পৃথ্বীরাজ দেখছিল জন্মেজয়। কিন্তু সিনেমাটা শুরু হয়েছে কি হয়নি, বন্ধুদের গ্রুপের নোটিফিকেশান যেন অস্থির করে তুলল তাকে। দাদুর যেন কিছুতেই এটা না মনে হয় যে সে দাদুকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, সেই ভয়ে ফোনটা সুইচড অফ করে রাখল সে। দাদু খেয়াল করলেন ব্যাপারটা। “কি হল দাদুভাই? ফোনটা অফ করে রেখে দিলে যে?”

“আর বোলো না দাদাই! আমার বন্ধুদের জ্বালায় ফোন অন রাখাই এখন দায়। মেসেজ করে লাস্টে লিখে দেবে, ‘সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দে।’ এবার ভুল করে মেসেজ দেখে ফেললেই তো বিপদ! আবার সঙ্গে সঙ্গে ফোন করো, মেসেজ করো। মা বাবাই তো খুব বিরক্ত হয়। আর তোমাদের কাছে এতদিন পরে এসেছি, তোমরা তো বিরক্ত হতেই পারো!”

হোঃ হোঃ করে হেসে উঠলেন দাদু। “এ আর নতুন কথা কী দাদুভাই? আমাদের যুগেও এরকম ছিল। তবে আমি বন্ধুদের একবার বেশ অন্যরকম ভাবে জব্দ করেছিলাম।”

চট করে টিভির রিমোটটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে নিলো জন্মেজয়। এই সিনেমাটা আগেও দেখেছে সে। কিন্তু দাদুর গল্পটা শোনার লোভ সামলাতে পারল না সে। টিভিটা অফ করে উৎকর্ণ হয়ে বসল জন্মেজয়।

দাদু বলল, “এটা সেরকম গল্প নয়, একটা ছোট্ট ঘটনা মাত্র। তখন আমিও বোধহয় তোমার মত বয়সি, মামাবাড়ি ঘুরতে গিয়েছি। তখন তো এরকম ফোনের যুগ ছিল না, তবুও বন্ধুরা কেউ চিঠি লিখতে ছাড়ত না! এসেছি মামাবাড়িতে, তবুও ব্যাটারা ঠিকানা জোগাড় করে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে। একজন আবার চিঠির উপর লিখে দিয়েছে, পত্রপাঠ জবাব দাও।”

জন্মেজয় বলল, “এ ও তো সেই ‘টেক্সট মে আসাপ’ এর মতো ব্যাপার।”

“আর বোলো না, সেরকমই বটে। তবে আমিও নাছোড়বান্দা। কয়েকদিন মামাবাড়িতে থাকবো, তার মধ্যে আবার চিঠি লেখালিখি করা যায় নাকি? সেই চিঠি যেরকম এসেছিল সেরকমই খামে ভরে নিলাম পুঁটুলিতে। তারপর বাড়ি ফিরে গুছিয়ে বসে উত্তর দিলাম চিঠিগুলোর। সবগুলো চিঠিতে বড় বড় করে তারিখটা লিখলাম। প্রায় দিন সাতেক পরের কথা, বন্ধুদের হাতে চিঠি গিয়ে পৌঁছল। বন্ধুরা পারে তো আমাকে এই মারে কি সেই মারে। যে বন্ধু চিঠির উপর ওই পত্রপাঠ ফেরত দেওয়ার কথা লিখেছিল, একদিন পথে তার সাথে দেখা। খানিকটা অভিমানের সুরেই সে বলল, ‘বললাম যে পত্রপাঠ উত্তর দিয়ো, এটা কীরকম মশকরা হল ভাই? তুমি তো এখানে ফেরার পর আমার চিঠির জবাব দিয়েছ।’ আমিও কম যাই না। বললাম, তুমি বলেছিল পত্রপাঠ উত্তর। পত্র মানে হল চিঠি আর পাঠ মানে পড়া। তো চিঠিটা যদি নাই পড়লাম, তাহলে আর উত্তর দেব কেমন করে? আমার এই কথা শুনে আমি ও সেই বন্ধু, দুজনেই হেসে উঠেছিলাম হা হা করে।”

জন্মেজয় এর আগে অনেক লেখাতেই ‘পত্রপাঠ’ কথাটা পড়েছিল। এতদিনে শব্দটার আক্ষরিক অর্থ আর ব্যাবহারিক অর্থ দুটো আলাদা করতে পেরে বেশ মজা পেল সে। দাদু নাতিতে মিলে হেসে উঠল হোঃ হোঃ করে।

মানালী সরকার, সপ্তম শ্রেণি, বেথুয়াডহরি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নদিয়া


কথা বলা পুতুল 

গৌতম বাড়ই 

পিকিং থেকে টকিংডল আসছে এবার কোলকাতায়

কেউ বলল এমন খাসা রঙীন ছাতা তার যে মাথায়।

তাই না শুনে পান্তুপিসি ফোকলা দাঁতে হেসে গড়ায়

পুতুল নাকি কথা বলে আজগুবি সব গপপো ছড়ায়।


কলকাতার কোন গেরামে থাকে পিসির ভাই নাড়ুননী

বেবাক মাসে আসলে দেশে শোনায় তার গপ্পোখানি।

সে পুতুল তার নিজের চোখে দেখেই বুকে ধড়পড়ানি

গামলা জলে সাঁতার কেটে চুল শুকোতে যায় যে রাণী।


তারপরেতে শান্ত হল এ গভীর রাতে পাড়াখানি।

পিসির ভাই বাঁচতে খায় আশামাখা দানাপানি ।

নগরের এই নিশুত রাতে একা-একার জীবনখানি।

মাটির সৈন্যসামন্তের গল্প

মলয় সরকার

যে গল্প বলতে বসেছি, তার কথা জেনে সারা পৃথিবী আশ্চর্য হয়ে গেছে।যদিও এ ঘটনার সময়কাল আজ থেকে অনেকদিন আগে, সেই খ্রীস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের কাছাকাছি, অর্থাৎ ২০০০ বছরেরও আগে, মানুষ এর অস্তিত্বের কথা জেনেছে, এই সেদিন, মাত্র ৫০ বছর আগে, ১৯৭৪ সালে।ইতিহাস এতদিন এই সমস্ত সম্পদকে সযত্নে মায়ের মত নিজের বুকে, সকলের অগোচরে লুকিয়ে রেখেছিল।

তোমরা নিশ্চয়ই ভাবছ, মাটির সৈন্যসামন্তই বা কি আর তার আবার গল্পই বা কি!

আছে, সারা পৃথিবী আশ্চর্য হয়ে গেছে দেখে, তোমরা তো হবেই। আর আজ বলতে বসেছি সেই কথাই।

সেবারে তোমাদের শুনিয়েছিলাম, চীনের প্রাচীরের গল্প।মনে আছে নিশ্চয়ই অনেকের।হ্যাঁ, সেবার বেড়াতে গিয়েছিলাম চীন দেশে, তখনই নিজে চোখে দেখে আসা সত্যি ঘটনার গল্প বলতে বসেছি আবার একবার।

গিয়েছিলাম জিয়ান ( Xian) শহরে। এই সেই জিয়ান যেখান থেকে এককালে শুরু হত আন্তর্দেশীয় বাণিজ্যের পায়ে চলা পথ, রেশম পথের শুরু। রেশম পথ জান তো?যে পথে অতীত কালে চলত চীন, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য। না ,থাক,সে গল্প আবার সময় পেলে কখনও বলব।

এই জিয়ান শাংজি (ShaanXi) প্রভিন্সের রাজধানী । ওয়েই (Wei) ও ফেং(Feng) নদীর সংযোগস্থলে বিভিন্ন বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠেছিল। ফলে হাজার হাজার  বছর ধরে এই জিয়ান এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছিল।এখানে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছে, তা প্রায় ৬০০০ বছরের পুরানো।বিভিন্ন রাজবংশের রাজধানী ছিল এই জিয়ান।যেমন, প্রথম রাজা Qin Shi Huyang এর Quin রাজবংশ, তার পর হ্যান রাজবংশ, সুই রাজবংশ, তাং রাজবংশ ইত্যাদি এখানে পর পর রাজত্ব করেন।তাং রাজবংশের রাজত্ব কালে এখানে চীনের স্বর্ণযুগ হওয়ায় চীন উন্নতির শিখরে পৌঁছায়।এর পর ১৩৬৮ সালে আসে মিং বংশ।আজও জিয়ান এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।হুয়াংও কিন রাজবংশ শুরু করেছিলেন প্রথম।

এখানে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় জায়গা রয়েছে। কাজেই চীনে যাব আর জিয়ান যাব না , এটা ভাবতেই পারি নি। ফলে এই জিয়ান যাওয়া।

আমরা পিং ইয়াও থেকে একদিন সকালে চেপে বসলাম বুলেট ট্রেনে যার গতি ঘণ্টায় ২৫০ কিমি।নাঃ, এই গতিতে ট্রেন চালানো ভারতবর্ষের কাছে এখনও স্বপ্ন। ৪৮৬ কিমি রাস্তা মাত্র আড়াই -তিন ঘণ্টার মধ্যে অতিক্রম করে এসে পৌঁছালাম জিয়ান এ। বিশাল বড় স্টেশন আর প্রচুর লোকজন। চীনের অনেক রেল স্টেশনই আমাদের কোন এয়ারপোর্ট বা তার থেকেও বড়।কোনদিকে যাব বুঝতে পারি না। একে জিজ্ঞাসা করি, ওকে জিজ্ঞাসা করি, কেউ ঠিকমত বুঝতেও পারে না, আমাদের বোঝাতেও পারে না। ওখানে লোকেরা তো ইংরাজী খুব বেশি জানে না, আর ওদের ওখানে , আমাদের মত ইংরাজী না জানলেও কোন লজ্জা নেই। বরং ইংরাজী জানতেই হবে, এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ওরা পড়াশোনা করে কথা বলে সব নিজের ভাষায়। আমাদের মত জোর করে ইংরাজী শেখে না। ইংরাজী শেখে, নিজের তাগিদে বা শখে।

যাই হোক, অনেক খোঁজ করে, শেষে একটু এগিয়ে দেখি, সামনে সরকারী সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে, আমাদের মত বিদেশী বা পর্যটকদের রেলস্টেশন থেকে সোজাসুজি জিয়ানের, আজকের যুগে যা বিশ্ববিখ্যাত, যার জন্য বিশেষ করে আমাদের জিয়ান যাওয়া, সেই দর্শনীয় জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।

একটি ঝাঁ চকচকে সুন্দর বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে স্টেশনের সামনেই। চেপে বসলাম তাতে।প্রায় ৪০ কি মি রাস্তা। ঘণ্টা খানেকের মত সময় নিল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পৌছালাম গন্তব্যে। সেখানে দেখি, ব্যবস্থা রয়েছে, যাঁরা ভাল হাঁটতে পারেন না , তাঁদের জন্য গাড়ীর ব্যবস্থা। 

এটি হল সেই জায়গা যেখানে লুকিয়েছিল ইতিহাসের এক মহান সম্পদ মাটির বুকে। হ্যাঁ, তাকে যাঁরা আবিষ্কার করেছেন এবং সযত্নে তুলে এনে উপস্থাপন করেছেন আমাদের সামনে,  শ্রদ্ধা তাঁদেরও অবশ্যই পাওনা হয়। 

টিকিট কেটে ঢুকতে হল একটি বিশাল বড় ছাদ ঢাকা জায়গায়। জায়গাটির নাম লেখা আছে সম্রাট Quin Shi Huyang এর সমাধি ক্ষেত্র বা mausoleum। 

এবার এর গল্পটা বলে নিই।

সে অনেক দিনের কথা। তা প্রায় ২০০০ বছর আগেকার কথা।খ্রীষ্ট পূর্ব ২২১ সালে রাজা হয়ে বসলেন চীনের সিংহাসনে সম্রাট Quin Shi Huyang।এই নামটার মধ্যে Quin বা কিন হল রাজ্যের নাম,আর বাকীটা তাঁর নিজের নাম।

তিনি রাজত্ব করেন মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অর্থাৎ খ্রীষ্টপূর্ব ২১০ সাল পর্যন্ত।যদিও মাত্র ১১ বছর তিনি রাজত্ব করেছিলেন, তিনি অনেকগুলি বড় কাজ করেছিলেন। তবে সব কিছুই ভাল কাজ ছিল না। তিনি ছিলেন দুর্ধর্ষ বীর। কাজেই আশে পাশের সমস্ত রাজ্যগুলি জয় করে চীন কে এক বৃহত্তর ছাতার তলায় এনেছিলেন তিনি, যার একচ্ছত্র সম্রাট ছিলেন তিনি, এবং তিনি সৃষ্টি করেছিলেন Quin রাজবংশ।

তিনিই প্রথম শুরু করেছিলেন, আজ যা চীনের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় জিনিস, সেই চীনের প্রাচীরের নির্মাণ কাজ, দুর্ধর্ষ তাতার দস্যুদের ঠেকাতে।

তবে সবচেয়ে যা ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে আছে, তা হল তাঁর আর এক কীর্তি। তাঁর আগেকার সমস্ত ইতিহাস ,দর্শনের বই  পুড়িয়ে দেওয়া ও অসংখ্য পণ্ডিতকে (বেশিরভাগ কংফুসিয়াস পন্থী) নির্বিচারে হত্যা করা( প্রায় ৪৬০ জন পণ্ডিতকে জীবন্ত সমাধি দেন)।তাঁর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল শুধু কিছু চিকিৎসা, কৃষি ও অরণ্য ইত্যাদি সম্পর্কিত বই। তাঁর ধারণা হয়েছিল, তিনি অতীতের ইতিহাসের রাজাদের চেয়ে গরিমায় ছোট হয়ে যেতে পারেন। তাই আগেকার সমস্ত বই পুড়িয়ে নিজের ইতিহাস নিজে লিখে ইতিহাসে বিখ্যাত হতে চেয়েছেন। তাই আজকের ঐতিহাসিকরা নিশ্চিত যে, তাঁর সময়ে যা লেখা হয়েছিল, অনেকখানিই ভুল বা বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল।এটা আজকের ঐতিহাসিকদের কাছে সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাওয়ার পথে একটি সমস্যা।

আর একটি কাজ করেছেন তিনি। তিনি মনে করতেন, এত সাহস তাঁর, মৃত্যুকেও জয় করবেন তিনি এবং অমর হয়ে থাকবেন। সে জন্য রাজত্ব গ্রহণের অল্প পরেই, নিজের সমাধির স্থান নির্বাচন করে সেখানে আগে থেকেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন, যাতে  শারীরিক মৃত্যুর পরও তিনি সমান ভাবে সম্রাট হয়ে থাকতে পারেন।তিনি অমর হওয়ার জন্য বহু পণ্ডিতকে অমৃতের খোঁজ করতে বা তৈরী করতেও নিযুক্ত করেছিলেন।

দৈহিক মৃত্যুর পর আধিপত্য করার জন্য, তিনি জানতেন, পৃথিবীর সৈন্যসামন্ত কোন কাজে লাগবে না। তাই তিনি মাটির নীচে নিজের সমাধির আশেপাশে ( আজকের হিসাব অনুযায়ী) প্রায় ৭০০০ সৈন্য, ৬০০ ঘোড়া, এবং ১০০টি রথ, মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন।তবে সব এখনো খনন হয় নি। খনন হলে হয়ত আরও অনেক কিছু বের হবে আশা হয়।এদের সম্বন্ধে আবার পরে বলছি।

এই সৈন্য সম্ভার নিয়ে তিনি মাটির তলায় ঘুমিয়েছিলেন , নাকি রাজত্ব করছিলেন, তা কেউ বলতে পারেনি। তবে তিনি যা চেয়েছিলেন, তা একদিকে সফল হয়েছে। তিনি বাস্তবে অমর হয়েছেন কি জানি না, কিন্তু আজ তিনি যে এই কীর্তির জন্য সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়ে গেছেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। শুধু তাই নয়, জিয়ানের লিন্টং (Lintong) জায়গাটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ আখ্যা পেয়েছে ১৯৮৭ সালে।

এই বিশাল সৈন্যসম্ভার নিয়ে এত বছর সম্রাট নিশ্চিন্তে ছিলেন মাটির তলায়। কিন্তু বাদ সাধল কয়েকজন চাষী, তারা খোঁজ পেল এই অমূল্য স্থানটির।

সেদিন ২৯ শে মার্চ ১৯৭৪,এক দল চাষী Yang Zhifa , তার পাঁচ ভাই, এবং প্রতিবেশী Wang Puzhi, প্রচণ্ড খরায় একটু জলের খোঁজে সম্রাটের কবরের প্রায় ১.৫ কিমি দূরে একটি কুয়ো খুঁড়তে গিয়েছিল। সেখানে তারা কিছু মাটির জিনিষের ও কিছু চিনামাটির ভাঙা টুকরো পায়।সেই খবর যখন বিজ্ঞানীদের কাছে পৌঁছায়, তখন তাঁরা আগ্রহী হয়ে ওঠেন।সেখানে খনন কাজ চালিয়ে যা পাওয়া যায়, তাতে তাঁরা আশ্চর্য হয়ে যান।এই গুপ্তধন পাওয়ার প্রথম খবর যিনি পৃথিবীকে জানান, তাঁর নাম, Zhao Kangmin।

এখানে পাশাপাশি চারটি জায়গায় সাত মিটার গভীর গর্ত খনন করা হয়।তবে নামে গর্ত ( Pit), আসলে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে সেগুলি অনেক বড়। তার মধ্যে প্রথমটি (Pit 1) সবচেয়ে বড়, আয়তনে, দৈর্ঘ্য ২১০ মি ও প্রস্থ ৬০ মি। এখানে সারি সারি নালা আকৃতির ১১ টি করিডোর আছে। যার মধ্যে ৩০০০ এরও বেশি মাটির সৈন্যের মূর্তি আছে। এই মূর্তিগুলির বিশেষত্ব হল, এরা কিন্তু কেউ ছোট আকারের নয়,  পূর্ণাবয়ব মনুষ্য আকৃতির বা তার থেকেও কখনও কিছু বড় আকৃতির পোড়া মাটির মূর্তি।তার চেয়েও বড় ঘটনা হল, এগুলি এক ছাঁচে ঢালা নয়, সবার মুখ,ধরণ, পোষাক অল্পবিস্তর আলাদা। এরা প্রত্যেকেই যুদ্ধের সাজে আপাদমস্তক বর্ম, শিরস্ত্রাণ পরা, এবং প্রত্যেকেই বীরত্বব্যঞ্জনায়। এগুলি যুদ্ধের ঢংএই সাজানো, যেন যুদ্ধ করতে যাচ্ছে এমন ভাব। তা ছাড়া, শুধু মানুষ তো নয়, আছে প্রমাণ সাইজের তাগড়াই ঘোড়া, ধনুর্বিদ, রথ, ঘোড়ায় টানা রথ তার চালক সহ। আরও ব্যাপার হল, শুধু সৈন্য থাকলেই তো হবে না, তারা লড়বে কি করে, কারোর আদেশ না পেলে? তাই আছে বিভিন্ন স্তরের ক্যাপ্টেন, সেনাপতি ও অফিসাররাও। তাঁদের চেহারা বেশ ভূষাও আলাদা।

অনেকে মনে করেন, প্রধান সেনাপতি রাজা নিজে।তিনি যেহেতু তৈরীর সময় জীবিত, তাই তাঁর মূর্তি নেই আর যুদ্ধ শুরুর আদেশ পায় নি সৈন্যরা। কাজেই যুদ্ধ শুরুর আগের অবস্থার মূর্তি আছে, যুদ্ধ চলার মূর্তি নেই।মূর্তি গুলোর ভিতরটা কিন্তু ফাঁকা।

প্রথম গর্ত(Pit 1) থেকে প্রায় ২০ মিটার উত্তর পূর্বে রয়েছে দ্বিতীয় পিট( Pit 2)।এটি অনেকটা ইংরাজী এল আকৃতির।

এটি আয়তনে প্রায় ৬০০০ বর্গ মিটার।এখানে প্রায় ৮০ টি রথ, ১৩০০ সৈন্য,  ঘোড়া ও ব্রোঞ্জের অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গেছে। সবাই যে দাঁড়িয়ে আছে এমন নয় কিন্তু। অনেকে হাঁটু গেড়ে হয়ত তরোয়াল বের করছে, বা ধনুকে তীর লাগাচ্ছে,  কি একটু হেলে বল্লম ছুঁড়ছে এরকম। এখানে কিন্তু সৈন্যসজ্জা আরও বেশি সুগঠিত। এখানে তীরন্দাজ সৈন্য আছে অনেক। তার মধ্যে ১৬০ জন আছে যারা হাঁটু গেড়ে তীর ছুঁড়ছে।এখানে কিছু রঙীন টেরাকোটা সৈন্যও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ৬৪ টি যুদ্ধ রথ পাওয়া গেছে।প্রত্যেকটি রথ চার ঘোড়ায় টানা।মাঝে চালক বা সারথীকে রেখে চারজন দুপাশে রয়েছে।এখানে যথেষ্ট সংখ্যক রথী যোদ্ধা ছাড়াও রয়েছে পদাতিক বাহিনী।

পাশে রয়েছে একটি এগজিবিশন হল।সেখানে সাজানো রয়েছে নানা মাটির বা চীনামাটির দ্রব্যাদি, ব্রোঞ্জের তরোয়াল বা অস্ত্রশস্ত্র, কিছু সৈন্যাধ্যক্ষ, ও বেশ কিছু ছবি।

যত দেখছি,ততই আশ্চর্য হচ্ছি। অনেক উপরে শেড দেওয়া আছে, আর চার দিক ঘুরে ঘুরে দেখা যায়। তবে দর্শকদের জন্য গর্তে নামা নিষেধ। বেশ কিছু মূর্তি ভাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে, কিছু বা মুণ্ডহীন। কিন্তু মাটির নীচে কিভাবে বেশিরভাগই এত অবিকৃত থাকল, সেটা তো আশ্চর্য বটেই। এমনও হতে পারে হয়ত, প্রকৃতি নয়, মানুষই রাজার কবরের মত এগুলোকেও সাজিয়ে নিয়ে সাবধানে মাটি চাপা দিয়েছিল, যাতে রাজা তাঁর সৈন্য সামন্ত নিয়ে মৃত্যুপুরীতে লড়াই করতে পারেন এবং মূর্তিগুলি ভেঙে না যায়। 

আর আগেই বলেছি, এত মূর্তিকে, এত যত্নে মমতায় যাঁরা বের করে এনে দেখাচ্ছেন, তাঁদেরও সেলাম।

 পিট ৩ এর বেরোনোর মুখেই রয়েছে পিট ২ এর ঢোকার জায়গা।

পিট ৩(Pit 3)এ ঢুকে দেখি, এটি আগেরটার মত নয়।কিছু কিছু মূর্তিকে তুলে এনে আলাদা করে বসানো হয়েছে কাঁচের ঘরে বা ঘেরা জায়গায়। এক জায়গায় একটি পূর্ণাকৃতির চালক ও ৪টি ঘোড়া সহ রথ দেখলাম।

পিট ১ থেকে বেরিয়ে ২৫ মি. মত দূরেই রয়েছে পিট ৩। এটি মোটামুটি বোধ হয় সবচেয়ে ছোট, আয়তন মাত্র ৫২০ বর্গ মিটার। এটি আসলে সমস্ত সৈন্যদের কম্যাণ্ডিং অফিস। এখানে রয়েছে যুদ্ধে জয়ের জন্য প্রার্থনা কক্ষ।এখানে পাওয়া গেছে নানা ব্রোঞ্জের জিনিসপত্র, অস্ত্রশস্ত্র, ও সোনার জিনিসপত্র। এখানে ৬৮ টি মূর্তি পাওয়া গেছে।তবে অনেকেই মুণ্ডহীন। মাথাটি যে আলাদা ভাবে তৈরি  করে জোড়া হত বোঝা যাচ্ছে।শুধু মাথা নয়, দেহের অনেক অংশই আলাদা জুড়ে করা হত।তবে পুরো জিনিষটা কিভাবে হয়েছিল, সে নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই।

দেখতে দেখতে হারিয়ে যাচ্ছিলাম সেই প্রাচীন চৈনিক যুগে।মনে হচ্ছিল, হাজির হয়েছি সেইযুগের চীন সম্রাটের যুদ্ধক্ষেত্রে।আমি যেন নিজেই এক সৈন্য। এখনই যেন যুদ্ধ শুরু হবে, সৈন্যরা অপেক্ষা করছে সেই আদেশের প্রতীক্ষায়। বেজে উঠবে এখনই ভেরী, বেজে উঠবে শঙখ।

এবার বলি, এর তৈরীর কথা।

রাজা শি হুয়াং জীবিত ছিলেন খ্রীস্টপূর্ব ২৫৯ থেকে খ্রীস্টপূর্ব ২১০ পর্যন্ত। তিনি রাজা হয়েছিলেন মাত্র ১৩ বছর বয়সে।রাজা হয়েই তিনি এই সমাধির শুরু করেন।তার পর সারা জীবন লড়াই করে প্রায় ৭২০০০০ ( সাত লক্ষ কুড়ি হাজার) শ্রমিককে এই রাজকীয় সমাধি নির্মাণের কাজে নিযুক্ত করেন।২১০ সালেই এটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়।এই সমাধিটির মোট আয়তন ইজিপ্টের গ্রেট পিরামিডের থেকেও বেশি।এই শ্রমিকরা প্রধানতঃ,  শিল্পীরা ছাড়া সবাই হয় যুদ্ধ বন্দী বা ঋণ পরিশোধ করতে না পারা দরিদ্র শ্রমিক।এখানে কত লোক যে মারা গিয়েছিল, তার ইয়ত্তা নেই। শুধু তাই নয়, শেষের দিকে শিল্পী বা শ্রমিক, যারা সেই সব ধনরত্ন এখানে রাখতে ঢুকেছিল, তারা যাতে বাইরে বেরিয়ে কাউকে তা বলতে না পারে, তার জন্য তাদের বেরোনোর মুখ বন্ধ করে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছিল।

রাজা শি হুয়াং এর কফিনটি ছিল ব্রোঞ্জের।ভিতরের সমাধিটি আসল রাজবাড়ির মণিমুক্তা খচিত প্রতিকৃতি। এ ছাড়াও বহুমূল্যবান পাথর, রত্নাদি খচিত সমাধি সত্যিই সৌন্দর্য্যের নিদর্শন।

এখান থেকে এক অন্য মানসিকতা নিয়ে জীবনের এক অমূল্য স্মৃতিকে মনের মণিকোঠায় সঞ্চয় করে বেরোলাম। কিছু দূরেই সুন্দর সবুজ নানা গাছপালায় ঘেরা পরিচ্ছন্ন বাঁধানো পথ দিয়ে গিয়ে পৌঁছালাম বিশাল সবুজ পাহাড়ের কোলে সবুজ লনের মাঝে রাজার স্মৃতি স্তম্ভের কাছে।জাঁক জমক নেই, তবে পরিচ্ছন্ন সুন্দর সমাধি। শান্ত পরিবেশ।

এটা দেখে ধীরে ধীরে পথ ধরলাম ফিরতি পথে সেই বাসেই।খুঁজে বের করতে হবে হোটেল, যা রয়েছে বিখ্যাত বেল টাওয়ারের কাছেই।

হয়ত এখানে দেখব আরো অনেক কিছুই।তবে জিয়ানে নেমে এতদিনের এত আকাঙখা আমার প্রথমেই পরিতৃপ্ত হওয়ায় মনটা অদ্ভুত আবেশে ভরে গিয়েছিল।

হাত দুটআকে ধইরবই

ভানুপ্রিয়া মাহাত

দশম শ্রেণি, জওহর নবোদয় বিদ্যালয়, পশ্চিম মেদিনীপুর


কাঠএর সিঁড়হিটার ধাপএ ধাপএ

গুঁজআ পেরেক।

উয়ার শেষে একটা ছট কপাট,

ঘরটার চাইরধার শুধু আঁধার আর আঁধার।

কেউ কুথাও নাই, হামি এথায় একাই।

মনে হছে চিললাই, মাইঞ তুইঞ কুথায়?

কিনতু হামার টুটির লে বা-ই বাইহরাছে নাই।

গলা শুখায়ঞ গেছে জল তিষ্টাও পাছে।

বহার আওয়াজ পাছি, লদী কাছেই আছেএ।

দিশা গেছেএ হারাঞই, চাইরধার শুধু আঁধার আর আঁধার।


পা বাড়হালেই পেরেক কুচায়,

ডুসমে হছি, খাছি কাঁচাড়।

চইখ থাইকতেও কানা হছি,

দেখতে কিছুই নাই যে পাছি।

মন কইরছে ছুইটে পালাই

কিনতু কনঅ দিশাই যে নাই।


আকো দেখি কপাট খুলা

একটা হাত শাঁখা পরহা,

আর একটা শুকনা হাড়হিড়া।

ডাইকছে হামকে হাত দুটআ

বইলছে মুনু ঘর যাবি আয়।

এখন হামার ডর-নাই আর

পেরেকের সিঁড়হি যাব পাইরাইঞ

পাইরবেক নাই আর কেউ রাখইতে

হামকে এথায় আঁধার ঘরে।

আইজ হাসি বাইহরাবই

হাত দুটাকে ধইরবই।।

শব্দ জব্দ ( উৎসব সংখ্যা)

নির্মাতা: সুব্রত দেব

সূত্র:

পাশাপাশি: ১ ) এ তো  তোমাদের প্রিয় পত্রিকা  ৪) মৌচাক, ফুলের সাজি ৫) দ্রবণ  হল দ্রাব ও দ্রাবকের—- ৬) ভারতের বিজ্ঞানী রাষ্ট্রপতি 

৭) এ হইতে সাবধান! ৯) এখানে রোদ্দুর নিয়েই 'ভূমি'

 ব্যান্ডের জনপ্রিয় গান/ ভালোবাসার —-- 

১০) লাল রঙের ফুল টি এখন অন্য রঙেরও হয়

১১) ছোটদের পত্রিকা, প্রথম দুয়ে সারি র জুড়ি 

উপরনিচ:

২) এর শক্তিশেল নিয়েই সুকুমার নাটক

৩)  প্রয়াত সাহিত্যিক ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের ছোটদের জন্য অনন্য সৃষ্টি ৪) সাহিত্যিকের হাতিয়ার

৫) প্রফেসর শঙ্কু আবিষ্কৃত সর্বরোগ হন্তারক বড়ি 

৬) এ পাখি কেবল বাবার ভাইকে ডাকে! 

৭)--- ঝুঁটি কাকাতুয়া ধরেছে যে বায়না 

৮) সত্যজিৎ কাহিনি '—-- রহস্য' নিয়েই আসছে সন্দীপ রায়ের নতুন ছবি ৯) কোমল বার্তা 

সমাধান:

পাশাপাশি: ১) জ্বলদর্চি ৪) করণ্ড ৫) মিশ্রণ ৬) কালাম

৮) নকল ৯) বারান্দা১০) রঙ্গন  ১১) শুকতারা

উপরনিচ:

২) লক্ষ্মণ ৩) পাণ্ডব গোয়েন্দা ৪) কলম

 ৫) মিরাকিউরল ৬) কাক ৭) লাল ৮) নয়ন

৯) বারতা


 পাঠ প্রতিক্রিয়া

(ছোটোবেলা ১৪৯ পড়ে প্রিয় পাঠক সুদীপ্তা আদিত্য যা লিখল) 

ঘুমের আড়ষ্টতা আর আলস্যি ছাড়িয়ে রবিবার হাতের নাগালের বাইরে এলে সোমবার টাকে আরো বেশী কাজের চাপ দিয়ে শুরু হতে হয়,যতটা নাকানিচুবানি খেতে খেতে গোগ্রাসে কাজ সেরে বাড়ি ফিরবেন ততটাই রবিবার আসবে রোজ রোজ তাড়াতাড়ি।নাস্তা সেরে বাড়ির ছোটদের সাথে ঘুড়ি উড়িয়েছেন? আকাশে ছোঁ মেরে একটা ভোকাট্টা দলের ছিনতাই সুতোতে আমার জড়ায় রোজ। ঘুড়ি উড়াতে তো পারি না, লাটাই ধরলে আর বললাম না! শুধু পায়ে পায়ে ঘুরির পড়ন্ত সুতোর সুড়সুড়ি খাই আর কি! আমাদের জ্বলদর্চি আবার সব পারে! ঘুড়ি ওড়ানোর একটা সকাল দিতে পারে একদম ফ্রি তে!হাজার ছবি, লেখার সুন্দর পট।পাঠক মৃন্ময় ভট্টাচার্য এর পাঠপ্রতিক্রিয়া পড়ে আগের অতীত টা ঝালিয়ে নিলাম। সময় হয়নি বর্তমান টাকে উপভোগ করার তাই সপ্তাহ শেষে অতীত টাকে নিয়ে কামড়াকামড়ি করছি ভেবে দোষ নেবেন না! পূজোতে তো দোষ টা সরিয়ে ভালো টাকেই বেছে নিতে হবে। এই বাছাইয়ের গল্প বললেই ছোটবেলায় জামা কেনার হুজুগ টা মাথায় ভাসে।ঘুরতে যাওয়ার একটা বিশাল তালিকা, পুরোটাই দশমীর পর।পূজোটা বাংলায় যতটা আদুরে বাইরে ততটা নয় তাই পূজোতে বরাবর মাটির কাছাকাছি থাকাটাই আমার কাছে শ্রেয়।বিশ্ব পর্যটন দিবস আসছে! এই দিনে আগামী পরিকল্পনার একটা তালিকা বানাব ভাবছি! কি বলেন! লেখিকা দোলনচাঁপা তিওয়ারি মহাশয়ার কাছে একটা মহড়া নিতে পারলে নিজেকে ধন্য লাগত। এই যে লাচুঙের নেকড়ে যে আস্তে আস্তে বড়ো হচ্ছে লেখকের কলমের পরিপুষ্টতায়! কি ভাবছেন নেকড়েমশাই কামড়ান কি না!সেটার জন্য শেষ অবধি অপেক্ষা করতেই হবে। অপেক্ষা শেষ না হওয়াই ভালো। আরো পড়ব আরো পড়ব করতে করতে কত রবিবার মোহনায় দাঁড়ালো জানিনা। শনিবার রাত্রে খোঁজ নি সেই মোহনাদের কাছে। নোঙর ফেলে রাখা নৌকা,যার মাঝি ছেড়ে গেছে এমন অবস্থা। এবার নদী থেকে পাহাড়ে গেলো মন।"কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে"-চালাকি টা দেখেছেন!মনে মনে সর্বত্র বিচরণ করছি আর আপনারা কেউ ধরতেও পারবেন না।এখন মৌন মন্ডল ভাইয়ের সাথে দার্জিলিং এর পথে আমি।সড়কে,জলে না কি আকাশপথে জিজ্ঞেস করলে বাচ্চামি হবে বটে! আমি তো মনের ভরে উড়ে বেড়াচ্ছি। কত শত গ্রাম পেড়িয়ে।গ্রামগুলোর ভৌগলিক রূপ কত মার্জিত। সাহিল শেখ ভাইয়ের ছবির মতন স্পষ্ট আর পূর্ণ। দার্জিলিং এ অনেক বৃষ্টি হয়। ভাবছি ছাতা কিনব কিনা। যদি পাছে সামার মতন আমারও জ্বর আসে দেদার! তাহলে তো একসপ্তাহের জন্য রবিবার টাকে আটকে রাখতে পারব তাই না ! সামার জ্বর হয়েছে শুনে খারাপ লাগল নয়তো ওকেও নিয়ে যেতাম আমার সাথে।স্বপ্নে মোড়া ছোট্টবেলার মতন আমিও বানভাসি হয়ে যায়। ভ্রমণপিয়াসের তাগিদে হামাগুড়ি দিই,উড়ি।মোমের গলে যাওয়া পিলসুজের মতন একটা শিশুসুলভ মন টা ভারী হয়ে আসছে। জ্বলদর্চির পরিধি শেষ হচ্ছে। না না এই পরিধি যতটুকু দৃষ্টিপাত করা যায় ততটুকুর কথা বলছি। সমুদ্রের তলায় এখোনো সুদূর বিস্তার রয়েছে।প্রমিত নস্কর ভাই মনে হয় আমার মনের কলাকুশলী জেনে গেছে।এতখন তো একটা পাহাড়িয়া বনেদি ছবি খুঁজছিলাম।লেখা,ছবির আদলে মনটা আমার পাহাড়ি আজ।এখন খুব সিরিয়াস নিয়ে মিস ম্যাথ্স এর কাহিনী পড়ছি। এত সুন্দর একটা নিখুঁত নিখাদ নিরেট অলঙ্করণ,লেখা, ছবি, পাঠপ্রতিক্রিয়া সব একসাথে হাতে পেয়ে সত্যিই আমি ঘুড়ির মতন এখন আকাশে বিচরণ করছি!নীল আকাশে ...

সংগ্রহ করতে পারেন - ৯৭৩২৫৩৪৪৮৪

Post a Comment

1 Comments

  1. খুব সুন্দর কাজ করেছেন

    ReplyDelete