জ্বলদর্চি

কালের অতল তলে কালোরাডো/ পর্ব ২১/ চিত্রা ভট্টাচার্য্য

গৃহবন্দি জীবন

কালের অতল তলে কালোরাডো
 পর্ব ২১ 
চিত্রা ভট্টাচার্য্য


পৃথিবী জুড়ে চলছে মৃত্যু লীলার তান্ডব নৃত্য। নিশ্চিন্ত মুক্ত সামাজিক মানুষের শিয়রে যমদূত প্রেত ,প্রেতিনীর মত ফাঁদ পেতে অহর্নিশি ঘুরে বেড়াচ্ছে কোভিড 19 ভাইরাস । চরম বিপর্যয় আতঙ্ক এনেছে পৃথিবী ব্যাপী জন জীবনে। শান্ত সুখী সমাজ জীবনের ধারাবাহিকতায় হানা দিয়েছে আকস্মিক অসুখের ছলে।আকর্ণ হাঁ নিয়ে যেন গিলে ফেলবে ,কড়া রক্ত চক্ষু মেলে ভস্মীভূত করবে পৃথিবীর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই মনুষ্য জীবন কে। অব্যক্ত বেদনার গোঙানিতে শ্বাসরোধ হয়ে আসে জীবনের খেলা ঘরে। প্রকৃতির এমন বিধ্বংসী লীলায় মানুষ যে কত অসহায় কত দুর্বল কত তুচ্ছ এক প্রাণী --প্রতিদিন তার ইঙ্গিত পাচ্ছি যখন চতুর্দিক থেকে স্বজন হারানোর বেদনা ,মৃত্যুর বিভীষিকায় বুকফাঁটা হাহাকারের ক্রন্দন ধ্বনি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে।

মহাবিশ্বের মহা ধনী বিলাস ব্যাসনে পূর্ণ মহাদেশটি যদি এমন অসহনীয় বেদনাদায়ক মূক স্তব্ধ নির্বাক হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হতে দেখি তাহলে তৃতীয় বিশ্বের সাধারণ অনুন্নত গরীব দেশের মানুষ গুলোর অবস্থার কথা মনে পড়ে। কী ভয়ানক পরিণতি হবে ওদের ? ওরা যে অপুষ্টিতে ,অনাহারে  বিনা চিকিৎসায় , বিনা হসপিটালে শেষ সাহায্য টুকুও না পেয়ে ,জীবন দায়ী শেষ অক্সিজেন  টুকুও বুক ভরে না নিতে পেরে হাহাকারে অবহেলায় নিঃশেষে শুকিয়ে মরবে।
জন মানব হীন মাঠ প্রান্তর

এই সাত সমুদ্র তের নদীর পাড়ে বসে শুধুই মাথায় এক চিন্তা ঘুণ পোকার মত ঘুরে বেড়ায় --বিশ্বজুড়ে এমন মহামারীর প্রকোপে কেমন আছে আমার দেশ ভারতবর্ষ ? সেখানে ও যে অকাতরে রোগগ্রস্থ মানুষের জীবন ছন্নছাড়ার মত শ্রীহীন মৃত্যু ভয়ে কাঁপছে বলির পাঁঠার মত। পৃথিবীর কোণায় কোণায় প্রতিদিন জমছে মৃত্যুর শীতল লাশের পাহাড়। কে তাকে ছোঁবে ,কে ই বা তাকে বহণ করবে ,কে করবে তার অন্তিম সৎকার ?                              
অহরহ ভেসে আসছে সাইরেন বাজিয়ে দ্রূত গতিতে আম্বুলেন্স ছোটার শব্দ। সঙ্গে শুধু আছে জীবন কে বাজী রেখে একদল সাহসী তরতাজা প্রাণ ---কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মী  Covid Warriors ,..ওদের ও আপাদ মস্তক আকাশী নীল পলিথিন আপ্রনে ঢাকা। কোভিড আক্রান্ত খবর পেলেই স্ট্রেচারে শুইয়ে সর্বাঙ্গ সাদা চাদরে চাপা দিয়ে পেসেন্ট কে আম্বুলেন্সে  ওরাই হস্পিটালে নিয়ে যাবে। রেডক্রসের গাড়ি ছুটছে তৎপর হয়ে। এই ভয়ঙ্কর করোনা রোগের হুঙ্কারে স্বামী স্ত্রী কে বিচ্ছিন্ন করছে ,মা ও মৃত্যু পথযাত্রী সন্তানের পাশে থেকে স্নেহের শীতল হাতের পরশ টি মাথায় বুলিয়ে দেওয়া দূরের থাক ,একবার চোখের শেষ দেখাটি ও দেখতে পারবে না। ভাই ভাইয়ের পাশ থেকে মৃত্যু ভয়ে সরে দাঁড়ায়। আদি অকৃত্রিম হৃদয়ের পরম বন্ধু টি থাকে না বন্ধুর প্রয়োজনে অন্তিম শয্যার পাশে। প্রিয়সখা বিচ্ছিন্ন তার প্রিয়া থেকে। আত্মীয় স্বজন বিবর্জিত হয়ে কোভিড রোগ গ্রস্থ মানুষ বেশীর ভাগ জানে এই তাদের শেষ যাত্রা। সে তার সাজানো বাগান থেকে চিরতরে অসময়ে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে হয়তো সে ফিরবে না আর কোনো দিন ও । এখোনো যে জানা যায়নি এ রোগের থেকে মুক্তির উপায় কি ?  
🍂

      ডেকের রেলিঙে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে যত দূর দৃষ্টি যায় দেখ ছিলাম। জনশূন্য পথ ঘাট , পোষা প্রিয় কুকুর টি নিয়ে ও আজকাল কেউ হাঁটতে বেরোয় না। রেডক্রস লাগানো করোনায় আক্রান্ত দের পরিষেবার বিশেষ এম্বুলেন্স টি এসে দাঁড়ালো পাশের প্রতিবেশী মিঃ অলিভের বাড়ির সামনে। মুহূর্তের  মধ্যে আপাদমস্তক চাদরে মোড়া মিঃ অলিভ কে স্ট্রেচারে তুলে নিয়ে চলেছে হস্পিটালাইজড করতে। মিঃ অলিভ ও রুনির বারো বছরের মেয়ে লিজা  ওর  ড্যাডি কে কিছুতেই এমন করে নিয়ে যেতে দেবে না। সে ও পড়ি কিমরি করে ছুটছে পাহাড়ি পথে রেস্কিউভ্যানের পেছনে। পাহাড়ের ঢাল বেঁয়ে গড়িয়ে তর তর করে নামতে গিয়ে বুড়ো এঞ্জেল ওকের শিকড়ে ওর পা আটকে ছড়ে রক্তাক্ত হয়ে যায়। কোনো রকমে টাল সামলে  দ্রূত রাস্তায় নেমে কান্নায় ভেঙে পড়ে ,চেঁচাতে থাকে  take me with dad ,,, please come back, ..,come back  please dad ..I will take care of you .. .ততক্ষণে লাল গাড়িটি কর্কশ স্বরে সতর্ক বার্তা জানিয়ে দূরে মিলিয়ে গিয়েছে। লিজার কান্না পাহাড়ের পাথরে পাথরে ধাক্কা খেয়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে ছুটে বেড়ায়।  রুনির চোখ দিয়ে তখন অঝোর ধারায় গরম নোনা স্রোতের প্লাবন বইতে থাকে। কান্না চেপে কন্যা কে কোনো মতে সামলে রাখতে সে ও দৌড় লাগিয়েছে। আপ্রাণ চেষ্টা করছে অবুঝ সন্তান টিকে শান্ত করতে। 
করোনায় অচল পথে

আমি নীরব দর্শক ,স্থবিরের মত দাঁড়িয়ে থেকে আমার ঈশ্বরের কাছে প্রার্থণা জানাই , ''হে বিশ্ব বিধাতা ,সর্ব শক্তিমান , লিজা যেন পিতৃ হারা না হয় । ওর dad কে রোগ মুক্ত করে ফিরিয়ে দাও ,জানিনা দয়ালু ঈশ্বরের কানে আমার আকুতি কত টুকু পৌঁছবে ।''

  ওরা আজ বড়ো একা পাশে থেকে সান্ত্বনা দেওয়ার কেউ নেই । জলে ডুবন্ত মানুষের মত ডান হাত আকাশের দিকে তুলে মিঃ অলিভের কাতর আর্তি যেন বলতে চাইছে '' চির বিদায় নয় এই সুন্দর পৃথিবীর ধূলোকণা মেখে আলো হাওয়ায় আমি আরো বাঁচতে চাই ,আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচাও। '' তবু এই নিষ্ঠুর নির্দয় প্রকৃতি, মহাস্থবিরের মত নিশ্চল অনঢ় অচল। নীরবে সব দেখছে , উদ্ধত মানব জাতির লোভ ঈর্ষা অহংকার, রিপুর প্রকোপে বিকিয়ে যাওয়া। প্রকৃতি যেন শিখিয়ে দিতে চায় জীবন মানে আত্ম অহমিকা নয়,জীবন মানে শুধুই ষড়ো রিপুর বশ হয়ে থাকা ও নয়। জীবন সংযম ত্যাগ শান্ত সত্য সুন্দরের প্রতীক। রুনি লিজার কান্না থামাতে চোখের জল মুছিয়ে ও কে ভুলিয়ে নিয়ে চলেছে বা দিকের চেরী পার্কে যেখানে গাছ গুলো র ডাল ভরে ফুঁটে রয়েছে অজস্র দুধে আলতা রঙের গোলাপী চেরীব্লসমের বাহারী ফুল। গাছের ডালগুলো ফুলে ভরে উঠেছে এখন ও সবুজ পাতারা দেখা দেয়নি।  
রাত দিন এক করে চলছে আমার ইয়ং দলের তথ্য তল্লাশ, মন দিয়ে সব শুনছি। ব্রতীন বলে করোনা ভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন ভাষায় থেকে নেওয়া হয়েছে যার অর্থ "মুকুট"।কাঁটা যুক্ত মুকুট। করোনা ভাইরাসে কাঁটা আছে।আরেক নাম ২০১৯ - এনসিওভি বা নভেল করোনা ভাইরাস। বৈজ্ঞানিক এবং ডক্টরদের মতে এই  ভাইরাসটির অনেক রকম প্রজাতি আছে। এটি আর এক ধরণের করোনা ভাইরাস। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। তবে নতুন ধরণের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি। হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে সৃষ্ট জীবাণুর ফলে আক্রান্তর সংস্পর্শে এলে অপর ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। অতনু গুগুল সার্চ করে পরিসংখ্যান দেখে বলে ২০০২ সাল থেকে চীনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স অর্থাৎ সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণ পৃথিবীতে হয়েছিল তাতে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল আর ৮০৯৮ জন সংক্রামিত হয়েছিল। সেটি ও ছিল এক ধরণের করোনা ভাইরাস। work from home হওয়াতে ঘরে ছুটির আমেজ। খাওয়া দাওয়ার সাথে করোনার আলোচনা  চা কফির বায়না। বুঝিনা এদের অফিসিয়াল কাজ কিভাবে এগিয়ে যাবে। 
                                                                              এখানের পরিবেশে বিন্দুমাত্র পল্যুশান নেই। নির্মল আকাশ বাতাসে বুক ভরে নিশ্বাস নাও। ধূলো বালি নোংরা রাস্তার ধারে স্তূপীকৃত পূতি গন্ধ ময় গার্বেজ কোথাও এক ফোঁটা ও জমে নেই। যেখানে ধোঁয়া নেই পেট্রল পোড়া গন্ধ নেই ধূলো বালি নেই সেখানে এমন প্যান্ডামিক ? কেমন করে ছড়ালো ? কত কথা কানে ভেসে আসে ,কারোর সাথে কারোর মুখ দেখা দেখি নেই ফোনে ফোনেই সাক্ষাৎ আলাপ চলে। দুপুরের দিকে অতনুর সাইন্টিস্ট বন্ধু ঋভুর ফোন এলো। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন এমন ভাইরাস এত দ্রূত ছড়ালো কি করে ? নানা মুনির নানা মত। ইয়াম বলে প্লেনে চায়না থেকে ইতালী থেকে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যাত্রী আসছে। তাদের মধ্যে কোনো যাত্রী এই রোগ বহন কারী হতেই পারে। এখোনো ডোমেস্টিক বা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে প্লেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি। তর্ক চলছে ফোনে -- ভিডিও কলে ও আলোচনায় তুফান তুলছে। এমন কর্মনাশা দিনে কত গল্প হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়।

        ঋভুর কাছে টাটকা খবর আছে ,অতনু ব্রাউন ব্রেডে বাটার মেয়োনিজ গোলমরিচের গুঁড়ো মন দিয়ে লাগাচ্ছিল ,আমি কাপুচিনা কফির জন্য দুধ জ্বাল দিচ্ছিলাম , আজ লাঞ্চে মাছের ঝোল ভাত ডাল সব্জীর আয়োজন নেই । ব্রতীন ব্যস্ত অফিসিয়াল মিটিঙে -ও ফোন স্পীকারে দিলো ,সবার চোখ কান সজাগ ফোনের দিকে। অপর প্রান্তে ঋভুর আওয়াজ -- কিছুদিন আগে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে যে জাহাজ ভেসে এসে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে সানফ্রান্সিস্কোর বন্দরে পৌঁছলো তার চারজন নাবিক শুকনো কাশি ,বমি ,শ্বাসকষ্ট গলা ব্যথা মাথা যন্ত্রণায় কাতর হয়ে জীবনী শক্তি হারিয়েছিল। তাদের জ্বর পেটের সমস্যা ডায়োরিয়া ,মুখেও স্বাদ নেই। প্রবল অরুচিতে তারা গুরুতর অসুস্থ। জাহাজের ক্যাপ্টেন পিটার কোনো উপায় না খুঁজে পেয়ে সোজা তাদের সানফ্রান্সিসকোর গভর্মেন্ট হস্পিটালে ট্রিটমেন্টের জন্য ভর্তি করেছিল ,সেই নাকি আমেরিকাতে করোনা ছড়ানোর ছাড়পত্র। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শরীর দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাওয়ার উপসর্গ প্রকট রূপে দেখা দিলে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে দুদিন মাত্র বেঁচে ইহলোক ত্যাগ করেছে নাবিকের দল। শুরু হলো করোনায় প্রথম মৃত্যুর সূত্রপাত। এবং ঐ জাহাজের ক্যাপ্টেন পিটারের সাথে প্রায় সকলে আক্রান্ত এবং তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছিল সান্ফ্রান্সিস্কোর হস্পিটালের চিকিৎসক নার্স স্বাস্থ্যকর্মী এবং আরো অনেকে দলে দলে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন। তখন কেউ জানতো না এই রোগ টি কোভিড 19 --অক্টপাসের মত ওরা তারই জালে জড়িয়েছে বাঁচার পথ নেই। বেশীরভাগ পেশেন্ট করোনার সাথে লড়াই চালিয়ে অবশেষে মৃত্যুর পায়ে ঢলে পড়েছে। হসপিটালের রিপোর্ট ক্রমশঃ ভয়াবহ। চিকিৎসা শাস্ত্রের চরম ব্যর্থতা প্রমান করে পরিস্থিতি কন্ট্রোলের বাইরে চলে গিয়েছে।   

  ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখলাম ,স্প্যানিশ ফ্লু ঠিক একশত বছর আগে  ১৯১৮-- ২০ তে পৃথিবীতে এমনি প্যান্ডামিক রূপে ছড়িয়ে পড়েছিল। খবরে দেখছি বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই চায়নায় লক ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে  এবং পৃথিবীর প্রায় অনেক দেশ গৃহ বন্দী। কিন্তু আজ (18th march 2020) থেকে আমেরিকা মহাদেশ আইনত কঠোর ভাবে গৃহবন্দী হলো। সমস্ত ইন্টার ন্যাশানাল ফ্লাইট গুলোর যাতায়াত বন্ধ। ডোমেষ্টিকেও প্লেন ওড়ার খবর নেই।মৃত্যুহার ও বাড়ছে যেমন , রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধির চড়া হার ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে এটা সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে। প্রচুর ফোন কল আসছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খবর পাচ্ছি  নিউইয়র্ক ,ওয়াসিংটন সিয়াটেল নর্থ ক্যারোলিনা নিউজার্সি এমন কি লাসভেগাস থেকে মুনিয়া ও। পরিচিত বন্ধু বান্ধবরা সবাই চিন্তিত উদগ্রীব হয়ে ফোনে কুশল বার্তা নিতে চাইছে। সামাজিক পরিস্থিতির খোঁজ  চলছে এ দিক থেকে।  হ্যারি সাহেব ও ফিরে এসেছেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। সদ্য উদ্ভোধন করা '' জায়নের ''হোটেলের নতুন রুম গুলো ফাঁকা যাচ্ছে। কেয়ার টেকারের ওপর দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে এসেছেন। প্রয়োজন মত করোনা পেসেন্ট দের আইসোলেসনে থাকার জন্য তার হোটেলে কিছু ব্যবস্থা করে এসেছেন শুনে বেশ ভালো লাগলো।

যুদ্ধকালীন তৎপরতা চলছে সর্বত্র ,অনেক কোভিড ক্যাম্প গড়ে উঠেছে হস্পিটালিটির সুবিধার জন্য। সবসময় এক দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছে শ্রমিক শ্রেণীর জন সাধারণ। বুলেটিন লিফলেটে সতর্ক বার্তা আসছে রোগ এড়ানো সুস্থ থাকার উপায় নিয়ে শুধু সর্ত মেনে চলো ,সংক্রামিত হলে ১৪দিন আইসোলেটেড থাকো  নিজে বাঁচো অপর কে বাঁচাও। অসুখ আয়ত্বের বাইরে বাড়াবাড়ি হলে হসপিটাল ছাড়া গতি নেই। বাইরে থেকে এসেই হাত পা ধুয়ে স্যানিটাইজ করো জামা কাপড় ছাড়ো এমন কি জিনিস পত্র স্যানিটাইজ করে জীবাণু মুক্ত করা প্রাত্যহিক নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তবু কী এক অজানা মৃত্যুভয় কাজ করে ,কুরে কুরে খায় ঐ বুঝি হাঁচি কাশি জ্বর শরীরে বাসা বাঁধলো  শুরু হয়ে গেল করোনার দৌরাত্ম্য । 

প্রতিদিন টিভির নিউজ দেখাই একমাত্র কাজ হোয়েছে। সে কখনো বন্ধ হয় না সারা পৃথিবীর খবর বিবিসি দিয়ে যাচ্ছে ,অন্যান্য চ্যানেল গুলোও সমান তৎপর। সংবাদ পত্র গুলো বলছে এ কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় সামুদ্রিক ঝড়ঝঞ্ঝা ,দাবানল বা ভূমিকম্প নয় যে বুদ্ধিজীবী মানুষ হিসেব নিকেশ করে বলতে পারবে কবে এই ধ্বংস লীলা শেষ হবে ? কি বা এর পরিণতি ? ''হালফিলের বিশ্বায়িত ও সদা-সংযুক্ত দুনিয়ায় বিষয়টা বেশ ঝামেলার। ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, পৃথিবীগ্রহ জুড়ে হইহই করে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকায় সারা বিশ্বে আরও কতজন সংক্রমণের শিকার হবেন? কবে এই অসুখ নির্মূল হবে ? জীবন কবে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে তাও বলা যায় না।''  ভাবছি এতো উদার আকাশ পল্যুশান মুক্ত এই সুন্দর পৃথিবীতে মানুষ যে এমন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হতে পারে এ ধারণা অকল্পনীয় লাগে। অতনু বলে এখানের লোকজন জন্ম থেকেই বিশুদ্ধ আবহাওয়া পরিবেশে মানুষ। নিশ্বাসে বা খাবারে ভেজালের সাথে ওদের পরিচয় নেই। সংক্রমণ রোগের সম্বন্ধে তেমন সচেতন নয় তাই রোগ ব্যাধির সাথে লড়াই ও করতে পারে না। ইমিউনিটি অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা ওদের তেমন নেই বললেই চলে। '

 আজ মার্চের ২৩ তারিখ।  কোভিড -১৯ খ্যাত সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী মহামারি গ্রাস করেছে প্রায় চার লাখ মানুষ কে। ব্রতীন হিসেব দিলো এই কয়েক দিনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬,১১৩। যদিও এই হিসাব প্রতি মুহূর্তে বদলাচ্ছে। কিন্তু এই বিশ্ব মহামারীর সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে যে সামাজিক বন্দিদশা ,লকডাউন চলছে ,জনশূন্য রাস্তা ঘাট ,বাজার দোকান সব বন্ধ হওয়াতে সমাজের দরিদ্র তম মানুষ দের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দিনদিন বাড়ছে । বারবার মনে হচ্ছে শুধু রোগ জনিত কারণে মৃত্যু নয় দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ গুলো অভাব অনটনের শিকার হয়ে অনেক বেশী মানুষ প্রাণহারাবে। এর ফল স্বরূপ একদিকে মানুষকে জীবন নির্বাহে চড়ামূল্য চোকাতে হবে অন্যদিকে এই ডামাডোলের বাজারে ক্ষয়িষ্ণু বিশ্বায়নের জমানায় প্রাত্যহিক জীবনের অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীন তাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। অক্লান্ত পরিশ্রম চলছে বিশ্বের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ল্যাব গুলোতে। রোগ উপশম হবার পথ খুঁজে চলেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। , 

  বেশ কয়েকদিন পারভীনের সাথে ফোনে যোগাযোগ হয়নি। মন খারাপ নিয়ে ভারী উদ্বিগ্ন ছিলাম। দুশ্চিন্তায় মনে সারাক্ষণ কু-ডাক গাইছিল। আজ ওর ফোন পেলাম। ওদের কাউন্টিতে পাহাড়ে ধস নেমে ইন্টারনেটের বিশাল বিপর্যয় হওয়াতে সব যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিন্ন হয়েছে। তাছাড়া নেভাদায় শুরু হয়েছে লাগাতার বৃষ্টি। 
                                              
রাবেয়া ভালোর দিকে তবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়নি। সেই যে রেড ক্রসের স্বেচ্ছাসেবীর দল রাবেয়া কে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তারপর আর পারভীনের সাথে চাক্ষুষ দেখাও হয় নি। আজ  ভিডি ও কল করে যত টুকু দেখা যায় তাতে রাবেয়া বড়ো বড়ো চোখ মেলে তাকিয়ে ওর রুগ্ন ঠোঁটের হাসিতে ক্ষীণ স্বরে বলেছে 'পারভীন ! এ যাত্রায় ও বেঁচে গিয়েছি।'' পারভীনের গলার আওয়াজে যেন যুদ্ধ জয়ের হাসি , ওর সাথে আমরাও আনন্দে ভাসছি।  
নির্মল আকাশ।

কিন্তু একটু পরেই বিকেলের দিকে আবার দুঃসংবাদ এলো। পারভীনের ম্যাসেজ পেলাম ,মিস্টার গ্যারি ও মিসেস ডরোথী দুজনেই কোভিডে আক্ৰান্ত হয়ে বিছানা নিয়েছে। ছেলে মেয়েরা কর্ম সূত্রে মেক্সিকো তে লকডাউনে আটকে পড়েছে। গ্যারি আঙ্কেল গত উইক থেকে রাস্তায় ট্রাক চলাচল বন্ধ হওয়ায় রোজগারের জন্য রেড ক্রসের আম্বুলেন্স চালানো ও পেশেন্ট এর স্ট্রেচার বইবার কাজ নিয়েছিল।অনেক protection নেওয়া সত্ত্বেও তিনি এই রোগে আক্ৰান্ত হয়েছেন । পারভীন গ্যারি আঙ্কেল কে স্বান্ত্বনা দেয় আমি আছি তোমাদের পাশে। কিন্তু ডরোথী সুগার হাই  ব্লাড প্রেসারের রুগী। ওর অবস্থা প্রবল সঙ্কট জনক। অক্সিজেন লেভেল ৯০/৯২ এ চলে গিয়েছে।তাই হসপিটালে খবর দেওয়ার সাথে সাথেই কাউন্টি থেকে রেডক্রসের লাল গাড়ি ওদের দুজনকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। নেভাদা কাউন্টির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে সানিটাইজিংয়ের লোকেরা এসে স্প্রে করে সারা পাড়া স্যানিটাইজ করছে। গ্যারি সাহেব পারভীন কে হোয়াটস আপে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে ''আমি যদি আর না ফিরি তবে ডরোথী কে তুমি কোনো আশ্রয় খুঁজে দিও ,ও একদম একা থাকতে পারে না।'' 

পারভীন জানেনা কি আছে ভবিষ্যতে ? এখোনো যে জানা যায়নি এ রোগের থেকে মুক্তির উপায় কি ? সম্মুখে শুধুই গাঢ়তর অন্ধকারে নিমজ্জিত পৃথিবী । কেউ জানেনা কিভাবে কবে মানুষ নিষ্কৃতি পাবে এই দুর্বিষহ রোগের জ্বালা যন্ত্রণা থেকে। আসবে জগৎ ময় মুক্তির আশ্বাসের সুদিন।              
 ক্রমশঃ

Post a Comment

0 Comments