অমিত কুমার রায়
আশা পূর্বাসা
আশা তুমি কানে কানে কথা কও.....
কত সম্ভ্রান্ত যুগের কুয়াশার আড়ালে
ফিসফিস কথা কও!
হলুদ মাঠের বুকে অঘ্রানের ধানে,
প্রজাপতির নীলচে ডানায়,
নদীর দুপারের মরা কাশ বনে
ঝরা শিউলির বিমর্ষ বিকেলে
ফিসফিস কথা কও!
সাঁঝের ফ্যাকাশে চাঁদের জ্যোৎস্নার প্লাবনে,
ঝুলে থাকা পুরুলের হলুদ ফুলে,
রাবণলতার জড়ানো চুলের খোঁপায়
গরবিনী ফুলের থোকা থোকা!
সুধন্যা, আশা তুমি
ফিসফিস কথা কও,
কার্তিকের শেষ প্রহরে কিম্বা
ইতুপুজোর পাঁচ কলাইয়ের
অঙ্কুরোদ্গমে ফুটে জেগে ওঠা
উৎসবের আলোয় তুমি
ফিসফিস কথা কও!
বটের টকটকে লাল অজস্র ফলে
তার মুখ দেখি বীজের সম্ভাবনার,
পলার পুতুল যেন খেলা করে
সবুজ পাতার কাঁথার মাঝে,
শকুন্তলা শিশু কন্বের আশ্রমে
হেমন্তের শিশিরভেজা রোদ চুমু দেয়;
নরম নক্ষত্রের অদৃশ্য বেতার আকর্ষণে!
নবজাতকদের মতো ফলে আছে বট ডুমুরের শিশু,
পাখিদের আশ্রয় গড়ে গর্ভ কোটরে!
কলকাকলি কলতানে আনন্দ ধারা,
কিম্বা শিল্পীর শিল্পের বুননে বাঁধনে
পাতার ভিড়ে
আগামী প্রজন্মের উষ্ণ উত্তাপ।
শিশুর আগমন দাদুভাই দিদিভাই.......
স্বপ্নাশার পেলব প্রত্যাশা,
গ্রহ নক্ষত্রদের মুঠোয় পুরে
আত্মীয় করে নেবে,
বিজ্ঞানের অদম্য প্রচেষ্টায়
কিম্বা
গ্রহাণুরা যতই বাধ সাধুক ধ্বংস উচ্ছাসে।
পৃথিবী পৃথিবীতেই থাকবে
জাগতিক দৃশ্যের আংটি হীরা হার,
দিনের অন্ধকারে চাক্ষুশ স্মৃতি!
তেমনি হেমন্তের প্রত্যুষে সায়াহ্নে,
শাদা শাপলার ভিড়ে বসন্ত আসে যায়!
কত মরালের ডাক শুনে
হল্লা হাসি মাখে শিশুদের মুখ,
এসব দেখার আশে
এখান থেকে যেতে কি মন চায়?
যাব একদিন, তবুও যাবনা
চেয়ে চেয়ে বসে দেখি বিচিত্র বৈচিত্র্যময় বৈভব!
ছানি ভুলে দৃষ্টি প্রখর করি,
একদিন দৃষ্টির নন্দনে
তুমি তো এসে বলবে কবি?
এমন সুন্দর এই পৃথিবীর কোণ?
এমন ভুবন ছিল আদিকালে?
সূর্যের জন্ম থেকে
বুদ্ধের সারণিতে কিম্বা
তারও অগম অতীতে
রামায়ণী যুগে?
ছিল না দূষণ ছিল না' নেই নেই' ক্রন্দন!
বিজ্ঞানের বসন্তে আর
না থাকুক যুদ্ধ, না থাকুক বিরোধ,
নিষ্পাপ শিশুরা আজ
নিশ্চিতে ঘুমায় নির্ভয়ে জাগে........
সুধন্যা,
বৃদ্ধ আমির চোখে ছানি থাকে থাকুক,
তোমাদের মনে যেন ছানির পর্দা না থাকে.....
বটের ডুমুরের মতো ফোটা ফল
সে শিশুদের তুমি ভালো রেখো,
ভালো রেখো হাজার বছর ধরে
খুশির পাখির গানে,
হেমন্তে বসন্ত দাঁড়াক
দাঁড়কাক পেঁচা উড়ে বেড়াক;
গাছের ডালে পুকুরের পাড়ে
বকদল হেমন্ত বিকেলে
মালার মতো ফিরে যাক,
সন্ধ্যার সিঁড়ির শাখায়
উড়ে যাওয়া পরিযায়ী
ফিরে আসুক নতুন ডানায়
পুরাতন ঝিলে,
বাতাসে বাতাসে মধুর
মধু সুবাসের বন্ধনে।
সুধন্যা তুমিই পারবে
শিশুদের মা ডাকে ভালোবাসতে।
কে কবে কাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবে..........
তা নিয়ে অতোকিছু ভেবোনা।
তোমাকে স্তন দিয়ে
দুধের প্রস্রবণ দিয়ে
জাগতিক নিয়মের বাঁধন পরতেই হবে।
সুধন্যা, আশা কুহকিনী কিনা জানিনা,
এইটুকু মানি-----
আশা স্বপ্ন কল্পতরু,
স্বপ্নের যাদুকরী রাণী!
বিরক্তি বিড়ম্বনা বাধার পারেও
নক্ষত্রদের মতো আমিও
হাজার বছর ধরে বেঁচে আছি,
নদীর ধারে
পূর্বাসার আলোর প্রান্তে
একদৃষ্টে তাকিয়ে,
আশার মোহনা নীল সমুদ্রের জল,
ঢেউ আসে ঢেউ মুছে নতুন ঢেউ তোলে।
🍂
সীমানার মধ্যে
সুধন্যা,
তোমার আশা তোমার কল্পনা,
তোমার বিশ্বাস,
তোমার বিপ্লব,
তোমার মিছিল তোমার ধর্ণা,
ওরা পথে পথে হাঁটে বসে পড়ে
সে পথ মসৃণ নয় তুমি জানো
তবুও তুমি হাঁটো!
তুমি লড়ার জন্য হাঁটো,
সে পথ পিচ্ছিল----- পিচঢালা রাজপথ নয়,
খানাখন্দ বিবর ব্যাদান!
জলজমা রঙিন মাছ ছাড়া পথ!
সুধন্যা,
তোমারই কেউ কোনো আত্মীয়
ডোলে চেপে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে-----
সঘৃণ্য শীর্ণ দীর্ঘ পথের হাসপাতাল!
মৃত্যুর তর সয়না?
ভীষণ তাড়া তার সঙ্গে নিয়ে চলে যেতেই হবে?
উন্নয়নের দীপাবলি মৃত্যু বলির বাজি পোড়ায়,
ওরা নিজের ভালো ছাড়া কিচ্ছু বোঝেনা----- চেনেও না!
সুধন্যা,
তবুও তুমি দক্ষিণ থেকে উত্তরে হাঁটো,
কেউ দেখে কেউবা দেখেও দেখে না,
ইতিহাস পরিহাস করে ক্ষুদ্রতার পাণ্ডুর মেঘে
এতো কেন প্রবঞ্চনা? সুধন্যা
বলতে পারো?
অমানবিকতার স্টাইল লজ্জা দেয়!
পাথর চোখে ওরা হেঁটে বেড়ায়,
সেই ট্রয় নগরীর ধ্বংসের পুরাতন মুহূর্ত থেকে
মধ্যযুগের অন্ধকার গর্ভগৃহ থেকে
অবিশ্বাস্য বিশ্বাসের পীঠস্থান থেকে
ধনস্বার্থ শিক্ষার বিষবৃক্ষ ঢেকে,
কণ্ঠের গলাবাজি রাজ,
টিকেথাকার থিওরি,
মস্তানি মস্তিষ্কের অসুখ!
অসুস্থতার লোভের রজ্জু
উল্লম্বন চোখে!
এ কেমন তৃষিত তৃষ্ণার্তের তৃপ্তি!
জানো তুমি সুধন্যা?
আমার চোখে ঠুলি নেই
ছানি আছে তাবলে ভেবোনা
ভাবি কালের ছবি দেখতে পাইনা!
সুধন্যা,
তোমার আশা কে বোলো
ভালোবাসায় কোনো খাদ না থাকে
নক্ষত্রের চোখ হাজার কোটি বছরের পুরাতন,
সে এখনো জ্বলছে ধৈর্যের স্ফটিকে!
হীরকদ্যুতির আলোকবর্ষ দূরে!
খানাখন্দ পথে
মসৃণ রাজপথে
আকাশের ঠিকানায়
কোনো বারাঙ্গনার বারান্দায়
যেখানেই মৃত্যু হোক না কেন
নক্ষত্র হতেই হবে!
একটা ফুল দেখো বনে ফোটে
কেউ গন্ধ বিহীন
কেউ কটু গন্ধে
কেউ বা সৌগন্ধে
টবের যত্ন ফুলের সৌন্দর্যের চেয়ে কম নয় তার সম্মান।
মৃত্যু যেস্থানেই হোক
মৃত্যু বেদনার
সুধন্যা,
তোমার যৌবনের ফসলেরা
কিছু তো হোক,
মানুষ হোক মানুষের পাশে
সীমানার মধ্যে।
0 Comments