গুচ্ছ কবিতা
শ্রীতনু চৌধুরী
সুরধুনী
হাতে একদিন বাঁশি তুলে দিয়ে বলেছিলে আজীবন নবরন্ধ্রি সুর হবে । সে তো এখনো আমার হাতে-সুরহীন । তুমি কি সরগম ভুলে গেছ রাধে ? আমি জানি- সরস্বতী কখনো ভোলে না সুর, ভুল পথে চলে যেতে পারে তার চঞ্চলা হৃদয়- যেমন লক্ষ্মীর ঝাঁপি থেকে চুরি গেছে সমূহ সম্পদ! আবৎসর তোমার রুমঝুম শোনার জন্য কান পেতে থাকি। তুমি কি এখনো পরে আছো সেই অপাঙক্তেয় নূপুর ? তাহলে আজ রাতে কোথায় কান পাতি বলো? আসমুদ্রাকাশ-নীলশিখি ধরে আছে তোমার চন্দ্রিমা চরণ।প্রীতবাসনা হয়ে একবার যদি ভদ্রাসন ছুঁয়ে যাও রাধে,মধ্যরাতের মনিকর্নিকায় নেচে উঠবে আবার তবে বিলোল সুরধুনী।
পাদ-প্রদীপ
আলতা পা প্রদীপ হয়ে যেদিন দোদুল দুলেছিল ঝুলনে, বলেছিলে এই শিখা অমেয় জাজ্বল্যমান থাকবে বুকের পিলসুজে- সেই হবে জন্মান্তরে আমার আরাত্রিক । কিন্তু কোন কুজ্ঝটিকে বিচ্ছিন্ন করে পদযুগল আলো নিয়ে চলে গেছ ছায়াপথে ! এখন ওই সান্ধ্য নিশান আমি কোথা পাই বলো ? এখনো রয়ে গেছে প্রভূত ইন্ধন,এখনো তুলোর স্তবক তেমনই স্পর্শহীন । তুমি কি স্ফুলিঙ্গ নির্দেশে আলোর উৎসে নিয়ে যাবে আবার ? পশ্চিমে পড়ন্ত গোধূলি। কী দিয়ে সাজাবো সন্ধ্যারতি? কী করে পার হব আগামী অন্ধকার ? চোখে পৃথিবীময় সমুদ্র দিয়ে গেছ, কিন্তু বাতিঘরের ঠিকানা দাওনি রাধে।
🍂
মধুপুরের মা
পাতায় স্বস্তিকা চিহ্নর মত তোমার মুখ নিয়ে যত পংক্তি রচনা করেছি- তুমি তার কিছুই গ্রহণ করনি। জানি, আমার কলমের নীল তোমাকে সাগর দিতে পারেনি। তবু সরস্বতী; আজও তোমার রাজহাঁস গুলি বুকে ধারণ করে বসে আছি। তুমি কি একবার এসে দেখে যাবে - তারা এখনও জল থেকে দুগ্ধ আলাদা করতে পারে কিনা! তুমি কি আরও একবার তোমার বীনায় শুনিয়ে যাবে মধুপুরের সেই গান! ব্রম্ভ বেদি ছেড়ে চলে গেছ - একাই হেঁটে চলেছি। সেখানে আমাদের পর্ণ কুঠির ঘিরে হরিণ শিশুগুলি বড্ড অসহায়,শূন্য চোখে কান পেতে পড়ে আছে নিরন্ন । মা'র খবর নিয়ে আমাকে যে সেথায় যেতেই হবে রাধে।
মানুষ ও ঈশ্বর
কেবল ছাপান্নটা কবিতা লিখিয়ে নিয়ে যদি ভাবো অপবাদের তীক্ষ্ণ বর্শায় হত্যা করবে কবিকে -সে তোমার ভুল । তীব্র গরলে তুমি মৃত্যু দিতে পারো একটি মানুষকে। যেমন আমার নামের আগে বসিয়ে দিয়েছ চন্দ্রবিন্দু । তবু একটি কবিকে তুমি কখনও হত্যা করতে পারো না। কারণ সে তোমাকে নয়, তোমার পরা- প্রেরণায় ছিল ঋদ্ধকাম- যা তুমি বুঝতেই পারোনি ।
ছাপান্ন কলায় নিজেকে নিংড়ে নিংড়ে মনুষ্য-উত্তর পথে তোমার নিকটবর্তী হতে চেয়েছি রাধে। ছাপান্ন মাথুরেই হয়তো শেষ হয়ে যেত সব মাধুকরি-যদি খুঁজে পেতে পুরোনো সেই হৃদি- বৃন্দাবন ।কিন্তু তোমার গ্রহান্তর গমনের অদ্ভুত উলটপুরান আমাকে চৌষট্টি কলামুখি করে ক্রমশ মানুষ থেকে কবি, কবি থেকে ঈশ্বরত্ব দিয়ে গেছে। মৃত মানুষের মাথার মূল্যহীন মুকুটের মতো কী হবে আমার সেই ঐশী উদ্ভাসে ? তাই তোমাকে তোমারই যাবতীয় ঐশ্বর্য অর্পণ করে অমরত্ব দিয়ে যাব রাই।
1 Comments
খুব ভালো কবিতা। কবি ও সম্পাদককে শুভেচ্ছা ও প্রীতি।
ReplyDelete