জ্বলদর্চি

পুস্পিত দিন--২/তনুশ্রী ভট্টাচার্য

পুস্পিত দিন-২

তনুশ্রী ভট্টাচার্য 

( ভ্যালেন্টাইন ডে স্পেশ্যাল )


প্রেম নিয়ে যিনি রোম্যান্টিকতার ধার ধারেন নি,অম্ল মধুর তীক্ষ্ণ ছোট্ট ছোট্ট শ্লেষ মাখানো বক্তব্যে প্রেমকে ভেঙে ভেঙে দেখেছেন,দেখিয়েছেন ,তিনি আর কেউ নন আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্ণাড শ'।ইংরেজী সাহিত্যের পাঠক মাত্রই শেভিয়ান ইউমার  এর সঙ্গে কমবেশী পরিচিত।। আর্মস এন্ড দ্য ম্যান নাটকে দেখিয়েছেন আসলে রোম্যান্টিক প্রেম বলে কিছুই হয় না ,,ওটা একটা খেয়ালী আদর্শ। সার্জিয়াস শেষপর্যন্ত  পরিচারিকা লুকার বাহু বন্ধনে ধরা দিল আর ব্লান্টসলী রায়নাকেই ঘষে মেজে রিয়্যেল লাভ এর সন্ধান দিল। তবু প্রেম প্রেমই। আদর্শ আর বাস্তব যাই হোক না কেন।সে প্রেমের সন্ধান বার্ণার্ড শ 'এর 
সব নাটকেই পাঠক পান।
ম্যান এন্ড সুপারম্যান নাটকেও প্রেমোত্তীর্ণ জীবনের আগ্রহ দেখিয়েছেন। উন্নততর মানবজীবনের সন্ধানই প্রেমের সামাজিক লক্ষ্য হওয়া উচিত ---এই ছিল তাঁর অভিমত। 
নাটকে প্রেমের লিখন আর নিজের জীবনে প্রেমে পতন  অবশ্য এক অনুভূতি নয়।এ হেন মানুষ ও প্রেমে পড়েছিলেন, প্রেমের বকুলফুলের রেণু মেখেছেন আবার দ্বিপ্রহরের তাপে শুকিয়ে যাওয়া বকুল ফুলের মতো তাঁর কোনো প্রেম শুকিয়েও গেছে। আবার নতুন গোলাপ ফুটেছে। আসুন দেখে নিই ঠিক কতগুলো গোলাপ জর্জ উপহার পেয়েছিলেন।  কতগুলি কাঁচা পাকা প্রেমে তিনি জারিত হয়েছিলেন!!!?

🍂
জর্জ বার্ণাড শ ,সংক্ষেপে জি বি এস সম্পর্কে প্রেম বীতরাগের অনেক গল্প ।তাঁর বিকর্ষনকারী চেহারা এবং ব্যঙ্গ বিদ্রুপে তীক্ষ্ণ বাস্তবধর্মী কলমই বোধ হয় তার জন্য দায়ী।তিনি নিজেও অবশ্য বলেছেন তাঁর জীবনে কোনো প্রেমট্রেম ঘটে নি। কিন্তু সত্য সে কথা বলে না।বহু নারী তাঁর প্রতি আকর্ষণ দেখিয়েছেন।এবং তিনি সাড়াও দিয়েছেন।হ্যা ,বহুবার।তাঁর জীবনে যেসব মেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়েছিল তাঁরা তারা হলেন জেনী প্যাটারসন, অভিনেত্রী ফ্লোরেন্স এমেরি ,মে মরিস এবং আরো অনেকে।একটি নাম ভারতীয়দের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। বলাযায় শ'এর প্রেমের সঙ্গে ভারতের যোগ আছে।এ্যানি বেসান্ত যিনি ভারতের কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন ,ছিলেন ভারতহিতৈষী তিনি এক সময় জর্জ বার্ণার্ড শ এর প্রেমিকা ছিলেন।

সুন্দরী অভিনেত্রী তাঁকে প্রেম নিবেদন করে বলেছিলেন আমাদের সন্তান হবে আপনার মতো বুদ্ধিমান আর আমার মতো সুন্দর। তীর্যক ইঙ্গিতে সিদ্ধহস্ত জর্জ সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন যদি ঠিক উল্টো টা হয়!!!!?মহিলাদের মেধাসম্বন্ধে খুবই সন্দিহান ছিলেন জর্জ। 

জি বি এসের প্রথম প্রেম এলিস লকেটের সঙ্গে। শ' তখন  বছর ছাব্বিশের তরুণতুর্কী  ।এলিস  শ ' এর মায়ের কাছে গান শিখতে আসতো।হাসপাতালে নার্সের চাকরী করত। প্রথমবার হৃদয় উন্মোচনের পর্ব ঘটে এলিসকে লিভারপুল স্ট্রীট স্টশনে পৌঁছে দেবার সময়। পথিক। পথ।প্রেম। পান্থজনের সখা র ভূমিকায় অবশ্যই প্রেমপত্র।
পড়া যাক। সে পত্রখানি।

লকেট,
        ক্ষমা করো,গত রাতে সম্ভবত আমি আমার রমণীয় সঙ্গিনীটিকে আহত করেছি। অন্তত তিনি যদি ছলনা না করে থাকেন। তবে এই রকমই মনে হতে পারে। সেই থেকে মানসিক যন্ত্রণায় আছি। ট্রেন ফেল করার অনুশোচনায় আপনি বোধ হয় ধিক্কার দিচ্ছেন আমায়। চিঠি লেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। আমার কথা বিশ্বাস করতে পারেন। আমার জিভ বড় চঞ্চল। কলম সাংঘাতিক। আর হৃদয় বড্ড শীতল।আগামীকাল নিজের ওপরেই রাগ হবে এই চিঠি পাঠানোর জন্য। 
বিদায় প্রিয়তমা। বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে গেল? চিঠিখানা পুড়িয়ে ফেলো।না হয় পড়োই না। হায়,বড়ো দেরী হয়ে গেল বলতে। এতক্ষণ সবটাই পড়ে ফেলেছো। 
            জি বি এস।

যে বাঁকা কথার জন্য বার্ণার্ড শ বিখ্যাত  প্রেমের চিঠিতেও তা তিনি  বর্জন করেন নি। 

তবে শ এর এই প্রেম প্রস্ফুটিত হয় নি।  লকেটের সঙ্গে  বিয়ে হয়  ডাক্তার শার্কের ।

চকোলেট বা গোলাপ বিনিময় হয়েছিল কিনা জানা যায় নি। তার দরকার ও নেই অবশ্য আজ। 
আজ আমাদের জন্যই এগুলো দরকার -- --in too much mechanical love making

(চলবে**)

সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments