তনুশ্রী ভট্টাচার্য
(ভ্যালেন্টাইন ডে স্পেশ্যাল)
পুস্পিত দিন । ষোলই জুন।উনিশশো চার।
ফুল ফোটবার কথা ছিল চোদ্দ তারিখ। ফোটে নি। কারন অজানা। হয়তো না ফোটা ই ছিল অনিবার্য। ফুটল যেদিন সেদিনই হলো পুস্পিত দিন।ডাবলিন শহরের রাস্তায় দুটি স্ফুটোন্মুখ ক্রিসেনথিমাম। পদাতিক। অন্তরঙ্গ। দীর্ঘক্ষণ নয়। দীর্ঘদর্শন আর
ডাকনামে ডাকার ছাড়পত্র আদায়। উভয় পক্ষেরই।সাক্ষী রইল ডাবলিনের ফুটপাত। আইরিশ ঔপন্যাসিক জেমস জয়েস। স্ট্রিম অফ কনসাসনেসের জনক।তার প্রেম কাহিনী।
স্টিফেন ডিড্যালাস,লিওপোল্ড এবং মলিব্লুমের যে একদিনের ঘটনার বর্ণনায় বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ইউলিসিস ,জেমস জয়েস রচনা করেছেন তা ঐ পুস্পিত দিনের কথাই--ষোলই জুন। একটি তারিখ অমর হয়ে গেল প্রেমের পদাবলী তে।
চোদ্দতারিখ নোরার দেখা করার কথা ছিল জয়েসের সঙ্গে। নোরা অনুপস্থিত। দীর্ঘ অপেক্ষার বর্ণনায় জয়েস চিঠিতে লিখছেন --লালচে বাদামী একঝাঁক কোঁকড়া মাথাভর্তি চুলের দিকে তাকিয়ে ছিলাম একনাগাড়ে।না,তোমার চুল নয় ।এখনো তা দেখার সৌভাগ্য হয়নি। ধীরে ধীরে নি:সঙ্গ ভাবে ঘরে ফিরে এলাম। আর একটা দিন ধার্য হবে কি?
সেই ধার্য দিনই ষোলই জুন।প্রেম আর উপন্যাসের পথ চলা। জেমস জয়েস আর নোরার প্রেম উপজীব্য ইউলিসিস এ। এ কি এক পদযাত্রা? পদাতিক প্রেম?
চোদ্দই ফেব্রুয়ারী গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে।না কি আমরা ঐ তারিখটার কাছে এগিয়ে যাচ্ছি?সে বিচার অপ্রয়োজনীয়। যা প্রয়োজন এই মুহূর্তে তা হলো ভ্যালেন্টাইন ডে কে সামনে রেখে নব্য প্রেমের ঊদযাপনে সাহিত্যিকদের প্রেমপর্বে র প্রেমে পড়তেই পারি। পড়া যাক চুপি চুপি নোরাকে লেখা জয়েসের চিঠি----
প্রিয় গুডি- ব্রাউন - গুজ
তোমায় কথা দিয়েছিলাম চিঠি লিখব । এখন ,তুমি আমাকে লিখে জানাও কাল রাত্তিরে এমন কী ঘটেছিল !আমি ঠিক জানি কিছু একটা ঘটেছিলো ।তোমায় দেখে মনে হচ্ছিল তুমি একটা ব্যাপারে মনে মনে খুব আশা করেছিলে,শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে উঠলো না দেখে খুব দু:খ পেয়েছো।তারপর থেকে বারবার আমার হাতটাকে আমি সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছি।কিন্তু ঠিক পেরে উঠছি না।তুমি এমন কোথায় থাকবে বলো যে শনিবার, রবিবার সন্ধ্যে এমনকি সোমবার রাত্রেও তোমার সঙ্গে দেখা হবে না?
বিদায় প্রিয়তমা। চুম্বন ---তোমার অনিন্দিত ঘাড়ের ঐ মায়াময় ভাঁজে। পঁচিশ মিনিট ধরে এক বিরাট লম্বা চুমু।
পুনশ্চ:::পরেরবার যখন আসবে ফিতে বাঁধা ঐসব কর্কশ বক্ষ-আবরণী অন্তর্বাসটাসগুলো সব বাড়িতে রেখে আসবে।
আশা করি আমার চিঠি গুলো বেশ যত্ন করেই তোমার বিছানার পাশে সাজিয়ে রেখেছো।
জে।এ। জে।
**********************************
তবে প্রেমিক জেমস ত জীবন ও জগৎ সম্পর্কে নতুন চিন্তা করছেন।কষ্ট পাচ্ছেন। বিক্ষত হচ্ছেন।আর অবধারিত ভাবে নি:সঙ্গ হয়ে পড়ছেন।প্রিয়তমা সঙ্গিনীকে এই যন্ত্রনার অংশ ভাগ দিতে চাইবেন এ তো প্রেমের ধর্মের মধ্যেই পড়ে। নি:সঙ্গতায় বলিষ্ঠ আশ্রয় এই নোরা। দারুচিনি দ্বীপের ভিতর জেমস এই একটিই সবুজ ঘাসের দেশ দেখতে পেয়েছেন। নোরা আর জেমসের প্রেম পরিণত মাঘের শেষ বিকেলের মিশ্র হাওয়া--- উত্তুরে বাতাস আলিঙ্গন করে দখিনা বাতাসকে।ডাক দেয়। ডাক শোনে ভ্যালেন্টাইন ডে ।
(চলবে)
🍂
আরও পড়ুন 👇
0 Comments