জ্বলদর্চি

যেতে যেতে পথে/অন্তিম পর্ব/রোশেনারা খান

যেতে যেতে পথে
অন্তিম পর্ব
রোশেনারা খান

     অনেকদিন পর আজ রাজাবাজার গেছলাম মাছের খোঁজে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে   যে সব মাছ বিক্রি করা হয়, বা বাড়ির সামনের ছোট বাজার গুলোতে পাওয়া  যায়, ওদের কাছে রুই, কাতলা আর কিছু সামুদ্রিক মাছ ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যায় না। এমনিতেই মাছ, মাংস, সবজিতে আগের মত কোন কিছুর স্বাদ পাইনা। রাসায়নিক সার, বিষ,ও হরমোন প্রয়োগের ফলে মাছ ও সব্জিতে স্বাদ নেই, তার  ওপর টাটকা জিনিস বাসি করে খাওয়ার মেশিনে রেখে তারপর গুড়ো মশলায় রান্না, যে কারণে শুধু মায়ের হাতের নয়, নিজের হাতের রান্নার স্বাদ ও পাই না। যাই হোক, রাজাবাজারে ১০০০/টাকা দরে ট্যাঁঙরা আর মাগুরমাছ নিলাম। এখানে সব্জির দাম কম, অনেক রকম শাক পাওয়া যায়। কিছু শাক সবজিও নিলাম। রাতে একটা ভাল খবর পেলাম, জলি ফোন করে জানাল, আজকের মিটিঙে আমার ‘বাঙালি মুসলিম সমাজ ও নারী’ বইটি ইংলিশে অনুবাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

      রোজ ফোন করছি, রোজ মিস্ত্রীরা বলছে, কাল যাব। সেই কাল আর হচ্ছে না।দেখা যাক কবে কাজ শুরু হয়। রাতে সুকান্ত ফোন করে বলল, ‘আগামীকাল RMO অফিসে হেলথ ক্যাম্প হবে। বউদি, আপনি অল্প সময়ের জন্য হলেও যাবেন।  

    আজ ব্যাঙ্কে গিয়ে আধার কার্ড রিনিউ করার জন্য বায়ো মেট্রিক করিয়ে  এলাম। এসব কাজ ছোটখাটো হলেও গুরুত্বপূর্ণ, তাই ফেলে রাখা যায় না।বিকেলে চন্দ্রিমা এসেছিল, তারপর সৌনক আর রনিতা এসেছিল, অনেকক্ষণ গল্প হল, দরকারি কথাও হল। সৌনক একজন প্লাম্বার মিস্ত্রীকে ফোন করল, ওর বন্ধু স্থানীয়, চাকরি না পেয়ে এই কাজ বেছে নিয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে আসবে বলল। 
"ফোর্থ পিলার"এর আলোচনায় অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী, সাংবাদিক  অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় , আমিও সঞ্চালক সুদীপ্ত দাসগুপ্ত।

    আজ সাহজামালের পাঠানো মিস্ত্রী এসে বলে কিনা দেওয়াল ভাংতে হবে।  ভেতরের পাইপ মরচে ধরে বন্ধ হয়ে গেছে, ২ বছর হল সব ভেঙ্গে দেওয়ালে টাইলস লাগানো হয়েছে। আমার ভীষণ রাগ হল, বললাম, তোমরা কেমন  মেকানিক? সামান্য কমন সেন্স নেই তোমাদের? শুধু ভাঙতে জানো? দেওয়ালের ওপর দিয়ে লাইন করা যাবে না?- ‘হ্যাঁ, যাবে’। এদের দিয়ে কাজ করাব না।   বেসিনের নড়বড়ে মাথাটা ঠিক করিয়ে ওদের বিদায় করলাম।

      গতকাল ব্যাঙ্কের হেলথ ক্যাম্পে গেছলাম। সবই মোটামুটি ঠীক আছে। চন্দ্রিমা ২৫ নভেম্বর থাকবেনা বলে আজ আমার জন্মদিন পালন করল। মেয়েটা  একেবারে পাগলি। অকাল জন্মদিনে আয়োজনের কোনও ত্রুটি রাখেনি। সমস্ত রকম  খাবারের আয়োজন করেছিল। একখানা সাড়িও নিয়ে এসেছিল। সন্ধ্যায় স্বপ্না এসেছিল বিজয়ার প্রণাম করতে। একখানা সুন্দর সাড়ি, মিষ্টির বাক্স দিয়ে প্রণাম করে গেল।

    আজ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গেছলাম, গেস্টদের একেবারে সামনে বসার ব্যবস্থা ছিল।সেখানেই আমি, প্রসেঞ্জিত সাহা, জয়ন্তদা , সিদ্ধার্থ সাঁতরা, দুলালবাবু ও আরও কয়েকজন এক জায়গাতে বসেছিলাম।সাংবাদিক ছাড়া অন্যদের ছবি তোলা নিষেধ। ফটোগ্রাফার দেবনাথ মাইতি আমাদের কয়েকটা ছবি তুলে দিল। মাননীয় রাজ্যপাল ‘সিভি আনন্দ বোস’ এর ভাষণ ভালই লাগল, বেশ রসিক মানুষ বলেই মনে হল। বক্তব্য শেষ করেই রাজ্যপাল উপাচার্যের ওপর ভার দিয়ে চলে গেলেন। আমিও বেরিয়ে এসে জলির খোঁজ করলাম।ও ভিতরেই ছিল, চিনতে পারিনি, অধ্যাপক মনাঞ্জলি ডেকে দিলে ওকে বইটা দিলাম।  ইন্দ্রনীলকে ডেকে দরকারি কিছু কথা বলে আমরা কয়েকজন খাবারের সন্ধানে বের হলাম। বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। খাবার প্যাকেটে দেওয়া হয়েছিল, পরিমাণ এত বেশি ছিল যে  খাওয়ার পর বাকি খাবার নষ্ট করতে পারলাম না, রাস্তার ধারে বসে থাকা ধুলো ধুসরিত শুকনো মুখগুলির কথা ভেবে খাবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। 
বইমেলায়

      আজ ছবি মঙ্গলাপোতা চলে গেছে, মুনাফের মেয়ের বিয়ে। তানি আগামীকাল যাবে। সন্ধ্যায় সর্বশ্রী আর ওর স্বামী এসেছিলেন ওঁদের একমাত্র মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ জানাতে। রাতে ইয়াসিন খান ফোন করে জানাল, এই ডিসেম্বরে খাকুড়দাতে অনুষ্ঠান রাখছ।

     আজ দুপুরে ‘ফোরথ পিলার’ ইউ টিউব থেকে সুদীপ্ত দাসগুপ্তের ফোন পেলাম। আজ আনন্দবাজারে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরীর লেখা একটি উত্তর সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে। এই বিষয়টির ওপর একটি আলোচনা রাখছেন আজ সন্ধ্যা ৭ টায়।আমাকে অংশগ্রহণ  করতে বলছেন। রাজি হলাম, কিন্তু জিজ্ঞেস করা হল না, আর কে কে থাকছেন।          ।অনুষ্ঠান শুরু হতে দেখলাম, আমি ছাড়া আনন্দবাজারের প্রাক্তন সম্পাদক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় ও অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন।  এই আলোচনায় থাকতে পেরে আমি খুব তৃপ্তি পেয়েছি। ওনারা আমার যুক্তি ও মতামতগুলি  গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছেন। অনেকের সঙ্গে জলিকেও(দাস)  পাঠিয়ে ছিলাম। সকালে  দেখলাম ও মেসেঞ্জারে লিখেছে, ‘১২.৩০ অব্দি শুনলাম, দুজন প্রিয় মানুষ, আমার মাস্টারমশাই আর আমার দিদি.... খুব প্রাসঙ্গিক বক্তব্য’।

    বছর শেষ হয়ে আসছে, আমার কাজ শেষ হচ্ছেনা। আজ একটি সরকারি অনুষ্ঠান ছিল অরবিন্দ শিশু উদ্যানে। অফিস থেকে গাড়ি এসেছিল, পৌঁছে দেখি ADM ও আরও কয়েকজন বিশিষ্ট মানুষ রয়েছেন। পরে দিনেন রায়, সৌমেন খান, জয়শ্রী লাহা এলেন। অনুষ্ঠানটি হল সরকারি হোমে থাকা অনাথ শিশুদের নিয়ে।যারা এখান থেকে বাচ্চা নিয়েছেন এবং যারা নেবেন তাঁরা এসেছেন। দুটি বাচ্চা মেয়ের একটি বেলজিয়াম যাওয়ার জন্য রেডি।আর একটি সম্ভবত ইটালি যাবে। যাই হোক অনাথ বাচ্চাগুলি সুস্থ জীবন পাবে, এটা খুবই আনন্দের খবর। তবুও কেন জানিনা মন কু ডাকছে। বিদেশের নানা ঘটনার কথা শুনে ভয় হয়।  

      আজ এই হতভাগিনীর জন্মদিন।বিকেলে সিপ্রা এসেছিল কেক নিয়ে, রানীও কেক এনেছিল, সুস্নাত আসতে চেয়ে ছিল। আমি না করেছি, তাই রেগে গেছে। আসলে এসব আমার ভাল লাগে না। তাই না করে ছিলাম। হঠাৎ করেই সিপ্রা ও  রানী কেক নিয়ে হাজির হয়েছে। বাধ্য হয়ে কেক কাটতে হল। রাতে সৌনক এসেছিল মিষ্টি আর ফুল নিয়ে। স্বপ্না শহরের বাইরে থাকায় আসতে পারেনি বলে মন খারাপ। সুদীপও শহরে নেই। মেয়ে জামেই নাতনি ফোন করেছিল। সোশাল মিডিয়াতে প্রচুর মানুষ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, অনেকে ফোনও করেছেন। আগামিকাল আমার বাবলির জন্মদিন।

      সর্বশ্রীর মেয়ের বিয়ের পার্টি আজ।  তানিকে সঙ্গে নিয়ে গেছলাম। নন্দিনী  আগেই পৌঁছে গেছে। মেয়ে একেবারে নর্মাল সাজে সেজেছে। বর এখনো  আসেনি। বিয়ে অবশ্য আগে হয়ে গেছে। অল্প সময়ের জন্য স্বপ্নারা এসেছিল। উইমেন্স কলেজের বাংলার HOD অনিতা সাহা মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন। মাংস ছিল না, মাছ ছিল তিন রকম।পাবদা, ইলিশ ও চিংড়ি। খুব ভাল খেয়েছি। এখানেই একটি ফোন পেলাম, কিছু বুঝলাম না। বাড়ি ফিরে রিং ব্যাক করে জানলাম, আসাদুল ফোন করেছিল।আমাদের গ্রামের ছেলে, বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের শিক্ষক। এখানেই বাড়ি করেছে, ওর বাড়িতে DLO সাহেব ভাড়া থাকেন। আসন্ন বইমেলা নিয়ে তিনি আমার সঙ্গে কথা বলতে চান, আমি পারমিশন দিলাম।  

    এই মুহূর্তে সব খবরকে ছাপিয়ে গেছে, সুড়ঙ্গ থেকে জীবিত অবস্থায় ৪১ জন শ্রমিককে ১৬ দিনের চেষ্টায়(২৮ নভেম্বর) উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এই কাজে  নেতৃত্ব দিয়েছেন আবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন। এই জয়  সমস্ত জয়কে ছাপিয়ে গেছে।

    তানির আবার পরীক্ষার ডেট ক্যানশ্যাল হয়েছে। আজ আড়াই মাস বাড়িতে   বসে আছে। ওরা বার বার ডেট চেঞ্জ করে চলেছে। পরীক্ষা ২০২৩ সে হবে বলে মনে হচ্ছে না। রাজ্যের বাইরে, বিশেষ করে ব্যাঙ্গালুরুর প্রাইভেট কলেজগুলিতে ছেলে মেয়েদের ভর্তি করা  একেবারেই উচিত নয়। দালাল মারফৎ নির্দিষ্ট অঙ্কের মোটা টাকার প্যাকেজের কথা বলা হয়, এর বেশিরভাগ টাকা অ্যাডমিশনের সময় নিয়ে নেয়। তারপর চলতে থাকে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা আদায়।ছুটিতে বাড়ি গিয়ে কোনও কারণে কয়েকদিন বেশি থেকে গেলে ১০,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা জরিমানা আদায় করে। সব কিছু মিটিয়ে দেওয়ার পরেও পরীক্ষাতে বসার জন্য ৫,০০০ টাকা নিয়েছে। রেজাল্ট দেবার সময় আবার ১০,০০০ টাকা নেবে। এইরকমই ওদের শিক্ষা ব্যবসা।

     মেদিনীপুর শহরের কলেজ মাঠে ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বইমেলা হতে চলেচ্ছে। DLO সাহেব গতরাতে ফোন করে আমাকে সব জানিয়েছেন। আজ রাত ৮ টাতে ওনার অফিসে মিটিং ছিল। আমি, নির্মাল্য, অভিনন্দন, বিনোদ ও সিদ্ধার্থবাবু, অচিন্ত মারিক উপস্থিত ছিলেন,  কোনও নাচগানের  প্রতিযোগিতা হবেনা। কবিতা, ছড়া, অনুগল্প ও প্রবন্ধ লেখা আর বসে আঁকো প্রতিযোগিতা হবে। মিটিঙে কে কীসের দায়িত্ব নেবেন সে আলোচনায় নির্মাল্য, অভিনন্দন, বিচারকের দায়িত্ব নেবে না, মোটামুটি একটা ঠিক হল। আর একটা বিষয় হল যেদিন যে বিষয়ের প্রতিযোগিতা হবে, সেই বিষয়ের ওপর ৩০ মিনিট ওয়ার্কশপ হবে। বিচারক হিসেবে মধূপ দে, প্রদীপদেব বর্মণ, সৌম্যদীপ, বিনোদ মণ্ডল, অচিন্ত্য মারিক ও সিদ্ধার্থ সাঁতরার নাম ঠিক হল। সিদ্ধার্থ বাবু DLO সহিদুল্লাহকে বললেন, আমাদের  ক্যাপ্টেন দিদি, উনি যেটা ঠিক করবেন, আমরা সেটাই মেনে নেব।

      আজ ৩ ডিসেম্বর খাকুড়দা গেছলাম নাব্যস্রোত গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে যোগ  দিতে। ওখানকার PTTI ট্রেনিং কলেজে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।কবিতা গান,বক্তব্য, সেইসঙ্গে  টিফিন ও লাঞ্চ, সব মিলিয়ে দিনটা ভালই কাটল। আমাদের ৫ জনকে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হল। সম্পাদক ইয়াসিন খান খুব সুন্দর আয়োজন করে ছিলেন।

     দুপুরে DLO ফোন করে আজ রাত ৮ টাতে যেতে বলছিলেন, আমার সময় হবে না বলাতে বললেন, ‘তাহলে ওনাদের আসার দরকার নেই, আপনি ২ টোর দিকে একাই আসুন’। কিছু আলোচনা হল।আমাকে what’s App এ চিঠিগুলি পাঠানোর দায়িত্ব দিলেন।  

     আজ বইমেলা উদ্বোধন হবে। তার আগে পদযাত্রা হওয়ার কথা। এদিকে গতকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। DLO মাঠের কয়েকটা ছবিসহ মেসেজ পাঠিয়ে  লিখেছেন, ‘প্যান্ডেলের অবস্থা খারাপ, তাই প্রদ্যোত স্মৃতি সদনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হছে। আপনি সবাইকে জানিয়ে দেবেন’। বিকেলে ওয়েদার সামান্য ভাল হলে কিছুটা দেরি করে পৌঁছে দেখি, পুরো হল ভর্তি।মঞ্চে উঠে পেছনের   দিকে নলিনীদার পাশে বসলাম। সামনেটা মন্ত্রী আমলা আর স্থানীয় নেতাদের  দখলে। সবাইকে বরণ করতে দেখলাম না। তবে এই অধমাকে করেছিল। DM এর সঙ্গে কথা বললাম, উনি আবারো যেতে বললেন, বিকেল ৪ টের পর। মঞ্চ ছেড়ে উনি বের হতেই সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলেন। পাশ কাটিয়ে চলে আসছিলাম দুজন সাংবাদিক আমার পথ আটকে প্রশ্ন করলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সলমন   খানের সঙ্গে নেচেছেন বলে বিজেপি সমালোচনা করছে।এ বিষয়ে আপনার কি মত? আমি উত্তর দিলাম। খবরটি রাতে কলকাতা টিভিতে প্রচারিত হয়েছে।পরদিন সাংবাদিক খবরের ভিডিওটি আমাকে পাঠিয়েছিলেন।

      আজ বইমেলার তৃতীয় দিন, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য একটা নামও জমা পড়েনি। আমি সোশাল মিডিয়াতে পোস্ট দিলাম। আমার পরিচিত বিভিন্ন  স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাদের ফোন করে ছাত্রছাত্রী পাঠাতে অনুরোধ করলাম। এক তো বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। যাদের পরীক্ষা শেষ তারা স্কুলে আসছে না। তবুও বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের(বালিকা) কিছু ছাত্রী এসে ছিল। আজকের  প্রতিযোগিতা শেষ হল। কবিতাপাঠেও সমস্যা হচ্ছে। যাদের নাম নেই তাঁরাও জোর  করছেন।যারা কবিতা পাঠের জন্য আমন্ত্রিত, তাঁরা ব্ল্যাকমেল করছে্ন, বলছেন, ‘ওদের কবিতা পাঠ করতে না দিলে আমরাও করব না’। এই সবকিছু আমাকেই সামাল দিতে হচ্ছে। সিদ্ধার্থ বাবুর বক্তব্য, আমার নাম শুনলে কেই গণ্ডগোল করার সাহস পাবে না।

      মেলার একটা দিন বাড়ানো হল। সিদ্ধার্থ বাবু, নির্মাল্য, কাউকেই এই মেলায় দেখছি না। বিদ্যাসাগর মাঠে আর আকটি বেসরকারি বইমেলা হচ্ছে, সবাই  সেখানে ব্যস্ত। আমাকে তিনদিন বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে হল। মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফলাফল ঘোষণা করতে হল। কুইজ ও স্মারক বক্তব্য হল।

     শেষ দিনে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হল। প্রথমে DLO বলেছিলেন, আমাদের হাত দিয়েই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু DM, ADM, SDO, এলে ওঁরাই পুরস্কার তুলে দিলেন, কিছু পুরস্কার আমি ও কুমারেশ বাবু দিলাম। এরপর গানবাজনা হলেও  আমি চলে এসেছিলাম। DLO আমাকে কাল একবার অফিসে যাওয়ার অনুরোধ করলেন, আমার বাড়ি থেকে ওনার অফিস কাছে বলেই বার বার যাওয়া আসা সম্ভব হচ্ছে। পরদিন ব্যাঙ্কের কিছু কাজ সেরে ওনার অফিসে গেলাম। আজ শুক্রবার, উনি জুম্মার নামাজ পড়ে এইমাত্র  ফিরেছেন। বসতে বলে চা অফার করলেন, আমি অসময়ে চা খাই না। অনেক কথা হল, আলোচনা হল।।তারপর আমাকে সই করিয়ে একটি খাম হাতে তুলে দিলান।বাড়ি ফিরে খাম খুলে দেখলাম (৩ দিনের) ৩ টি ৫০০/ টাকার নোট রয়েছে।

🍂

    সকালে আমি চন্দ্রিমা বেনেপুকুর প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে বাচ্চাদের নতুন চাদর ও খাবারের প্যাকেট দিয়ে এসেছি। দূরে কোথাও যাওয়া এখন সম্ভব নয়। তাছাড়া আমরা প্রয়োজনটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

     আমাদের ‘অস্তিত্বের খোঁজ’ পত্রিকার ঈদ সংখ্যা প্রকাশের অনুষ্ঠান ছিল। DLO আসতে পারেননি, জরুরি কাজ পড়ে যাওয়ার জন্য।বরুণ মণ্ডলও একই কারনে আসতে পারেননি। অধ্যাপক লায়েক আলি খান এসেছিলেন। আর এসেছিলেন এক্রামুল সেখ, রজব মল্লিক, আবুল হুসে্ন ও ওহাইদ মির্জাসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। কয়েকজন তরুণী এসেছিল। ওরা নাকি আমাকে সামনে থেকে দেখার জন্য এসেছে। লায়েক আলি খান ও আমি পত্রিকার মোড়ক উন্মোচন করলাম,  বক্তব্য রাখলাম। পত্রিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হল, কবিতাপাঠ হল।

       ডিসেম্বর মাস প্রায় শেষ হয়ে এল, আজ আমি ও চন্দ্রিমা মাড়োতলা  গেছলাম ‘আশার আলো’ র বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে। ওদের জন্য শীতের চাদর, শুকনো খাবার নিয়ে গেছলাম। এখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিশুদের  জীবনে যে মানুষটি আশার আলো জ্বেলেছেন, সেই অমিত পালকে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই।

       আজ ২৪ ডিসেম্বর, মেজ জামাইবাবু চলে গেলেন। কত কথা মনে  পড়ছে। আমার শৈশবের অনেকখানি জুড়েই রয়েছে দিদি জামাইবাবুর থেকে পাওয়া আনন্দের মুহূর্ত। যা অন্য কোথাও পাইনি। জামাইবাবু স্ত্রী সন্তানের দায়িত্ব সেভাবে  পালন করেননি বলে মনে একটা ক্ষোভ ছিল। কিন্তু সারাজীবন তিনি মানুষের  উপকার করে গেছেন।।২৫ ডিসেম্বর সবার মনে কত আনন্দ, আমার চিরদুঃখি মেজদি কেঁদেই চলেছে। আমরা সকা্লেই এসে গেছি। বড়দিও এসেছে। শেষ  বিকেলের নিভু নিভু আলো ফুরিয়ে আসছে। দিদির করুণ মুখখানি দেখে বোঝা যাচ্ছে কতখানি শূন্যতা তাকে গ্রাস করেছে।
সরকারি অনুষ্ঠানে, ADM,  ডে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ,উইমেনস কলেজের অধ্যক্ষ ও আমি।

 আমিও খুব ক্লান্ত, এবার আমাকে থামতে হবে, আজ ২ বছর ৩ মাস ধরে যে লিখে চলেছি, তা আপনাদের জন্য, মানে আমার পাঠকদের জন্য সম্ভব হয়েছে। তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, আপনারা সঙ্গে না থাকলে আমার একার পক্ষে এই  সুদীর্ঘ(২ বছর ৩ বছর)পথ একা চলা সম্ভব হত না, আপনারা আমার সুখে দুঃখে পাশে থেকেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। আপনারাই আমার প্রেরণা। আমার জন্য প্রার্থনা করবেন, যেন খুব তাড়াতাড়ি আমার এই পথ চলার কাহিনী মলাট বন্দি করে  আপনাদের হাতে পৌঁছে দিতে পারি। যদিও এ কাহিনী শেষ হয়েও এখন শেষ হল না.......।  

                

Post a Comment

0 Comments