জ্বলদর্চি

বিশ্বনাট্য দিবস (২৭ মার্চ)/দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

বিশ্বনাট্য দিবস (২৭ মার্চ)

দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

আজ ২৭ শে মার্চ "বিশ্বনাট্য দিবস"।নাটকে শুধু লোকশিক্ষাই হয় না, নাটক নিজেকে, নিজের সঙ্গে পরিচিত হতে শেখায়। বলা যেতে পারে, নাটক এক অস্ত্র প্রতিবাদের ও প্রতিরোধেরও, তাই শতাব্দী ধরে থিয়েটার মানুষকে জুড়ে, জুড়ে রাখার অন্যতম শক্তিশালী শিল্প মাধ্যম হিসেবে নিজেকে ধরে রেখেছে। এই দিবসের মূল সুর হলো, "থিয়েটার এবং শান্তির সংস্কৃতি"

যুদ্ধবিগ্রহ, পীড়ন, দখলদারি, জাতি দাঙ্গা ও রাজনৈতিক হত্যা আর এসবের সমান্তরাল ভাগ্যবানদের স্বাচ্ছন্দ্য, অফুরন্ত বিনোদন, ফূর্তি আর মজা লুন্ঠনের অবিরাম সুখ এবং সব ধরনের অনুকূল- প্রতিকূলে ঘটমান সব খবরকে এড়িয়ে ২৭ শে মার্চেই চেনা, অচেনা নাট্যকর্মিদের বিজয়া দশমীর ও ঈদের কোলাকুলি আর আড্ডা একসঙ্গে জড়ো হয়ে নাট্যাভিনয় আর বছর বছর বাণী পাঠ,প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে চলা এই নাটুকে ইতিহাস। শুরুতে হয়তো একটু হুজুগ মিশেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ১৮৬১সালে এই দিনটার ভাবনা (বিশ্বনাট্য দিবস ২৭ শে মার্চ) আসে।

বিশ্বনাট্য দিবস প্রতিবছর ২৭শে মার্চ পালিত হয়। আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউট এর দ্বারা ১৯৬১সালে সর্বপ্রথম এই দিবসের সূচনা হয়।

নাট্যকর্মীদের সৌভাতৃত্ব আর ভাবনার আদান-প্রদানের লক্ষ্যে এই দিনটাকে নির্দিষ্ট করার অনুরোধ জানাই আন্তর্জাতিক আইটিআই ইউনেস্কো কে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো একযোগে প্রস্তাবটিকে সমর্থন করে। পরের বছর ১৯৬২ সালে এই ২৭শে মার্চ তারিখে প্যারিসে থিয়েটার নেভেলস নাট্যোৎসব শুরু হয়।

🍂

আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউট কর্তৃক (আইটিআই) ১৯৬১ সালে বিশ্ব নাট্য দিবস পালিত হয়। ২৭ শে মার্চ আইটিআই কেন্দ্র সমূহ এবং আন্তর্জাতিক থিয়েটার কমিটি দিবসটি পালন করে। এই দিনটি উদযাপন করতে বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে নাট্য অনুষ্ঠান প্রর্দশিত হয়। এরমধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউটে একজন তারকা মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে আইটিআই এর শান্তি-সংস্কৃতি বিষয়ক একটি বিশেষ বার্তা প্রেরণ করে। প্রথম বিশ্ব থিয়েটার দিবসের আন্তর্জাতিক বার্তা ১৯৬২ সালে ফ্রান্সের জিন কোকটিয়াও লিখেছিলেন এবং তারপরে ভিয়েনায় ১৯৬১ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত আইটিআই এর নবম আলোচনা সভায় আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের ফিনিস কেন্দ্রের পক্ষে অধ্যক্ষ আরভি কিভিমায় বিশ্ব নাট্য দিবস উদযাপনের প্রস্তাব দেন।। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কেন্দ্র সমূহে এটাকে সমর্থন দেওয়ার পরেই দিবসটির বিশ্বব্যাপী প্রচলন শুরু হয়।
পরবর্তী সময়ে ঠিক হয় বিশ্ব নাট্য দিবসের প্রাক্কালে একজন বিশিষ্ট নাট্যচিন্তক বা আন্তর্জাতিক ভাবে সমাজ- সংস্কৃতিতে আলোড়ণ তোলা কোন বিখ্যাত মানুষ বিশ্বনাট্য দিবসে বক্তৃতা দেবেন। ১৯৬২ সালে আমন্ত্রিত প্রথম বিশিষ্টজন হিসেবে জাঁ ককতো বক্তৃতা ও পরিবেশন করেন এবং পরের বছর করেন আর্থার মিলার। এরপর ক্রমান্বয়ে পাবলো নেরুদা, আয়োনেষ্কো, ওলে সয়িঙ্কা, পিটার ব্রুক, এডওয়ার্ড এলবি, ডাচলভ হ্যাবেল, এবং আগস্ত বোয়াল সহ বহু বিশিষ্টজনেরা। এছাড়া ২০১৫ সালে বিশ্বনাট্য দিবসে বক্তৃতা করেছেন পোল্যান্ডের নাট্যবিদ ত্রিস্তফ ওয়ারলিকাউস্কি যিনি ওয়ার্শের NowyTeatr(নিউ থিয়েটার) এর শিল্পনির্দেশক এবং নতুন ধারার নাট্য পরিচালক হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন।

যতদিন এগোচ্ছে ততো আন্তর্জাতিক নাট্য দিবসের ইতিহাস ও ভূগোল বিস্তৃত হচ্ছে। আজকের থিয়েটার কিন্তু আঙ্গুল চেটেপুটে খাওয়া বহু ভোগ্য বিনোদিনী ফুড প্লাজার বাইরে নিঃশব্দে প্রবল পরাক্রমে প্রভাবের আর চর্চার ভূগোল বাড়িয়ে চলেছে। সেই জন্য ইউনেস্কোর তত্ত্বাবধানে ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আইটিআই) গত কয়েক বছরের মধ্যে প্রায় একশোর বেশি শাখা খুলে ফেলেছে সারা পৃথিবী জুড়ে। এই কেন্দ্রগুলি থেকে প্রায় কুড়িটি ভাষায় ২৭ শে মার্চের বক্তৃতা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে। যুদ্ধবিধ্বস্ত রাশিয়া বা ইউক্রেন বা ইরাকের পাহাড়ি অঞ্চলের জনপদে বা ক্রিকেট সূত্রে সুপরিচিত আরবের মরু শহর কিম্বা জঙ্গল ঘেরা আফ্রিকার উপজাতি অধ্যুষিত গ্রামেও বর্তমানে বিশ্ব নাট্য দিবস পালন করা হয় আর এখানেই বিশ্বনাট্য দিবসের সার্থকতা।

Post a Comment

0 Comments