তনুশ্রী ভট্টাচার্য
ঊর্ব্বশী,মেনকা,রম্ভা প্রমুখ অপ্সরা অপ্সরী,কিন্নর কিন্নরী দের নৃত্য আমরা
চাক্ষুষ করিনি,কিন্তু আমাদের প্রাচীন সাহিত্যগুলো তেএইসব নৃত্যপটিয়সী দেব-
নর্তকী দের নৃত্যসুষমার যে অনিন্দ্য
সুন্দর বর্ণনা আমরা পাই তা প্রমাণ করে যে
নৃত্য একটি ধ্রুপদী পারফরমিং আর্ট,
একটি প্রাচীন কলাশিল্প। নৃত্যগীতে স্বর্গের
দেবতাদের ঘুম ভাঙে,বা কোনো কঠিন যুদ্ধ
জয়ের পর বিনোদনে দিলখুশ হয় অপ্সরী
দের নৃত্যের রসাস্বাদনে। মহিষাসুর ও স্বর্গ
অধিকার করে প্রথমেই স্বর্গের শ্রেষ্ঠ নর্তকী
দের নাচের মজলিশে অবগাহন করে বাসনা পূরণ করেছিল। সুর বা অসুর কেউই প্রকৃত নৃত্যবিভঙ্গের আবেদন উপেক্ষা করতে পারে না। নৃত্য যে শুধু বিনোদনের মাধ্যম তা কিন্তু নয়,একজন নৃত্যশিল্পী ত জীবন শিল্পী,জীবনের তাগিদে
ও তাঁকে নাচতে হয়। বেহূলাকে নাচতে
হয়েছিল লখীন্দরের প্রাণ ফিরে পাওয়ার
জন্য । এই বেহূলা - লখীন্দর ত ছিল স্বর্গে
র নৃত্যশিল্পী ঊষা-- অনিরুদ্ধ। একদিন
ওদের নাচে তালকেটে বিনোদনের রসভঙ্গ হওয়ার কারণে ওদেরকে মর্ত্যে পাঠানো হয়েছেল শাস্তিস্বরূপ।। যাক স্বর্গের কথা।
এই ধুলিধূসরিত মর্ত্যেও নৃত্য একটি অতীব কঠিন এবং লাবণ্যময় শিল্পমাধ্যম।
ব্যাকরণ শৈলীকে মান্যতা দিয়ে যে কোনো
নৃত্যই ত ঈশ্বরের সাধনা।সবধরনের নৃত্য
শিল্পীর ক্ষেত্রেই এটি সমান সত্য। মাইকেল
জ্যাকসন ত শুধু মুন ওয়াকিং নৃত্যশৈলীর
জন্য জীবনটাই উৎসর্গ করলেন। রাশিয়ান ব্যালে দেখে ত মনেই হয় যেন এরা এক একজন ঊর্ব্বশী,মেনকা রম্ভা --
কী অসাধারণ শরীর আর মনের সাযুজ্য
আর ভারসাম্য থাকলে ঐ স্বর্গীয় সুষমা
তৈরী হয় এক একটি ইউরোপীয়ান ব্যালে
তে।আর ভারতবর্ষ ত নৃত্যেরই দেশ।
প্রায় প্রতিটি রাজ্যের একটি করে নৃত্যশৈলী
মনে হয় পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই!!
ওড়িশি,কথ্থক,কথাকলি,কুচিপুড়ি,মণিপু-
রি,ভরতন্যাটম প্রভৃতি যেমন শাস্ত্রীয় নৃত্যশৈলী তেমনি গঢ়বা,বিহূ,ছৌ,ডান্ডিয়া
ইত্যাদি লোকনৃত্যে ভরপুর ভারতীয় নৃত্যমন্ডল।বাংলার ব্রতচারী নৃত্য একসময় খুব জনপ্রিয় ছিল শারীরিক সক্ষমতার অঙ্গ হিসেবে। আর বাঙালীর গর্ব রবীন্দ্র
নৃত্য ত রইলই। শুধু নাচ দিয়েই এক একটি পরিবার তার পরিচয় তৈরী করেছেন এই ভারতবর্ষে। উদয়শংকর
অমলাশংকর, মমতাশংকর তনুশ্রীশংকর
--- নামই যথেষ্ট!!
ফিল্মি নাচের কথাও বলতে হয় বৈকি।
বৈজয়ন্তীমালা,হেমামালিনী,রেখা,শ্রীদেবী
মাধুরী দীক্ষিত, ঐশ্বর্যা রাই,কমল হাসান
জীতেন্দ্র,হৃত্বিক রোশনরা বেশীর ভাগ সময়ই অভিনয় ছাপিয়ে নৃত্যশিল্পী হিসাবে
মানুষকে মুগ্ধ করেছেন।আর বসন্তবিলাপ
সিনেমায় সৌমিত্রর ট্যুইস্ট নাচ কোনো
বাঙালীই ভুলবেন না।উত্তমকুমার ও বেশ
কয়েকবার কোমর দুলিয়েছেন।বাংলার
হালফিলের নায়ক নায়িকারাও কম যান না।
টিভির রিয়েলিটি শো গুলো দেখলে ত চোখ কপালে উঠে যায়!! কী অভিনব সব
নৃত্যবিভঙ্গে পারদর্শী ঐ পূঁচকে ছেলেমেয়ে
গুলোকে সত্যিই কুর্ণিশ জানাতে হয়।কুর্ণিশ
জানাই বিশ্বের অতীত ও বর্তমানের সকল
নৃত্যশিল্পীকে আজ বিশ্ব নৃত্য দিবসে । উঁহু--- একজন বাকী থেকে গেল----কে?ঐ
যে আদি নৃত্যশিল্পী নটরাজ --- যাঁর মতো নৃত্যশিল্পী গোলক ভ্যুলোক দ্যুলোকে আর
ক'জনই বা আছে !!!!!
তবে দর্শকরূপী বাঙালীও কি নৃত্যশিল্পী নয়? সোহাগ চাঁদ বদনী তে ও যেমন নাচে
তেমনি বারান্দায় রোদ্দুর এ ও একই ভাবে
কোমর দোলায় কোরাসে----অকপট নৃত্য !
ভাসানের নাচেও যেমন বোনের মেহেন্দী
অনুষ্ঠানেও তেমন----- নাক কোঁচকাচ্ছেন?কৌলিন্য নাই থাক দিলখোলা নাচ ত থাকে
আজ বিশ্ব নৃত্য দিবসে তাদেরকেও মনে
রাখা দরকার।
আসলে নাচ ত মনে ----তাই না??
মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
তাতা থৈ থৈ তাতা থে থৈ
তাতা থৈ থৈ।।
🍂
0 Comments