জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/নবকুমার মাইতি

গুচ্ছ কবিতা
নবকুমার মাইতি

তোমার হাতছানি সম্মোহিত করে

ভালোবাসার তল খুঁজতে গিয়ে
 বসে থাকি নিরবধিকাল
 সান্ধ্য অবসরে অচেনা কোকিলের কুহুতান
 সবুজ বনানী, শাল পিয়াল জারুল
 রডোডেনড্রন বোগেনভিলিয়া কাঠমল্লিকা
 দার্জিলিংয়ের সুবিস্তৃত চা বাগান
 সাঁওতাল রমণীর পাহাড়ি পথের চলনবিভঙ্গে 
পাখ- পাখালির সম্মেলক ধ্বনি
 মন মধ্যে তড়িৎ আলোড়ন তোলে
সুদীর্ঘ কালের উপোসী মন ক্রমাগত
 উতলা হয়ে ওঠে,মহামিলনের গান
 বিদ্রোহিনী মানবী, সময়ান্তরে দেবী
 শিল্পীর তুলিতে আঁচড় কাটে রাধা- কৃষ্ণ 
মিলিত তণু, ক্ষণভঙ্গুর হৃদয়ে জোড়া লাগে 
ক্রমাগত পথ চলেছি পৃথিবীর পথে
  অনন্ত আলোকবর্ষ ধরে 
শেষহীন সুদূর দিগন্ত রেখায়
 তোমার হাতছানি আমাকে সম্মোহিত করে ....


পুরুষের ভালোবাসা

সত্যিই কি পুরুষ নারীকে ভালোবাসে? 
নগরনটী জেনেও তুমি তাকে ভোগ করো 
পুরুষ প্রধান, সময়ান্তরে ছুঁড়ে দাও ঘৃণা
আসলে ভালোলাগা আর ভালোবাসার
 নিগূঢ় প্রত্যয় তুমি বোঝনা,বুঝতে চাওনা
 সন্ধ্যার আসঙ্গ কাটে ঘনঘোর মাতাল প্রপাতে
 নিরন্ধ অন্ধকারে ঝলসে ওঠা নিয়ন আলোয়
 সুপারব্র্যান্ড হুইস্কি আর  শ্যাম্পেনের ঝাঁজে
 মাতাল ভ্রমর গাঢ় আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়
   
 সুনিপুণ গৃহিণী গৃহলক্ষ্মী সমা
 যাকে তুমি পবিত্র মাঙ্গলিক সিন্দুরের
 টিপ দান করেছিলে পূত-পবিত্র মন্ত্রে-
"যদিদং হৃদয়ং মম 
তদস্তু হৃদয়ং তব"
 অন্তরসত্তায় ছিল বিনে পয়সার দাসী
 প্রিয়জন নয়, ছিল প্রয়োজন
 অন্নিষ্ট যার সুনিপুণ অবজ্ঞা
 আসলে নটীও নয়, গৃহলক্ষীও নয়
 তুমি শুধু ভালোবাসো উদ্ধত যৌবন অথবা দাসী!!

🍂

অন্তহীন অপেক্ষা 

রূপসজ্জায় কেটে গেছে সারাটা সকাল 
চুল খুলে আবার নতুন করে চুল বাঁধা
 দুই ভুরুর সঙ্গমস্থলে চন্দন তিলক
 পুত - পবিত্র, বিরাজিত বিমল শান্তি 
বেল জুঁই টগর অপরাজিতা থরে থরে সজ্জিত
 কন্ঠে বহুমূল্য রত্নহার, বহু বিধ উপাচার 
নিরন্তর পথ চলেছে বিরহিনী রাধা 
 কুঞ্জবনে,অভিসারে দীর্ঘশ্বাস ফেলে
পরনে তীব্র নীল শাড়ি, আলতা পায়ে
 এক সময় অঙ্গসজ্জা শেষ হয়
 থাকে শুধু অন্তহীন অপেক্ষা-
 জগৎকল্যাণে মাথুর লীলা শেষে
 কখন আসবে প্রানপ্রিয় কালিয়া বঁধূ!

বসন্ত বিলাপ

আজ আর বসন্ত বাতাস বয়না
 এক ঝাঁক বোগেনভিলিয়ার কাছে
 পাই বসন্তের আগমনী বার্তা
 অথচ পলাশ, শিমুল ,কৃষ্ণচূড়া, ডালিয়া, চাঁপা
 আজ আর নেই, নেই কোকিলের সুমধুর কুহুতান! 
   
প্রকৃতি আজ রুদ্ররোষে প্রলয়ঙ্করী
 ইট কাঠ পাথর গগনচুম্বি বহুতল বাড়ি 
সীসা আর কার্বন গ্রাস করেছে ওজোন স্তর 
বিশ্বায়নে অতিষ্ঠ মধ্যবিত্তের জীবন
স্থিতধী মনুষ্যসমাজ অচল আয়তন 
    
কর্পোরেট বাণিজ্য সংস্থা ক্রমশ গিলে খাচ্ছে
শুভবোধ, শিশুর ক্ষুধার অন্ন, মুমূর্ষু রোগীর
 নিত্যদিনের বাঁচার রসদ, ভালবাসার রঙিন আবির
 ক্রমশ অনুজ্জ্বল, সাম্য মৈত্রী তলানিতে পড়ে
 সনাতন ধর্ম ও সংস্কৃতি  সাইনবোর্ড  সর্বস্ব
  অনতিক্রম্য বিষাদ সিন্ধু,লুপ্তপ্রায় জৈবিক মেধা ও মনন 
অলস দুপুরে ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমি ভুলে যায়
 তাদের মিলন মধুর আলাপন, সংরাগ 
তবুও গাঁয়ের পথে বিশু পাগলা প্রেমের গান গায় -
"রংগ বরসে ভীগে
চুনারবালী রংগ বরসে..... "


যাপন শেষে

আমার চিরন্তন ভালোবাসা ছিল নদীর সঙ্গে
 খরস্রোতা নদীর মতো একটি মেয়ে আমাকে 
ভালোবেসেছিল নিবিড় করে, সংগোপনে 
তাকে ঘিরে মুগ্ধতা ছিল, রঙিন স্বপ্ন ছিল 
আবেশ অনুভূতি ছিল, ছিল প্রেম ও সখ্যতা 
ছিল অভিমান, সুনিবিড় প্রত্যয়

 সময়ের রথচক্রতলে আজ দেখি,অনন্ত  বিভোর
বোধ ও বোধির সঙ্গম, প্রিয় সম্ভাষণ
 প্রৌঢ়ত্ত্বের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে মনে হয়
 নদী ও মেয়েরা নারী হয়ে জন্মায়
 আর কিশোর বয়সের ছেলেরা নার্সিসাস 
নদী ও নারীর সুনীবিড় স্পর্শে
 শান্তির অবগাহন,পূর্ণতা পায় নিস্তরঙ্গ যৌবন 
সৃষ্টি হয় মিলনমধুর রাগিনি
 কখনোবা ইমন ,কখনো মালকোষ
 অপেক্ষমান থাকে নব মেঘদূত
 প্রিয় অনুষঙ্গের জন্য আষাঢ়ের ঘন বর্ষণে 
গাংচিলের বিষাদ ,উপবাসী চাঁদ নিরন্তর কাঁদে
 ভরা কোটালের জল নেমে গেলে
 যাপন শেষে প্রেমিক যুগলের চোখে অশ্রুবান.....


Post a Comment

0 Comments