ইভ টিজিং
মিলি ঘোষ
বিষয় ইভ টিজিং। এরও নাকি প্রতিরোধের দিবস আছে। তেরোই জুন ছিল সেই তারিখটি। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে বহু দিবসের মুখোমুখি হই আমরা। সারা বছর দিবসের ছড়াছড়ি। যার কোনও ভিত্তি নেই। এর মধ্যে কিছু কিছু দিবসের প্রাবল্য খুব বেশি। কিন্তু ইভ টিজিং প্রতিরোধ দিবসের কথা খুব কম লোকই জানেন। আমিও হঠাৎ জানলাম। এখন কথা হলো এই দিবসের লক্ষ্য কী? বা এর ফলাফল কী? সোশ্যাল মিডিয়ার অন্য দিবসগুলির মতো উচ্ছ্বাস এতে না থাকারই কথা। কারণ, এখানে একটা প্রতিরোধের ব্যপার আছে। শিশু দিবস, মাতৃ দিবস, পিতৃ দিবস এগুলো আবেগ প্রকাশ করার আদর্শ দিন। শিশু না বুঝুক, মা বাবারা প্রকৃত ইতিহাস জানেন। আবার অন্য ভাবে দেখলে দৈনন্দিন যন্ত্রণার কথা ভুলে একটা দিন তাঁদেরও একটু খুশি খুশি থাকা। কিন্তু ইভ টিজিং প্রতিরোধ দিবসের মধ্যে এর কোনোটাই নেই। শুধু একটাই মিল, সব দিবসের নিট ফল জিরো।
🍂
ইভ টিজিং বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তবুও এর শ্রেণী বিন্যাস না করাই ভালো। কারণ, কম বেশি আমরা সকলেই এর সঙ্গে পরিচিত। কখনও এর গুরুত্ব খুব হালকা থাকে, কখনও বেশ গভীর এবং সবটাই আপেক্ষিক। গুরুত্ব অনেক সময়েই ব্যক্তি বিশেষের ওপর নির্ভর করে। ইভ টিজিংয়ের মতো একটি নিত্য চলমান উপভোগ্য কর্ম কার ওপর প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং কে করছে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রতিবাদ প্রতিরোধ হওয়া উচিৎ কিনা সেটি নির্ভর করে সমাজ সংসারে ওই দু'পক্ষের অবস্থানের ওপর।
ইভ টিজিং বন্ধ করার জন্য কিছু আইন টাইন আছে শুনেছি। বাস্তবে তা কতটা কার্যকরী সে প্রশ্ন তো থাকেই। সবচেয়ে বড়ো কথা এই ধরনের অভিযোগ প্রমাণ করা মুশকিল। খুব সামান্য থেকে অনেক বড়ো রকমের ইভ টিজিংই হয়। যার ফলে অনেক সময়ই সদ্য কৈশোর প্রাপ্ত মেয়েদের মানসিক চাপ তৈরি হয়। না পারে তারা বাড়িতে জানাতে। ভয় থাকে, হয়তো পড়তে যাওয়া, বন্ধুর বাড়ি যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু প্রতিবাদ আসবে না। বাবা মায়েদেরও ভয় থাকে, প্রতিবাদ করলে ফল আরও খারাপ হতে পারে। থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করতে গেলে গলার জোর, লোক বল আরও অনেক বলের দরকার পড়ে। যার একটাও মধ্যবিত্ত বাবা মায়েদের নেই। কিন্তু যারা ইভ টিজিং করে, তাদের অনেকেরই এগুলো আছে। আবার দেখা যায় এদের বেশিরভাগের কাজকর্ম নেই। বন্ধুরা একজোট হয়ে আড্ডা দেবার সময় এগুলো কিছুটা মুখরোচক সময় যাপন। থানা থেকেও হালকা করে মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবই আসে। সামান্য ব্যপার কেঁচে গন্ডূষ করতে চাওয়ার অনিচ্ছা প্রকাশ পায় তাঁদের দিক থেকে। দু'একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটে অবশ্য। যদিও সব ক্ষেত্রে বিষয়টা সামান্য হয় না। কোনও ক্ষেত্রেই সামান্য বলে দাগিয়ে দেওয়া উচিৎ নয়। ও ছাড়, ও ঠিক আছে, নিজে ঠিক থাকলে সব ঠিক থাকে ইত্যাদি অপমানজনক বাক্য ব্যবহার করাই চল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাহলে এর থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কোথায়। কিছুটা বলার কারণ, পুরোটা কোনোদিনই সম্ভব নয়। এর মূলে দরকার সচেতনতা। যা আসে সর্ব প্রথম পরিবার থেকে। পারিবারিক শিক্ষা ঠিকঠাক হলে সমাজে এর সুপ্রভাব পড়বে বলেই আশা করা যায়। কারণ, সমাজ গড়ে ওঠে পরিবার নিয়েই। কোনও মা বাবা ছেলে-মেয়েদের কু-শিক্ষা দিতে চান না। কিন্তু নিজেদের অজান্তে তাঁরা অনেক ভুল করে বসেন। সন্তানকে ভয় দেখিয়ে কোনও সুরাহা হয় না। কিছুটা সুরাহা হলেও অতি শাসন করে মানুষের স্বভাব পালটানো যায় না। সমাজের অসুস্থতা থেকেই যায়।ছোট থেকেই সন্তানকে অন্য ব্যক্তিকে সম্মান করার শিক্ষা দিতে হবে বাবা মায়েদেরই। নারী পুরুষ নির্বিশেষে। এ ছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে সচেতন থেকে ছাত্রছাত্রীদের সু-শিক্ষা দিলে হয়তো সমাজ এর থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাবে।
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করুন। 👇
0 Comments