জ্বলদর্চি

আন্তর্জাতিক যুব দিবস (১২ই অগাস্ট)/দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

আন্তর্জাতিক যুব দিবস (১২ই অগাস্ট)
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

অর্থনীতি আমাদের বিশ্বকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করছে,  উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য অভূতপূর্ব সুযোগ প্রদান করছে। মোবাইল ডিভাইস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ডিজিটাল প্রযুক্তি, উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অগ্রসর করার জন্য সহায়ক। ডিজিটাল মিডিয়া থেকে উৎপাদিত তথ্য-গ্রহণ করা হয়, বেশিরভাগ এই যুবদের মাধ্যমেই।অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত গভীর প্রভাবের সাথে  ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাবও থাকে অনেক,এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যুবরা।

প্রতিবছর, প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছুদিনে, কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দিনের অতীতের কোন ঘটনাকে স্মরণ করে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। বিশ্বে পালনীয়  সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো "যুব দিবস"।

আন্তর্জাতিক যুব দিবস (১২ই অগাস্ট) জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত একটি সচেতনতা মূলক দিবস। দিবসটির উদ্দেশ্য, যুব সমাজকে ঘিরে সাংস্কৃতিক এবং আইনী সমস্যাগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা। ২০০০ সালের ১২ই অগাস্ট প্রথম উদযাপিত হয়েছিলো,এই দিবসটি।এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে বিশ্বের সমস্ত ছাত্র-যুবাদের অধিকার ও জনসচেতনতার উদ্দেশ্যে।
সারা বিশ্বের যুব সম্প্রদায়ের বিকাশ ও উন্নয়নে ১৯৯৮ সালের পর্তুগালের রাজধানীর লিসবনে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রসঙ্ঘের ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অফ মিনিস্টার রেসপন্সিবল ফর ইউথ অনুষ্ঠানে প্রথম ১২ই অগাস্ট "আন্তর্জাতিক যুব দিবস" পালন করা হয়। পরের বছর ১৯৯৯ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ১২ই অগাস্ট দিনটিকে চিহ্নিত করা হয়।

আন্তর্জাতিক যুব দিবস, যুব সমাজের দেওয়া বার্তা, তাদের কাজ ও উদ্যোগের পাশাপাশি অর্থনৈতিক,সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এক গুরুত্বপূর্ণ অধিকার পালনের উৎসাহ দেয়। সমাজকে সুরক্ষা প্রদান, সামাজিক সাংস্কৃতিক অধিকার পূরণ, মর্যাদা দান, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং তাদের কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করা এই দিবস পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য। রাজনীতি, পরিবেশ, অর্থনীতি ও সমাজ পরিবর্তনের নানান ক্ষেত্রে নানান সময়ে যুব সম্প্রদায়ের অবদান অনস্বীকার্য। তারাই ভবিষ্যতের দায়িত্ববান নাগরিক। দেশ,কাল ভেদে এই তরুণেরাই,সমাজে আগামী দিনের পথ প্রদর্শক হয়ে বারবার সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাই যুব সম্প্রদায়ের সুষ্ঠু বিকাশ সাধনে সরকার ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সচেতনতা প্রয়োজন। তরুণরাই  দেশের সম্পদ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুব সম্প্রদায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

🍂

ইউনেস্কো যুব কর্মসূচি, এই চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে যে, বর্তমানে যুব সমাজ শুধু মাত্র নিজের সুবিধার্থে কাজ করে না, বরং তারা ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায়, এছাড়াও বহু সমস্যার সমাধান তাদের হাত ধরেই  হয়। দেশ ও দশের কল্যাণের কথা ভেবে যুব সমাজ নিজে থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে আগ্রহী হয়। ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুব সমাজের উদ্দেশ্যে তৈরি করা ইউনেস্কোর কর্মসূচি এই উদ্দেশ্যকে সফল করার লক্ষ্যে যুব সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎসাহ দেয়।

১২ই আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবসের এই দিনটি বিভিন্নভাবে পালিত হয়ে থাকে, যেমন,কোথাও কোথাও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়ে থাকে, এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে যুব সমাজকে নিয়ে বিভিন্ন সভা ও আলোচনা করে থাকে, যেখানে এই যুবসমাজকে আরো কাজ করার জন্য ও এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দান করা হয়, এছাড়াও মূল সমাজে তাদের গুরুত্ব কতখানি তা নিয়েও আলোচনা করা হয়।

সমাজের যুব সম্প্রদায়, উন্নতির জন্য একটি ইতিবাচক শক্তি হতে পারে, যখন তাদের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং সুযোগ প্রদান করা হয়, তখন তারা সেই কাজে পারদর্শী হয়ে ওঠে এবং তা সম্পূর্ণ করে। আজ ১৫ থেকে ২৪বছর বয়সী ১.৫ বিলিয়ন যুব রয়েছে, যা বিশ্ব জনসংখ্যার ১৬শতাংশ। ২০৩০-এর মধ্যে তরুণদের সংখ্যা ৭শতাংশ বৃদ্ধি পাবে অর্থাৎ সমাজ-পরিবেশে তারা একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করবে।
প্রত্যেকটা দিবসেরই এক একটা প্রতিপাদ্য বিষয় বা থিম থাকে, ঠিক সেইরকমই আন্তর্জাতিক যুব দিবসের ২০১৬ সালের থিম ছিলো,'লক্ষ্য ২০২০ দারিদ্র্যতা নির্মূলকরণ, উৎপাদন ও সম্পদের পরিমিত ব্যবহার অর্জন করা'
২০১৭ সালের থিম ছিলো,'যুব সমাজ শান্তি তৈরি করে'
২০১৮সালের থিম ছিলো,'যুব সমাজের জন্য নিরাপদ স্থান'
২০১৯সালের থিম ছিলো, 'শিক্ষার রূপান্তর'
এরপর ২০২৩সালের থিম ছিলো, 'পরিবেশবান্ধব বিশ্বের উদ্দেশ্যে যুবকদের মধ্যে পরিবেশ উপযোগী দক্ষতা গড়ে তোলা' এবং 
২০২৪এ যুব দিবসের থিম হলো,"অগ্রগতির দিকে, টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি পথ"।

প্রত্যেকের এই দিনটিকে খুব গুরুত্বপূর্ণতার সঙ্গে উদযাপন করা উচিত। আগামী প্রজন্ম অর্থাৎ যুবরা, যারা আছেন, তাদের মাধ্যমেই দেশের সব দিকের আলো জ্বলে উঠবে, এই আশা রাখি। প্রতিবছর ১২ই অগাস্ট বিশ্বে এক আবেগ সঙ্গে নিয়ে জনসাধারণ যুব দিবস পালন করেন।
এবছর অর্থাৎ ২০২৪ এর  যুব দিবসের স্লোগান হলো, "সমর্থনকারীদের সক্রিয়তা" সামনে কাল বহাল"
 মূলকথা হলো,দেশের অর্থনৈতিক,সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক হাল ফেরাতে গেলে যুবসমাজকে সব সময় কাজে লাগবে। একমাত্র যুব সমাজই পারে দেশের সব রকম উন্নয়ন আনতে।তাই, সব ভালো কিছুর জন্য যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। 
যুব দিবস পালন করা হয়, যুবকদের উৎসাহ দিতে এবং তাদের ভালো কাজকে সম্মান জানাতে।

Post a Comment

1 Comments

  1. অনেক কিছু জানা গেল আপনার মূল্যবান লেখা থেকে। তার জন্য অনেক ধন্যবাদ। যুব সমাজ বলতে ঠিক কি বোঝায় সেটা আর একটু পরিষ্কার হলে হয়ত আরো ভালো হত। বিভিন্ন বর্গের যুব সমাজের প্রয়োজন, আশা, আকাঙ্খা, সংগ্রাম তো এক নয়, ভীষণ ভাবে ভিন্ন। একশ্রেণীর যুবকের জীবনের লক্ষ্য ভালো ইন্সটিটিউটের ডিগ্রী পেয়ে বিদেশ পড়তে যাওয়া ও সেখানে বাস করা। তার জন্য তারা চায় সরকারের কাছে লোন ও অন্য সুযোগ সুবিধা। আবার আর এক বর্গের যুবকরা খাবার ডেলিভারী বা আমাজনের ডেলিভারী বা অটো চালানো বা টোটো চালাবার কাজ পেলেই ধন্য হবে। তারা চায় এক সুস্থিত সমাজ, তোলাবাজদের থেকে মুক্তি, পুলিশের তথাকথিত জোর জুলুম থেকে অব্যাহতি। এদের চাওয়া আর এক রকম। এমনি নানা রকম যুবদের ভাবনা নানা রকম। যুব দিবসে ঠিক কোন যুবদের কথা ভাবা হয়েছে? আবার যুবক ও যুবতীদের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম, কোথাও মেয়েরা অত্যাচারিত, কোথাও তাদের ঘর থেকে বেরোতেই দেওয়া হয় না, কোথাও তারা যুবকদের সঙ্গে ক্রমক্ষেত্রের লড়াইয়ে কেবল হেরেই যায়। যুব দিবসে কি এই ইস্যু নিয়ে ভাবা হবে? আমার এ ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই, তাই জানতে আগ্রহী ছিলাম। আপনার লেখা খুব ভাল লাগে, আরো লিখুন, আমরা সমৃদ্ধ হই।

    ReplyDelete