বার্লিনের ডায়েরি --৪৬ পর্ব / চিত্রা ভট্টাচার্য্য
(রোমের পথে পরবর্তী অংশ )
(প্যানথীয়ন।)
ধীরেধীরে মৌন মধুর গোধূলির বিকেলের আলো গড়িয়ে নামছে বিষণ্ণপৃথিবীর বুকে তারই লালচে আভায় নববধুর লজ্জা রাঙা মুখের হাসিটি হঠাৎযেন ঘোমটার আড়াল খসে গিয়ে আনমনে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।এখনো ও সাঁঝের আঁধারের ছায়া নামতে দেরী আছে। ওরা এগিয়ে চলেছে স্প্যানিশস্টেপ এবং তার পাশেই প্যান্থিয়ন। পাশাপাশি কয়েকটা স্পট খুব বেশী দূরে নয়।শ্রীময়ীর ইচ্ছে আজকের মত ঘরে ফিরে যায়। তিতির রোম নগরীর বহু প্রাচীন বিখ্যাত মন্দির প্যান্থিয়ন টি দেখে স্প্যানিশস্টেপের মনোরম পরিবেশে ধূসর গোধূলির কমলা রাঙা আকাশের তলায় বসবে। তারপর ক্লান্ত সন্ধ্যা বুকে বয়ে নীড়ে ফেরা পাখির পাখায় দিনান্তের আলো মুছে রাতের আঁধার নামলে ডিনার সেরে বেশ রাতে ঘরে ফিরতে চাইছে। ও অনুরোধের সুরে বলে ,বড়জোর দশ মিনিট একটু পা চালিয়ে চলো। সন্ধ্যে রাতের থেকে গভীর রাতের রোম ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ গুলোর মত নিয়ন বাতি টুনি বাল্বের লাল হলুদ নীল সবুজের আলোয় সেজে উঠলে দেখতে ঠিক অন্যন্য সুন্দরী রাজকন্যার মত লাগে।
পথ পরিক্রমার সময় নানা দৃশ্যের সাথে ইতস্তত ছড়ানো অজস্র ছোট বড় ফোয়ারা। তিতির ছুটে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে ক্যামেরা অন করো সিনিক বিউটি কী অপূর্ব । কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে নানান পোজে ছবি তোলা হলে আবার চলা। এখানে তিন চার রাস্তার মিলন স্থলে বিশাল পিয়াজ্জাগুলো তৎকালীন নগর বাসীর প্রাণ কেন্দ্র। নিখুঁত শৈল্পিক সৌন্দর্য স্থাপত্য সৃষ্টির ভাবনায় সুসজ্জিত। রোমান যোদ্ধা বীর সৈনিক দের যুদ্ধ জয়ের পর বিভিন্ন দেশ থেকে স্মারক চিহ্ন হিসাবে লুট করে আনা বিজয় স্তম্ভ স্থাপন করে ,এবং তার সাথে ফোয়ারা তৈরী করে স্বীয় কীর্তির স্বাক্ষর রেখে দিতেন। এ পিয়াজ্জাগুলোতে সেই সময় খোলা আকাশের তলে নৃত্য গীতের আসর জলসা বসতো।.এবং এই স্থান ব্যবহৃত হতো সাধারণের আনন্দ ফুর্তি বিনোদন ও অবকাশ যাপন আমোদ প্রমোদের নিশ্চিন্ত স্থল হিসেবে। চলার পথে নানা দৃশ্যের সাথে শ্রীর মন ও চলেছে আপন গতি পথে।
এনসেন্ট রোমান টেম্পল
ওর কল্পনার স্বর্গে সে অবকাশে কত গল্প রচিত হয়। ঋষভ কে বলে যে কোনো পুরোনো শহরের রাস্তায় চলতে গেলে তার প্রতিটি পথের বাঁকে ইট কাঠ পাথর ধূলিকণা থেকে শুরু করে দুধারের গাছপালা দালান ঘর বাড়ি এমন কি পায়ে চলার ফুটের ধারে সবুজ ঘাসগুলো পর্যন্ত সাক্ষী স্বরূপ গল্প বলে। শ্রী বলে ,ধরো এই রাস্তায় এখন যেমন আমরা হাঁটছি তেমনি সুদূর অতীতে ও হয়তো এই পথেই একদিন স্বর্ণালংকারে সুসজ্জিতা সৌন্দর্যের রানী ক্লিওপেট্রা ,রঙ্গময়ী তামাশায় হাসি গানে উচ্ছল হয়ে সহচরীদের সাথে বিলাস বহুল স্বর্ণরথে প্রমোদ ভ্রমণে বেরিয়ে ছিলেন। তার ও আগে বীরবিক্রমে ঘোড়া ছুটিয়ে জুলিয়াস সীজার এসেছিলেন অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু ব্রুটাস কে নিয়ে। কিম্বা মহান প্রতিভাধর শিল্পী ,বিজ্ঞানী ,দার্শনিকদের পদভারে কম্পিত হতো এ পথের ধূলিকণা। ভাবতে পারো ,রেনেসাঁ যুগের দাভিঞ্চি, রাফায়েল , সান্দ্রোবতিচেল্লি ,মাইকেলএঞ্জেলোর পায়ের চিহ্নে ধন্য হয়েছে ঐ কালো পাথুরে ইট গুলো ।
কত আলোক বর্ষ ধরে এ রাস্তা গুলো তার সাক্ষী রয়েছে। সযত্নে তাঁদের অসামান্য সৃষ্টি কে স্মৃতির পাতায় উজ্জ্বল ভাবে আবহমান কাল ধরে রাখতে সচেষ্ট হয়েছে । পিয়াজ্জা তে সাজিয়ে রাখা ঐ নিপুন হাতে গড়ে তোলা ভাস্কর্যগুলো প্রাচীন ঐতিহ্য সংরক্ষণেরই প্রমান। শহরটির মূল বৈশিষ্ট হলো কোনো বিশেষ স্থাপত্যের সংস্কৃতি কে মূল্য দিয়েই প্রাচীনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নবীন কে জায়গা করে দেওয়া।পুরোনো ও নতুন কে একই সূতোর গ্রন্থিতে গেঁথে রেখে এক নিগূঢ় ঐকতান সৃষ্টির প্রয়াস চলে সর্বত্র। কথায় গল্পে ওরা রোমের সর্বাধিক বহু পুরানো স্থাপত্য প্যান্থিয়ন অর্থাৎ দেবদেবীর অধিষ্ঠান টেম্পলের চত্বরের সামনে এসে দাঁড়ালো।
সময় সাগরের উজানে জীবন তরীর চলন্ত দাঁড় বেঁয়ে চলার পথে কত অচেনা মানুষের সাথে পরিচয় হয় তারা হৃদয়ের গভীরে পাকা আসন খানি পেতে বসে মুহূর্তে আত্মার আত্মীয় হয়ে ওঠে। আবার কেউ ক্ষণিকের অতিথি হয়ে স্মৃতির ঘরে এক সরল রেখা টেনে মিলিয়ে যায়। শ্রীময়ীর মনে পড়ে তেমনি এক মজার স্মরণীয় মানুষ জন রবার্ট। প্যান্থিওনের চত্বরে এসে দাঁড়াতেই ঋষভের সাথে আলাপ জমে উঠলে জন রবার্ট নামে এক ব্রিটিশ স্থাপত্য বিদ পর্যটকের । যিনি একসময়ে এক্স মিলিটারি ম্যান ছিলেন,কিন্তু এখন পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস নিয়েই তার সময় কাটে। প্রায় বার তিনেক ইন্ডিয়াতে অজন্তা ইলোরার গুহাচিত্র খাজুরাহোর আর্ট কোনার্কের সূর্যমন্দির আগ্রার তাজমহল রাজস্থানের পুরোনো প্যালেস ,ঐতিহাসিক স্থাপত্য গুলো দেখতে গিয়েছিলেন।। ভূগর্ভের তল থেকে আবিষ্কৃত বিহারের নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয় এমন কি সিন্ধু সভ্যতার খোঁজে পাকিস্তানের হরপ্পা মহেঞ্জোদারোতে ও গিয়েছিলেন। পুরাতন শিল্পের ধারা এই পুরাতত্ত্বজ্ঞানী কে পৃথিবীর সর্বত্র পাগলের মত আকর্ষণ করে।
মন্দির গাত্রে ইংলিশে একটি ফলকে ওপর ''সান্তা মারিয়া রোটান্ডা "প্যান্থিয়নের আসল নামটি সুন্দর করে গ্রথিত রয়েছে এবং এই পবিত্র চত্বর টি রোমবাসীর কাছে পিয়াজ্জা ডেলা রোটেন্ডা নামে পরিচিত। জন বললেন তোমাদের সাথে ঘুরে এই সন্ধ্যা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঋষভ সানন্দে হ্যান্ডশেক করে বলে অবশ্যই আমাদের ও ভালোলাগবে। সাহেব আন্তরিকতার সাথে ওদের নিয়ে এই চত্বরের চতুর্দিকে ঘুরে বেরিয়েছিলেন।মধ্যভাগে এসে একটি সুন্দর ফোয়ারা ও স্তম্ভ দেখিয়ে বলেছিলেন মিশরদেশ থেকে সংগৃহীত ঐ স্মারক স্তম্ভ টি দিয়ে এই চত্বর টি সাজানো রয়েছে এবং ইতিহাসের উল্লেখ করে বলেন গ্রানাইট পাথরে নির্মিত এই স্মারক স্তম্ভ টি মিশর দেশের রাজা দ্বিতীয় রামেসিস কর্তৃক হোলিওপোলিস নগরীতে 'রা 'টেম্পলের সামনে স্থাপিত ছিল।পরবর্তী কালে রোম মিশর কে যুদ্ধে হারিয়ে জয়লাভের পর স্তম্ভ টি লুঠ করে নিয়েএসে প্রথমে রোমের সান্তামারিয়া মিনার্ভা কাছে আইসিস মন্দিরের চত্বরে রাখার পর ,বহুস্থান পরিবর্তনের শেষে পিয়াজ্জা ডেলা রোটেন্ডার এই চত্বরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
শ্রী ভাবে ইতিহাসের পাতা জুড়ে এমন রোমহর্ষক কাহিনী কত ইতস্ততঃ ছড়িয়ে আছে। অন্দরে প্রবেশ করেই একটি সমাধিতে শান্ত সমাহিত সৌম সুন্দর পরিবেশে চির নিদ্রায় শায়িত রয়েছেন রেনেসাঁ যুগের বিখ্যাত ইতালীয়ান চিত্র শিল্পী রাফায়েল। যাঁর অকাল মৃত্যুতে বিশ্ব শিল্পের দরবারে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছিল। এক অনস্বীকার্য্য বিশাল শূন্যতার ও সৃষ্টি হয়েছিল।এ ছাড়াও সেখানে ছিল সংযুক্ত ইতালীর প্রথম সম্রাট ভিক্টর দ্বিতীয় ইমানুয়েল এবং সম্রাট হাম্বার্ট প্রথমের সমাধি। ওরা মিনিট খানেক মাথা নত করে নীরবতা পালন ও শ্রদ্ধা জানালেন। রবার্ট বললেন ,এই অপূর্ব স্থাপত্য কীর্তির স্মারক প্যান্থিয়ন টি ছিল প্রায় ২০০০ বছর পূর্বে নির্মিত সর্ব দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত এক টেম্পল। পরবর্তী কালে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচলনের পর সপ্তম শতাব্দীতে এটিকে গীর্জায় পরিণত করে উপাসনাগার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল এবংএখোনো সে ধারাই অটুট রয়েছে।
প্যানথীয়নের সামনে থেকে
অদ্রিজার পড়ার টেবিলে সেদিন ঐতিহাসিক থিওডোর মোমসেনের লেখা প্রাচীন রোমের ইতিহাসের বইটি নিয়ে শ্রী দুপুর বেলায় সময়ে কাটাতে ইতিহাসের পাতা থেকে জেনেছিল রোমান সম্রাট অগাষ্টাসের সেনাপতি এবং রাজনীতিক মার্কাস আগ্রিপা কর্তৃক খৃ,পু, ২৭ অব্দ থেকে ১৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই স্থানে আর একটি টেম্পল নির্মিত হয়েছিল।পুরোনো স্থাপত্যটি আগুনে পুড়ে ছাই হওয়ায় ওই স্থানেই ১১৩ থেকে ১২৫খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে রোম সম্রাট ট্রাজান ও সম্রাট হাড্রিয়ানের শাসনকালে পান্থিয়নের নির্মাণ কার্য্য আরম্ভ এবংশেষ হয়েছিল। এই প্যান্থিয়ন টি চুন সুরকি,ও পাতলা ইট দিয়ে তৈরী গম্বুজ যুক্ত ছিল। এবং এই বিশাল গোলাকার স্থাপনাটির বাইরের দিকের প্লাস্টার প্রায় খসে গিয়েছে। সেখানে দেওয়ালের গায়ে ফলক দেখে ঋষভ বলে সম্ভবতঃ ১২৬ খ্রীষ্টাব্দে এটি বিভিন্ন দেবতাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছিল।
🍂
প্যান্থিয়নের সামনে লম্বা করিডরে এসে দাঁড়াতেই চোখে পড়লো বিরাট বারান্দাটি জুড়ে পরপর উঁচুউঁচু স্তম্ভ সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথম সারিতে আছে গ্রানাইট পাথরের আটটি বিশাল উঁচু স্তম্ভ। তার পিছনের দিকে দুই সারিতে সাজানো ছিলো আরো চারটি করে মোট আটটি সুউচ্চ স্তম্ভ। সামনে থেকে সহজেই দৃষ্টি পড়ে ত্রিভূজাকার বা ত্রিকোনা কৃত মুকুটের মত সজ্জিত পেডিমেন্টের ওপর। জন রবার্টের মতে কংক্রিটের তৈরী এই কারিগরী দক্ষতা বিশিষ্ট প্যান্থিয়ন টি দেখে আশ্চর্য্য হতে হয়। তিনি বললেন এই স্থাপত্য টি দুই হাজার বছর পূর্বে এমন সুকৌশলী দক্ষতায় তৈরী হয়েছিল যা আজ অকল্পনীয়। উনি হিসেব করে দেখালেন, মেঝে থেকে গম্বুজের মধ্যস্থলের উচ্চতা এবং অভ্যন্তরের বৃত্তের ব্যাস দুইই ১৪২ফুট। বর্তমানে রোমের প্রাচীন স্থাপত্যের মধ্যে এই প্যান্থিয়নটি একমাত্র সম্পূর্ণ রূপে সুরক্ষিত অন্যতম পুরোনো নিদর্শন। এই প্রাচীন স্থাপত্য টিকে পর্য্যবেক্ষণ করে রবার্ট বলেছিলেন ;এর নির্মাণ শৈলীর কৌশল। গোলাকার আকৃতিতে যাতে সহজেই প্রাকৃতিক ঋতুর বৈচিত্র্যতা আলো হাওয়া অবাধে পৌঁছতে পারে , এই কারণে সেখানে শীর্ষদেশে প্রায় ২৯ ফুট ব্যাসের একটি গোলাকার বৃত্ত করে রাখা হয়েছে। যেখান থেকে প্রখর গ্রীষ্মে রোদের তাপ ,বর্ষার জল ধারা এবং কড়াল শীতে শৈত্য প্রবাহ অনায়াশে প্যান্থিয়নের ভিতর থেকে স্বাভাবিক ভাবেই উপলব্ধি করা যায়।
রোটান্ডা
এখোনো পর্যন্ত এমন সর্ব বৃহৎ গম্বুজ টি পৃথিবীর মধ্যে আর দ্বিতীয় কোথাও নেই । সেই সময়ের প্রেক্ষাপট থেকে এতো ঝড় ঝঞ্ঝা রাষ্ট্র বিপ্লব ধ্বংস সংঘর্ষ সহ্য করে ও সে যে নিশ্চল মজবুত হয়ে যুগ যুগান্ত ধরে অবিনশ্বর অটল হয়ে রয়েছে। তা অবশ্যই মুগ্ধ বিস্ময়ে দর্শককে আকৃষ্ট করে।
শ্রী তন্ময় হয়ে ভাবছিল ইতিহাসের প্রতিটি স্তরে কত কিছুই জানার আছে যা এমনি বিশেষজ্ঞ লোকেরাই ব্যাখ্যা করে বোঝাতে পারেন। এবার অন্যত্র যাওয়ার জন্য ঋষভ ব্যস্ত হলে রবার্ট কে দেখা গেল ওর বান্ধবী লিজামার্থার ফোন আসায় সান্ধ্য আলো আঁধারিতে প্যান্থিয়ানের সামনেই ধ্যান মগ্ন হয়ে বসে রইলেন। তিনি বললেন, মিস মার্থা এখানেই আসবে সুতরাং তিনি মার্থার জন্য অপেক্ষা করবেন। ওরা সৌজন্য মূলক বিদায় নিয়ে চলতে শুরু করলে অদ্রিজা শ্রী কে বলে নেভার মাইন্ড ! এখানে এটাই স্বাভাবিক। চলো আমরা নিজেদের মত এগোই ।
,শ্রী ও ঋষভ কে নিয়ে অদ্রিজা আবার কিছুটা পেছনের দিকে এসে ১৩৭০ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত রোমের একমাত্র গথিক শৈলীর চার্চ ,সান্তা মারিয়া সোপরা মিনার্ভা য় অদ্রিজা পৌঁছলো । এখানেও রয়েছে শিল্পী বার্নিনির তৈরী অপূর্ব একটি শ্বেতহস্তীর মূর্তির পিঠে ওবেলিস্ক, ছোট্ট একটি স্মারক স্তম্ভ। শোনাযায় এই ওবিলিস্ক টি যুদ্ধ জয়ের পর মিশর থেকে আনা লুটের সম্পদ। চার্চটি তে পুনর্নির্মাণের কাজ চলায় দর্শনার্থীর ভীড় নেই।
শ্রী সেখানে দাঁড়িয়েই আনমনে ফিরে চলেছে বহুকাল আগে কলেজের দিনগুলোয় ন্যাশনাল লাইব্রেরীর দুপুরের নির্জন কক্ষে যেখানে বন্ধু নীলাঞ্জনার সাথে বিশ্বকোষের পাতা উল্টিয়ে প্রথমেই দুজনের চোখে পড়েছিল রোমের এই সোপরা মিনার্ভার চার্চ টি র অনিন্দ্য সুন্দর কারুকার্য। ছাদ থেকে দালানের অন্দর সজ্জায় নীল রঙের সিলিংসমৃদ্ধ অপরূপ গীর্জা টি ওদের সদ্য যৌবনে পা দেওয়া মনের গহনে এক অপার কৌতূহলের দ্বার খুলে দিয়েছিলো। ঐ অজানা মোহমুগ্ধ পৃথিবী ছবির পাতা থেকে উঠে এসে সে দেশের সভ্যতা সংস্কৃতি সম্বন্ধে তার ইতিহাস শিল্পকলা স্থাপত্য ভাস্কর্য্য সম্পর্কে মনের মাঝে স্থায়ী কৌতূহলের সৃষ্টি করে রেনেসাঁ যুগের শিল্পীদের সাথে ও নিবিড় মানসিক বন্ধন গড়ে তুলেছিল। এতকাল প্রায় ৪৫বছর বাদে সেই ভুলে যাওয়া বইয়ের পাতার গল্প নতুন করে শ্রীর মনে পড়ল। রূপকথার মত চার্চ টির নীল রঙের সিলিং ছবির পাতা থেকে বাস্তবে এমনি করে জীবন্ত দেখতে পাবে ওর কল্পনায় ছিল না। তবে চার্চ টির ছাতের তলায় দাঁড়িয়ে সাঁঝের আলো আঁধারিতে নীলাঞ্জনাকে ও শ্রী যেন স্পষ্ট অনুভব করলো। মন বলে--"না চাহিলে যারে পাওয়া যায়.।'' ও ভাষাহারা বাকরুদ্ধ! হয়ে ঐ আশ্চর্য সৌন্দর্যের দিকে শুধুই তাকিয়ে থাকে।
0 Comments